Home Blog Page 6

জামায়াত-শিবির প্রসঙ্গে শফিকুল আলমের মন্তব্য দাবিতে গণমাধ্যমের সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার

0

সম্প্রতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের করা পৃথক পৃথক দুটি মন্তব্য দাবিতে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজ এবং একাত্তর টেলিভিশনের লোগো সংবলিত দুটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ডিবিসি নিউজের লোগো সংবলিত  ফটোকার্ডে শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামী নিয়ে ‘জামায়াত শিবিরের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে না সরকার’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করা হয়। এমন দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

অপরদিকে একাত্তর টেলিভিশনের লোগো সংবলিত  ফটোকার্ডটিতে দাবি করা হয় প্রেস সচিব শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামী নিয়ে ‘জামায়াত শিবিরের কার্যক্রম ভালো লাগে না: শফিকুল আলম’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। একান্তর টেলিভিশনের লোগো সংবলিত  ফটোকার্ডটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রসঙ্গে আলোচিত মন্তব্যগুলো করেননি। এছাড়াও ডিবিসি নিউজ কিংবা একাত্তর টেলিভিশন আলোচিত মন্তব্য সংবলিত  কোনো ফটোকার্ডও প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যম দুটিতে প্রকাশিত ভিন্ন ভিন্ন ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যম আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ড যাচাই

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ‘ডিবিসি নিউজ’ এর লোগো এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘৫ই অক্টোবর, ২৫’ উল্লেখ রয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Photocard Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে ডিবিসি নিউজের লোগো এবং শফিকুল আলমের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘আওয়ামী লীগের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে না সরকার’ শিরোনামে ডিবিসি নিউজের উক্ত ফটোকার্ডটির ‘আওয়ামী লীগের’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘জামায়াত শিবিরের’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও একই মন্তব্য করেছেন কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হলে গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

একাত্তর টিভির ফটোকার্ড যাচাই

উক্ত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে একাত্তর টিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ‘৩ অক্টোবর ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে, একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে গত ৩ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Photocard Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে একাত্তর টিভির লোগো এবং শফিকুল আলমের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘বিদেশ ভ্রমণ ভালো লাগে না: শফিকুল আলম’ শিরোনামে একাত্তর টিভির উক্ত ফটোকার্ডটির ‘বিদেশ ভ্রমণ’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘জামায়াত শিবিরের কার্যক্রম’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে এমন কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা জানতে অনুসন্ধান করা হলে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, ডিবিসি নিউজ ও একাত্তর টেলিভিশনের দুটি ফটোকার্ড সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।

সম্পাদিত ফটোকার্ডগুলো Bangladesh Fan Club নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। পেজটি ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘শেখ ফজলে শামস পরশ ফ্যান ক্লাব’ নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে পেজটির নাম Sheikh Parash Fan Club- এ পরিবর্তন করা হলেও ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট পেজটির নাম Bangladesh Fan Club করা হয়। 

Screenshot: Facebook 

উক্ত পেজটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পেজটিতে সাধারণত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে প্রচার করা হয়ে থাকে। এর আগেও উক্ত পেজটি থেকে সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার করা হলে সেসময় সম্পাদিত ফটোকার্ডগুলো যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মন্তব্য দাবিতে গণমাধ্যমের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

  • DBC News Facebook Post
  • Ekattor Television Facebook Post 
  • Rumor Scanner’s Analysis

বিএনপি নেতা কর্তৃক সাংবাদিককে মারধরের দৃশ্য দাবিতে নেপালের আন্দোলনের ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, চাঁদা গ্রহণে বাধা দেওয়ার কারণে বিএনপির এক নেতা প্রকাশ্যে একজন সাংবাদিককে মারধর করছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে বুম (মাইক্রোফোনযুক্ত দণ্ড) হাতে থাকা একজন ব্যক্তিকে আরেকজন ব্যক্তির কাছ থেকে চড় খেতে দেখা যায়।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত সেপ্টেম্বরে নেপালের জেন-জি আন্দোলনের সময় ভারতীয় গণমাধ্যম রিপাবলিক নিউজের একজন সাংবাদিককে আন্দোলনকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অভিযোগে নেপালের আন্দোলনকারীরা মারধর করেন। এটি সেই ঘটনারই দৃশ্য।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মারধরের শিকার ব্যক্তির হাতে থাকা বুমে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক ভারত-এর লোগো রয়েছে।

বিষয়টির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘lafdavlog’ নামের একটি ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে একই দৃশ্যসংবলিত ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, নেপালের জেন-জি আন্দোলনের সময় রিপাবলিক ভারত চ্যানেলের সাংবাদিক রাঘবেন্দ্র পাণ্ডে মারধরের শিকার হয়েছেন। ভিডিওটি সেই ঘটনারই অংশ।

Comparison: Rumor Scanner. 

গত ১২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় টেলিভিশন ভারত এক্সপ্রেস-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, নেপালের জেন-জি আন্দোলনের সময় ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনা বেড়েছে। ওই দিন রিপাবলিক নিউজের সাংবাদিক রাঘবেন্দ্র পাণ্ডেকে এক বিক্ষোভকারী চড় মারেন এবং আইএএনএস-এর ক্যামেরাপার্সন মান পঙ্কজের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ভারতীয় গণমাধ্যম তাদের আন্দোলন বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে। এর আগের দিন এক নারী সাংবাদিককেও প্রতিবেদন করতে বাধা দেওয়া হয়।

রাঘবেন্দ্র পাণ্ডের নাম ও কর্মস্থলের সূত্র ধরে তার এক্স (পূর্বে টুইটার) প্রোফাইল শনাক্ত করা যায়। সেখানে থাকা ছবিগুলোর সঙ্গে মারধরের ভিডিওতে দেখা ব্যক্তির চেহারা তুলনা করলে মিল লক্ষ্য করা যায়।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং এর সাথে বিএনপিরও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জেনারেশন জি-র তরুণদের নেতৃত্বে একটি আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সুশীলা কার্কি।

সুতরাং, ভারতের এক সাংবাদিককে মারধরের ভিডিওকে বিএনপির নেতা কর্তৃক সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণের শিকার হয়ে লাইভে এসে সহায়তা প্রার্থনার দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, গাইবান্ধায় একজন স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে একজন নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাহায্য প্রার্থনা করতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকার ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে সাহায্য প্রার্থনা করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া নারী পারিবারিক কলহের জেরে নিজেই নিজের মাথায় পানির গ্লাস দিয়ে আঘাত করে আহত হন।

যেহেতু আলোচিত দাবিটি খুবই স্পর্শকাতর সেহেতু এমন কিছু ঘটে থাকলে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রচার করার কথা। কিন্তু দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে গাইবান্ধায় কোনো স্কুল শিক্ষিকার ধর্ষণের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে সহায়তা প্রার্থনা করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আলী তানজুম সরকার নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। ১৫ সেকেন্ডের উক্ত লাইভের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner

আলী তানজুম সরকারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে প্রচারিত ১৩ সেকেন্ডের আরেকটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে শুধু নারীকে ‘ও আল্লাহ’ বলতে শোনা যায়।

এছাড়া, ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে প্রচারিত আরও একটি লাইভ ভিডিওতে এই নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম! কালকে আপনারা সবাই দেখছেন যে একটা ভিডিও আপলোড হয়ে গেছিলো। তো পারিবারিক একটা ব্যাপারে আমি আমার মাথায় আঘাত করাতে, হঠাৎ আমি জানি না কীভাবে ভিডিওটা আপলোড হয়ে গেছে। আমি কিছু বলতেও পারি নাই৷ তো এখন আমি ভালো আছি। যদি কেউ ভুলভ্রান্তি ভাবে নিয়া থাকেন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন৷ আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।’

পরবর্তীতে ‘Channel A1’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আহত নারীর নাম নুসরাত তানজুম। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ভুক্তভোগী নারী এবং নারীর স্বামী বক্তব্য থেকে জানা যায়, পারিবারিক কলহের কারণেই উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে এরইমধ্যে ভুক্তভোগী নারী শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর নারী গাইবান্ধার কোনো শিক্ষিকা নন এবং ধর্ষণের শিকারও হননি। পারিবারিক কলহের জেরেই ওই নারী নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে রক্তাক্ত হয়েছেন।

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ভিডিওতে থাকা নারী অর্থাৎ নুসরাত তানজুমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে নুসরাত তানজুমের স্বামী রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ধর্ষণ বা নির্যাতনের বিষয়টি মিথ্যা। আসলে পারিবারিক কারণে সে (নুসরাত তানজুম) রাগের মাথায় পানি খাওয়ার গ্লাস দিয়ে নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে বসে। এতে রক্তাক্ত হয়ে যায়।’

সুতরাং, গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকার ধর্ষণের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে প্রশাসনের সহায়তা প্রার্থনা করার দাবিতে পারিবারিক কলহের জেরে নিজেই নিজেকে আহত করার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Ali Tanzom Sorkar- Facebook Live (1,2,3)
  • Channel A1- Report 
  • Nusrat Tanzom’s Husband- Statement

ভারতের সেনাপ্রধানের সাথে জামায়াত নেতা তাহেরের বৈঠক দাবিতে এআই ছবি ব্যবহার করে গণমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার 

0

সম্প্রতি, ‘নির্বাচন নিয়ে ভারতের সেনাপ্রধানের সাথে জামাতের নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এর বৈঠক আজকে রাত ৯.০০টায়’ দাবিতে যমুনা টেলিভিশনের লোগো সংবলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর ও জামায়াতের ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে জড়িয়ে যমুনা টেলিভিশন এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেন। এমনকি অন্যকোনো গণমাধ্যমও এসংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ছবি ব্যবহার করে যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টেলিভিশনের লোগো এবং প্রকাশের তারিখ ০৪ অক্টোবর, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে গত ০৪ অক্টোবর প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করেও উক্ত শিরোনাম সংবলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবি সংবলিত কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি দেশিয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।

এছাড়া, পর্যবেক্ষণে আলোচিত দাবির ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া উক্ত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবি ফ্রেমের সাথেও যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের ছবির ফ্রেমের অমিল রয়েছে।

Photocard Comparison By Rumor Scanner 

অর্থাৎ, যমুনা টিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, এর আগে সেনাবাহিনীর প্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সাথে জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের উক্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেটিকে এআই ছবি হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ‘নির্বাচন নিয়ে ভারতের সেনাপ্রধানের সাথে জামাতের নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এর বৈঠক আজকে রাত ৯.০০টায়’ শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে যমুনা টেলিভিশনের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র 

  • Rumor Scanner’s own analysis

ঋতুপর্ণা চাকমার নামে পরিচালিত ফ্যান পেজের পোস্টকে ঋতুপর্ণার মন্তব্য দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের যে অবস্থা,ভাবতেছি ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলতে হবে’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ‘Team Ritu Porna’ নামক ফেসবুক পেজের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উদ্দেশ্য করে ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ঋতুপর্ণা চাকমার নাম ব্যবহার করে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজের পোস্টকে তার আসল মন্তব্য হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত স্ক্রিনশটে থাকা ‘Team Ritu Porna’ নামটির সূত্র ধরে এই নামে একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত পেজে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঋতুপর্ণা চাকমার একটি ছবি প্রকাশ করা হয়, যেটির ক্যাপশন ছিলো ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের যে অবস্থা,ভাবতেছি ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলতে হবে..🇧🇩🏏🫤’। উল্লেখিত ছবি ও ক্যাপশনের সাথে ঋতুপর্ণা চাকমার মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটের মিল রয়েছে। 

Screenshot: Facebook 

উল্লেখিত পেজটির এবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি একটি ‘ফ্যান পেজ’ যা ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার ভক্তদের উদ্দেশ্য করে পরিচালনা করা হয়। 

এছাড়া, ২০২৫ সালের ১৫ মে চালু হওয়া পেজটির ইউআরএলেও (https://www.facebook.com/profile.php?id=61576321320174) ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার নাম নেই।

পরবর্তীতে, ঋতুপর্ণা চাকমার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার এমন কোনো মন্তব্যের তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার নামে পরিচালিত ফ্যান পেজের পোস্টকে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। জুম্ম ছাত্র-জনতার সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে খাগড়াছড়িতে অন্তত ৩ জন নিহতও হন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘সেনাবাহিনী ও বিজিবির কারণে খাগড়াছড়ির মানুষের জীবন দুর্বিষহ। তারা এখন প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছে।’ এছাড়াও, ভিডিওতে লেখা হয়েছে, ‘ভোর রাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির লোক’।

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে ভোর রাত থেকে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের।

উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এর লোগো দেখা যায়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি ১৩ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ১২ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। এছাড়া, চ্যানেল২৪ও আলোচিত দাবিতে কোনো সংবাদ বা ভিডিও প্রচার করেনি।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এর লোগো পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে ‘চ্যানেল২৪’ এর ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেলওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে প্রদর্শিত মানুষ, মানুষের অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়।

Screenshot of Claimed Video

এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।

Collage: Rumor Scanner/DeepFake-O-Meter

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘AVSRDD’, ‘LIPINC’ ও ‘TALL’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি ভুয়া বা এআই তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৯.৯ শতাংশ, ১০০ শতাংশ ও ৯৯.৪ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এর বিশ্লেষণমতে আলোচিত ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫.১ শতাংশ। 

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এ প্রচারিত সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবি করে অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করে একাধিক গণমাধ্যমের নামে সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার 

0

সম্প্রতি ‘প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্বাস করা ভুল ছিল: নাহিদ’ শিরোনামে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আরটিভি, ‘প্রধান উপদেষ্টা আখের গুছিয়েছেন, সেফ এক্সিটের বিষয়ে ভাবছেন: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে কালের কন্ঠ এবং ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রতারণা করেছে: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে একাত্তর টিভির ডিজাইন সংবলিত তিনটি পৃথক ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

এসব ফটোকার্ডে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত এবং তার ছবি যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া, ‘পিএস সফিক সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন: নাহিদ’ শিরোনামে ডিবিসি নিউজের ডিজাইন সংবলিত  একটি ফটোকার্ডও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত আরটিভির ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফেসবুকে প্রচারিত কালের কন্ঠের ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ফেসবুকে প্রচারিত একাত্তর টিভির ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ফেসবুকে প্রচারিত ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আলোচিত চারটি ফটোকার্ডে উল্লিখিত মন্তব্য করেননি। এছাড়া, আরটিভি, কালের কন্ঠ, একাত্তর টিভি ও ডিবিসি নিউজ এরূপ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, এসব গণমাধ্যমের ভিন্ন চারটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

আরটিভির ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে আরটিভির লোগো রয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, আরটিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির একটি অংশের ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

তবে, আরটিভির ফেসবুক পেজে গত ০৪  অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে আরটিভির লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘কয়েকজন উপদেষ্টাকে বিশ্বাষ করা ভুল ছিল: নাহিদ’ শিরোনামে আরটিভির উক্ত ফটোকার্ডটির ‘কয়েকজন’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘প্রধান’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

আরটিভির উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘কয়েকজন উপদেষ্টাকে বিশ্বাস করা সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, আরটিভির লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

কালের কণ্ঠের ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালের কন্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৫ অক্টোবর ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে কালের কন্ঠের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, কালের কন্ঠের প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির একটি অংশের ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

তবে, কালের কন্ঠের ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে কালের কন্ঠের লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘অনেক উপদেষ্টা আখের গুছিয়েছেন, সেফ এক্সিটের বিষয়ে ভাবছেন: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে কালের কন্ঠের উক্ত ফটোকার্ডটির ‘অনেক’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘প্রধান’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

কালের কন্ঠের উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলার সমর্থনই তাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে।’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, কালের কন্ঠের লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

একাত্তর টিভির ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে একাত্তর টিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৪ অক্টোবর ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে গত ০৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে একাত্তর টিভির লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘কয়েকজন উপদেষ্টা প্রতারণা করেছে: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে একাত্তর টিভির উক্ত ফটোকার্ডটির ‘কয়েকজন’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘প্রধান’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

একাত্তর টিভির উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘উপদেষ্টা পরিষদের অনেককেই বিশ্বাস করাটা ছিলো অনেক বড় ভুল। তাদের প্রতি আস্থা রেখে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেইসব উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।’ নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, একাত্তর টিভির লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ‘ডিবিসি নিউজ’ এর লোগো এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘৫ই অক্টোবর, ২৫’ উল্লেখ রয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে গত ০৫  অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে ডিবিসি নিউজের লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘অনেক উপদেষ্টা সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন: নাহিদ’ শিরোনামে ডিবিসি নিউজের উক্ত ফটোকার্ডটির ‘অনেক উপদেষ্টা’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘পিএস সফিক’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

ডিবিসি নিউজের উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বা লিয়াজোঁ স্থাপন করেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন সাবেক উপদেষ্টা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি মন্তব্য করেছেন, এই উপদেষ্টারা এখন নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে ভাবছেন।সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, ডিবিসি নিউজের লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে নাহিদ ইসলামের নামে একাধিক গণমাধ্যমের নামে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র

ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে বানোয়াট মন্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘Tulip Rizwana Siddiq’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্টের বরাতে দাবি করা হচ্ছে পোস্টটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক দিয়েছেন। পোস্ট অনুযায়ী দাবি করা হচ্ছে টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, ‘তদের বাপের খেলা শেষ সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ’।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘Tulip Rizwana Siddiq’ নামক এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের নয়, বরং এটি তার নামে পরিচালিত একটি  ভুয়া অ্যাকাউন্ট। 

অনুসন্ধানে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ‘Tulip Rizwana Siddiq’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এর স্ক্রিনশট যুক্ত থাকতে দেখা যায়। উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘Tulip Rizwana Siddiq’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। ‘Tulip Rizwana Siddiq’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এই অ্যাকাউন্টটি থেকে গত ০১ অক্টোবর সন্ধ্যা ০৬ টা ১১ মিনিটে আলোচিত পোস্টটি করা হয়েছে। 

এছাড়া, উক্ত অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত ২৩ জুন অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। 

Screenshot: Facebook 

এদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। ২০১৫ সালে তার বাংলাদেশে আসার তথ্য পাওয়া গেলেও বিগত কয়েকবছরে আসার তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে, টিউলিপ সিদ্দিকের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে টিউলিপ সিদ্দিকের এক্স (সাবেক টুইটার) ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের লিংক দেওয়া রয়েছে। কিন্তু, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজের কোন লিংক দেওয়া নেই। এমনকি অনুসন্ধানে টিউলিপ সিদ্দিকের কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজের সন্ধান পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, ‘Tulip Rizwana Siddiq’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া।

সুতরাং, ‘তদের বাপের খেলা শেষ সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ’ বলে টিউলিপ সিদ্দিক ফেসবুক পোস্ট করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

সেনাবাহিনীর ভয়ে মানুষের খাগড়াছড়ি ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। জুম্ম ছাত্র-জনতার সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে খাগড়াছড়িতে অন্তত ৩ জন নিহতও হন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘খাগড়াছড়ির মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা পরিত্রাণ চায় এই পরিস্থিতি থেকে।’

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি সেনাবাহিনীর ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের খাগড়াছড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি ৪৬ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৪৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সেনাবাহিনীর ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের খাগড়াছড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।

অনুসন্ধানে কোন গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে প্রদর্শিত মানুষ, মানুষের অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়।

Screenshot of Claimed Video

এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।

Collage : Rumor Scanner/DeepFake-O-Meter, Hive Moderation

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘AVSRDD’ ও ‘TALL’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি এআই তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এর বিশ্লেষণমতে আলোচিত ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯২.৭ শতাংশ। 

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে সেনাবাহিনীর ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের খাগড়াছড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবি করে অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

অস্ত্রসহ পাহাড়ি আটক দাবিতে নাটোরের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার 

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের বিচার দাবিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নগরীতে আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় পুলিশ ও স্থানীয় বাঙালিদের সাথে সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। উক্ত সহিংসতার ঘটনার জন্য ইউপিডিএফের উসকানিকেও দায়ী করা হয়। এরপর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেতিবাচক প্রচারণা করতে দেখা যায়। এর প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি, পাহাড়িদের একটি দল ব্যাগ ভর্তি অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি পাহাড়িদের একটি দল অস্ত্রসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া ঘটনার নয়। এছাড়াও ভিডিওটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর  কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, নাটোরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্র ও খেলনা পিস্তলসহ ৬ জনকে আটকের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে রাজ্য নেই তবুও রাজা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১ জুন নাটোরে খেলনা পি’স্ত’ল দিয়ে ছিন*তা’ইয়ের চেষ্টা, সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৪ ডা’কা’ত শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর ২৮ সেকেন্ড থেকে শুরু হওয়া ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতেই একই সেনাসদস্যকে নীল টি-শার্ট পরিহিত একই ব্যক্তিকে থাপ্পড় মারতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া চারজন ব্যক্তি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। এসময় তাদের কাছে একটি খেলনা পিস্তল ছিল বলে পোস্টটিতে ‍উল্লেখ করা হয়। ভিডিওটিতেও নীল টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তিকে একটি পিস্তল ফেলে দিতে দেখা যায়। যা পরবর্তীতে ওই সেনাসদস্য উদ্ধার করেন।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে একইদিন (২১ জুন) উক্ত ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jagonews24

প্রতিবেদনটিতেও সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া একই ব্যক্তিদের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ২০ জুন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কালাকান্দর স্লুইসগেট এলাকা থেকে রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ওই চারজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতদলের দুই প্রধানকেও আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয় বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনটি থেকে আরো জানা যায়, আটক ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে ডাকাত দলের প্রধান আব্দুর রাজ্জাক (৩৮) ও মৃত কামাল হোসেনের ছেলে কাওসার আহম্মেদ (২৫), আব্দুল আজিজের ছেলে বিপ্লব হোসেন (২৪), মোবারক আলীর পুত্র মবিদুল ইসলাম (২১), হরদমা গ্রামের রওশন আলীর ছেলে মনিরুল (২৪) ও কালিনগর পাধোয়া গ্রামের আব্দুল সালামের পুত্র সুরুজ আলী (২১)।

অর্থাৎ, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ-ই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নয়। এছাড়াও এ ঘটনায় একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলোর কোথাও উক্ত ঘটনার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়নি। এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, নাটোরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ডাকাত দলের সদস্যদের আটক হওয়ার ভিডিওকে অস্ত্রসহ পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোক আটক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র