সম্প্রতি, জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার খুশিতে অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান জানা যায়, জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক ভূঁইয়া মারা যাননি। প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে এই নেতার খুশিতে মদ পান করে নাচার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। তবে এই নেতার মৃত্যুর দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। তিনি বেঁচে আছেন।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জামিনে মুক্তি পাওয়ায় অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের কোনো আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ব্যক্তির ছবির সাথে উক্ত প্রতিবেদনের ছবির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ছবিটি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক ভূঁইয়ার। জুলাই আন্দোলনের একাধিক মামলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে উচ্চ আদালত থেকে দুই মামলায় জামিন নিয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান। মুক্তি পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে তার রাতে বিভিন্ন গ্রামে গোপন বৈঠক এবং নেশাগ্রস্থ হয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার তথ্যও পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তার এমন মদ্যপান করে নাচার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। প্রতিবেদনটিতে ওই আওয়ামী লীগ নেতার সাথে ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে আলাপ হওয়ার কথা বলা হয়।
আলোচিত ভিডিওর বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ২৪ এর ফেসবুক পেজে কিশোরগঞ্জের ওই আওয়ামী লীগ নেতার মদ্যপান করে নাচের ভাইরাল ভিডিওটির সন্ধান পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনগুলোর কোথাও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর কথা বলা হয়নি। বরং ভিডিওর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুতরাং, জামিনে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার খুশিতে অতিরিক্ত মদ্যপানে কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির স্লোগান সদৃশ একটি ভিডিও প্রচার করে ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “সাধারণ জনগণের কথা”।
ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তির “তোমরা সবাই কী চাও?” প্রশ্নের জবাবে বাকীদের বলতে শোনা যায়, “আমরা চাই আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফিরুক। শান্তি চাই। উন্নয়ন চাই। আওয়ামী লীগ চাই।”
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি এককভাবে প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে। শেয়ার করা হয়েছে ৪১ বার।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাধারণ জনগণের আওয়ামী লীগকে আবার সরকারে ফেরত চাওয়ার দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটির সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি “rsrohimbd24” ইউজারনেমের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ২৯ জুনে প্রচার হতে দেখা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে এআই দিয়ে তৈরি একাধিকভিডিও নানাসময়ে প্রচার হতে দেখা যায়। পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।
Screenshot of Claimed Video
এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Rumor Scanner/Cantilux
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “Cantilux” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে সাধারণ জনগণের আওয়ামী লীগকে আবার সরকারে ফেরত চাওয়ার দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হয়েছে, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনার মতো ডায়নামিক লিডার হয় নাকি, বাংলাদেশ উঠে যাচ্ছিল, তা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক সময় আমি বাংলাদেশে ঐক্য দেখেছিলাম, আজ তা আর চোখে পড়ে না। দেশটি যেন এক জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পগুলো তার দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচায়ক। উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দেওয়া একটি দেশের জন্য আত্মঘাতী। আমি আশা করি, বাংলাদেশের জনগণ তাদের দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
এরূপ দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছে। এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পোস্টটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও শেয়ার করা হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
এছাড়াও, আলোচিত দাবিটি প্রচারে মাহাথির মোহাম্মদের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিওও সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়, যেখানে মাহাথিরকে কারোর বিষয়ে বলতে শোনা যায়, নোবেল পুরষ্কার তার প্রাপ্য। তার ক্ষমতার আকাঙ্খ্যা ছিল না, তিনি শুধু গরীব মানুষদের জন্য কাজ করতে চেয়েছেন/করেছেন। এছাড়াও মাহাথিরকে বাংলাদেশের মানুষ, সরকার ও শেখ হাসিনাকে ‘উৎখাতের’ সময় দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ হওয়াসহ নানা বিষয়েও কথা বলতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাথির মোহাম্মদ সাম্প্রতিক কোনো সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে ‘ডায়নামিক লিডার’ আখ্যায়িত করেননি এবং শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেননি। আলোচিত দাবিটি প্রচারে সংযুক্ত ভিডিওটিতে ড. ইউনূসের প্রশংসা করেছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মাহাথির মোহাম্মদের শেখ হাসিনার প্রশংসার করার দাবির সপক্ষে গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘আইটিভি’ এর সাংবাদিক ‘মাহাতির পাশা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়া ও বৈশ্বিক নানা বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের নানা বিষয়েও মতপ্রকাশ করেন। উক্ত সাক্ষাৎকারটির একটি অংশ মূলধারার গণমাধ্যম ‘বিডিনিউজ২৪’ কে প্রদান করা হয়। বিডিনিউজ২৪ সাক্ষাৎকারটির উক্ত অংশ তাদের ইউটিউব চ্যানেলে এবং ওয়েবসাইটে গত ২৪ জুনে প্রকাশ করে।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত সাক্ষাৎকারের ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিটি প্রচারের ক্ষেত্রে নানা ফেসবুক পোস্টে মাহাথিরের সাক্ষাৎকারের সংযুক্ত ভিডিওটির সাথে তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে, আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত মাহাথির মোহাম্মদের উক্ত সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদকে প্রকৃতপক্ষে ড. ইউনূসের প্রশংসা করতে দেখা যায়। ড. ইউনূস সম্পর্কে মাহাথির বলেন, তিনি একজন মহান মানুষ ছিলেন। “তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন কারণ তিনি দরিদ্র মানুষের সহায়তার জন্য কিছু সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি… শুধু দরিদ্রদের জন্য কাজ করতে গিয়েছিলেন।”
উক্ত সাক্ষাৎকারে মাহাথির আরও বলেন, “হাসিনাকে উৎখাতের বিষয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু কী ধরনের সরকার গঠন হবে, সে বিষয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। প্রত্যেকে চায় তার নিজের চিন্তাভাবনা-ধারণা পুরো দেশ মেনে নিক, আর এখানেই সমস্যা তৈরি হয়। যারা এক সময় একসঙ্গে ছিল, এখন তাদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।”
এছাড়া, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়া উচিত কিনা জিজ্ঞেস করা হলে মাহাথির উত্তর দেন: “এটাই গণতন্ত্রের সমস্যা। মানুষ সব সময় সেরা লোককে বেছে নেয় না; কখনও কখনও তারা ভুল লোককেও বেছে নেয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “কিন্তু যদি বাংলাদেশের মানুষ ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেন, তবে আমি মনে করি তারা একটি ভালো সরকার বেছে নিতে পারবে।”
উক্ত সাক্ষাৎকারে মাহাথিরকে শেখ হাসিনার প্রশংসা করতে বা আলোচিত দাবির অনুরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনাকে মাহাথির মোহাম্মদ ‘ডায়নামিক লিডার’ হিসেবে আখ্যায়িত না করলেও বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী জানান [সে সময় বৈঠকে] “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডায়নামিক নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিকসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করেন মাহাথির মোহাম্মদ।” এছাড়াও, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নানা সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা মাহাথির মোহাম্মদ করেছেন জানিয়ে নানাসময়ে গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়।
সুতরাং, সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে ‘ডায়নামিক লিডার’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনার বিষয়ে মাহাথির মোহাম্মদের ভূয়সী প্রশংসা করার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “আওয়ামী লীগ আর কোনো দিন আসবে না? মনে রাখিস এটা। আমার ছাত্রলীগের ভাইদের উপর এই হামলার বিচার হবে ইনশাআল্লাহ” ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি কোনো আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ কর্মীর নয় বরং, এটি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তির ছবি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Saif Arefin Rahat’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৫ সালের ৬ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ছবিতে থাকা ব্যক্তির নাম আজহারুল ইসলাম সৌরভ। তিনি গত জুলাই (২০২৪) মাসে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে আন্দোলনে গিয়ে আহত হন।
পরবর্তীতে, উক্ত পোস্টের সূত্র ধরে ‘Azharul Islam Showrov’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৫ সালের ৬ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচিত ছবির ব্যক্তিটি তিনি এবং ছবিটি জুলাই আন্দোলনের সময়ের।
সুতরাং, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তির ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ কর্মীর ওপর হামলার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’র ফেসবুক পেজে গত এপ্রিলে “সারজিস-নাফসিনের ‘ব্যক্তিগত মুহূর্তের’ ছবি নিয়ে যা জানা গেল” শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। প্রায় দেড় হাজার রিয়েক্টের এই পোস্টটিতে যে ১৭৫টি কমেন্ট পড়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কিছু কমেন্টকারী এই শিরোনামে বিভ্রান্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি অর্থাৎ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন মেহনাজের সমালোচনা করছেন। এসব কমেন্টকারী যে গণমাধ্যমটির সাইটে দেওয়া এ সংক্রান্ত সংবাদের বিস্তারিত পড়ে দেখেননি তা সহজেই অনুমেয়। পড়ে থাকলে জানতে পারতেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি ভিন্ন যুগলের ছবি বিকৃত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, ছবিটি সারজিস ও নাফসিনের নয়।
গত মে মাসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে নিয়ে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে দেশের মূল ধারার টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি। “মমতাজের বাড়িতে সেনা অভিযানে ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধারের খবর, যা জানা গেল” শিরোনামের এই ফটোকার্ডে রিয়েক্ট পড়েছে ৩৮ হাজার। পোস্টের দুই হাজারের বেশি কমেন্ট বিশ্লেষণ করে এই ঘটনাকে সত্যি ভেবে নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য নজরে এসেছে। যেমন একজন লিখেছেন, “মমতাজ কে ধন্যবাদ জানানো উচিত সে দেশের টাকা দেশেই রেখেছে।” আরেকজনের দাবি, “এই টাকা গুলো রাষ্ট্রয় কোষাগারে জমা রাখা হোক। জাতির সামনে প্রকাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।” কেউ কেউ আবার এই গণমাধ্যমকেই দুষছেন কমেন্টে। একজন যেমন লিখেছেন, “শিরোনাম কি আর বিস্তারিত কি সাংবাদিক বাটপার।” অর্থাৎ, আসল ঘটনা যে ভিন্ন এবং তা যে শিরোনাম দেখে বোঝার উপায় নেই তা-ই বলার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। মূল ঘটনা হচ্ছে, মমতাজ বেগমের বাড়ি থেকে ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিটি সঠিক নয়। এই দাবিতে যে ভিডিও ছড়ানো হয়েছে তা ভিন্ন ঘটনার একাধিক পুরোনো ভিডিও।
আরো কিছু উদাহরণ দেখা যাক। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ফেসবুক পেজে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে শিরোনাম দেওয়া হয় “ড. ইউনুসের গ্রামীণ ভবন পোড়ার বিষয়ে যা জানা গেল।” অর্থাৎ, এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক ভবন পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে ফলোআপ নিউজ এটি। কিন্তু মূল সংবাদটা এমন, “ তবে, তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমর স্ক্যানার এই দাবির সত্যতা অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, আসলে গ্রামীণ ভবন নামে কোন ভবনে আগুন দেওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মিথ্যা খবরটি প্রমাণবিহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।”
“মির্জা ফখরুল স্ট্রোক করেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল” ফটোকার্ডে এমন শিরোনাম দিয়ে গত ০৯ জুন একটি পোস্ট করা হয় ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে। ফটোকার্ডের শিরোনামে তার অসুস্থতা সংক্রান্ত দাবিটির বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য না থাকায় অনেক নেটিজেন বিভ্রান্ত হয়ে এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে বিএনপির মহাসচিবকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
একই ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর ক্ষেত্রেও। গত মার্চে মূলধারার তিনটি গণমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে দাবি করা হয়, ওবায়দুল কাদের মারা গেছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার সে সময় ফ্যাক্টচেক করে জানায়, এই দাবিতে উক্ত গণমাধ্যমগুলো কোনো ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ প্রকাশ করেনি। গণমাধ্যমগুলোর ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো প্রচার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক পুনরায় প্রকাশ করে আরেক গণমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ শিরোনাম দেয়, “ওবায়দুল কাদেরের মারা যাওয়ার খবর নিয়ে যা জানা গেল।”
বাংলাদেশে ফটোকার্ডের মাধ্যমে গণমাধ্যম তাদের সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই সংস্কৃতি খুব বেশি পুরোনো নয়৷ ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন এবং একটু বড় আকারের শিরোনাম দেওয়ার সুবিধা থাকায় কম সময়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই পদ্ধতি। এই ফটোকার্ডের অপব্যবহারও দেখেছে গণমাধ্যমগুলো। শুধু গত ছয় মাসেই ২৯০টি ঘটনায় দেশের ৩৮টি গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার অধিকাংশই ফটোকার্ডের মাধ্যমে। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতই বিভিন্ন ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সেসব প্রতিবেদন গণমাধ্যমগুলো পুনরায় প্রকাশের হার বেড়েছে। রিউমর স্ক্যানার বরাবরই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। এর একটিই কারণ, প্রতিষ্ঠান হিসেবে বহুল সংখ্যক মানুষের কাছে ভুয়া তথ্যের ফ্যাক্টচেক পৌঁছে দেওয়া ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে গণমাধ্যমগুলোর। গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত পরিচিতি এবং বিশ্বস্ততার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহজেই মানুষের কাছে ফ্যাক্টচেকগুলো পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য ফ্যাক্টচেকাররা সবসময়ই এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখেন। কিন্তু এমন যদি হয়, ফ্যাক্টচেক সংক্রান্ত পোস্টে সঠিক তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় উল্টো মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছেন, অনেক ক্ষেত্রে পোস্টের উপস্থাপনের ধরণের কারণে বিশ্বাস করে বসছেন ভুয়া তথ্যটাকেই। এমনটাই যে ঘটছে তা এই লেখার শুরুতে উপস্থাপিত চারটি উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্যাক্টচেকে সাধারণত সিদ্ধান্তমূলক শিরোনাম দিয়ে থাকে; যাতে শিরোনাম দেখেই পুরো বিষয়টির সারসংক্ষেপ বোঝা যায়। কিন্তু গণমাধ্যম যখন সেসব ফ্যাক্টচেক পুনরায় প্রকাশ করছে তখন একই শিরোনাম দিচ্ছে না। রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুয়া তথ্যটিকে চটকদারভাবে শিরোনামে উপস্থাপন করে সঠিক তথ্যকে আড়াল করা হচ্ছে। তার পরিবর্তে উৎসাহিত করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে গিয়ে মূল সংবাদ পড়তে। চলতি বছর শুধু রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক থেকে এমন অন্তত শতাধিক সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুনরায় প্রকাশের ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে মূল শিরোনাম বদলে দিয়ে দাবি এবং তার সাথে ‘যা জানা গেল’ শব্দ যুগল যুক্ত করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে।
এমন কোনো গবেষণা সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি যা থেকে জানা যাবে ঠিক কতজন ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্টে দেওয়া বিস্তারিত লিংকে গিয়ে পুরো খবর পড়ছেন। তবে পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে এ বিষয়ে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। এটি অনুমান করা কঠিন নয় যে, মানুষ গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে যেতে আগ্রহী হয় না। ফটোকার্ডের শিরোনাম দেখেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় এবং তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভুয়া তথ্যের পক্ষেই কমেন্ট করে। এই রীতি বেশ ভাবিয়ে তুলছে সচেতন মহলকে, ভাবাচ্ছে ফ্যাক্টচেকারদেরও।
অনেক ক্ষেত্রে কমেন্টে কঠোর সমালোচনা দেখার পর বিভ্রান্তিকর শিরোনামের ফটোকার্ড পরিবর্তন করার নজিরও পাওয়া যাচ্ছে।
Collage: Rumor Scanner
কিন্তু এর পূর্বেই ফটোকার্ডটি বেশ ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবেই পূর্বের শিরোনামটিই গেঁথে যায়। কারণ শিরোনাম বদলালেও পূর্বের পাঠকরা তা আর জানতে পারছেন না৷ এতে করে বিভ্রান্তি থেকে যাচ্ছেই।
সম্প্রতি এমন বিভ্রান্তিকর ফটোকার্ডের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন সরকারের উপদেষ্টা ও একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গত মাসে তার বাড়িতে ১২০০ বস্তা চাল পাওয়া যাওয়া সংক্রান্ত অপতথ্যের শিকার হন। দাবিটি যাচাই করে রিউমর স্ক্যানার মিথ্যা হিসেবে শনাক্তের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। দেশটিভি এ সংক্রান্ত সংবাদের ফটোকার্ডের শিরোনাম দেয় ‘বাড়িতে মিলল ১২০০ বস্তা চাল যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ’। আসিফ বিষয়টি নিয়ে তার ফেসবুক প্রোফাইলে অনেকটা বিরক্তির সুরেই বলেন, “১২০০ বস্তা চাল দেশ টিভির কার্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এগুলা কি ধরনের সাংবাদিকতা করেন ভাই আপনারা?”
এনসিপির নেত্রী ডা. তাসনিম জারার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সম্পাদিত একটি ছবি নিয়ে সম্প্রতি ফ্যাক্টচেক করে রিউমর স্ক্যানার। দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে তা পুনরায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু কিছু গণমাধ্যম উক্ত প্রতিবেদন নিয়ে করা ফেসবুক পোস্টকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে সম্পাদিত ছবিটিকেই আসল বলে মনে হওয়ার মতো সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তাসনিম জারা নিজেই। ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।
Screenshot: Facebook
মূলত তাসনিম জারার পোস্টের পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনীতিবিদরা যোগ দিয়েছেন একই আলোচনায়।
সম্প্রতি রিউমর স্ক্যানার সারজিস আলমের বিষয়ে একটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম দেওয়া হয়, “সারজিস আলমের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া”। কিন্তু কতিপয় সংবাদমাধ্যম এই শিরোনাম বদলে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে- “সারজিস আলমের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা উদ্ধার, যা জানা গেল” শীর্ষক শিরোনামে।
Collage: Rumor Scanner
এই ধরনের উপস্থাপন স্পষ্টতই বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিরোনামের শুরুতেই “তিন বস্তা টাকা উদ্ধার” বলার মাধ্যমে পাঠকের মনে ভুয়া ঘটনাটিকে একরকম সত্য হিসেবে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে। আর শেষে অনেকটা দায়সারাভাবে “যা জানা গেল” ধরনের ক্লিকবেইট ও কৌতূহল জাগানিয়া শব্দগুচ্ছ জুড়ে দিয়ে সেটিকে ‘ফ্যাক্টচেক’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বিভ্রান্তিকর এই প্রচারণা সুযোগ করে দিচ্ছে রাজনৈতিক অপতথ্যের প্রচারকেই। সারজিসের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর নেতাকর্মীরা একই ফটোকার্ড সত্য হিসেবে প্রচার করছেন, ছড়িয়ে দিচ্ছেন অপতথ্য।
Collage: Rumor Scanner
এ বিষয়ে এক ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম বলছেন, “ছবি দেখে মনে হচ্ছে সারজিস কোথাও থেকে অবৈধ টাকা অর্জন করেছে। এরপরে বন্ধুর বাসায় রেখেছে। সেই বন্ধুর বাসা থেকে এই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে! অথচ নিউজ হলে হওয়া উচিত ছিল- সারজিসের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা পাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা/গুজব।”
সারজিসও একমত যে কমেন্টে থাকা নিউজের লিংক ১০ শতাংশ মানুষও পড়েন না। বলছেন, “বাকি মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিংবা আমাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আপনাদের এই নোংরামিগুলোই যথেষ্ট।”
সারজিস এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলছেন, “নাহলে আগামীতে আমাদেরও লেখা শুরু করতে হবে- “শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আমলে হাজারের অধিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সন্তোষ শর্মার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে যা জানা গেল…” কিংবা “সারাদেশে বসুন্ধরা গ্রুপের হাজার কোটি টাকার অবৈধ জমি দখল, খুন এবং ধর্ষণ সম্পর্কে যা জানা গেল…”
এই পোস্টের পর আরেক এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহও বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন। সারজিসের পোস্টের একটি অংশ নিয়ে তিনি লিখেছেন, “শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আমলে হাজারের অধিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সন্তোষ শর্মার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে যা জানা গেল।”
এই দুই নেতার পোস্টের পর প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ (০৭ জুলাই) দিনভর একাধিক গণমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোর মালিকপক্ষ এবং শীর্ষস্থানীয় কর্তা ব্যক্তিদের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার হতে দেখা যায়। এর মধ্যে এক নারী সম্পাদক সাইবার বুলিংয়েরও শিকার হয়েছেন।
Collage: Rumor Scanner
এসবের মধ্যেই মজার যে বিষয়টি ঘটেছে তা হলো দৈনিক ইত্তেফাক তাসনিম জারাকে নিয়ে তাদের প্রকাশিত ফটোকার্ডকেই নিজেদের নয় বলে অস্বীকার করেছে। রীতিমতো ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে আজ জানানো হয়, এটি এডিটেড ফটোকার্ড।
Screenshot: Facebook
পরে অবশ্য পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরেক পোস্টের মাধ্যমে ইত্তেফাক তাসনিম জারার ছবি সম্পর্কিত পোস্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। জানানো হয়, “এই ভুলটি দৈনিক ইত্তেফাকের নীতিমালার পরিপন্থী, অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
শুধু রাজনৈতিক দল বা দলগুলোর নেতাকর্মীরাই নয়, নানা অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বরা হরহামেশাই ফটোকার্ড নিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর প্রচারণার শিকার হচ্ছেন। কেউ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেউ বা নীরব থাকছেন। গণমাধ্যমের এমন আচরণ সাধারণ পাঠকরাও যে ভালো চোখে দেখছে না তা পোস্টগুলোর কমেন্টেই দৃশ্যমান। রিউমর স্ক্যানার আশা করে, গণমাধ্যম তাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার এমন অবস্থান থেকে সরে আসবে। ফটোকার্ড ও শিরোনামেই গুজবকে ‘গুজব’ই বলতে হবে। দিতে হবে সরাসরি ও সিদ্ধান্তমূলক শিরোনাম। তবেই ফ্যাক্টচেক সংক্রান্ত সংবাদ থেকে উপকৃত হবে মানুষ।
সম্প্রতি, যশোরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করায় বিএনপির নেতাকর্মীরা একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে- শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোরে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার কারণ প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা করা নয় এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ প্রশাসন।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত একটি পোস্টে সূত্র হিসেবে একটি লিংক যুক্ত থাকতে দেখা যায়। উক্ত লিংকে প্রবেশ করে দেখা যায়, bddigest.news’ নামক এটি একটি ভুঁইফোড় ওয়েবসাইট। ‘bddigest.news’ নামক ভুঁইফোঁড় ওয়েবসাইটে “ভাতা বন্ধে ইউনূস-সরকারকে বকা, মানসিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মারল বিএনপি কর্মীরা” শীর্ষক শিরোনামে যে প্রতিবেদনটি সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেটিতে দাবি করা হয়েছে, “গত ০২ জুলাই দুপুর ১১ টার দিকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগের সোনাকুড় গ্রামে গণপিটুনিতে রফিকুল ইসলাম নামের এক প্রতিবন্ধীকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তমিজ উদ্দিনের ছেলে সোহাগের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন দলীয় কর্মী। গণপিটুনিতে নিহত রফিকুল ইসলাম (৫০) ওই গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে সোনাকুড় দোয়ালী পাড়া নামক এক স্থানে তাকে গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে গণপিটুনি দেয় বিএনপির সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা মিলে। একপর্যায়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। কিছুদিন আগে গ্রামের মোড়ে নিজের ভাতা না পেয়ে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘ডাকাত’ বলে বকাবকি করায় তাকে হুমকি দিয়েছিল স্থানীয় বিএনপির ক্যাডাররা। আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাকে দেখে নেওয়ার কথা বলে শাসিয়ে যায় তারা। ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, নিহত রফিকুল ইসলাম মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।”
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবিটির সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে জাতীয় গণমাধ্যম মানবকণ্ঠের ওয়েবসাইটে ০৩ জুলাই “যশোরে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবির মিল রয়েছে।
Photo Comparison By Rumor Scanner
মানবকণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০২ জুলাই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের সকালে সোনাকুড় গ্রামের আজগার আলীর বাড়ি থেকে তার জামাতা জহর আলী (৪০) মোটরসাইকেলযোগে বাঁকড়া বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে শ্বশুরের চায়ের দোকানের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম তার মাথায় দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে রফিকুল ইসলামকে দড়ি দিয়ে বেঁধে গণপিটুনি দেন। একপর্যায়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, নিহত রফিকুল ইসলাম মাদকাসক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তিনি জহর আলী নামে এক ব্যক্তিকে দা দিয়ে আঘাত করায় উত্তেজিত জনতা তাকে পিটুনি দেন। একপর্যায়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ঝিকরগাছা থানার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, দলীয় কোনো ঘটনা নয়, মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে যে তথ্য এসেছে এটিই মূল ঘটনা।
অর্থাৎ, রফিকুল ইসলামকে (৫০) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টাকে সমালোচনা কিংবা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, যশোরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সমালোচনা করায় বিএনপির নেতাকর্মীরা একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হাতকড়া পরানো এক আসামিকে নিয়ে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে আসামির মাথায় আঘাত করে। প্রচারিত এমন ভিডিওটির একটিতে দাবি করা হয়, পুলিশি হেফাজতে থাকা ওই আসামি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং যে ব্যক্তি তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে, তিনি তার প্রতিবেশী ও তার বিরোধী দলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির মাথায় ভিন্ন আরেক ব্যক্তির লাঠি দিয়ে আঘাত করার এই ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শিক্ষার্থী হত্যার মামলার আসামি জুনেলকে আদালতে হাজির করার ছবি বিকৃত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক সমকাল এবং পাতাকুঁড়ির দেশ নামের মৌলভিবাজারের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর আসামি ও পুলিশ সদস্যদের ছবি সম্বলিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot Collage by Rumor Scanner
প্রতিবেদনগুলোতে ব্যবহৃত ছবিটি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্য এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি একই স্থানের।
Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ছবিগুলোতে আসামিকে একইভাবে ধরে থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, উক্ত ছবিটি মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ৫ নম্বর আমলি আদালতে ধারণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কুলাউড়ায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় জুনেল মিয়া নামের এই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। গত ১৯ জুন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য পুলিশ জুনেলকে আদালতে হাজির করে। তবে উভয় প্রতিবেদনের কোথাও সেদিন তার ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভিন্ন কোনো সূত্রেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘MINIMAX | Hailuo Ai’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৬ সেকেন্ড।
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Cantilux এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ।
Screenshot: Cantilux
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, এবং আওয়ামী লীগ নেতার ওপর পুলিশের উপস্থিতিতে আদালত চত্বরে হামলা হয়েছে। তাদের লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারা ও মারধরের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির ওপর হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রিসের মুসল্লিরা ১৮০ বছর পর নামাজ পড়ার অনুমতি পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং, গ্রিসের এথেন্স শহরে ২০২০ সালে ১৮০ বছর পর প্রথম মসজিদ চালু করা হয়েছে। এর আগে থেকেই গ্রিসের অন্যান্য অঞ্চলে মসজিদ রয়েছে। এথেন্স শহরে মসজিদ নির্মাণের পূর্বেও মুসল্লিরা শহরের বিভিন্ন স্থানে নামাজ আদায় করতেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Reuters’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ৭ জুন “After waiting for decades, Muslims in Athens finally get a mosque” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “এথেন্সে প্রথম সরকারি মসজিদটি সম্ভবত সেপ্টেম্বরের (২০১৯) মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। যদিও গ্রিসের অন্যান্য অঞ্চলে মসজিদ রয়েছে, রাজধানী এথেন্সে ১৮৩৩ সালে দখলদার অটোমানদের বিতাড়নের পর থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মসজিদ ছিল না, এবং যেগুলো ছিল সেগুলোও অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রথম শুরু হয় ১৮৯০ সালে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে, কিন্তু ২০০৪ সালের অলিম্পিক উপলক্ষ্যে করা পরিকল্পনাসহ সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।”
পরবর্তীতে, কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘AL JAZEERA’ এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর “Athens finally gets a mosque” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “১৪ বছরের জটিলতা ও প্রশাসনিক বিলম্বের পর ২০২০ সালের ২ নভেম্বর গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে প্রথম মসজিদটি খুলে দেওয়া হয়। ঐদিন সন্ধ্যায় মসজিদে প্রথম নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই মসজিদের উদ্বোধনের মাধ্যমে এথেন্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের একমাত্র মসজিদবিহীন রাজধানীর অবস্থান থেকে বের হয়ে এসেছিল।”
এ বিষয়ে সেসময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম একই তথ্যসংবলিত সংবাদ (১,২,৩) প্রচার করে।
উল্লেখ্য, গ্রিসের এথেন্স শহরে আগে কোনো মসজিদ না থাকলেও মুসলিমদের নামাজের অনুমতি ছিল। মসজিদের অনুপস্থিততে মুসল্লিরা বিভিন্ন স্থানে নামাজ আদায় করতেন।
সুতরাং, গ্রিসের এথেন্স শহরে ২০২০ সালে ১৮০ বছর পর প্রথম মসজিদ নির্মাণ করার ঘটনাকে গ্রিসে ১৮০ বছর পর নামাজ পড়ার অনুমতি পাওয়ার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “সেনাপ্রধান ওয়াকার গ্রেফতার, নতুন সেনাপ্রধান ঘোষণা করলেন ডাঃ ইউনূস” শীর্ষক দাবির ক্যাপশনে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং ড. ইউনূসও নতুন কোনো ব্যক্তিকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেননি। প্রকৃতপক্ষে, প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও দিয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এতে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে বলতে শোনা যায়, “…বাংলাদেশের মানুষকে তাদের ইস্যু পরিবর্তন করা এতো সহজ যে বিশাল বড় ধরণের ঘটনা, সেটাকে খুব দ্রুত ধামাচাপা দিয়ে নতুন খুব ক্ষুদ্র, তুচ্ছ একটা বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা যায়। এখন এটার জন্য যে শুধু আপনি দায়ী তা না কিন্তু। ধরেন, বাংলাদেশের এই যে ফেসবুক, ইউটিউব, এটাকে আপনার যখন কিনা সামনে নিয়ে আসা হয়, মানে আপনি স্ক্রল করবেন যখন, কোন জিনিস আপনি দেখবেন? কোনটা দেখবেন না? এটা কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটা বাংলাদেশ থেকে, বাংলাদেশ সরকারের এজেন্সিগুলোই নিয়ন্ত্রণ করে। এখন আপনি যখন স্ক্রল করবেন, তখন দেখবেন খালি মুশতাক-তিশা, খালি মুশতাক-তিশা।…”
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি যা দাবি করেন তার মূল কথা হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনসাধারণের মনোযোগ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা থেকে তুচ্ছ বিষয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেমন মুশতাক-তিশার ঘটনা। তিনি এর জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হতে এবং নিজেদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে বলছেন।
এছাড়াও, ভিডিওটিতে তিনি ভিন্ন ভিন্ন আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
কিন্তু ভিডিওটির কোথাও তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন সেনাপ্রধান ঘোষণা করেছেন এমন কোনো দাবি করেননি।
পরবর্তীতে ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে তার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত ‘মুসতাক-তিশায় মগ্ন বাঙালি!’ শীর্ষক ক্যাপশনের একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ইলিয়াস হোসেনের পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া সব কিছুর সাথে মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণেরও প্রায় চার মাস পূর্বের। ২০২৪ সালের ১১ জুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ঐ বছরের ২৩ জুন তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া সেসময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ঐ বছরের ৮ আগস্ট। তাই আলোচিত ভিডিও ধারণের সময়কালে ইউনূসের পক্ষে নতুন সেনাপ্রধান ঘোষণা করার দাবিও ভিত্তিহীন।
স্বাভাবিকভাবে সেনাপ্রধানকে গ্রেফতার করা হলে কিংবা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণা করলে তা গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার হতো। কিন্তু এ বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবিগুলোর বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ মেলেনি।
সুতরাং, ইলিয়াস হোসেনের ভিন্ন প্রসঙ্গের পুরোনো ভিডিও দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং ড. ইউনূস নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণা করেছেন শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি চলন্ত ট্রাকের সামনে কয়েকজন কিশোর এসে পড়ে, কিন্তু ট্রাকটি না থেমে তাদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় একজন (কিশোর) চাকার নিচে পড়ে পিষ্ট হয়।
পোস্টগুলোর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘আমি এই দেশ প্রেমিক সাহসী ড্রাইভারকে সেলুট জানাই একটা হলেও চান্দাবাজ মারার জন্য। দেশের সকল ড্রাইভার ভাইদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি এই ভাবে চান্দাবাজদের যেন মাটির সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়।।’ (বানান অপরিবর্তিত)
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের কোনো এক এলাকায় চাঁদাবাজির প্রতিবাদে এক ড্রাইভার চাঁদাবাজদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সড়কে ট্রাক থামানোর ঘটনায় একাধিক যুবকের ওপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেওয়ার ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং উক্ত ঘটনার সাথে চাঁদাবাজিরও কোনো সম্পর্ক নেই। বরং, এটি ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ‘মালাকাইত মাউত’ চ্যালেঞ্জ ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এক যুবকের মারা যাওয়ার ঘটনার ভিডিও।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ইন্দোনেশিয়ান সংবাদ পোর্টাল ‘Kompas.com’-এ ২০২১ সালের ১৭ জুলাই ‘Sopir Truk Harus Waspada Saat Bertemu Remaja di Jalanan’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর নির্দিষ্ট ফ্রেমের মিল রয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ইন্দোনেশিয়ায় ২০২১ সালের একটি দুর্ঘটনা।
Comparison: Rumor Scanner
একই সংবাদ পোর্টালে একই বছরের ১৮ জুলাই উক্ত বিষয়টি নিয়ে আরও একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিশোরদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি চ্যালেঞ্জ চলন্ত ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে এক যুবক ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৩ বছর বয়সী এক ইন্দোনেশিয়ান কিশোর টিকটক ভিউ বাড়ানোর জন্য ‘কেকে (কিকি) চ্যালেঞ্জ’-এর মতো ‘মালাকাইত মাউত’ বা ‘অ্যাঞ্জেল অফ ডেথ’ চেষ্টা করতে গিয়ে লরির সামনে লাফিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায়। একই ঘটনায় অন্য একজন অংশগ্রহণকারী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। ঘটনাটি পশ্চিম জাভার বেকাসি জেলার উত্তর সিকারং-এ ঘটেছে। বেকাসি ট্রাফিক পুলিশের বরাতে বলা হয়, মৃত কিশোর আগেও এমন বিপজ্জনক টিকটক কন্টেন্ট তৈরির চেষ্টা করেছিল।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এই চ্যালেঞ্জের অংশ হিসেবে, কিশোররা চলন্ত লরির সামনে লাফিয়ে পড়ে এবং শেষ মুহূর্তে সরে এসে গাড়িকে সম্পূর্ণ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এটি তখনই সফল বলে ধরা হয় যখন লরি চালক দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়িটি থামিয়ে দেয়।
সুতরাং, ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়ার কিশোর ‘মালাকাইত মাউত’ চ্যালেঞ্জ ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে এক যুবকের ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনার ভিডিও বাংলাদেশে এক ড্রাইভার চাঁদাবাজের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।