রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী) দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভুয়া ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে এই ছবিগুলোর অস্তিত্ব মেলেনি। এমনকি মোনামীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করেও আলোচিত ছবিগুলোর সন্ধান মেলেনি। আলোচিত ছবিগুলো সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপ লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Facebook
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এই মডেল ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে।
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ছবিগুলো পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এগুলো এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৯ শতাংশ।
Screenshot: Hive Moderation
সুতরাং, শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর নামে প্রচারিত এই ছবিগুলো সম্পাদিত।
সম্প্রতি, “যমুনায় ৩ বাহিনীর প্রধান, দেশে জরুরি অবস্থা জারি, ইউনুস হাউস এরেস্ট” শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ফটোকার্ডের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লিখিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “যমুনায় ৩ বাহিনীর প্রধান, দেশে জরুরি অবস্থা জারি, ইউনুস হাউস এরেস্ট” শীর্ষক শিরোনামে কালের কণ্ঠ কোনো প্রতিবেদন বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, কালের কণ্ঠের ফটোকার্ডের প্রচলিত ডিজাইন প্রযুক্তির সহায়তায় নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি করে পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, এটিতে কালের কণ্ঠের লোগো এবং তারিখ হিসেবে ০১ নভেম্বর, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
উল্লিখিত তথ্যের সূত্র ধরে কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডটির অস্তিত্ব মেলেনি। তবে, সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে গত ০১ নভেম্বরে ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে যমুনায় তিন বাহিনী প্রধান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্রের বরাতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, এটি প্রধান উপদেষ্টার কল অন কোনো বৈঠক ছিল না। বরং, তিন বাহিনীর প্রধানরা নিজেরা আলোচনা করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছিলেন। তবে, ঠিক কী বিষয়ে এবং কী আলোচনা হবে সে বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, পর্যবেক্ষণে আলোচিত দাবি সম্বলিত ফটোকার্ডটির বানান এবং শব্দ বিন্যাসে একাধিক ভুল পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কালের কণ্ঠের প্রচলিত ফটোকার্ডগুলোয় দেখা যায় না।
Image by Rumor Scanner
পরবর্তীতে, প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানরা নির্বাচনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন এবং আগামী ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানান।
এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে হাউস অ্যারেস্ট হলে স্বাভাবিকভাবে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে খবর প্রচার হতো। তবে, এক্ষেত্রে অনুসন্ধানে উক্ত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “যমুনায় ৩ বাহিনীর প্রধান, দেশে জরুরি অবস্থা জারি, ইউনুস হাউস এরেস্ট” শিরোনামে কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “এবার সচিবালয়ের ভিতরই ডাস্টবিন শফিক বলে চিৎকার।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সচিবালয়ের নয় এবং এতে ডাস্টবিন শফিক বলে চিৎকারও শোনা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ৩১ অক্টোবর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপের সাধারণ ভিডিওর সাথে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে মূল ধারার গণমাধ্যম সময় টিভির পেজে ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শফিকুল সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় মাইকে ‘স্যার’ বা সমজাতীয় একটি শব্দ উচ্চারিত হয়। এ সময় তিনি শব্দের উৎসের দিকে ফিরে তাকান।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি প্রচার করে শফিকুল আলমকে ডাস্টবিন শফিক বলে চিৎকার দেওয়া হয়েছে শীর্ষক যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়৷
আলোচিত দাবির ভিডিওটিতে ‘এই ডাস্টবিন শফিক’ শীর্ষক ভিন্ন একটি অডিও যুক্ত করা হয়েছে যা মূল ভিডিওতে ছিল না।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রেস সচিব ৩১ অক্টোবর দুপুরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। এই ভিডিও ফুটেজটি সে সময়েরই। সময় টিভির প্রচারিত বক্তব্য এবং প্রথম আলোর প্রতিবেদনে থাকা বক্তব্য থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদনে উক্ত স্থানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, অন্যান্য গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সচিবালয়ের ভেতর ডাস্টবিন শফিক বলে চিৎকার দাবিতে নোবিপ্রবিতে শফিকুলের সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে ; যা সম্পাদিত।
সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ, তাদের সকল নেতাকর্মীর বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছে। এরই প্রেক্ষিতে ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় মিছিল দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
একই দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে আলোচত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একাধিক কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ‘Sokal Narayanganj TV’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০১ নভেম্বরে প্রচার হওয়া একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ৩ মিনিট ৫৪ সেকেণ্ডের ভিডিওটির ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ড সময় থেকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
মূল ভিডিওটির শিরোনাম এবং ব্যানারে থাকা আজমেরী ওসমানের নাম দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে কোনো বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য নয়।
পাশাপাশি, একই বিষয়ে ‘নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪’ নামক এক আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের শুরুতে বিএনপির ডাকা অবরোধ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে চারবারের সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে বিশাল শোডাউন ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কর্মী-সমর্থকরা সরকারের পক্ষে স্লোগান দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
সুতরাং, ২০২৩ সালে নারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে সম্প্রতি যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে ঢাকায় আ.লীগের মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে রাস্তার মধ্যে এক ব্যক্তির ওপরে গাড়ি উঠেছে। ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘প্রথমে তাকে মেরে আহত করা হয়, তারপরে উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যায়, হায়রে নিষ্টুর দেশ’।
ভিডিওটির মন্তব্য সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে বাংলাদেশের ভিডিও মর্মে অনেক নেটিজেনকে মন্তব্য করতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি বাংলাদেশে এক ব্যক্তির ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর দৃশ্যের।
এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং এটি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রাম এলাকায় ঘটা ঘটনার দৃশ্য।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ফ্রি প্রেস জার্নাল’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৩ সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ আপডেট হওয়া একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ঘটনার দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
এছাড়াও, প্রতিবেদনে আলোচিত ঘটনার একটি ভিডিওরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় গুরগাঁওয়ের ভূতেশ্বর মন্দির চৌকের কাছে রাস্তায় মদ্যপ অবস্থায় পড়ে থাকা এক ব্যক্তির ওপর দিয়ে একটি গাড়ি চলে যায়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি সামান্য আঘাত পেয়েই প্রাণে বেঁচে যান। পুরো ঘটনাটি পথচারীদের মোবাইলে ধারণ করা হয় এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি ভূতেশ্বর চৌকের কাছে ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে মদ্যপ অবস্থায় অচেতনভাবে পড়ে ছিলেন। কয়েকজন পথচারী তাকে জাগানোর চেষ্টা করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। আশপাশে যানবাহন চলাচল সত্ত্বেও তিনি রাস্তা থেকে নড়েননি। এসময় উপস্থিত লোকজন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকলে একটি গাড়ি এগিয়ে এসে তার ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, অনেকে ধারণা করেন তিনি মারা গেছেন। কিন্তু গাড়িটি চলে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই ওই ব্যক্তি উঠে বসেন, যা দেখে সবাই হতবাক হয়ে যান।’ (অনূদিত)
এছাড়াও, এ বিষয়ে আরো একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সংবাদপ্রকাশ হতে দেখা যায়, যার সবগুলোতেই আলোচিত ঘটনাটি ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রাম (গুরগাঁও) ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও, রাস্তায় পড়ে থাকা ব্যক্তির উপর দিয়ে চলা গাড়ির নাম্বারপ্লেটে গাড়ির নাম্বার হিসেবে দেখা যায়, ‘24 BH 3792 B’. উল্লেখ্য, এরূপ নাম্বারপ্লেট বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয় না।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ভারতের।
সুতরাং, ভারতে এক ব্যক্তির ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর দৃশ্যকে বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, দিল্লি আহমেদাবাদে শেখ হাসিনার বাসভবনে প্রেস মিটিং বৈঠক নেতাকর্মীদের আহ্বান সজীব ওয়াজেদ জয় লিডার উপস্থিত ছিলেন- দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে– শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে হ্যান্ডশেক করছেন নরেন্দ্র মোদী। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন শেখ হাসিনা।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আগে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে একটি বৈঠক হয়। প্রচারিত ছবিটি সেই বৈঠকেরই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পেজ থেকে ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি ছবি পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবির মিল রয়েছে।
Photo Comparison By Rumor Scanner
এরপর আরও অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের হোটেল ওয়াল্ড্রফ অ্যাস্টোরিয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নরেন্দ্র মোদীর এক অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি সহ শেখ হাসিনার তৎকালীন বিভিন্ন উপদেষ্টারা। একই বৈঠকে সজীব ওয়াজেদ জয়ও উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত বৈঠকের বিষয়ে তখন নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছিল।
সুতরাং, ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে নরেন্দ্র মোদীর সাথে শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাতের ছবিকে সম্প্রতি দিল্লির আহমেদাবাদের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘এক্সক্লুসিভ পিকচার- দুজনের এটি মুতা বিবাহ’ শীর্ষক ক্যাপশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী) এবং টকশো সঞ্চালক ও সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি খালেদ মুহিউদ্দীন ও শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী) এর নয় বরং, ২০১৭ সালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহর বিয়ের ছবিকে সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Sabina Ahmed’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মুখমণ্ডল ছাড়া বাকি সব উপাদানের মিল রয়েছে। উক্ত পোস্টে দাবি করা হয়, এটি তাসনিম জারার বিয়ের ছবি।
পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে একুশে টিভির ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট ‘গহনা-সাঁজগোছ ছাড়া বিয়ে, ফেসবুকে তোলপাড়’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে বিয়ে করেছেন তাসনিম জারা। এটি তাদের বিয়ের ছবি।
সেসময় এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ (১, ২, ৩, ৪) প্রচার করা হয়।
এছাড়া, অধিকতর অনুসন্ধানের প্রয়োজনে রিউমর স্ক্যানার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উক্ত ছবির ওপর খালেদ মুহিউদ্দীন ও শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এতে সম্পাদিত ছবির মতোই অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে।
সুতরাং, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহর বিয়ের ছবিকে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা ছবিকে মোনামী ও খালেদ মুহিউদ্দীনের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন নিথর ব্যক্তিকে আরেকজন ব্যক্তি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তা পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় কয়েকজন দাঁড়িয়ে দেখছেন ও ভিডিও করছেন। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘খুনিরা খুন করে লাশ জঙ্গলে ফেলে দিচ্ছে আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে’।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের সামনে খুন করে জঙ্গলে টেনে নেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং, ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’ নামের একটি নাটক সিরিজের অভিনয়ের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Arman Raj’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত মূল ভিডিওটি গত ৩০ অক্টোবরে প্রচার হতে দেখা যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘শুটিং টাইম- Crime partrol. পরিচালক – আশরাফ উল ইসলাম পিপিএম স্যার. পর্ব পরিচালক – শাব্দিক শাহীন। লতা হারবাল এর সৌজন্যে। Crime Patrol BD একটি সত্য ঘটনা। প্রতি শনিবার সন্ধ্যা ৭-৫০ মিনিটে শুধু মাত্র ATN Bangla তে।’
Comparison : Rumor Scanner
এছাড়াও, উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে পুলিশের পোশাকে ও ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’র অভিনয়ের দৃশ্য দাবিতে আরো নানা ছবি ও ভিডিও নানা সময়ে প্রচার হতে দেখা যায়।
পাশাপাশি, এ বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ ও প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দৃশ্য আসল হওয়ার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’র বিষয়ে অনুসন্ধানে একই নামে একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। পেজটির বায়োতে বলা হয়, ‘ক্রাইম প্যাট্রোল বিডি হলো ক্রাইম প্যাট্রোল নাটক সিরিজের একটি অফিসিয়াল পেজ, যা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বাস্তব অপরাধমূলক ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আমাদের লক্ষ্য হলো গ্রামীণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা।’ (অনূদিত)
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’ নামের একটি নাটক সিরিজের অভিনয়ের দৃশ্য।
সুতরাং, ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’ নামের একটি নাটক সিরিজের অভিনয়ের দৃশ্যকে পুলিশের সামনে খুন করে জঙ্গলে টেনে নেওয়ার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের ভিডিও নয় বরং এটি ২০২৩ সালের ঘটনা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে নোয়াখালীর স্থানীয় গণমাধ্যম নোয়াখালীর কাগজের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ‘১৬০ জন নেতাকর্মী বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান।’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তী, জাতীয় দৈনিক গণকণ্ঠের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর উক্ত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, ২০২৩ সালে নোয়াখালীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘ইরান হিজাব পরার আইনি বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছে। এখন হিজাব পরবে কি পরবে না — সেটা সম্পূর্ণই নারীদের নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে, কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা আর নেই…..এ সংবাদে ইরানের স্বাধীনচেতা নারীরা রাস্তায় নেমে সম্মিলিতভাবে হিজাব পুড়িয়ে আনন্দ উদযাপন করছে।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, আগুনের সামনে সাদা পোশাক পরিহিত এক নারী নাচতে নাচতে একটি কাপড় আগুনে ছুঁড়ে ফেলে ভিড়ের মধ্যে মিশে যান। তার দেখাদেখি কালো পোশাক পরিহিত দুজন নারী এগিয়ে এসে আগুনে কাপড় ফেলছেন। এসময় ঘিরে থাকা জমায়েতকে হাততালি দিয়ে উদযাপন করতে দেখা যায়।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ইরানে হিজাব আইন বাতিল উদযাপনের দৃশ্য নয় এবং ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব সংক্রান্ত আইনগুলো তুলে নেওয়ার মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালে ইরানে অনুপযুক্ত পোশাক পরার অভিযোগে গ্রেফতার মাশা আমিনির দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Voice of America এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ‘Woman Throws Hijab in Fire as Protests Spread in Iran’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, ইরানের সারি শহরের রাস্তায় এক নারী তার হিজাব আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। কঠোর পোশাকবিধি কার্যকর করার দায়িত্বে থাকা নৈতিকতা পুলিশ কর্তৃক এক তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন জোরদার হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনি “অনুপযুক্ত পোশাক” পরার অভিযোগে তেহরানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গেলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব সংক্রান্ত আইনগুলো তুলে নেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশটির গণমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে গত ০৭ অক্টোবর ‘Conservatives clash over hijab law as Tehran streets move on’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রজাতন্ত্রের স্বার্থ-নির্ধারণী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ রেজা বাহোনার রিপোর্টারদের বলেন “সরকার ব্যবস্থার সাধারণ সিদ্ধান্ত হলো, কোনো বাধ্যতামূলক হিজাব আইন বলবৎ নেই।” এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির রক্ষণশীলরা প্রতিবাদও জানান।
এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে IRIB Ofogh এর ওয়েবসাইটে মোহাম্মদ রেজা বাহোনারের আরেকটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়।
‘বাহনার হিজাব সম্পর্কে তার অবস্থান সংশোধন করেছেন/আমি খারাপভাবে প্রকাশ করেছি!’ শিরোনামের উক্ত সাক্ষাৎকারে রেজা বাহোনারকে বলতে শোনা যায়, “উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ বলতে চায়, আমাদের পবিত্র শরিয়ায় হিজাব একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয় অথবা এর গুরুত্ব একটু কমানো দরকার বা অন্য কোনোভাবে পরিবর্তন আনা দরকার— না। এটি স্পষ্টতই আমার বক্তব্য নয়। আমি আমার বক্তব্যটি পুনরায় বলছি, আমি কোনো ভাবেই মূল্যবোধকে পুনর্বিবেচনার কথা বলছি না। আমি বলছি পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা করতে। অর্থাৎ, দেশে একটি বিশাল সাংস্কৃতিক জাগরণ শুরু করা উচিত।”
রেজা বাহোনারের উক্ত বক্তব্যের বিষয়ে ইরানের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Factnameh এর গত ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ২৫ মে সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে একটি প্রশ্নের জবাবে সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ “হিজাব এবং সতীত্ব আইন” এর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া মুলতবী করা হয়েছে বলে জানান। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সংসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলিরেজা সালিমিও উক্ত আইনের বিজ্ঞপ্তি ও প্রয়োগ মুলতবীর বিষয়ে একই কথা বলেন।
ফ্যাক্টনামেহ এর উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী “হিজাব এবং সতীত্ব আইন” আপাতত মুলতবী হলেও হিজাব সংক্রান্ত অন্যান্য আইন এখনও বহাল আছে। ইরানের ইসলামিক দণ্ডবিধির ৬৩৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেসব নারী ইসলামিক হিজাব ছাড়া জনসমক্ষে উপস্থিত হন তাদের কারাদণ্ড এবং জরিমানা দণ্ডিত করা হবে। এছাড়াও, ইসলামিক হিজাব বাধ্যতামূলকভাবে পালনের বিষয়ে আরও কয়েক ডজন আইন, বিধিবিধান এবং নির্দেশনা রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সেগুলি বাতিল বা স্থগিত করার কোনও খবর প্রকাশিত হয়নি।
অর্থাৎ, ইরানে হিজাবের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
সুতরাং, ইরানে হিজাবের বাধ্যবাধকতার কথিত বাতিল উদযাপনের দৃশ্য দাবিতে ২০২২ সালে ইরানে পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।