সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাশাপাশি দুইটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবির আব্দুল আদিল খান নামের পুরুষটি ২০২৩ সালে বিয়ে করেন। যে নারীকে তিনি বিয়ে করেন তিনি নিজের নাম নন্দিনী মণ্ডল থেকে পরিবর্তন করে জারা ইসলাম রাখেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অনেক হিন্দু তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তিনি শোনেননি।
পোস্টে দাবি করা হয়, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আব্দুল তার লালসা চরিতার্থ করেছে দুই বছর ধরে, এই মেয়েটিকে সব দিক দিয়ে ব্যবহার করেছে, এবং এখন তাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। নীচের ফটোতে তার বর্তমান অবস্থা দেখুন। পোস্টে পাশাপাশি দুইটি ছবি দিয়ে প্রথমটি ২০২৩ সালের (যেখানে ছেলে ও মেয়েকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে) এবং দ্বিতীয়টি ২০২৫ সালের (যেখানে মেয়েটির মুখ জলসানো অবস্থায় দেখা যাচ্ছে)।

উক্ত দাবির এক্স পোস্ট দেখুন এখানে।
এক্সে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টটিই দেখা হয়েছে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক বার।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে উল্লিখিত পুরুষের নাম আব্দুল আদিল খান নয় এবং নারীটির নামও নন্দিনী মণ্ডল বা জারা ইসলাম নয়। প্রকৃতপক্ষে, অভিনেতা তুহিন চৌধুরী ও অভিনেত্রী জ্যোতি ইসলামের নাটকের পোস্টার ও শ্যুটিংয়ের দৃশ্যের ফুটেজ ব্যবহার করে ভুয়া দাবটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিগুলোর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার। প্রথম ছবিটি রিভার্স সার্চে ছোট পর্দার অভিনেত্রী জ্যোতি ইসলাম ও অভিনেতা তুহিন চৌধুরীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত পোস্টে সংযুক্ত একটি ইউটিউব ভিডিওর থাম্বনেইলে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি একটি নাটকের, নাম বিধবা বউ। এই নাটকে অভিনয় করেছেন জ্যোতি ইসলাম ও তুহিন চৌধুরী। নাটকটি সেদিনই ইউটিউবে মুক্তি পায়৷
অর্থাৎ, পুরুষটির নাম আব্দুল আদিল খান এবং মেয়েটির নাম নন্দিনী মণ্ডল বা জারা ইসলাম বলে যে দাবি করা হয়েছে তা সঠিক নয়। আর ছবিটিও ২০২৩ সালের নয়৷
পরবর্তীতে জ্যোতির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১ অক্টোবরের একটি ভিডিওর ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে ছড়ানো দ্বিতীয় ছবিটির মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বাংলা নাটক, শ্যুটিং এ জাতীয় হ্যাশট্যাগ দেওয়া রয়েছে। জ্যোতি কমেন্টেও লিখেছেন যে ‘আমি নুসরাত বলছি’ নামের একটি নাটকের শ্যুটিংয়ের দৃশ্য এটি।

পরবর্তীতে জ্যোতির শেয়ার করা আরেকটি পোস্টে নাটকটির একটি পোস্টার পাওয়া যায়, যেখানে তার মুখে একই দৃশ্য দেখা যায়। নাটকটি বেয়ন্ড ফিল্মসের পরিবেশনায় ইউটিউবে মুক্তি পাবে বলে জানানো হয়। বেয়ন্ড ফিল্মসের ফেসবুক পেজ সূত্রে জানা যায়, নাটকটি ০১ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ৩টায় তাদের ইউটিউব চ্যানেল মুক্তি পাবে। সে অনুযায়ী নাটকটি ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে।
অর্থাৎ, দ্বিতীয় ছবিটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়।
জ্যোতি ইসলাম পূর্বে কখনো ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন কিনা বা পূর্বে (২০২৩ সাল বা তার আগে) তার নাম নন্দিনী মণ্ডল ছিল কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধানে জ্যোতি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটি ২০১৬ সালে খোলার পর নাম পরিবর্তনের প্রমাণ মেলেনি। ২০২২ সালেও একই নামেই অ্যাকাউন্টটি পরিচালিত হতে দেখা যায়। পেজটি ২০২১ সালে এই নামেই খোলা হয়। পরবর্তীতে আর নাম পরিবর্তন করা হয়নি।
সুতরাং, নাটকের পোস্টার ও শুটিংয়ের মেকআপের দৃশ্যের ফুটেজকে কথিত লাভ জিহাদ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jouty Islam: Facebook Post
- Tuhin Chowdhury: Facebook Post
- Jouty Islam: Facebook Video





