রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো শবনম ফারিয়ার নয় বরং, একজন ভারতীয় ডিজিটাল ক্রিয়েটরের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, arjohi নামক ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৪ জুন থেকে ০২ জুলাই প্রকাশিত একাধিক পোস্টে কিছু ছবি (১, ২, ৩) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ছবিগুলোর আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রচারিত ছবির সাথে এসব ছবিতে থাকা ব্যক্তির পোশাক, অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক সবকিছুর মিল রয়েছে কিন্তু উভয় ছবিতে থাকা নারীদের চেহারা ভিন্ন।
Comparison: Rumor Scanner
ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতীয়মান হয়, আর্জহী নামক নারীর ছবিগুলোতে তার মুখমণ্ডলের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শবনম ফারিয়ার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
তাছাড়া, অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া তার ফেসবুক পেজে গত ০৩ জুলাই একটি পোস্টের মাধ্যমে জানান, প্রচারিত ছবিগুলোতে থাকা ব্যক্তি তিনি নন, ছবিগুলো সম্পাদিত। উক্ত পোস্টে তিনি ভারতের কলকাতা ভিত্তিক ডিজিটাল ক্রিয়েটর আর্জহীর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টের লিংক যুক্ত করেন দেন।
Screenshot: Facebook
সুতরাং, অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পাদিত।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘এভাবে চলছে বিএনপি, এনসিপি শিবিরের রাজনীতি।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তির কাঁধে কোদাল দিয়ে কেউ একজন আঘাত করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সংঘাতের ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় একটি পাঞ্জাবি গানের মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটি বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Kashyap up35k নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এটি নিশ্চিত যে এটি আলোচিত ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণ।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির শিরোনাম এবং হ্যাশট্যাগ থেকে জানা যায়, এটি ভারতীয় একটি পাঞ্জাবি গানের মিউজিক ভিডিওর অ্যাকশন সিনের শুটিংয়ের সময় ধারণ করা দৃশ্য। এছাড়াও ভিডিওটির লোকেশন ট্যাগ থেকে জানা যায়, এটি ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের রাজধানী চণ্ডীগড়ে ধারণ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, চ্যানেলটিতে মূলত পাঞ্জাবি মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের দৃশ্য প্রচার করা হয়। চ্যানেলটিতে প্রচারিত এমন কিছু শুটিংয়ের ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। তবে চ্যানেলটির বিস্তারিত বিবরণীতে চ্যানেলটি পরিচালনকারীর সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য না থাকায় তার বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর তথ্য মতে, দেশে গত ৬ মাসে কমপক্ষে ৫২৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৭৯ জন নিহত এবং অন্তত ৪ হাজার ১২৪ জন আহত হয়েছেন।
সুতরাং, ভারতীয় মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের দৃশ্যকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংঘাতের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “বাংলাদেশের সর্বসাধারণের কাছে একটি প্রশ্ন এর নামি”ই কি দেশ চালানো👇” ক্যাপশনসহ ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশনে এক বৃদ্ধকে প্রকাশ্যে মারধরের সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃদ্ধকে প্রকাশ্যে মারধরের ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়। বরং, ২০২১ সালে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে প্রকাশ্যে এক বৃদ্ধকে মারধরের দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত ইমেজ রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম India Today এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর “TDP worker thrashed on camera, party blames ruling YSRCP” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় অন্ধ্র প্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি (ওয়াইএসআরসিপি) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। টিডিপি দাবি করেছে , মারধরের শিকার ব্যক্তি তাদের দলের (টিডিপি) কর্মী, ওয়াইএসআরসিপি সদস্যরা তাকে মারধর করেছে।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একই তারিখে আলোচিত বিষয়ে Ashish নামক ভারতীয় এক সাংবাদিকের এক্স পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। একই ভিডিও প্রকাশ করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, “ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে সাঈদা নামে এক ব্যক্তিকে শিবা রেড্ডি ও অন্যরা নির্মমভাবে মারধর করছে—এমন একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। বিরোধী দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) অভিযোগ করেছে, হামলাকারীরা ওয়াইএসআরসিপি দলের সঙ্গে যুক্ত। তবে পুলিশ বলেছে, এটি একটি জমি-সংক্রান্ত বিরোধ। অভিযুক্ত সবাই পলাতক রয়েছে।” (অনূদিত)
Video of a man identified as Saida being brutally thrashed by one Shiva reddy and others emerge. Opposition #TDP alleged attackers linked to #YSRCP, Police says ‘land dispute’. All the accused are ‘absconding’. #AndhraPradeshpic.twitter.com/e1Z6zwVNuc
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে একই বিষয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের পালনাড়ু জেলা পুলিশের এক্স একাউন্টে প্রকাশিত পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। পালনাড়ু জেলা পুলিশের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তুম্মলচেরুভু টোল প্লাজার কাছে সাঈদার ওপর হামলার ঘটনায় FIR নম্বর 651/21 অনুযায়ী সেসময় মামলা রুজু করা হয়েছে।
অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত যে এটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার ভিডিও নয়।
সুতরাং, ২০২১ সালে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে প্রকাশ্যে এক বৃদ্ধকে মারধরের দৃশ্যকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে ঘটনা বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘কুমিল্লায় সমন্বয়করা মব সৃষ্টি করতে গেলে সেনাবাহিনী তাদের ধরে ফেলে এবং কড়া ডোজের থেরাপি দেয়’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মুখে মাস্ক পরিহিত কিছু ব্যক্তি একটি ব্রীজের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে, এবং তাদের কয়েকজনকে সেনাসদস্য পেটাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক মারধরের কোনো ঘটনার নয়। বরং, অন্তত ২০২১ সালের জুলাই থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘ABIDUR ISLAM SHAJIB’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ‘Bangladesh Army Punishment // বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শাস্তি’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উল্লিখিত সূত্রগুলোর কোনোটিতেই ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই। ভিডিও আপলোডের সময়কাল ও ক্যাপশনগুলো পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা যায় যে, ভিডিওগুলো ২০২১ সালে করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ের। ভিডিওটি কোন স্থানের কিংবা কবে ধারণ করা তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এটি নিশ্চিত যে এটি একটি পুরোনো ভিডিও। স্বাভাবিকভাবেই ভিডিওটির সাথে জুলাই আন্দোলন কিংবা বর্তমান সময়ের সম্পৃক্ততা নেই।
সুতরাং, অন্তত ২০২১ সালের জুলাই থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে সম্প্রতি কুমিল্লায় সমন্বয়করা মব সৃষ্টি করতে গেলে সেনাবাহিনী তাদের ধরে কঠোর শাস্তি দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনাকে নির্দোষ প্রমান করতে যত মিথ্যা বলা দরকার আমি বলবো’ শিরোনামে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের ছবি যুক্ত করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনজীবী আমির হোসেনকে উদ্ধৃত করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি এবং আমির হোসেনও এমন কোনো মন্তব্য করেননি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ভিন্ন একটি ফটোকার্ড সম্পাদনা করে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের লোগো রয়েছে। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডের চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের লোগো এবং আইনজীবী আমির হোসেনের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, এই ফটোকার্ডটির ‘শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেননি, অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন’ শীর্ষক শিরোনামের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘শেখ হাসিনাকে নির্দোষ প্রমান করতে যত মিথ্যা বলা দরকার আমি বলবো’ শিরোনাম প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।’ সম্পাদিত ফটোকার্ডে ‘শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন’ অংশটি অপরিবর্তিত রয়েছে। তাছাড়া, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘জুলাই – আগস্ট গণহত্যায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেয়া প্রতিবেদন থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। গত ৭ জুলাই বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে এ আবেদন করেন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের “রাজাকারের বাচ্চা” বলেননি। অপব্যখ্যা করা হয়েছে।’
চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ব্যতীত অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
সুতরাং, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ‘শেখ হাসিনাকে নির্দোষ প্রমান করতে যত মিথ্যা বলা দরকার আমি বলবো’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করে ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণের বক্তব্য শুনুন বাস্তব ও সত্য কথা।”
ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তির “চাচা, বিএনপির গুণ কী কী” প্রশ্নের জবাবে একজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন৷ চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে।”
উল্লেখ্য যে, উক্ত ব্যক্তির উত্তরটি ক্যাপশনে সংযুক্ত করেও উক্ত ভিডিওটি সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নামে পরিচালিত ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ নানা ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটি আসল নাকি নকল এরূপ কোনো সতর্কতা না থাকায় অনেকেই এটি আসল সাক্ষাৎকার ধরে নানা মন্তব্য করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাধারণ জনগণের ‘বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন৷ চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে।’ বলার কোনো আসল দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটির সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি “Ai Manob” নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ০১ জুলাইয়ে প্রচার হতে দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতেও ‘AI Manob’ এর জলছাপ পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে এআই দিয়ে তৈরি একাধিকভিডিও নানাসময়ে প্রচার হতে দেখা যায়। পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।
Collage: Rumor Scanner/Cantilux,Hive Moderation
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “Cantilux” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৭ শতাংশ।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পাঁচই অগাস্ট পরবর্তী সময়ে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৭ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৭ জুন পর্যন্ত ১০ মাসে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে ১২৩ জন খুন হয়েছেন—এমন অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন নেতা। তবে উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে করা একটি প্রতিবেদন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে অভিযোগটির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা হয়।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে সাধারণ জনগণের ‘বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন৷ চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে।’ বলার আসল দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে বাম হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনি গাড়ি থেকে বের হয়ে তার জন্যে অপেক্ষমান কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির সাথে বাম হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাম হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ময়মনসিংহ ডিভিশনাল টেনিস টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ পৌঁছে সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের সাথে তার ডান দিয়ে হ্যান্ডশেক করার ভিডিও ডিজিটাল প্রযুুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে মিরর করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম Dhaka Talk-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। ভিডিওটিতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে অপেক্ষমান প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে ডান হাত দিয়েই হ্যান্ডশেক করতে দেখা যায়। মূলত, এই ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় মিরর করায় সেখানে আসিফ মাহমুদকে ডান হাতের জায়গায় বাম হাতে হ্যান্ডশেক করতে দেখা যায়।
উক্ত গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনার মাধ্যমে সেদিনের আরও কয়েকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকে জানা যায়, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সেদিন ময়মনসিংহ ডিভিশনাল টেনিস টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করতে যান।
পরবর্তীতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একইদিন অর্থাৎ ২৭ জুন প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহ ডিভিশনাল টেনিস টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় টেনিস ফেডারেশনে হয়। যেখানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
সুতরাং, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে বাম হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত।
এই প্রতিবেদন লেখা অবধি টিকটকে একটি ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার বারেরও বেশি। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার বারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি ১ হাজার বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে র্যাব খুলনা থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেনি। এছাড়া, বিএনপি কিংবা ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়ার দাবি করা হয়নি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে সংবাদ পাঠিকার কন্ঠে বলতে শোনা যায়, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও রহস্যময় গুমকাণ্ডের অবসান হলো আজ। ২০১২ সালে রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীকে র্যাবের একটি বিশেষ কমান্ডো ইউনিট জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। খুলনার প্রত্যন্ত দিঘলিয়া উপজেলার চরের মধ্যভাগে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত চিনি কলের ভূগর্ভস্থ ঘর থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হতেই দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে একে রাষ্ট্রীয় গুমের স্বীকৃতি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।”
ভিডিওটিতে আরও বলা হয়, “র্যাব-৭ এর গোয়েন্দা বিভাগের কাছে গোপন তথ্য আসে যে খুলনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একটি পুরনো কারখানার ভেতরে অনেক দিন ধরে অজ্ঞাত এক বন্দীকে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর র্যাবের হেডকোয়ার্টার থেকে অনুমোদন নিয়ে ‘অপারেশন রিভাইভ’ (Operation Revive) নামের একটি বিশেষ উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়।”
প্রাথমিকভাবে আমাদের পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে দাবি করা তথ্যে কিছু অসঙ্গতি আছে বলে হয়েছে। যেমন-
ভিডিওটিতে র্যাব-৭ কর্তৃক ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। র্যাব-৭ মূলত চট্টগ্রাম অঞ্চলে (র্যাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী – চট্রগ্রাম, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি) তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভিডিওটিতে ইলিয়াস আলীকে খুলনা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই র্যাব-৬ এর বিষয় আসার কথা, কেননা র্যাব-৬ মূলত খুলনা অঞ্চলে (র্যাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী -খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, মাগুড়া, ঝিনাইদহ ও গোপালগঞ্জ) তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
অন্যদিকে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদনমূলক ভিডিওটিতে র্যাবের সাবেক মুখপাত্র আল মঈন এর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যিনি বর্তমানে বাহিনীরটির দায়িত্বে নেই।
তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সম্প্রতি খুলনায় ‘অপারেশন রিভাইভ’ (Operation Revive) নামে র্যাবের কোনো উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হওয়ার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর ওয়েবসাইটেও তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে ইলিয়াস আলী সম্পর্কিত আলোচিত এমন কোনো অভিযানের তথ্য পাওয়া যায়নি। বিএনপি কিংবা ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এমন দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
তবে, মূলধারার সংবাদমাধ্যম যায়যায়দিন এর ওয়েবসাইটে গত ৬ জুলাই প্রচারিত ‘ভারতের কারাগারে ইলিয়াস আলী: এম এ মালেক’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিদেনটিতে বলা হয়, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক দাবি করেছেন, নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে শেখ হাসিনা সরকার গুম করেছে। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী সরকারের কাছে ‘আতঙ্ক’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন এবং সম্ভবত তাকে ভারতের কোনো কারাগারে রাখা হয়েছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় নিজ বাড়িতে বালাগঞ্জ উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় এম এ মালেক বলেন, “ইলিয়াস আলী ছিলেন সরকারের চোখে ‘এক আতঙ্ক’। তাই তাকে গুম করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, একদিন ইলিয়াস আলী জনতার মাঝে ফিরে আসবেন।’
অর্থাৎ, প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি ইলিয়াস আলীর সর্বশেষ অবস্থা নিশ্চিত করে বলেননি। তিনি বলেছেন “সম্ভবত তাকে ভারতের কোনো কারাগারে রাখা হয়েছে”
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী।
সুতরাং, নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে খুলনা থেকে র্যাব উদ্ধার করেছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার খুশিতে অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান জানা যায়, জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক ভূঁইয়া মারা যাননি। প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে এই নেতার খুশিতে মদ পান করে নাচার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। তবে এই নেতার মৃত্যুর দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। তিনি বেঁচে আছেন।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জামিনে মুক্তি পাওয়ায় অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের কোনো আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ব্যক্তির ছবির সাথে উক্ত প্রতিবেদনের ছবির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ছবিটি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক ভূঁইয়ার। জুলাই আন্দোলনের একাধিক মামলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে উচ্চ আদালত থেকে দুই মামলায় জামিন নিয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান। মুক্তি পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে তার রাতে বিভিন্ন গ্রামে গোপন বৈঠক এবং নেশাগ্রস্থ হয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার তথ্যও পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তার এমন মদ্যপান করে নাচার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। প্রতিবেদনটিতে ওই আওয়ামী লীগ নেতার সাথে ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে আলাপ হওয়ার কথা বলা হয়।
আলোচিত ভিডিওর বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ২৪ এর ফেসবুক পেজে কিশোরগঞ্জের ওই আওয়ামী লীগ নেতার মদ্যপান করে নাচের ভাইরাল ভিডিওটির সন্ধান পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনগুলোর কোথাও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর কথা বলা হয়নি। বরং ভিডিওর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুতরাং, জামিনে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার খুশিতে অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির স্লোগান সদৃশ একটি ভিডিও প্রচার করে ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “সাধারণ জনগণের কথা”।
ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তির “তোমরা সবাই কী চাও?” প্রশ্নের জবাবে বাকীদের বলতে শোনা যায়, “আমরা চাই আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফিরুক। শান্তি চাই। উন্নয়ন চাই। আওয়ামী লীগ চাই।”
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি এককভাবে প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে। শেয়ার করা হয়েছে ৪১ বার।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাধারণ জনগণের আওয়ামী লীগকে আবার সরকারে ফেরত চাওয়ার দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটির সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি “rsrohimbd24” ইউজারনেমের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ২৯ জুনে প্রচার হতে দেখা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে এআই দিয়ে তৈরি একাধিকভিডিও নানাসময়ে প্রচার হতে দেখা যায়। পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।
Screenshot of Claimed Video
এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Rumor Scanner/Cantilux
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “Cantilux” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে সাধারণ জনগণের আওয়ামী লীগকে আবার সরকারে ফেরত চাওয়ার দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।