সম্প্রতি, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
কথিত প্রস্তাবনাগুলো হলো, সারা বাংলাদেশে একদিনেই নির্বাচন না দিয়ে, ৮ দিনে ৮ টি বিভাগের নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের সকল বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচন দিতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৫ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, দুই জন বিজিবি + তিনজন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রের সার্বিক অবস্থা লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। বিমানবাহিনী একটা স্পেশাল টিম হেলিকপ্টার যোগে টহল দিবে। কোন কেন্দ্র আক্রান্ত হলে তারা দ্রুতই রিজার্ভ ফোর্স সরবরাহ করবে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন আয়োজনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এমন কোনো প্রস্তাব দেননি বরং যশোরের এক ব্যক্তির দেওয়া এসব প্রস্তাবনাকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ করে গত ১৩ জুন রাত ৮ টা ৫৯ মিনিটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রথম পোস্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। মোস্তাফিজুর রহমান জনি নামে এক ব্যক্তি নিজের প্রস্তাব জানিয়ে উক্ত দাবিগুলো তুলে ধরেন। ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি যশোরের মনিরামপুর সরকারি পাইলট হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক।
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যগুলো সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ছবি ব্যবহার করে পোস্ট হতে দেখা যায়। আবার সেনাপ্রধানের কাছে এই প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে এমন শিরোনামেও তথ্যগুলো প্রচার হতে দেখা গেছে।
অর্থাৎ, ছয় দফা সম্বলিত একটি প্রস্তাবের সাথে প্রস্তাবদাতার নাম সময়ে সময়ে বদলে দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
সেনাপ্রধানের উক্ত প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি প্রচারের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি একটি ভুয়া সংবাদ।
সুতরাং, নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের ছয় দফা প্রস্তাব শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। এর পর গত ১৮ জুন থেকে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে প্রচার করা হয়, “এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার পাবে দেশ, এরপর চুপচাপ সরে যাব”।
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়াও ‘নয়া শতাব্দী’ আলোচিত দাবিতে সংবাদ প্রচার করে পরবর্তীতে তা সরিয়ে নেয়।
উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয় যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর ড. ইউনূস আবার এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, ড. ইউনূসের উক্ত বক্তব্যটি গত ১৩ জুনে তারেক রহমানের সাথে হওয়া বৈঠকের পরবর্তী সময়ের।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার পাবে দেশ, এরপর চুপচাপ সরে যাব” শীর্ষক মন্তব্যটি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তারেক রহমানের সাথে হওয়া বৈঠকের পরবর্তী সময়ে করেননি বরং, তারেক রহমানের সাথে হওয়া উক্ত বৈঠকের আগের দিন গত ১২ জুনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে এরূপ মন্তব্য করেছিলেন ড. ইউনূস৷ প্রকৃতপক্ষে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে এরূপ বিবৃতির পর নতুন করে এপ্রিলে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি ড. ইউনূস।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত গণমাধ্যম ‘বাংলা আউটলুক’ এর ফেসবুক পোস্টটির মন্তব্য বিভাগে দেওয়া প্রতিবেদনে বলতে দেখা যায়, “প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যেই দেশ নির্বাচিত সরকার পাবে, এবং এরপর বর্তমান সরকার চুপচাপ সরে যাবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে গত ১২ জুন দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।”
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এর ওয়েবসাইটে “‘People see government as the enemy’: Bangladesh’s interim leader on the legacy of a toxic system” শীর্ষক শিরোনামে এ গত ১২ জুনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বা সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। উক্ত সাক্ষাৎকারটিতে ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের দুর্নীতি, জুলাই আন্দোলন, নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায় এবং এক পর্যায়ে ড. ইউনূসকে বলতে দেখা যায়, “এপ্রিলে আমরা নির্বাচিত সরকার পাবো এবং এরপর আমরা চলে যাবো।” (অনূদিত)
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও গত ১৩ জুন পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূসকে এপ্রিলে নির্বাচনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আর বলতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সাক্ষাৎকারটি ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এর ওয়েবসাইটে গত ১২ জুন ব্রিটিশ সামার টাইম ১২ টা ২ মিনিট বা বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টা ২ মিনিটে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সাক্ষাৎকারটি নেওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। অপরদিকে গত ১৩ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। অর্থাৎ, তারেক রহমানের সাথে বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে জানানোর আগেই দ্য গার্ডিয়ানে ড. ইউনূস এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার পাওয়ার বিষয়টি বলেছিলেন।
সুতরাং, লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠকের পূর্বে আগামী সংসদ নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যকে তারেক রহমানের বৈঠকের পর ড. ইউনূসের করা মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু “আমার সব শেষ করে দিচ্ছে ইরান” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় ‘আমার সব শেষ করে দিচ্ছে ইরান’ দাবি করে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ইরানি হামলায় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে সম্বলিত যমুনা টেলিভিশনের একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে যমুনা টিভির লোগো দেখতে পায় রিউমর স্ক্যানার। তবে এতে ফটোকার্ডটি প্রকাশের কোনো তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তবে সাল হিসেবে ২০২৫ এর উল্লেখ রয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, গত ১৫ জুন যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে “ইরানি হামলায় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে শিরোনাম ব্যতীত উক্ত ফটোকার্ডের সকল উপাদানের মিল রয়েছে। মূলত, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে মূল ফটোকার্ডের পুরো মন্তব্যের অংশ ভিন্ন ফন্টে নতুন করে লেখা হয়েছে। মূল ফটোকার্ডে ‘ইরানি হামলায় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর’ জায়গায় ‘আমার সব শেষ করে দিচ্ছে ইরান’ শীর্ষক বক্তব্য প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যমুনা টেলিভিশন-এর এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা করেই আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
তাছাড়া, মূল ফটোকার্ড সম্বলিত যমুনা টিভির পোস্টে মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইরানের হামলায় ইসরায়ালের বিধ্বস্ত এলাকা বাট ইয়াম পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বেসামরিক হত্যার জন্য ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। এ হামলায় ইসরায়েলের মধ্য ও উত্তরে অন্তত ১০ জন নিহত হন। উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তবে, উক্ত প্রতিবেদনটিতে কোথাও নেতানিয়াহুর নামে প্রচারিত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, যমুনা টেলিভিশন ব্যতীত অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘আমার সব শেষ করে দিচ্ছে ইরান’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে যমুনা টেলিভিশনের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘ পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, যমুনা টিভির ‘ক্রাইম সিন’ নামক অনুষ্ঠানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। দাবিটা এমন “গত কয়েক বছরে এই লাইনের কিছু কিছু স্পটে প্রায় দেড়’শ মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় – আখাউড়া, কসবা, বি-বাড়ীয়া, ভৈরব কিশোরগঞ্জ হয়ে নরসিংদী পর্যন্ত। আবার টঙ্গী জংশন এলাকায় সবচেয়ে বেশি চুরি-ছিনতাইয়ের রেকর্ড রয়েছে।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে রেললাইনের বিভিন্ন স্পট থেকে প্রায় দেড়শ মৃতদেহ উদ্ধারের শীর্ষক ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি যমুনা টিভির ক্রাইম সিন অনুষ্ঠানের একটি তথ্য যা ২০১৬ সাল থেকে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ক্রাইম সিন নামক অনুষ্ঠানে ঢাকা চিটাগাং ট্রেন লাইন নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ২০১৬ সালের পূর্ববর্তী কয়েক বছরে এই লাইনের কিছু কিছু স্পটে প্রায় দেড়শ মৃতদেহ পাওয়া যেত এবং সবচেয়ে বেশি আখাউড়া ভৈরব কিশোরগঞ্জ কসবা বি-বাড়িয়া হয়ে নরসিংদী পর্যন্ত রাস্তায় এ ঘটনাগুলো ঘটতো বলে যমুনা টিভির ক্রাইম সিনে দেখানো হয়। তখনকার সময়ে বিভিন্ন স্থানে ঘটা কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সেসব লাশ রেললাইনে পাওয়া যাওয়ার বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাগুলো বর্তমানেও ঘটছে বলে কোনো প্রতিবেদন যমুনা টিভির ক্রাইম সিন প্রকাশ করেনি। বর্তমান সময়ে এইসব প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে কোনো ধরণের প্রতিবেদন কোনো গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি। অর্থাৎ, অন্তত ২০১৬ সাল থেকে প্রচারিত পুরোনো তথ্যকে পুনরায় সাম্প্রতিক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, কয়েক বছরে রেললাইনের বিভিন্ন স্পট থেকে প্রায় দেড়শ মৃতদেহ উদ্ধারের দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি প্রচার হলে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ঘরবাড়ি হারিয়ে ইসরায়েলি তরুণীর কান্নার দৃশ্য নয়; বরং এটি সাবেক সিরীয় সাঁতারু ইউসরা মার্দিনির এক দশক পর নিজ এলাকায় ফেরার আবেগপ্রবণ মুহূর্তের ভিডিও।
বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘Yusra Mardini’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ১৪ মার্চ পোস্ট করা একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, “আমি ঘরবাড়িতে, কিন্তু আমার ঘরবাড়ি আর দাঁড়িয়ে নেই। আমার মনের কথা তোমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই, কারণ এটা শুধু আমার গল্প নয়, এই মুহূর্তে অনেক সিরিয়ানই একই রকম হারানো, কষ্ট আর মানসিক আঘাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এটাই ছিল সেই ঘরবাড়ি, যেখানে আমি বড় হয়েছি, স্বপ্ন দেখেছিলাম নিজেকে একজন সেরা নারী হিসেবে গড়ে তোলার, আর বাবার সঙ্গে পাড়ায় দাঁড়িয়ে গাড়ি ধুয়েছিলাম। হ্যাঁ, আমার ঘরবাড়ি এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ, কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো সবসময় আমাকে এগিয়ে যেতে শক্তি দেবে। আলহামদুলিল্লাহ।”
পবর্তীতে, মিডেল ইস্ট আইয়ের ইউটিউব চ্যানেলেও গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর বর্ণনায় বলা হয়, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত ও সাবেক সিরিয়ার সাঁতারু ইউসরা মার্দিনি এক দশক পর নিজ দেশে ফিরে দেখেন, দারায়ার তার এলাকা প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, এমনকি তার বসবাসের ভবনটিও।
Comparison: Rumor Scanner.
সৌদি আরব ভিত্তিক গণমাধ্যম আল আরাবিয়াতে গত ২৮ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অলিম্পিক সাঁতারু ও ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত ইউসরা মার্দিনি ১৭ বছর বয়সে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে যান। এক দশক পর প্রথমবার দেশে ফিরে তিনি পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে চান। ২৭ বছর বয়সী এই সাঁতারুর জীবন নিয়ে নেটফ্লিক্সে নির্মিত ‘দ্য সুইমারস’ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ইউসরা ও তার বোন দামেস্ক থেকে পালিয়ে এজিয়ান সাগর সাঁতরে পার হন।
সুতরাং, সিরিয়ার সাবেক সাঁতারু ইউসরা মার্দিনির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আবেগপ্রবণ ভিডিওকে ইসরায়েলি নারীর কান্নার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘Tamanna Aktar Yesmin’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল নিয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে উঠে আসে, প্রোফাইলটি থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছিল, যেন প্রোফাইলধারী আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই প্রোফাইলটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর নামের বানানে সামান্য পরিবর্তন এনে ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামে আরেকটি প্রোফাইল খোলা হয়। নতুন এই প্রোফাইলটিও পূর্বের মতো একই কৌশলে পরিচালিত হচ্ছে। এখান থেকেও রিম আল হাশিমির পুরোনো ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে এমনভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে, যাতে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ভাবমূর্তি গড়ে তোলা যায়।
ফেসবুকের ট্রান্সপারেন্সি সেকশন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রোফাইলটি ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর খোলা হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশ থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। সাত মাসের ব্যবধানে এর অনুসারীর সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
Screenshot: Facebook.
প্রোফাইলটিতে প্রকাশিত ছবি, ভিডিও ও বিবরণ দেখে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনে হতে পারে, এটি আওয়ামী লীগপন্থি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় কোনো নারী নেত্রীর প্রোফাইল। বিভিন্ন পোস্টে দেখা যায়, তিনি ভারতের কোথাও অবস্থান করছেন এবং সময় সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করছেন। এছাড়া ভারতে আসা বিভিন্ন বিদেশি নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ এবং বিদেশ সফরে গিয়ে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথাও উল্লেখ করা হয়।
তবে অনুসন্ধানে এসব দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং দেখা গেছে, প্রোফাইলটিতে রিম আল হাশিমির পুরোনো কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ভিন্ন একটি পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। এতে প্রোফাইলধারীকে একজন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কখন কোথায় সফর করেছেন, কখন ফিরেছেন, এমন তথ্যও নিয়মিতভাবে জানানো হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘কিংস তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার পর ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে দাবি করা হয়, প্রোফাইলধারীও এই পুরস্কার পেয়েছেন। তবে, অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, এই দাবি মিথ্যা। ‘তামান্না আক্তার ইয়াসমিন’ নামে কোনো ব্যক্তি এই পুরস্কার পাননি। এই দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো ২০২২ সালে দুবাই পুলিশ এবং এক্সপো ২০২০ দুবাইয়ের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এছাড়া পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া, মনোনয়নের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ, ব্রিটেন সফর, ব্রিটিশ রাজা-রানী এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও সফর শেষে ভারতে ফেরার দাবিও প্রচার করা হয়। তবে এসব দাবির সঙ্গে ব্যবহৃত ছবিগুলোর প্রতিটিই রিম আল হাশিমির পুরোনো ছবি ও ভিডিও।
Comparison: Rumor Scanner.
রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৫ সালের ১ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামের ফেসবুক প্রোফাইলটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ সময়ের মধ্যে প্রোফাইলটি থেকে মোট ১০৩টি পোস্ট করা হয়। এর মধ্যে ৭৯টি ছিল শুধুমাত্র ছবি-ভিত্তিক, ২২টি ভিডিওকেন্দ্রিক এবং একটি পোস্টে ছবি ও ভিডিও দুটোই ব্যবহৃত হয়। একটি পোস্ট ছিল শুধুই লেখাভিত্তিক।
এই ১০৩টি পোস্টের মধ্যে ৮৩টিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমির ছবি ব্যবহৃত হয়েছে, যা মোট পোস্টের প্রায় ৮০ শতাংশ। বিষয়বস্তুর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নাম এসেছে ১৮টি পোস্টে, যা মোট পোস্টের প্রায় ১৭ শতাংশ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব পোস্টে রাশিয়ার আদালতে রূপপুর প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের কথিত মামলায় তার ‘মুক্তি’, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগ ‘বাতিল’-এর দাবি উঠে এসেছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপ ও সাক্ষাতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে ঘিরে ছয়টি পোস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটিতে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে তার নির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিলের দাবি, একটিতে ফিনল্যান্ড সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি এবং দুইটিতে কথিত ‘তামান্না’র সঙ্গে তার সাক্ষাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব পোস্টে ড. ইউনূসকে প্রায় প্রতিবারই নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আরেকটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘তামান্না’র সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
প্রোফাইল থেকে প্রকাশিত এসব পোস্ট নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারীদের কাছে দ্রুত পৌঁছে দিতে নিয়মিতভাবে আওয়ামী লীগপন্থি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করা হয়। ফলে এগুলোর প্রচারমাত্রা বাড়ে এবং তা ফেসবুকের গণ্ডি পেরিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
এই পোস্টগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীরা কতটা বিশ্বাস করছেন, তা মূল্যায়নের জন্য আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে কথিত সাক্ষাতের দাবিসংবলিত পাঁচটি পোস্টকে নমুনা হিসেবে বিশ্লেষণ করা হয়। এসব পোস্টে দুবাইয়ের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর স্ত্রী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলা হয়েছে।
Image Collage: Rumor Scanner.
পাঁচটি পোস্টে মোট ১৮৬টি মন্তব্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮৩টি মন্তব্যেই শুভেচ্ছা, অভিনন্দন বা প্রশংসা জানানো হয়েছে, যা মোট মন্তব্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ। মাত্র একটি মন্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে (০.৫৪ শতাংশ) এবং দুইটি মন্তব্যে বিরোধী মত এসেছে (১.০৮ শতাংশ)।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে ‘লাইক’, এরপর ‘লাভ’ রিঅ্যাকশন। বিশ্লেষণ বলছে, প্রোফাইল থেকে প্রচারিত তথ্য ও দাবি অধিকাংশ ব্যবহারকারীর কাছেই বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘২৪ এর লাল যোদ্ধা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট এর মুখ্য সংগঠক অর্পিতা শ্যামা দেব কট’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ব্যক্তিগত দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ব্যক্তিগত উক্ত দৃশ্যটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেবের।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেবের ব্যক্তিগত দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যটি অর্পিতা শ্যামা দেবের নয় বরং, অনলাইনে অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটে বিদ্যমান ভিন্ন এক নারীর ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ভিডিওটি অর্পিতা শ্যামা দেবের দাবিতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, ২০২২ সালে একটি অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটি ‘AndreAndVictor’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়েছে এবং উক্ত অ্যাকাউন্টে উক্ত নারীর আরো একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
এছাড়াও, উক্ত ভিডিওটি এরূপ আরো কিছু ওয়েবসাইটেও প্রচার হতে দেখা যায় তবে সংগত কারণে সেসব ওয়েবসাইটেরও নাম উল্লেখ করা হচ্ছে না।
Comparison : Rumor Scanner
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নারী ও অর্পিতা শ্যামা দেবের মুখমন্ডলের তুলনা করলেও বৈসাদৃশ্য দেখা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে দু’জন আলাদা ব্যক্তি।
সুতরাং, অনলাইনে অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটে বিদ্যমান ভিন্ন এক নারীর ভিডিও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেবের ব্যক্তিগত দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “তুষার আমাকেও লাগাতে চেয়েছিল” শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারার বক্তব্য দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এনসিপি নেত্রী ডা. তাসনিম জারা ‘তুষার আমাকেও লাগাতে চেয়েছিল’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং কালবেলাও উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে কালবেলার ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালবেলার লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১৬ জুন, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
কালবেলার লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, কালবেলার ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ১৬ জুন গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “নারী কর্মীকে কুপ্রস্তাব এনসিপি নেতার, অডিও ফাঁস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। কালবেলার মূল ফটোকার্ডটিতে ‘নারী কর্মীকে কুপ্রস্তাব এনসিপি নেতার, অডিও ফাঁস’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘তুষার আমাকেও লাগাতে চেয়েছিল- তাসনীম জারা’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
Photocard Comparison By Rumor Scanner
অর্থাৎ, কালবেলার এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত কালবেলার পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে এক নারী নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যার প্রমাণ হিসেবে একটি অডিও ফাঁস করেছেন সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর। অডিওতে রাতের বেলা ছবি চাওয়া ও দেখা করার প্রস্তাবসহ আপত্তিকর কথোপকথন শোনা যায়। তবে, উক্ত প্রতিবেদনটিতে কোথাও ডা. তাসনিম জারার নাম প্রচারিত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাকে উদ্ধৃত করে ‘তুষার আমাকেও লাগাতে চেয়েছিল’ শিরোনামে কালবেলার নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামে পরিচালিত এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার ছবি সদৃশ দুইটি ছবিসহ কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “বাংলাদেশের জন্য বড় একটি উপহার। ভারতে সফররত তাজিকিস্তানের আবাসন উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী মোহাম্মদ ফয়সাল বিন ফারহানের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেছি। বাংলাদেশের জন্য ৫৮৯ টি ইসলামিক রিপাবলিক মসজিদ উপহার হিসেবে গ্রহণ করেছি। মসজিদ গুলোর বাজেটে ব্যায় হবে ৪ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। আমরা মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প নিরাপত্তা বিষয়ে ২ বছরের সমঝোতা স্মারক সই করেছি। মানবতায় একটি দিস্টান্ত দেখালেন তাজিকিস্তান সরকার আমি জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং মোবারকবাদ।”
উক্ত দাবিতে ফেসবুক প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো সম্প্রতি তাজিকিস্তানের কোনো মন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের জন্য মডেল মসজিদের বিষয়ে কোনো সমঝোতা স্মারকের ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালে জাম্বিয়ার সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হওয়া চুক্তির ছবি আলোচিত ভুয়া দাবিতে প্রচার করা হয়েছে এবং প্রদর্শিত নারীর নাম তামান্না নয় বরং, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম বিনতে ইব্রাহিম আল হাশিমী।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সমঝোতা স্মারকের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে জাম্বিয়া ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘জাম্বিয়া রিপোর্টস’ এর ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে তিনটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার মধ্যে দুইটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবি দুইটির মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে ছবিগুলোর সম্পর্কে বলা হয়, “সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: জাম্বিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩টি অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।… জাম্বিয়ার পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাননীয় জোসেফ মালাঞ্জি এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী মাননীয় ক্রিস্টোফার ইয়ালুমা স্বাক্ষর করেন, আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রমন্ত্রী মহামান্যা রিম ইব্রাহিম আল-হাশিমি এবং দুবাই ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০ বিড কমিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।..” (অনূদিত)
এছাড়াও, জাম্বিয়ার বাণিজ্য, বাণিজ্যিক লেনদেন ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজেও আলোচিত ছবিগুলোর সংযুক্তিসহ ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, জাম্বিয়া প্রজাতন্ত্র সরকার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) দুটি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। স্বাক্ষরিত তিনটি চুক্তির মধ্যে রয়েছে: ১. বিনিয়োগ সংরক্ষণ ও পারস্পরিক সুরক্ষার জন্য চুক্তি, ২. দ্বৈত কর পরিহার এবং আয় ও কর সংক্রান্ত কর ফাঁকি প্রতিরোধের চুক্তি, ৩. কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতির চুক্তি।
অর্থাৎ, প্রচারিত চুক্তি স্বাক্ষরের ছবিতে বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং প্রদর্শিত নারী বাংলাদেশ সরকারের কেউ নন বরং, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম বিনতে ইব্রাহিম আল হাশিমী।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত দাবির অনুরূপ তাজিকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কোনো সমঝোতা স্মারক সম্প্রতি স্বাক্ষরিত হয়েছে কি না এ বিষয়ে অনুসন্ধান করলে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেই আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমীর ছবি ব্যবহার করে তামান্না আক্তার ইয়াসমান (Tamanna Akhter Yesman) নাম দাবি করে একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমাগত ভুল তথ্য প্রচার করতে দেখা যায়। উক্ত অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত গুজবের বিষয়ে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০২০ সালে জাম্বিয়ার সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হওয়া চুক্তির ছবি সম্প্রতি তাজিকিস্তানের মন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের জন্য মডেল মসজিদের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে: যা মিথ্যা।
চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে এক ইসরায়েলি সৈনিক ইরানকে হামলা থামানোর অনুরোধ জানাচ্ছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে আবেগঘনভাবে কাঁদতে দেখা যায় ওই সৈনিককে। মাইক হাতে তিনি ইংরেজিতে বলেন, “ইরান, আমরা আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি। দয়া করে হামলা বন্ধ করুন। ইসরায়েলের অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা আত্মসমর্পণ করছি। শুধু এই ধ্বংসযজ্ঞ থামান।” ভিডিওটির এক কোণে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির লোগোও দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,ইসরায়েলি সৈনিকের ইরানকে হামলা বন্ধের অনুরোধ জানানোর দাবিতে ভাইরাল এই ভিডিওটি বাস্তব নয়; এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে সময় টিভির লোগোর সূত্র ধরে চ্যানেলটির ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটির খোঁজ করা হয়। কিন্তু সেখানে এমন কোনো ভিডিও প্রচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভিডিওটির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ‘Jax Teller Motivation’ নামের একটি টিকটক প্রোফাইলে গত ১৪ মে প্রচারিত একই ভিডিওর উন্নত সংস্করণ পাওয়া যায়। ভিডিওটির মন্তব্য ঘরে অনেক ব্যবহারকারী এটিকে এআই দিয়ে তৈরি বলে দাবি করলেও, প্রকাশকারী কোনো প্রতিবাদ না করে মন্তব্যের জবাবে শুধু লাভ ইমোজি ব্যবহার করেছেন।
এছাড়া, এই প্রোফাইল থেকে প্রচারিত উচ্চমানের ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ হলো গুগলের একটি অত্যাধুনিক এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই টুল দিয়ে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত ‘Veo’ জলছাপ থাকে। এই ভিডিওটিতেও ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Claimed Video.
রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণেও ভিডিওটিতে এআই-জনিত বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়েছে। সৈনিকের মুখভঙ্গি ও কান্না অতিরঞ্জিত, চেহারার টেক্সচার বাস্তবসম্মত নয় এবং পেছনের ধোঁয়া ও আগুনের দৃশ্য কম্পিউটার গ্রাফিকসের মতো। সৈনিকের হাতে থাকা মাইক্রোফোনটি নতুন ও অক্ষত, যা যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আরও নিশ্চিতকরণের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
Screenshot: Hive Moderation.
তাছাড়া, এমন একটি ভিডিও যদি বাস্তব হতো, তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতো। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে ইসরায়েলি সৈনিক ইরানের কাছে হামলা বন্ধের অনুরোধ জানাচ্ছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।