সম্প্রতি “বাংলাদেশে আর কত সংখ্যা ধর্ষণ হলে জামাত বিএনপি শান্ত হবে?? এই মেয়ে কে ধর্ষণ করার পর হত্যা করে ঝোপ জঙ্গেলের জলে পেলে চলে গেছে। এই ভাবে আর কত নারী ধর্ষণে পর হত্যা হবে??…” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষণের পর হত্যা করে নারীকে জঙ্গলে ফেলে রেখে যাওয়ার দৃশ্যের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য কোনো ঘটনার নয় বরং, স্ক্রিপ্টেড বা অভিনীত ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘kallo_tejyain’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৫ সালের ১০ জুন “Kallo Nali mein Nadi video” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত রিল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে৷
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও প্রচারকারী পেজটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি একটি কনটেন্ট ক্রিয়েশন এ্যাকাউন্ট। তারা বিভিন্ন ধরণের বিনোদনমূলক ভিডিও (১,২,৩) বানিয়ে থাকেন। আলোচিত ভিডিওটিও রিল ভিডিওর জন্য ধারণকৃত অভিনয়ের অংশ।
সুতরাং, ধর্ষণের পর হত্যা করে নারীকে জঙ্গলে ফেলে রেখে যাওয়ার বাস্তব ঘটনা দাবিতে একটি স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার একটি পাহাড়ি সড়কের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত পাহাড়ি সড়কের ছবিটি বান্দরবানের আলীকদমের কোনো সড়কের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং শহরের রোহিনী রোডের ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Prithvi Travel -Siliguri নামের একটি ভারতীয় ট্র্যাভেল এজেন্সির ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং শহর নিয়ে। পোস্টটিতে উক্ত শহরের বেশ কয়েকটি ছবিও প্রচার করা হয়েছে। যেখানে কার্শিয়াংয়ের অন্যান্য ছবির পাশাপাশি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটিও দেখতে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে TravelGangtok নামের আরেকটি ট্র্যাভেল এজেন্সির ফেসবুকে পেজে প্রচারিত একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ছবির সড়কটির নাম রোহিনী রোড। এটি ভারতের দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং শহরে অবস্থিত।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ড্রোন দিয়ে ধারণ করা রোহিনী রোডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার সাথে আলোচিত ছবির সড়কের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও একাধিক প্ল্যাটফর্মে উক্ত সড়কের ভিন্ন ভিন্ন পজিশন থেকে ধারণ করা কয়েকটি ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে সড়কটিকে রোহিনী রোড বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং শহরের রোহিনী রোডের ছবিকে বাংলাদেশের বান্দরবানের আলীকদমের পাহাড়ি সড়কের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “চাঁদপুর ১ (কচুয়া) আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী – আবু নছর আশরাফীর উপর, জামায়াত-শিবিরের হামলা…” শীর্ষক শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি ক্যাম্পাসের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী মুহাদ্দিস আবু নছর আশরাফীর ওপর জামায়াত-শিবির হামলা করেছে শীর্ষক দাবিতে ডেইলি ক্যাম্পাস কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ডেইলি ক্যাম্পাসের একটি ফটোকার্ড নকল করে এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ডেইলি ক্যাম্পাসের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১১ জুন, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
ডেইলি ক্যাম্পাসের লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিসম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, ডেইলি ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ১০ জুন গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থীর ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা, আহত ২” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। ডেইলি ক্যাম্পাসের মূল ফটোকার্ডটিতে ‘জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থীর ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা, আহত ২’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘চাঁদপুর ১ (কচুয়া) আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী – আবু নছর আশরাফীর উপর, জামায়াত-শিবিরের হামলা…’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
Photocard Comparison By Rumor Scanner
অর্থাৎ, ডেইলি ক্যাম্পাসের এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত ডেইলি ক্যাম্পাসের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “গত ১১ জুন চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী মুহাদ্দিস আবু নছর আশরাফীর ওপর হামলা হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কচুয়া উপজেলার ১০নং গোহাট উত্তর ইউনিয়নে নাউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আবু নছর আশরাফীকে বাঁচাতে গিয়ে জামায়াতের দুজন কর্মী আহত হয়। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলায় জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন—মো. আরিফ হোসেন, রহিম, স্বপন, শাহপরান ও মোহাম্মদ মুরাদ। এদের সবাই স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ওয়ার্ড মেম্বার পদপ্রার্থী সুমনের অনুসারী বলে জানা যায়।”
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “চাঁদপুর ১ (কচুয়া) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী – আবু নছর আশরাফীর উপর, জামায়াত-শিবিরের হামলা…” শিরোনামে ডেইলি ক্যাম্পাসের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সাতক্ষীরায় জামায়াত আমীরের বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের কোনো ঘটনার নয়। বরং, এটি গত ১৫ জুন সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রিফাত আমিনের বাসায় সেনাবাহিনীর অভিযানের ঘটনা। সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এই অভিযানে রিফাত আমিনের ছোট ছেলে সাফায়েত সরোওয়ার রুমনকে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করা হয়।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে থাকা নাগরিক টিভির লোগোর সূত্র ধরে নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৫ জুন প্রচারিত ‘সাতক্ষীরায় সাবেক আ: লীগের এমপির ছেলে মা/দ/ক ও অ/স্ত্র/স/হ আটক | Nagorik TV’ শীর্ষক ক্যাপশনের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শুরুর অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এটি সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রিফাত আমিনের বাসায় সেনাবাহিনীর অভিযানের ঘটনা। এই অভিযানে রিফাত আমিনের ছোট ছেলে সাফায়েত সরোওয়ার রুমনকে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করা হয়।
যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ১৬ জুন এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভানেত্রী ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি রিফাত আমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ সময় তার ছোট ছেলে সাফায়েত সরোওয়ার রুমনকে আটক করা হয়। রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকায় অবস্থিত রিফাত আমিনের বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়।’
সুতরাং, সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় সেনাবাহিনীর অভিযানের ঘটনায় তাঁর ছেলেকে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করার দাবির একটি ভিডিও ক্লিপ সাতক্ষীরায় জামায়াত আমীররের বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচিত মুখ ফারজানা সিথির ভিডিও দাবিতে সম্প্রতি এক নারীর গোসলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, ‘সবকিছু ভুলে গেলেও জামাতের পেইড এজেন্ট এই নর্তকীর কথা ভূলে যাবেন না…..।’ (বানান অপরিবর্তিত)
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ফারজানা সিথির নয় বরং, ইন্টারনেট থেকে এক ভারতীয় নারীর ভিডিও সংগ্রহ করে তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে ফারজানা সিথির মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘cine_biju’ নামক একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৬ মে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। মুখমণ্ডল ব্যতীত উক্ত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির পোশাক, অঙ্গভঙ্গি ও ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। অ্যাকাউন্টটির লোকেশন হিসেবে ভারত উল্লেখ রয়েছে।
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ভিডিওতে থাকা নারীর মুখমণ্ডলের স্থলে ফারজানা সিথির মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন বর্ণনায় উল্লেখ পাওয়া যায়, ভিডিওর মূল ব্যক্তি স্বর্ণালী রায় (Swarnali Roy) এবং চিত্রগ্রহণের (ভিডিও ধারণ) দায়িত্বে ছিলেন Bi Ju( SK Entertainment)। অ্যাকাউন্টটি থেকে একই মেয়ের প্রচারিত আরও একটি ছবি ও ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, এই ছবি ও ভিডিওতে ট্যাগ করা অ্যাকাউন্টের মধ্যে ‘royswarnali007’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
‘royswarnali007’ নামে অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে প্রতিনিয়ত এমন ভিডিও প্রচার করা হয়ে থাকে (১, ২, ৩)। এই অ্যাকাউন্টটিরও লোকেশন হিসেবে ভারত উল্লেখ রয়েছে।
সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে ভারতীয় নারীর ভিডিও সংগ্রহ করে তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে ফারজানা সিথির মুখমণ্ডল বসিয়ে জামায়াতের পেইড এজেন্ট দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত।
সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য দাবিতে “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম একাত্তর এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও, -শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভি কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি এবং শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ” শীর্ষক শিরোনামে ‘একাত্তর’ এর প্রচারিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘একাত্তর’ এর লোগো ও ফটোকার্ডটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ‘১৯ জুন ২০২৫’ দেখা যায়। এরই সূত্র ধরে ‘একাত্তর’ এর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, ‘একাত্তর’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৯ জুন “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের লোগো, ছবি, তারিখ ও তারিখের ফন্টের মিল রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত লেখা ও লেখার ফন্টের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়। একাত্তর এর উক্ত মূল ফটোকার্ডটিতে “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ” শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও, -শেখ হাসিনা” শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একাত্তর টিভির এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা (এডিট) করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত “একাত্তর” এর পোস্টে মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে এক জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) নিয়োগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এই আদেশ দেন। সেই সাথে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৫ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও শেখ হাসিনা ও অপর অভিযুক্ত হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের অভিমত ট্র্যাইব্যুনাল শুনবেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।..” উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও, -শেখ হাসিনা” শীর্ষক দাবিতে একাত্তরের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি, এক যুবকের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্ৰীয় সমন্বয়ক এনসিপি নেত্রীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্ৰীয় সমন্বয়ক অথবা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রীর নয় বরং, ইন্টারনেট থেকে ‘আমে না’ নামের এক নারীর ভিডিও সংগ্রহ করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘mor_tella_nyx_official’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০৯ মে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে উক্ত নারীর আরো অনেক ভিডিও পাওয়া যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি ‘আমে না’ নামক উক্ত নারীর। পরবর্তীতে উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটির অ্যাবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটি মূলত বাংলাদেশ (Account based in Bangladesh) থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
তাছাড়া, উক্ত নারীর ফেসবুক ও টিকটক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্পর্কিত কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্ৰীয় সমন্বয়ক কিংবা এনসিপি নারী নেত্রীর নয় বরং, তিনি একজন মডেল ও মেকাপ আর্টিস্ট।
সুতরাং, এক যুবকের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্ৰীয় সমন্বয়ক বা এনসিপি নেত্রীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও দাবিতে ভিন্ন আরেক নারীর এডাল্ট ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “ব্রেকিং নিউজ বেলারুশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কার্যালয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগ হয়েছে………। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ এবং নরওয়ের দূতাবাসের কিছু অংশ।”
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো সম্প্রতি বেলারুশে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিকটবর্তী বা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে কোনো হামলার দৃশ্যের নয় বরং, ২০২৪ ও ২০২২ সালে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে হামলার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ৬টি ছবির মধ্যকার প্রথম ৫ টি ছবি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ইউক্রেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কিয়েভ পোস্টসহনানাদেশীয়একাধিকসংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায় এই ৫টি ছবিই ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বরে ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরবর্তী সময়ের দৃশ্য। এ বিষয়ে উক্ত সংবাদমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর প্রতিটিতে উল্লিখিত ৫টি ছবির মধ্যকার এক বা একাধিক ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত নানা ছবিতে কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসনের জলছাপ পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসনের নামে পরিচালিত টেলিগ্রাম চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করলে ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বরে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কয়েকটি ছবি কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরের দৃশ্য দাবিতে প্রচার হতে দেখা যায়।
উক্ত হামলায় কোনো দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর ওয়েবসাইটে গত ২১ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। হামলায় ছয়টি বিদেশি দূতাবাস ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।… ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় কিয়েভে অবস্থিত আলবেনিয়া, আর্জেন্টিনা, উত্তর মেসিডোনিয়া, ফিলিস্তিন, পর্তুগাল এবং মন্টিনিগ্রোর কূটনৈতিক মিশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” উল্লেখ্য যে, ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই।
পরবর্তীতে ষষ্ঠ ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ইউক্রেন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘কিয়েভ পোস্ট’ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ছবিটির সাথে আলোচিত ছবিটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, উক্ত ছবিটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হওয়ার পর ইউক্রেনের কিয়েভের একটি স্থানের দৃশ্য। একই ছবিটি একইদিনে রাশিয়া ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘মস্কো টাইমস’ এর ওয়েবসাইটেও ইউক্রেনের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও সম্প্রতি বেলারুশে বাংলাদেশ দূতাবাসের (কনস্যুলেটের) নিকটবর্তী বা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলার দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, বেলারুশ থেকে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ান বাহিনীর হামলার প্রেক্ষিতে বেলারুশের মিনস্কে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। এবং বেলারুশে নরওয়ের কোনো দূতাবাস নেই।
সুতরাং, ২০২৪ ও ২০২২ সালে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে হামলার দৃশ্যকে সম্প্রতি বেলারুশে বাংলাদেশের কথিত দূতাবাসের নিকটবর্তী যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সম্প্রতি, সমকাল ও চ্যানেল আইয়ের ডিজাইন সম্বলিত দুটি পৃথক ফটোকার্ড প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সুদের ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আলোচিত মন্তব্যটি করেননি এবং সমকাল বা চ্যানেল আই উক্ত শিরোনামে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ড. ইউনূসের ভিন্ন মন্তব্য সংবলিত গণমাধ্যম দুটির ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ড তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে সমকালের ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে সমকালের লোগো এবং প্রকাশের তারিখ ২৭ জুন ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
তবে গণমাধ্যমটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদের অস্তিত্ব মেলেনি। পাশাপাশি কোনো নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম থেকেও এ ধরনের মন্তব্যের তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, ওই দিন সমকালের ফেসবুক পেজে “সামাজিক ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা” শীর্ষক একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। এই ফটোকার্ডের ডিজাইন ও ছবি আলোচিত ফটোকার্ডের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। সম্পাদনার মাধ্যমে মূল ফটোকার্ডের শিরোনামে থাকা ‘সামাজিক’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সুদের’ শব্দ প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner.
একইভাবে, গত ২৭ জুন চ্যানেল আইয়ের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত “সামাজিক ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা” শীর্ষক ফটোকার্ডটি ডিজিটালভাবে সম্পাদনা করে প্রধান উপদেষ্টার নামে একই মন্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner.
উভয় গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২৭ জুন সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসা (সোশ্যাল বিজনেস) শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
সুতরাং, ড. ইউনুস “সুদের ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করে সমকাল ও চ্যানেল আইয়ের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো সম্পাদিত।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ‘ড. ইউনুসকে পেয়ে মানুষ নির্বাচন ভুলে গেছে কিন্তু বিএনপি ভুলে নাই’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে নির্বাচন বিষয়ে রুমিন ফারহানা এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং বার্তা বাজারও আলোচিত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। এছাড়াও রুমিন ফারহানা আলোচিত মন্তব্যটি করেননি। বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে বার্তা বাজারের একটি ফটোকার্ড নকল করে এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে বার্তা বাজারের লোগো রয়েছে তবে এটি প্রকাশের তারিখ ৩০ জুন, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
বার্তা বাজারের লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিসম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, বার্তা বাজারের ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। তবে উভয়ের শিরোনাম এবং শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্ট ডিজাইনের ভিন্নতা রয়েছে।
মূলত, এই ফটোকার্ডটির ‘ডক্টর ইউনূসের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ কিন্তু হ্যাপি না: রুমিন ফারহানা’ শীর্ষক শিরোনামের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘ড. ইউনুসকে পেয়ে মানুষ নির্বাচন ভুলে গেছে কিন্তু বিএনপি ভুলে নাই’ শিরোনাম প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অর্থাৎ, বার্তা বাজারের এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত বার্তা বাজারের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন কিংবা অন্যকোনো সূত্রে রুমিন ফারহানার আলোচিত মন্তব্যটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “ডঃ ইউনুসকে পেয়ে মানুষ নির্বাচন ভুলে গেছে কিন্তু বিএনপি ভুলে নাই-রুমিন” শীর্ষক দাবিতে বার্তা বাজারের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।