সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার নামে গণমাধ্যমের আদলে তৈরিকৃত ‘এমপি, রুমিনের ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)’ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
কোনো গণমাধ্যম উল্লেখ ব্যতীত ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার ভিডিও ভাইরালের দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড এবং ভিডিও ভাইরালের দাবিটিও মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র একটি ফটোকার্ড সম্পাদনার মাধ্যমে আরেক গণমাধ্যম প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহার করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
ফটোকার্ডটি প্রথম আলো’র নয়
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে গত ১৬ জুলাই 71 TV নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘দারুন না ব্যাপারটা (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটিতে জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো’র লোগো রয়েছে। তবে ফটোকার্ডটিতে কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে এমন কোনো প্রতিবেদন বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া গণমাধ্যমটির প্রকাশিত একাধিক ফটোকার্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের সাথে গণমাধ্যমটি কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের ভিন্নতা রয়েছে।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র ফটোকার্ড সম্পাদনা করে এটি তৈরি
ফটোকার্ডটির উৎস নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র ফেসবুক পেজে গত ২১ এপ্রিল ‘বুবলীর ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল’ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ফটোকার্ডের সাথে রুমিন ফারহানার ভিডিও ভাইরালের দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডিজাইন ও শিরোনামের শব্দচয়নের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডটি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে একই গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গত ২৬ এপ্রিল ‘ফের বুবলীর ২৫ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)’ শীর্ষক আরও একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ফটোকার্ডে উপস্থাপিত শিরোনামের গঠনের সাথে রুমিন ফারহানার ভিডিও ভাইরালের দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের শিরোনামের গঠনের মিল দেখা যায়।
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির ভাষা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেখানে রুমিন ফারহানার নামের পূর্বে এমপি সম্বোধন করা হয়েছে এবং পরে রুমিন ফারহানার নামের পূর্বে কমা ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি তার পুরো নামটিও ব্যবহার করা হয়নি।
অপরদিকে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাসহ বিএনপির সাত সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন।
স্বাভাবিকভাবে গণমাধ্যমে এমন ভাষাগত ও তথ্যগত ভুল দেখা যায় না। এসব বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই ফটোকার্ডটি কোনো গণমাধ্যমের তৈরি নয়।
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের আদলে ফটোকার্ড তৈরি করে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে ‘এমপি, রুমিনের ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)’ শীর্ষক দাবিতে জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক প্রথম আলো’র লোগো সম্বলিত একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের ফটোকার্ড, লোগো ইত্যাদি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের একটি ফ্যাক্টফাইল দেখুন
সুতরাং, প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহারের মাধ্যমে রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে তার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।