সম্প্রতি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক করার দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের বেশকিছু ভিডিওর অংশ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ছবি যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ভিডিও যাচাই- ১
এই ভিডিও ফুটেজে একজন উপস্থাপককে বলতে শোনা যায় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ’।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ এপ্রিল ‘কতটুকু এগোলো জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া, জানালেন চিফ প্রসিকিউটর’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির প্রথম ফুটেজের সাদৃশ্য রয়েছে।

উল্লেখিত ভিডিও প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ০০:০৯ থেকে ০০:১৩ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই অংশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে পুলিশের গ্রেফতার করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের উল্লেখিত অংশে উপস্থাপক বলেন ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩৯ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৫৪ জন আর পলাতক ৮৭ জন, এই তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম’। প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে উক্ত ভিডিওর ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম’ অংশটির পর ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ’ সূচক একটি অডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিও ফুটেজটি তৈরি করা হয়েছে।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর প্রথম ফুটেজটি সম্পাদিত।
ডিডিও যাচাই- ২
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সাংবাদিক সুলতানা রহমানের নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ‘New York Bangla Life’ নামক চ্যানেলে গত ১২ অক্টোবর ‘কী ঘটছে সেনাবাহিনীতে? কী করবেন ওয়াকার?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর দ্বিতীয় ফুটেজটির সাদৃশ্য রয়েছে।

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে সুলতানা রহমান সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের সাথে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনায় আওয়ামী লীগ আমলের গুমের ঘটনায় দুটি মামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা পরোয়ানা, এসব মামলার বিভিন্ন আইনি দিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের ভূমিকা নিয়ে কথা বলা হয়।
আলোচনার এক পর্যায়ে ভিডিওটির ৩১:২০ থেকে ৩১:৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে সুলতানা রহমান প্রশ্ন করেন ‘তাহলে কি তাজুল ইসলাম সরকার আর সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে?’, যা আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটির উল্লেখিত অংশে বা অন্য কোনো অংশে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটকের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই- ৩
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম বায়ান্ন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ মার্চ চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের পদত্যাগ চাই’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর তৃতীয় অংশটির মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওতে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা এক নারীর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়৷ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে প্রশ্ন করে ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ থেকে ওই নারী তাজুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন।
উক্ত ভিডিওটির উল্লেখিত অংশে বা অন্য কোনো অংশে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটকের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ছবি যাচাই- ১
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছবিটিতে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে। ছবিটিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সাথে থাকা পাঁচজন সেনা সদস্যের মধ্যে চারজনের মুখমণ্ডল হুবহু এক।

এই ছবিটির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Hive Moderation এর ওয়েবসাইটে ছবিটি যাচাই করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে পুলিশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক করা হলে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হতো। কিন্তু গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Channel 24 – কতটুকু এগোলো জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া, জানালেন চিফ প্রসিকিউটর
- New York Bangla Life – কী ঘটছে সেনাবাহিনীতে? কী করবেন ওয়াকার?
- Bayanno TV – YouTube Video
- Hive Moderation – Website