সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন নিথর ব্যক্তিকে আরেকজন ব্যক্তি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তা পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় কয়েকজন দাঁড়িয়ে দেখছেন ও ভিডিও করছেন। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘খুনিরা খুন করে লাশ জঙ্গলে ফেলে দিচ্ছে আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে’।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের সামনে খুন করে জঙ্গলে টেনে নেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং, ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’ নামের একটি নাটক সিরিজের অভিনয়ের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Arman Raj’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত মূল ভিডিওটি গত ৩০ অক্টোবরে প্রচার হতে দেখা যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘শুটিং টাইম- Crime partrol. পরিচালক – আশরাফ উল ইসলাম পিপিএম স্যার. পর্ব পরিচালক – শাব্দিক শাহীন। লতা হারবাল এর সৌজন্যে। Crime Patrol BD একটি সত্য ঘটনা। প্রতি শনিবার সন্ধ্যা ৭-৫০ মিনিটে শুধু মাত্র ATN Bangla তে।’
Comparison : Rumor Scanner
এছাড়াও, উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে পুলিশের পোশাকে ও ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’র অভিনয়ের দৃশ্য দাবিতে আরো নানা ছবি ও ভিডিও নানা সময়ে প্রচার হতে দেখা যায়।
পাশাপাশি, এ বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ ও প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দৃশ্য আসল হওয়ার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’র বিষয়ে অনুসন্ধানে একই নামে একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। পেজটির বায়োতে বলা হয়, ‘ক্রাইম প্যাট্রোল বিডি হলো ক্রাইম প্যাট্রোল নাটক সিরিজের একটি অফিসিয়াল পেজ, যা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বাস্তব অপরাধমূলক ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আমাদের লক্ষ্য হলো গ্রামীণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা।’ (অনূদিত)
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’ নামের একটি নাটক সিরিজের অভিনয়ের দৃশ্য।
সুতরাং, ‘ক্রাইম পেট্রোল বিডি’ নামের একটি নাটক সিরিজের অভিনয়ের দৃশ্যকে পুলিশের সামনে খুন করে জঙ্গলে টেনে নেওয়ার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের ভিডিও নয় বরং এটি ২০২৩ সালের ঘটনা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে নোয়াখালীর স্থানীয় গণমাধ্যম নোয়াখালীর কাগজের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ‘১৬০ জন নেতাকর্মী বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান।’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তী, জাতীয় দৈনিক গণকণ্ঠের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর উক্ত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, ২০২৩ সালে নোয়াখালীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘ইরান হিজাব পরার আইনি বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছে। এখন হিজাব পরবে কি পরবে না — সেটা সম্পূর্ণই নারীদের নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে, কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা আর নেই…..এ সংবাদে ইরানের স্বাধীনচেতা নারীরা রাস্তায় নেমে সম্মিলিতভাবে হিজাব পুড়িয়ে আনন্দ উদযাপন করছে।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, আগুনের সামনে সাদা পোশাক পরিহিত এক নারী নাচতে নাচতে একটি কাপড় আগুনে ছুঁড়ে ফেলে ভিড়ের মধ্যে মিশে যান। তার দেখাদেখি কালো পোশাক পরিহিত দুজন নারী এগিয়ে এসে আগুনে কাপড় ফেলছেন। এসময় ঘিরে থাকা জমায়েতকে হাততালি দিয়ে উদযাপন করতে দেখা যায়।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ইরানে হিজাব আইন বাতিল উদযাপনের দৃশ্য নয় এবং ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব সংক্রান্ত আইনগুলো তুলে নেওয়ার মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালে ইরানে অনুপযুক্ত পোশাক পরার অভিযোগে গ্রেফতার মাশা আমিনির দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Voice of America এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ‘Woman Throws Hijab in Fire as Protests Spread in Iran’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, ইরানের সারি শহরের রাস্তায় এক নারী তার হিজাব আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। কঠোর পোশাকবিধি কার্যকর করার দায়িত্বে থাকা নৈতিকতা পুলিশ কর্তৃক এক তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন জোরদার হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনি “অনুপযুক্ত পোশাক” পরার অভিযোগে তেহরানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গেলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব সংক্রান্ত আইনগুলো তুলে নেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশটির গণমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে গত ০৭ অক্টোবর ‘Conservatives clash over hijab law as Tehran streets move on’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রজাতন্ত্রের স্বার্থ-নির্ধারণী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ রেজা বাহোনার রিপোর্টারদের বলেন “সরকার ব্যবস্থার সাধারণ সিদ্ধান্ত হলো, কোনো বাধ্যতামূলক হিজাব আইন বলবৎ নেই।” এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির রক্ষণশীলরা প্রতিবাদও জানান।
এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে IRIB Ofogh এর ওয়েবসাইটে মোহাম্মদ রেজা বাহোনারের আরেকটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়।
‘বাহনার হিজাব সম্পর্কে তার অবস্থান সংশোধন করেছেন/আমি খারাপভাবে প্রকাশ করেছি!’ শিরোনামের উক্ত সাক্ষাৎকারে রেজা বাহোনারকে বলতে শোনা যায়, “উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ বলতে চায়, আমাদের পবিত্র শরিয়ায় হিজাব একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয় অথবা এর গুরুত্ব একটু কমানো দরকার বা অন্য কোনোভাবে পরিবর্তন আনা দরকার— না। এটি স্পষ্টতই আমার বক্তব্য নয়। আমি আমার বক্তব্যটি পুনরায় বলছি, আমি কোনো ভাবেই মূল্যবোধকে পুনর্বিবেচনার কথা বলছি না। আমি বলছি পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা করতে। অর্থাৎ, দেশে একটি বিশাল সাংস্কৃতিক জাগরণ শুরু করা উচিত।”
রেজা বাহোনারের উক্ত বক্তব্যের বিষয়ে ইরানের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Factnameh এর গত ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ২৫ মে সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে একটি প্রশ্নের জবাবে সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ “হিজাব এবং সতীত্ব আইন” এর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া মুলতবী করা হয়েছে বলে জানান। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সংসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলিরেজা সালিমিও উক্ত আইনের বিজ্ঞপ্তি ও প্রয়োগ মুলতবীর বিষয়ে একই কথা বলেন।
ফ্যাক্টনামেহ এর উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী “হিজাব এবং সতীত্ব আইন” আপাতত মুলতবী হলেও হিজাব সংক্রান্ত অন্যান্য আইন এখনও বহাল আছে। ইরানের ইসলামিক দণ্ডবিধির ৬৩৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেসব নারী ইসলামিক হিজাব ছাড়া জনসমক্ষে উপস্থিত হন তাদের কারাদণ্ড এবং জরিমানা দণ্ডিত করা হবে। এছাড়াও, ইসলামিক হিজাব বাধ্যতামূলকভাবে পালনের বিষয়ে আরও কয়েক ডজন আইন, বিধিবিধান এবং নির্দেশনা রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সেগুলি বাতিল বা স্থগিত করার কোনও খবর প্রকাশিত হয়নি।
অর্থাৎ, ইরানে হিজাবের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
সুতরাং, ইরানে হিজাবের বাধ্যবাধকতার কথিত বাতিল উদযাপনের দৃশ্য দাবিতে ২০২২ সালে ইরানে পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘সাজানো গোছানো দেশটা ধ্বংস করে দিচ্ছে রাজাকারের বাচ্চারা’ শীর্ষক মন্তব্যটি পদ স্থগিত হওয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘সাজানো গোছানো দেশটা ধ্বংস করে দিচ্ছে রাজাকারের বাচ্চারা’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য ফজলুর রহমান করেননি। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিটি প্রথমে একটি স্যাটায়ার পেজ থেকে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সেটি বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে ফজলুর রহমান কর্তৃক এমন মন্তব্য করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের মিঠামইন বাজার শেডে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলুর রহমান বলেছিলেন, ‘বাঁচব না হয় মরব, কোনো রাজাকার-আলবদরের বাচ্চা মুক্তিযুদ্ধকে এ দেশ থেকে মুছতে পারবে না।’
ফজলুর রহমান বলেন, ‘যখন দেখছি মুক্তিযুদ্ধ রাখবে না। যখন দেখছি মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিয়ে দিবে। যখন দেখছি ৩০ লাখ মানুষের রক্ত এ দেশে বৃথা যাবে। যখন দেখছি দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের মূল্য থাকবে না। তখন আমি মনে করেছি, না আমি ছাড়ব না। আমি তাদের ছাড়ব না, যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে। সেই কথা বলতে বলতে এমন এক জায়গায় পৌঁছলাম, যখন আমার সঙ্গে যুক্তিতে পারে না তখন ওরা বলা শুরু করল, আরে ও তো পাগল, ও তো ফজু পাগলা। আমাকে পাগল উপাধি দিয়ে রাজাকারেরা বাঁচতে চায়।’
অ্যাডভোকেট ফজলুর বলেন, ‘আমি আপনাদের সামনে সারা জাতিকে শপথ করাতে চাই—আমি কোনো দিন মুক্তিযুদ্ধের বাইরে কোনো কাজ করব না, মুক্তিযুদ্ধের বাইরে যাব না। মুক্তিযুদ্ধ এ দেশ থেকে যাবে না। এই যে স্টেজে বসে আছেন মুক্তিযোদ্ধারা, তাঁদের সাক্ষী রেখে বলছি, তাঁদের আমি স্যালুট দিয়ে বলছি, হে মুক্তিযোদ্ধারা, আমি তোমাদের ভাই। তোমরা আমার সঙ্গে আছ, তোমরা আমাকে আনছ, কথা দিয়ে গেলাম—জীবন অথবা মৃত্যু, কোনো রাজাকার-আলবদরের বাচ্চা মুক্তিযুদ্ধকে এ দেশ থেকে বিনাশ করতে পারবে না।’
অর্থাৎ, ফজলুর রহমান ভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
এরপর আলোচিত দাবিটির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধানে Iqbal Tv নামক একটি পেজ থেকে গত ২৭ অক্টোবর বিকাল ০৪ টা ৩১ মিনিটে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, পোস্টটিতে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটির বায়োতে লেখা রয়েছে ‘পেজটি ক্রিয়েট করা হয়েছে বিনোদনের উদ্দেশ্যে’৷
অর্থাৎ, পেজটি স্যাটায়ার বা হাস্যরসাত্মক পেজ।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় ফজলুর রহমানকে। নোটিশের জবাব ২৪ ঘন্টার মধ্যে দিতে বলা হলেও এক সপ্তাহের সময় চান ফজলুর রহমান। পরবর্তীতে দল আরও ২৪ ঘন্টা সময় বাড়ায় এবং ২৬ আগস্ট অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জবাব প্রেরণের পর ওইদিনই বিএনপিতে থাকা সকল দলীয় পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।
সুতরাং, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত ‘সাজানো গোছানো দেশটা ধ্বংস করে দিচ্ছে রাজাকারের বাচ্চারা’ শীর্ষক মন্তব্যটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, ‘গনধর্ষণ করে মেয়েটা অচেন হয়ে রইছে আর উ’গ্রবাদী ই*সকন মা’লুরা (হি’ন্দু) আনন্দ করছে। আগামী এক সপ্তাহ আমাদের মা বোন নিরাপদ নয়। প্রশাসন ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষে না। পারলে তাঁরা ধর্ষণ করছে।’’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালনার সংগঠন ইসকন সদস্যদের কর্তৃক নারীকে ধর্ষণের ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের স্ক্রিপ্টেড ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা জলছাপের সূত্র ধরে ‘ajayshing0021’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৫ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে, এতে কথিত ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে হাসতে দেখা যায়।
ভিডিওর নিচের অংশের জলছাপে ভারতের ব্যঙ্গালোর নামক স্থানের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। উক্ত ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায় তিনি ভারতের বাসিন্দা।
এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে, ‘ray______ji_deepak__’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ভিডিওতে নারী রুপে থাকা ব্যক্তি আসলে পুরুষ এবং ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের ছবিও যুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে, উক্ত ব্যক্তিদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন ভিডিওতে একই ব্যক্তিদের (১, ২, ৩) উপস্থিতি দেখা যায়। এই কনটেন্টগুলো বিশ্লেষণ এবং উল্লেখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটি প্রতীয়মান হয়ে যে আলোচিত ভিডিও বাস্তব কোনো ঘটনার নয়। এটি একটি সাজানো ভিডিও।
সুতরাং, ভারতে ধারণকৃত সাজানো ভিডিওকে বাংলাদেশ ইসকন সদস্য কর্তৃক এক নারীকে ধর্ষণের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাশাপাশি দুইটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবির আব্দুল আদিল খান নামের পুরুষটি ২০২৩ সালে বিয়ে করেন। যে নারীকে তিনি বিয়ে করেন তিনি নিজের নাম নন্দিনী মণ্ডল থেকে পরিবর্তন করে জারা ইসলাম রাখেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অনেক হিন্দু তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তিনি শোনেননি।
পোস্টে দাবি করা হয়, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আব্দুল তার লালসা চরিতার্থ করেছে দুই বছর ধরে, এই মেয়েটিকে সব দিক দিয়ে ব্যবহার করেছে, এবং এখন তাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। নীচের ফটোতে তার বর্তমান অবস্থা দেখুন। পোস্টে পাশাপাশি দুইটি ছবি দিয়ে প্রথমটি ২০২৩ সালের (যেখানে ছেলে ও মেয়েকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে) এবং দ্বিতীয়টি ২০২৫ সালের (যেখানে মেয়েটির মুখ জলসানো অবস্থায় দেখা যাচ্ছে)।
এক্সে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টটিই দেখা হয়েছে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক বার।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে উল্লিখিত পুরুষের নাম আব্দুল আদিল খান নয় এবং নারীটির নামও নন্দিনী মণ্ডল বা জারা ইসলাম নয়। প্রকৃতপক্ষে, অভিনেতা তুহিন চৌধুরী ও অভিনেত্রী জ্যোতি ইসলামের নাটকের পোস্টার ও শ্যুটিংয়ের দৃশ্যের ফুটেজ ব্যবহার করে ভুয়া দাবটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিগুলোর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার। প্রথম ছবিটি রিভার্স সার্চে ছোট পর্দার অভিনেত্রী জ্যোতি ইসলাম ও অভিনেতা তুহিন চৌধুরীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত পোস্টে সংযুক্ত একটি ইউটিউব ভিডিওর থাম্বনেইলে পাওয়া যায়।
Collage: Rumor Scanner
ভিডিওটি একটি নাটকের, নাম বিধবা বউ। এই নাটকে অভিনয় করেছেন জ্যোতি ইসলাম ও তুহিন চৌধুরী। নাটকটি সেদিনই ইউটিউবে মুক্তি পায়৷
অর্থাৎ, পুরুষটির নাম আব্দুল আদিল খান এবং মেয়েটির নাম নন্দিনী মণ্ডল বা জারা ইসলাম বলে যে দাবি করা হয়েছে তা সঠিক নয়। আর ছবিটিও ২০২৩ সালের নয়৷
পরবর্তীতে জ্যোতির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১ অক্টোবরের একটি ভিডিওর ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে ছড়ানো দ্বিতীয় ছবিটির মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বাংলা নাটক, শ্যুটিং এ জাতীয় হ্যাশট্যাগ দেওয়া রয়েছে। জ্যোতি কমেন্টেও লিখেছেন যে ‘আমি নুসরাত বলছি’ নামের একটি নাটকের শ্যুটিংয়ের দৃশ্য এটি।
Collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে জ্যোতির শেয়ার করা আরেকটি পোস্টে নাটকটির একটি পোস্টার পাওয়া যায়, যেখানে তার মুখে একই দৃশ্য দেখা যায়। নাটকটি বেয়ন্ড ফিল্মসের পরিবেশনায় ইউটিউবে মুক্তি পাবে বলে জানানো হয়। বেয়ন্ড ফিল্মসের ফেসবুক পেজ সূত্রে জানা যায়, নাটকটি ০১ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ৩টায় তাদের ইউটিউব চ্যানেল মুক্তি পাবে। সে অনুযায়ী নাটকটি ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে।
অর্থাৎ, দ্বিতীয় ছবিটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়।
জ্যোতি ইসলাম পূর্বে কখনো ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন কিনা বা পূর্বে (২০২৩ সাল বা তার আগে) তার নাম নন্দিনী মণ্ডল ছিল কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধানে জ্যোতি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটি ২০১৬ সালে খোলার পর নাম পরিবর্তনের প্রমাণ মেলেনি। ২০২২ সালেও একই নামেই অ্যাকাউন্টটি পরিচালিত হতে দেখা যায়। পেজটি ২০২১ সালে এই নামেই খোলা হয়। পরবর্তীতে আর নাম পরিবর্তন করা হয়নি।
সুতরাং, নাটকের পোস্টার ও শুটিংয়ের মেকআপের দৃশ্যের ফুটেজকে কথিত লাভ জিহাদ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ২৫ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান (সিজেসিএসসি) জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা। এ সময় ড. ইউনূস তাকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বইটি উপহার দেন। যার প্রচ্ছদে বাংলাদেশের মানচিত্র সংবলিত একটি গ্রাফিতি ব্যবহার করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে ড. ইউনূসের পাকিস্তানি জেনারেলকে বইটি উপহার দেওয়ার ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করে তাকে বাংলাদেশের একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর ভারতের ‘চিকেন নেক’ ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেড়ে ওঠা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ছবিটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করে পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যানকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বাংলাদেশের নতুন মানচিত্র উপহার দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানি জেনারেলকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি চিত্রের সংকলনে তৈরি ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বইটি উপহার দেওয়া হয়। বইটির প্রচ্ছদেও শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি ব্যবহার করা হয়েছে। কাঁচা হাতে আঁকার কারণে গ্রাফিতিগুলো পেশাদারদের মতো নিখুঁত হয়নি। এ কারণে প্রচ্ছদে দেখতে পাওয়া মানচিত্রটিও কিছুটা বিকৃত হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে সেটিকেই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আলোচিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক The Business Standard-এর ওয়েবসাইটে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বইটি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গ্রাফিতি সংকলিত বইটি প্রকাশ করে। বইটি প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের কাঁচা হাতে আঁকা গ্রাফিতিগুলোকে সংরক্ষণ করা। কারণ তা না করা হলে শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টা হারিয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে বইটির অন্যতম প্রযোজক চিত্রশিল্পী মোরশেদ মিশুর বরাতে জানানো হয়, বইটির জন্যে চিত্রকর্ম সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোন গ্রাফিতি কতটা শৈল্পিকভাবে পরিমার্জিত ছিল তার উপর ভিত্তি করে তা বেছে নেওয়া হয়নি। বরং নতুন বাংলাদেশের ইতিবাচকতা, সাধারণ মানুষের আশা, দাবি এবং জেন-জি’র প্রত্যাশা তুলে ধরে এমন গ্রাফিতিগুলোকে বেছে নেওয়া হয়। এছাড়াও পেশাদার বা হাই-প্রোফাইল শিল্পীদের কাজগুলো তুলে ধরাও এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয় বলেও প্রতিবেদককে জানান তিনি।
অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, এই বইয়ের সাথে বা বইয়ের প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবির সাথে ভারত-বাংলাদেশের ভূ-রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও গ্রাফিতিগুলো শিক্ষার্থীদের কাঁচা হাতে আঁকা বলেও জানা যায়।
পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি সংকলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বইটি পর্যালোচনা করে দেখে রিউমর স্ক্যানার। বইটিতে আলোচিত গ্রাফিতি ব্যতীতও একাধিক বিকৃত মানচিত্রের গ্রাফিতি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও অন্যান্য গ্রাফিতিগুলোতে অপরিপক্কতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
The Art of Triumph: Graffiti of Bangladesh’s New Dawn
পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্থানে অঙ্কিত গ্রাফিতির আরও কিছু ছবি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের একাধিক বিকৃত মানচিত্রের গ্রাফিতি পাওয়া যায়। যার প্রত্যেকটির আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। এমন কিছু গ্রাফিতি দেখুন-
Collage by Rumor Scanner
মূলত গ্রাফিতিগুলো অপেশাদার শিক্ষার্থীদের হাতে আঁকা হওয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর সাথে ভূ-রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা থাকলে সকল মানচিত্র একই রকম হওয়া অনিবার্য্য ছিল।
পরবর্তীতে অনলাইন গণমাধ্যম জাগোনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইটে ‘প্রতিবাদের গল্পগুলো আঁকা থাক দেওয়ালে দেওয়ালে’ শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদককে বদিউল হক নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় করা গ্রাফিতির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনগুলো সেসময় তাড়াহুড়ো করে করা হতো। ৫ আগস্টের আগে পুলিশ, ছাত্রলীগের হামলার ভয় নিয়েই গ্রাফিতি করা হয়েছে। বেশিরভাগ সময় মিছিলে চলতি অবস্থায় দ্রুত একটা স্লোগান লিখে চলে যেতাম তাই লিখনগুলো ততটা সুশ্রী হতো না।”
উল্লিখিত শিক্ষার্থীর বক্তব্য থেকে এটিও প্রতীয়মান হয় যে, কেনও সেসময় অপেশাদার শিক্ষার্থীদের হাতে আঁকা গ্রাফিতিগুলোর নিখুঁত নয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বইটি শুধু পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান (সিজেসিএসসি) জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে দেওয়ার বিষয়েই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু পাকিস্তানি জেনারেলই নয়, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে উক্ত বইটি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
অর্থাৎ, উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে জুলাই আন্দোলনের সময় আঁকা শিক্ষার্থীদের কাঁচা হাতে আঁকা গ্রাফিতি নিয়ে দুই দেশের ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু টেনে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের একটি নতুন মানচিত্র তৈরি করে পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে উপহার দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘বিরোধীদল থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে হবে: শিশির মনির’ শীর্ষক দাবিতে কালের কণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘বিরোধীদল থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে হবে’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য আইনজীবী শিশির মনির করেননি এবং কালের কণ্ঠও আলোচিত দাবিতে কোনো প্রতিবেদন বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, কালের কণ্ঠের ফটোকার্ডের ডিজাইন প্রযুক্তির সহায়তায় নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি করে পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, এটি কালের কণ্ঠের লোগো এবং তারিখ হিসেবে ৩০ অক্টোবর ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
উল্লিখিত তথ্যের সূত্র ধরে কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে উল্লিখিত ফটোকার্ডটির অস্তিত্ব মেলেনি। এছাড়া, সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, গত ২৮ অক্টোবর কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি লাইভ পাওয়া যায়। ১১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের লাইভে শিশির মনিরকে বলতে শোনা যায়, যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি একই সালে দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। এই পরিবর্তন, বিরাট ব্যাপার। আগে আমরা দেখেছি এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, তিনি দলেরও প্রধান, তিনি হাউজেরও প্রধান, তিনি সরকারেও প্রধান। সবই গণভবনে। কিন্তু এখন যিনি দলের প্রধান হবেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।…
একই ভিডিও এটিএন বাংলার ইউটিউব চ্যানেলেও প্রকাশ করতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, শিশির মনির ভিন্ন কথা বলেছেন।
সুতরাং, শিশির মনিরকে উদ্ধৃত করে ‘বিরোধীদল থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে হবে’ শিরোনামে কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
এসব পোস্টের ক্যাপশনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করা হলেও ভিডিওর শিরোনামে এটি বাংলাদেশের ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে, বা ‘লাল স্বাধীনতা’, ‘দেশে নিরাপত্তা কোথায়’ সূচক শব্দাবলী দ্বারা এটি বাংলাদেশের ঘটনা বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকাশ্যে ক্রেন দিয়ে টেনে এটিএম মেশিন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্যে ঘটে যাওয়া এটিএম চুরির ঘটনাকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম The Telegraph এর ওয়েবসাইটে গত ২৮ অক্টোবর ‘Thieves use JCB to rip cash machine from Sainsbury’s store’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটিএম চুরির ঘটনাটি গত ২৬ অক্টোবর রাতে যুক্তরাজ্যের বাকিংহামশায়ারের কেইনসের ব্রুকল্যান্ডস স্কয়ারে সেন্সবারির একটি দোকানে ঘটেছে। চোরেরা একটি জেসিবি টেলিহ্যান্ডলার ক্রেন ব্যবহার করে জানালা ভেঙে দোকানের সামনে থেকে এটিএমটি তুলে নেয় একটি সাদা পিক-আপ ট্রাকে তোলা হয়। এরপর চোরেরা দোকানের সামনে জেসিবিটি ফেলে পালিয়ে যায়। টেমস ভ্যালি পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ‘গোপনে আত্মহত্যা আগেই নিষিদ্ধ ছিলো উত্তর কোরিয়ায়। সেখানে এবার এক নতুন মাত্রা যুক্ত করলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। জানা গেছে, আত্মহত্যার চেষ্টাকারী যদি কোনোভাবে বেঁচে যান তাহলে তার মরতে হবে কঠোর শাস্তিতে। সেই শাস্তিও হচ্ছে মৃত্যুর শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড।’
গণমাধ্যম ছাড়াও নানা ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তর কোরিয়ায় ব্যর্থ আত্মহত্যা প্রচেষ্টাকারীদের মৃত্যুদন্ড হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘রেডিও ফ্রি এশিয়া’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোর তুলনা করলে বেশ মিল পাওয়া যায়। যেমন: দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, আত্মহত্যার পরিসংখ্যান, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তার বক্তব্য। ‘রেডিও ফ্রি এশিয়া’র উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আত্মহত্যা প্রতিরোধে গোপন নির্দেশ জারি করেছেন।’ তবে, প্রতিবেদনে আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলে মৃত্যুদন্ডের কোনো উল্লেখ করা হয়নি। উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রে পরবর্তীতে ভারত, যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশের গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয় যে উত্তর কোরিয়ায় আত্মহত্যার প্রচেষ্টা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলে মৃত্যুদন্ডের দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, রেডিও ফ্রি এশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘রয়টার্স’ এ ২০২৩ সালের ৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘রয়টার্স স্বতন্ত্রভাবে রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদনটি যাচাই করতে পারেনি।’
এছাড়াও, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে এমন কোনো মানবাধিকার সাক্ষ্য বা রাষ্ট্রীয় নীতির ঘোষণা পাওয়া যায়নি, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে কেবল আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে অনলাইনে থাকা নির্ভরযোগ্য সূত্রে অনূদিত উত্তর কোরিয়ার ফৌজদারি আইনের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের উত্তর কোরিয়ার ফৌজদারি আইন পাওয়া যায়। তবে উক্ত আইনে আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, উত্তর কোরিয়ায় ব্যর্থ আত্মহত্যা প্রচেষ্টাকারীদের মৃত্যুদন্ড হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।