গত ২৫ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেতন ছয় মাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এশিয়া কাপ ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেতন ছয় মাস বন্ধ থাকার ঘোষণা দেননি বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বরং, সার্কাজম বা স্যাটায়ার ফেসবুক পেজ থেকে দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর সত্য দাবিতেও প্রচার হতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দাবিটির সূত্রপাত হিসেবে গত ২৬ সেপ্টেম্বর Janina Television নামে একটি ফেসবুক পেজের পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর বায়োতে লেখা রয়েছে যে এটি একটি বিনোদনমূলক পেজ।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, সূত্রবিহীন দাবিটি বিনোদনের উদ্দেশ্যেই প্রচার করা হয়। তবে ভাইরাল এই পোস্টটি যে পরবর্তীতে অনেক নেটিজেনের কাছেই সত্য হিসেবে বিভ্রান্তির তৈরি করেছে তা স্পষ্ট কিছু পোস্টের ক্যাপশনেই৷ কতিপয় পোস্টে কাজটা ঠিক হয়েছে জানিয়ে বাহবা দেওয়া হয়েছে, আবার কতিপয় পোস্টে এটি যে স্যাটায়ার পেজের পোস্ট তা উল্লেখ না করেই প্রচার করা হয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানা যায়নি। বিসিবি বা অন্য কোনো ক্রিকেট বোর্ডেও কোনো টুর্ণামেন্টে ব্যর্থতার জেরে সাধারণত এই ধরণের সিদ্ধান্তের রেওয়াজও নেই।
সুতরাং, এশিয়া কাপ ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেতন ছয় মাস বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে চান প্রধান উপদেষ্ট’ শিরোনামে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আরটিভি এবং ‘শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে চান প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনুস’ শিরোনামে জনকন্ঠ এর লোগো ও ডিজাইন সংবলিত দুটি পৃথক ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এসব ফটোকার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম ব্যবহার এবং তার ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত আরটিভির ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে প্রচারিত জনকন্ঠের ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আরটিভি ও জনকন্ঠ এরূপ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, এসব গণমাধ্যমের প্রচলিত ফটোকার্ডের আদলে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
আরটিভির ফটোকার্ড যাচাই:
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে আরটিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৮ অক্টোবর ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালের কন্ঠের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, আরটিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামের ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত তথ্যের সমর্থনে কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ড. ইউনূসের নামে আরটিভির লোগো ও ডিজাইন সংবলিত ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।
জনকণ্ঠের ফটোকার্ড যাচাই:
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে জনকন্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৮ অক্টোবর ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে জনকন্ঠের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, জনকন্ঠের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, জনকন্ঠের প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামের ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত তথ্যের সমর্থনে কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ড. ইউনূসের নামে জনকণ্ঠের লোগো ও ডিজাইন সংবলিত ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে একাধিক গণমাধ্যমের নামে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া।
গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজার ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি নৌবহর যাত্রা শুরু করে। এই মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতেও আরো জাহাজ গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি ফ্লোটিলা সমর্থনে চীনে বিক্ষোভের দৃশ্যের।
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টটি ৯ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৯৪ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ফ্লোটিলা সমর্থনে চীনে বিক্ষোভের দৃশ্যের নয়। বরং এটি গত ১ অক্টোবরে চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে চীনের নানচ্যাংয়ে আতশবাজির ঘটনার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চে চীনা সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘চীনা সিনহুয়া নিউজ’ এর ফেসবুক পেজে গত ৩ অক্টোবরে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘এমন ভিড় নড়াচড়া আপনি আগে কখনও দেখেননি। আতশবাজির প্রদর্শনীর পর কীভাবে ১২ লক্ষ মানুষকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায়? চীনের নানচ্যাং-এ দেখা গেল এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য। ##নানচ্যাং #চীন #জাতীয়দিবস #আতশবাজিপ্রদর্শনী’ (অনূদিত)
Comparison : Rumor Scanner
ক্যাপশনে কোথাও ফিলিস্তিনের পক্ষের ফ্লোটিলার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এ থেকে বুঝা যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে হওয়া আতশবাজির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত।
অনুসন্ধানে চীন ভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম ‘নিউ চীনা টিভি’ এর ইউটিউব চ্যানেলেও আলোচিত ভিডিওটি চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে হওয়া আতশবাজির ঘটনার দাবিতে গত ৩ অক্টোবরে প্রচার হতে দেখা যায়। একই দাবিতে আরো একাধিক চীন ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত ঘটনার ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে চীন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম তেনসেন্ট এর ওয়েবসাইটে গত ৪ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে বলা হয়, ‘দশ লক্ষাধিক দর্শক আতশবাজি উপভোগ করেছেন, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দর্শনার্থীদের চলাচল ছিল সুসংগঠিত। ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় চীনের জিয়াংসি প্রদেশের নানচ্যাং শহরে জাতীয় দিবসের আতশবাজি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ হাজার ড্রোন ও ৫০,০০০-এরও বেশি আতশবাজি আকাশ আলোকিত করে তোলে, যা গ্যান নদীর তীরে প্রায় ১২ লক্ষ নাগরিক ও পর্যটককে আকর্ষণ করে। আরও উল্লেখযোগ্য ছিল প্রদর্শনীর পর শহরজুড়ে দর্শকদের সুশৃঙ্খল ও দ্রুত প্রস্থান, যা পরিচালনা করেন জননিরাপত্তা ও সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা।’ (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)
সুতরাং, গত ১ অক্টোবরে চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে চীনের নানচ্যাংয়ে আতশবাজির ঘটনার দৃশ্যকে ফিলিস্তিনের পক্ষে ফ্লোটিলা সমর্থনে চীনে বিক্ষোভের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর ছবি দাবিতে ‘হ্যাপি টিচার্স ডে’এর শুভেচ্ছা নিবেন মোনামী ম্যাম’ ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ঢাবি শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন নারীর ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে। এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Pooja Singh Rajput’ নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত কিছু ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ছবিতে উক্ত নারীর মূখমণ্ডলের পার্থক্য ছাড়া অন্য সব উপাদানের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উল্লেখিত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভারত থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতীয়মান হয়, এই নারীর ছবিতে তার মুখমণ্ডলের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, অধিকতর অনুসন্ধানের প্রয়োজনে রিউমর স্ক্যানার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উক্ত নারীর ছবির ওপর শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এতে সম্পাদিত ছবির মতোই অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর নামে প্রচারিত এই ছবিটি সম্পাদিত।
গত ৭ অক্টোবর দৈনিক কালবেলার একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর গুলশানের বাসভবনে যান। সেখানে তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একটি টেবিলে সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে আরও তিনজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি ওই বৈঠকের দৃশ্য দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি আসল নয়; বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ছবিটি কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি। সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের দাবিতে প্রথম সংবাদটি প্রকাশ করে কালবেলা, তবে গণমাধ্যমটি সেই সংবাদের সঙ্গে আলোচিত ছবিটি প্রকাশ করেনি। বরং তারা চার জনের আলাদা আলাদা ছবি কোলাজ আকারে প্রতিবেদনে যুক্ত করেছে। একইভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা সাবের হোসেন চৌধুরীর ফেসবুক পেজেও ছবিটি পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটির উৎস কোনো বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম নয়।
পরবর্তীতে ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপের একটি অংশ রয়েছে।
ছবিটি জেমিনি এআই দিয়ে তৈরি কি না তা যাচাই করতে রিউমর স্ক্যানার টিম গুগলের বিশেষ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ‘সিন্থআইডি’ ব্যবহার করে। গুগলের এই প্রযুক্তি এআই দিয়ে তৈরি ছবি, ভিডিও বা অডিওতে অদৃশ্য জলছাপ যুক্ত করে, যা খালি চোখে দেখা না গেলেও গুগলের নিজস্ব টুলের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। বুম বাংলাদেশের সহায়তায় ছবিটি সিন্থআইডি দিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি গুগলের এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। বিশ্লেষণে ছবির পুরো বা আংশিক অংশে সিন্থআইডি শনাক্ত হয় এবং শনাক্তকরণের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা ছিল “খুব বেশি” (Very High)।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে নর্ডিক অঞ্চলের তিন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরীর বৈঠকের আসল ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা যাচাই করতে একটি গোপন জরিপ করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এমন দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে বলা হয়, উল্লিখিত গোপন জরিপে ৭ কোটি মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জরিপের তথ্যানুযায়ী সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট আওয়ামী লীগ পেয়েছে বলেও পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়। কথিত ওই জরিপের ফলাফল:
১. আওয়ামী লীগ -৫২% সমর্থক, ৩ কোটি ৫৪ লাখ ভোট পাবে বলে জরিপে জানিয়েছেন ভোটাররা।
২. জামায়াতে ইসলামী – ২০% সমর্থক, জানিয়েছেন ১ কোটি ৫৪ লাখ ভোটার।
৩. বিএনপি – ১৪% সমর্থক, সমর্থন জানিয়েছেন ১ কোটি ১ লাখ ভোটা।
৪. এনসিপি – ৫% সমর্থক, ভোট দিয়েছে ৩৬ লাখ ভোটার
৫. ইসলামি আন্দোলন – ৩% সমর্থক, ২১ লাখ ভোটার এই রায় দিয়েছে।
৬. জাতীয় পার্টি- ২% সমর্থক, সমর্থন জানিয়েছেন ১৪ লাখ ভোটার।
এছাড়াও বাকি দলগুলোর নাম ভোটাররা জানেন না বলেও পোস্টগুলোতে বলা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা কোনো জরিপ পরিচালনা করেনি। প্রকৃতপক্ষে, আল-জাজিরার নাম ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আল-জাজিরার ওয়েবসাইট পর্যালোচনার পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে এমন কোনো জরিপের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আল-জাজিরার ফেসবুক পেজেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি বাংলাদেশ ইস্যুতে গণমাধ্যমটিতে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করে থাকেন। তিনি প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যুতে নিজের মতামতের পাশাপাশি অনেক তথ্যও তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করে থাকেন। তবে জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করেও আল-জাজিরার এমন কোনো গোপন জরিপের তথ্য বা এই সংক্রান্ত তার কোনো পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও দেশিয় কোনো গণমাধ্যমেও এমন কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা বাংলাদেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গোপন জরিপ পরিচালনা করেছে এবং তাতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি দিল্লিতে শেখ হাসিনার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রকাশ্যে দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যের দৃশ্য।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়; বরং, এটি ২০১৮ সালের পুরোনো ভিডিও।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Sadeq Sibli’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ছবি পাওয়া যায়, যা আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
আরও অনুসন্ধানে একই দিনে ‘Ifjal Chowdhury’ নামের আরেকটি ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যা আলোচিত ভিডিওর সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে মিলে যায়। উভয় ভিডিও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এগুলো একই ঘটনার ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা।
এছাড়া, ‘MG Mawla’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে একই দিনে একই ঘটনার আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। পোস্টের শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, এটি জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউইয়র্কে শেখ হাসিনার বিদায়কালীন ভিডিও।
Comparison: Rumor Scanner.
দাবিকৃত ভিডিওর সঙ্গে ২০১৮ সালের দুটি ভিডিও এবং একটি ছবির তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেখ হাসিনার পোশাক, আশপাশের ব্যক্তিদের অবস্থান ও পোশাক এবং ভবনের অবকাঠামোর মধ্যে হুবহু মিল রয়েছে।
অন্যদিকে, ডেইলি স্টারের ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় (নিউইয়র্ক সময়) লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এছাড়া, ২০১৮ সালের ০১ অক্টোবর যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা সেদিন সকালে দেশে ফিরেছিলেন।
সুতরাং, ২০১৮ সালের পুরোনো ভিডিওটিকে সম্প্রতি দিল্লিতে শেখ হাসিনার প্রকাশ্যে উপস্থিতির দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের সেমিফাইনালের ম্যাচে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপরীতে মাঠে নামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পাকিস্তানের ১৩৫ রানের টার্গেটে মাত্র ১১ রানের ব্যবধানে ১২৪ করে ঘরে ফেরে বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে, উক্ত ম্যাচ হারায় দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন- শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পর জাতীয় দলের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন পদত্যাগের ঘোষণা দেননি, বরং কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্র মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিংবা পেজেও এসংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এরপর আলোচিত দাবিটির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফেসবুক মনিটরিং টুলস ব্যবহার করে ‘Sports Buzz’ নামক একটি পেজ থেকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টা ১৬ মিনিটে এই দাবিতে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
তবে, উক্ত পোস্টটিতে কোন সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
অর্থাৎ, কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুতরাং, পাকিস্তানের বিপক্ষে লজ্জার হারের দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন কোচ সালাউদ্দিন- শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘প্রতিশোধ নেওয়া মাত্র শুরু। যেখানে এন সি পি সমন্বয়োেক সেখানে ক্যালানি। বাংলাদেশ প্রতিটি জেলায়ই এভাবে প্রতিরোধ করে তুলতে হবে’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কোনো কর্মীকে মারধরের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের হরিয়ানায় গো-রক্ষকদের দ্বারা এক ব্যক্তির নির্যাতিত হওয়ার ভিডিওকে এনসিপি কর্মীকে মারধরের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান mahendergarh_city_hr নামক ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যের উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য রয়েছে।
ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে ধরে রেখে লাঠি দিয়ে মারধরের একই ঘটনার ভিন্ন দিকের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, উভয় ভিডিওতে থাকা মানুষজন, তাদের পোশাক ও যাবতীয় পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে মিল রয়েছে।
ভিডিওটির ক্যাপশন ও শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওর ঘটনাটি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মহেন্দ্রগড় জেলার, যেখানে গরু চোরাচালানের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধর করে একদল গো-রক্ষক পরিচয়ধারী।
উল্লেখিত তথ্যের সূত্র ধরে FOEJ Media নামক একটি ভারতীয় সংবাদসংস্থার এক্স হ্যান্ডেলে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পোস্টে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওর ঘটনাটি গত ১১ আগস্ট ভারতের হরিয়ানা রাজ্য ঘটেছে, যেখানে গো-রক্ষার নামে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেনি।
সুতরাং, জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মীকে মারধরের ভিডিও দাবিতে ভারতে গো-রক্ষকদের এক ব্যক্তিকে নির্যাতনের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর অভিযানে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে সেনা কর্মকর্তাদের মাটি খুঁড়ে বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করতে দেখা যায়। পাশাপাশি ভিডিওটিতে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত একটি রুমেও সেনা সদস্যদের অভিযান চালানে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিটি সঠিক নয়। প্রচারিত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীর একটি বস্তিতে চালানো সেনা অভিযানের পৃথক দুটি ভিডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে সেনা অভিযানের দুটো ভিডিও একসঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যার প্রথমটি এশিয়ান টেলিভিশন এবং দ্বিতীয়টি চ্যানেল ২৪-এর ফুটেজ। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে তাই ভিডিওগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
এশিয়ান টেলিভিশনের ফুটেজ যাচাই
আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে দেখতে পাওয়া সেনা অভিযানের ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Asian Television এর ফেসবুক পেজে গত ৫ জুলাই প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির শিরোনামে সেনাবাহিনীর উক্ত অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় মাটি খুঁড়ে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি কোথাকার তা জানা যায়নি। পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে সেদিনের সেনা অভিযানের ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির ফিচার ইমেজে সেদিনের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যাদের আলোচিত ভিডিওটিতেও দেখতে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৪ জুলাই দিবাগত রাতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পরিচালিত এক সেনা অভিযানে উক্ত ব্যক্তিরা গ্রেফতার হন। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত চারজনই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তবে তারা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত আছে এমন কোনো তথ্য উক্ত প্রতিবেদন কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সেদিন অস্ত্রগুলো বিএনপির কার্যালয় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি।
চ্যানেল ২৪-এর ফুটেজ যাচাই
চ্যানেল ২৪ এর ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ১ মে Channel 24-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ মার্চ প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির শিরোনাম এবং গণমাধ্যমকর্মীর বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি টঙ্গীর একটি বস্তিতে সেনাবাহিনীর পরিচালিত একটি অভিযানের ভিডিও। ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া যায়, অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা উক্ত বস্তিতে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সুড়ঙ্গগুলোতে অভিযান চালাতে গিয়ে সেনা সদস্যদের জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ওই রুম আবিষ্কার করতে দেখা যায় ভিডিওটিতে। তবে রুমটি থেকে তাদের কোনো ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর উক্ত অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম আমাদের সময়-এর ওয়েবসাইটে গত ২ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর অংশ হিসেবে গত ১ মার্চ গাজীপুরের টঙ্গীর ওই বস্তিতে অভিযান চালানো হয়। সেনাবাহিনীর অভিযানে সেদিন বিপুল পরিমাণ মাদক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
অর্থাৎ, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এবং গাজীপুরের টঙ্গীর একটি বস্তিতে চালানো সেনা অভিযানের পৃথক দুটি ভিডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের এই দাবিটি মিথ্যা।