উত্তর কোরিয়ায় ব্যর্থ আত্মহত্যা প্রচেষ্টাকারীদের মৃত্যুদন্ড হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় 

সম্প্রতি গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ‘গোপনে আত্মহত্যা আগেই নিষিদ্ধ ছিলো উত্তর কোরিয়ায়। সেখানে এবার এক নতুন মাত্রা যুক্ত করলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। জানা গেছে, আত্মহত্যার চেষ্টাকারী যদি কোনোভাবে বেঁচে যান তাহলে তার মরতে হবে কঠোর শাস্তিতে। সেই শাস্তিও হচ্ছে মৃত্যুর শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড।’

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন: এটিএন নিউজ, মাই টিভি, নিউজ২৪, জনকণ্ঠ, ফেস দ্যা পিপল, ঢাকা প্রকাশ, টাইম টেলিভিশন

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

গণমাধ্যম ছাড়াও নানা ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তর কোরিয়ায় ব্যর্থ আত্মহত্যা প্রচেষ্টাকারীদের মৃত্যুদন্ড হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘রেডিও ফ্রি এশিয়া’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোর তুলনা করলে বেশ মিল পাওয়া যায়। যেমন: দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, আত্মহত্যার পরিসংখ্যান, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তার বক্তব্য। ‘রেডিও ফ্রি এশিয়া’র উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আত্মহত্যা প্রতিরোধে গোপন নির্দেশ জারি করেছেন।’ তবে, প্রতিবেদনে আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলে মৃত্যুদন্ডের কোনো উল্লেখ করা হয়নি। উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রে পরবর্তীতে ভারত, যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশের গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয় যে উত্তর কোরিয়ায় আত্মহত্যার প্রচেষ্টা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলে মৃত্যুদন্ডের দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, রেডিও ফ্রি এশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘রয়টার্স’ এ ২০২৩ সালের ৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘রয়টার্স স্বতন্ত্রভাবে রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদনটি যাচাই করতে পারেনি।’

এছাড়াও, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে এমন কোনো মানবাধিকার সাক্ষ্য বা রাষ্ট্রীয় নীতির ঘোষণা পাওয়া যায়নি, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে কেবল আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে অনলাইনে থাকা নির্ভরযোগ্য সূত্রে অনূদিত উত্তর কোরিয়ার ফৌজদারি আইনের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের উত্তর কোরিয়ার ফৌজদারি আইন পাওয়া যায়। তবে উক্ত আইনে আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, উত্তর কোরিয়ায় ব্যর্থ আত্মহত্যা প্রচেষ্টাকারীদের মৃত্যুদন্ড হওয়ার দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img