Home Blog

সমকামিতার অভিযোগে এনসিপি নেতা মুনতাসিরের অব্যাহতির খবরটি বিভ্রান্তিকর, ছবিটিও ভিন্ন ব্যক্তির

গত ১২ অক্টোবর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর ফেসবুক পেজে এনসিপির সংগঠক মুনতাসির মাহমুদ বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ ও অব্যাহতির চিঠি পোস্ট করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমতাবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র আহবায়ক জনাব নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব জনাব আখতার হোসেনের নির্দেশ মোতাবেক আপনাকে দলের সকল প্রকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে এতদ্দ্বারা সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এ অব্যাহতি আদেশ আজ হতে কার্যকর হবে।’ একই সঙ্গে কেন মুনতাসিরকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা দলের কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান জনাব অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল-আমিনের নিকট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিতে বলা হয়।

এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ‘সমকামিতার অভিযোগে সমালোচনার মুখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে।’ এছাড়াও, মুনতাসির মাহমুদের ছবি দাবিতে একজন ব্যক্তির ছবিও প্রচার করা হয়েছে। 

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন : ঢাকা প্রকাশ, বার্তা বাজার, নয়া সংবাদ, জাগো বাংলা, আন্তঃবাণী, মতবাদ, পিএনএস নিউজ২৪, সাভার নিউজ২৪

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে পরবর্তীতে পরিবর্তন করে জাগোনিউজ২৪।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে সমকামিতার অভিযোগে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি বরং, দলীয় শৃ্ঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, মুনতাসির মাহমুদের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি প্রকৃতপক্ষে মোহাম্মদ মুনতাসির রহমান নামে ভিন্ন এক ব্যক্তির, যিনি এনসিপির প্রতিষ্ঠাকালে শুরুর দিকে যুগ্ম সদস্য সচিব পদ লাভ করলেও ‘এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত’ থাকার অভিযোগে সমালোচনা শুরু হলে এক পর্যায়ে তাকে এনসিপি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মুনতাসির মাহমুদের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে ‘Md Muntasir Rahman’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে দুইটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির তুলনা করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে দুজন একই ব্যক্তি।

Comparison : Rumor Scanner

পোস্টটির ক্যাপশনে মুনতাসির রহমান লিখেন, ‘২০২৫ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি—আমার এনসিপিতে যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পর, টানা দুই দিন ধরে আমার ছবি ও পরিচয়কে ঘিরে নিরন্তর জনসমক্ষে বুলিং, হয়রানি ও হুমকির শিকার হতে হয়। শেষ পর্যন্ত আমাকে এনসিপি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হয়রানি চলতে থাকে। তবুও আমি আবার উঠে দাঁড়িয়েছি, এবং নিজের মত  আমার জীবন চালিয়ে যাব।..’

পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে একাধিক গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে সেসময় জাতীয় নাগরিক পার্টির আংশিক কমিটির তালিকা পাওয়া যায়। উক্ত কমিটিতে যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে মুনতাসির রহমানের নামও উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও, অনুসন্ধানে জানা যায়, সে সময় ‘এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত’ থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে গত ২ মার্চে জাতীয় নাগরিক পার্টির ফেসবুক পেজে ১ বছরের জন্য অনুমোদিত কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হলে সেখানে যুগ্ম সদস্য সচিব পদ থেকে মুনতাসির রহমানের নাম বাদ পড়ে। অপরদিকে উক্ত তালিকায় সংগঠক পদে মুনতাসির মাহমুদ নামে একজনের নাম পাওয়া যায়। 

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক ‘মুনতাসির মাহমুদ’ এর ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে এনসিপির ফেসবুক পেজে মুনতাসির মাহমুদকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার পোস্টটি অ্যাকাউন্টটি থেকে গত ১৪ অক্টোবরে শেয়ার করতে দেখা যায়। শেয়ার করে মুনতাসির মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমি আজ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলামোটর কেন্দ্রীয় অফিসে যাবো, কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব দিতে। সাংবাদিক এবং যারা যোগাযোগ করতেছেন, চাইলে আসতে পারেন।’ এছাড়াও, গত ১৫ অক্টোবরে অ্যাকাউন্টটি থেকে পোস্ট হওয়া আরো দুইটি পোস্টেও শোকজ নোটিশের জবাব দিয়েছেন বলে জানানো হয়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রকৃতপক্ষে এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিই এনসিপি থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তি মুনতাসির মাহমুদের। অ্যাকাউন্টটিতে মুনতাসির মাহমুদের ছবিও পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাথে স্পষ্টত বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়, যা প্রমাণ করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংবাদে সংযুক্ত মুনতাসির রহমান ও সম্প্রতি এনসিপি থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি পাওয়া মুনতাসির মাহমুদ দুজন ভিন্ন ব্যক্তি।

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে মুনতাসির মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে এনসিপি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়ে তাকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ ও মাহফুজের ভাইকে দায়ী করে নানা পোস্ট দিতে ও রেড ক্রিসেন্টের নাম উল্লেখ করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ‘দুপুরে রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ, সন্ধ্যায় এনসিপি থেকে অব্যাহতি’ শিরোনামে গত ১২ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে অব্যাহতি দিয়েছে দলটি। আজ রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ওই বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় এনসিপি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে একদল লোক নিয়ে দুপুরে মগবাজারে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মধ্যে ঢুকে বিক্ষোভ করেন মুনতাসির মাহমুদ।এরপর সন্ধ্যায় মুনতাসির মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও অব্যাহতির চিঠি পাঠিয়েছে এনসিপি। সেটি দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।… অবশ্য মুনতাসির মাহমুদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ এনসিপির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। চিঠিতে দপ্তর সেলের সদস্য সাদিয়া ফারজানা দিনার স্বাক্ষর রয়েছে। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (মুনতাসির) দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন। এ জন্য তাঁকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের ঘটনাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এমন নয়। এখন আপাতত দলের শৃঙ্খলা কমিটি থেকে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তদন্ত চলাকালে আমরা এর বাইরে খুব বেশি কথা বলতে পারব না।’ এই চিঠি ও অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে এনসিপি নেতা মুনতাসির মাহমুদকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলে তিনি কল কেটে দেন।’

এছাড়াও, এ বিষয়ে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ১৩ অক্টোবরে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়, ‘..রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে আসলে কী ঘটছে, মুনতাসির কেন এনসিপি থেকে অব্যাহতি পেলেন, এখন কেন তিনি উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাইকে দুষছেন—এসব বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাতে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর মুনতাসির রেড ক্রিসেন্টে উপপরিচালক পদে চাকরি পেয়েছিলেন। আর উপদেষ্টা মাহফুজের ভাই মাহবুব রেড ক্রিসেন্টের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রেড ক্রিসেন্টে মুনতাসির মাহমুদের চাকরিটি ছিল অস্থায়ী। কয়েক দিন ধরে তিনি রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন। এনসিপির পক্ষ থেকে নিষেধ করার পরও গতকাল তিনি সেখানে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন রেড ক্রিসেন্টের বোর্ড সভায় তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়।’

প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলম প্রথম আলোর জিজ্ঞাসায় বলেন, প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ‘বিশেষ বিবেচনায়’ রেড ক্রিসেন্টের উপপরিচালক পদে চাকরি নিয়েছিলেন মুনতাসির। তিনি কয়েক দিন ধরে রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এর মধ্যে গত শনিবার রাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন মুনতাসির ও এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মাহমুদা মিতু (রেড ক্রিসেন্টের আরেক বোর্ড সদস্য)। নাহিদ তাঁদের আন্দোলনের পরিবর্তে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু মুনতাসির তারপরও বিক্ষোভ চালিয়ে যান।’ পরবর্তীতে মুনতাসির মাহমুদ প্রথম আলোর প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবরে আরেকটি পোস্ট করেন। এছাড়াও, আরো নানা গণমাধ্যমেও মুনতাসির মাহমুদ ও রেড ক্রিসেন্টের ইস্যুর বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। তবে কোথাও তার বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মুনতাসির মাহমুদের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি প্রকৃতপক্ষে মুনতাসির রহমান নামে ভিন্ন এক ব্যক্তির এবং মুনতাসির মাহমুদের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগে অব্যাহতির বিষয়টি সঠিক নয়।

সুতরাং, ভিন্ন ব্যক্তির ছবিকে মুনতাসির মাহমুদ দাবি করে সমকামিতার অভিযোগে মুনতাসির মাহমুদকে এনসিপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশে মাহমুদউল্লাহর মন্তব্য দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

ওয়ানডেতে প্রথমবারের মত আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গত ১৪ অক্টোবর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আফগানদের কাছে ২০০ রানের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যাতে সাবেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ লাইভে এসে বাংলাদেশের এই হার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। 

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশে মাহমুদউল্লাহ কোনো মন্তব্য করেননি বরং, জুলাইয়ের পুরোনো ও ভিন্ন প্রসঙ্গের ভিডিও ব্যবহার করে ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়েে অনুসন্ধানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফেসবুক পেজে গত ২৬ জুলাই  প্রচারিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওর ক্যাপশন এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, প্রবাস বাংলা প্রিমিয়ার লীগ ২০২৫”  এর “ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর” হিসেবে যুক্ত হয়েছেন তিনি। সৌদি আরবের রিয়াদে ১৫ আগস্ট থাকবেন জানিয়ে ভিডিওতে বক্তব্য দেন রিয়াদ। 

অর্থাৎ, পুরোনো ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবির কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবির সপক্ষে মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশে মাহমুদউল্লাহর মন্তব্য দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

তৃতীয় প্রান্তিকে রাজনৈতিক অপতথ্যে বিস্ফোরণ  

0
  • তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শনাক্ত ৯৫৯ ভুল তথ্য।
  • নয় মাসে ২৭৫৪ ভুল তথ্য শনাক্ত।
  • তৃতীয় প্রান্তিকে রাজনৈতিক অপতথ্য বেড়েছে ৬৯ শতাংশ।
  • রাজনৈতিক দলের মধ্যে বেশি অপতথ্যে আ’লীগ ও ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম।
  • একক ইস্যুতে বেশি ভুল তথ্য ডাকসু নির্বাচন ঘিরে।
  • সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ৭২টি, পুলিশকে নিয়ে ৫৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত।
  • সাম্প্রদায়িক অপতথ্য বাড়লেও স্থিতিশীলতা রয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারে।
  • ৭২টি ঘটনায় ২৮ সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৭৩টি অপতথ্য।

চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে প্রচার হওয়া ৯৫৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। তৃতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অপতথ্য, যা শনাক্ত হওয়া মোট ভুল তথ্যের প্রায় ৬৪ শতাংশ। সবমিলিয়ে গেল নয় মাসে বাংলাদেশে প্রচার হয়েছে এমন ২৭৫৪টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। গত বছর একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। এই প্রান্তিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য প্রচারের পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে রীতিমতো ভুয়া তথ্যের নিরন্তর প্রবাহও লক্ষ করা গেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে রিউমর স্ক্যানার প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকসহ অন্যান্য প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।  

রাজনৈতিক ইস্যুতে অপতথ্যের ভয়াবহতা

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির ময়দানে এখন বিভিন্ন ইস্যুতেই বেশ সরগরম। এর রেশ যে অপতথ্যের প্রবাহেও পড়ছে তা জানান দিচ্ছে পরিসংখ্যানই। এ বছর তৃতীয় প্রান্তিকে এসে রাজনৈতিক অপতথ্যের যেন বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে। প্রথম দুই প্রান্তিকে যেখানে রাজনৈতিক ইস্যুতে ৭১০টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে, সেখানে তৃতীয় প্রান্তিকেই শনাক্ত হয়েছে ৬১৫টি অপতথ্য। দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে এই ক্ষেত্রটিতে অপতথ্য বেড়েছে প্রায় ৬৯ শতাংশ।

রাজনীতির ময়দানে গেল তিন মাসে নানা ঘটনা প্রবাহ দেখা গেছে। ০৯ জুলাই রাজধানীর মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা, ১৯ জুলাই ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ, ২০ জুলাই আওয়ামী লীগের চারটি সংগঠনের ডাকা হরতাল, ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী, সিলেটে পাথর লুটের ঘটনা, ২৯ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষ, ০৯ সেপ্টেম্বরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এবং ১১ সেপ্টেম্বরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপতথ্যের প্রবাহ ছিল লক্ষ্যণীয়। এসব ঘটনায় একক ইস্যু হিসেবে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বাধিক ৫২টি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া, গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ৩৮টি, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ২১টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। 

অপতথ্যের এই ভয়াবহতার আঁচ লেগেছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে আলোচনায় থাকা দলগুলোর সবকটিকে জড়িয়েই অপতথ্যের প্রচার বেড়েছে। বৃদ্ধির এই হার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ক্ষেত্রে। প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে বিএনপিকে জড়িয়ে অপতথ্যের প্রচার বেড়েছে প্রায় ১৮০ শতাংশ। এনসিপির ক্ষেত্রে এই হার আরো বেশি, প্রায় ২০৪ শতাংশ।

তৃতীয় প্রান্তিকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়া অপতথ্যগুলোয় সবচেয়ে বেশি নাম এসেছে বর্তমানে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। দলটি, দলটির বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে গত তিন মাসে ২৮৩টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এর মধ্যে শুধু দল হিসেবেই আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়েছে ১১০ অপতথ্যে। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এসব অপতথ্যের প্রায় ৯৪ শতাংশই দলটির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ের মধ্যে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে সর্বাধিক অপতথ্য (৬৩) প্রচার করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিএনপিকে জড়িয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৫১) অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে শনাক্ত হওয়া ৬৬টি অপতথ্যের মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ের মধ্যে দলটির বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে ১০টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে নয়টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গেল তিন মাসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এই দলটির অঙ্গ সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে ১২৬টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে দল হিসেবে জামায়াতকে জড়িয়ে প্রচার হয়েছে এমন অপতথ্য ছিল ৪৮টি। এসবের প্রায় ৯৩ শতাংশই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ের মধ্যে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান দুইটি অপতথ্যের শিকার হয়েছেন, যার সবগুলোতেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।  

এছাড়া, এনসিপিকে জড়িয়ে তৃতীয় প্রান্তিকে ৭৩টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে এনসিপিকে জড়িয়ে প্রচার হয়েছে এমন অপতথ্য ছিল ৩৩টি; যার সবগুলোতেই দলটিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে চারটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসবের সবগুলোতেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।  

জাতীয় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ভুল তথ্য কমেছে

চলতি বছর রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে অপতথ্যের প্রবাহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেলেও জাতীয় বিষয়ে এর ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রথম প্রান্তিক থেকে তৃতীয় প্রান্তিকে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় বিষয়ে ভুল তথ্যের প্রবাহ কমে এসেছে। এই হ্রাসের হার প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ।

জাতীয় ক্ষেত্রে এই তিন মাসে ভুয়া তথ্যের প্রবাহে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে অন্তত দুইটি বড় ঘটনা। ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বাহিনীর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৯টি এবং খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় ২০টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও তৃতীয় প্রান্তিকে ভুল তথ্যের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে এই হ্রাসের হার প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ। এর কারণ বৈশ্বিক ইস্যুভিত্তিক ঘটনাবলী কমে আসা৷ দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় গণহত্যা, পাকিস্তান-ভারত সংঘাত, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুর কারণে ভুল তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও তৃতীয় প্রান্তিকে এমন উল্লেখযোগ্য কোনো বৈশ্বিক ইস্যু দেখা যায়নি। ফলে ভুল তথ্যের পরিমাণেও এর প্রভাব পড়েছে। 

অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় প্রান্তিকে ধর্মীয় ইস্যুতে অপতথ্যের প্রবাহ যেমন বেড়েছে তেমনি এশিয়া কাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে খেলাধুলা বিষয়েও ভুল তথ্যের প্রবাহ দেখা গেছে। এছাড়া, বিনোদন অঙ্গনের বিভিন্ন তারকাকে জড়িয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে অপতথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে দেখা গেলেও শেষ তিন মাসে তা হ্রাস পেতে দেখা গেছে। 

ভুল তথ্যের নিয়মিত শিকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার  

গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরের ০৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দায়িত্ব পরবর্তী সময় থেকেই নিয়মিত ভুয়া তথ্যের শিকার হচ্ছে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তৃতীয় প্রান্তিকে সরকার ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে জড়িয়ে ৭৭টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। অবশ্য প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে সংখ্যাটি ছিল আরো বেশি, যথাক্রমে ১২৮ ও ১২১টি। 

তৃতীয় প্রান্তিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ভুল তথ্যের পরিমাণও কমেছে। তাকে জড়িয়ে জানুয়ারি থেকে মার্চে ৫০টি, পরের তিন মাসে ৬২টি ভুল তথ্য প্রচার হলেও তৃতীয় প্রান্তিকে এই সংখ্যা ৩৭টি৷

এছাড়া এই সরকারের নয় জন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে গেল তিন মাসে সর্বমোট ২৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে জড়িয়ে নয়টি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে পাঁচটি, ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে চারটি, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে দুইটি এবং মাহফুজ আলম, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সি আর আবরার,

ফারুক-ই-আজম ও বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া একটি করে ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে।

সেনাবাহিনী-পুলিশ ভুয়া তথ্যের লক্ষ্যবস্তু

দেশে সশস্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জড়িয়ে এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১৭৯টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এই হার বেড়েছে প্রায় চার শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ ৭২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। বাহিনীটির বর্তমান প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে গত তিন মাসে ১৯টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ৫৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে এই তিন মাসে। দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় যা বেড়েছে প্রায় ২২৮ শতাংশ! এছাড়া, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে নিয়ে একটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। 

এর বাইরে, তিন মাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে নিয়ে ১৩টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নিয়ে দুইটি, র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) নিয়ে চারটি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নিয়ে ছয়টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

নির্বাচন সংক্রান্ত অপতথ্যে এআই-ফটোকার্ড

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাব্য একটি সময়ের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অপতথ্যের প্রবাহও লক্ষ্যণীয়। গেল তিন মাসে নির্বাচন সংক্রান্ত ২৫টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। যদিও দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এই হার কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে শনাক্ত হওয়া নির্বাচন সংক্রান্ত অপতথ্যগুলোর মধ্যে আটটিতে ভুয়া ও সম্পাদিত ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে অপতথ্যের প্রচারে শক্তিশালী ও বহুল প্রচলিত মাধ্যম হয়ে উঠেছে গণমাধ্যমের ফটোকার্ড। এর সাথে গণমাধ্যমের নাম, লোগো এবং আনুষঙ্গিক উপাদান ব্যবহার করে নিয়মিতই অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৭২টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২৮টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৭৩টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভি ও কালবেলার নাম সবচেয়ে বেশি (১০) ব্যবহার করা হয়েছে। এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে কালের কণ্ঠ ও আমার দেশ (৭) এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে চ্যানেল২৪, একাত্তর টিভি ও ঢাকা পোস্ট (৪)।

নির্বাচন সংক্রান্ত অপতথ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে নিয়মিত। তৃতীয় প্রান্তিকে এমন চারটি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। শুধু নির্বাচন ইস্যুতেই নয়, এআই এর অপব্যবহার হচ্ছে সব ক্ষেত্রেই। তৃতীয় প্রান্তিকে সব মিলিয়ে ১২৩টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, যাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। একই সময়ে ১৮টি ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ও ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারে লাগাম

সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল কিছু মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ৩৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। দ্বিতীয় প্রান্তিকে শনাক্ত হয় ২৮টি৷ গেল তিন মাসে শনাক্ত হওয়া সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলো মধ্যে ২০টি ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

এছাড়া, তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশ সম্পর্কিত পাঁচটি ঘটনায় ভারতের ৩১টি সংবাদমাধ্যমে পাঁচটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি (৩) অপতথ্য প্রচারের দরুন এই তালিকায় সবার উপরে আছে ইন্ডিয়া টিভি। 

মেটা প্লাটফর্মে ভুয়া তথ্যের বন্যা

দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে ফেসবুকে ভুল তথ্য প্রচারের হার কিছুটা হ্রাস পেলেও একই সময়ে ইনস্টাগ্রামে প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে ভুল তথ্যের প্রচার। একই সময়ে আরেক প্লাটফর্ম টিকটকেও ভুল তথ্য শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। এই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা এক্সের ক্ষেত্রেও দেখা গেলে ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে ভুল তথ্য প্রচারের হার অনেকটাই স্থিতিশীল দেখা গেছে।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছাড়াও দেশের গণমাধ্যমও ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত তিন মাসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ভুল তথ্য, ছবি এবং ভিডিও সম্বলিত ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে ৫১টি, যা আগের দুই প্রান্তিকের তুলনায় বেশি। এছাড়া, একই সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অন্তত পাঁচটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা সম্বলিত ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ৬৭৩টি৷ এছাড়া, বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে ১৮৯টি। বিকৃত রেটিং পেয়েছে ৯৬টি। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে একটি। এসব ভুল তথ্য শনাক্তের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করা হয়েছে ২২৫টি, ছবি যাচাই করা হয়েছে ১৩০টি এবং ভিডিও যাচাই করা হয়েছে ৬০৪টি। 

কাজের পদ্ধতি

এই পরিসংখ্যানটি রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়েছে। পরিসংখ্যান প্রকাশের নিমিত্তে নিয়মিত গত তিন মাসের প্রতিটি প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এরপর তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত তুলনা করা হয়েছে চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকের সাথে। পরবর্তীতে সেগুলোকে ইনফোগ্রাফিক এবং লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

রাকসু নির্বাচনে জামায়াত শিবির অস্ত্র বিলি করছে দাবিতে খাবার বিতরণের ভিডিও প্রচার

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। এর প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে অস্ত্র বিলি করছেন দাবিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আমানউল্লাহ আমান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও প্রচার করেন।

মোঃ আমানউল্লাহ আমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

মোঃ আমানউল্লাহ আমানকে সূত্র দেখিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি প্রচার করা হয়। 

একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি প্রচার করেন। 

মোঃ আমানউল্লাহ আমান একই দাবি করে গণমাধ্যমেও বক্তব্য প্রদান করেন। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অস্ত্র বিলি করার দৃশ্য নয় প্রকৃতপক্ষে, খাবার বিতরণের সময় ধারণ করা ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম Mirror News এর ফেসবুক পেজে একই ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনের জঙ্গলে জামায়াত অস্ত্র  বিতরণ করছে, এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে মিরর নিউজ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া স্থানটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের বিপরীত পাশে অবস্থিত বন বিভাগের একটি জায়গা। দীর্ঘ সময় পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নির্বাচন দেখতে সেখানে আসেন বলে মিরর নিউজকে বক্তব্য প্রদানকারী একজন দাবি করেন। তিনি বলেন সেখানকার পরিবেশ মনোরম হওয়ায় তারা সেখানে পিকনিকের আয়োজন করেছেন। আগতদের মাঝে বাদাম বিতরণের সময় কেউ একজন দূর থেকে সেটির ভিডিও ধারণ করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করেছেন বলেও তিনি জানান। প্রতিবেদনে পিকনিকের রান্নার ফুটেজের পাশাপাশি একদল তরুণকে বসে শিবিরের গান গাইতেও দেখা যায়। প্রতিবেদনে বক্তব্য প্রদানকারীদের কিংবা ভিডিওটি দেখতে পাওয়া ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও উক্ত গান থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিরা জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত।

পরবর্তীতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কালো রংয়ের মত পোশাক পরিহিত একজন ব্যক্তি কয়েকজনের হাতে কিছু একটা দিচ্ছেন। যা নিয়ে বাকিদের খেতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে নীল রংয়ের পোশাক পরিহিত একজন ব্যক্তিকে এবং আলোচিত বস্তু বিতরণকারীকে স্পষ্টভাবে হাতে নেওয়া বস্তুটি খেতে দেখা যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে অস্ত্র নয় বরং খাবারই দেওয়া হচ্ছিল। কারণ অস্ত্র বিতরণ করা হলে সেটি কারও মুখে পুরে নেওয়াটা বাস্তবসম্মত নয়। 

অনুসন্ধানে পরবর্তীতে এ ঘটনায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, আলোচিত তথ্যটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় সেখানে বিভিন্ন দলের সমর্থক স্থানীয় উৎসুক লোকজন বাগানের পায়ে হাঁটা পথে ঘুরা ফেরা করছে, গাছের ছায়ায় আড্ডা দিচ্ছে এবং খাওয়া দাওয়া করছে। যার খুব নিকটেই পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি সদস্যদের অবস্থান। বাস্তবতা হচ্ছে এরকম একটি প্রকাশ্য স্থানে পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়া কর্মীদের নাকের ডগায় অস্ত্র বিতরণ করা সম্ভব নয়। কোন একটি মহল উৎসুক লোকজনের আড্ডা দেয়া ও খাওয়ার বিষয়টি দূর থেকে ধারন করে অস্ত্র বিতরণের নামে গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও আতংক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এছাড়াও উক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সবাইকে গুজব ছড়ানো এবং মিথ্যা তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়। 

সুতরাং, রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের মাঝে অস্ত্র বিলি করার দৃশ্য দাবিতে খাবার বিতরণের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • Mirror News Facebook Post
  • Rajshahi Metropolitan Police – RMP Facebook Post
  • Rumor Scanner’s Analysis

চাকসুর ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

গত ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। এরই প্রেক্ষাপটে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হট্টগোলের দৃশ্য সংবলিত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দাবি করা হয়, এটি চাকসু নির্বাচনের ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ও হাতাহাতির দৃশ্য।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি চাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে কোনো হাতাহাতির তথ্যও পাওয়া যায়নি। বরং, ভিডিওটি গত মার্চে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক পদে নিয়োগ নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ঘটে যাওয়া হট্টগোলের দৃশ্য।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ৪ মার্চ মূল ধারার গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যার শুরুর অংশের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। ভিডিওর বর্ণনা অনুযায়ী, এটি প্রশাসনিক পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইবি উপাচার্য কার্যালয়ে ঘটে যাওয়া হট্টগোলের দৃশ্য।

Comparison: Rumor Scanner.

একই দিন জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপাচার্যের কক্ষে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত শিক্ষক–কর্মকর্তা, ছাত্রদলের নেতা–কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা ও হট্টগোল হয়েছে। রেজিস্ট্রার পদসহ কয়েকটি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া নিয়ে সেদিন বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটেছ। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক চাকসু নির্বাচনের নয়, বরং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্চের পুরোনো ঘটনার।

উল্লেখ্য, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দিয়ে শেষ হওয়া চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের এক নম্বর গেটে বিএনপি-ছাত্রদল ও জামায়াত-ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থান নিলেও ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে কোনো হাতাহাতির তথ্য বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।
ফলাফল অনুযায়ী, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা ভিপি, জিএসসহ ২৪টি পদে জয়ী হন। ভিপি পদে মো. ইব্রাহিম হোসেন, জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব এবং এজিএস পদে ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান নির্বাচিত হন।

সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার একটি পুরোনো ভিডিওকে চাকসু নির্বাচনের ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ও হাতাহাতির দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাপ্রধানের নির্দেশে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আটক দাবিতে ভুয়া ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক করার দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের বেশকিছু ভিডিওর অংশ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ছবি যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিও যাচাই- ১

এই ভিডিও ফুটেজে একজন উপস্থাপককে বলতে শোনা যায় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ’।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ এপ্রিল ‘কতটুকু এগোলো জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া, জানালেন চিফ প্রসিকিউটর’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির প্রথম ফুটেজের সাদৃশ্য রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

উল্লেখিত ভিডিও প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ০০:০৯ থেকে ০০:১৩ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই অংশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে পুলিশের গ্রেফতার করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের উল্লেখিত অংশে উপস্থাপক বলেন ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩৯ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৫৪ জন আর পলাতক ৮৭ জন, এই তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম’। প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে উক্ত ভিডিওর ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম’ অংশটির পর ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ’ সূচক একটি অডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিও ফুটেজটি তৈরি করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর প্রথম ফুটেজটি সম্পাদিত। 

ডিডিও যাচাই- ২

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সাংবাদিক সুলতানা রহমানের নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ‘New York Bangla Life’ নামক চ্যানেলে গত ১২ অক্টোবর ‘কী ঘটছে সেনাবাহিনীতে? কী করবেন ওয়াকার?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর দ্বিতীয় ফুটেজটির সাদৃশ্য রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে সুলতানা রহমান সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের সাথে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনায় আওয়ামী লীগ আমলের গুমের ঘটনায় দুটি মামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫ জন  সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা পরোয়ানা, এসব মামলার বিভিন্ন আইনি দিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের ভূমিকা নিয়ে কথা বলা হয়। 

আলোচনার এক পর্যায়ে ভিডিওটির ৩১:২০ থেকে ৩১:৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে সুলতানা রহমান প্রশ্ন করেন ‘তাহলে কি তাজুল ইসলাম সরকার আর সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে?’, যা আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

উক্ত ভিডিওটির উল্লেখিত অংশে বা অন্য কোনো অংশে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটকের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৩

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম বায়ান্ন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ মার্চ চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের পদত্যাগ চাই’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর তৃতীয় অংশটির মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা এক নারীর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়৷ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে প্রশ্ন করে ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ থেকে ওই নারী তাজুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন। 

উক্ত ভিডিওটির উল্লেখিত অংশে বা অন্য কোনো অংশে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটকের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ছবি যাচাই- ১

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছবিটিতে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে। ছবিটিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সাথে থাকা পাঁচজন সেনা সদস্যের মধ্যে চারজনের মুখমণ্ডল হুবহু এক। 

Comparison: Rumor Scanner

এই ছবিটির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Hive Moderation এর ওয়েবসাইটে ছবিটি যাচাই করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ।

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে পুলিশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক করা হলে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হতো। কিন্তু গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আটক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আমেরিকা থেকে ডিবি হারুনের প্রকাশ্যে আসার দাবিতে পুরোনো টকশোর ভিডিও প্রচার 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে দেশ ত্যাগ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উডল্যান্ড শহরে দেখা যায় বলে একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, তিনি আমেরিকা থেকে প্রকাশ্যে এসেছেন দাবিতে ‘আমেরিকা থেকে প্রকাশ্যে ওসি হারুন এই প্রথম মুখোমুখি ওসি হারুন ও ইউনূস’ শীর্ষক শিরোনামে তার এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের একটি টকশোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

টিকটকে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের সাথে ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদের টকশোর ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাংবাদিক মাসুদ কামাল ও ডিবি হারুন-অর-রশিদকে নিয়ে ২০২৩ সালে ডয়চে ভেলেতে করা একটি টকশোর ভিডিও ডিজিটার প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ভিডিওটির শিরোনামে ডিবি হারুন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুখোমুখি হওয়ার কথা বলা হলেও প্রচারিত ভিডিওটির কোথাও ড. ইউনূসকে দেখতে পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে প্রায় তিন মাস আগে একই দাবিতে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যায়। যেটিতে হারুন-অর-রশিদ এবং খালেদ মুহিউদ্দীনের পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও দেখতে পাওয়া যায়। এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে

পরবর্তীতে ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে DW বাংলা টকশো-এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ সাকিব, পুলিশ ও আয়নাবাজি শিরোনামে প্রচারিত ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোর একটি পর্ব খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

টকশোর ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও এবং উক্ত টকশোতে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং ডিবি হারুন-অর-রশিদকে একই পোশাকে দেখা যায়। এছাড়াও টকশোর বিভিন্ন অংশের বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর বক্তব্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। পাশাপাশি উক্ত টকশোতেও ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে পাওয়া যায়নি। বরং, টকশোতে ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদের পাশাপাশি সাংবাদিক মাসুদ কামাল অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। যাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে বাদ দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে টকশোর মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছেন দাবিতে পুরোনো টকশোর ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব আলম জামিনে মুক্তি পাননি 

গত ১৫ মে সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর যুবলীগের সভাপতি মো. মাহবুব আলমকে গ্রেফতার করে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় এরপর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। 

সম্প্রতি, ‘চাঁদপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলো কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব আলম’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব আলম জামিন পাননি। এমনকি প্রচারিত ভিডিওটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের জুন মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভের পর মাহবুব আলমের আনন্দ মিছিলের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য কচুয়া থানার পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। 

কচুয়া থানার ওসি মো. আজিজুল ইসলাম রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘তিনি (মাহবুব আলম) জামিন পাননি। এখনো কারাগারে আছেন।’

মূল ধারার গণমাধ্যম বাংলাভিশনের চাঁদপুর প্রতিনিধি রহিম বাদশা বলেন, ‘মাহবুব আলম এখনো কারাগারে আছেন। জামিন পাননি।’ 

অর্থাৎ, মাহবুব আলমের জামিন পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

এরপর আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘MD Siam’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ০৫ জুন প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত পোস্টের ক্যাপশন দেখে বোঝা যাচ্ছে, গত বছরের জুন মাসে কচুয়া উপজেলা নির্বাচনে মাহবুব আলম জয়লাভের পর আনন্দ মিছিলের ভিডিও এটি।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো। 

সুতরাং, গত বছরের ভিডিও দিয়ে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব আলম জামিন পেয়েছেন দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

সেনাপ্রধান ‘একজন সেনা গ্রেপ্তার হলে যমুনা ভেঙে দিবো’ শীর্ষক মন্তব্য করেননি

সম্প্রতি, “একজন সেনা গ্রেপ্তার হলে যমুনা ভেঙে দিবো” শিরোনামে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ‘একজন সেনা গ্রেপ্তার হলে যমুনা ভেঙে দিবো’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, সমসাময়িক রাজনীতি প্রসঙ্গে RP Station নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের টক-শো ভিডিওতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ছবি সম্বলিত থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফুটেজটি পর্যবেক্ষণ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের কোনো মন্তব্য কিংবা বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ‘RP Station by Rokeya Prachy’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ অক্টোবরে প্রচার হওয়া একটা লাইভস্ট্রিম ভিডিওর খণ্ডিত অংশ। 

১ ঘন্টার বেশি সময়ের দীর্ঘ মূল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে, বাংলাদেশে গুম খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে যে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সে বিষয়ে আলাপ করতে শোনা যায়। 

স্বাভাবিকভাবে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ‘একজন সেনা গ্রেপ্তার হলে যমুনা ভেঙে দিবো’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করলে সে বিষয়ে ঢালাওভাবে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হতো। তবে, এক্ষেত্রে দেশিয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে পর্যবেক্ষণে সেনাপ্রধানের এরূপ কোনো মন্তব্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানে “একজন সেনা গ্রেপ্তার হলে যমুনা ভেঙে দিবো” বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

চাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলে শিবির-ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার 

0

গতকাল ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (চাকসু)। গত রাত থেকেই হল ভিত্তিক ফলাফলগুলো প্রকাশ করা হচ্ছিল যা আজ ভোরে সমাপ্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মো. ইব্রাহিম হোসেন ও সাজ্জাদ হোসেনের বিষয়ে দাবি করা হয়, প্রীতিলতা হলে মো. ইব্রাহিম পেয়েছেন ১২৩০ ভোট এবং সাজ্জাদ পেয়েছেন ৫৩৪ ভোট। 

এমন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

থ্রেডসে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলে মো. ইব্রাহিমের ১২৩০ ও সাজ্জাদের ৫৩৪ ভোট পাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং এই হলে মো. ইব্রাহিম ৫৮১ ও সাজ্জাদ পেয়েছেন ২৮৩ ভোট।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক খবরের কাগজ এর ওয়েবসাইটে চাকসু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিপি পদে প্রীতিলতা হলে শিবিরের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম ৫৮১ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে একই হলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ পেয়েছেন ২৮৩ ভোট।

এছাড়া, অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডি এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকেও শিবির ও ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীদের প্রীতিলতার হলে প্রাপ্ত  ভোট সংখ্যা নিয়ে একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, প্রীতিলতা হলে মো. ইব্রাহিম ১২৩০ নয়, পেয়েছেন ৫৮১ ভোট এবং সাজ্জাদ ৫৩৪ নয়, পেয়েছেন ২৮৩ ভোট। 

সুতরাং, চাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রীতিলতা হলে ইব্রাহিম-সাজ্জাদ এর প্রাপ্ত ভোট নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র