Home Blog

ভিডিওটিতে শিক্ষার্থী কর্তৃক হেনস্তার শিকার হওয়া ইউনিফর্ম পরিহিত ব্যক্তিরা চবির নিরাপত্তা কর্মী, সেনাবাহিনী নয়

0

গত ৩১ আগস্ট দিবাগত রাতে দেরি করে ভাড়া বাসায় ফেরা নিয়ে ভবনের দারোয়ানের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তার সাথে দারোয়ান খারাপ আচরণ করলে 

আক্রান্ত নারী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা থেকে এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। যাতে রাতেই অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন, এদের মধ্যে কয়েকজনকে ভয়াবহভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে বেশ সময় ব্যয় হয়। যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতাকর্মীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের হেনস্তা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতাকর্মীরা সেনাবাহিনীকে হেনস্তা করলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এক্স (সাবেক টুইটার)- এ প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওতে শিক্ষার্থী কর্তৃক হেনস্তার শিকার হওয়া ইউনিফর্ম পরিহিত এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য নন। বরং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের মুহুর্তে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের হেনস্তা করা হয়। সেই ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সেনাবাহিনীর পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক পরিহিত ব্যক্তিদের হাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো দেখতে পাওয়া পাওয়া যায় যা সেনা সদস্যদের পোশাকে থাকে না। এছাড়াও ভিডিওর শেষাংশে ভিডিও ধারণকারী ওই বাহিনীর সাথে সাদা পোশাকে থাকা একজন ব্যক্তিকে তাদের নিরাপত্তা অফিসার বলে সম্বোধন করেন। 

Comparison by Rumor Scanner 

প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীরা রামদা, দা, রড, ছুরিসহ বেশকিছু দেশিয় অস্ত্র লুট করে। লুট হওয়া এসব অস্ত্র ফিরিয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সাক্ষারিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়, লুট হওয়া এসব অস্ত্র ছাত্রলীগের আমলে হলগুলো থেকৈ জব্দ করা হয়। প্রতিবেদনটির ফিচার ইমেজে সেসময় অস্ত্র উদ্ধারের একটি ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে আলোচিত ভিডিওর মত একই পোশাকধারী ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়া যায়। তাদের পোশাকের হাতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো দেখা যায়। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক পরিহিত এই ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের সাথে জড়িত।

Screenshot: Prothom Alo

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক Muhammad Muntaj Ali-এর ফেসবুক পেজ গত ৩১ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

পোস্টটিতে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত সেই পোশাকধারী ব্যক্তিদের ছবি যুক্ত করে জানান, এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের অধীনে থাকা বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্সের সদস্য। পোস্টটির মাধ্যমে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর নানা দূর্বলতা তুলে ধরার পাশাপাশি বাহিনীকে কিভাবে সংস্কার করা যায় সেবিষয়ক পরমার্শ প্রদান করেন। 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে সেনাবাহিনী নয় বরং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীকে হেনস্তা করতে দেখা যায়। 

সুতরাং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক সেনাবাহিনীর সদস্যদের হেনস্তার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ডাকসু নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য আনা গাড়ি ভর্তি অস্ত্র আটকের দাবিটি ভুয়া

0

আগামী ০৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে একটি প্রাইভেট কারের বনেট ভর্তি অস্ত্র আটকের দৃশ্য দেখা যায়। দাবি করা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনের ব‍্যবহারের জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক গাড়ি ভর্তি অস্ত্র এবং কয়েক জন শিবিরের নেতা আটকের ঘটনা এটি। 

উক্ত দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভর্তি অস্ত্র আটকের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের আগস্টে রাজশাহীতে প্রাইভেট কার থেকে দুই বস্তা দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা। এটি সেই ঘটনারই দৃশ্য। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইউটিউবে জাতীয় দৈনিক ভোরের পাতা পত্রিকার চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট একই ঘটনার ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি সে সময়ের রাজশাহীর ঘটনা।  

Comparison: Rumor Scanner 

আরো অনুসন্ধান করে আরেক জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে এই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। জানা যায়, ১০ আগস্ট রাজশাহীতে প্রাইভেট কার থেকে দুই বস্তা দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে (রেলগেট) এলাকা থেকে ওই অস্ত্রসহ একজনকে আটক করে শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারের বক্তব্যের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানায়, শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সময় ওই প্রাইভেট কার থামান। পরে গাড়ির পেছন থেকে দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে। আটক ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের টাকা দিতে চেয়েছিলেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হন। পরে তাঁরা ওই ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন।

সুতরাং, ২০২৪ সালের ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভর্তি অস্ত্র আটক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

নেত্রকোনায় শিশু মৃত্যুর কারণ রাজনৈতিক নয় 

0

গত ২৯ আগস্ট, “নেত্রকোনায় যুবলীগ নেতাকে বাসায় না পেয়ে ৯ বছরের শিশু সন্তানকে গাছে ঝুলিয়ে হ’ত্যা” ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা শিশুটি যুবলীগ নেতার সন্তান নয়। মৃত আরাফাতের পিতার নাম হেলাল মিয়া। তার যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “ইলমের বাইক সফর” নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩১ আগস্ট প্রচারিত ভিন্ন ফ্রেমের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।  

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে এটিকে এক শিশুর অকাল মৃত্যুর ঘটনা বলে দাবি করা হয়। 

উল্লিখিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট  “নেত্রকোনায় গাছে ঝুলে ছিল শিশুর মরদেহ” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩০ আগস্ট (শনিবার) নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মো. আরাফাত (৯) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত ওই গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র। নিহতের বাবা হেলাল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে অসুস্থ ছিল এবং মাথায় একটু সমস্যা ছিল। কথাবার্তা শুনত না। তাকে না পেয়ে আমরা খোঁজাখুঁজি করছিলাম। কারণ সে আগেও প্রায়ই গাছে উঠে বসে থাকত। পরে আমার এক ভাবি গিয়ে দেখে গাছে ঝুলে আছে।’ দুর্গাপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামানের বরাতে বলা হয়, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ কিংবা সন্দেহ না থাকায় তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু হবে।

কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে কোনো ছবি যুক্ত না থাকায় এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে গণমাধ্যমটির দুর্গাপুর প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি ভিডিও দেখে শিশুটির বিষয়ে নিশ্চিত করেন এবং আরও জানান শিশুর পিতা হেলাল মিয়া কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নন।  

এই ঘটনায় দৈনিক যায়যায়দিন এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, নেত্রকোণায় অরাজনৈতিক ব্যক্তির সন্তান মারা যাওয়ার ঘটনাকে রাজনৈতিক কারণে মৃত্যু দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত এমদাদ এই  ভিডিওতে হিন্দুদের দেশ ত্যাগের আল্টিমেটাম দেননি

0

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ব্যক্তির একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয় যে তিনি এই ভিডিওতে তার বক্তব্যে হিন্দুদের হুমকি দিয়েছেন।

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে।  

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওতে বক্তব্য দেওয়া এ-ই ব্যক্তি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলিতে এক চোখ হারানো সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ। তিনি এই ভিডিওতে হিন্দুদের দেশ ত্যাগের আল্টিমেটাম দেননি বরং, এমদাদের এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম সংক্রান্ত বক্তব্যটি তিনি গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো মানুষদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন। এর সাথে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশ ছাড়ার হুমকির কোনো সম্পর্ক নেই।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে, ২০২৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে আপলোড করা একটি ভিডিওতে এমদাদের পুরো বক্তব্য পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের সিআরবিতে বিকিরণ চট্টগ্রাম মহানগর কর্তৃক আয়োজিত জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের এই বক্তব্য দেন। সাত মিনিটের বক্তব্যটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এমদাদ মূলত ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্যটি দিয়েছেন। যার আগে এবং পরের কিছু অংশ কেটে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। পুরো বক্তব্য পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট হয় যে, আল্টিমেটাম সংক্রান্ত তার বক্তব্যটি হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়নি। তিনি মূলত কথাগুলো বলেছিলেন গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে।  

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সমন্বয়ক এমদাদের এ ভিডিও দিয়ে একই দাবি

প্রচার করা হলে সেসময়ে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রশিবিরের হামলার এই দাবিটি ভুয়া

0

গত ১লা সেপ্টেম্বর, “গুপ্ত সংগঠন শিবির ও তাদের ভাড়া করা বহিরাগত স’ন্ত্রাসীরা আজ বিকালে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের “জয় বাংলার লোক” ট্যাগ দিয়ে বেধড়ক পি’টিয়েছে! সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন—এই কি তোমাদের নতুন বাংলাদেশ, নতুন বন্দোবস্ত!?” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ভিডিও । 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “ZM Mamun” নামক ফেসবুক পেজে  ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।  

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের সময়ের ছাত্রলীগের হামলার ভিডিও।

পরবর্তীতে, একই ঘটনার ভিন্ন আরেকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়।  

উল্লিখিত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই  “ঢাবি ‘রণক্ষেত্র’: আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় দুই শতাধিক আহতের দাবি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই (সোমবার) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মাথায় হেলমেট পরে ও হাতে লাঠি নিয়ে একদল হামলাকারীকে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, ছাত্রলীগের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ছাত্রলীগ ধাওয়া দেয় আন্দোলনকারীদের। পরে কোটা আন্দোলনকারীদের ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত ও ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারের দিকে পাঠিয়ে দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর ছাত্রলীগ রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়। 

সুতরাং, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঢাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর শিবির ও তাদের ভাড়া করা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ওয়ালটনের শো-রুমে চাঁদাবাজি ও সেনাবাহিনীর অভিযানের ভুয়া দাবি প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘পতিতার ছেলে ইলিয়াসের নির্দেশে ওয়ালটনে চাঁদাবাজি করতে যায় মব সন্ত্রাসীরা। সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ওয়ালটনের ব্যানার যুক্ত দোকানের গলিতে লাঠিচার্জ করে কয়েকজনকে বের করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ওয়ালটনের কোনো শো-রুমে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের শিকার হওয়ার কোন ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত জুন মাসে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ ফুটবল দলের ম্যাচকে কেন্দ্র করে টিকেট ছাড়া জোরপূর্বক স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে দর্শকদের একটি অংশ। তখন টিকেট ছাড়া প্রবেশকারীদের লাঠিচার্জ করে সেনাবাহিনী। সেই সময়কার দৃশ্য এটি। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটিতে অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের লোগো লক্ষ্য করা যায়। লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ঢাকা পোস্টের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, টিকেট ছাড়া স্টেডিয়ামে প্রবেশকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের দৃশ্য এটি। 

ক্যাপশনের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে একই তথ্যে যমুনা টিভি, যুগান্তর এবং সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিও প্রকাশ করতে দেখা যায়। 

এ বিষয়ে জনকণ্ঠের ওয়েবসাইট প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ জুন ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে  সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ ফুটবল দলের একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন স্টেডিয়ামে দর্শকদের বিপুল আগ্রহে স্টেডিয়ামে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। অনেক দর্শক টিকিট ছাড়াই প্রবেশের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী লাঠিচার্জ করে।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, গত জুন মাসে ভিন্ন ঘটনায় সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের ভিডিওকে ওয়ালটনের শো-রুমে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে কতিপয় ব্যক্তি সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের শিকার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে এই লেখাটি সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের নয় 

0

সম্প্রতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ে টকশো সঞ্চালক ও সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের মন্তব্য দাবিতে একটি লেখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

পোস্টগুলোতে খালেদ মুহিউদ্দীনকে উদ্ধৃত করে জুলাই শহীদদের নিয়ে জামায়াতের প্রকাশিত দশ খণ্ডের গ্রন্থে প্রায় ছয় শত শহীদের জীবনী ও আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে দলটির প্রশংসা করা হয়। আরো বলা হয়, জামায়াত গোপনে প্রায় ৬০০ শহীদ পরিবারকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দিয়েছে, বিভেদ না করে সবার পাশে থেকেছে। 

উক্ত দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

পাশাপাশি, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একই দাবিটি প্রচার হতে দেখা যায়। দেখুন: এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ে এই লেখাটি সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন লিখেননি। খালেদ মুহিউদ্দীন নিজেই রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে খালেদ মুহিউদ্দীনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, এক্স অ্যাকাউন্ট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণে আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্যের সন্ধান মেলেনি।

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা অন্য কেনো বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবিটি সমর্থন করে এমন তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চলতি বছরের ১০ এপ্রিলে একই লিখা ‘Khalid Muhammad’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বরাতেও ছড়াতে দেখা যায়। 

এছাড়া, উক্ত দাবি সম্বলিত পোস্টে খালেদ মুহিউদ্দীনের নামের বানান ঠিক নেই বলে প্রতীয়মান হয়। তার নামের সঠিক বানান ‘খালেদ মুহিউদ্দীন’ হলেও উক্ত পোস্টগুলোতে ‘খালেদ মহিউদ্দিন’ লেখা হয়েছে।

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত লিখনি তার কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার লেখা নয় এবং পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত নামের বানানটিও আমার নয়। 

অর্থাৎ, জামায়াতে ইসলামী নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লেখাটি খালেদ মুহিউদ্দীনের নয়। 

উল্লেখ্য, ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের নিয়ে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতায় শহীদ যারা’ শিরোনামে দশ খণ্ডের স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ‘জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি’ নামক একটি ওয়েবসাইটে বইগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। 

সুতরাং, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।  

তথ্যসূত্র 

লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দাবিটি ভুয়া

0

গত ২৮ আগস্ট দুপুরে ডিআরইউতে একটি গোলটেবিল আলোচনা চলাকালে একদল ব্যক্তি নিজেদের জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের ওপর চড়াও হন। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তারা এই ১৬ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখায়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যপশনে লেখা হয়েছে, “বীর মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে মব রাজার পালিত সন্ত্রাসীরা ”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ভিডিওটি  আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে সম্প্রতি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং প্রচারিত ভিডিওটি লতিফ সিদ্দিকীর জেলা টাঙ্গাইলেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে সাবেক হুইপ ও গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব আরা বেগম গিনির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা দাবিতে ভিডিওটি অনলাইনে পোস্ট হতে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোতে দাবিটির সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায়। ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চে করে ‘শিতল-বাসী (ঝিনাশ্বর শিতলীর মোর ফেসবুক গ্রুপ)’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Md. Rigon Sarker’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে প্রদর্শিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “সাবেক গিনি এমপির বাড়িতে জনতার আগুন ভাংচুর লুটপাট।”

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দাবির সপক্ষে মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ২৯ আগস্টে মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে ‘লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে আগুনের ভিডিওটি গুজব, নজরদারিতে পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তবে ঘটনাটি সম্পূর্ণ গুজব বলে জানিয়েছে পুলিশ, স্থানীয় ব্যক্তি ও লতিফ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠজনরা। লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িটি নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।.. এ বিষয়ে লতিফ সিদ্দিকীর ছোটভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের একান্ত সচিব ফরিদ আহমেদ জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা কালিহাতী বা টাঙ্গাইলে ঘটেনি।”

মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালবেলা’র ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ২৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “আব্দুল লতিফ সিদ্দিক স্বজনরা বলেন, ‌এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি গুজব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লতিফ সিদ্দিকীর বাসায় নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে। একইরকম তথ্য আরো একাধিক গণমাধ্যম সূত্রেও জানা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভী’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৮ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লতিফ সিদ্দিকীর বাসার সামনে অবস্থান করছে কালিহাতী থানা পুলিশ’। ভিডিওটিতে প্রদর্শিত বাড়ি অক্ষত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকীর উক্ত বাড়ির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত বাড়ির ডিজাইনেও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আলোচিত দাবিটি ভুয়া নিশ্চিত করে জানান, লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। 

সুতরাং, অন্তত ১ বছর পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

জাপার কার্যালয়ে সামনে সংঘর্ষ চলাকালে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় আটক এই ব্যক্তি শিবির নেতা নয়

0

গত ২৯ আগস্ট রাষ্ট্র পুনর্গঠন ও ফ্যাসিবাদ নির্মূলের দাবিতে বিজয়নগর কার্যালয়ের সামনে একটি সমাবেশ করে গণঅধিকার পরিষদ। সমাবেশে আওয়ামী লীগের দোসরদের রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করা, তাদের নিবন্ধন বাতিল ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা বিজয়নগর মোড় থেকে পল্টনমুখী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তারা জাতীয় পার্টিকেও রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। মিছিলটি কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার সময় মব সৃষ্টিকারী একজন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তিকে সেনাবাহিনী আটক করে। পরবর্তীতে তার হেলমেট খুললে দেখা যায় আটক ব্যক্তি একজন শিবির নেতা।  

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সামনে সংঘর্ষ চলাকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক এই ব্যক্তি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা নন বরং, তিনি গণঅধিকার পরিষদের সমর্থক। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ২৯ আগস্ট মূলধারার দৈনিক ইত্তেফাকের ইউটিউব চ্যানেলে ইট নিক্ষেপকালে গণঅধিকার সমর্থককে আটক করল সেনাবাহিনী শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube 

উক্ত ভিডিওটিতে আলোচিত ওই হেলমেট পরিহিত ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আটক করতে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিওটির শেষের দিকে একজন শাড়ি পড়ুয়া মহিলাকে ওই ব্যক্তিকে আটকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাধা দিতে দেখতে পাওয়া যায়। মূলত, উক্ত ভিডিওটি আলোচিত ওই ব্যক্তিকে আটকের ভিন্ন এঙ্গেল থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও। যা ওই ঘটনার একটি বর্ধিত সংস্করণ। তবে ভিডিওর কোথাও কাউকে আটক ব্যক্তিকে শিবির নেতা বলে সম্বোধন করতে শোনা যায়নি। ভিডিওটির শিরোনামে আটক ব্যক্তিকে গণঅধিকার পরিষদের সমর্থক বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ভিডিওটির বিবরণীতে এই ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অন্যকোনো গণমাধ্যমেও আটক ব্যক্তি সম্পর্কিত বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ফেসবুক পেজে প্রচারিত উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

ভিডিওটির শিরোনামে সেনাবাহিনীকে আলোচিত ওই ব্যক্তিকে আটকে বাধাদানকারী নারীকে তিনি গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু তার পোস্টেও আটক ব্যক্তির পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। তবে আটক ব্যক্তি যে শিবিরের নেতা এমনটাও তাকে উল্লেখ করতে দেখা যায়নি। তবে ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া ওই নারীকে আটক ব্যক্তিকে তাদের দলের লোক বলে সেনাবাহিনীকে তাকে ছেড়ে দিতে বলতে আহ্বান করতে শোনা যায়।

অর্থাৎ, জাপার কার্যালয়ে হামলা করতে গিয়ে আটক হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি গণঅধিকার পরিষদের সমর্থক। 

সুতরাং, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষ চলাকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক এই ব্যক্তি শিবির নেতা শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী-র‍্যাবের একাধিক গাড়ি-ভাংচুর দাবিতে গত বছরের ভিডিও প্রচার 

0

গত ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাসসংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে সেনাবাহিনী-র‍্যাবের একাধিক গাড়ি-ভাংচুরের দৃশ্য দেখা যায়। দাবি করা হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী-র‍্যাবের একাধিক গাড়ি-ভাংচুরের ঘটনা এটি। 

উক্ত দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। 

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে।

একই দাবির ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী-র‍্যাবের একাধিক গাড়ি-ভাংচুরের এই দাবিটি সঠিক নয় বরং, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আশুলিয়ায় শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার সময়ের দৃশ্য এটি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মেহেদী হাসান তালুকদার নামের একটি অ্যাকাউন্টে একই ঘটনার ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি আশুলিয়ায় যৌথবাহিনী ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময়ের ভিডিও।  

Comparison: Rumor Scanner 

আরো অনুসন্ধান করে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডি২৪লাইভের ওয়েবসাইটে এই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। জানা যায়, ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ শ্রমিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি। এই প্রতিবেদনেও র‍্যাবের ভাংচুরকৃত গাড়িটির ছবি সংযুক্ত রয়েছে। 

একইদিন জাতীয় দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আন্দোলনরত একাধিক কারখানার শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনায় কাউসার হোসেন খাঁন (২৭) নামে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন অন্তত ৩০ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

সুতরাং, ২০২৪ সালের ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী-র‍্যাবের একাধিক গাড়ি-ভাংচুরের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র