গত ২৮ আগস্ট, “ঢাকায় রাতে অসংখ্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে ইউনুছ সরকার।গভীর রাতে রাস্তায় রাস্তায় চলছে সেনাবাহিনীর ব্যপক লাঠিচার্জ।” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত ২৮ আগস্ট রাতের নয় এবং ওই দিন ঢাকায় জনতার ওপর সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাতে উচ্চশব্দে বাইক চালানোর অভিযোগে কতিপয় ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর মারধরের ভিডিও দাবিতে অন্তত গত জুন মাস থেকে ইন্টারনেটে ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “সাইফুল ইসলাম শেখ সুমন” নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৫ সালের ১২ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি মধ্যরাতে উচ্চশব্দে বাইক চালানোর জন্য সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের ভিডিও।
সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত পোস্টেও (১,২,৩) ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়।
এছাড়া, একই তারিখে জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজে “রাস্তায় মাতাল যুবকদের শাস্তি দিল সেনাবাহিনী!’’ ক্যাপশনে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে গণমাধ্যমটিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং, অন্তত গত জুন মাস থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘28/08/25 আসামিকে ছাড়াতে পুলিশের উপর হামলা। কক্সবাজারে টেকনাফে পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাই করেছে। রাত ১০টার দিকে টেকনাফে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে আসামী ধরতে গিয়ে গুরুত্বর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দুই পুলিশ সদস্য।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, টেকনাফের ২০২২ সালের একটি পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নগর কক্সবাজার নামক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে আসামী ধরতে গিয়ে গুরুতর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দুই পুলিশ সদস্য।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফে পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিও দাবিতে ২০২২ সালের পুরোনো ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি “যদি শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গ্রামে ৫০ থেকে ৬০ জন শহীদ থাকার কথা। দেখা যায় একটা গ্রামে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাও নাই। চেক গুজবের গালগল্প এই দেশে আর চলবে না” শিরোনামে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে দেওয়া পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে কোনো পুলিশ সদস্য বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে এরূপ কোনো বক্তব্য প্রদান করলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।
এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে বক্তার পেছনে থাকা ব্যানারের বাংলা ভাষার শব্দগুলো অর্থপূর্ণ নয়। বক্তার সামনে থাকা গণমাধ্যমের বুমগুলোতে যেসব গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করা হয়েছে বাস্তবে সেসব গণমাধ্যমের লোগোর ডিজাইন এমন নয়।
Screenshot from Youtube
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৬.৯ শতাংশ।
Screenshot from DeepFake-o-meter by Rumor Scanner
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটির দৈর্ঘ ১৬ সেকেন্ড। অনুমান করা হচ্ছে, এই ভিডিওটি গুগলের অত্যাধুনিক এআই টুল Veo দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, যেটি ৮ সেকেন্ড সময়ের দীর্ঘ বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। ২টি আলাদা ভিডিও একত্রিত করে ১৬ সেকেন্ডের আলোচিত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি করা ভিডিওকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যার বিতর্ক নিয়ে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ২৯ আগস্ট জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নিজ দলের কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতির সময় গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর যৌথবাহিনীর লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এসময় নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর লাল বা মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তির সিঁড়িতে বসে থাকা একজনকে মারধরের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি নুরুল হক নুরকে মারার দৃশ্য হিসেবে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওতে লাল বা মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি যাকে পেটাচ্ছিলেন তিনি নুরুল হক নুর নন। টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তির হাতে মারধরের শিকার ব্যক্তি ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা আখতারুজ্জামান সম্রাট। এছাড়া, টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি পুলিশের সদস্য বলেও জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে, নুরুল হক নুরের নিজ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতির শুরু থেকে যৌথবাহিনীর হামলায় আহত হয়ে তার লুটিয়ে পড়ে হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন লাইভ ও ভিডিও ফুটেজ (১, ২, ৩, ৪) বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সিঁড়িতে বসা অবস্থায় লাল বা মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তির হাতে মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তি নুরুল হক নুর নন। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, যৌথবাহিনীর অতর্কিত লাঠিচার্জে আহত হয়ে নুরুল হক নুর রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তার দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী তার কাছে ছুটে আসেন এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর রিকশায় তুলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি থেকে হামলায় গুরুতর আহত হয়ে নুরুল হক নুরের লুটিয়ে পড়ার কোনো মুহূর্তেই তাকে সিঁড়িতে বসা অবস্থায় দেখা যায়নি।
সিঁড়িতে বসে থাকা ব্যক্তিকে লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তির মারধরের ৮ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ভিডিওটি খুবই অস্পষ্ট এবং ঘোলা হওয়ায় ওই ফুটেজ থেকে কাকে মারা হচ্ছে তা স্পষ্ট বোঝা যায় না। পরবর্তীতে একই স্থানে ওই ব্যক্তিকে মারধরের বিভিন্ন কোণের আরও একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে ওই ব্যক্তির মুখ স্পষ্ট দেখা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি নুরুল হক নুর নন।
অনুসন্ধানে, M TV নামের একটি ফেসবুক পেজে একই ঘটনায় ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে মারধরের শিকার ব্যক্তিকে শরীয়তপুর-২ আসনের গনঅধিকার মনোনীত প্রার্থী আক্তারুজ্জামান সম্রাট বলে উল্লেখ করা হয়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে
আক্তারুজ্জামান সম্রাটের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। উক্ত অ্যাকাউন্টের বায়োতে ব্যক্তির পরিচয় হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বলে উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির একাধিক পোস্ট পর্যবেক্ষণ করে M TV নামক ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওটি ছাড়াও একই ঘটনায় ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনেও মারধরের শিকার ব্যক্তি সম্রাট বলে উল্লেখ করা হয়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যে, মারধরের শিকার এই ব্যক্তি ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা আক্তারুজ্জামান সম্রাট।
এদিকে লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশ্ন জাগে। পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার দেখা যায় এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই ব্যক্তি হিসেবে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিম ওই ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ব্যক্তি পুলিশের কেউ কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করা হয়। আখতারুজ্জামান সম্রাটকে পেটানোর স্থানের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি এবং একজন পুলিশ মিলে সম্রাটকে বেধড়ক মারধর করছেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ভিডিওতে দেখা যায়, লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি পেছন থেকে ওই নারীকে মারার চেষ্টা করেন। এতে উপস্থিত সেনাসদস্য ও পুলিশ সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে জেরা করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি নিজেকে পুলিশ সদস্য দাবি করে পরিচয় দেন এবং পরে তাকে পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সংঘর্ষের ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ওই ব্যক্তি পুলিশের সাথে অভিযানে সক্রিয় ছিলেন। এনটিভির লাইভ ফুটেজে তাকে ‘পুলিশ’ লেখা হেলমেট পরে থাকতে দেখা যায়। আরেক ভিডিওতে দেখা যায় তিনি আরেক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মিলে অন্য একজনকে মারধর করছেন। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণে ওই ব্যক্তি সিভিল ড্রেসে থাকা পুলিশ সদস্যই হতে পারেন বলে প্রতীয়মান হয়।
৩০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘এটা তদন্ত করা হবে। আমি যতটুকু জানি উনি হচ্ছেন একজন পুলিশ কনস্টেবল, উনি ডিউটিতেই ছিলেন। বাকিটা আপনারা ডিএমপির কাছ থেকে জানতে পারবেন।’
মূলধারার গণমাধ্যম সমকাল নিশ্চিত করেছে, টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি রাজধানীর পল্টন থানার পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমান। তিনি ওই থানার ওসির গাড়িচালক।
উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটি বলা যায় যে, লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি একজন পুলিশ সদস্য এবং ভাইরাল ভিডিওতে তিনি যাকে মারধর করেছেন তিনি হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা আখতারুজ্জামান সম্রাট।
সুতরাং, প্রচারিত ভিডিওতে লাল বা মেরুন টি-শার্ট পরিহিত যুবকের হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তি নুরুল হক নুর শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে উপজেলা যুবলীগ সভাপতিকে দিনে-দুপুরে অপহরণ করলো সন্ত্রাসীরা। ভিডিওতে সন্ত্রাসীদের দেখা গেলেও পুলিশ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
ভিডিওটিতে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে একজন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক একটি প্রাইভেট কারে তুলতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কোনো উপজেলার যুবলীগের নেতাকে অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত এপ্রিল মাসে ঢাকার উত্তরায় সংঘটিত একটি অপহরণের ঘটনার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। উত্তরায় অপহরণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Noman Ahmed নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন দুপুর ০২:৫০ ঘটিকায় উত্তরা সেক্টর ০৬ এর প্রধান সড়কে একটি প্রাইভেট কারে একজন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক তোলা হয়েছিল। তবে, দুঃখজনকভাবে গাড়িটির নম্বর প্লেট রেকর্ড করা যায়নি।
এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমের (১, ২) ওয়েবসাইটে গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে দিন দুপুরে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কালো মাস্ক পরা এক ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে একটি সাদা প্রাইভেট কারে তুলছেন দুই ব্যক্তি। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ব্যক্তিও যোগ দেয়। এরপর তারা ধাক্কা দিয়ে মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে ফেলেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের ওপর চড়া হয় ওই ব্যক্তিরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিশ্চিত হওয়া গেছে- ভিডিওটি উত্তরা পূর্ব থানা এলাকার। তবে কবেকার ঘটনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিভাগের সকল অফিসারকে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউই এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি’।
পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকা ওয়েবসাইটে গত ৩০ এপ্রিল ‘উত্তরায় প্রাইভেট কারে অপহরণ, ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তরার ওই অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. হাসানুজ্জামান শাওন (৩৬) ও মো. আমির হোসেন (৩২)। দুজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. মহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে- পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ভুক্তভোগী আরিফকে অপহরণ করে রূপগঞ্জে নিয়ে যায়। পরে টাকা আদায়ের পর আরিফকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করেছে। পলাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে, উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামীম আহমেদ জানান, অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার ও অপহরণে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দের পর গত ২৯ এপ্রিল পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। পরবর্তীতে তাঁদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গ্রেপ্তারে বিলম্বের বিষয়ে ওসি শামীম বলেন, ‘অপহরণের পর ভুক্তভোগী আরিফ বা তাঁর স্বজনদের কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। সেই সঙ্গে অপহরণের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর অপহরণকারীরা পুলিশি তৎপরতা টের পেয়ে কক্সবাজারে আত্মগোপন করে। তাঁরা ঢাকায় আসলে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়’।
উক্ত প্রতিবেদনে বা অন্য কোনো গণমাধ্যমে অপহরণের ভুক্তভোগী আরিফের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং, মোহাম্মদপুর থেকে উপজেলা যুবলীগ সভাপতিকে অপহরণের ভিডিও দাবিতে উত্তরায় অপহরণের ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘যশোর শার্শা উপজেলা মান্দারতলা এবং স্বরূপদাহ সংলগ্ন ব্রীজের সামনে পানিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির লাশ পাওয়া গেছে তিনি দু-দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এখন খালে-বিলে আর মাছ পাওয়া যায় না আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের লা’শ পাওয়া যায়’ (বানান অপরিবর্তিত) দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখানো উদ্ধার হওয়া লাশ শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২২ আগস্ট যশোরের শার্শা উপজেলায় বিল থেকে খায়রুল ইসলাম নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উক্ত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমে নিহত খায়রুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দৈনিক ইত্তেফাক -এর ওয়েবসাইটে গত ২৩ আগস্ট ‘বিকেলে নিখোঁজ, সকালে বিলে ভেসে উঠলো বিএনপি কর্মীর মরদেহ’ শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলেচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বেনাপোলের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার স্বরুপদাহ গ্রামের মালশা কুড়া বিল থেকে খায়রুল ইসলাম নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে মালশা কুড়া বিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘নিহত খায়রুল ইসলাম বেনাপোল পোর্ট থানার বোয়ালিয়া গ্রামের নুর মোহাম্মাদের ছেলে। স্থানীয় বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।’
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, নিহত খায়রুল ইসলামের আপন চাচাতো ভাই বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন -এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন দুইটিতে নিহত ব্যক্তি বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, শার্শা উপজেলার আওয়ামী লীগ সভাপতির পরিচয় সম্পর্কে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা টাইমস২৪ -এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নাম সিরাজুল হক মঞ্জু। এদিকে আলোচিত ভিডিও নিহত ব্যক্তির নাম খায়রুল ইসলাম। অর্থাৎ, লাশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নন।
সুতরাং, শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির লাশ উদ্ধারের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘মুক্তিযুদ্ধ একমাত্র আওয়ামীলীগের হাতেই নিরাপদ।- রুমিন ফারহানা’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ একমাত্র আওয়ামীলীগের হাতেই নিরাপদ’ বলতে শোনা যায়৷
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পোস্ট দেখুন- বাংলা ম্যাগাজিন (ফেসবুক)।
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রুমিন ফারহানা ‘মুক্তিযুদ্ধ একমাত্র আওয়ামীলীগের হাতেই নিরাপদ’ বলে মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, একটি সাম্প্রতিক টকশোতে তার বক্তব্যের একটি খণ্ডিত অংশকে বিভ্রান্তিকরভাবে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ আগস্ট ‘ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল |রাজনীতি | Rajniti | 28 August 2025’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner.
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওর ১৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড থেকে রুমিন ফারহানার বক্তব্য শুরু হয়। তার বক্তব্যের ২৫:১৪ থেকে ২৫:১৭ পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিডিওটির ২৫:০০ থেকে ২৫:২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে উক্ত টকশোর বক্তা রুমিন ফারহানা বলেন, “এই যে জুলাই-অগাস্টের পর খুঁজে খুঁজে খুঁজে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর ভাষ্কর ভাঙা হলো, তাতে কী হলো? হাসিনা আবারও প্রমাণ করার বা বলার সুযোগ পেলো; প্রমাণ করা তো সেটা ইতিহাসের ব্যাপার, বলার সুযোগ পেলো যে মুক্তিযুদ্ধ একমাত্র আওয়ামীলীগের হাতেই নিরাপদ। যখন আপনি মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় জুতার মালা পরালেন, এই ঘটনা হাসিনার আমলেও হইছে ২/১ টা…”।
এই বক্তব্য থেকে “মুক্তিযুদ্ধ একমাত্র আওয়ামীলীগের হাতেই নিরাপদ” অংশটি কর্তন করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷ এটি রুমিন ফারহানার নিজস্ব মন্তব্য নয়।
সুতরাং, রুমিন ফারহানা ‘মুক্তিযুদ্ধ একমাত্র আওয়ামীলীগের হাতেই নিরাপদ’ বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় “জামাত নেতাদের বিচার প্রশ্নবৃদ্ধ হওয়ার পর, রায় কার্যকর করা উচিত হয়নি” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয় আলোচিত মন্তব্যটি করেননি এবং উক্ত শিরোনামে যমুনা টিভিও কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভিন্ন মন্তব্য সম্বলিত যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে যমুনা টিভির নাম ও লোগো দৃশ্যমান। তবে, এটি প্রকাশের কোনো তারিখ উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, যমুনার ফেসবুক পেজে গত ২৪ জুলাই ‘ভার্জিনিয়ায় জয়ের দুই বাড়ির সন্ধান জব্দের উদ্যোগ দুদকের’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম ব্যতিত বাকি সকল উপাদানের মিল রয়েছে। যমুনার মূল ফটোকার্ডটিতে ‘ভার্জিনিয়ায় জয়ের দুই বাড়ির সন্ধান জব্দের উদ্যোগ দুদকের’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘জামাত নেতাদের বিচার প্রশ্নবৃদ্ধ হওয়ার পর, রায় কার্যকর করা উচিত হয়নি’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যমুনা টিভির এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা করেই আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত যমুনা টিভির পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুদকের তথ্যমতে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে দুইটি বাড়ি শনাক্ত হয়েছে, যা আয়কর নথিতে উল্লিখিত নয় এবং জব্দের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি, তাঁর নামে আরও ১৩টি বাড়ি ও একটি শপিং মলের মালিকানার অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
সুতরাং, সজীব ওয়াজেদ জয় “জামাত নেতাদের বিচার প্রশ্নবৃদ্ধ হওয়ার পর, রায় কার্যকর করা উচিত হয়নি” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
মেঘ বিস্ফোরণ, প্রবল বর্ষণ ও ভারতীয় বাঁধ খুলে দেওয়ায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও পাঞ্জাবসহ বেশকিছু অঞ্চল ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়েছে। যাতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, অনলাইনে ৪টি ভিডিওর সমন্বয়ে তৈরি ১টি কোলাজ ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওগুলো পাকিস্তানের চলমান বন্যার পরিস্থিতির।
উল্লেখ্য, ভিডিওগুলোর মধ্যে ৩টি ভিডিওতে বন্যা কবলিত স্থান থেকে সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযান দেখা যায় এবং অপর একটিতে মানুষকে পানির মধ্যে খানিকটা ভেসে থাকতে দেখা যায়।
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টটি ৩২ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ১৯ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাকিস্তানের চলমান বন্যা পরিস্থিতির ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিও চারটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওগুলোর কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে ভিডিওগুলো প্রচার হতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে ভিডিও চারটি সূক্ষভাবে পর্যালোচনা করে এতে বেশকিছু এআইজনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। প্রচারিত ভিডিওগুলোতে প্রদর্শিত মানুষ, নৌকা, গাড়ির নড়াচড়া ও পানির উচ্চতায় অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায়। এছাড়া, পানির লেভেলের সাথে সেনাবাহিনীর গাড়ির অবস্থানেরও অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায় যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে প্রথম ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষজন নৌকা/স্পিডবোটে করে আসছে বেশি পানির কারণে আবার অপরদিকে কাছে থাকা সেনাবাহিনীর গাড়ির চাকা খুবই কম পানির কারণে পুরোপুরি ডুবেনি দেখা যাচ্ছে যা অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
Screenshot : Rumor Scanner/Ai Or Not
এছাড়াও, এ বিষয়ে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘এআই অর নট’ এ যাচাই করলে দেখা যায় প্রচারিত কনটেন্টটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওগুলো আসল নয়।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে পাকিস্তানের চলমান বন্যা পরিস্থিতির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “১৩ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ বোনাস | বিকাশের অসাধারণ মাইলফলক উদ্যাপনে প্রতি গ্রাহক পাচ্ছেন ১৩০০ টাকা ফ্রি বোনাস—অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন বা কোনও চার্জ ছাড়াই!” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৩ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষে প্রতি গ্রাহককে ১,৩০০ টাকা বোনাস দেওয়ার কোনো ঘোষণা বিকাশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বরং, ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ঈদ বোনাসের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে থাকা ওয়েবসাইট লিংকে প্রবেশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করলে উপরে বিকাশের লোগো এবং “১৩ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ বোনাস | বিকাশের অসাধারণ মাইলফলক উদ্যাপনে প্রতি গ্রাহক পাচ্ছেন ১৩০০ টাকা ফ্রি বোনাস—অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন বা কোনও চার্জ ছাড়াই!” শীর্ষক একটি লেখা পাওয়া যায়। এরপর অফারের বিস্তারিত অংশে বলা হয়, “অফারটি শুধুমাত্র বৈধ ও সক্রিয় বিকাশ অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য। প্রতি মোবাইল নম্বর-এ একবারই ১৩০০ টাকা যুক্ত হবে “বোনাস ব্যালেন্স” হিসেবে। বোনাস ক্লেইম করার পর সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা মধ্যে টাকা জমা হবে। এই বোনাস দিয়ে সেন্ড মানি, মোবাইল রিচার্জ ও বিল পেমেন্ট করা যাবে। অভিযুক্ত বা সন্দেহজনক লেনদেন মিললে বিকাশ যে কোনও সময় অফার স্থগিত করতে পারে।”
Screenshot: Scamming website
আরেকটু নিচে স্ক্রল করলেই পাবলিক মন্তব্য দাবিতে একাধিক ব্যক্তির মন্তব্য দেখতে পাওয়া যায় যারা টাকা পেয়েছেন বলে স্বীকার করছেন। উক্ত ওয়েবপেজটির বিস্তারিত অংশের খানিকটা ওপরে ‘বোনাস পেতে ক্লিক করুন’ লেখা সম্বলিত একটি হাইপারলিঙ্ক পাওয়া যায়।
Screenshot : Scamming website
রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন অনুসন্ধানকারী হাইপারলিঙ্কড লেখাটিতে ক্লিক করলে এটি আরেকটি নতুন পেজে নিয়ে যায়। উক্ত পেজটিতে বলা হয়, “অভিনন্দন, প্রিয় গ্রাহক!
সঠিক তথ্য দিয়ে নিচের ফরমটি পূরণ করুন। আপনি যে বিকাশে টাকা উত্তোলন করতে চান সেই বিকাশ নম্বরটি অবশ্যই সচল থাকতে হবে, ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার বিকাশ নম্বরে কোড পাঠানো হবে।” এরপর বিকাশ নম্বর এবং পিন চাওয়া হয়৷ এ পর্যায়ে নিজের বিকাশ নাম্বার, তবে ভুল পিন দিলে এটি নতুন আরেকটি পেজে নিয়ে যায়।
Screenshot : Bkash payment page, redirected from Scamming website
উক্ত নতুন পেজটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। নতুন পেজের ইন্টারফেসটি হুবহু বিকাশে পেমেন্ট করার ইন্টারফেসের মতো। তাছাড়া, দাবি অনুসারে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারীর ১,৩০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও নতুন ইন্টারফেসটি হচ্ছে কাউকে টাকা পেমেন্ট করার ইন্টারফেস। অধিকন্তু, এখানে পেমেন্ট গেটওয়ের জায়গায় বিকাশ কর্তৃপক্ষের কোনো কিছুর বদলে “PUSTI FOOD AND LIVE BAKERY-RM1010232” নামটি দেখা যায়৷ এছাড়াও, পূর্ববর্তী ফর্মে উল্লিখিত নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার থেকেই পেমেন্ট হতে যাচ্ছে বলে দেখা যায়। এরপর নাম্বার কনফার্ম করলে ওটিপি আসে এবং ওটিপি চাওয়া হয়। কিন্তু, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারী এর পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করেন নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে, ১৩ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রতি গ্রাহককে ১,৩০০ টাকা বোনাস দেওয়ার কোনো ঘোষণা বিকাশ দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে বিকাশের ওয়েবসাইট, বিকাশের ফেসবুক পেজ বা বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিকাশের সর্বমোট গ্রাহক সংখ্যার বিষয়ে অনুসন্ধান করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ২৩ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে গত জানুয়ারি মাসের মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএমএস) নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটির এক পর্যায়ে বলা হয়, বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা প্রায় আট কোটি। অর্থাৎ, বিকাশের ১৩ কোটি গ্রাহক পূর্তি হওয়ার দাবিটির সপক্ষেও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ নেই।
সুতরাং, ১৩ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষে প্রতি গ্রাহককে ১,৩০০ টাকা বোনাস দিচ্ছে বিকাশ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।