সম্প্রতি, “সেনাপ্রধান ওয়াকার গ্রেফতার, নতুন সেনাপ্রধান ঘোষণা করলেন ডাঃ ইউনূস” শীর্ষক দাবির ক্যাপশনে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং ড. ইউনূসও নতুন কোনো ব্যক্তিকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেননি। প্রকৃতপক্ষে, প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও দিয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এতে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে বলতে শোনা যায়, “…বাংলাদেশের মানুষকে তাদের ইস্যু পরিবর্তন করা এতো সহজ যে বিশাল বড় ধরণের ঘটনা, সেটাকে খুব দ্রুত ধামাচাপা দিয়ে নতুন খুব ক্ষুদ্র, তুচ্ছ একটা বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা যায়। এখন এটার জন্য যে শুধু আপনি দায়ী তা না কিন্তু। ধরেন, বাংলাদেশের এই যে ফেসবুক, ইউটিউব, এটাকে আপনার যখন কিনা সামনে নিয়ে আসা হয়, মানে আপনি স্ক্রল করবেন যখন, কোন জিনিস আপনি দেখবেন? কোনটা দেখবেন না? এটা কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটা বাংলাদেশ থেকে, বাংলাদেশ সরকারের এজেন্সিগুলোই নিয়ন্ত্রণ করে। এখন আপনি যখন স্ক্রল করবেন, তখন দেখবেন খালি মুশতাক-তিশা, খালি মুশতাক-তিশা।…”
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি যা দাবি করেন তার মূল কথা হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনসাধারণের মনোযোগ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা থেকে তুচ্ছ বিষয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেমন মুশতাক-তিশার ঘটনা। তিনি এর জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হতে এবং নিজেদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে বলছেন।
এছাড়াও, ভিডিওটিতে তিনি ভিন্ন ভিন্ন আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
কিন্তু ভিডিওটির কোথাও তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন সেনাপ্রধান ঘোষণা করেছেন এমন কোনো দাবি করেননি।
পরবর্তীতে ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে তার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত ‘মুসতাক-তিশায় মগ্ন বাঙালি!’ শীর্ষক ক্যাপশনের একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ইলিয়াস হোসেনের পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া সব কিছুর সাথে মিল রয়েছে।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণেরও প্রায় চার মাস পূর্বের। ২০২৪ সালের ১১ জুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ঐ বছরের ২৩ জুন তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া সেসময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ঐ বছরের ৮ আগস্ট। তাই আলোচিত ভিডিও ধারণের সময়কালে ইউনূসের পক্ষে নতুন সেনাপ্রধান ঘোষণা করার দাবিও ভিত্তিহীন।
স্বাভাবিকভাবে সেনাপ্রধানকে গ্রেফতার করা হলে কিংবা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণা করলে তা গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার হতো। কিন্তু এ বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবিগুলোর বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ মেলেনি।
সুতরাং, ইলিয়াস হোসেনের ভিন্ন প্রসঙ্গের পুরোনো ভিডিও দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং ড. ইউনূস নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণা করেছেন শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Elias Hossain: YouTube Video
- Prothom Alo: সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব নিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
- BBC News বাংলা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হলেন যারা