Home Blog Page 5

পার্বত্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীকে হুমকির দৃশ্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে পার্বত্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর আদলে একদল সশস্ত্র ব্যক্তির বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে তাদেরকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যতই চেষ্টা করুক, এই পার্বত্য অঞ্চল থেকে আমাদের কোনোদিন বিতাড়িত করতে পারবে না। কারণ এই পাহাড় আমাদের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলছি, তারা যদি এত শক্তিশালী হয়ে থাকে তাহলে তারা আমাদের সাথে মোকাবেলা করুক। আমরাও প্রস্তুত আছি। খেলা হবে।’

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি পার্বত্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীকে হুমকির দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি ২ লক্ষ ৫০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৩ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি পার্বত্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীকে হুমকির দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কোন গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে প্রদর্শিত মানুষ, মানুষের অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়।

Collage: Rumor Scanner/DeepFake-O-Meter, Hive Moderation

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘AVSRDD’, ‘LIPINC’ ও ‘XCLIP’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি ভুয়া বা এআই তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৯.৫ শতাংশ, ৯৯.৮ শতাংশ ও ৯৯.৮ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এর বিশ্লেষণমতে আলোচিত ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯২.৮ শতাংশ। 

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে পার্বত্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীকে হুমকির দৃশ্য দাবি করে অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

অপতথ্যের ক্যানভাসে লিঙ্গভিত্তিক রাজনীতির ভয়াল থাবায় নারী

0
  • নয় মাসে শনাক্ত হওয়া ভুয়া তথ্যের ২১ শতাংশ ক্ষেত্রেই জড়ানো হয়েছে নারীদের।
  • এই সময়ে ২৭৬ জন নারীকে জড়িয়ে ৫৬৭টি অপতথ্য শনাক্ত।
  • ২৫ জন নারী রাজনীতিবিদকে জড়িয়ে ছড়ানো হয়েছে ২৩৭টি অপতথ্য।
  • দুই নারী উপদেষ্টাকে জড়িয়েও ছড়িয়েছে অপতথ্য।
  • বিনোদন জগতের ২৯ জন নারী তারকাকে জড়িয়ে ৬৮টি অপতথ্য শনাক্ত।
  • সমন্বয়কের ভুয়া পরিচয় দিয়ে ক্রমাগত ভিন্ন নারীর ভুয়া ভিডিও-ছবি প্রচার।
  • নারীকে জড়িয়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত ৪৪টি ঘটনায় অপতথ্য।
  • ১৩টি ঘটনায় বাংলাদেশের এবং ০৩টি ঘটনার প্রচারে ভারতের গণমাধ্যম।
  • সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের ৩৭ শতাংশ ঘটনাতে নারীকে জড়ানো হয়েছে। ভারতীয় অ্যাকাউন্ট থেকে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার।

বাংলাদেশে নারীদের ঘিরে অপতথ্য ছড়ানো এখন একটি উদ্বেগজনক সামাজিক ও ডিজিটাল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপটে নারীদের ছবি, পরিচয় কিংবা বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক সময় নারীদের নামে ভুয়া কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যার উদ্দেশ্য কখনও চরিত্রহনন, কখনও হেয় প্রতিপন্ন করা, কখনওবা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা। এসব অপতথ্য শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই করে না, বরং নারীর সামাজিক অবস্থান, নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিস্তার যত বাড়ছে, নারীদের ঘিরে ডিজিটাল সহিংসতার এই রূপ ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে অপতথ্যের উৎস, ধরন ও প্রভাব বিশ্লেষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যত গুজব শনাক্ত হয়েছে তার অন্তত ২১ শতাংশ নারীদের ঘিরে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ২৭৬ জন নারীকে জড়িয়ে ৫৬৭টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব অপতথ্যের শিকার হয়েছেন রাজনীতি, বিনোদন, জাতীয়সহ বিভিন্ন অঙ্গনের পরিচিত ব্যক্তিরা। এমনকি সাধারণ অনেক নারীও নিয়মিত এমন অপতথ্যের শিকার হচ্ছেন।

রাজনীতির মাঠে নারীদের ঘিরে অপতথ্যের কালো থাবা

বাংলাদেশে জাতীয় ও রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের ঘিরে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি বর্তমানে একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। সামাজিক মাধ্যমে নারীদের নাম বা ছবি ব্যবহার করে ভুয়া বক্তব্য, সম্পাদিত ভিডিও বা এআই কনটেন্ট ছড়ানো হয়, যা তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে। অনেক সময় গণমাধ্যমের নামেও এসব তথ্য প্রচার করে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর অপচেষ্টা চলে। ফলে নারীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, এবং গণপরিসরে তাদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। 

রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত নয় মাসে দেশের অন্তত সাতটি রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের ২৫ জন নারী নেতাকর্মীকে জড়িয়ে অন্তত ২৩৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নারীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ১৮৮টি অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয়েছে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে৷ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয়ে থাকা এই নারীকে জড়িয়েই ১৪৮টি অপতথ্য প্রচার হয়েছে। অপতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ শেখ হাসিনার পক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব অপতথ্যের প্রায় ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই শেখ হাসিনাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।  এসব অপতথ্যের অধিকাংশই (২৯ শতাংশ) পুরোনো ভিডিও কেন্দ্রিক, যেগুলোকে চলতি বছরের ঘটনা দাবিতে প্রচার করতে দেখা গেছে। শেখ হাসিনাকে ০৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এরই প্রেক্ষিতে তাকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে বা তিনি দেশে ফিরেছেন দাবিতে বিভিন্ন সময়ের পুরোনো ভিডিও রীতিমতো ক্যাম্পেইন আকারে চালানো হয়েছে। এর ফলে তার নামের পাশে অপতথ্যের সংখ্যাও বেড়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়াও তার পরিবারের আরও তিন নারী সদস্যকে (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক) জড়িয়েও আরো ২১টি অপতথ্যের প্রচার ছিল এই নয় মাসে। এছাড়া, দলটির নেত্রী দীপু মনি (১), মমতাজ বেগম (৪), সেলিনা হায়াৎ আইভী (৩) এবং জান্নাত আরা হেনরীকে (১) জড়িয়ে প্রচার হওয়া অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ কোনো নাম উল্লেখ ব্যতিত শুধু দলটির নারী নেতাকর্মী পরিচয়ে আরো অন্তত ১০টি অপতথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে দেশের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে একাধিক নারী সদস্য আছেন। জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সুবাদে গত বছর থেকেই এই নারীরা কমবেশি আলোচনায় ছিলেন। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর তাদের জড়িয়ে নিয়মিতই অপতথ্যের প্রচার লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এই দল ও তার অঙ্গসংগঠনের সাত নারী নেত্রীকে জড়িয়ে নয় মাসে অন্তত ৩২টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে জড়িয়েই প্রচার হয়েছে ১৯টি অপতথ্য। এসব অপতথ্যের আটটিতে আপত্তিকর এবং যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ দৃশ্যের প্রচার ছিল। এছাড়া, নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে ছয়টি, সামান্তা শারমিনকে জড়িয়ে তিনটি এবং হুমায়রা নুর, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব ও শ্যামলী সুলতানা জেদনীকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। কোনো নাম উল্লেখ ব্যতিত শুধু এনসিপির নারী নেতাকর্মী পরিচয়ে আরো অন্তত দুইটি অপতথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার অঙ্গসংগঠনের অন্তত আট জন নারী নেতাকর্মীকে জড়িয়ে গেল নয় মাসে অন্তত ২৩টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে প্রচার হয়েছে এমন অপতথ্য শনাক্তের পরিমাণ ০৯টি। এই অপতথ্যগুলোর ক্ষেত্রে ভুয়া মন্তব্য, এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া ছবি যেমন ছিল, তেমনি ছিল পুরোনো ভিডিওর ব্যবহার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টাও। রুমিন ফারহানা ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া (৮), জাইমা রহমান (১), ডা. জোবাইদা রহমান (১), নিপুন রায় চৌধুরী (১) এবং মানসুরা আলমকে (১) জড়িয়ে চলতি বছর অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এছাড়া, কোনো নাম উল্লেখ ব্যতিত শুধু বিএনপির নারী নেতাকর্মী পরিচয়ে আরো অন্তত দুইটি অপতথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।

এছাড়া অন্যান্য দলের মধ্যে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেত্রী লাকী আক্তারকে জড়িয়ে দুইটি, ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমাকে জড়িয়ে দুইটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী সোহাগী সামিয়াকে জড়িয়ে একটি এবং গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কথিত মহিলা সম্পাদিকা তন্নির পরিচয় দিয়ে একটি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। 

জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন রিউমর স্ক্যানারকে বলছেন, “সম্মুখসারীর নারী রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে আমি যেটা দেখেছি যে দুর্নীতি বিষয়ক গুজব বা ভুয়া তথ্য হলে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয় অনেকের কাছে। তবে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার ক্ষেত্রে অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করে না যে তারা এটা করে থাকতে পারে বা এটা হয়ে থাকতে পারে।” সামান্তা মনে করেন, যারা জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কাজ করেন তাদের জন্য এগুলো খুবই সমস্যা হয়। কারণ গুজবগুলো ঐ পর্যায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে ফেলে। সেক্ষেত্রে তার সামাজিক বা পারিবারিক প্রভাব ভয়ানক পরিমাণে হয়।

অপতথ্য প্রচারে নারীকে টার্গেট করা প্রসঙ্গে সামান্তার অভিমত, “আমার কাছে মনে হয় যে আমাদেরকে আক্রমণ করলে বা আমরাই যদি এটার এত শিকার হয় তাহলে বাকি নারীরা এই পথে আসার আশা ভরসা পাবে না। এটা একটা কৌশলের জায়গা থেকে এটা হচ্ছে।”

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, “গুজবগুলো টার্গেট করেই ছড়াচ্ছে। নারী রাজনীতিবিদ যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত এবং রাজনীতির ময়দানে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদের এই সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার জন্য এই কাজটা করা হয়।”

ফ্যাক্টচেকারদের এই ধরণের কাজগুলো প্রান্তিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গুজব মোকাবিলাসহ পারিপার্শ্বিক নানা বিষয়ে গ্রাম পর্যায়ে এনসিপিসহ সকল রাজনৈতিক দলেরই সচেতনতার কাজ করা উচিত বলে মনে করেন তরুণ এই নারী রাজনীতিবিদ৷

রাজনীতির ময়দানের বাইরে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুইজন নারী উপদেষ্টাকে জড়িয়ে গত নয় মাসে দশটি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে নয়টি (এর মধ্যে দুইটি আপত্তিকর এবং একটি এআই কনটেন্ট) এবং ফরিদা আখতারকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদকে জড়িয়েও অন্তত একটি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে।

ভুয়া এআই কনটেন্টের বড় শিকার বিনোদন জগতের নারীরা

বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া তথ্য বা অপতথ্যের অন্যতম বড় শিকার হয়ে উঠছেন বিনোদন জগতের নারীরা। অভিনেত্রী, মডেল, উপস্থাপক ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নাম-পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য- যার মধ্যে রয়েছে ভুয়া ভিডিও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কনটেন্ট কিংবা মৃত্যুর গুজব। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বিনোদন জগতের ২৯ জন নারী তারকাকে জড়িয়ে অন্তত ৬৮টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ৫০টি কনটেন্টের ক্ষেত্রে এআই বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ ভুয়া এসব কনটেন্টের ক্ষেত্রে ৩৬টি ঘটনাতেই ব্যবহার হয়েছে ভারতীয় নারীর ফুটেজ, যেগুলোকে বাংলাদেশের বিনোদন তারকার ছবি বা ভিডিও দাবি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ 

বিনোদন জগতে গেল নয় মাসে সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান৷ তাকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ১১টি ভুয়া কনটেন্টের ১০টিই ছিল এআই কেন্দ্রিক। সাদিয়া রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে অবগত। রিউমর স্ক্যানারের সাথে আলাপকালে তিনি বলছিলেন, যারা এই কাজটা করছে তারা ভয়াবহ ক্রাইমই করছে।  

ভুয়া কনটেন্টগুলোর বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সাদিয়া আয়মান মনে করেন এককভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে এই সমস্যায় যারা পড়ছেন তারা সকলে একজোট হয়ে এই বিষয়টির সমাধানের পথ বের করা উচিত।   

বাংলাদেশে নারীরা বিশেষ করে রাজনীতি এবং বিনোদন জগতের পরিচিত নারীরা জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আলাদাভাবে গুজবের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে সাদিয়া আয়মান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পক্ষে আমি কথা বলেছি। আমি কোনো রাজনীতির জায়গা থেকে করিনি। রাজনীতির ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে পছন্দ করি বা অন্যায় হলে সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পছন্দ করি। এটা সত্য যে জুলাই আন্দোলনের পরে আমি বা আরো কয়েকজন আছে যারা এটার পক্ষে কথা বলেছে তারা সমস্যার মুখে পড়েছে। আমি বলবো না, যারা জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল তারাই এটা করেছে। আমি জানি না আসলে কারা এটা করেছে। এআইয়ের যে ব্যাপারটা চলছে, এই ব্যাপারটাও আমার মনে হয় যে কোনো একটা পক্ষ বা বিপক্ষ তারা বুঝেশুনেই এটা করছে। আমি এখনও সোশাল মিডিয়ায় অনেক কমেন্টস পাই মেসেজ পাই, যেগুলো বুঝা যাচ্ছে যে জুলাই আন্দোলনের সরব ছিলাম দেখেই আমাকে এখন এরকম কথা শুনতে হচ্ছে। বাট ইটস ওকে। আমি জানি যে সত্য এক সময় সামনে আসবে। আমি আসলে কেমন বা আমি আসলে কী নিয়ে কথা বলেছি, কী পক্ষ বিপক্ষে কথা বলেছি। এগুলো তো মানুষ জানে। নতুন করে ক্লিয়ার করার কিছু নেই। এটা সত্য যে যারা এটার পক্ষে ছিল তাদের একটু হলেও সমস্যা একটু হলেও অবলিগেশন ফেস করতে হচ্ছে। আশা করি এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয় এটা সাময়িক বিষয়। এতটুকুই।”

বিনোদন জগতে চলতি বছর একের অধিক অপতথ্যের শিকার হয়েছেন এমন তারকাদের মধ্যে আছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহের আফরোজ শাওন, আজমেরী হক বাঁধন, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, বিদ্যা সিনহা সাহা মীম, তাসনিয়া ফারিণ, মাহিয়া মাহি, শবনম বুবলী, অপু বিশ্বাস, পরী মণি, নাজনীন নাহার নিহা, রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, মেহজাবীন চৌধুরী ও শবনম ফারিয়া। 

নারী এক্টিভিস্টদের জড়িয়ে ক্রমাগত অপপ্রচার 

দেশে গত বছর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময়ে আলোচিত এক নাম হয়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এই সংগঠন। সংগঠনটিকে জড়িয়ে পরবর্তীতে নিয়মিতই ভুয়া তথ্যের প্রচার লক্ষ্য করা গেছে। এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারী এক্টিভিস্টদের মধ্যে অন্তত আটজনকে জড়িয়ে চলতি বছর ৩২টি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ফারজানা সিথিকে জড়িয়েই ছড়িয়েছে ১৫টি ভুয়া ভিডিও। এর মধ্যে একটি বাদে বাকিগুলো ছিল এআই এবং ডিপফেক পদ্ধতির ব্যবহারে তৈরি ভিডিও ফুটেজ। এছাড়া, প্লাটফর্মটির সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমাকে জড়িয়ে সাতটি অপতথ্য ছড়িয়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনকারী নাফসিন মেহনাজকে জড়িয়ে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার মধ্যে তিনটিতেই ছিল নাফসিনের আপত্তিকর দৃশ্যের দাবি। এর বাইরে সামিয়া মাসুদ মম, তিলোত্তমা ইতি, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, এথিনা তাবাসসুম মীম ও আনিকা তাসনিমকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে।

Claim collage: Rumor Scanner

এসবের বাইরে এ বছর ভুয়া নাম ব্যবহার করে সমন্বয়কজুলাইযোদ্ধা পরিচয়ের মাধ্যমে ভিন্ন নারীর ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে অপপ্রচার দেখা গেছে হরহামেশাই। এমন ১৬টি ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ঘটনা ছড়ানো ছবি-ভিডিওর সাতটিই ছিল ভারতের, তিনটি ছিল ভিন্ন আরো তিন দেশের। বাকিগুলো বাংলাদেশেরই, তবে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার৷ এদের কেউই সমন্বয়ক নয়, এমনকি সম্পৃক্ত নয় রাজনীতির সাথেও। 

নারীরা কীভাবে সমন্বিত রাজনৈতিক অপপ্রচারের বলি হন তারও উদাহরণ দেখা গেছে এ বছরই। গত এপ্রিলে একদিনেই রুবাইয়া ইয়াসমিন নাম দিয়ে এক নারীকে কেন্দ্র করে তাকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অন্তত পাঁচটি কনটেন্ট ভাইরাল হয়। এসব কনটেন্টের অন্তত একটি ছিল আপত্তিকর। এই নারীকে সে সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেত্রী হিসেবেও প্রচার করে দেশে বর্তমানে সক্রিয় থাকা অন্য প্রায় সকল দলের কর্মী-সমর্থকরা। এমন সমন্বিত অপতথ্যের প্রচার বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরলই বলতে হয়। রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানতে পারে, এই নারীর নাম রুবাইয়া ইয়াসমিন নয় এবং এই নামে কোনো সমন্বয়কও নেই। যুথী নামের এই নারী কোনো রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত নন। 

ধর্ষণের অপতথ্যে নারী

বাংলাদেশে চলতি বছর নারীদের জড়িয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যগুলোর মধ্যে অন্তত ৪৪টি ঘটনায় ধর্ষণের বিষয় জড়িত ছিল। এসব অপতথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের কোনো আলামতই ছিল না। তবু ধর্ষণের ঘটনা হিসেবে দাবিগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ফেব্রুয়ারিতে দুইটি দাবি নজরে এসেছে রিউমর স্ক্যানারের, যার একটিতে দাবি করা হচ্ছিল যে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ববর্তী ৬৫ ঘন্টায় বাংলাদেশে ৭২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় মূল ধারার অন্তত দুইটি গণমাধ্যমকেও (জনকণ্ঠ, মানবকণ্ঠ) একই দাবি প্রচার করতে দেখা যায়। এমনকি কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও দাবিটি প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের সে সময়ের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত সময়সীমায় অন্তত আটটি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল, যা আলোচিত দাবি থেকে প্রায় আট গুণ কম। অন্য যে দাবিটি ছড়ায়, তাতে একটি অনলাইন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে প্রচার করা হয় যে, ৭৩ ঘন্টায় ১০০ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই দাবিরও কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

Data: Rumor Scanner

দেশে প্রচার হওয়া ধর্ষণ সংক্রান্ত অপতথ্যের প্রায় ২০ শতাংশ ঘটনা অনুসন্ধানের পর জানা যায় যে এমন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেইনি। বরং ভারতসহ অন্যান্য দেশের ঘটনাকে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হচ্ছিল। এছাড়া, প্রায় ১৪ শতাংশ অপতথ্যে ধর্ষণের পুরোনো সংবাদ, ভিডিও, ছবিকে চলতি বছরের বলে দাবি করা হয়েছে। 

দেশ ও দেশের গন্ডি পেরিয়ে ওপারের গণমাধ্যমেরও আছে দায়

গেল নয় মাসে নারীদের জড়িয়ে অপতথ্যের প্রচারের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক মূল ধারার গণমাধ্যমের নাম। ১৩টি ঘটনায় দেশের গণমাধ্যমগুলোয় নারীকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব ঘটনার প্রায় ৫৪ শতাংশই রাজনৈতিক। ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচন ইস্যুতে নারীদের জড়িয়ে যেমন ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল তেমনি রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নারী নেত্রীদের (শেখ হাসিনা, তাসনিম জারা, সামান্তা শারমিন) জড়িয়েও ভুয়া তথ্য প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো।

বাংলাদেশের নারীদের জড়িয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত একটি করে অপতথ্য প্রচার করেছে ভারতের মূল ধারার তিনটি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভি, এশিয়ানেট নিউজটিভি নাইন বাংলা। এসব অপতথ্যের কোনোটিতে মুসলিম নারীকে হিন্দু এবং মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধারের জন্য স্লোগান তোলা সংক্রান্ত দাবির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনোটিতে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দিতে এসে ভারতীয় ডাক্তারের হয়রানির শিকারের ভুয়া দাবির মাধ্যমে জাতিগত দ্বন্দ্ব তৈরির অপচেষ্টা ছিল।

সাম্প্রদায়িক অপতথ্যে দুই দেশ থেকেই জড়ানো হচ্ছে নারীদের

চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১৪২টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ (৫২টি) ঘটনায় নারীদের জড়ানো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলো সাধারণত বাংলাদেশ এবং ভারত এই দুই দেশ থেকেই ছড়ানো হয়। রিউমর স্ক্যানারের পর্যালোচনায় দেখা যায়, নারীদের জড়িয়ে ছড়ানো সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলোর প্রায় ৬৯ শতাংশই (৩৬টি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচার করা হয়েছে।

Image: AI & Data: Rumor Scanner

নারীদের জড়িয়ে এসব সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ৩১ শতাংশ ঘটনাতেই মুসলিম নারীকে হিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করে অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই কাজটি করেছে ভারতীয় পরিচয়ধারী এক্স এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলো। সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলোয় এমন কিছু ঘটনাও সামনে এসেছে যেগুলো বাংলাদেশেই ঘটেনি, অথচ দাবি করা হচ্ছিল এগুলো এদেশেরই ঘটনা। প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে ভারতের ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হচ্ছিল যেখানে নারীকেও জড়ানো হয়েছে। ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে সাম্প্রদায়িক আবহে প্রচারের একাধিক নজির পাওয়া গেছে। 

সাধারণ নারীরাও যখন অপতথ্যের লক্ষ্যবস্তু

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মেয়ের ছবি দাবিতে গত ফেব্রুয়ারিতে দুই দফায় আপত্তিকর দৃশ্য দাবির দুইটি ভুয়া কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি না হয়েও সরকারে থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য বা কথিত সদস্যদের নামে এমন প্রচারণা আরো একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদর সাথে দুই দফায় দুই ভিন্ন নারীর এআই ছবি এবং বিয়ের একটি ভুয়া ছবি প্রচার করা হয়েছে। 

শুধু সরকারে নয়, রাজনীতির ময়দানেও এমন উদাহরণ অহরহ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ প্রায় সব দলের ক্ষেত্রেই এমন অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। যেমন, শপিংমলে হাসনাত আবদুল্লাহর সাথে এক নারীর অন্তরঙ্গ মুহুর্তের দৃশ্য, বরিশালে বিএনপি নেতা নারীসহ আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীরের মেয়ের লন্ডনের বিলাসী জীবনযাপনের দৃশ্য, শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মোমবাতি হাতে ধানমন্ডি ৩২ এ শতবর্ষী জননী এমন সব দাবির প্রতিটিতেই ভারতের ঘটনাকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারের নজির পাওয়া গেছে। 

জুলাই আন্দোলনের শেষদিকে এসে গত বছরের (২০২৪) ০৪ আগস্টে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় ১৫ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাবি করা হয় নিহতদের তালিকায় একজন সন্তানসম্ভবা নারী পুলিশ সদস্যও ছিলেন। এই দাবির একজন নারী পুলিশের ছবিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের যাচাইয়ে দেখা যায়, সেদিন নিহতদের তালিকায় কোনো নারী পুলিশ সদস্যই ছিলেন না। আর যে নারীর ছবি প্রচার করা হচ্ছিল তিনি এনায়েতপুরে নয়, সে সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এই দাবিটি এ বছর ফের তিন দফায় প্রচার হয়েছে।

সম্প্রতি প্রথম সারির একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ পাঠিকা সারাহ মেহজাবিনের নাম-ছবি দিয়ে ফেসবুক ও এক্সে একাধিক ভুয়া আইডি-পেজের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। এসব অ্যাকাউন্টে সারাহর ছবি ব্যবহার করে নিয়মিত বিতর্কিত ও ভুয়া দাবি প্রচার করা হচ্ছিল। এর পেছনে মূল হোতা ছিলেন মো: শিলন রেজা বিশ্বাস নামে ঢাকার এক ব্যক্তি। আই ইউনিটের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ হয়েছে, থেমেছে অপপ্রচারও।

একইরকম বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক নানা গুজবের সাথে সাধারণ নারীদের জড়ানো হয়েছে, চালানো হয়েছে অপপ্রচার।

সচেতনতাই একমাত্র সমাধান? 

নারীদের আপত্তিকর কনটেন্ট ব্যবহার করে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে হেনস্তার ঘটনাগুলো চিন্তার কারণ হয়ে ওঠছে। এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তি নারীকে নয়, নারী পরিচয়কেই হেয় করছে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা, সম্মান ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে রাজনীতি এবং বিনোদন ক্ষেত্রে নারীরা অপতথ্যের সমন্বিত ক্যাম্পেইনের শিকার হচ্ছেন। হেনস্তার এসব ঘটনা সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের জীবনে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে দেখা গেছে, এসব অপতথ্যের উৎস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুয়া আইডি বা ফেক পেজ, যেগুলোর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। এআই কনটেন্টের মাধ্যমে ভুয়া ছবি-ভিডিওর প্রচারও উদ্বিগ্ন করে তুলছে ভুক্তভোগীদের। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বিষয়টিকে খুবই অনৈতিক হিসেবে দেখছেন। রিউমর স্ক্যানারের সাথে আলাপকালে তিনি বলছিলেন, “তথ্যকে ম্যানিপুলেট করার এই যে প্রবণতা এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, দুশ্চিন্তায় ফেলছে, মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যাচ্ছে। জীবনযাত্রাকেও বদলে দিচ্ছে। এটার কারণে যে প্রভাব এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। কারণ দুর্ঘটনার মতো এটার সরাসরি প্রভাবটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। দুর্ঘটনা যেটা চোখের সামনে দেখা যায়, এটাকে সেভাবে দেখা যায় না। কারণ এটা মানুষকে মনের দিক দিয়ে প্রভাবিত করছে। সুতরাং আমরা এটার ব্যাপারে খুব একটা সিরিয়াস না। আমরা ধরে নিচ্ছি, চলছে চলতে থাকুক। কিন্তু এটা তো এভাবে চলতে পারে না। এটাকে কঠোরভাবে দেখা উচিত। আইনের দিক দিয়েও এটির বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত।”

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নারীদের জড়িয়ে প্রচার হওয়া অপতথ্যগুলোয় এআই দিয়ে তৈরি বা সম্পাদিত কনটেন্টের মাধ্যমেই অপপ্রচার বেশি হচ্ছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার যুগে এসে এআই এর এই ধরণের অপব্যবহার রোধ করা চ্যালেন্জ বলে মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নে অনেকটা দ্বিমতের সুরে এই শিক্ষিকা বলছিলেন, “এআই সহজলভ্যই হওয়া উচিত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই বিষয়টা হওয়া ভালো।” তানিয়ার মতে, এআই এর যে অপব্যবহার তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে একটা নীতিমালা হওয়া উচিত এবং তা মানুষকে জানানো উচিত। “এই নীতিমালার মাধ্যমে আপনি এভাবে এটাকে ব্যবহার করবেন এবং না করলে পরে আপনার জন্য শাস্তি এটা, এই ধরণের বিষয়গুলো থাকবে।” তানিয়া হক মনে করেন, সবকিছুর আগে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। অপতথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি যে অনৈতিক এবং একই সাথে অপরাধও তা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে মানুষকেই।

কাজের পদ্ধতি 

এই পরিসংখ্যানটি প্রকাশের নিমিত্তে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ক্যাটাগরিভিত্তিক তথ্যগুলো নথিভুক্ত করে পর্যালোচনা করার পর প্রাপ্ত ফলাফল বিভিন্ন উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার। 

Feature Design: Md. Shahajalal Mia

ইসরায়েলী বাহিনীর হাতে শহিদুল আলমের আটকের দৃশ্য দাবিতে এআই ছবি প্রচার 

আজ (৮ অক্টোবর) ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের সামাজিক মাধ্যমে জানায়, গাজা অভিমুখী স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বহনকারী ‘কনশেনস’ (Conscience) নামের নৌবহরকে ইসরায়েলি বাহিনী অবৈধভাবে আটক, আক্রমণ ও জোরপূর্বক অপহরণ করেছে।

নৌবহরটিতে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমও ছিলেন। একই দিনে প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম জানান, “ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী আমাদের জাহাজে উঠেছে এবং আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহিদুল আলমের গ্রেফতারের দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে সৈকতের ধারে পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় শহিদুল আলমের মতো দেখতে এক ব্যক্তিকে দেখা যায়, যাকে চারজন অস্ত্র হাতে সামরিক পোশাক পরিহিত সৈন্য ঘিরে রেখেছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই ছবিসহ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন: রূপালী বাংলাদেশ, এনটিভি, এটিএন নিউজ (ইউটিউব)।

এক্সে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি শহিদুল আলমের আটকের দৃশ্যের নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ছবিটির অস্তিত্ব বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। ‘কনশেনস’ বহরের আয়োজক ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) এক্স অ্যাকাউন্টে বহরটির সম্পর্কে বিভিন্ন আপডেট প্রকাশ করছে। তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আটক যাত্রীদের পূর্ব-ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়া, তাদের ইউটিউব চ্যানেলের লাইভ স্ট্রিমে যাত্রীদের পূর্ব-ধারণকৃত ভিডিওবার্তাও প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে, ওই ছবিটি তারা প্রকাশ করেনি।

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজার সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা নতুন নৌবহরটিকে তার লক্ষ্য পূরণে বাধা দেওয়া হয়েছে। নৌযানগুলো এবং যাত্রীদের আটক করে আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়েছে। এক এক্স পোস্টে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সকল যাত্রী নিরাপদে আছেন এবং তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এই প্রতিবেদনে কিংবা ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এমন কোনো ছবি প্রকাশ করেনি।

পরবর্তীতে আলোচিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ছবিতে অস্ত্র হাতে সামরিক পোশাক পরিহিত চারজন সৈন্যের চেহারায়, শারীরিক গঠন ও উচ্চতায় উল্লেখযোগ্য মিল লক্ষ্য করা যায়। তাদের দাঁড়ানোর ভঙ্গিতেও মিল দেখা যায়।

গত ৪ অক্টোবর, শহিদুল আলম নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে কনশাস বহরের যাত্রীদের সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করেন। ছবিতে তিনি কালো পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ওই পাঞ্জাবিতে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের ছবি আঁকা রয়েছে। তবে আলোচিত ছবিতে তার পোশাকটি পাঞ্জাবি নয়। এ ধরনের পোশাকের পরিবর্তন সাধারণত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি তৈরি করার সময় দেখা যায়। এছাড়া, ছবিতে আবু সাঈদের ছবির অবস্থানও উল্টো, যা ৪ অক্টোবর প্রকাশিত ছবির তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায়, ছবিটি এআই ব্যবহার করে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।

Screenshot: Hive Moderation. 

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহিদুল আলমের আটক হওয়া দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Hive Moderation. 

হত্যার পর গলার রশি বেঁধে টানার এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের

সম্প্রতি, ‘মানুষ হত্যা করে গলায় রশি লাগিয়ে উৎসব করে এইটাও দেখার বাকি ছিল বাংলাদেশ সাজানো-গোছানো দেশটা আজ কোথায় গিয়ে দাড়াইছে’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। গত ২০ জুলাই ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কাকসা থানা সংলগ্ন একটি বাজারে বাজার করতে যান সেখানকার বাসিন্দা তরুণ দত্ত। তখন তার মোবাইল ফোনটি চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে দুই নাবালক। সেই নাবালক দুইজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। সেই গণধোলাইয়ের দৃশ্য এটি। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটিতে ‘দত্ত জুয়েলার্স’ নামক একটি দোকানের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। এই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গুগল ম্যাপে উক্ত দোকানটি অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison By Rumor Scanner 

এরপর প্রাপ্ত সূত্রগুলো ধরে অনুসন্ধানে ‘Panagarh 7Din’ নামক একটি স্থানীয় সংবাদ ভিত্তিক ফেসবুক পেজে গত ২০ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা ফুটেজের সাথেও আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার (২০ জুলাই) কাঁকসা হাঁটে দুই নাবালক মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। যার মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন নাবালকেরা সেই ব্যক্তি অভিযুক্ত দুই নাবালককে ধরি দিয়ে বেঁধে হাঁটের পাশে থাকা খেলার মাঠে নিয়ে যান। মারধরও করা হয় তাদের। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। 

একই দিনে একই পেজ থেকে প্রচারিত আরেকটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, তরুণ দত্ত নামের এক ব্যক্তির মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন ওই দুই নাবালক। পরে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের মারধর করে। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি ভারতের এবং যাদের বেঁধে রাখা হয়েছিল তাদের হত্যা করা হয়নি, তারা বেঁচে আছেন।

সুতরাং, ভারতের ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে বাংলাদেশে হত্যার পর গলার রশি বেঁধে টানা হচ্ছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান দাবিতে নরেন্দ্র মোদীর জাপান সফরের পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘ব্রেকিং নিউজ ভারত সরকারের সামরিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লির আহমাবাদে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে দিল্লি থেকে সরিয়ে আহমাবাদে আনা হয়েছে।।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি শেখ হাসিনাকে বহনকারী কোনো বিমানের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে জি ৭ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাপানে পৌঁছানোর ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের গুজরাট ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম DeshGujarat এর ইউটিউব চ্যানেলে  ২০২৩ সালের ১৯ মে ‘PM Narendra Modi arrives at Hiroshima Airport for G7 Summit in Japan’ শিরোনাম প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রায় ২১ মিনিট দৈর্ঘ্যের মূল ভিডিওটির ০৩:৫৬ থেকে ০৬:১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে অবতরণ করে থাকা একটি বিমানের দিকে বোর্ডিং সিঁড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

একই বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Voice of America এর বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ মে ‘জি ৭ সম্মেলনে যোগ দিতে জাপানে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ভিডিওচিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়। 

এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোর ক্যাপশনে শেখ হাসিনাকে ‘আহমাবাদ’ নামক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আহমাবাদ নামে ভারতে কোনো এলাকা বা স্থান নেই। তবে ‘আহমেদাবাদ’ নামে ভারতের গুজরাট রাজ্যে একটি শহর রয়েছে৷ শেখ হাসিনাকে উক্ত স্থানে নিয়ে যাওয়া হলে তা নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে সংবাদ প্রচারিত হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট সূত্রে আলোচিত দাবিতে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ভারতে রাজনৈতিক আলোচনার জন্য শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ভিডিও দাবিতে জি ৭ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাপান সফরের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ডিপফেক ভিডিও ব্যবহার করে শেখ হাসিনার নামে ভুয়া ফেসবুক পেজের প্রচারণা

২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ‘Sheikh Hasina मैं सिर्फ़ भक्त हूँ’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে পেজটিকে শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ বলে দাবি করা হয়। ফেসবুক পেজটি দেখুন: এখানে

ভিডিওটিতে শেখ হাসিনার মুখ দেখা যায় এবং তার কণ্ঠে ইংরেজিতে বলতে শোনা যায়, “আমার ফেসবুক পেজ ফলো করুন। আমি এই পেজটি আপনার জন্য খুলেছি। এটি সবার সঙ্গে শেয়ার করুন। সবাইকে ফলো করতে বলুন, আরও আপডেটের জন্য ফেসবুক পেজটি ফলো করুন।” ভিডিওটিতে দর্শকদের পেজটি অনুসরণ করতে এবং অন্যদেরও ফলো করার জন্য উৎসাহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া, আওয়ামী লীগের দলীয় আপডেট পেতে পেজের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানানো হয়। ভিডিওটি দেখুন: এখানে

প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত পেজটির অনুসারী সংখ্যা এক লাখ সতেরো হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আলোচিত ভিডিওটি দুই লাখ সাতচল্লিশ হাজার বার দেখা হয়েছে। এতে সাড়ে এগারো হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে, পাঁচ শত সাতটি মন্তব্য পড়েছে এবং দুই হাজার আটশো বার শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ফেসবুক পেজটি শেখ হাসিনার নয় এবং তার নামে কোনো অফিসিয়াল ফেসবুক পেজও নেই। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে শেখ হাসিনার চেহারা ও কণ্ঠস্বর নকল করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিওর মাধ্যমে ওই পেজকে শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।

বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে অনুসন্ধানে, শেখ হাসিনার নামে কোনো অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০২৪ সালের নভেম্বরে একটি এক্স অ্যাকাউন্টের বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম আওয়ামী লীগের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করলে দলটি নিশ্চিত করে যে, শেখ হাসিনার ফেসবুক, এক্স বা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে কোনো অফিসিয়াল হ্যান্ডেল নেই।

যদি সম্প্রতি শেখ হাসিনা ফেসবুকে নতুন কোনো অ্যাকাউন্ট বা পেজ খুলে থাকতেন, তবে তা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর কথা ছিল। এর আগে, ২০২৪ সালের মার্চে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন একটি নতুন ফেসবুক পেজ খুলে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করলে তা আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও শেয়ার করা হয়েছিল। তবে এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

আলোচিত ফেসবুক পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পেজটি বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল এটি তৈরি করা হয়। এরপর ৮ মে পেজের নাম পরিবর্তন করে ‘Sheikh Hasina শেখ হাসিনার অনুসারীরা’ রাখা হয়। সর্বশেষ ৭ জুলাই বর্তমান নাম ‘Sheikh Hasina मैं सिर्फ़ भक्त हूँ’ দেওয়া হয়, যার হিন্দি অংশের বাংলা অনুবাদ দাঁড়ায় “আমি শুধু ভক্ত”।

Screenshot: Facebook. 

এছাড়া, গত ২৯ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ভিডিওবার্তা প্রচারের দাবিতে ওই পেজ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার ২৮ সেপ্টেম্বর একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদনে জানায়, এই ভিডিওটি এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত ভিডিওটিতেও একাধিক এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওতে শেখ হাসিনার কথা বলার সময় তার ঠোঁট, মুখ ও গলার নড়াচড়ায় অস্বাভাবিকতা ও অপ্রাকৃতিকতা লক্ষ্য করা গেছে, যা সাধারণত এআই-তৈরি ভিডিওতে দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে রিউমর স্ক্যানার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’-এর ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

সুতরাং, শেখ হাসিনা ফেসবুক পেজ খুলে অনুসারীদের ফলো করার আহ্বান জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বলে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Deepfake-o-meter.

শেখ হাসিনার কথিত মামলায় ফ্রান্সে পিনাকী ভট্টাচার্যকে আটকের দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি, ‘শেখ হাসিনার মামলায় ফ্রান্সে আটক পিনাকী ভট্টাচার্য’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করেননি এবং পিনাকীকে আটকও করা হয়নি, বরং পুরোনো ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে জোড়া লাগিয়ে এই ভিত্তিহীন দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে চ্যানেল ২৪ এবং সময় টিভির লোগো সম্বলিত দুইটি ভিডিও দেখা যায়। এরপর সাংবাদিক মাসুদ কামালের বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও দেখা যায়।

উক্ত সূত্রগুলো ধরে অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ফুটেজের মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ২৮ এপ্রিল ঢাকার রমনা মডেল থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায়, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য ও ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল পুলিশ। সেই ঘটনার সংবাদ এটি। 

এছাড়া, সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ফুটেজের সাথে প্রচারিত ভিডিওর ফুটেজে থাকা একাধিক ব্যক্তির বক্তব্যের ফুটেজের মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসের আদালতে পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তৎকালীন ফ্রান্সে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। সেই ঘটনার নিউজ এটি। 

এরপর প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে IBTV USA নামক একটি ইউটিউব গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত মাসুদ কামালের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা মাসুদ কামালের বক্তব্যের অংশের মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওতে মাসুদ কামাল পিনাকী ভট্টাচার্যকে নিয়ে সমালোচনা করেন। তবে, ফ্রান্সে পিনাকী ভট্টাচার্য আটক হয়েছেন- এমন কোনো দাবি মাসুদ কামাল তার বক্তব্যে করেননি। 

এদিকে, পিনাকী ভট্টাচার্যের ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল (০৭ অক্টোবর) একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়; যেটিতে পিনাকী ভট্টাচার্যকে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। 

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, অনুসন্ধানে ফ্রান্সে পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার মামলা দায়েরের কোনো প্রমাণও মেলেনি।

সুতরাং, শেখ হাসিনার কথিত মামলায় ফ্রান্সে পিনাকী ভট্টাচার্য আটক হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

শেখ হাসিনার জন্মদিনে সাকিবের শুভেচ্ছা ইস্যুতে অপতথ্যের প্রবাহ  

0

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তৎকালীন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের মতো সমানভাবে সমালোচিত হয়ে আসছেন। সরকার পতনের সময়ে কানাডায় ছিলেন সাকিব। এরপর আর দেশে ফেরেননি এই ক্রিকেটার। পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিনে ‘শুভ জন্মদিন আপা’ লিখে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও পেজে পোস্ট করেন সাকিব। এই পোস্টের পর সাকিবকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক পোস্টে উল্লেখ করেন, “একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। But i was right. End of the discussion.” সাকিব পাল্টা পোস্ট দিয়ে বলেন, “যাক শেষমেষ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার  জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না! ফিরবো হয়তো কোন দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ।” এরপর আসিফও আরেকটি পোস্ট করেন। লিখেন, “ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামিলীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। You know who. যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফাইনানশিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, Face it.” 

Collage: Rumor Scanner 

আসিফ-সাকিবের পাল্টাপাল্টি এসব পোস্টের সূত্রেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের ফেরা বা না ফেরার বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিক অপতথ্যের প্রচারও দেখা যাচ্ছে৷ 

দাবি ১

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে ক্রিকেটার তামিম ইকবাল “আমার জীবন থাকতে সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ হতে দেবো না। আমি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হলে সাকিব আল হাসানকে দেশে ফেরাবো এবং সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দলে ফেরাবো।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।  

টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

একই ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার বার। দেখুন এখানে।  

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

অনুসন্ধানে তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ০১ সেপ্টেম্বর ‘I will be unavailable for T20 World Cup’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিও থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকা ও অনুশীলনের ঘাটতির জন্য তামিম বিশ্বকাপ দলে থাকতে চাননি। 

অর্থাৎ, চার বছর আগের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে। 

দাবি ২

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা  “আমরা বেঈমান জাতি। সাকিবকে নিষিদ্ধ করলে খুব খারাপ হবে।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।  

টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষাধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

একই ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার বার। দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

অনুসন্ধানে Maher Hossen Jakir নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২০১৭ সালের ০৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিপিএল চলাকালীন সে সময় চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচে দলটির ক্রিকেটার শুভাশিস রায়ের সঙ্গে মাঠে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে রংপুর রাইডার্সের মাশরাফির। এই ঘটনার খবর প্রকাশের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার শিকার হন শুভাশিস। তা দেখেই মাশরাফি এই ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে তিনি সমর্থকদের এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ জানান। 

অর্থাৎ, প্রায় আট বছর পূর্বের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে। 

দাবি ৩

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম “সাকিব আল হাসানকে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করলে আমরা চুপ থাকবো না।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।  

টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় তিন হাজারের অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক বার। দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

অনুসন্ধানে তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ০৫ মে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সে সময় করোনা ভাইরাসের কারণে সব ক্রিকেটারই গৃহবন্দি হয়ে ছিলেন৷ আর সেসময়টাকে কাজে লাগাতেই একটু খোশ গল্পের মেজাজে ছিলেন তামিম। এজন্য লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে সতীর্থ ক্রিকেটারদের সাথে আড্ডা দেন সে সময়। মুশফিকের সাথে করা এই ভিডিও সে সময়েরই। এটিকে সম্পাদনার মাধ্যমে তামিমের ফ্রেমের অংশ বাদ দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচার হচ্ছে।

অর্থাৎ, প্রায় আট বছর পূর্বের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।

দাবি ৪

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ “সাকিবের জন্য রাজপথে নামবো। তবু সাকিবকে নিষিদ্ধ হতে দেবো না।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।  

টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজারের অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজারের অধিক বার। দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

অনুসন্ধানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ০৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিনের মানুষদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ১২ এপ্রিল মার্চ ফর গাজা কর্মসূচীতে অংশ নিতে সেদিন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রকাশ করা ভিডিওতে ‘মার্চ ফর গাজায়’ অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। 

অর্থাৎ, প্রায় ছয় মাস পূর্বের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।

দাবি ৫

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন “সাকিব তোমাদের মতো হওয়ায় ভাইসা আসে নাই, সে শৗঘ্রই রাজা হয়েই ফিরবে।” বলে মন্তব্য কেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।  

ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে। 

একই দাবির ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে। 

একই দাবির থ্রেডস পোস্ট দেখুন এখানে।

একই দাবির টিকটক ভিডিও দেখুন এখানে। টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার বার। 

Screenshot: Facebook 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, নাজমুল হাসান পাপন এমন কোনো মন্তব্য করেননি। 

অনুসন্ধানে এ সংক্রান্ত ভাইরাল একটি ফেসবুক পোস্টের কমেন্টের ঘরে ব্লগস্পটের ফ্রি ডোমেইনে তৈরি একটি সাইটের লিংক পাওয়া যায়। লিংকে প্রবেশ করে এতে পাপনের কথিত মন্তব্যটির আরো কিছুটা দীর্ঘ ভার্সন পাওয়া যায়। তবে পাপন কবে বা কোথায় এই মন্তব্য করেছেন তার কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। গত বছরের আগস্ট পরবর্তী সময়ে নাজমুল হাসান পাপনকে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। সাকিব বিষয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার পরবর্তী সময়েও পাপন প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। 

অর্থাৎ, নাজমুল হাসান পাপনের নামে ভুয়া মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে। 

দাবি ৬

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া লাইভে এসে সাকিব আল হাসানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে।

টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৮১ হাজারেরও অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার বার। দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার৷  

অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এখন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিও থেকে জানা যায়, তার মন্ত্রণালয় থেকে বিসিবি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন তিনি। সাকিব ইস্যুর সূত্রপাত তারও দুই দিন পরে৷  

অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।

দাবি ৭

সাকিব ইস্যুর জেরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে।

ইউটিউবে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

একই দাবির ভিডিও টিকটকে দুই অ্যাকাউন্ট দেখা হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ৮৪ হাজারেরও অধিক বার। দেখুন এখানে, এখানে। 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার৷  

অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিও থেকে জানা যায়, সে সময় রাতভর যৌথবাহিনীর অভিযান চলছিল এবং একটি স্পটে আসিফ মাহমুদ এসে উপস্থিত হন। এটি তখনকার ভিডিও।   

অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।

দাবি ৮

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন “সাকিব বাংলাদেশকে যে যায়গাই নিয়ে গেছে সামনে ১০০ বছরেও কেউ তা পারবে না” বলে বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হচ্ছে।  

ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে। 

একই দাবির ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে। 

Screenshot: Facebook 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন এমন কোনো মন্তব্য করেননি। 

অনুসন্ধানে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের ফেসবুক প্রোফাইল, পেজ এবং তার অনুষ্ঠান ‘ঠিকানায় খালেদ মহিউদ্দিন’ এর ফেসবুক পেজে তাকে এ বিষয়ে সম্প্রতি কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। তাছাড়া, জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের সাথে আলোচিত দাবির ফটোকার্ডের পারিপার্শ্বিক মিল লক্ষ করা গেলেও পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে হুবহু একই ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের নামে ভুয়া মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে।

দাবি ৯

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে আইসিসির চেয়ারম্যান জয় শাহ “নিউজ দেখা যাচ্ছে যে সাকিবকে নিষিদ্ধ করতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আইসিসির নিয়ম ছাড়া সাকিবকে নিষিদ্ধ করলে আইসিসি বিসিবিকেই নিষিদ্ধ করে দিবে।” বলে মন্তব্য করে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।  

টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। ডিপফেক প্রযুক্তিতে তৈরি। 

অনুসন্ধানে সম্প্রতি জয় শাহকে সাকিব প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় ক্রিকেটার স্মৃতি মান্দানার এক্স প্রোফাইলের পোস্ট এবং ভারতের গণমাধ্যমে ২০২৪ সালের আগস্টের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত জয় শাহের ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে এবং প্রাপ্ত ছবিতে জয় শাহকে একই পোশাকে, একই স্থানে এবং একই ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখা যায়। 

অর্থাৎ, অন্তত ২০২৪ সাল থেকে অনলাইনে থাকা একটি ছবি ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তিতে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

দাবি ১০

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফকে উদ্দেশ্য করে সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা

 “তু’ই সাকিবকে নি’ষি’দ্ধ করার কে?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে একটি দাবি প্রচার হচ্ছে।  

ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে। 

ইউটিউবে একই দাবির ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় সাত হাজারের অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।

Screenshot: Facebook 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা এমন কোনো মন্তব্য করেননি। 

অনুসন্ধানে সাংবাদিক মাশরাফির ফেসবুক পেজে তাকে এ বিষয়ে সম্প্রতি কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। অনুসন্ধানে এ সংক্রান্ত ভাইরাল একটি ফেসবুক পোস্টের কমেন্টের ঘরে ব্লগস্পটের ফ্রি ডোমেইনে তৈরি একটি সাইটের লিংক পাওয়া যায়। লিংকে প্রবেশ করে এতে মাশরাফির কথিত মন্তব্যটির আরো কিছুটা দীর্ঘ ভার্সন পাওয়া যায়। তবে মাশরাফি কবে বা কোথায় এই মন্তব্য করেছেন তার কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাকিব বিষয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার পরবর্তী সময়ে মাশরাফির বক্তব্য সম্বলিত কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। 

অর্থাৎ, সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার নামে ভুয়া মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে।

দাবি ১১

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান “শাকিব আল হাসান বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, বাচ্চা উপদেষ্টা কি বল্ল এটা গোনার টাইম নাই, দুইদিন পর লাথি মেরে চেয়ার থেকে নামাবো।” বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হচ্ছে।  

টিকটকে উক্ত দাবির ভিডিও দেখুন এখানে। টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বার।

ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে।

Screenshot: Facebook

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ফজলুর রহমান এমন কোনো মন্তব্য করেননি। 

অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে ফজলুর রহমানকে সাকিব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ফজলুর রহমানের নামে চালু থাকা একটি পেজে গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একই দাবির একটি পোস্টের সন্ধান মেলে। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন সূত্রে জানা যায়, এটি সৌদি আরব থেকে পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি ফজলুর রহমান এক বক্তব্যে জানান, তার AMI TV নামের একটি ফেসবুক পেজ আছে যেটা তার বিশ্বস্ত লোকেরা পরিচালনা করেন আর একটি পেজ আছে Advocate Fazlur Rahman নামে। এছাড়া বাকি সব পেজ ভুয়া।  

অর্থাৎ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের নামে ভুয়া পেজ থেকে কথিত মন্তব্যটি ছড়ানো হয়েছে।

দাবি ১২

সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল “সাকিবকে নিষিদ্ধ করলে ভয়াবহ হবে! যারা সাকিবকে নিয়ে কথা বলে তারা ওর নখের যোগ্য” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।

টিকটকে ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বার। দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার৷  

অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এখন টিভির ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ০৬ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও এবং অন্যান্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৬ জুলাই আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন তামিম ইকবাল। তার প্রেক্ষিতে আশরাফুল ভিডিওর মাধ্যমে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন।

অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।

সুতরাং, সাকিব প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচিত ইস্যুতে সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ক্রিকেট প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিদের জড়িয়ে অন্তত ১২টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এসব অপতথ্য সম্বলিত ভিডিও দেখা হয়েছে অন্তত ১.২ মিলিয়ন বার। এসব অপতথ্যের প্রচারে ব্যবহার হয়েছে পুরোনো ও ভিন্ন প্রসঙ্গের ভিডিও, ভুয়া মন্তব্য এবং সাম্প্রতিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও। 

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তারেক আহমেদের নামে একাধিক সম্পাদিত ছবি প্রচার 

0

সম্প্রতি ‘শিবিরের পিআর টিমের এক্টিভিস্ট তারেক এর বিবর্তন দেখুন। ছিলো লীগের লুঙ্গির নিচে। বিদেশে স্থায়ি হওয়ার জন‍্য এলজিটিভিটি প্রমোট করে। এখন সে পুরোপুরি শিবির, সোশ্যাল মিডিয়ায় শিবিরের পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরী, গু জ ব রটানো, ক্যাম্পেইন করাদের একজন এই তারেক।’ ক্যাপশনে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর তারেক আহমেদের একাধিক ছবি ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তারেক আহমেদের নামে প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয়। মূলত, তারেক আহমেদের ভিন্ন দুটি ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ছবি যাচাই- ১

তারেক আহমেদের ফেসবুক প্রোফাইলে গত ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটির আংশিক মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

‘REAL MADRID TILL WE DIE আপনাদের ছবিও কমেন্ট করেন……’ ক্যাপশনের উক্ত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ছবিতে তারেক আহমেদ রিয়াল মাদ্রিদ সিএফ ফুটবল ক্লাবের লোগো সম্বলিত একটি চাদরের ওপরে একই ক্লাবের জার্সি পরিহিত অবস্থায় রয়েছেন৷ উক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবিতে তারেক আহমেদের মুখমণ্ডল, হাতের আঙুলে ‘ভি চিহ্ন’ প্রদর্শন ও ক্যামেরা ধরার ধরণের মিল থাকলেও আলোচিত ছবিতে পেছনের চাদর ও তার পরনের টি-শার্টটি ভিন্ন। 

এই ছবিটির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Hive Moderation এর ওয়েবসাইটে ছবিটি যাচাই করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৭৬ শতাংশ।

Screenshot: Hive Moderation Website 

অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন একটি ছবিকে সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।

ছবি যাচাই- ২

তারেক আহমেদের ফেসবুক প্রোফাইলে গত ০৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটির আংশিক মিল রয়েছে। 

‘From River to the Sea- Palest*ne will be free.’ ক্যাপশনের উক্ত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ছবিতে তারেক আহমেদ হালকা নীল শার্ট পরিহিত অবস্থায় একটি লাঠিতে বাঁধা ফিলিস্তিনের পতাকা ডান হাতে ধরে রয়েছেন৷ উক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবিতে তারেক আহমেদের মুখমণ্ডল, হাতের অবস্থান ও পতাকা ধরার ধরণের মিল থাকলেও আলোচিত ছবিতে তার পোশাক, লাঠিতে বাঁধা পতাকা ও তার পেছনের পারিপার্শ্বিকতা ভিন্ন।

Comparison: Rumor Scanner

উভয় ছবি পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায়, তারেক আহমেদের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ধরা ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে; যেখানে তার পরনের পোশাকের স্থলে একটি ভিন্ন শার্ট যুক্ত করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনের পতাকার স্থলে এলজিবিটিকিউ কম্যুনিটির পতাকা যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, মূল ছবিতে থাকা তার পেছনের দালান-রাস্তার স্থলে একটি পার্কের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, তারেক আহমেদের ফেসবুক প্রোফাইলে গত ০৫ অক্টোবর প্রকাশিত একটি পোস্টে আলোচিত ছবি ও মূল ছবিগুলো যুক্ত করে উল্লেখ করা হয় যে আলোচিত ছবিগুলো সম্পাদিত। 

সুতরাং, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তারেক আহমেদের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র

‘পাকিস্তানের কাছে ম্যাচ বিক্রি করেছে বাংলাদেশ’ বলে মন্তব্য করেননি ভিরাট কোহলি

গত ২৫ সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের দেওয়া ১৩৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ১১ রানে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ হারার বিষয়ে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলি বলেছেন, “পাকিস্তানের কাছে ম্যাচ বিক্রি করে হেরেছে বাংলাদেশ। ইজি জেতা ম্যাচ কেউ আবার এভাবে হারে?”

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের কাছে ম্যাচ বিক্রি করেছে বাংলাদেশ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি ভিরাট কোহলি বরং, ২০২০ সালে কোহলি ও তামিম ইকবালের একটি লাইভ ভিডিওর ফুটেজ ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত।ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ভিরাট কোহলির একটা ভিডিও দেখিয়ে বলা হয়, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ হারার বিষয়ে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলি বলেছেন, “পাকিস্তানের কাছে ম্যাচ বিক্রি করে হেরেছে বাংলাদেশ। ইজি জেতা ম্যাচ কেউ আবার এভাবে হারে?”

কোহলির উক্ত ভিডিও ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফুটেজটি তামিম ইকবালের ইউটিউব চ্যানেল ‘Tamim Iqbal’-এ ২০২০ সালের ১৮ মে ‘#TI28 Tamim Iqbal Live with Virat Kohli’ শিরোনামে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও এর ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড পরবর্তী সময় থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে করোনাকালীন সময়ে নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য কিছু শিথিলতা বিষয়ে আলোচনার সময় ভিরাট কোহলি এরূপ মন্তব্য করেন।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, ভিডিওটি থেকে জানা যায়, মূলত করোনাকালীন সময় তামিম ইকবাল কোহলিকে নিয়ে তার ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত লাইভ ভিডিওটি প্রচার করেন। লাইভে তারা সেসময়ের করোনা পরিস্থিতি এবং ক্রিকেটের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। যার সাথে আলোচিত দাবির কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবির সপক্ষে মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলি ‘পাকিস্তানের কাছে ম্যাচ বিক্রি করেছে বাংলাদেশ’ বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র