রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পূর্বে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার শেষ কথা দাবিতে প্রচারিত ভিডিও সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ডায়ালিং নামের একটি ইরাকী শর্ট ফিল্মের অংশবিশেষ।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে بهاء الكاظمي নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট dailing – فيلم جاري الاتصال – اخراج بهاء الكاظمي শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদ করলে এর অর্থ হয় Dailing – Connecting Movie – directed by Bahaa Al-Kazemi.
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটির ১০ সেকেন্ড থেকে ৪০ সেকেন্ড এবং ১৪ মিনিট ১৮ সেকেন্ড থেকে ১৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের অংশটুকুর সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে জানা যায়, শর্ট ফিল্মটি মূলত একজন মায়ের সন্তান হারানোর গল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যার সন্তান ইরাকী সেনাবাহিনীর হয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। এছাড়াও জানা যায়, শর্ট ফিল্মটি বাহা আল-কাজেমী নামের একজন পরিচালনা করেছেন এবং তার নির্মিত এই ফিল্মটি ২০১৫ সালে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রদর্শন করা হয়েছে।
Screenshot: Youtube
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যম Dubai International Film Festival এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর DIFF 2015 – Dialing শীর্ষক শিরোনামে Dialing ফিল্মটির একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি একটি ইরাকী শর্ট ফিল্মের কিছু অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কাট করে তা জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক এবং নজিরবিহীন মিসাইল হামলা চালায় হামাস। এরপর থেকেই ক্রমাগত দেশ দুটির মধ্যকার চলমান সংকট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে শুরু করে। যা বর্তমানে যুদ্ধে রূপ লাভ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পূর্বে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার শেষ কথা দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত Dialing নামের একটি ইরাকী শর্ট ফিল্মের কিছু অংশ কাট করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও শর্ট ফিল্মটি ইরাকের সেনাবাহিনী এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএসের মধ্যে চলমান সংকটকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর সাথে ইসরায়েল কিংবা ফিলিস্তিনের কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, ইরাকের একটি শর্ট ফিল্মের অংশকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পূর্বে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার শেষ কথার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আসছে জানুয়ারিতে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গেল বেশ কয়েক মাস ধরেই রাজপথে নানা কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে আন্দোলনে নিজেদের যুক্ত রেখেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। গেল ১৮ অক্টোবর দলটি রাজধানীর নয়াপল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়, ২৮ অক্টোবর একই স্থানে মহাসমাবেশ করবে তারা।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন জানান, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে শুরু হবে সরকার পতনের মহাযাত্রা।
Image source: Facebook
পরবর্তীতে একই দিনে ঢাকায় সমাবেশ ডাকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ আয়োজনের ঘোষণা দেয় দলটি। এই দুই দল ছাড়াও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় আরেক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিও। শুধু এই তিন দলই নয়, ২৮ অক্টোবর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আরো একাধিক দল ও জোট সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেয়।
Image source: Facebook
তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই তিন দলের সমাবেশ নিয়েই রাজনীতির ময়দানে আলোচনা ছিল বেশি। এক দিনেই ঢাকায় এসব সমাবেশের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলগুলো যেমন প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছিল, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও এ দিনটি ঘিরে ছিল নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা, যা গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।
তাই এই দিনটিকে ঘিরে রিউমর স্ক্যানার টিমের ছিল পূর্ব প্রস্তুতি, তবে তা অবশ্যই ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধের বিরুদ্ধে। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে মধ্যেই ২৫ অক্টোবর বিএনপির আদলে তৈরি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখি আমরা। ‘আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের আগে যেসকল নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন, তারা তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে আসবেন।’ শীর্ষক একটি তথ্য ছিল উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে। এই বিজ্ঞপ্তিটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারও প্রচার করে।
Image source: Facebook
কিন্তু বিএনপি’র মিডিয়া সেল এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে আলোচিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া (১) বলে নিশ্চিত করা হয়।
জানিয়ে রাখি, ২৮ অক্টোবর ঢাকার তিন সমাবেশের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও জামায়াতে ইসলামী অনুমতি পায়নি। ২৫ অক্টোবর ইউটিউবে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওর থাম্বনেইলে দাবি করা হয়, সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পিটিয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে (২) দেখেছে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত ২৬ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বরাতে ফেসবুকে প্রচারিত একাধিক পোস্টে দাবি করতে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ফখরুল পন্থী বনাম তারেক পন্থী দ্বন্দ্ব চরমে।
Screenshot source: Facebook
আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম (৩) মানবজমিনের চিফ নিউজ এডিটর সাজেদুল হকের সাথে। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোন রিপোর্ট করিনি। এটি গুজব।’
পরদিন (২৭ অক্টোবর) সকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর সম্বলিত দলটির আদলে তৈরি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে ঢাকায় পূর্বঘোষিত শান্তি সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে সারাদেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
Image source: Facebook
পরবর্তীতে বিপ্লব বড়ুয়া নিজেই নিশ্চিত (৪) করেন যে বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া৷ ঢাকার সমাবেশ স্থগিত হয়নি।
কিন্তু এই ভুল তথ্য ছড়ানো তবু থেমে থাকেনি বরং নতুন উপায়ে ছড়িয়েছে। পরবর্তীতে দেশের দুই গণমাধ্যমের সূত্র দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডে এই তথ্যটিই শুধু প্রচার করা হলেও প্রথম আলো’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উক্ত দাবি করেছেন বলে প্রচার করা হয়।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে (৫) জেনেছে, ওবায়দুল কাদের এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং দৈনিক প্রথম আলো এবং দৈনিক কালবেলা উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদও প্রকাশ করেনি।
এই ঘটনার কাছাকাছি সময়ে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামেও একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছড়ানো হয় ফেসবুকে, যাতে দাবি করা হয়েছিল, সংগঠনটির কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু নেতাকর্মী যারা গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন তাদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর থাকা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন (৬), তাদের সংগঠন থেকে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
একইদিন দুপুরে মানবজমিন এর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচার হতে দেখেছি আমরা, যাতে দাবি করা হচ্ছিল, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানা চ্যানেল আই’য়ের টকশোতে এই মহাসমাবেশের তারিখ পেছানোর বিষয়ে “বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমার জন্য কেন সমাবেশ পেছাতে হবে? দেশে বৌদ্ধ আছে কতজন যে তাদের জন্য আপনারা মায়াকান্না করছেন?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন।
Screenshot source: Facebook
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে রুমিন ফারহানা, চ্যানেল আই এবং মানবজমিনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। আমরা যাচাই (৭) করে দেখেছি, এ সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি রুমিন ফারহানা। তাছাড়া, তিনি আলোচিত কর্মসূচী ঘোষণা পরবর্তী সময়ে চ্যানেল আইয়ের কোনো টকশোতেও যাননি। তাছাড়া, মানবজমিনও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেননি।
কিন্তু রুমিন ফারহানার নামে ছড়িয়ে পড়া এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পরই বিএনপির সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা সংক্রান্ত একটি দাবি একইসাথে দলটির আদলে তৈরি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং দ্য ডেইলি স্টারের আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ‘লক্ষ্মীপূজা’ এবং ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’র কারণে বিএনপি ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে ২৯ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে। কিন্তু অনুসন্ধান (৮) জানাচ্ছে, বিএনপি সমাবেশ পেছানোর কোনো ঘোষণাই দেয়নি। এমনকি ডেইলি স্টারও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়, যাতে দেখা যাচ্ছিল একটি ট্রেন উপচেপড়া যাত্রীসমেত চলছে। ভিডিওগুলোর ক্যাপশন পড়ে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছিল যে এটি পরদিন বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে মানুষের ঢাকায় গমনের দৃশ্য।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এই একই ভিডিও নিয়ে পূর্বেও রিউমর স্ক্যানার ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল। গেল বছরের (২০২২) অক্টোবরে বিএনপির খুলনার সমাবেশে জনগণের যোগদানের দাবিতেও এই ভিডিও প্রচার করা হয়েছিল। সেসময় আমরা ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছিলাম, ভিডিওটি ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা শেষে মুসল্লীদের বাড়ি ফেরার দৃশ্য। সাম্প্রতিক দাবিটি নিয়ে আমাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে (৯)।
ট্রেনের ভিডিও সংক্রান্ত আলোচ্য ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে যখন শুরু করে, তখন প্রায় একই সময়ে সমজাতীয় দাবি নিয়ে আরেকটি ভিডিও-ও প্রচার হতে দেখা যায়। এই ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছিল, অসংখ্য মানুষ ট্রেনে করে তাদের গন্তব্যে ফিরছে।
আমরা এই ভিডিওটি নিয়েও পূর্বে অনুসন্ধান করেছিলাম। ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সেই অনুসন্ধানের ফলাফলে আমরা জানিয়েছিলাম, এটি সে বছরের ঈদুল ফিতর পালনের উদ্দেশ্যে মানুষের ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার ভিডিও। এবার তাই আমাদের তাই আমাদের বিষয়টি নিয়ে বাড়তি অনুসন্ধানের প্রয়োজন পড়েনি। সাম্প্রতিক দাবিটি নিয়ে আমাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে (১০)।
Video comparison: Rumor Scanner
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়েও ২৭ অক্টোবর ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছিল বলে লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেদিন রাতে ইউটিউবের একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা হয়, পুলিশ বেড়ি ভেঙে রাতের শাপলা চত্বর দখলে নিলো জামায়াত- শিবিরের নেতা কর্মীরা। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটি যাচাই (১১) করে দেখতে পায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো দৃশ্য নয়। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হাটহাজারী মাদরাসা ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মুসল্লিদের উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলের একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা যখন বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করি, ততক্ষণে প্রায় ১২ লক্ষাধিক মানুষ পুরোনো ঘটনার এই ভিডিওটি দেখেছে।
২৭ অক্টোবর রাতে জাতীয় দৈনিক কালবেলা পত্রিকার আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হয়, সেদিন (২৭ অক্টোবর) রাতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেত্রী নিপুণ রায়ের বিতরণ করা খিচুড়ি খেয়ে ৬৫ জন অসুস্থ হয়েছেন এবং তাদের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Screenshot source: Facebook
পরবর্তীতে সমজাতীয় দাবি আরেক জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডেও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু অনুসন্ধানে (১২) দেখা গেল, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালবেলা ও প্রথম আলো’র ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে খিচুড়ি খেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অসুস্থতার দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা মেলেনি।
২৭ অক্টোবর শেষ ঘন্টায় কালবেলা’র আদলে একটি ফটোকার্ড ব্যবহার করে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকছে জাল টাকার নোট, যা দেয়া হবে নেতাকর্মীদের। তবে অনুসন্ধানে (১৩) কালবেলা’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্য কোনো প্লাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশগুলো কেন্দ্র করে এর আগের দিনগুলোয় এমন করেই ক্ষণে ক্ষণে ভুল তথ্য মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। আমরা হিসেব করে দেখেছি, সমাবেশগুলোর কর্মসূচী ঘোষণা পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে ২৮ অক্টোবরের আগের দিন অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সমাবেশ কেন্দ্রিক ১৩ টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
আমরা পরদিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। কাঙ্ক্ষিত সেইদিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবরের প্রথম প্রহরেই ফেসবুকে প্রচার হওয়া একটি পোস্টে অসংখ্য মানুষকে জড়ো হওয়ার একটি ছবি দেখতে পাই আমরা।
ডাঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা নামক একটি পেজে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, সেদিন রাতে ঢাকার রাজপথের দৃশ্য এটি। গণজমায়েতের পেছনের দিকে বিএনপির কিছু পোস্টার দেখা যাচ্ছে। তা থেকে সহজেই অনুমেয়, এটি বিএনপি সমর্থকদের কোনো গণজমায়েতের দৃশ্য।
Screenshot source: Facebook
আমরা ছবিটি রিভার্স সার্চ (১৪) করে বিএনপি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর ‘চট্টগ্রামে সমাপনী পথসভায় জনতার ঢল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ছবি খুঁজে পেয়েছি। অর্থাৎ, চট্টগ্রামের একটি ছবি ২৩ দিন পর স্থান বদলে ঢাকার দাবিতে প্রচার করা হলো।
সেদিন রাতেই জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে প্রচার করা হয়, বিএনপি-র সমাবেশ স্থলে কে বা কারা ফেলে গেছে ৪ টি হাঁস। হাঁস দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়’। বিষয়টি হাস্যরসাত্মক তথ্য বলে প্রতীয়মান হলেও দেশের একটি গণমাধ্যমের বরাতে আলোচিত তথ্যটি প্রচার করার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার। তবে অনুসন্ধানে (১৫) ইত্তেফাক এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে বলে প্রমাণ পাইনি আমরা।
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে মানবজমিন ও যমুনা টিভির বরাত দিয়ে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছিল, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে কমপক্ষে ৮০-১০০ টি লাশ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দুইটি গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদই প্রকাশ করেনি বলে অনুসন্ধানে (১৬) জেনেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রায় একই সময়ে প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে ওবায়দুল কাদেরের একটি ছবি ব্যবহার করে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে মঞ্চে উঠে ওবায়দুল কাদেরকে অতিরিক্ত কথা বলতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনুসন্ধানে (১৭) প্রথম আলো তো নয়ই, দেশের কোনো গণমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার। বরং গত ২৪ অক্টোবর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে বিএনপি’র একই মহাসমাবেশ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ডে তার মন্তব্যটি সরিয়ে আলোচিত দাবিটি বসিয়ে ফটোকার্ডটি প্রচার করা হয়েছে।
Photocard comparison: Rumor Scanner
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতটি যেন হয়ে উঠছিল ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রহর। সেদিন রাত আনুমানিক তিনটা থেকে পরবর্তী প্রায় ঘন্টাখানেক একাধিক ভুল তথ্য সম্বলিত পোস্টে সয়লাব ছিল ফেসবুক। সেসময়েই আমাদের নজরে আসে, বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদকে পুলিশের ১০ হাজার পোশাকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে শীর্ষক একটি তথ্য একাধিক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকার কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলমের সাথে কথা বলেছিলাম আমরা। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন (১৮), তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা তো আরও প্রায় সপ্তাহখানেক আগের। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দায়ের করা মামলায়। পুলিশের ১০ হাজার পোশাকসহ গ্রেপ্তারের দাবিটি ভুয়া। বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন।
সেদিন একই সময়ে কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছিল, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে ছেড়ে আসা একটি পিক-আপ ভ্যানকে বস্তাভর্তি বোমা ও লাঠিসহ রাজধানীতে আটক করা হয়েছে। এই দাবিটি ছড়াতে কালবেলা’র আদলে একটি ফটোকার্ডকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে৷ পরবর্তীতে আমাদের অনুসন্ধান (১৯) বলছে, প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন৷ কালবেলাও এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
কাছাকাছি সময়েই কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডে এক নারীর ছবি এবং কিছু মানুষের রাতের অন্ধকারে হামলার ছবি যুক্ত করে দাবি করা হয়, পল্টনে মহিলাদল কর্মী মৌসুমীর পাছায় হাত দিয়ে গণপিটুনি খেলেন বরিশাল যুবদল নেতা রায়হান। আমরা ছবি দুইটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে হামলার ছবিটি ২০২০ সালে ভারতের একটি ঘটনার বলে প্রমাণ (২০) পেয়েছি। কিন্তু উক্ত নারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া, অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে মহিলা দলের কথিত কর্মী মৌসুমীকে শ্লীলতাহানি করায় বরিশালের যুবদল নেতা গণপিটুনির শিকার শীর্ষক দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে কাছাকাছি সময়ে ছড়িয়ে পড়া পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সেদিন নির্ধারিত সময়েই রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশ শুরু করে। বিএনপির সমাবেশ দুপুর সাড়ে ১২ টার পর শুরু হয়। এর কাছাকাছি সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট নজরে আসে আমাদের, যাতে দাবি করা হচ্ছিল, বিএনপি’র সমাবেশে দেশের দুই সংবাদমাধ্যম সময় টিভি ও একাত্তর টিভিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি এবং দলটির নেতাদের হেয় করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গেল আগস্টে সময়-একাত্তর টিভির টকশো বর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয় বিএনপির নেতাদের। কিন্তু পরবর্তীতে বা ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে উক্ত দুই গণমাধ্যমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে আমরা উল্লেখ পাইনি। বিএনপির পক্ষ থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত (২১) করা হয়েছে।
সমাবেশ চলাকালীন সময়েই ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার পথে ছাত্রদলের নেতাদের হাতে এক তরুণী লাঞ্ছিত হয়েছেন দাবিতে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছিল। অনুসন্ধানে (২২) এই তথ্যের পক্ষেও কোনো সংবাদ ঢাকা পোস্টসহ অন্য কোনো গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। একই কায়দায় ৩১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের ছবি যুক্ত করে কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে দাবি করা হয়, নয়াপল্টনে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে (২৩) এই দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ মেলেনি।
২৮ অক্টোবর সমাবেশ চলার মধ্যেই গণমাধ্যমে খবর আসতে শুরু করে, রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। সেসময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে বলছিল, কাকরাইল মসজিদের সামনের এলাকায় অনেক সময় ধরেই বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সেসময় চলছিল। একপর্যায়ে পুলিশের এক সদস্য আহত হন। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “কাকরাইলে পুলিশ বক্স ও গাড়িতে আগুন, মসজিদের সামনে বিজিবি।” কিন্তু ফেসবুকে এই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট নিয়ে তাতে ভিন্ন শিরোনাম যুক্ত করে দাবি করা হয়, কাকরাইলে মসজিদে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে (২৪) কাকরাইল মসজিদ তো নয়ই, সেদিন ঢাকার কোনো মসজিদেই আগুন দেওয়ার ঘটনার খবর মেলেনি।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
একই দাবি সেদিন বিকেলে কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমেও প্রচার করা হয়। এই ফটোকার্ডে পাশাপাশি রাখা দুইটি গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, এটি কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণের কোনো দৃশ্য নয়। সেসময় কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ ভবনে রাখা গাড়িতে আগুন জ্বলার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়।
বেলা গড়ানোর সাথে সাথে খবর আসছিল, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশেকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বিকেলের দিকে তিনটি গণমাধ্যমের আদলে ফটোকার্ড আমাদের নজরে আসে। এসব ফটোকার্ডে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব আক্রমণের শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে জানা (২৫) গেল, উক্ত দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। যেসব সাংবাদিক সেদিন আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন তাদের কারো নাম এই ফটোকার্ডগুলোতে ছিল না। তাছাড়া, এই ফটোকার্ডগুলোও নকল ছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিষয়েও খোঁজ নিয়েছি, তারা কেউই সেদিন হামলার শিকার হননি।
সেদিনের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে থাকি আমরা। দুপুরে যখন কাকরাইলে সংঘর্ষের খবর জানা যাচ্ছিল, তখন তা পল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থলেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বলে খবর দিচ্ছিলো গণমাধ্যমগুলো।
বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দুপুর তিনটার পরে এক পোস্টে (আর্কাইভ) এ সংক্রান্ত কিছু ছবি যুক্ত করে দাবি করা হয়, “পুলিশের নারকীয় তান্ডবে লন্ডভন্ড নয়াপল্টন। বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করছে। গুলিবৃদ্ধ হয়েছে হাজার, হাজার নেতা-কর্মী।” (বানান অপরিবর্তিত)
সেসময় পল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার দৃশ্য এবং হরতালে অগ্নিসংযোগের ভিন্ন দুইটি দাবিতে একটি ভিডিও প্রথম টিকটক এবং পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে আমাদের অনুসন্ধানে (২৬) জানা যাচ্ছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ভিডিওটি ২০১৮ সালের। সেদিন কিংবা ২৯ অক্টোবর পল্টন বা ঢাকার কোনো স্থানেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। তবে সমাবেশের দিন কাকরাইলে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বহনকারী একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। চালকের ভাষ্যমতে, বাসে আগুন দেওয়া দুই যুবক পুলিশের ভেস্ট পরিহিত ছিলেন। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, “কাকরাইলে বাসে অগ্নিসংযোগকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বা ডিবির কেউ না। অনেক সময় ডিবির জ্যাকেট পড়ে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে অপরাধীরা। ঢাকায় বাসে আগুনের ঘটনাটিও তেমন কোনো চক্র। যারাই এটা করেছে, আমরা তাদের খুঁজছি।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো’র আদলে ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়, “কাকরাইলের বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেল ছাত্রদলের ২ নেতা।” কিন্তু প্রথম আলো এক ফেসবুক পোস্টে (২৭) জানিয়েছে, এই ফটোকার্ড তারা প্রকাশ করেনি। প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ছবি ও তথ্য নকল।
বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে সেদিন নাগরিক টিভি একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটির ৪০ সেকেন্ড থেকে প্রায় ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়কালে দেখা যায়, পুলিশ ও মাছরাঙা টিভির সাংবাদিক মিলে কাগজ সদৃশ কিছুতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন। এই ফুটেজ ব্যবহার করে পরবর্তীতে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে (২৮) রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, সংঘর্ষ চলাকালে টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে আগুন জ্বালিয়ে একজন পুলিশ ও সংবাদকর্মীর রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা ছিল এটি। ভিডিওতে থাকা উক্ত সাংবাদিকের নাম মাহমুদ কমল। তিনি মাছরাঙা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার।
নয়া পল্টনে সংঘর্ষের খবরের মধ্যেই জানা যায়, বিএনপির মহাসমাবেশ স্থগিত হয়েছে। মাইকে শব্দ শোনা যাচ্ছে না। এই ঘটনায় সেদিন রাতে ফেসবুকের কিছু পোস্টে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য প্রচার হতে দেখি আমরা৷ প্রথম আলো’র আদলে একটি ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়, মির্জা ফখরুল বলেছেন, “কারো ভয়ে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি; হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি।” কিন্তু মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের অস্তিত্ব নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পায়নি রিউমর স্ক্যানার (২৯)। তাছাড়া, প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিএনপি দুপুর সাড়ে তিনটার পর ঘোষণা দেয়, নয়া পল্টনে হামলার প্রতিবাদে পরদিন (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে হরতাল পালন করবে দলটি।
সেসময় নয়া পল্টন কার্যত ফাঁকা দেখা যায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে। পুলিশ পুরো এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এর কিছু সময় পরই “পল্টন ছেড়ে বিএনপি নেতাদের পলায়ন। মীর্জা ফখরুল’কে ফোনে পাচ্ছেন না তারেক জিয়া” শীর্ষক শিরোনামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ফাঁকা থাকা নয়া পল্টনের ছবি ব্যবহার করে কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার হতে দেখা যায়। তবে আমরা অনুসন্ধানে (৩০) কালবেলার ফেসবুক পেজে এমন কোনো ফটোকার্ডের অস্তিত্ব পাইনি। তাছাড়া, উক্ত দাবিটি নিয়ে গণমাধ্যমেও কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের পর গণমাধ্যমসূত্রে আমরা দুইটি মৃত্যুর খবর জানতে পারি সেদিন। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য নিহত হয়। নিহত ওই পুলিশ সদস্যের নাম আমিরুল ইসলাম (পারভেজ)। তিনি কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গনি চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শামীম মোল্লা নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। তিনি মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি বলে দাবি করেন কাদের গনি চৌধুরী। এই খবরটি জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের ওয়েবসাইটে ‘নয়াপল্টনে সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশ করে। এই খবরের স্ক্রিনশট নিয়ে শিরোনামটি বদলে দিয়ে “নয়াপল্টনে নিজেদের ছোড়া ইট-পাটকেলে যুবদল নেতা নিহত” শীর্ষক শিরোনাম বসিয়ে ফেসবুকের কতিপয় পোস্টে প্রচার করা হয়েছে, যা আমাদের মনিটরিংয়ে (৩১) বেরিয়ে এসেছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, শিরোনাম তো নয়ই, পত্রিকাটির বিস্তারিত প্রতিবেদনেও এমন কোনো দাবি করা হয়নি।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
কথিত যুবদল নেতা শামীমের বিষয়ে পরবর্তীতে গত ২৯ অক্টোবর আরেকটি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে। সেদিন প্রকাশিত ভাইরাল কিছু পোস্টে একটি ভিডিও যুক্ত করে দাবি করা হয়, ভিডিওটি শামীমের লাশের। তার লাশ ঘিরে পরিবারের সদস্যরা আহাজারির দৃশ্য বলে দাবি করা হয়৷ মজার বিষয় হচ্ছে, একই ভিডিও ব্যবহার করে এটি নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামের দাবি করেও একাধিক ফেসবুক পোস্ট দেখেছি আমরা। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে (৩২) নেমে রিউমর স্ক্যানার জেনেছে, এটি ২৮ অক্টোবর মারা যাওয়া কথিত যুবদল নেতা শামিম বা পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের লাশ নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাগেরহাটের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার লাশের গত ১২ অক্টোবরের পুরোনো ভিডিওকে ভিন্ন দুই দাবিতে সম্প্রতি প্রচার করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল আমিরুলের মৃত্যুতে তার সন্তানের আহাজারির দৃশ্য দাবিতে আরেকটি ভিডিও একইদিন (২৯ অক্টোবর) প্রচার করা হলেও সেটিও যাচাই (৩৩) করে আমরা দেখতে পাই, চট্টগ্রামে চলতি বছরের মে মাসে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত নৈশপ্রহরী আজাদুর রহমান আজাদের মেয়ের কান্নার ভিডিও এটি।
দিনভর নানা ঘটনাবলির পর ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার পর দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, সন্ধ্যায় বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয়ের ভেতরে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা মিয়ান আরাফি। তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলেও দাবি করেন৷
Screenshot Source: Facebook
এ বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে আমরা যখন গত ৩১ অক্টোবর ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করি, ততক্ষণে তাকে পুলিশ আটক করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে (৩৪) বেরিয়ে এসেছে, মিয়ান আরেফির সাথে মার্কিন সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার কাছে Democratic National Committee এর একটি সম্মানসূচক কন্ট্রিবিউটিং মেম্বারশিপ কার্ড রয়েছে, যা ডোনেশনের মাধ্যমে যে কেউই পেতে পারে। অপরের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগ এনে মিয়ান আরেফির বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেদিন রাতেই গণমাধ্যমে তার স্বীকারোক্তিমূলক একটি বক্তব্যের ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ডেমোক্রেট কমিটির লিডার এবং জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলতে।
এভাবেই ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে সমাবেশ আর সংঘাতকে পুঁজি করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে৷
তবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলির রেশ যেমন সেদিনই শেষ হয়ে যায়নি, তেমনি পরের কয়েকদিনও উক্ত দিনের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে ভুল তথ্যের প্রচার এবং প্রসার ঘটতে দেখেছি আমরা। যেমন, গত ২৯ অক্টোবরও ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ কেন্দ্রিক আরও দুইটি ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে। একটিতে প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হয়, টাঙ্গাইলের একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, “তারেক রহমান না আসা পর্যন্ত আর কোন সমাবেশে আসবো না।” ফটোকার্ডে থাকা ব্যক্তির ছবির সূত্র ধরে আমরা অনুসন্ধান করে দেখি, ইনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে (৩৫) জানান, “প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ফটোকার্ডটি প্রথম আলো প্রকাশ করেনি, সেটি আমি আগেই জানতে পেরেছি এবং আমার এমন কোনো মন্তব্য করার প্রশ্নই উঠেনা।”
আরেক ফটোকার্ড ছড়ানো হয়েছে কালবেলা’র আদলে, যেখানে দাবি ছিল এরকম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল এর সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সমাবেশে বলেছেন, পিটার হাস আমাদের উপরে তুলে মই সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে (৩৬) কালবেলাসহ মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৯ অক্টোবর সকালে খবর আসে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন রাতেই তাকে আদালতে হাজির করার আগ পর্যন্ত তিনি ডিবি অফিসেই ছিলেন।
সেদিন বিকেলে কালবেলা ও প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত দুইটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, “ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মির্জা ফখরুল বলেছেন, নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা।”
কিন্তু ফখরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সেদিন দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কী বলেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট দুই গণমাধ্যমও এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ (৩৭) প্রকাশ করেনি।
পরবর্তীতে সেদিন সন্ধ্যার পর তারেক রহমানের নির্দেশে মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামানকে ফখরুলের অবর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে’র লোগো সম্বলিত পৃথক পৃথক ফটোকার্ডে প্রচার হতে দেখা যায়। ফেসবুকের কতিপয় পোস্টে এ সংক্রান্ত বিএনপির আদলে তৈরি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রচার হতে দেখা যায়। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তথ্যটিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত (৩৮) করেন।
পরদিনও মির্জা ফখরুলের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা বন্ধ থাকেনি। ভাইরাল একটি ভিডিওর মাধ্যমে সেদিন দাবি করা হয়, ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়েছেন৷ রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে (৩৯) দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত জানুয়ারি মাসে মির্জা ফখরুলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধারণ করা।
২৯ অক্টোবরের হরতালের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী ছিল৷ সেদিন সকাল নাগাদ ফেসবুকে প্রথম আলো ও কালবেলা’র আদলে তৈরি ভিন্ন দুই ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হয়, নিরাপত্তা বা হরতালজনিত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডক্টর এম মাকসুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে (৪০) বলেন, ‘সমাবর্তন চলমান, স্থগিত হয়নি।’
২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘিরে রিউমর স্ক্যানার ৪০ টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে দুইটি বিষয়ে (১, ২) গণমাধ্যমেও ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর বাইরে সিংহভাগ ভুল তথ্যই ফেসবুকের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কাছে ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে গণমাধ্যমকেই। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখছি, ৪০ টি বিষয়ের মধ্যে ২৫ টিতেই ভুল তথ্য ছড়াতে একাধিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমগুলোর আদলে নকল ফটোকার্ড, গণমাধ্যমের নাম, লোগো এবং ওয়েবসাইটে প্রায় সংবাদের শিরোনাম বদলে দিয়ে ভুল তথ্যগুলোকে সত্য হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে কালবেলা’কে (১১)৷ এছাড়া প্রথম আলোকে জড়িয়ে ১০ টি, মানবজমিনকে জড়িয়ে ০৩ টি, ডেইলি স্টার, সময় টিভি, একাত্তর টিভিকে জড়িয়ে ০২ টি করে এবং চ্যানেল আই, যমুনা টিভি, ইত্তেফাক, ঢাকা পোস্ট, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং জাগোনিউজ২৪ কে জড়িয়ে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
গণমাধ্যম ছাড়াও এবার ভুল তথ্য ছড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে নকল প্রেস বিজ্ঞপ্তিকেও। বিএনপির আদলেই এমন তিনটি নকল প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে, যা দলটি প্রকাশই করেনি। এছাড়া, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নামে একটি করে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের আগে-পরের ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি গুজব ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (২৩ টি), যা মোট ভুলের ৫৭ শতাংশ। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে ০৮ টি, যা শতকরা হিসেবে ২১ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে ০৯ টি।
তাছাড়া, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনকে জড়িয়ে ২৯ টি ভুল তথ্য, আওয়ামী লীগ ও এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে জড়িয়ে ০৫ টি ভুল তথ্য, জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে জড়িয়ে ০৩ টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও সাংবাদিকদের বিষয়ে ০৫ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশময় একটি দিনে রাজনৈতিক ময়দানে ঘটনা প্রবাহের সাথে ঠিক কীভাবে এবং কত উপায়ে সময়ে সময়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ভুল তথ্যের প্রচার এবং প্রসার হয় তার একটি বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকলো।
সম্প্রতি, ‘ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা মেডাম খুব অসুস্থ আপনারা সবাই উনার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন আল্লাহ যেন উনাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বর্তমানে অসুস্থ নন বরং তিনি নিজেই তার সুস্থতার বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে তার মতামত সম্বলিত ভিডিও ইন্টারনেটে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া, তার অসুস্থতার দাবিতে প্রচারিত ছবিটিও প্রায় তিনমাস পূর্বের।
তথ্য যাচাই
সাম্প্রতিক সময়ে রুমিন ফারহানার অসুস্থতার খবরটি গত ০৬ নভেম্বর (সোমবার) থেকে আজ এই প্রতিবেদন লেখা অবধি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। তবে, দেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে রুমিন ফারহানা’র নিয়মিত বক্তব্য প্রচার করা ইউটিউব চ্যানেল (Rumeen’s Voice) পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির অবরোধ, পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠকের বিষয়েও রুমিন ফারহানা’র মতামত সম্বলিত ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রুমিন ফারহানার অসুস্থতার বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং তিনি নিয়মিত টিভি টকশোতে অংশগ্রহণ করছেন বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া, দেশীয় কোনো সংবাদমাধ্যমে এবং বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতেও সাম্প্রতিক সময়ে রুমিন ফারহানার অসুস্থতার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১৫ আগস্ট বিএনপি’র মিডিয়া সেলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারাহার অসুস্থ থাকাকালীন একটি ছবি প্রচার করা হয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐ ছবিটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, রুমিন ফারহানা বর্তমানে অসুস্থ। এছাড়া, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে সম্প্রতি ইন্টারনেটে রুমিন ফারহানার সুস্থ অবস্থার নিয়মিত কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, ‘এইমাত্র পাওয়া ক্ষমতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনামে টিভি চ্যানেল ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন-এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্ষমতায় দাবিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত ২ নভেম্বর ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ‘এইমাত্র পাওয়া রোববার থেকে আবারা ২ দিন অবরোধের ঘোষণা বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন-এর আদলে তৈরি আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন-এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সম্প্রতি প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন-এর ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে উক্ত ফটোকার্ডটির ডিজাইন এবং ফটোকার্ডটিতে যুক্ত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ফটোকার্ডটির টেক্সট ফন্টের সাথে ইনডিপেনডেন্ট’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত অন্যান্য ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডটি এডিট করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে ইনডিপেনডেন্ট-এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৭ নভেম্বর ‘মিথ্যা প্রচার’ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। উক্ত পোস্টে ‘ইনডিপেনডেন্টের নামে ছড়িয়ে দেওয়া সংবাদটি ভুয়া’ বলে জানানো হয়।’
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, ‘এইমাত্র পাওয়া ক্ষমতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনামে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি।
মূলত, গত ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি পালনের পর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অবরোধের শেষদিন ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দলটির পক্ষ থেকে নতুন করে ৫ ও ৬ নভেম্বর ৪৮ ঘন্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচী পালনের ডাক দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে ‘এইমাত্র পাওয়া রোববার থেকে আবারো ২ দিন অবরোধের ঘোষণা বিএনপির’ শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। সম্প্রতি সেই ফটোকার্ডটি-ই ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তায় এডিট বা সম্পাদনার মাধ্যমে ‘এইমাত্র পাওয়া ক্ষমতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, ‘এইমাত্র পাওয়া ক্ষমতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনামে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন-এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, উপস্থাপকের উপর রেগে গেলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একজন উপস্থাপক বলছেন, ‘আমাদের সামনে এই মূহুর্তে বক্তব্য রাখবেন কাউয়া কাদের ওরফে ওবায়দুল কাদের এমপি’। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘এতো কথা বলো কেন? উপস্থাপক এতো কথা বলে না’।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ(আইইবি)’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু ওবায়দুল কাদেরকে কাউয়া কাদের বলেননি বরং এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পূর্ব মুহূর্তে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কর্তৃক ওবায়দুল কাদেরকে সম্বোধনের অংশে ভিন্ন অডিও জুড়ে দিয়ে তার সাথে উক্ত সম্বোধন নিয়ে বক্তব্যের শুরুর অংশ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটি সত্য কিনা তা যাচাইয়ে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে News ABC নামক ফেসবুক পেজে গত ২৮ আগস্ট “উপস্থাপকের উপর বিরক্ত ওবায়দুল কাদের এমপি, বেশি প্রশংসা করতে গিয়ে বিপাকে উপস্থাপক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর বেকগ্রাউন্ড এবং ব্যক্তিদের সাথে আলোচিত ভিডিওর কিছু অংশ এবং আলোচিত ভিডিওতে দোওয়া ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে বলতে দেখা যায়, ‘এই বয়সেও তিনি যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যার কর্মকান্ড দেখে আমরা উৎসাহ পাই, অনুপ্রেরণা পাই আমাদের সেই আজকের প্রধান অতিথি জননেতা আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী জননেতা জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি আমাদেত সামনে দিক নির্দেশনামূলক আমাদের এই উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন জননেতা জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি।’
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এতো কথা কথা বলো কেন? উপস্থাপক এতো কথা বলে না। কথা কমাও। উপস্থাপনা করার সময় একটু কম করে বলো। আমাকে সবাই চেনে, তুমি আমার জন্য ৫ মমিনিট ব্যয় করলে এড্রেস করার জন্য। আমার এ এড্রেসের যেগুলো তুমি বললা এগুলা না থাকলে কি নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে তিনবার সেক্রেটারি করে? এতো বছর মন্ত্রী ডাকে এই মানুষ গুলো কি বেকুব, এরা এসব খবর জানেনা?”
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে MT World নামক ইউটউব চ্যানেলে গত ২৮ আগস্ট “উপস্থাপকের উপর বিরক্ত ওবায়দুল কাদের এমপি, বেশি প্রশংসা করতে গিয়ে বিপাকে উপস্থাপক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম আলোচিত ভিডিওটি কবে কোন অনুষ্ঠানে ধারণ করা তা জানতে ফেসবুকে পাওয়া ভিডিও দুইটির প্রকাশের তারিখ অর্থাৎ ২৮ আগস্ট ওবায়দুল কাদের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন কিনা তা জানার চেষ্টা করে। উক্ত বিষয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম জানতে পারে, গত ২৮ আগস্ট ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) উদ্যোগে সংস্থাটির সদর দপ্তরের সামনে আয়োজিত ‘উন্নয়ন ও শান্তি’ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।
পরবর্তীতে উক্ত অনু্ষ্ঠানের বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের ফিচারে ব্যবহৃত ছবির বেকগ্রাউন্ড এবং ছবিতে থাকা ওবায়দুল কাদের এবং তার পাশে সাদা পাঞ্জাবি পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ওবায়দুল কাদের এবং উপস্থাপকের পোশাকের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Similarity between two screenshot
সময় টিভি’র এই প্রতিবেদনে উক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের নাম উল্লেখ না থাকায় এ বিষয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রথম আলো’র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক উক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ এই মঞ্জুরুল হকই ভিডিওতে থাকা উপস্থাপক।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে উপস্থাপক কর্তৃক ওবায়দুল কাদেরকে বিদ্রুপসূচক সম্বোধনের বিষয়টি সত্য নয়।
মূলত, গত ২৮ আগস্ট ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কাউন্সিলের (আইইবি) এর উদ্যোগে আয়োজিত উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন উক্ত সংঠনের আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু। উক্ত অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদেরকে বক্তব্যের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সময় মঞ্জুরুল হক তাকে লম্বা সম্বোধন করেন এবং এই সম্বোধন প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যের শুরুতে কিছু কথা বলেন। এই সম্বোধনের শেষ অংশে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘কাউয়া কাদের ওরফে’ শীর্ষক অডিও যুক্ত করে ‘আমাদের সামনে এই মূহুর্তে বক্তব্য রাখবেন কাউয়া কাদের ওরফে ওবায়দুল কাদের এমপি।’ শীর্ষক আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও ইন্টারনেটে একাধিকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন-
সম্প্রতি, বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মনোরোগবিদ্যার সিনিয়র কনসালট্যান্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) অধ্যাপক ডা: মো: আজিজুল ইসলামকে দেখিয়েছেন এবং তিনি রুমিনের রোগ শনাক্ত করে কিছু ওষুধ দিয়েছেন দাবিতে একটি প্রেসক্রিপশনের ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। এই প্রেসক্রিপশন প্রচারের ক্ষেত্রে দেশের মূলধারার দুই জাতীয় দৈনিক কালবেলা এবং আজকের পত্রিকা’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ড ব্যবহার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রুমিন ফারহানার প্রেসক্রিপশন দাবিতে কালবেলা ও আজকের পত্রিকা কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং এই প্রেসক্রিপশনটি ভুয়া বলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া, প্রেসক্রিপশনে দৃশ্যমান তথ্যে অসঙ্গতি এবং ভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে উক্ত তথ্য নকলের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
দাবিটির সূত্রপাতের খোঁজে
আলোচিত প্রেসক্রিপশনটি রুমিন ফারহানার শীর্ষক দাবিটির উৎসের খোঁজে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, আজ (০৭ নভেম্বর) রাত ১২ টা ৪৮ মিনিটে ‘আশিকুর রহমান অণু’ নামে একটি ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) করা হয়। জনাব অণু প্রেসক্রিপশনের ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেন, “O M G!! তীব্র মানসিক অবসাদ মানে ডিপ্রেশনে আছেন রুমিন ফারহানা!! সূত্র: স্কয়ার হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন।”
Screenshot source: Facebook
এই পোস্টের ঠিক ২৫ মিনিট পর রাত ১ টা ১৩ মিনিটে অণু এ সংক্রান্ত আরেকটি পোস্ট (আর্কাইভ) করেন, যেখানে তিনি কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড যুক্ত করেন। এই ফটোকার্ডেও আলোচিত প্রেসক্রিপশনের ছবিটি দেখা যাচ্ছিল। ০৭ নভেম্বর তারিখ উল্লিখিত এই ফটোকার্ডের শিরোনাম ছিল এমন, “সাবেক বিএনপি সাংসদ রুমিন ফারহানা ওসিডি (অবসেসিভ কম্পোলসিভ ডিজঅর্ডার) তে ভুগছেন।” জনাব অণু এই পোস্টের ক্যাপশনে জানতে চেয়েছেন, এটি সত্যি কিনা।
Screenshot source: Facebook
এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে Farhana Akter নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে রাত ১ টা ৫৮ মিনিটে একই প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করে আজকের পত্রিকা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড কমেন্ট করতে দেখা যায়। ফটোকার্ডটির শিরোনাম ছিল এমন, “তীব্র অবসাদ আর মানসিক রোগে ভুগছেন বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা।”
Screenshot source: Facebook
ফারহানা আক্তার নামে অ্যাকাউন্টটি (আর্কাইভ) আমরা পর্যবেক্ষণ করে এটিকে ফেক অ্যাকাউন্ট বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।
এই দুই পোস্টের পর আজ সকাল নাগাদ উক্ত দুইটি ফটোকার্ডের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
কালবেলা এবং আজকের পত্রিকা কি এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?
আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত আলোচিত ফটোকার্ডটি যখন ০৭ নভেম্বর রাত ১ টা ১৩ মিনিটে ফেসবুকে প্রথম প্রচার হয় তার পূর্বে একই তারিখ উল্লেখ করে কালবেলা’র ফেসবুক পেজে দুইটি ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়৷ রাত ১২ টা ১৬ মিনিটে এবং রাত ১২ টা ৫৫ মিনিটে করা দুইটি পোস্টের ফটোকার্ডে রুমিন ফারহানা বা বিএনপি সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যই ছিল না। বরং এই দুই ফটোকার্ড ছিল আগেরদিন হওয়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচের বিষয়ে।
পরবর্তীতে কালবেলা’র ওয়েবসাইটে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে রুমিন ফারহানার বিষয়ে অতি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার টিম। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর তার একটি মতামত কলাম প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায় ওয়েবসাইটে।
Screenshot source: Kalbela
একই পদ্ধতিতে আজকের পত্রিকা’র ফেসবুক পেজেও অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। পেজে আলোচিত ফটোকার্ডটির অস্তিত্ব না পাওয়া গেলেও একইদিন সন্ধ্যায় পত্রিকাটি এক ফেসবুক পোস্টে জানায়, আলোচিত ফটোকার্ডটি তাদের নয়। গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজকের পত্রিকা সব সময় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার নীতি মেনে চলে, ফলে গণমাধ্যমটি কোনো ব্যক্তির চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র প্রতিবেদনে বা ফটোকার্ডে কখনো ব্যবহার করে না।
প্রেসক্রিপশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে যা জানা যাচ্ছে
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে প্রেসক্রিপশনটি স্কয়ার হাসপাতালের বলে দাবি করা হয়েছে। গুগলের প্লে স্টোরে স্কয়ার হাসপাতালের একটি এপ্লিকেশন খুঁজে পেয়েছি আমরা। এটির ইন্টারফেসের সাথে আলোচিত স্ক্রিনশটটির দৃশ্যমান মিল পাওয়া যায়।
Screenshot source: Square Hospital App
এবার, প্রেসক্রিপশনটি ভালোভাবে লক্ষ্য করা যাক। এপ্লিকেশনে প্রবেশ করতে শুরুতে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়, রিউমর স্ক্যানার টিমও একটি অ্যাকাউন্ট খুলেই প্রবেশ করে। ছবিতে প্রেসক্রিপশনের উপরের দিকে অ্যাকাউন্টধারীর নাম Rumeen Farhana উল্লেখ রয়েছে।
Image source: Facebook
প্রেসক্রিপশনে রোগীর রোগের লক্ষণ, রোগের বর্ণনা, টেস্ট এবং ওষুধের নাম উল্লেখ দেখা যাচ্ছে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, রুমিন ফারহানা Major Depressive Disorder এবং Post Traumatic Stress Disorder (PTSD) নামে দুইটি রোগে আক্রান্ত বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রেসক্রিপশনে সাতটি Symptoms বা রোগের লক্ষণ রয়েছে। এই লক্ষণগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে মার্কিন মানবস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান WebMD এর ওয়েবসাইটে গত আগস্টে ডিপ্রেশন বিষয়ক একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। এই প্রতিবেদনে ডিপ্রেশনের নয়টি লক্ষণ উল্লেখ দেখেছি আমরা। এর মধ্যে ৩ এবং ৪ নং ছাড়া বাকি সাতটি লক্ষণের সাথে আলোচিত প্রেসক্রিপশনে থাকা সাতটি লক্ষণের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
একই প্রতিবেদনে ডিপ্রেশন নির্ণয়ে পয়েন্ট আকারে তিনটি টেস্টের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে যথাক্রমে MRI, EKG এবং EEG। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রেসক্রিপশনটিতেও একই ক্রমধারায় এই তিনটি টেস্টের বিষয়ই উল্লেখ রয়েছে।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখের এই প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার আজিজুল ইসলাম তিনটি ওষুধ দিয়েছেন বলে দেখা যাচ্ছে।
প্রথমটি Arpolax tablet 20mg। এটি দিনে তিনটি করে সকাল বা সন্ধ্যায় খেতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই ওষুধ তৈরি করে থাকে ইনসেপটা পার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ট্যাবলেট সাধারণত PTSD এর রোগীরাও গ্রহণ করেন। সাধারণ মাত্রায় দিনে একটি খেতে হয় এটি। তবে অবস্থা গুরুতর হলে দিনে তিনটি খাওয়ারও পরামর্শ দিয়ে থাকে ডাক্তাররা।
দ্বিতীয়টি Melixol tablet 10mg। এটি দিনে দুইটি করে দুপুরে খেতে বলা হয়েছে। এটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্কয়ার পার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সাধারণ মাত্রায় প্রতিদিন Melixol এর একটি করে ট্যাবলেট সকালে এবং দুপুরে খেয়ে থাকে রোগীরা। তবে সমস্যা গুরুতর হলে সকালের ডোজে দুইটি করে ট্যাবলেট খাওয়া যায়।
তৃতীয়টি Anaframil tablet 150mg। এটি দিনে একটি করে ঘুমানোর পূর্বে খেতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই ট্যাবলেটের নাম কিওয়ার্ড সার্চ করে হুবহু একই নামে কোনো ট্যাবলেটের অস্তিত্ব মেলেনি। তবে Anafranil নামে একটি ট্যাবলেটের খোঁজ মিলেছে যা Sandoz নামে একটি কোম্পানি তৈরি করে থাকে৷ এই ওষুধ সাধারণত ২৫ মিলিগ্রাম পরিমাণে পাওয়া যায়। ডিপ্রেশনের রোগীদের এই ট্যাবলেট দিনে ১০ থেকে ১৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পরিমাণে খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকে ডাক্তাররা৷
অর্থাৎ, প্রথম ওষুধটির বিষয়ে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক বলে প্রতীয়মান হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওষুধটির তথ্যে গরমিল রয়েছে।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা?
সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম স্কয়ার হাসপাতালে মনোরোগবিদ্যার সিনিয়র কনসালট্যান্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) অধ্যাপক ডা: মো: আজিজুল ইসলামের সাথে কথা বলেছে। তার সাথে আমাদের দীর্ঘ আলাপ হয়েছে এ বিষয়ে। তিনি বলছিলেন, এটা তার দেয়া প্রেসক্রিপশন নয়। “আর এই ওষুধ কখনো কোনো পেশেন্টকে দিয়েছি বলে মনে হয় না।”
সম্প্রতি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তার কাছে গিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানালেন, এটি বলা সমীচীন হবে না। কারণ পেশেন্টদের তথ্য বাইরে প্রকাশ করা উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি। তবে তিনি এটা নিশ্চিত করেছেন যে এই প্রেসক্রিপশন তিনি দেননি৷
ডাক্তার আজিজুল বলছেন, এগুলো (ডাক্তারদের বিষয়ে ভুল তথ্য) আসলে বন্ধ হওয়া দরকার।
আমরা এ বিষয়ে জানতে রুমিন ফারহানার সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মনোরোগবিদ্যার সিনিয়র কনসালট্যান্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) অধ্যাপক ডা: মো: আজিজুল ইসলামকে দেখিয়েছেন এবং তিনি রুমিনের রোগ শনাক্ত করে কিছু ওষুধ দিয়েছেন দাবিতে একটি প্রেসক্রিপশনের ছবি দেশের দুই গণমাধ্যম কালবেলা এবং আজকের পত্রিকা’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সংশ্লিষ্ট দুই গণমাধ্যমসহ দেশের কোনো গণমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডে বিদ্যমান প্রেসক্রিপশনের ছবিতে থাকা তথ্যগুলো যাচাই করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, টেস্টের নাম এবং রোগের লক্ষণগুলো মার্কিন মানবস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান WebMD থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রেসক্রিপশনে উল্লিখিত তিনটি ওষুধের প্রথমটির বিষয়ে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক বলে প্রতীয়মান হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওষুধটির তথ্যে গরমিল দেখা গেছে। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট ডাক্তারও এটি তার দেওয়া প্রেসক্রিপশন নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার স্কয়ার হাসাপাতালের প্রেসক্রিপশনের ছবি দাবিতে প্রচারিত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং একই দাবিতে কালবেলা ও আজকের পত্রিকা’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো ভুয়া বা বানোয়াট।
সম্প্রতি,‘পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে পুলিশ মুখ খুললো হাসপাতালের আহত পুলিশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ নিহত হননি এবং উক্ত ঘটনায় আহত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনো পুলিশ সদস্যও এমন কোনো তথ্য প্রদান করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ইউটিউবার ও সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘হাসিনার ফাদ হইতে সাবধান!’ শীর্ষক শিরোনামে সম্প্রতি প্রচারিত একটি ভিডিওর কিছু অংশ কাট করে তার শুরুতে এবং শেষাংশে উপস্থাপকের ভয়েস যুক্ত করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, ভিডিওটিতে সঞ্চালক দাবি করেন, গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং হামলার ব্যাপারে আহত পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছেন। গোপন তথ্যসূত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক ইলিয়াস উক্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করে তার ভিডিওর মাধ্যমে তিনি তা জনসম্মুখে এনেছেন। এরপর উপস্থাপক দর্শকদের উদ্দেশ্যে সেই ভিডিওটি দেখান।
আলোচিত সেই ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাংবাদিক ইলিয়াস কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবি করেন যে পুলিশ বাহিনীতে যেসকল সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ তাদেরকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাঠিয়ে থাকেন। কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হওয়ায় তাকে সেদিন সেখানে ডিউটিতে পাঠানো হয়। এছাড়াও তিনি দাবি করেন যে, তার ধারণা কনস্টেবল আমিরুল পারভেজকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছেন। কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিডিওটিতে তিনি তার বক্তব্যের সপক্ষে নানা বিশ্লেষণ উপস্থান করেন। তবে, ভিডিওটির কোথাও পুলিশ সদস্যের করা গুলিতে কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ নিহত হওয়ার ব্যাপারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করেও ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে কনস্টেবল নিহত হওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে থাম্বনেইলে ব্যবহৃত আহত পুলিশ সদস্যদের ছবিগুলো উক্ত ঘটনার কিনা তা যাচাই করতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বাংলানিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৩ জুন বিএনপির হামলায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত, আটক ১৩ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Banglanews24
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটির ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত থাম্বনেইলে ব্যবহৃত আহত পুলিশ সদস্যদের ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
পাশাপাশি জানা যায়, উক্ত ছবিটি সেসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরগুনার আমতলী উপজেলা বিএনপির ডাকা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির সময়ের। কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের ওপর তখন দলটির নেতাকর্মীরা হামলা চালান। এসময় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। যাদের দুজনকে উক্ত ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
এছাড়াও প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় আহত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনো পুলিশ সদস্যের সেদিন পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে কনস্টেবল নিহত হওয়ার তথ্য প্রদানের কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে The Business Standard এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের ওপর বর্বরোচিত সেই হামলা শীর্ষক থাম্বনেইল এবং রাজধানীর ফকিরাপুল চার রাস্তার মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘ’র্ষে এক পুলিশ কনস্টবল নিহত হয়েছেন শীর্ষক ক্যাপশনে ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ভিডিওটিতে হামলার শিকার পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে কাউকে গুলি করতে দেখা যায়নি। বরং ভিডিওতে একদল উত্তেজিত জনতা কর্তৃক কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বেধরপ প্রহার করতে দেখা যায়।
এছাড়া, চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘যেভাবে হামলা চালানো হলো পুলিশের উপর’ শীর্ষক শিরোনামে একই স্থানের ৩:০৫ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওটিতেও শিকার পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে কাউকে গুলি করতে দেখা যায়নি।
প্রতিবেদনটিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান-এর নেতৃত্বে সেদিন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এসময় একটি বড় ইটের আঘাতে কনস্টেবল আমিরুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। উক্ত ঘটনায় রাজধানীর মহাখালী থেকে আমানউল্লাহ আমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য প্রমাণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের সময় পুলিশে গুলিতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ নিহত হননি।
মূলত, গত ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সমাবেশের এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। উক্ত সংঘর্ষ চলাকালে একদল উত্তেজিত জনতার হামলায় রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় আমিরুল পারভেজ নামের একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। এছাড়াও একই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ব্যাপক আহত হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে পুলিশ মুখ খুললো হাসপাতালের আহত পুলিশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। যেটিতে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্র ছাড়াই সাংবাদিক ইলিয়াসকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্বারা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ডিউটিতে প্রেরণের এবং পুলিশ কনস্টেবল হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার দাবি করতে শোনা যায়। এছাড়াও ভিডিওটির কোথাও পুলিশের গুলিতে কনস্টেবল নিহত হবার বিষয়ে কোনো প্রদান করতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, ২৮ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে পুলিশ নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস অ্যাক্সিডেন্ট কিংবা আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেননি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আপু বিশ্বাস বর্তমানে জীবিত এবং সুস্থ রয়েছেন।
অপু বিশ্বাস মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলোতে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি, তাছাড়া একটি ভিডিওতে অপু বিশ্বাস সড়ক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে তার সাম্প্রতিক অবস্থার কোনো ভিডিও কিংবা ছবিও দেখানো হয়নি। অপর একটি ভিডিওতে বলা হয়েছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সেখানে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তার সাবেক স্বামী শাকিব খান চিত্রনায়িকা বুবলিকে বিয়ে করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও এই দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গতকাল ০৬ নভেম্বর একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Apu Biswas Facebook Page
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম দারাজ আয়োজিত ১১.১১ শো। উক্ত লাইভ প্রোগ্রামটিতে আপু বিশ্বাস অংশ নিয়েছেন।
তাছাড়া, অপু বিশ্বাসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের গত দুইদিনের আরও কিছু পোস্ট (১, ২) পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেগুলো থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় আছেন।
এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ০৪ নভেম্বর ‘তাপস বুবলীর প্রেম, মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে তাপস-বুবলির প্রেম ইস্যুতে অপু বিশ্বাস একটি ভারতীয় গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন।
অর্থাৎ, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে এখন পর্যন্ত অপু বিশ্বাসের মৃত্যুর কিংবা অসুস্থতার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস সড়ক দুর্ঘটনায় এবং আত্মহত্যা করে মারা গেছেন দাবি করে একাধিক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অপু বিশ্বাস বর্তমানে জীবিত এবং সুস্থ আছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গত ৫ নভেম্বর Al Minar নামের ইউটিউব চ্যানেলে “সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি” শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) প্রকাশ করা হয়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও চায়নি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন দুইটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ১৪ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে দুইটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক আলোচিত ভিডিওটির উদ্দেশ্যে দুটি ভিডিও দেখান, যেগুলোতে ভয়েজ বাংলার প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ এবং বাংলা ইনফোটিউব এর কন্টেন্ট ক্রিয়েটর শাহেদ আলমের বক্তব্য রয়েছে।
প্রথম ভিডিও যাচাই
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে, গত ৪ নভেম্বর Voice Bangla নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “হঠাৎ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভাতীয় দূতের সাক্ষাত। Mustofa Feroz I Voice Bangla” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় মোস্তফা ফিরোজ গত ৩ নভেম্বর জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে “শেখ হাসিনার প্রতি দৃঢ় সমর্থন থাকবে ভারতের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনাচ্ছেন।
এছাড়া, গত ৩ নভেম্বর জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে “নতুন তিনটি প্রকল্প দুই দেশের জন্যই কল্যাণকর: প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরও একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান তিনি।
মোস্তফা ফিরোজের এই ভিডিওটি কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটির সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উক্ত দাবি সম্পর্কে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় ভিডিওটি যাচাই
অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ৪ নভেম্বর Bangla InfoTube নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “মাঠের মনোবল বুঝত্র হলে ২ ছবি ও কিছু কথা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত শাহে আলমের মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
১১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় শাহেদ আলম গত ২ নভেম্বর চ্যানেল ২৪ এর ওয়েবসাইটে “গ্রেপ্তার আতঙ্কে ফসলের মাঠে রাত কাটছে বিএনপির নেতাকর্মীদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
এছাড়া, ভিডিওতে থাকা তথ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির দাবির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া বিষয়ক কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে Al Minar নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। এছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, পূর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে:
সম্প্রতি, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশনের দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
উক্ত ভিডিওতে দাবি করা হয়, ভারতের বিপক্ষে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা বলেছেন, “ভারত আম্পায়ার এবং নিজের মাঠের সুবিধা নিয়ে ম্যাচ জিতেছে। এ ম্যাচে আম্পায়াররা বেশকিছু সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে দিয়েছে। বিশ্বকাপের মত আসরে আম্পায়ারদের এমন সিদ্ধান্তগুলো সত্যিই হতাশাজনক। ভারতকে জেতানোর জন্য যদি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়ে থাকে, তাহলে এভাবে না খেলে কাপটা ভারতকে দিয়ে দিলেই তো হয়।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বকাপ আয়োজনে ভারতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা কোন মন্তব্য করেননি বরং টেম্বা বাভুমার ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশনের দৃশ্যের সাথে ভুয়া মন্তব্য যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওতে টেম্বা বাভুমার মন্তব্যের তথ্যসূত্র হিসেবে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করা হয়।
উক্ত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা অংশগ্রহণ-ই করেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন কোচ রব ওয়াল্টার। উল্লেখ্য যে সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রব ওয়াল্টার বলেন, ভারতের বিপক্ষে হারার পর কলকাতার পিচকে দোষারোপ করা খুবই সংকীর্ণ মনের এবং অন্যায় কাজ হবে।
Source: India Today
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, গত ৫ নভেম্বর Ramen Sports TV নামের ইউটিউব চ্যানেলে “Temba bavuma post match presentation today || India vs South Africa || world cup 2023 ||” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার সাক্ষাৎকার পর্ব দেখতে পাওয়া যায়।
তবে, বাভুমার ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশনের সাক্ষাৎকার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি ভারতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কোনো মন্তব্য-ই করেননি।
Source: Ramen Sports TV
পাশপাশি, খেলাধুলা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Cricbuzz এর ওয়েবসাইটে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৩ বিশ্বকাপ ম্যাচের কমেন্ট্রি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
কিন্তু, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের কমেন্ট্রি থেকেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
Source: Cricbuzz
এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে টেম্বা বাভুমার আলোচিত মন্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর ক্রিকেট বিশ্বকাপের ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ২৪৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে ভারত।
মূলত, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ভারতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে টেম্বা বাভুমা অংশগ্রহণ-ই করেননি। এছাড়াও কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তার এরূপ মন্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, পূর্বে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ভারতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।