রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, এটি গত বছরের আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের ভিডিও।
অনুসন্ধানে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ০৪ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ঢাকার বিএমএম আদালতে ভাঙচুরের দৃশ্য এটি। ভিডিওর ক্যাপশনের পাশে কোটা মুভমেন্ট ট্যাগও পরিলক্ষিত হয়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে আন্দোলনকারীরা ঢাকার নিম্ন আদালতে হামলা করে। এসময় আন্দোলনকারীরা হাজতখানার সামনে থাকা একটি প্রিজনভ্যান, কয়েকটি পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন। এছাড়া সিএমএম আদালতের পেছনের গেটের নিচতলার সিঁড়ির রেলিং ভাঙচুর করেন।
সুতরাং, গত বছরের আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী কর্তৃক ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “সাতক্ষীরায় যুবলীগ নেতাকে না পেয়ে, তার মাকে ঘরের ভিতরে রেখেই আগুন দিলো বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। আহা নির্যাতন, আর কত নির্যাতন সহায় কবরে সাধারণ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি সাতক্ষীরা কোনো যুবলীগ নেতার মাকে ঘরের মধ্যে রেখে আগুন দেওয়ারও ঘটনা নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০২২ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে ‘মো: জুবায়ের’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২২ সালের ৩ এপ্রিলে “নোয়াখালী বসুরহাট মাকে ঘরে রেখে আগুন ধরিয়ে দিল” ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানে ‘মো: শাহাদত হোসাইন’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একই বছরের ৯ জানুয়ারি প্রচারিত ভিন্ন একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতেও একজন ব্যক্তিকে আহাজারি করতে দেখা যায় এবং প্রচারিত ভিডিওটির মতো একই কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলেন, ঘরের ভেতর তার মাকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “ধিক্কার জানাই একরকম নিষ্ঠুরতার। ইউপি নির্বাচন কে কেন্দ্র করে ভোলায় মাকে ঘরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মাকে বাঁচাতে ছেলে ফেসবুক লাইভে এসে আহাজারি করছে…. ভিডিওটি সংগ্রহ”।
এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ফেস দ্য পিপল-নিউজ’ এর ফেসবুক পেজে আহাজারি করা উক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রচারিত একটি ফেসবুক লাইভ পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “#মাকে_ঘরে_রেখে_আগুন । আছেন সেই রাসেল। ভোলায় নির্বাচনী সহিংসতায় রাসেলের মা”কে ঘরে রেখে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা । সেই ভয়ানক দৃশ্য ও তার কারণ জানাচ্ছেন আর্তনাদ করা সেই সন্তান রাসেল।”
ভিডিওটিতে উক্ত ব্যক্তিকে নিজের ডাক নাম রাসেল হোসাইন বলতে শোনা যায় এবং তিনি জানান ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি রাজনৈতিক ও নির্বাচনী কারণে তার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, প্রচারিত আগুনের ভিডিওটি ও ব্যাকগ্রাউন্ডের আহাজারি একই ঘটনার কিনা ধারণকৃত কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া, ২০২২ সালে ভিডিওটি নোয়াখালী ও ভোলার পৃথক পৃথক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে এটি ঠিক কোন স্থানে ধারণ করা হয়েছে তা রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সুতরাং, অন্তত ২০২২ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান আগুনের ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে একজন যুবলীগ নেতার মাকে ঘরের ভিতর রেখে বিএনপি-জামায়েত আগুন দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
মেঘ বিস্ফোরণ, প্রবল বর্ষণ ও ভারতীয় বাঁধ খুলে দেওয়ায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও পাঞ্জাবসহ বেশকিছু অঞ্চল ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়েছে। যাতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, “ভারতের দেওয়া বাঁধ উড়িয়ে দিলো পাকিস্তান”।
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
গণমাধ্যম ছাড়াও নানা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ভারতের দেওয়া বাঁধ পাকিস্তান উড়িয়ে দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে উড়িয়ে দেওয়া বাঁধটি পাকিস্তানেরই ছিল। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাকিস্তান তাদের নিজেদের ভূখণ্ডের পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিরাবাদ বাঁধের তীররক্ষা বাঁধটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে বলতে শোনা যায়, “পাঞ্জাবের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ অবশেষে সেই কাজটিই করলো যার হুমকি তারা আগেই দিয়েছিল। চেনাব নদের কাদিরাবাদ বাঁধের পাশের তীররক্ষা বাঁধ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে পাকিস্তান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ এর ওয়েবসাইটে ‘Over 210,000 evacuated as floodwaters rise across Punjab following India’s water release’ শিরোনামে গত ২৭ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির এক পর্যায়ে বলা হয়, “বুধবার (২৭ আগস্ট) চেনাব নদীর কাদিরাবাদ বাঁধে পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে একটি তীররক্ষা বাঁধ ধ্বংস করেছে। “কাঠামো রক্ষা করার জন্য আমরা ডান পাশের তীররক্ষা বাঁধ কেটে দিয়েছি, যাতে পানির প্রবাহ কমে আসে,” বলেন পাঞ্জাব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র মজহার হুসেইন।” (অনূদিত)
এছাড়া, পাকিস্তান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৭ আগস্টে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “এএফপি জানিয়েছে, বর্ষার অতিরিক্ত পানিতে ফুলে ওঠা কাদিরাবাদ বাঁধের পাশে একটি তীররক্ষা বাঁধ উড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চেনাব নদীর কাদিরাবাদ বাঁধে পানির স্তর বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে একটি তীররক্ষা বাঁধ ধ্বংস করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইকোনমিকস টাইমস’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৭ আগস্টে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভারতজুড়ে ভারী বৃষ্টির কারণে তিনটি নদী উপচে পড়ায় পাকিস্তান তীব্র বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে, যার ফলে পাঞ্জাব প্রদেশে ব্যাপকভাবে মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ কাদিরাবাদ বাঁধের একটি তীররক্ষা বাঁধ কেটে দিয়েছে।” (অনূদিত)
এ বিষয়ে ভারতীয় মূলধারার আরো একাধিক গণমাধ্যমসহ নানাদেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়। সেসব সংবাদেও বলা হয় কাদিরাবাদ বাঁধের তীররক্ষা বাঁধটি পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এবং সেসব সংবাদে পাকিস্তানকেই বাঁধটির কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়৷ কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেই বাঁধটি ভারতের বলে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
‘কাদিরাবাদ’ নামক এলাকাটির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে একাধিক ওয়েবসাইটের সূত্রে জানা যায়, কাদিরাবাদ হলো পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মান্দি বাহাউদ্দিন জেলার ফালিয়া তহসিলের চেনাব নদীর তীরবর্তী একটি গ্রাম।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কাদিরাবাদ বাঁধের তীররক্ষা বাঁধটির কর্তৃপক্ষ পাকিস্তান এবং এটি পাকিস্তানের তরফ থেকেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, ভারতের দেওয়া বাঁধ উড়িয়ে দিলো পাকিস্তান শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
গত ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশ দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার বার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মিছিলের এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, এটি ২০২৩ সালে ‘বিএনপি’র ভাংচুর, অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও সহিংস ঘটনার’ প্রতিবাদে হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমাবেশের ঘটনার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “S.A Rony” নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর “হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য প্রধানকালে।” প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উল্লিখিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে সরকারি বার্তা সংস্থা ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস)’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর “বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমাবেশ” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিএনপির ভাংচুর, অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা শহরের পৌর টাউন হল এবং জেলা পরিষদের সামনে আলাদাভাবে এই সমাবেশ করা হয়। শুরুতে পৌর টাউন হলের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী। পরে একটি প্রতিবাদ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদের সামনে গিয়ে পথসভায় মিলিত হয়।
সুতরাং, ২০২৩ সালে ‘বিএনপি’র ভাংচুর, অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমাবেশের ঘটনার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের মিছিলের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তকর।
গত ২৮ আগস্ট, “ঢাকায় রাতে অসংখ্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে ইউনুছ সরকার।গভীর রাতে রাস্তায় রাস্তায় চলছে সেনাবাহিনীর ব্যপক লাঠিচার্জ।” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত ২৮ আগস্ট রাতের নয় এবং ওই দিন ঢাকায় জনতার ওপর সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাতে উচ্চশব্দে বাইক চালানোর অভিযোগে কতিপয় ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর মারধরের ভিডিও দাবিতে অন্তত গত জুন মাস থেকে ইন্টারনেটে ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “সাইফুল ইসলাম শেখ সুমন” নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৫ সালের ১২ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি মধ্যরাতে উচ্চশব্দে বাইক চালানোর জন্য সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের ভিডিও।
সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত পোস্টেও (১,২,৩) ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়।
এছাড়া, একই তারিখে জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজে “রাস্তায় মাতাল যুবকদের শাস্তি দিল সেনাবাহিনী!’’ ক্যাপশনে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে গণমাধ্যমটিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং, অন্তত গত জুন মাস থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘28/08/25 আসামিকে ছাড়াতে পুলিশের উপর হামলা। কক্সবাজারে টেকনাফে পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাই করেছে। রাত ১০টার দিকে টেকনাফে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে আসামী ধরতে গিয়ে গুরুত্বর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দুই পুলিশ সদস্য।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, টেকনাফের ২০২২ সালের একটি পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নগর কক্সবাজার নামক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে আসামী ধরতে গিয়ে গুরুতর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দুই পুলিশ সদস্য।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফে পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিও দাবিতে ২০২২ সালের পুরোনো ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি “যদি শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গ্রামে ৫০ থেকে ৬০ জন শহীদ থাকার কথা। দেখা যায় একটা গ্রামে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাও নাই। চেক গুজবের গালগল্প এই দেশে আর চলবে না” শিরোনামে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে দেওয়া পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে কোনো পুলিশ সদস্য বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে এরূপ কোনো বক্তব্য প্রদান করলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।
এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে বক্তার পেছনে থাকা ব্যানারের বাংলা ভাষার শব্দগুলো অর্থপূর্ণ নয়। বক্তার সামনে থাকা গণমাধ্যমের বুমগুলোতে যেসব গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করা হয়েছে বাস্তবে সেসব গণমাধ্যমের লোগোর ডিজাইন এমন নয়।
Screenshot from Youtube
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৬.৯ শতাংশ।
Screenshot from DeepFake-o-meter by Rumor Scanner
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটির দৈর্ঘ ১৬ সেকেন্ড। অনুমান করা হচ্ছে, এই ভিডিওটি গুগলের অত্যাধুনিক এআই টুল Veo দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, যেটি ৮ সেকেন্ড সময়ের দীর্ঘ বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। ২টি আলাদা ভিডিও একত্রিত করে ১৬ সেকেন্ডের আলোচিত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি করা ভিডিওকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যার বিতর্ক নিয়ে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ২৯ আগস্ট জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নিজ দলের কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতির সময় গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর যৌথবাহিনীর লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এসময় নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর লাল বা মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তির সিঁড়িতে বসে থাকা একজনকে মারধরের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি নুরুল হক নুরকে মারার দৃশ্য হিসেবে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওতে লাল বা মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি যাকে পেটাচ্ছিলেন তিনি নুরুল হক নুর নন। টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তির হাতে মারধরের শিকার ব্যক্তি ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা আখতারুজ্জামান সম্রাট। এছাড়া, টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি পুলিশের সদস্য বলেও জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে, নুরুল হক নুরের নিজ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতির শুরু থেকে যৌথবাহিনীর হামলায় আহত হয়ে তার লুটিয়ে পড়ে হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন লাইভ ও ভিডিও ফুটেজ (১, ২, ৩, ৪) বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সিঁড়িতে বসা অবস্থায় লাল বা মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তির হাতে মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তি নুরুল হক নুর নন। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, যৌথবাহিনীর অতর্কিত লাঠিচার্জে আহত হয়ে নুরুল হক নুর রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তার দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী তার কাছে ছুটে আসেন এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর রিকশায় তুলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি থেকে হামলায় গুরুতর আহত হয়ে নুরুল হক নুরের লুটিয়ে পড়ার কোনো মুহূর্তেই তাকে সিঁড়িতে বসা অবস্থায় দেখা যায়নি।
সিঁড়িতে বসে থাকা ব্যক্তিকে লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তির মারধরের ৮ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ভিডিওটি খুবই অস্পষ্ট এবং ঘোলা হওয়ায় ওই ফুটেজ থেকে কাকে মারা হচ্ছে তা স্পষ্ট বোঝা যায় না। পরবর্তীতে একই স্থানে ওই ব্যক্তিকে মারধরের বিভিন্ন কোণের আরও একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে ওই ব্যক্তির মুখ স্পষ্ট দেখা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি নুরুল হক নুর নন।
অনুসন্ধানে, M TV নামের একটি ফেসবুক পেজে একই ঘটনায় ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে মারধরের শিকার ব্যক্তিকে শরীয়তপুর-২ আসনের গনঅধিকার মনোনীত প্রার্থী আক্তারুজ্জামান সম্রাট বলে উল্লেখ করা হয়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে
আক্তারুজ্জামান সম্রাটের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। উক্ত অ্যাকাউন্টের বায়োতে ব্যক্তির পরিচয় হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বলে উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির একাধিক পোস্ট পর্যবেক্ষণ করে M TV নামক ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওটি ছাড়াও একই ঘটনায় ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনেও মারধরের শিকার ব্যক্তি সম্রাট বলে উল্লেখ করা হয়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যে, মারধরের শিকার এই ব্যক্তি ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা আক্তারুজ্জামান সম্রাট।
এদিকে লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশ্ন জাগে। পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার দেখা যায় এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই ব্যক্তি হিসেবে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিম ওই ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ব্যক্তি পুলিশের কেউ কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করা হয়। আখতারুজ্জামান সম্রাটকে পেটানোর স্থানের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি এবং একজন পুলিশ মিলে সম্রাটকে বেধড়ক মারধর করছেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ভিডিওতে দেখা যায়, লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি পেছন থেকে ওই নারীকে মারার চেষ্টা করেন। এতে উপস্থিত সেনাসদস্য ও পুলিশ সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে জেরা করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি নিজেকে পুলিশ সদস্য দাবি করে পরিচয় দেন এবং পরে তাকে পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সংঘর্ষের ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ওই ব্যক্তি পুলিশের সাথে অভিযানে সক্রিয় ছিলেন। এনটিভির লাইভ ফুটেজে তাকে ‘পুলিশ’ লেখা হেলমেট পরে থাকতে দেখা যায়। আরেক ভিডিওতে দেখা যায় তিনি আরেক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মিলে অন্য একজনকে মারধর করছেন। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণে ওই ব্যক্তি সিভিল ড্রেসে থাকা পুলিশ সদস্যই হতে পারেন বলে প্রতীয়মান হয়।
৩০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘এটা তদন্ত করা হবে। আমি যতটুকু জানি উনি হচ্ছেন একজন পুলিশ কনস্টেবল, উনি ডিউটিতেই ছিলেন। বাকিটা আপনারা ডিএমপির কাছ থেকে জানতে পারবেন।’
মূলধারার গণমাধ্যম সমকাল নিশ্চিত করেছে, টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি রাজধানীর পল্টন থানার পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমান। তিনি ওই থানার ওসির গাড়িচালক।
উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটি বলা যায় যে, লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি একজন পুলিশ সদস্য এবং ভাইরাল ভিডিওতে তিনি যাকে মারধর করেছেন তিনি হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা আখতারুজ্জামান সম্রাট।
সুতরাং, প্রচারিত ভিডিওতে লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত যুবকের হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তি নুরুল হক নুর শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে উপজেলা যুবলীগ সভাপতিকে দিনে-দুপুরে অপহরণ করলো সন্ত্রাসীরা। ভিডিওতে সন্ত্রাসীদের দেখা গেলেও পুলিশ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
ভিডিওটিতে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে একজন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক একটি প্রাইভেট কারে তুলতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কোনো উপজেলার যুবলীগের নেতাকে অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত এপ্রিল মাসে ঢাকার উত্তরায় সংঘটিত একটি অপহরণের ঘটনার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। উত্তরায় অপহরণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Noman Ahmed নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন দুপুর ০২:৫০ ঘটিকায় উত্তরা সেক্টর ০৬ এর প্রধান সড়কে একটি প্রাইভেট কারে একজন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক তোলা হয়েছিল। তবে, দুঃখজনকভাবে গাড়িটির নম্বর প্লেট রেকর্ড করা যায়নি।
এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমের (১, ২) ওয়েবসাইটে গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে দিন দুপুরে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কালো মাস্ক পরা এক ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে একটি সাদা প্রাইভেট কারে তুলছেন দুই ব্যক্তি। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ব্যক্তিও যোগ দেয়। এরপর তারা ধাক্কা দিয়ে মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে ফেলেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের ওপর চড়া হয় ওই ব্যক্তিরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিশ্চিত হওয়া গেছে- ভিডিওটি উত্তরা পূর্ব থানা এলাকার। তবে কবেকার ঘটনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিভাগের সকল অফিসারকে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউই এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি’।
পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকা ওয়েবসাইটে গত ৩০ এপ্রিল ‘উত্তরায় প্রাইভেট কারে অপহরণ, ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তরার ওই অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. হাসানুজ্জামান শাওন (৩৬) ও মো. আমির হোসেন (৩২)। দুজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. মহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে- পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ভুক্তভোগী আরিফকে অপহরণ করে রূপগঞ্জে নিয়ে যায়। পরে টাকা আদায়ের পর আরিফকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করেছে। পলাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে, উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামীম আহমেদ জানান, অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার ও অপহরণে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দের পর গত ২৯ এপ্রিল পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। পরবর্তীতে তাঁদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গ্রেপ্তারে বিলম্বের বিষয়ে ওসি শামীম বলেন, ‘অপহরণের পর ভুক্তভোগী আরিফ বা তাঁর স্বজনদের কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। সেই সঙ্গে অপহরণের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর অপহরণকারীরা পুলিশি তৎপরতা টের পেয়ে কক্সবাজারে আত্মগোপন করে। তাঁরা ঢাকায় আসলে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়’।
উক্ত প্রতিবেদনে বা অন্য কোনো গণমাধ্যমে অপহরণের ভুক্তভোগী আরিফের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং, মোহাম্মদপুর থেকে উপজেলা যুবলীগ সভাপতিকে অপহরণের ভিডিও দাবিতে উত্তরায় অপহরণের ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘যশোর শার্শা উপজেলা মান্দারতলা এবং স্বরূপদাহ সংলগ্ন ব্রীজের সামনে পানিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির লাশ পাওয়া গেছে তিনি দু-দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এখন খালে-বিলে আর মাছ পাওয়া যায় না আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের লা’শ পাওয়া যায়’ (বানান অপরিবর্তিত) দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখানো উদ্ধার হওয়া লাশ শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২২ আগস্ট যশোরের শার্শা উপজেলায় বিল থেকে খায়রুল ইসলাম নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উক্ত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমে নিহত খায়রুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দৈনিক ইত্তেফাক -এর ওয়েবসাইটে গত ২৩ আগস্ট ‘বিকেলে নিখোঁজ, সকালে বিলে ভেসে উঠলো বিএনপি কর্মীর মরদেহ’ শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলেচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বেনাপোলের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার স্বরুপদাহ গ্রামের মালশা কুড়া বিল থেকে খায়রুল ইসলাম নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে মালশা কুড়া বিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘নিহত খায়রুল ইসলাম বেনাপোল পোর্ট থানার বোয়ালিয়া গ্রামের নুর মোহাম্মাদের ছেলে। স্থানীয় বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।’
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, নিহত খায়রুল ইসলামের আপন চাচাতো ভাই বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন -এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন দুইটিতে নিহত ব্যক্তি বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, শার্শা উপজেলার আওয়ামী লীগ সভাপতির পরিচয় সম্পর্কে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা টাইমস২৪ -এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নাম সিরাজুল হক মঞ্জু। এদিকে আলোচিত ভিডিও নিহত ব্যক্তির নাম খায়রুল ইসলাম। অর্থাৎ, লাশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নন।
সুতরাং, শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির লাশ উদ্ধারের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।