Home Blog Page 8

অস্ত্রসহ পাহাড়ি আটক দাবিতে নাটোরের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার 

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের বিচার দাবিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নগরীতে আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় পুলিশ ও স্থানীয় বাঙালিদের সাথে সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। উক্ত সহিংসতার ঘটনার জন্য ইউপিডিএফের উসকানিকেও দায়ী করা হয়। এরপর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেতিবাচক প্রচারণা করতে দেখা যায়। এর প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি, পাহাড়িদের একটি দল ব্যাগ ভর্তি অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি পাহাড়িদের একটি দল অস্ত্রসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া ঘটনার নয়। এছাড়াও ভিডিওটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর  কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, নাটোরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্র ও খেলনা পিস্তলসহ ৬ জনকে আটকের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে রাজ্য নেই তবুও রাজা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১ জুন নাটোরে খেলনা পি’স্ত’ল দিয়ে ছিন*তা’ইয়ের চেষ্টা, সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৪ ডা’কা’ত শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর ২৮ সেকেন্ড থেকে শুরু হওয়া ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতেই একই সেনাসদস্যকে নীল টি-শার্ট পরিহিত একই ব্যক্তিকে থাপ্পড় মারতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া চারজন ব্যক্তি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। এসময় তাদের কাছে একটি খেলনা পিস্তল ছিল বলে পোস্টটিতে ‍উল্লেখ করা হয়। ভিডিওটিতেও নীল টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তিকে একটি পিস্তল ফেলে দিতে দেখা যায়। যা পরবর্তীতে ওই সেনাসদস্য উদ্ধার করেন।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে একইদিন (২১ জুন) উক্ত ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jagonews24

প্রতিবেদনটিতেও সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া একই ব্যক্তিদের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ২০ জুন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কালাকান্দর স্লুইসগেট এলাকা থেকে রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ওই চারজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতদলের দুই প্রধানকেও আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয় বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনটি থেকে আরো জানা যায়, আটক ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে ডাকাত দলের প্রধান আব্দুর রাজ্জাক (৩৮) ও মৃত কামাল হোসেনের ছেলে কাওসার আহম্মেদ (২৫), আব্দুল আজিজের ছেলে বিপ্লব হোসেন (২৪), মোবারক আলীর পুত্র মবিদুল ইসলাম (২১), হরদমা গ্রামের রওশন আলীর ছেলে মনিরুল (২৪) ও কালিনগর পাধোয়া গ্রামের আব্দুল সালামের পুত্র সুরুজ আলী (২১)।

অর্থাৎ, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ-ই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নয়। এছাড়াও এ ঘটনায় একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলোর কোথাও উক্ত ঘটনার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়নি। এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, নাটোরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ডাকাত দলের সদস্যদের আটক হওয়ার ভিডিওকে অস্ত্রসহ পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোক আটক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে গাজাবাসীর স্বাগত জানানোর ভিডিও দাবিতে তিউনিসিয়ার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, গাজায় চলমান ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের প্রতিবাদে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার নৌ উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। পরবর্তীতে ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া, ইতালির সিসিলি দ্বীপ ও গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, উক্ত নৌবহরটি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জনসাধারণ স্বাগত জানাতে সমুদ্র তীরে জড়ো হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি গাজার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটি তিউনিসিয়ার সিদি বু সাইদ বন্দরে তিউনিসিয়াবাসীর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরকে স্বাগত জানানোর। তিউনিসিয়া থেকে পুনরায় ফ্লোটিলা নৌবহর যাত্রা শুরু করলে সেখান থেকেও বেশ কয়েকটি নৌযান উক্ত নৌবহরে যুক্ত হয়। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তিউনিসিয়ার গণমাধ্যম Médina FM LIVE এর ফেসবুক পেজে গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রচারিত কয়েকটি ছবি সম্বলিত একটি ফটো অ্যালবাম পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়। 

Comparison by Rumor Scanner 

পোস্টটির ছবিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গাজার সমুদ্র তীরে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরকে স্বাগত জানানোর ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর জনসমাগমের সাথে উক্ত পোস্টের ছবির স্থান ও জনসমাগমের মিল পাওয়া যায়। উভয় স্থানেই উপস্থিত জনগনের হাতে ফিলিস্তিনের ও তিউনিসিয়ার পতাকা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও পোস্টটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ছবিগুলো তিউনিসিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরকে বিদায় জানাতে তিউনিসিয়ার সিদি বু সাইদ বন্দরে আসা জনসমাগমের। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Reuters এর ইউটিউব চ্যানেলে সেদিন সিদি বু সাইদ বন্দরে তিউনিসিয়াবাসীর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরকে স্বাগত জানানোর ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এছাড়াও Médina FM LIVE নামের তিউনিসিয়ার গণমাধ্যমের পেজে প্রচারিত আরেকটি পোস্ট থেকে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর তিউনিসিয়ার সিদি বু সাইদ বন্দরে পৌঁছায়। একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সেদিনের ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

উল্লেখ্য, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের মাত্র একটি জাহাজ গাজার জলসীমায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল কিন্তু সেটি তীরে পৌঁছানো পূর্বেই ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজটি আটক করে। পরবর্তীতে গত ৩ অক্টোবর গাজাগামী ত্রাণবাহী সর্বশেষ জাহাজ দ্য ম্যারিনেটকেও ফিলিস্তিনি উপকূলের কাছে আটক করে ইসরাইলি বাহিনী। তবে নতুন করে আরও ১১ টি জাহাজ ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বলেও জানা যায়। কিন্তু উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অব্দি কোনো জাহাজ গাজার তীরে পৌঁছায়নি।

সুতরাং, তিউনিসিয়ার সিদি বু সাইদ বন্দরে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরকে তিউনিসিয়াবাসীর স্বাগত জানানোর ভিডিওকে গাজাবাসীর ফ্লোটিলা নৌবহরকে স্বাগত জানানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

শেখ হাসিনাকে হত্যার কথিত পরিকল্পনা নিয়ে জাফর ইকবালের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার 

0

সম্প্রতি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে উদ্ধৃত করে ‘ম্যাটিকুলাস ডিজাইনে হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তাই সে স্থান পরিবর্তন করেছে। পলায়নি। পদত্যাগও করেনি।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা পরিকল্পনা ও পদত্যাগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি জাফর ইকবাল। প্রকৃতপক্ষে, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া জাফর ইকবাল নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজের পোস্টের সূত্র ধরে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল’ নামক ফেসবুক পেজে গত ১ অক্টোবর তাকে উদ্ধৃত করে ‘ম্যাটিকুলাস ডিজাইনে হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তাই সে স্থান পরিবর্তন করেছে। পলায়নি। পদত্যাগও করেনি।’ শিরোনামে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

পরবর্তীতে উক্ত ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম পেজের ইন্ট্রোতে এটি একটি ফ্যান পেজ লেখা খুঁজে পায়। পেজটির ‘ট্রান্সপারেন্সি’ বিভাগ পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় এটি ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর চালু করা হয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেসবুকে বর্তমানে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কোনো অফিশিয়াল পেজ সক্রিয় নেই। ২০২৩ সালের ১২ মার্চ অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে জানা যায়, Muhammed Zafar Iqbal নামে চালু থাকা জাফর ইকবালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজটি হ্যাক হয়েছে। পরবর্তীতে পেজটির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এবং এটি বর্তমানে ফেসবুকের সার্চ ফলাফলেও প্রদর্শিত হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাফর ইকবালকে প্রকাশ্যে দেখা যায় নি৷ তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন তা এখনো অজানা। তাছাড়া, জাফর ইকবালের মতো ব্যক্তি এমন মন্তব্য করলে উক্ত বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার হওয়ার কথা। তবে, দেশের কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়নি।

সুতরাং, শেখ হাসিনাকে হত্যার কথিত পরিকল্পনা ও তার পদত্যাগ সম্পর্কে জাফর ইকবালকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত দাবিটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র 

চাঁদপুরে খতিবকে কুপিয়ে আহতের ঘটনা অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নন 

0

গত ১১ জুলাই চাঁদপুর শহরের প্রসেসরপাড়ায় স্থানীয় এক মসজিদের খতিবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে মো. বিল্লাহ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। 

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘৭৫ বছর বয়সি ইমাম নুরুল আমিন মাদানী। চাঁদপুর প্রফেসর পাড়া, মোল্লাবাড়ি, বাইতুল আমিন জামে মসজিদের ইমাম সাহেব। গত শুক্রবার পবিত্র জুমার বয়ান দেন এবং উনার বয়ান কিছু লোকের পছন্দ না হওয়াতে, বয়ান চলা অবস্থায় চাপাতি দিয়ে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায় বিএনপির দলের সন্ত্রাসীরা।’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

একই ঘটনার প্রেক্ষিতে হামলাকারী ব্যক্তিতে জামায়াত শিবিরের নেতা দাবিতেও প্রচার করতে দেখা যায়।

বিএনপির নেতা দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

জামায়াত শিবিরের নেতা দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুরে মসজিদের খতিব মাওলানা নূরুর রহমানের ওপর হামলাকারী ব্যক্তি বিএনপি কিংবা জামায়াত-শিবিরের কেউ নন বরং, অভিযুক্ত মো. বিল্লাহ হোসেন একজন তরকারি বিক্রেতা। 

অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১২ জুলাই “চাঁদপুরে মসজিদের খতিবকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় মামলা, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১১ জুলাই জুম্মার নামাজের খুতবা পছন্দ না হওয়ায় মো. বিল্লাল হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তি চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়া মোল্লাবাড়ী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আ ন ম নুর রহমানের ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা চালান। এতে রহমান মারাত্মকভাবে আহত হন। উক্ত ঘটনার মাওলানা রহমানের ছেলে বাদী হয়ে ১২ জুলাই মামলা করেন এবং অভিযুক্ত গ্রেফতার হন। 

বাংলা নিউজ২৪ এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত মো. বিল্লাহ হোসেন একজন ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী৷ 

অভিযুক্ত মো. বিল্লাহ হোসেন সবজি বিক্রেতা বা কাঁচামাল ব্যবসায়ী উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছে– বিডিনিউজ২৪, ইত্তেফাক, ঢাকা মেইলও

পরবর্তীতে অভিযুক্ত বিল্লাহ হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে বিল্লাল হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য চাঁদপুরের স্থানীয় একাধিক সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

এখন টিভির চাঁদপুর প্রতিনিধি তাহলা জুবায়ের বলেন, অভিযুক্ত বিল্লাহ হোসেন কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না। তিনি উগ্রপন্থী মানুষ ছিলেন। 

চ্যানেল ২৪ এর চাঁদপুর প্রতিনিধি আল ইমরান শোভন বলেন, বিল্লাল হোসেন কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। 

অর্থাৎ, অভিযুক্ত মো. বিল্লাহ হোসেন একজন সবজি বিক্রেতা বা কাঁচামাল ব্যবসায়ী।

সুতরাং, চাঁদপুরের মসজিদের খতিবকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় অভিযুক্তের রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকার দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণ নিয়ে জাহাজে করে যাত্রার ভিডিও দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজার ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি নৌবহর যাত্রা শুরু করে। এই মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতেও আরো জাহাজ গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি গাজার উদ্দেশ্য ত্রাণ নিয়ে জাহাজে করে যাত্রার দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টটি ৫৬ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৮ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণ নিয়ে জাহাজে করে যাত্রার আসল ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে এই ভুয়া ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘zainulabdin55666’ ইউজারনামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ২ অক্টোবরে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায়। পোস্টটির ভিডিওটিতে ‘এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট’ উল্লেখ করে লেবেল থাকতে দেখা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, উল্লিখিত টিকটক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আরো অনেক এআই তৈরি কনটেন্ট পোস্ট হতে দেখা যায়।

পাশাপাশি, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে মানুষের গড়ন, পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায় যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।

Screenshot : DeepFake-O-Meter

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘AVSRDD’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি ভুয়া বা এআই তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৭০ শতাংশ বলে জানা যায়। 

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণ নিয়ে জাহাজে করে যাত্রার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্য জবাই করে হত্যা দাবিতে ২০১৭ সালের ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, ‘এই মুহূর্তে রাজধানীতে প্রকাশ্য শত-শত মানুষের সামনে একজনকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা’- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৭ সালে রাজধানীর সদরঘাটের শরিফ মার্কেট এলাকায় একটি ভবন থেকে পড়ে রাকিব নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনার দৃশ্য এটি।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘চলো পাল্টাই’ নামক ফেসবুক পেজে ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত পোস্টে দাবি করা হয়, পুরান ঢাকার সদরঘাটে ‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলার প্ররোচনায় এক কিশোর রাজধানীর সদরঘাটের শরিফ মার্কেট এলাকায় গ্রেট ওয়াল নামক শপিং কমপ্লেক্সের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

একই তথ্যে একই ভিডিও সেইসময় একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। পোস্টগুলো দেখুন– এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

পাশাপাশি, আলোচ্য বিষয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি কারী  ‘Mahfuz Hossain’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে সংযুক্ত ছবির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে এবং পোস্টে এটি ‘ব্লু হোয়েল’ এর পরিণতি বলে ধারণার কথা জানানো হয়। 

উল্লেখিত পোস্টগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রিন্ট এডিশনে ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবরে আলোচিত ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, ঢাকার কোতোয়ালি থানার সদরঘাট শরিফ মার্কেটে ভবন থেকে পড়ে রাকিব নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ এবং প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হয়। 

এছাড়া, একই বিষয়ে জাগো নিউজের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুযায়ী এটি ‘ব্লু হোয়েল’ এর পরিণতি হলেও পুলিশ বলছে, এটি ‘আত্মহত্যা’ এবং ‘ব্লু হোয়েল’ গেম এর সাথে এই ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

সুতরাং, ২০১৭ সালে রাজধানীর সদরঘাটের শরিফ মার্কেট এলাকায় রাকিব নামক এক যুবকের ভবন থেকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় প্রকাশ্যে একজনকে জবাই করে হত্যার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলমের আটক হওয়ার ভুয়া দাবি ইন্টারনেটে

0

গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজার ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি নৌবহর যাত্রা শুরু করে। এই মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায়, গত ১ অক্টোবর ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) জাহাজ ‘কনশানস্’ (,,) আন্তর্জাতিক সাংবাদিক এবং চিকিৎসা পেশাদারদের নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এই জাহাজে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমও যোগ দেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলমের আটক অবস্থার ছবি দাবিতে দুইটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলমের আটক অবস্থার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে এই ভুয়া ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও, শহিদুল আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত ‘কনশানস্’ জাহাজের বিষয়ে পোস্ট করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি তার আটক হওয়ার কোনো তথ্য জানা যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে শহিদুল আলমকে বহনকারী ‘কনশানস্’ জাহাজের গাজায় পৌঁছানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শহিদুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জাহাজে থাকা অবস্থায় নিয়মিত যাত্রাপথের আপডেট শেয়ার করছেন, তবে গাজায় পৌঁছানোর বা আটক হওয়ার কোনো তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি। তিনি যদি গাজায় পৌঁছাতেন এবং এভাবে প্রকাশ্যে আটক হতেন, তবে এই ঘটনার তথ্য ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং শহিদুল আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত পোস্ট হচ্ছে। শহিদুল আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ৬ অক্টোবর দুপুর ১২ টা ৫৯ মিনিটের একটি পোস্ট অনুযায়ী তারা ছোট ও ধীরগতির নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাদের পিছনে ফেলে যেতে চাননি তারা। এ থেকে বুঝা যায় তারা এখনও পৌঁছাননি। এদিকে, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামক ওয়েবসাইটে ‘কনশানস্’ জাহাজের লাইভ ট্র্যাকারে এই প্রতিবেদন লেখার সময় (৬ অক্টোবর, বিকেল ৩টা ৪৯ মিনিট) জাহাজটিকে যাত্রাপথেই দেখা গেছে।

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারারা গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে ছবিগুলো আসল বা সত্য হওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে, প্রচারিত ছবিগুলোতে ত্বকের গঠন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টে লক্ষ্য করা যায়। 

Collage : Rumor Scanner/Hive Moderation, DeepFake-O-Meter

প্রচারিত ছবিগুলোর বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এ আলোচিত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করলে ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৮ ও ৯৬.৮ শতাংশ দেখা যায়। এছাড়াও এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘HIFI’ ও ‘GLFF’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ছবিগুলো ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৯.২৭ ও ৯৯.৯৯ শতাংশ।

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে আরো নানা ফুটেজের সংযুক্তি পাওয়া যায়, তবে তা আলোচিত দাবির সত্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান হয়।

উল্লেখ্য যে, এখন পর্যন্ত শহিদুল আলম বা তাকে বহনকারী ‘কনশানস্’ জাহাজের কাউকে আটক করার খবর পাওয়া না হলেও তাদের আগে যাত্রা করা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজের বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৫০ জনকে আটক করে ইসরায়েল। তাদের মধ্যে অনেককে ইতোমধ্যে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলম আটক হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত বাঙালিদের মরদেহের ছবি দাবিতে আর্মেনিয়ান গণহত্যার ছবি প্রচার 

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত বাঙালিদের মরদেহের ছবি। একই দাবিতে ছবিটি দেশের একাধিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিবেদনে ব্যবহার হতেও দেখা যায়। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও ছবিটিকে ১৯৭১ সালে খুলনার চুকনগর হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ছবিটি ব্যবহার করে দেশিয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন দ্য ডেইলি স্টার, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ঢাকা ট্রিবিউন এবং সিলেট টুডে২৪। 

একই ছবি ব্যবহার করে বিনোদনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম eআরকির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

বিডি ডাইজেস্ট নামের একটি ওয়েবসাইটেও ছবিটি সম্বলিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে। 

একই ছবি ব্যবহার করে ১৯৭১ সালের চিত্র দাবিতে ব্লগপোস্ট ওয়েবসাইটগুলোতে প্রকাশিত ব্লগ দেখুন  এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ভারতীয় গণমাধ্যমে একই ছবি ব্যবহার করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গণহত্যার চিত্র দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন ইন্ডিয়া টুডে, হিন্দু ভয়েস এবং বার্তা টুডে। 

ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র দেবজিৎ সরকারের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইতিহাস বিষয়ক ওয়েবসাইট ইন্দোস্ফিয়ারে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত বাঙালিদের মরদেহের ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি আর্মেনিয়ায় ১৯১৫ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত তৎকালীন অটোম্যান সাম্রাজ্যের চালানো গণহত্যার একটি চিত্র। যেটিকে বেশ কয়েকবছর ধরেই বিভিন্ন মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

আলোচিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে স্টক ফটো ওয়েবসাইট gettyimages এবং alamy এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। প্ল্যাটফর্মগুলোতে বলা হয়, ছবিটি ১৯১৫ সালের দিকে শুরু হওয়া আর্মেনিয়ান গণহত্যার। সেসময় তুর্কীরা আর্মেনিয়ানদের ওপর এই হত্যাযজ্ঞ চালায় বলে gettyimages-এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়। 

Image Comparison by Rumor Scanner 

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি সম্বলিত দুটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Collage by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনগুলো থেকেও জানা যায়, ছবিটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আর্মেনিয়ায় অটোম্যান সাম্রাজ্যের চালানো গণহত্যার সময়ের। ১৯১৫ সালে শুরু হয়ে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত চলা এই গণহত্যায় অটোমান সাম্রাজ্যের তুর্কি শাসকদের হাতে লক্ষ লক্ষ আর্মেনীয় নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন।

অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার নয়।

সুতরাং, আর্মেনিয়ান গণহত্যার ছবিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত বাঙালিদের মরদেহের ছবি দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গাইবান্ধার সাবেক এমপি মাহাবুব আরা গিনি মারা যাননি 

0

গত ৩ অক্টোবর, গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সদস্য মাহাবুব আরা গিনি কারাগারে মৃত্যু বরণ করেছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাবুব আরা গিনি মারা যাননি। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে তিনি গাইবান্ধা কারাগারে আটক আছেন। তিনি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দৈনিক কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে গত ৪ অক্টোবর ‘গাইবান্ধার সাবেক এমপি মাহাবুব আরা গিনির মৃত্যুর খবর গুজব : জেল কর্তৃপক্ষ’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ জেল কর্তৃপক্ষের বরাতে বলা হয়, গিনি বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দী আছেন এবং সুস্থ আছেন। তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমও সংবাদ (,,) প্রচার করে।

এছাড়া, মাহাবুব আরা গিনির পরিবারের পক্ষ থেকেও তিনি মারা গেছেন এমন কোনো দাবি করা হয়নি। মাহবুব আরা গিনির মতো ব্যক্তি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলে উক্ত বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার হওয়ার কথা। তবে, দেশের কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন মাহাবুব আরা গিনি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গাইবান্ধা ও ঢাকায় কয়েকটি মামলায় বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছেন। 

সুতরাং, মাহাবুব আরা গিনি মারা যাওয়ার দাবিটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র 

থাই-কম্বোডিয়ান সেনাদের বাকবিতণ্ডার ভিডিওকে বান্দরবান সীমান্তে আরাকান আর্মি-বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভিডিও দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি ‘ঘটনাটি বান্দরবান সিমান্তের: আরাকান আর্মি, বার্মার নাগরিক ধরতে ধরতে বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে পরেছে বাঙালি পরিবারের উপর হামলা করতে এসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে আরাকান আর্মির বাংলাদেশে ঢুকে পড়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার বিতর্কিত সীমান্তে অবস্থিত একটি মন্দিরে কম্বোডিয়ার নাগরিকদের পরিদর্শনকে ঘিরে দুই দেশের সেনাদের মধ্যকার উত্তেজনার ভিডিওকে বান্দরবান সীমান্তের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Weapons Update নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ জুলাই প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, থাই সেনারা কম্বোডিয়ার নাগরিকদের কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে অবস্থিত ‘তা মোয়ান থম’ মন্দির পরিদর্শনে বাধা দেওয়ার দৃশ্য এটি। 

পরবর্তীতে, থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম The Nation এর ওয়েবসাইটে গত ১৫ জুলাই ‘Tension at Ta Muen Thom resolved after disagreement between Thai and Cambodian forces’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যের সাদৃশ্য রয়েছে। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেদিন কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের ফানম ডং রাক জেলার ‘তা মুয়েন থম’ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের কাছে একজন কম্বোডিয়ান দর্শনার্থী প্রবেশ করতে গেলে থাই সেনারা বাধা দেয় ও তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে কম্বোডিয়ার সেনারাও এসে পৌঁছায়।

একই বিষয়ে Pattaya People নামক ওয়েবসাইটে গত ১৫ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। 

সুতরাং, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সীমান্তে অবস্থিত মন্দিরে কম্বোডিয়ার নাগরিকদের পরিদর্শনকে ঘিরে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনার ভিডিওকে বান্দরবান সীমান্তে আরাকান আর্মির প্রবেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে তাদের বাকবিতণ্ডার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র