গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে হত্যা করার জের ধরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলশ্রুতিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে পাহাড়ি এলাকায়। সংঘাতের এই রেশ পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙামাটিতেও ছড়িয়েছে। হতাহত এবং নিহতের তথ্যও সামনে এসেছে। এরই প্রেক্ষিতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওতে কিছু নারীকে গাড়িবহর আটকানোর চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার নয় এবং ভিডিওটি বাংলাদেশেরও নয় বরং এটি ভারতের সেনাবাহিনীর পুরোনো ভিডিও।
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে পাঁচ মাস পূর্বে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায়, এটি বিক্ষোভকারী কর্তৃক ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়িবহর অবরোধের ভিডিও।
এছাড়া, @beingh_chikim নামক এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৩০ এপ্রিলে প্রকাশিত একই ভিডিও থেকে জানা যায় ভারতের মণিপুরে হত্যাকারীদের ভারতীয় সেনাবাহিনী আর্মি ধরতে গেলে মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর কিছু নারী তাদের অবরোধ করে আন্দোলন করে।
সুতরাং, ভারতের পুরোনো ভিডিওকে সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গাড়িবহর আটকানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নিহত আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বুক পেতে দেয়া আবু সাঈদকে স্বল্প দূরত্ব থেকে পুলিশের গুলি চালানো এবং একাধিক গুলিতে বিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদের রাস্তায় নিস্তেজ হয়ে ঢলে পড়ার ভিডিও সেদিনই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি, একটি ছবি প্রচার করে ছবির ব্যক্তিকে আবু সাঈদ হিসেবে দাবি করে বলা হচ্ছে, “রাবার বুলেট লাগার পর আবু সাঈদের সঙ্গী সাথীরা তাকে এইভাবেই হাঁটিয়ে নিয়ে যায় কোন এক অজ্ঞাতস্থানে। বাম পাশ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি তার পেটের কাছে চামড়ার নিচে তিনটি রাবার বুলেট ঢুকেছে, যেখান থেকে কোন রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। ডানদিকে বোধ করি একই অবস্থা হবে। সুস্থভাবে হেঁটে যাওয়া একটি মানুষকে পাঁচ ঘন্টা পরে কেন মৃত অবস্থায় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো ? এই পাঁচ ঘন্টা সে কোথায় ছিলো? কি অবস্থায় ছিলো?”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যে ছবিটি প্রচার করে আবু সাঈদের ছবি দাবি করা হয়েছে, সেটি আবু সাঈদের ছবি নয় এবং এই ছবির সাথে প্রচারিত তথ্যও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, ছবির আহত শিক্ষার্থী হচ্ছেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১৫তম ব্যাচের মোঃ নাইমুল ইসলাম।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ছবির মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের কোনো একটি ব্যাচের টিশার্ট পরিহিত একজনকে দেখতে পায়, সেই সূত্রে আবু সাঈদের পরিচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ মুকুল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ছবির ব্যক্তি আবু সাঈদ কি না সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়।
জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে মোঃ মুকুল মিয়া রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ছবির ব্যক্তি আবু সাঈদ নন। ওর নাম নাইমুল, অর্থনীতি বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ, তার এক পাশে জার্সি পরা সৈকত, অর্থনীতি ১৫তম ব্যাচ, অপর পাশে টিশার্ট পরা সবুর, অর্থনীতি ১৫ তম ব্যাচ। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে নাইমুল ইসলামের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে আমরা তার সাথে কথা বলি। নাইমুল জানায় ছবিটি তার, ছবিটি সেদিন তার এক বন্ধু তুলেছিলেন।
বিস্তারিত বক্তব্যে রিউমর স্ক্যানারকে নাইমুল জানায়, “আমি নাইমুল ইসলাম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। আমি এই মর্মে সকলের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছি যে উক্ত ছবির ব্যক্তিটি আমি। একদল কুচক্রী মহল আমার এই ছবিটি দিয়ে শহীদ আবু সাঈদ ভাই বলে চালিয়ে দিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব এবং বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ায় অপপ্রচার করছে। আমি আবারও দৃঢ়ভাবে বলছি, শহীদ আবু সাঈদ ভাই আমার ক্যাম্পাসের সিনিয়র ভাই ছিলেন, আর এই ছবির ব্যক্তিটি আমি। গত ১৬ জুলাই যখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট, যা বর্তমানে শহীদ আবু সাঈদ গেইট নামে পরিচিত সেখানে, আনুমানিক ২:১৬ মিনিটের দিকে পুলিশ হামলা চালালে আমি পুলিশের লাঠিচার্জ এর স্বীকার হই এবং ১৪ টি রাবার বুলেটে বিদ্ধ হই। যার দাগ এখনো আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করবো, আমার এই ছবিটি নিয়ে যেন আর অপপ্রচার না হয়।”
নাইমুল ইসলামের সাহায্যে আমরা কথা বলি ছবিটির চিত্রগ্রাহক শফিউল্লাহ কনকের সাথে। রিউমর স্ক্যানারকে শফিউল্লাহ কনক জানায়, “ছবির ব্যক্তিটি আমার বন্ধু নাইমুল, যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। ছবিটি ১৬ জুলাই ২০২৪, দুপুর ২ টা ২২ মিনিটে ধারণ করা। আমার বন্ধু আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হলে আমি সহ আমার আরো দুজন বন্ধু, সৈকত, সবুর এর সহায়তায় তার মেসের দিকে নিয়ে যাই। এবং সে ঐ সময় বিভিন্ন টিভিতে সাক্ষাৎকার দেয়। ঠিক ঐ মুহুর্তেই আমি আমার মোবাইল ফোন দিয়ে ছবিটি তুলি। এই ছবিটি নিয়ে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্ট, মিথ্যা প্রচারনা না চালানোর জন্য অনুরোধ করছি।”
শফিউল্লাহ কনকের থেকে আমরা ছবিটির মূল ফাইল ইমেইলের মাধ্যমে নিয়ে মেটাডাটা চেক করার মাধ্যমে এবং তার ফোনের ছবির মূল ফাইলের ডিটেইলসের স্ক্রিনশট নেয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে ছবিটি গত ১৬ জুলাই দুপুর ২:২২ মিনিটে তোলা হয়।
অর্থাৎ, সেদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত ভিন্ন এক শিক্ষার্থীর ছবিকে আবু সাঈদের ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত পোস্টে মোঃ নাইমুল ইসলামের আহতাবস্থার ছবি আবু সাঈদের হিসেবে প্রচারের সাথে ‘সুস্থভাবে হেঁটে যাওয়া আবু সাঈদকে ৫ ঘন্টা পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে এ দাবিটি ভুয়া হিসেবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আবু সাঈদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রদত্ত মৃত্যুর মৃত্যুর প্রমাণপত্রে অনুযায়ী আবু সাঈদকে ১৬ জুলাই দুপুর ৩.০৫ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
অপরদিকে একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় একাধিক গুলি শরীরে বিদ্ধ হলে আবু সাঈদ নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় ঢলে পড়ে। আমরা আবু সাঈদের রাস্তায় ঢলে পড়ার সময়কাল নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি খুঁজতে গিয়ে সেদিনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজের একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১৬ জুলাই দুপুর ২ টা ১৬ মিনিটের সে লাইভের ১ম মিনিটের শেষাংশে আবু সাঈদের ফুটেজ পাওয়া যায়। এই লাইভ ভিডিও অনুযায়ী আবু সাঈদ দুপুর ২ টা ১৮ মিনিটে নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় ঢলে পড়েন।
এরপর আবু সাঈদকে কয়েকজন এসে হাত-পা ধরে রংপুর পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যান এবং সেখান থেকে রিকশা করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার আগেই আবু সাঈদের মৃত্যু ঘটে। আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ের কিছু ছবি আমরা খুঁজে পেয়েছি, যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি রিকশায় আবু সাঈদের নিথর দেহকে পার্কের মোড় এলাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আবু সাঈদকে রিকশা করে নিয়ে যাওয়ার সময়ের তেলা একটি ছবির টাইমফ্রেমে দেখা যায় ছবিটি ২:২৭ মিনিটে তোলা।
অর্থাৎ, হেঁটে যাওয়া আবু সাঈদকে ৫ ঘন্টা পর নয় বরং নিস্তেজ অবস্থায় তার লুটিয়ে পড়ার সাথে সাথেই রিকশা করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার যাত্রা শুরু হয়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ভাষায় আবু সাঈদের মৃত্যু
আবু সাঈদের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাঈদের মুখ থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির চিহ্ন। ছররা গুলি ঢুকে তাঁর শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি করেছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর মাথার বাঁ দিকেও আঘাতের কারণে রক্তজমাট ছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আবু সাঈদের খাদ্যনালি ও ঊরুর রক্তনালি জখমের কারণে রক্তজমাট বাঁধে। এই রক্তক্ষরণের কারণে আবু সাঈদ শকে চলে যান ও মৃত্যু ঘটে।
ময়নাতদন্তের বিষয়ে চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘অসংখ্য ছররা গুলির আঘাতে আবু সাঈদের শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয় এবং তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া, আপনারা দেখেছেন যে সাঈদ ডান পায়ে হাত দিয়ে পড়ে গিয়েছিল। তার ডান উরুতেও ছররা গুলি লেগেছি। সেখানে ফিমোরাল আর্টারি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। তলপেটেও গুলির আঘাত ও রক্তক্ষরণ পেয়েছি। এসব আঘাতের কারণে শক ও রক্তক্ষরণের কারণে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে।’
আবু সাঈদের মাথায় আঘাতের বিষয়ে রাজিবুল ইসলাম বলেন, তাঁর মাথার বাঁ দিকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সেটি তিনি পড়ে গিয়ে বা পারিপাার্শ্বিক অন্য কারণে হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর কারণ নয়। তাঁকে গুলি করা না হলে তাঁর মৃত্যু হতো না।
সুতরাং, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থীর ছবিকে আবু সাঈদের ছবি দাবি করে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার তথ্যটি সত্য নয় বরং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয় নি।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে কমেন্ট বক্সে তথ্যসূত্র উল্লেখ থাকার কথা বলা হয়।
এমন একটি পোস্টের কমেন্ট বক্স থেকে ‘bdnewsus24.com’ নামক ওয়েব পোর্টালে গত ১৮ সেপ্টেম্বর “ব্রেকিং নিউজ; চমক নিয়ে আনলিমিটেড ইন্টারনেটের মেয়াদ ঘোষণা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের শিরোনামে মেয়াদবিহীন ইন্টারনেটের ঘোষণার কথা বলা হলেও সংবাদটির ভেতরের অংশে ভিন্নতা পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ভেতরের অংশে বলা হয়, জনগণের চাহিদা বিবেচনা করে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে সীমাহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর কথা জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
জাতীয় দৈনিক সমকালের ওয়েবসাইটে গত ১৮ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তরুণ প্রজন্মের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর পাশাপাশি সব মোবাইল অপারেটরদের মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর চেষ্টা করার কথা বলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তবে কবে থেকে এই সিদ্ধান্ত চালু বা কার্যকর হবে সেই বিষয়ে কোন তথ্য এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি দেশিয় অন্যান্য গণমাধ্যমেও মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু হওয়ার বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি অধিকার নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক জনাব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
সুতরাং, মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট সেবা ঘোষণার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বৃষ্টিতে দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নদীভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। এরই প্রেক্ষিতে তিস্তাপাড়ের এক বাসিন্দার সাম্প্রতিক বন্যাকালীন সময় ধারণ করা দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার করেছে দেশের কতিপয় গণমাধ্যম।
উক্ত ছবি সম্বলিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন কালবেলা এবং বার্তা২৪।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি নীলফামারীর নয় বরং ছবিটি ২০২১ সালে ফটো সাংবাদিক মারুফ রহমান মুন্সিগঞ্জে পদ্মা নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে ধারণ করেন।
আলোচিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ স্টক ফটোগ্রাফি এজেন্সি এলামি-এর ওয়েবসাইটে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, আলোচিত এই ছবিটি মুন্সীগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকার পদ্মা নদীর তীরে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট ধারণ করা হয়। এছাড়াও জানা যায়, ছবিটি মারুফ রহমান নামের এক ব্যক্তি ধারণ করেছেন। মূলত পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেন। মারুফ রহমান এমন সংকটময় পরিস্থিতি চলাকালীন উক্ত বাসিন্দার এই ছবিটি তোলেন।
বর্তমানে দেশ রূপান্তর পত্রিকায় কর্মরত ফটো সাংবাদিক মারুফ ছবিটি তার তোলা বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, নীলফামারীর সাম্প্রতিক বন্যার ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে ২০২১ সালের মুন্সিগঞ্জের ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খালেদা জিয়া মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ভিডিওর কিছু অংশ যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইলে ও ক্যাপশনে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার কিছু অংশ রয়েছে। এছাড়া, কয়েকটি ছবি যুক্ত করে উপস্থাপক মনগড়া কিছু কথা বলছেন।
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যের ভিডিওগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
শুরুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ০৪ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূর আলম মৃত্যুর পর তার জানাজায় উপস্থিত হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য প্রদানের ভিডিও এটি।
পরবর্তীতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের রায়ের পর রুহুল কবির রিজভী বেগম জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে যান। সেই সময়কার ভিডিও এটি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ০৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেওয়া একটি বক্তব্য। সেখান থেকে কিছু অংশ কেটে আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে।
সর্বশেষ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কান্নারত অবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করার একটি ভিডিও দেখানো হয়। বাংলাভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার আগ মূহুর্ত বেগম খালেদা জিয়াকে স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল। সেই সময়কার ভিডিও এটি।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কিছু পুরোনো ভিডিও একসাথে যুক্ত করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মারা গেছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী গোপালগঞ্জ সদরের বেদগ্রামে অনুষ্ঠিত এক পথসভা শেষে নিজ গ্রাম টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় একদল লোক তার গাড়িবহরে হামলা করে যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি। উক্ত ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, হামলার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। তন্মধ্যে কিছু সংবাদমাধ্যম নিহত একজনের নাম শওকত আলী দিদার বলে উল্লেখ করেছে এবং কিছু সংবাদমাধ্যম এর সাথে অপর নিহত ব্যক্তি হিসেবে লিটন নামের একজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছে।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতেও দুইজন নিহতের দাবি করা হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন (১,২)
কিছু সংবাদমাধ্যমে উক্ত হামলায় নিহত নেতার সংখ্যা তিনজনও বলে দাবি করা হয়েছে। এমন দাবিতে প্রচারিত সংবাদ দেখুন ডেইলি বাংলাদেশ, খবর সংযোগ।
উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার গাড়িবহরে হওয়া হামলায় ২ জন বা ৩ জন নিহত হননি, বরং ১ জন নিহত হয়েছেন এবং লিটন নামে যে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে নিহত দাবি করা হয়েছে, তিনি গুরুতর আহত হলেও নিহত হননি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিএনপি মিডিয়া সেল এর ফেসবুক পেজে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখের একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হওয়া হামলায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার নিহত হয়েছেন এবং আরো অন্তত ৩৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। উক্ত পোস্টে লিটন নামের কোনো নেতার বা ভিন্ন কারোর নিহতের বিষয়ে কোনোকিছু উল্লেখ করা হয়নি।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে ঐদিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতি বিএনপি মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। উক্ত বিবৃতিতেও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত আলী দিদার নামের একজন উক্ত হামলায় নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
বিএনপি মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে তার পরেরদিন তথা ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখেও এ বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয় যেখানে একজন নিহত হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের সাথে। তিনি জানান, উক্ত হামলার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতা নিহত হয়েছেন। রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান।
উল্লেখ্য, উক্ত হামলায় ২ জন নিহত দাবি করা কিছু সংবাদমাধ্যম নিহত অপর ব্যক্তি হিসেবে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লিটন নামের একজনের কথা উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এই বিষয়ে নাজমুল হাসানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, লিটন নিহত হননি৷ তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন এবং এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পাশাপাশি, কিছু সংবাদমাধ্যমে উক্ত হামলার ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তি হিসেবে শওকত আলী দিদার ও লিটনসহ তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে সবুজ নামের একজন নেতাকে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং, গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার গাড়িবহরে হওয়া হামলায় ২ জন বা ৩ জন নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি অর্ধসত্য।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন৷ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের একটি ছবি যুক্ত করে ‘পতনের পর প্রথমবার সামনে আসলেন সাদ্দাম ও ইনান’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত এক্স পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাদ্দাম হোসেন এবং শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সম্প্রতি জনসম্মুখে আসলেন দাবিতে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয় বরং, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গত ৩১ মার্চ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন সমাবেশে সাদ্দাম ও ইনানের অংশগ্রহণ করার মুহুর্তে ধারণ করা ছবি দিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ওয়েবসাইটে গত ৩১ মার্চ ‘নেতাকর্মীদের নিয়ে এবার প্রকাশ্যে বুয়েটে ঢুকল ছাত্রলীগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার পর প্রকাশ্যেই নেতাকর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে কয়েকশ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বুয়েট শহীদ মিনারে ফুল দেন তারা। সেখানে ফুল দেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে বুয়েট ত্যাগ করেন। এ সময় বুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন হলের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
গণমাধ্যমে সেই সময়ে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন (১, ২) থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায় সাদ্দাম ও ইনানের ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, পুরোনো ঘটনার ছবি যুক্ত করে সরকার পতনের পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান জনসম্মুখে এসেছেন শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি এখন পর্যন্ত আলোচিত দাবির সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি ৮ লক্ষ ৮১ হাজারবার দেখা হয়েছে এবং ১৫ হাজার প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এছাড়া, ভিডিওটি ৮ হাজার ৪ শতবার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি লক্ষ্মীপুরের নয় বরং এটি ভারতের আসামের ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম মহানগর টাইমস এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, ভারতের আসামে বনভূমিতে মাজার তৈরি করার কারণে প্রশাসন জমিটি মুক্ত করেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম Northeast Now এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। তবে লক্ষ্মীপুরে কোনো ঈদগাহ মাঠ ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ভারতে মাজার ভাঙ্গার দৃশ্যকে লক্ষ্মীপুরে ঈদগাহ মাঠ ভেঙ্গে ফেলার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত জুলাই মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া রাজপথের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নেয়। গণআন্দোলনের মুখে গত ০৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ০৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পরেক্ষিতে, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ সকল উপদেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং সকল উপদেষ্টাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনি বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেছেন দাবিতে একটি আদেশপত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, রাষ্ট্রপতির তথাকথিত এই আদেশপত্রে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা, কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল সমন্বয়কগণকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল উপদেষ্টাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কথাও উল্লেখ করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ সকল উপদেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করে সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করার বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেন নি বরং উক্ত বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত আদেশপত্রটি ভুয়া।
অনুসন্ধানে ‘ব্রিটিশ আওয়ামীলীগ সাপোর্ট টিম’ নামক ফেসবুক গ্রুপে Akas Rahman Farabi নামক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টা ১০ মিনেটে প্রকাশিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
তথাকথিত আদেশপত্রের ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে প্রকাশের তারিখ গত ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখ লক্ষ্য করা যায়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রাষ্ট্রপ্রতির কার্যালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এমন কোনো আদেশপত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে বিদেশি একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের যানপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবং সফর শেষে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন।
অর্থাৎ গত ২৩ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রের তারিখেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন। যদি এটি রাষ্ট্রপতির আদেশপত্র পত্র হতো তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরে নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া হতো না বরং সফরের পূর্বেই তাকে বাধা দেওয়া হত এবং গ্রেপ্তার করা হতো।
এছাড়া, গত ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌছান। এরপর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রণের জন্য জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যান। সেখানে বিশ্ব নেতারা ড. ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং ইউনূস বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য প্রদান করেন। তার মানে রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রটি সত্য হলে বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রণের বিষয়টি অকল্পনীয় হত।
পাশাপাশি অন্তর্বর্তকালীন সরকারের প্রায় সকল উপদেষ্টাই (১, ২, ৩) এখন দেশে অবস্থান করছেন। রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রটি সত্য হলে তারা এখন গ্রেফতার হতেন।
এছাড়া, রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রটি সত্য হলে উক্ত আদেশপত্রটি সত্য হলে এ বিষয়েদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কোন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো। তবে বিভিন্ন ভাবে অনুসন্ধান করেও আমরা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাইনি।
সুতরাং, অন্তর্বর্তকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অবৈধ ঘোষণা করে প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত আদেশপত্রটি বানোয়াট ও ভুয়া।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ০৫ আগস্ট পদত্যাগের পর দেশত্যাগ করেন। সম্প্রতি পদত্যাগ না করায় ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ভিডিওটি ১ লক্ষ ২২ হাজার বারেরও বেশি দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দিতে ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সুমনের পুরোনো ভিডিও ও চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভুয়া এই দাবি প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওর শুরুতে হবিগঞ্জ- ০৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় মিছিলে অংশ নিয়েছেন। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করার দৃশ্য দেখা যায়। তারপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বিমান থেকে নামতে দেখা যায়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার সুমন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও যুক্ত করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ‘স্বাধীনতা প্যারেড আমেরিকার মাটিতে’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত ভিডিওটির বেশ কয়েকটি দৃশ্যের সাথে উক্ত ভিডিওটির বেশ কিছু অংশ মিলে যায়। উক্ত ভিডিওটি মূলত ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালনের সময়কার।
পরবর্তীতে Ruhul Khan USA নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত ভিডিওটির বেশ কয়েকটি দৃশ্যের সাথে উক্ত ভিডিওটির বেশ কিছু অংশ মিলে যায়। উক্ত ভিডিওর বরাতে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় ধারণকৃত। ঐ সময় তাকে বরণ করে নিতে নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে ভীড় জমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সদস্যরা।
পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মূলধারার গণমাধ্যম মাছরাঙা টেলিভিশনের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগ দিতে লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওতে শেখ হাসিনার বিমান থেকে নামার দৃশ্য মিলে যায়। উক্ত ভিডিওর বরাতে জানা যায়, এটি ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটেনের রাণীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে লন্ডনে পৌঁছানোর দৃশ্য।
প্রচারিত ভিডিওর বাকি অংশে কোনো সূত্র ছাড়া এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমনের ফেসবুক পেজে প্রচারিত কয়েকটি পুরোনো ভিডিও (১, ২, ৩) যুক্ত করে প্রচারিত দাবি সম্পর্কে বলা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দিতে ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সুমনের পুরোনো ভিডিও ও চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভুয়া এই দাবি প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওর শুরুতে হবিগঞ্জ- ০৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় মিছিলে অংশ নিয়েছেন। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করার দৃশ্য দেখা যায়। তারপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বিমান থেকে নামতে দেখা যায়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার সুমন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও যুক্ত করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ‘স্বাধীনতা প্যারেড আমেরিকার মাটিতে’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত ভিডিওটির বেশ কয়েকটি দৃশ্যের সাথে উক্ত ভিডিওটির বেশ কিছু অংশ মিলে যায়। উক্ত ভিডিওটি মূলত ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালনের সময়কার।
পরবর্তীতে Ruhul Khan USA নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত ভিডিওটির বেশ কয়েকটি দৃশ্যের সাথে উক্ত ভিডিওটির বেশ কিছু অংশ মিলে যায়। উক্ত ভিডিওর বরাতে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় ধারণকৃত। ঐ সময় তাকে বরণ করে নিতে নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে ভীড় জমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সদস্যরা।
পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মূলধারার গণমাধ্যম মাছরাঙা টেলিভিশনের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগ দিতে লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওতে শেখ হাসিনার বিমান থেকে নামার দৃশ্য মিলে যায়। উক্ত ভিডিওর বরাতে জানা যায়, এটি ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটেনের রাণীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে লন্ডনে পৌঁছানোর দৃশ্য।
প্রচারিত ভিডিওর বাকি অংশে কোনো সূত্র ছাড়া এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমনের ফেসবুক পেজে প্রচারিত কয়েকটি পুরোনো ভিডিও (১, ২, ৩) যুক্ত করে প্রচারিত দাবি সম্পর্কে বলা হয়েছে।