Home Blog Page 10

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে মির্জা গালিবের নিয়োগ পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, ক্লেইম পোস্টের ক্যাপশন তো এটা না  ‘এই সেই ড. মির্জা গালিব, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে ৯৮% নম্বর নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছিলেন। তবুও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। তখন তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন— “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিক্ষক হিসেবে নেয়নি, এটা তাদের ব্যর্থতা। আমি ঢাবির চাইতেও বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো।” আজ ড. মির্জা গালিব যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মির্জা গালিব হার্ভার্ডে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পাননি বরং, তিনি ২০২২ সালে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। 

২০২২ সালেও একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। সেসময় এ বিষয়ে মির্জা গালিবের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের (২০২২ সাল) আগস্টে তিনি হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অর্থাৎ সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, “কেউ কেউ হাওয়ার্ড (Howard) বিশ্ববিদ্যালয়কে হার্ভার্ড (Harvard) উল্লেখ করছেন এবং সহকারী (Assistant) অধ্যাপক পদকে সহযোগী (Associate) অধ্যাপক পদ বলছেন, যা সত্য নয়।”

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে

তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে ভক্তদের অগ্নিসংযোগের দাবিটা ভুয়া

গত ২৫ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের সেমিফাইনালের ম্যাচে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপরীতে মাঠে নামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পাকিস্তানের ১৩৫ রানের টার্গেটে মাত্র ১১ রানের ব্যবধানে ১২৪ করে ঘরে ফেরে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে তাওহিদ হৃদয় ১০ বলে মাত্র ৫ রান করে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্যাচ আউট হন। এর প্রেক্ষিতে, ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও আলোচিত অগ্নিসংযোগের ভিডিওর সাথে তাওহিদ হৃদয়ের কোনো যোগসূত্র নেই। প্রকৃতপক্ষে, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পুরোনো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

তাওহিদ হৃদয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড়। তার পারফরমেন্সের জন্যে যদি তার বাড়িতে উত্তেজিত জনতা অগ্নিসংযোগ করে থাকে তাহলে সেটি গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার হওয়ার কথা। তবে দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে উত্তেজিত জনতার অগ্নিসংযোগ করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিতে ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীতে সাবেক এমপির দুটি বাড়িতে আগুন শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর অংশের সাথে উক্ত ভিডিওর শুরুর ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটির শিরোনামে থেকে জানা যায়, এটি নোয়াখালীর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এবং অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে এ ঘটনায় প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। 

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তার পেটুয়াবাহিনী স্থানীয় জনতার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ তুলে এই ঘটনা ঘটানো হয় বলেও প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়। এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটির অগ্নিসংযোগের দৃশ্যটি প্রতিবেদনগুলোর ফিচার ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

সুতরাং, নোয়াখালীর হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পুরোনো ভিডিওকে ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগুন দেওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বিউটি পার্লারে ১৬ নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, ‘পাকিস্তানের ইসলামাবাদে একটি বিউটি পার্লারে কর্মরত ১৬ জন নারীকে একত্রে গণধর্ষণ করা হয়েছে’ দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বিউটি পার্লারে ১৬ নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি, এমনকি প্রচারিত ভিডিওটি ইসলামাবাদেরই নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৯ জুলাই পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির একটি বিউটি পার্লারে জেনারেটরের ধোঁয়া ঢুকে অসুস্থ হয়ে পড়েন ১০ জন নারী। সেই ঘটনার দৃশ্য এটি। 

অনুসন্ধানে ‘Israr Ahmed Rajpoot’ নামক একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

Israr Ahmed Rajpoot পোস্টটিতে থাকা উর্দু ভাষায় ক্যাপশনটি অনুবাদ করে জানা যায়, রাওয়ালপিন্ডির ফিফথ রোড এলাকায় অবস্থিত একটি বিউটি পার্লারে জেনারেটরের গ্যাসে অচেতন হয়ে পড়া ১৬ জন তরুণীর অজ্ঞান অবস্থার ভিডিও এটি। 

উক্ত সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধানে পাকিস্তানের গণমাধ্যম মেগা নিউজের ইনস্টাগ্রাম চ্যানেলে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি পোস্টে একই ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায়। এই পোস্ট থেকেও ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়।

এছাড়া, পাকিস্তানের আরেকটি গণমাধ্যম মিডিয়া বাইটস্ এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ সেপ্টেম্বর একই ভিডিও একই দাবিতে প্রচার হতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে রাওয়ালপিন্ডির পুলিশের অফিসিয়াল এক্সে চ্যানেল থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি পোস্টে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই নিউটাউন এলাকায় একটি বিউটি পার্লারে জেনারেটরের ধোঁয়া ঘরে ভরে যাওয়ার কারণে দশজন নারীর অবস্থা খারাপ হয়। তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসা সেবা শেষে সুস্থভাবে বাড়ি পাঠানো হয়।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের আরও একটি গণমাধ্যম উক্ত ঘটনা যেখানে ঘটেছিল সরেজমিনে সেখানে গিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানেও বলা হয়েছে, ধোঁয়ার কারণে নারীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা নারীরা ধর্ষণের শিকার হননি এবং উক্ত ভিডিওটি ইসলামাবাদেরও নয়। 

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে পাকিস্তানের কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং গত ১৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির একটি বিউটি পার্লারে জেনারেটরের ধোঁয়া ঢুকে ১০ জন নারী অসুস্থ হয়ে পড়ার দৃশ্যকে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বিউটি পার্লারে ১৬ জন নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

রাউজানে এক নারীর ১৮টি সন্তান প্রসব দাবিতে এআই ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি ‘চট্টগ্রামের রাউজানে এক মা একসাথে জন্ম দিলেন ১৮টি জমজ সন্তান।…’ ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

লিংকডইনে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় একজন নারী কর্তৃক ১৮টি সন্তান প্রসবের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি একটি ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে ছবিটিতে কিছু এআই জনিত অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। যেমন- ছবিটিতে একই চেহারার একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। 

এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম sightengine এর ওয়েবসাইটে ছবিটি যাচাই করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।

Screenshot: sightengine website 

পরবর্তীতে, আরেক এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Decopy AI এর ওয়েবসাইটে ছবিটি যাচাই করলে এটির এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ বলে চিহ্নিত করা হয়।

Comparison: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়া, উক্ত বিষয়ে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘Channel Raozan চ্যানেল রাউজান’ এর ফেসবুক পেজে গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

ভিডিওটিতে বলা হয়, রাউজানে এক নারীর ১৮টি সন্তান জন্মদানের বিষয়টি গুজব। ভিডিওতে উত্তর চট্টগ্রামের গণমাধ্যমকর্মী আনিসুর রহমান মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে আলোচিত ছবিটি প্রদর্শন করে উল্লেখ করেন যে এটি এআই প্রযুক্তির সহায়তার তৈরি। ভিডিওটিতে আরো বলা হয়, রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকেও জানানো হয় যে রাউজানে এক নারীর ১৮টি সন্তান জন্মদানের দাবিটি সত্য নয়। 

একই বিষয়ে চট্টগ্রাম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিহঙ্গ টিভির ফেসবুক পেজে গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবি ব্যবহার করে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় এক নারীর ১৮টি সন্তান প্রসব করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার  

গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে, খাগড়াছড়ির ভয়াবহ অবস্থা দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওতে একদল সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দেখা যাচ্ছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ২ লাখ ছিয়াত্তর হাজার বার দেখা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একদল সশস্ত্র গোষ্ঠীর এই  ভিডিওটি খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত গত জুলাই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘PŨ DŶ’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৮ জুলাই প্রচারিত একটি রিল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি ফুমদের থাইল্যান্ডে যাওয়ার ভিডিও। (অনূদিত)

উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিতে ঠিকানা হিসেবে কম্বোডিয়ার নাম উল্লেখ রয়েছে, তবে ‘ট্রান্সপারেন্সি’ বিভাগে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই। অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট এবং কমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় উক্ত ব্যক্তি খমের (কম্বোডিয়ান ভাষা) ভাষা ব্যবহার করেন। 

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে, গত ২৭ জুলাই ‘สันติ เทพมณี’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘মনে রেখো, ওই খ্মেররা (কম্বোডিয়ার অধিবাসী) যদি না থামো, আমরা গুলি করে তাদের দেশই দখল করে নেব।’ (অনূদিত) উক্ত অ্যাকাউন্টটি থাইল্যান্ড থেকে পরিচালিত।

Screenshot: Facebook 

তবে, ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত হওয়া না হওয়া গেলেও এটি নিশ্চিত যে ভিডিওটি খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক কোনো ভিডিও নয়। উল্লেখিত পোস্ট দুটির ২৭ ও ২৮ জুলাই প্রচার হলেও খাগড়াছড়ির দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ৩০ সেপ্টেম্বর প্রচার করা হয়। খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতার সূত্রপাত গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়।

সুতরাং, অন্তত গত জুলাই মাস থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ির দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

নরসিংদীতে এএসপিকে মারধরের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার 

গতকাল (০৪ অক্টোবর) নরসিংদীতে চাঁদা তোলার সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন দুইজনকে আটক করেন। পরবর্তীতে আটককৃত দুই ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা এবং আনোয়ার হোসেনকে মারধর করে।

এই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনকে মারধরের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই ভিডিও যুবক কর্তৃক ট্রাফিক পুলিশকে মারধরের দৃশ্য দাবিতেও প্রচার হতে দেখা যায়। দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷ 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনকে কিংবা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৭ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর টোল প্লাজায় মিনহাজ উদ্দিন নামের এক যুবক টোল প্লাজার সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল হাসেমকে মারধর করেন। সেই ঘটনার দৃশ্য এটি। 

অনুসন্ধানে গত ১৮ আগস্ট কালবেলার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

কালবেলার ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর টোল প্লাজায় সিকিউরিটি গার্ডকে এক যুবক প্রকাশ্যে পেটান। সেই ঘটনার দৃশ্য এটি। 

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কালবেলা এবং রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট মোটরসাইকেলের টোল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ ষষ্ঠ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী (মুক্তারপুর সেতু) সেতুর টোল প্লাজায় মিনহাজ উদ্দিন নামের এক যুবক টোল প্লাজার সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল হাসেমকে মারধর করেন। উক্ত ঘটনায় ১৮ আগস্ট ভুক্তভোগী আব্দুল হাসেম বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনকে মারধরের ঘটনার নয়। 

সুতরাং, গত ১৭ আগস্ট মুন্সিগঞ্জে  এক যুবক কর্তৃক সেতুর টোল প্লাজার সিকিউরিটি গার্ডকে মারধরের দৃশ্যকে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনকে মারধরের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের ভিডিও দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

গাজায় চলমান ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের প্রতিবাদে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার নৌ উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। পরবর্তীতে ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া, ইতালির সিসিলি দ্বীপ ও গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, উক্ত নৌবহরের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

দীপ্ত টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক এস এম আকাশের শেয়ার করা এমন ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফেসবুকে প্রচারিত অন্যান্য পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুমুদ ফ্লোটিলার ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার এমন কোনো ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ভিডিওটি সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করলে এতে কিছু এআই জনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটিতে জাহাজগুলোতে অস্বাভাবিক সংখ্যক আরহী দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও জাহাজগুলোকে অভূতভাবে সারিবদ্ধ হয়ে চলতে দেখা যায়। যার কোনোটিই বাস্তব নৌবহরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পাশাপাশি ভিডিওটিতে এআই সৃষ্ট ভিডিওর মত অস্পষ্টতাও লক্ষ্য করা যায়। 

পরবর্তীতে আলোচিত এই ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Deepfake-O-Meter এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৭৫ শতাংশ।

Screenshot: Deepfake-O-Meter 

সুতরাং, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের ভিডিও দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Deepfake-O-Meter 
  • Rumor Scanner’s Analysis

শেখ হাসিনার ভাগনে ববির এই বক্তব্য ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত

সম্প্রতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটো বোন, শেখ রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। সেখানে ববি সদৃশ এক ব্যক্তিকে বলতে দেখা যায়, “খালামনি আমাদের চেয়ে অনেক ভালো রাজনীতি বোঝেন। খালামনি যেহেতু এখনও আছেন, সেহেতু তার কথামতোই আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। কর্মীদের নিয়ে আমরা সামনে এগোবো।”

উক্ত দাবির ফেসবুক ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই ভিডিও টিকটকে দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের কর্মীদের উদ্দেশ্যে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভুয়া ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম সূত্রে শেখ হাসিনার ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন শীর্ষক কোনো ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রেও এই ভিডিওর বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। ববির লিংকডইন এবং এক্স অ্যাকাউন্টেও এমন ভিডিওর অস্তিত্ব মেলেনি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওটির উপাদানগুলোতে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।

ববির কথা বলার সময় তার এবং পেছনে থাকা লোকটির মুখের মুভমেন্টসহ পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোয় অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।  

তাছাড়া, রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, উইকিপিডিয়াতে থাকা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির ২০১৫ সালের ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner 

ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে এবং প্রাপ্ত ছবিতে ববি একই পোশাকে, একই স্থানে, একই ভঙ্গিতে রয়েছেন এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা চশমা পরিহিত ব্যক্তিও অভিন্ন।

অর্থাৎ, উইকিপিডিয়াতে থাকা ২০১৫ সালের এই ছবিটি ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভুয়া ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

সুতরাং, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বক্তব্য হিসেবে প্রচারিত ভিডিওটি ভুয়া।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s own analysis 

‘এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের জায়গায় বাংলাদেশ ভালো খেলতো’ বলে মন্তব্য করেননি সূর্যকুমার যাদব

0

গত ২৮ সেপ্টেম্বর পুরুষদের এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের ১৪৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট দল। সম্প্রতি এরই প্রেক্ষিতে একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে সূর্যকুমার যাদব বলেছেন, ‘পাকিস্তান আমাদের কাছে এখন সবসময়ই পুচকে দল। বাংলাদেশের সাথে ফাইনাল জমে যায়। বাংলাদেশ থাকলে তারা ফাইনালে আরো ভালো খেলতো।’

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টটি ৪ লক্ষ ৭৬ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ১৯ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের জায়গায় বাংলাদেশ ফাইনাল খেললে আরো ভালো খেলতো শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি সূর্যকুমার যাদব। প্রকৃতপক্ষে, কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ফাইনাল ম্যাচের আগের একটি ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশনের সূর্যকুমারের অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যের খন্ডাংশ সংযুক্ত করে আলোচিত দাবি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে সূর্যকুমারের বক্তব্যের একটি খন্ডাংশ পাওয়া যায়। বক্তব্যে সূর্যকুমারকে (দলের ভালো খেলাকে ইঙ্গিত করে) বলতে শোনা যায়, “প্রতিটি খেলায়ই তারা চরিত্রের পরিচয় দিচ্ছে” (অনূদিত)। উক্ত বক্তব্যের খন্ডাংশে বাংলাদেশের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে খেলাধুলা বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল ‘স্পোর্টস সেন্ট্রাল বাই ডিআরএম’ এ গত ২২ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের পর ম্যাচ শেষের প্রেজেন্টেশনের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে। উক্ত ভিডিওটির ৬ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড পরবর্তী সময়ে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনে সংযুক্ত সূর্যকুমার যাদবের দৃশ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত দৃশ্যটি মূলত এশিয়া কাপ ফাইনালের আগে সুপার ফোর ম্যাচের উক্ত ম্যাচ শেষের প্রেজেন্টেশনের ভিডিও থেকে নেওয়া হয়েছে। ভিডিওটিতে সূর্যকুমারকে সতীর্থদের প্রশংসা করতে দেখা যায়। তবে কোথাও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করতে দেখা যায়নি। এছাড়া, স্বাভাবিকভাবেই ফাইনাল ম্যাচের আগেই সূর্য কুমারের এরূপ মন্তব্য করার বিষয়টিও অযৌক্তিক।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে সূর্যকুমার বাংলাদেশকে জড়িয়ে এরূপ কোনো মন্তব্য করলে তা দেশিয় ও আন্তর্জাতিক নানা গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।

সুতরাং, সূর্যকুমার যাদব ‘এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের জায়গায় বাংলাদেশ ফাইনাল খেললে আরো ভালো খেলতো’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

খাগড়াছড়িতে অস্ত্র উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার  

গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে নেওয়ার পথে গাড়ি থেকে কয়েক হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক খাগড়াছড়িতে অস্ত্র উদ্ধারের দৃশ্য নয় বরং, এটি গত আগস্টে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে ভিডিওতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে কালবেলা অনলাইনের ফেসবুক পেজে গত ৯ আগস্ট ‘নিউমার্কেট এলাকা সেনাবাহিনীর অ-স্ত্র উদ্ধার’ শিরোনামে প্রচারিত একটি রিল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১০ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার কয়েকটি দোকান ও গুদামে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ১০০টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এসব অস্ত্র বিক্রি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি খাগড়াছড়িতে অস্ত্র উদ্ধারের নয়। 

উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় চলমান সংঘর্ষে ব্যবহারের জন্য নেওয়ার সময় বাস থেকে লোহার তৈরি ১০০টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

সুতরাং, গত আগস্টে রাজধানীর নিউমার্কেট থেকে সেনাবাহিনীর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়িতে অস্ত্র উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র