সম্প্রতি, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবৃতি’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটিতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে বলতে শোনা যায়, ‘নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ডেফিনেটলি যে অশান্ত পরিবেশ, পরিস্থিতির কারণে। এই নিষেধাজ্ঞা চলে যাবে, যখন পরিস্থিতিটা শান্ত হবে। আর আমি খুবই আশাবাদী, কারণ আমরা সারাবিশ্বে মানবিকতার জন্য বিখ্যাত। আপনারা জানেন যে, জাতিসংঘে আমরা অনেকদিন ধরে এক নম্বর শান্তিরক্ষাকারী দেশ৷ আর এটা অর্জনের পেছনে যে সমস্ত গুণাবলি আছে, তার ভেতরে অন্যতম হলো যে আমাদের এই মানুষের প্রতি দরদ এবং সহনশীলতা। মানবাধিকার লঙ্ঘন- টঙ্গন এই ধরনের কোনো অ্যাক্টিভিটিস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাই।…দেশের ক্ষতি করছে, দেশের জনগণের ক্ষতি করছে সেটাকে রোধ করতে যেয়ে যদি আমাদের একটু শক্ত অবস্থানে যেতে হয়, অবশ্যই যাবো। বাট সেটা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছুর সমাধান চাই। মরণ কামড় কেউ দিলে আমরাও তা প্রতিহত করবো৷ এটাই ন্যাচারাল।’

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)
ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ কোনো বক্তব্য দেননি। বরং গত জুন মাসে বান্দরবান সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দেওয়া সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউবে গত ৪ জুন “পাহাড়ে সন্ত্রাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে: সেনাপ্রধান” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বান্দরবানে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বান্দরবানের তিন উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচিত বক্তব্যটি দেন।
একইদিনে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকায় “সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে: সেনাপ্রধান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টে (কেএনএফ) মূল ঘাঁটিসহ অধিকাংশ আস্তানা ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী কবজায় নিয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করা যাবে। সেই সঙ্গে কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়, তাদেরও স্বাগতম জানানো হবে।’
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বান্দরবানের তিন উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে করা প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, ‘অশান্ত পরিস্থিতির কারণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত হলে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হবে। আমি আশাবাদী, কারণ যেহেতু আমাদের দ্বিতীয় ধাপে যেটুকু দখল করার কথা, সেটুকু আমরা দখল করে ফেলেছি।’
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও আলোচিত দাবিটি সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উক্ত দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়, সেনাপ্রধানের বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি বক্তব্যকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, গত ৪ জুন বান্দরবানে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের জন্য বান্দরবানের তিন উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন। সেই সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিওকেই সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আমেরিকার ভিসা নীতি নিয়ে সেনাবাহিনী থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
সুতরাং, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবৃতি দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jamuna Television YouTube Channel
- Ajker Patrika- সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে: সেনাপ্রধান