সালমান খানকে পাকিস্তানে নিষিদ্ধের খবরটি ভুয়া

গত ১৭ অক্টোবরে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘জয় ফোরাম ২০২৫’ নামক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন বলিউড তারকা সালমান খান, শাহরুখ খান ও আমির খান৷ কথার এক পর্যায়ে সালমান খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে যদি আপনি কোনো হিন্দি সিনেমা বানিয়ে সৌদি আরবে মুক্তি দেন, তা সুপারহিট হবে। আপনি যদি তামিল, তেলেগু বা মালয়ালম সিনেমা বানান, সেগুলো শত কোটি টাকার ব্যবসা করবে, কারণ এখানে এখন বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মানুষ কাজ করছে। এখানে বালুচিস্তান থেকে মানুষ আছে, আফগানিস্তান থেকে আছে, পাকিস্তান থেকেও অনেকে এসেছে—সবাই এখানে কাজ করছে।’ সালমান খানের উক্ত বক্তব্য ঘিরে নেট দুনিয়ায় বেশ আলোচনা চলছে৷ দাবি করা হচ্ছে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের প্রদেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের নাম হিসেবে আলাদা উল্লেখ করে বেলুচিস্তানকে ভিন্ন দেশ দাবি করেছেন সালমান খান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ‘সম্প্রতি বালুচিস্তানকে আলাদা দেশ হিসেবে উল্লেখ করায় সালমানকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করলো পাক সরকার। পাকিস্তান সরকার তাকে ১৯৯৭ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সিডিউল-৪ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই তালিকাকে সাধারণভাবে কালো তালিকা বলা হয়,যেখানে সন্ত্রাসবাদ বা নিরাপত্তাজনিত কারণে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নাম থাকে।’

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন: সময় টিভি, আরটিভি, যমুনা টিভি (ইউটিউব), চ্যানেল২৪, এনটিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, দেশ টিভি, কালবেলা, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, দেশ রূপান্তর, যায় যায় দিন, দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক আজাদী, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, ঢাকা মেইল, ঢাকা প্রকাশ, রাইজিং বিডি, বার্তা২৪, রূপালী বাংলাদেশ (ইউটিউব), বাহান্ন নিউজ, ঢাকা জার্নাল, প্রতিদিনের কাগজ, বার্তা বাজার, খবরের কাগজ, সুখবর, কর্পোরেট সংবাদ, তালাশ বিডি, জনতার কণ্ঠ, জয়যুগান্তর,দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ, বাংলা ব্রিফ, দৈনিক ডেসটিনি, ভিওডি বাংলা, দৈনিক সরোবর, সকালের আলো

উল্লেখ্য, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে আলোচিত দাবিটি মূলত ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সালমান খানকে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদিত একটি বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে ভুয়া এই দাবি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে পাকিস্তান সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট, বালুচিস্তান সরকারের ওয়েবসাইট, পাকিস্তান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্কিত কোনো ওয়েবসাইটেই আলোচিত দাবির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বেশিরভাগই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্ট ও একটি বিজ্ঞপ্তির ছবিকে সূত্র দেখিয়ে আলোচিত দাবি প্রচার করেছে। একই বিজ্ঞপ্তির ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টেও প্রচার হতে দেখা যায়।

পরবর্তী পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞপ্তিটিতে একাধিক অসঙ্গতি নজরে আসে। প্রথমত, বিজ্ঞপ্তির তারিখ হিসেবে ১৬ অক্টোবর উল্লেখ করা হলেও সালমান খান সংশ্লিষ্ট মন্তব্যটি করেন তারও একদিন পর, অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর। দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞপ্তিটিতে একাধিক বানান ভুল রয়েছে। যেমন: ‘BALOCHISTAN’ এর জায়গায় ‘BALOCIIISTAN’, ‘Terrorism’ এর জায়গায় ‘Terrarism’, ‘affiliated’ এর জায়গায় ‘aftilisted’ এবং ‘concerned’ এর জায়গায় ‘concemed’ লেখা হয়েছে। এছাড়া, সালমান খানের নামে যে CNIC নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে তা ১১ সংখ্যার, যেখানে প্রকৃত CNIC সাধারণত ১৩ সংখ্যার হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, CNIC (Computerized National Identity Card) পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ব্যবহৃত জাতীয় পরিচয়পত্র, যা একজন ভারতীয় নাগরিক সালমান খানের থাকার কথা নয়। তাছাড়া, উল্লিখিত CNIC নম্বরটি পাকিস্তান সরকারের ‘CNIC Information’ ওয়েবসাইটে যাচাই করেও ভুল হিসেবে পাওয়া গেছে।
আলোচিত বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Baloch Women Forum’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে গত ২১ অক্টোবরে প্রচারিত একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিটিতে তিনজন ব্যক্তিকে আলোচিত ১৯৯৭ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সিডিউল-৪ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। উক্ত বিজ্ঞপ্তির নাম্বার, তারিখ, সইয়ের অবস্থানের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তির নাম্বার, তারিখ, সইয়ের অবস্থানের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তির ছবিটি  তৈরি করা হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়া, পাকিস্তান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ফ্যাক্টচেক বিভাগ ২৬ অক্টোবর এক্স-এ প্রকাশিত এক পোস্টে জানায়, পাকিস্তানের কোনো সরকারি রেকর্ড বা বিজ্ঞপ্তিতে সালমান খানের নাম চতুর্থ সূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তথ্য নেই। যাচাইযোগ্য প্রমাণ না থাকায় দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সুতরাং, বেলুচিস্তান নিয়ে মন্তব্যের জেরে সালমান খানকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ তকমা দিয়ে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img