Home Blog Page 4

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেনি

0

সম্প্রতি ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামক একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের  প্রশংসা করে এবার বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করলো আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট।’ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের পক্ষ থেকে  বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম ইব্রাহিম আল-হাশিমির রুয়ান্ডায় অফিসিয়াল সফরকালে ধারণকৃত তার ও রুয়ান্ডার তৎকালীন পররাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী লুইস মুশিকিয়াবোর একটি ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রুয়ান্ডার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক্স হ্যান্ডেলে ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

পোস্টটির বিবরণী থেকে জানা যায়, সংযুক্ত ছবিগুলো ২০১৫ সালের ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম ইব্রাহিম আল-হাশিমির রুয়ান্ডা সফরকালে ধারণকৃত। 

পরবর্তীতে, অনলাইনে ছবি ও ভিডিও সংরক্ষণের প্লাটফর্ম Flickr এর ওয়েবসাইটে রুয়ান্ডার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পক্ষ থেকে ‘UAE visiting delegation/16 – 17’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি অ্যালবামেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত অ্যালবামের বিবরণী থেকে জানা যায়, রুয়ান্ডার পররাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী লুইস মুশিকিয়াবো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী, রিম ইব্রাহিম আল-হাশিমি এবং তার প্রতিনিধিদলকে ২০১৫ সালের ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারিতে দুই দিনের সরকারি সফরে স্বাগত জানান। সংযুক্ত ছবিগুলো উক্ত সফরকালের চিত্র। 

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, Tamanna Akhter Yesman নামে পরিচালিত এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমিরর ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির চেষ্টা নিয়ে গত ১৯ জুন বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

তাসনিম জারার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া 

সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বাসা থেকে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে শীর্ষক দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

পাশাপাশি, তাসনিম জারার বাসা থেকে ১৬ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে, এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসনিম জারার বাড়িতে সেনাবাহিনী কোনো অভিযান পরিচালনা করেননি এবং ২৬ কোটি টাকা উদ্ধারও করেননি। প্রকৃতপক্ষে, পুরোনো ও ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর অভিযানের ভিডিও মিলিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে দেশিয় সংবাদমাধ্যম ‘Barta24’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট “গণভবন থেকে লুট করা টাকা উদ্ধার করলো সেনাবাহিনী” শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু অংশের মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

পরবর্তী অনুসন্ধানে, একই তারিখে দেশিয় মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০৪ নভেম্বর প্রকাশিত সেনাবাহিনীর অভিযান সংক্রান্ত বিষয়ে আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একাংশের মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিশ্লেষণে এতটুকু নিশ্চিত যে, সেনাবাহিনীর ভিন্ন ভিন্ন অভিযানের পুরোনো ফুটেজ সংগ্রহ করেই আলোচিত দাবি সংক্রান্ত ভিডিওটি সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

এছাড়া, আলোচিত দাবিতে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশিয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত একাধিক (আরটিভি, বিডিনিউজ২৪) প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার পুরান ঢাকার বাসা থেকে নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর, প্রায় এক কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কারসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা জব্দ করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 

স্বাভাবিকভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বাড়িতে এ ধরনের কোনো অভিযান হলে সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হতো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশিয় গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তাসনিম জারার বাড়িতে এরুপ অভিযানের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও ২৬ কোটি টাকা উদ্ধার সংক্রান্ত বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রচারের পর দাবি গুলোকে (, ) মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত  ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, এনসিপি নেত্রী ডা. তাসনিম জারার বাড়িতে বিশেষ অভিযান এবং ২৬ কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

শেখ হাসিনার মামলা পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অগ্নিসংযোগের দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, শেখ হাসিনার বিচারিক ট্রাইব্যুনাল আদালতে আগুন- দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগুন লাগার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সচিবালয়ে আগুন লাগার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানে ‘Abdul Kaiyum’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, প্রচারিত ভিডিওটি সচিবালয়ে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনার।

উল্লিখিত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে একই তারিখে প্রচারিত একটি লাইভ পাওয়া যায়। উক্ত লাইভে সচিবালয়ের যে ভবনে আগুন লাগার দৃশ্য দেখানো হয়েছে সেটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা ভবনের মিল রয়েছে। 

Screenshot: Kaler Kantho Facebook Page   

এ বিষয়ে ইত্তেফাক এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২ টার দিকে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, গত বছরের ডিসেম্বরে সচিবালয়ে আগুন লাগার ভিডিওকে সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিচার পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগুন লেগেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশের বক্তব্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি “BNP কে ধুয়ে দিলো পুলিশ অফিসার” শিরোনামে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্য বলছেন, “জানি আমার চাকরি যাবে, কিন্তু তারপরেও এক পার্টি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা রাতে ভোট চুরি করেছে আর এরা দিনের আলোতে করবে। নেতা বলেছে তাদের ছাড়া অন্য কাওকে ভোট দিলে ভোটকেন্দ্র থেকে বাড়িতে যেতে দিবে না। বুঝেন অবস্থা এবার।” 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির সমালোচনা করে দেওয়া পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। 

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে কোনো পুলিশ সদস্য বাস্তবে এরূপ কোনো বক্তব্য প্রদান করলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো। 

এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে বক্তার পেছনে থাকা ব্যানারের বাংলা ভাষার শব্দগুলো অর্থপূর্ণ নয়। 

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে  ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।

Screenshot from DeepFake-o-meter by Rumor Scanner 

উল্লেখ্য, চলতি আগস্ট মাসে পাবনার একটি নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, “ধানের শীষের বাইরে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার কথা বলে সেখান থেকে কেউ সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারবে—আমার কাছে সেটা মনে হয় না।” দলের নির্দেশ অমান্য করা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি করা ভিডিওকে পুলিশ সদস্য কর্তৃক বিএনপির সমালোচনার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।    

তথ্যসূত্র 

নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে হামলার দৃশ্য হিসেবে ২০২৩ ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

রাজধানীর কাকরাইলে গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদের অভিযোগ, জাপা কর্মীরা তাদের মিছিলে হামলা করেছে। অন্যদিকে জাপার দাবি, গণ অধিকার পরিষদের কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়েছে। সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩০ আগস্ট, “এই মুহূর্তে রাজধানীতে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূরের উপর হামলার প্রতিবাদে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে হামলা করেছে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মব সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি প্রশাসন।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং, ২০২৩ সালে বিএনপির সমাবেশের পর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার পুরোনো ভিডিওকে এই দাবি ঘিরে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “MD Faruk” নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ১০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড অংশের মিল রয়েছে।  

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত পোস্টে দাবি করা হয়, এটি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ভিডিও। 

উল্লিখিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ডিএমপি নিউজ’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর “বিএনপির কর্মসূচির নামে রাজধানীতে ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ; পুলিশ সদস্য নিহত” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার রাজধানীর নয়া পল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি দেন। সমাবেশে আসা বিএনপির উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে লাঠি, চাপাতি দিয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন। এক পর্যায়ে তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সময়ে জাজেস টাওয়ারে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। 

সেসময় এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমে ওই গঠনার আরও ভিডিও (,,)  খুঁজে পাওয়া যায়। 

সুতরাং, ২০২৩ সালে বিএনপির সমাবেশ পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক মিছিল দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

গত ৮ আগস্ট (শুক্রবার), “বাদ জুম্মা গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগের বিশাল মিছিল।” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, এটি এটি ২০২৪ সালে আ.লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “BS News TV” নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট “গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল ।। Awami League Protest March In Gopalganj.” প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

উল্লিখিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট “গোপালগঞ্জে আ.লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার দায়ে ১০৬ জনের নামে মামলার প্রতিবাদে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজমসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের নামে মামলা করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন শহরের ব্যাংকপাড়ার দলীয় কার্যালয়ে। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরঙ্গী এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

অর্থাৎ, গোপালগঞ্জে মিছিলের ভিডিওটি গত ৮ আগস্টের নয়। 

সুতরাং, ২০২৪ সালে আ.লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

আ.লীগের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক কোনো মশাল মিছিলের নয়, এটি ছাত্রদলের মিছিলের পুরোনো ভিডিও 

সম্প্রতি ‘গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামীলীগের /মহানগর ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামীলীগের মশাল মিছিল।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি আওয়ামী লীগ আয়োজিত মশাল মিছিলের ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির ডাকা সর্বাত্মক হরতালের সমর্থনে বনানীতে হওয়া একটি মশাল মিছিলের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Nasir Uddin Babu নামক ফেসবুক প্রোফাইলে ২০২৪ সালের ০৬ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়৷ 

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন রাজধানীর বনানীতে সেবছরের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বন্ধের দাবিতে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের নেতৃত্বে মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। ভিডিওটি উক্ত মিছিলের চিত্র। এছাড়া, ভিডিওর ক্যাপশনে ও ভিডিওতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আইয়ের লোগো লক্ষ্য করা যায়। 

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে চ্যানেল আইয়ের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০৫ জানুয়ারি ‘বনানীতে ৭ জানুয়ারি ভোট বন্ধের দাবিতে ছাত্রদলের মশাল মিছিল’ শিরোনামে আলোচিত ভিডিওটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০১:৩০ সেকেন্ড পরবর্তীতে অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় মূল ভিডিওটির অডিওর স্থলে ‘ছাত্রলীগ, জয় জয় ছাত্রলীগ’ শিরোনামের গানের চরণ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে৷ 

ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ২০২৪ সালের ০৭ জানুয়ারি ভোট বন্ধের দাবিতে বনানীতে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের নেতৃত্বে মশাল মিছিলের দৃশ্য।

পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৬ জানুয়ারি ‘বনানীতে শ্রাবণের নেতৃত্বে মশাল মিছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়৷ 

আরও জানা যায়, তৎকালীন সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ১ দফা দাবীতে এবং ২০২৪ সালের ০৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতালের সমর্থনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ০৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বনানীতে নৌ বাহিনী হেডকোয়ার্টারের সামনে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে মশাল মিছিল করা হয়। এসময় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ এবং বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মশাল মিছিলের ভিডিও দাবিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বনানীতে ছাত্রদল আয়োজিত মশাল মিছিলের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ভিডিওটি শেখ হাসিনাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মিছিলের নয়

সম্প্রতি, ভারতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে লক্ষ লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করছেন দাবিতে একটি মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আয়োজিত কোনো মিছিলের নয়। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শেখ হাসিনাকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনার দাবিতে লক্ষ জনতার কোনো বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে গত ১৯ আগস্ট ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের করা মিছিলের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মিছিলের ব্যানারের এক সাইডে হাতপাখার লোগো এবং মিছিলে সাদা পাঞ্জাবির উপর সবুজ কোর্ট ও তাতে হলুদ রঙেল লোগো দেখতে পায়। যা থেকে ধারণা করা যায়, এটি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিছিল।

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ফেসবুক গ্রুপে Md Akter Hosen10 নামের একজন ব্যক্তির গত ১৯ আগস্ট করা একটি ভিডিও পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে প্রায় একই ধরনের একটি মিছিল লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত মিছিলের ভিডিওটি যে এলাকায় ধারণ করা হয়েছে উক্ত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মিছিলের ভিডিওটিও একই এলাকায় ধারণ করা। উভয় ভিডিওর বাম পাশে একই ভবন ও মেট্রোরেলের পিলার দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিওটির ডানপাশে দেখতে পাওয়া বৈদ্যুতিক খুঁটিতেও একইরকম লাল রঙের একটি ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। 

Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও উভয় ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মিছিলের সামনের সারির ব্যক্তিদের মধ্যেও মিল পাওয়া যায়। মাঝের দিকের লাল দাড়িওয়ালা ব্যক্তি দুটো ভিডিওতেই রয়েছে। এছাড়াও মিছিলের ডানপাশে থাকা বড় চুল-দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকেও উভয় ভিডিওতেই দেখা যায়। পাশাপাশি প্রাপ্ত ভিডিওটিতে তাদের পেছনেই সাদা পাঞ্জাবি ও সবুজ কোর্ট পরিহিত ব্যক্তিদেরও দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটি ভিন্ন এঙ্গেল থেকে ধারণ করা হলেও উভয় ভিডিও একই মিছিলের।

তবে উক্ত ভিডিওটিতে আলোচিত ভিডিওটির মত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে কোনো স্লোগান দিতে শোনা যায়নি। বরং, ভিডিওতে মিছিলের লোকজনকে ‘পিআর ছাড়া নির্বাচন, চলবে না চলবে না /নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার/ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ শীর্ষক স্লোগান দিতে শোনা যায়। অপরদিকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ‘আমরা সবাই শহীদ হবো, শেখ হাসিনাকে দেশে আনবো/ শেখ হাসিনার কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ভিডিওর অডিও পরিবর্তন করা হয়েছে।

এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, ভিডিওটি পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের করা বিক্ষোভ মিছিলের।

পাশাপাশি প্রাপ্ত ভিডিওটি পর্যালোচনায় এতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ভবনটি দেখতে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বাসসের সূত্র ধরে গুগল ম্যাপের সহায়তায় জিওলোকেশন বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায়, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মিছিলটি বাসসের সামনের তোপখান রোডে থাকাকালীন ভিডিও দুটি ধারণ করা হয়।  

Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন-এর ফেসবুক পেজে গত ১৯ আগস্ট সরাসরি সম্প্রচারিত ইসলামী আন্দোলনের সেদিনের মিছিলের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মিছিলের সরাসরি সম্প্রচারকৃত উক্ত ভিডিওটিও তোপখান রোড থেকেই শুরু হয়। এছাড়াও উক্ত মিছিলের ভিডিওতেও মিছিলের সামনের সারিতে একই ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

এছাড়াও অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে বৃহত্তর পরিসরে কোনো আন্দোলন বা বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। উক্ত কর্মসূচিতে চরমোনাই পীর রেজাউল করিমও উপস্থিত ছিলেন।

সুতরাং, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিছিলের ভিডিওকে শেখ হাসিনাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে লক্ষ জনতার মিছিলের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পুলিশ বাহিনী নিয়ে সেনা সদস্যের মন্তব্য দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে সেনাবাহিনীর এক সদস্যের বক্তব্য দাবিতেএকটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে কথিত সেনা সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘পুলিশ যদি আবারও কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করে, কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করে। আমি বলে দিলাম, এই দেশকে আর শোধরানো সম্ভব হবে না। পুলিশের সদস্যরা যদি চায় তাহলে তিনদিনের বেশি সময় লাগবে না বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে। কারণ দেশের দুর্নীতিবাজরা সবসময় পুলিশের কাছে আশ্রয় নেয়। আমি পুলিশ ভাইদের বলছি সেনাবাহিনী একদিন তাদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবে। কিন্তু দেশের মানুষকে আপনাদেরই সামলাতে হবে।’ 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে সেনা সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কিছু অসংগতি শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার টিম। দেখা যায়, ভিডিওটি তিনটি ভিন্ন অংশে বিভক্ত এবং প্রতিটি অংশে আলাদা ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। কথিত সেনা সদস্যের নাম ট্যাগ ভিডিওজুড়ে একই (Salmir) থাকলেও দেহের গঠন ও মুখাবয়বে পরিবর্তন দেখা যায়। পাশাপাশি বক্তব্য দেওয়ার সময় ঠোঁটের নড়াচড়ায় অস্পষ্টভাব ফুটে ওঠে।

Image By Rumor Scanner

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটির দৈর্ঘ ২৫ সেকেন্ড। ভিডিওটির শুরুর ০৮ সেকেন্ডে এক সেনা কর্মকর্তাকে কথা বলতে শোনা গেলেও ০৯ সেকেন্ড সময় হতে ভিন্ন আরেকজন সেনা কর্মকর্তাকে কথা বলতে শোনা যায় এবং ১৫ সেকেন্ডের সময় আরেকজনকে কথা বলতে দেখা যায়। 

এতে সহজেই অনুমেয়, এই ভিডিওটি গুগলের অত্যাধুনিক এআই টুল Veo দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনটি আলাদা ভিডিও একত্রিত করে আলোচিত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

পাশাপাশি, ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, এআই ভিডিওকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে সেনা সদস্যের বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে রাশেদ খানের দেওয়া বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

সম্প্রতি ‘ধন্যবাদ গন অধিকার পরিষদের রাশেদ খান কে জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা বিজয় সুনিশ্চিত’ ক্যাপশনে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে৷ 

ভিডিওটিতে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ বলতে শোনা যায়৷ 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

একই ব্যক্তির নাম-ছবি ব্যবহৃত ভিন্ন টিকটক অ্যাকাউন্টের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাশেদ খান ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ বলে মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, রাশেদ খানের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিভ্রান্তিকরভাবে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটিতে  মূলধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাকের লোগো লক্ষ্য করা যায়। 

উক্ত সূত্র ধরে ইত্তেফাকের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ আগস্ট ‘যারা আতীতে জয় বাংলা স্লোগান দিছে, তাদেরকে ভিপি হিসেবে দেখতে চাই না: রাশেদ খান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওর ০০:৪৭ থেকে ০০:৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

ভিডিওটি ০০:৩৩ থেকে ০১:০৫ সেকেন্ড অংশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে রাশেদ খান বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বন্ধুদেরকে বলবো  ‘ভোট দেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে ভোট দিন। যারা হলে থেকেছে ছাত্রলীগের পরিচয়ে, যারা ১৮ সালের নির্বাচনে ২৪ সালের নির্বাচনে স্লোগান দিয়েছে ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’; তারা যদি আবারও এই ডাকসু নির্বাচনে জিতে আসে, ওরা কিন্তু আওয়ামী লীগকে, ছাত্রলীগকে ফিরিয়ে আনবে। সুতরাং, ডাকসুর ভিপি হিসেবে, ডাকসুর জিএস হিসেবে আমরা কোনো ছাত্রলীগের সৈনিক জয় বাংলার সৈনিককে দেখতে চাই না। 

তার এই বক্তব্য থেকে ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ অংশটি কর্তন করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অর্থাৎ, রাশেদ খান মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে আলোচ্য বক্তব্যটি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ স্লোগান দেননি। 

এছাড়া, বাংলাদেশ টাইমসের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ আগস্ট ‘ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রসমাজের উদ্দেশ্যে বার্তা রাশেদ খানের’ শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওতেও রাশেদ খানের একই বক্তব্য খুঁজে পাওয়া গিয়েছে৷ 

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবির ভিডিওতে রাশেদ খানের বক্তব্যের ফুটেজের সাথে আরও কিছু ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করা হয়েছে যেগুলোর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, রাশেদ খান ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র