সম্প্রতি “আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে!!” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার মেয়ের জন্য বাবার আর্তনাদের দৃশ্যের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য কোনো ঘটনার নয় বরং, স্ক্রিপ্টেড বা অভিনীত ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২৫ সালের ২০ জুন “মৌসুমীর সাথে কি হলো” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে৷
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও প্রচারকারী পেজটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি একটি কনটেন্ট ক্রিয়েশন এ্যাকাউন্ট। তারা বিভিন্ন ধরণের বিনোদনমূলক ভিডিও (১,২,৩) বানিয়ে থাকেন। আলোচিত ভিডিওটিও নাটকের জন্য ধারণকৃত অভিনয়ের অংশ।
সুতরাং, ধর্ষণের শিকার মেয়ের জন্য বাবার আর্তনাদের বাস্তব ঘটনা দাবিতে একটি স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি নৃশংসভাবে এক ব্যক্তিকে কোপানোর ভিডিও “দেশটাকে যেন নরকে পরিণত করেছে ইউনূস সরকার” শীর্ষক ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে প্রচারিত ভিডিওটি সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটা কোনো নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও নয় বরং, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে কলম্বিয়ার কুকুতায় আন্দ্রেস আলবার্তো সোসা পেরদোমো নামক এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘Tu Nota’ নামক হন্ডুরাস ও মধ্য আমেরিকা ভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১২ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে দুইটি ফ্রেমের কোলাজ একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয় যেগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “”বিশ্বাসঘাতক বন্ধু” — এমনই শিরোনামের একটি ভয়াবহ ভিডিও টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে, যা অনলাইন জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওতে আন্দ্রেস আলবার্তো সোসা পেরদোমো নামের এক যুবককে কলম্বিয়ার কুকুতা শহরের একটি সেতুর নিচে একদল ব্যক্তি আক্রমণ করছে — সেই মুহূর্তটি স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।… ছবিতে দেখা যায়, আন্দ্রেসকে তিনজন ব্যক্তি ঘিরে ফেলেছে — যাদের একজনের হাতে ছুরি। মনে হচ্ছে, তারা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। আক্রমণকারীদের ব্যবহার ছিল নির্মম এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা অত্যন্ত হিংস্রভাবে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্দ্রেস আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেও আক্রমণকারীদের সহিংসতায় তিনি দ্রুত পরাজিত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিণতিতে আন্দ্রেস আলবার্তোর দেহে ৫০টিরও বেশি ছুরিকাঘাত করা হয়। তার মাথা, বুক, পেট ও পিঠে গুরুতর আঘাত লাগে, যা তার প্রাণহানির কারণ হয়। এই করুণ ঘটনা ২১ জানুয়ারি, নোরতে দে সান্তান্দার বিভাগের কুকুতা শহরে ঘটে।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)
এছাড়াও, প্রচারিত উক্ত ভিডিওর সংযুক্তিসহ ‘La Opinión Cúcuta’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলেও ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারিতে “বিশেষ প্রতিবেদন | রাস্তায় বসবাসকারী এক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করার ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, “কুকুতায় চলমান সহিংসতা এখন আর কোনো নিয়ম বা সীমার মধ্যে নেই। সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে এটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যেখানে এক যুবককে ইউস্তোরজিও কোলমেনারেস ব্যাপটিস্তা সেতুর নিচে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেতুটি লাতিনো পাড়ায় অবস্থিত, পরিবহন কেন্দ্রের একদম কাছেই। এই ঘটনাটি নাগরিকদের মধ্যে চাঞ্চল্য ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি কুকুতায় অপরাধ কতটা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)
এছাড়াও, ভেনেজুয়েলা ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘El Clarin’ এর ওয়েবসাইটেও উক্ত ভিডিও থেকে ধারণকৃত স্ক্রিনশটের সংযুক্তিসহ ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারিতে প্রচারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এটি কলম্বিয়ার কুকুতার ঘটনা এবং ঘটনাটি ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ও ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ এর মধ্যকার সময়ে ঘটেছে।
সুতরাং, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে কলম্বিয়ায় এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করার ভিডিওকে সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী নারীর বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারটে প্রচার করা হয়েছে।
মুরাদনগরের ঘটনার প্রেক্ষিতে এক্সেও ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি মুরাদনগরের গত ২৬ জুনের ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীর বক্তব্যের নয় বরং, অন্তত ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান ভিন্ন আরেকটি ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘@k36077’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর প্রচারিত একটি পোস্টে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি দীর্ঘতম সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: @k36077 (X)
পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, গত ২৫শে সেপ্টেম্বর রাতে নাটোর জেলার ছোট চৌগ্রামের হালদার পাড়া এলাকায় স্থানীয় মুসলিম ও বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম স্বপ্না হালদার নামে এক হিন্দু গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
এছাড়া ভিডিওতে ভুক্তভোগী নারীর মুখেও আসামি হিসেবে ‘রবিউল’ নাম নিতে শোনা যায়।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ‘ঘরে ঢুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘নাটোরের সিংড়ায় এক গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী যুবক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। বুধবার [২৫ সেপ্টেম্বর] ভোররাতে স্বামী মাছ ধরতে যাওয়ার সুযোগে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক ওই হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানা গেছে।’
এছাড়ও বেসরকারি টেলিভিশন সংবাদ চ্যানেল নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, ২০২৪ সালেরর ভিন্ন আরেকটি ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ভুক্তভোগীর বক্তব্যের ভিডিও দিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে গত ২৬ জুনের ধর্ষনের অভিযোগের ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীর বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই তরুণ-তরুণীর অন্তরঙ্গ মূহুর্তের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি “গ্রীন ইউনিভার্সিটির মেধাবী শিক্ষার্থীরা বাসের মধ্যেই রোমাঞ্চকর মুহূর্তে!!”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের বা গ্রীন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের নয় বরং, ভারতের নভি মুম্বাইয়ে গত ২০ এপ্রিলে ধারণকৃত ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া নিউজ’ এর ওয়েবসাইটে উক্ত ভিডিওর স্ক্রিনশটের সংযুক্তিসহ গত ২৮ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ভারতের নভি মুম্বাইয়ের।
Comparison : Rumor Scanner
পাশাপাশি, এ বিষয়ে ‘পর্দা ফাঁস’ নামক ভারতভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমেও উক্ত ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওটিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ ও ‘নিউজ১৮’ এর ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। জানা যায়, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ঘটনাটি গত ২০ এপ্রিলের। প্রতিবেদনগুলো থেকে আরও জানা যায়, ‘একটি চলন্ত এসি বাসে এক তরুণ যুগল যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার ভিডিও প্রচার হওয়ার প্রেক্ষিতে নভি মুম্বাই মিউনিসিপাল কর্পোরেশন (NMMC) এক বাস কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। হস্তক্ষেপ না করায় কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে তদন্ত চলছে। ঘটনাটি পানভেল থেকে কাল্যানগামী একটি বাসে ঘটেছিল এবং ভিডিওটি এক মোটরচালক ধারণ করেন।” (অনূদিত) তবে কোথাও বাংলাদেশের গ্রীন ইউনিভার্সিটির নাম উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, বাসটির পেছনের দিকে লাইসেন্স নাম্বারে ‘MH 43’ দেখতে পাওয়া যায় যা ভারতীয় একাধিকওয়েবসাইটের তথ্যমতে মূলত ভারতের মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বাইয়ের আঞ্চলিক পরিবহন অফিসের (RTO) অধীনে রেজিস্ট্রেশন করা পরিবহন বুঝায়।
সুতরাং, বাংলাদেশের গ্রীন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের দৃশ্যের ভিডিও দাবিতে ভারতের নভি মুম্বাইয়ের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘শীর্ষ ১০০০ জন ব্যবহারকারীকে দেওয়া হচ্ছে বার্ষিক নগদ পুরস্কার!’ দাবিতে ‘bKash তার সকল ব্যবহারকারীদের ৳২০০০ বার্ষিকী ফান্ড দিচ্ছে।’ শিরোনামে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ‘bKash’ এর লোগো যুক্ত একটি ওয়েবসাইটের লিংক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষত মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত লিংক দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাৎসরিক ফান্ড প্রদান উপলক্ষে বিকাশ ৳২০০০ নগদে জেতার সুযোগ দিচ্ছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সত্য নয়। প্রতারকরা নগদ ২০০০ টাকার লোভ দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের বিকাশের লোগো সম্বলিত ভুয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশ করিয়ে ওই ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন প্রতারণামূলক লিংকে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, ক্ষতিকর সফটওয়্যার সংক্রমণ এবং আর্থিক প্রতারণার ঝুঁকি রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা লিংকের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর ব্যবহারকারীকে প্রথমেই একটি বার্তা দেখানো হয়, যেখানে জানানো হয় যে ‘GET ৳২০০০’ লিখা বোতামে ক্লিক করে এবং মোবাইল নম্বর লিখে ৳২০০০ বার্ষিক উপহার জেতার সুযোগ পাবেন। ‘GET ৳২০০০’ লিখা বোতামে ক্লিক করার পর মোবাইল নম্বর প্রদান করতে বলা হয়। এসব ধাপ অনুসরণ করার পর ব্যবহারকারীকে জানানো হয় ‘অভিনন্দন, আপনি bKash থেকে ৳2000 জন্মদিন ক্যাশ উপহারের জন্য যোগ্য।’।
এরপর ব্যবহারকারীর সামনে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। তাকে জানানো হয়, পুরস্কার পেতে হলে অবশ্যই এই প্রচারণার লিংক মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম মেসেঞ্জারে ৫টি গ্রুপে বা ১৫ জন বন্ধুর কাছে পাঠাতে হবে। এরপর তাকে বলা হয় যে শর্তটি পূরণ হলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবসাইটটির “PAYMENT FORM” পেজে রিডিরেক্ট হবেন এবং সফলভাবে আবেদন করার পর ব্যবহারকারী তার bKash ড্যাশবোর্ডে ৳2000 পেয়ে যাবেন।
অনুসন্ধানের স্বার্থে রিউমর স্ক্যানার পুরো ধাপটি সম্পন্ন করার পর আরও একটি বার্তা প্রদর্শিত হয়, যেখানে জানানো হয় যে ব্যবহারকারীর জন্য ৳2000 জন্মদিন ফান্ড অনুমোদিত হয়েছে। এরপর ব্যবহারকারীকে বলা হয়, তার bKash অ্যাকাউন্টে টাকা পেতে একটি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এতে বলা হয়, যাচাইকরণ সম্পন্ন করতে নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক ধাপ অনুসরণ করতে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপ ডাউনলোড করা, ফোন নম্বর যোগ করা, নির্দিষ্ট কোনো অ্যাপ ইনস্টল করা, একটি সার্ভে সম্পন্ন করা।
যাচাইকরণের জন্য দেওয়া অপশনে ক্লিক করলে ব্যবহারকারীকে ‘Dangerous site’ শিরোনামে সতর্কবার্তা প্রদান করে। এ ধরনের ফিশিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্যান্য ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারে, ফলে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং আর্থিক প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। বিশেষ করে, ফোন নম্বর প্রদান করলে ব্যবহারকারী প্রিমিয়াম এসএমএস চার্জের ফাঁদে পড়তে পারেন, যা অজান্তেই মোবাইল ব্যালান্স কেটে নিতে পারে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বিকাশের ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোনো অফারের প্রচারণা খুঁজে পাওয়া যায়নি, এবং গণমাধ্যমেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
সুতরাং, বাৎসরিক ফান্ড প্রদান উপলক্ষে বিকাশ ৳২০০০ নগদে জেতার সুযোগ দিচ্ছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, “গুরুতর অসুস্থ মাহমুদুর রহমান রক্তাক্ত পায়ুপথে লাল গুড়াকৃমির অস্তিত্ব” শিরোনামে জাতীয় দৈনিক আমার দেশ এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “গুরুতর অসুস্থ মাহমুদুর রহমান রক্তাক্ত পায়ুপথে লাল গুড়াকৃমির অস্তিত্ব” শিরোনামে দৈনিক আমার দেশ এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আমার দেশের প্রচলিত ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে আমার দেশ পত্রিকার লোগো রয়েছে এবং ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৯ জুন, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ফটোকার্ডটির একপাশে (বামে কোণায়) ওয়েবসাইটের ঠিকানার স্থলে dailymollardesh.com লিখা রয়েছে। তবে আমার দেশের মূল ওয়েবসাইটের নাম dailyamardesh.com।
উক্ত ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ এবং লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দৈনিক আমাদের দেশের ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। এছাড়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের সাথে দৈনিক আমার দেশের প্রচলিত ফটোকার্ডের সঙ্গে গ্রাফিক্যাল মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও ফটোকার্ড দুটির শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্ট ডিজাইনের অমিল রয়েছে।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে গণমাধ্যমটির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
গত ২৬ জুন রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এসময় সেখানে থাকা একটি পূজা মণ্ডপও ভাঙা পড়ে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি, খিলক্ষেতে ভেঙে ফেলা স্থাপনাটি ৩০০ বছরের পুরোনো মন্দির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খিলক্ষেতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা পড়া পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছর পুরোনো নয়। প্রকৃতপক্ষে, ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক বছর যাবৎ খিলক্ষেত সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের অধীনে অস্থায়ীভাবে প্যান্ডেল তৈরি করে দুর্গা পূজা পালিত হয়ে আসছিল। ভেঙে ফেলা মণ্ডপের স্থানে গতবছর দিয়ে মাত্র তিনবার দুর্গা পূজা পালিত হয়।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে রাজ দ্বীপ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে দাবি করা হয়, স্থানীয় মুসলিমদের বাঁধার কারনে ঢাকার খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির পরিচালনা পরিষদের পূজার মন্ডপ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও পোস্টটিতে দাবি করা হয়, উক্ত স্থানে রেলওয়ে কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রায় ১২ বছর যাবৎ সেখানে পূজা হয়ে আসছে।
পোস্টটিতে ব্যবহৃত ছবিগুলো পর্যালোচনা করে একটি ছবিতে ‘খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির এর জন্যে নির্ধারিত স্থান (অস্থায়ী)’ শীর্ষক একটি ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে তখনও পর্যন্ত সেখানে কোনো পূজা মণ্ডপ ছিলনা।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খিলক্ষেত সনাতন সমাজকল্যান সংঘ নামের একটি ফেসবুক পেজে একই বছরের ৩ অক্টোবর প্রচারিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশনেনে উল্লেখ করা হয়, এটি খিলক্ষেত সনাতন সমাজ কল্যান সংঘ কতৃক আয়োজিত সেবছরের দুর্গা পূজার মন্ডপের ছবি। যেখানে বাঁশ দিয়ে নির্মাণাধীন একটি প্যান্ডেলের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, অস্থায়ী সেই স্থানে পরবর্তীতে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে খিলক্ষেত সনাতন সমাজকল্যান সংঘ নামের ওই ফেসবুক পেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে গত ২৬ জানুয়ারি প্রচারিত এবছরের সরস্বতী পূজার একটি কার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
কার্ডটি থেকে প্রাপ্ত খিলক্ষেত সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অর্জুন রায়ের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি আলোচিত দাবিটির বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ভেঙে ফেলা স্থাপনাটি ৩০০ বছরের পুরোনো মন্দির দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভুয়া। ২০০৪ সাল থেকে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ভেঙে ফেলা মন্দিরের স্থানে কয়েক বছর অন্তর অন্তর দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর নিয়ে সেখানে মোট তিনবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত বছরের দুর্গাপূজার সময় ওই এলাকায় একটি অস্থায়ী মন্ডপ তৈরি করা হয়। যাকে ঘিরে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার নাম ‘খিলক্ষেত সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির কমিটি’। সেবছরই প্রথমবারের মতো সেখানে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এতদিন সেটি টিনের বেড়ার থাকলেও গত ২৩ জুন মন্দির কর্তৃপক্ষ পাকা দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। যাতে স্থানীয়রা বাধা দেয় বলেও জানা যায়। তবে কোনো গণমাধ্যমে বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ওই পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছরের পুরোনো এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে খিলক্ষেতে সাম্প্রতিক সময়ে উচ্ছেদকৃত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছর পুরোনো নয়।
সুতরাং, রাজধানীর খিলক্ষেতে উচ্ছেদকৃত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছরের পুরোনো দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলামা মোহাম্মদ বদরুদ্দিনের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, জুলাই সন্ত্রাসী আন্দোলনে ব্যবহৃত শতাধিক দেশীয় অস্ত্র এবং পর্ণোগ্রাফি তৈরীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ বেশ কয়েকজন নারী সমন্বয়ককে উদ্ধার এবং গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী।’- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, একই ভিডিও ‘ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বদরুদ্দিনের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ৪৫ কেজি গাঁজা, ৩৩৭টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ২১১টি হেরোইনের প্যাকেট, ব্যবহৃত শতাধিক দেশীয় অস্ত্র, ২টি বিদেশি মদের বোতল, ৯টি ফিচার ফোন এবং ১০টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও পর্ণোগ্রাফি তৈরীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সহ বেশ কয়েকজন নারী (পতিতা)’ কে উদ্ধার এবং গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী।’- শীর্ষক দাবিতেও প্রচার করতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদকসহ কয়েকজন গ্রেফতারের ঘটনাটি বিএনপি কিংবা জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে নয়। গত ২৬ জুন রাতে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর রেলবস্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে আটকের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজের লোগো রয়েছে। উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
ডিবিসি নিউজ কর্তৃক প্রচারিত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ফরিদপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ ১৫ মাদক ব্যবসায়ী আটকের।
উক্ত ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ২৭ জুন “ফরিদপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে নারীসহ আটক ১৫”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ জুন রাত ৮ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর রেলবস্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল। অভিযানে নারীসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযানে ৪৫ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ৩৩৭টি ইয়াবা, ২১১টি হেরোইনের প্যাকেট, ৬১টি দেশীয় অস্ত্র, দুটি বিদেশি মদের বোতল, নয়টি ফিচার ফোন ও ১০টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন জব্দ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, অভিযানটি জামায়াত বা বিএনপির কোনো নেতার বাড়িতে পরিচালিত হয়নি।
এছাড়া, আটককৃতরা সমন্বয়ক এমন কোনো তথ্যও প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ নেই।
সুতরাং, ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর রেলবস্তিতে যৌথ বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে ১৫ জনকে আটকের দৃশ্যকে জামায়াত বা বিএনপির নেতার বাড়ি থেকে মাদকসহ নারী সমন্বয়কদের গ্রেফতার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ২৭ জুন আরটিভির ফেসবুক পেজে “গাঁজা কিনতে লাগবে ‘প্রেসক্রিপশন’” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ডকে বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আরটিভিতে প্রকাশিত গাঁজা কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, বরং এটি থাইল্যান্ডের ঘটনা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটির মন্তব্যঘরে পাওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “গাঁজার অবাধ ব্যবহারে লাগাম টানতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে থাইল্যান্ডের সরকার। তিন বছর আগে গাঁজা বৈধ করার পর এবার এ বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দিলেন দেশটির সরকার। এখন থেকে গাঁজা কিনতে দেশটিতে প্রয়োজন হবে প্রেসক্রিপসন বা ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বরাতে বলা হয়, গাঁজা নিয়ন্ত্রণে আবারও কঠোর হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে থাইল্যান্ড সরকার। গত ২৪ জুন (মঙ্গলবার) দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুয়েতিন এক আদেশের মাধ্যমে সব দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া গাঁজা বিক্রি নিষিদ্ধ করেন। এ ছাড়া গাঁজা ফুলকে ‘নিয়ন্ত্রিত ভেষজ’ হিসেবে পুনরায় শ্রেণিকরণের প্রস্তাব দেন তিনি।”
অর্থাৎ, গাঁজা কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। আরটিভিতে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামে দেশের নাম উল্লেখ না করায় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এটিকে বাংলাদেশের ঘটনা ধরে নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
সুতরাং, গাঁজার অবাধ ব্যবহারে লাগাম টানতে থাইল্যান্ড সরকারের গাঁজা কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগার উদ্যোগের ঘটনাকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুব মহিলা দল নামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অনুমোদিত কোনো অঙ্গ কিংবা সহযোগী সংগঠনই নেই। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট থেকে এক নারীর এডাল্ট ভিডিও সংগ্রহ করে তা আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘indian.viral.memes2.0’ নামক ইনস্টগ্রাম অ্যাকান্টে গত ১৪ এপ্রিল প্রচারিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওরে মিল রয়েছে। ভিডিওটিতে মেয়েটিকে অন্য আরেকটি মেয়ের সাথে হিন্দিতে কথা বলতে দেখা যায়। এছাড়াও, ভিডিওটিতে ‘SYM CREATION’ নামে একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও একই লোগোযুক্ত ভিডিওটি গত ১৫ এপ্রিল ‘love_guru____20k’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রচার করতে দেখা যায়।
উক্ত লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে ‘SYM Creation’ নামক একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটির লোগোর সাথে পূর্বে উল্লিখিত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ভিডিওর লোগোর মিল রয়েছে। তবে, পেজটিতে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, পেজটিতে সর্বশেষ পোস্ট দেখা যায় ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন যাচাই করে দেখা যায় ভারতে থেকে ৫ জন ব্যক্তি পেজটি পরিচালনা করেন। আরও জানা যায় পেজটি ২০২১ সালের ২ অক্টোবর ‘Desi Comedy’ নামে তৈরি করা হয়। একই বছরের ৩০ অক্টোবর নাম পরিবর্তন করে ‘Desi Baheduaa Comedy’ নাম রাখা হয় এবং একই বছরের ৭ নভেম্বর পেজটির বর্তমান নাম ‘SYM Creation’ নামে পরিবর্তন করা হয়।
তবে ইনস্টাগ্রামেমে ‘sym_company_official’ নামক অ্যাকাউন্টে গত ২০ ও ১০ জুন ভিডিওটি দুইভাবে প্রচার করতে দেখা যায়। অ্যাকাউন্টটির লোকেশন হিসেবে ভারত উল্লেখ রয়েছে। অ্যাকাউন্টটি ৩ বার নাম পরিবর্তন করেছে।
এছাড়াও ইনস্টাগ্রামে একই লোগোতে এবং প্রায় একই নামে আরও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন – এখানে, এখানে।
‘kavyareddy5486’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৭ মে এবং ‘_aditi_252526’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৯ মে একই মেয়ের ভিন্ন একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
তাছাড়া, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা মেয়েটির ‘SYM Video Clip’ নামক ফেসবুক পেজে একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়। দেখুন – এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। ভিডিওগুলোতে মেয়েটিকে হিন্দিতে কথা বলতে দেখা যায়। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় পেজটি ভারত থেকে ৪ জন ব্যক্তি পরিচালনা করে থাকেন এবং দেখা যায় পেজটি ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে মতিঝিল বিএনপির কথিত যুব মহিলা দলের নেত্রীর পরিচয় খোঁজ করতে গিয়ে বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দলটির ৯ টি সহযোগী ও ২ টি অঙ্গ সংগঠনের নাম পাওয়া যায়। ১১ টির সংগঠনের মধ্যে যুব মহিলা দল নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
সহযোগী সংগঠনগুলো হল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল। অঙ্গসংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইট “নিপুণ-রুমার নেতৃত্বে যুব মহিলা দল!” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রতিবেদনে অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, “অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী আরিফা সুলতানা রুমাকে সদস্য সচিব করে জাতীয়তাবাদী যুব মহিলা দল গঠনের খসড়া কাজ চলছে।” তবে এই প্রতিবেদনের পরবর্তী সময়ে এই কথিত কমিটি গঠনের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জাগো নিউজ২৪ এর প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে সানজানা চৈতী পপিকে সভাপতি ও লায়ন হাসিনা মোর্শেদ কাকলীকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী যুব মহিলা দল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে তৎকালীন মহিলা দলের এক প্রভাবশালীর নেত্রীর বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।
সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে ভারতীয় নারীর এডাল্ট ভিডিও সংগ্রহ করে কথিত যুব মহিলা দলের মতিঝিল শাখার নেত্রীর ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।