মুফতি মুহিবুল্লাহকে নিয়ে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও প্রচার 

গাজীপুরের টঙ্গী টিএন্ডটি এলাকার বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজি গত ২২শে অক্টোবর সকাল সাতটার দিকে হাটতে বের হওয়ার পর তার আর হদিস পাওয়া যায়নি। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টায় উত্তরের জেলা পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সিতারাম হেলিপ্যাড এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পরপরই তিনি দাবি করেছিলেন তাকে অপহরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশের অনুসন্ধানে জানতে পারে, অপহরণ নয়, পুরো ঘটনাটা ছিল সাজানো নাটক। পরে আদালতেও বিষয়টি স্বীকার করেন ওই খতিব। 

এই প্রেক্ষাপটে, পুলিশ সদস্যের বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে তিন জায়গায় তিন পোশাকের তিনজন কথিত পুলিশ সদস্যকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যে বলতে শোনা যায়– “গাজীপুরে মুফতি অপহরণ তদন্তে বাংলাদেশ পুলিশ ইসকনের কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি। কিন্তু যারা আজকে এই ইসকন বন্ধের জন্য বেরিয়েছেন, তারা অস্ত্রসস্ত্র ও বন্দুক নিয়ে মিছিল করেছেন। এবার বুঝুন আসল জঙ্গি কারা? এই ভিডিওটি অনেক শেয়ার করুন; যাতে সারাবিশ্বের মানুষ বুঝতে পারে যে ইসকন কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। ওরাই সন্ত্রাসী।”

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরের মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজির প্রসঙ্গে পুলিশের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। 

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়। 

এছাড়া, ২৪ সেকেন্ডের আলোচিত ভিডিওটির প্রথম ৮ সেকেন্ডে এক ধরনের ইউনিফর্ম পরিহিত ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। ৯ থেকে ১৫ সেকেন্ডে ভিন্ন ধরনের পোশাক পরা আরেক ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে এবং শেষাংশে আরও এক ব্যক্তিকে অন্য আরেক ধরনের পোশাক পরে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তির পরিহিত পোশাক বাংলাদেশ পুলিশের ইউনিফর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

প্রথম ৮ সেকেন্ডে বক্তব্য দেওয়া কথিত পুলিশ সদস্যের সামনে কয়েকটি মাইক্রোফোন দেখা যায়, যার মধ্যে একটি ‘M News’ নামের হলেও বাকিগুলো স্পষ্ট নয়। এই নামগুলো দিয়ে বাংলাদেশের কোনো মূলধারার গণমাধ্যমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একই ব্যক্তির পেছনে ‘Bainplmah Polihe’ লেখা দেখা যায়, যা বাংলাদেশের কোনো থানার সঙ্গে মেলে না। এটি মূলত এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওতে টেক্সট বিকৃতির একটি উদাহরণ, কারণ এআই-তৈরি কনটেন্টে প্রায়ই লেখায় এমন অসংগতি দেখা যায়। ফলস্বরূপ, ভিডিওটিতে ‘Police’ শব্দটি ভুলভাবে ‘Polihe’ হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটি ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের ‘AVSRDD (2025)’ মডেল দিয়ে পরীক্ষা করে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই-নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৮ শতাংশ।

Screenshot: Deepfake-o-meter.

উল্লেখ্য, গত আলোচিত ভিডিওটির সাথে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি প্রেস রিলিজের ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। যা গত ২৬ অক্টোবর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছে। তবে, উক্ত প্রেস রিলিজে আলোচিত ভিডিওতে থাকা কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, এআই ভিডিওকে গাজীপুরের মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজির প্রসঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img