গত ২৬ জুন রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এসময় সেখানে থাকা একটি পূজা মণ্ডপও ভাঙা পড়ে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি, খিলক্ষেতে ভেঙে ফেলা স্থাপনাটি ৩০০ বছরের পুরোনো মন্দির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খিলক্ষেতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা পড়া পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছর পুরোনো নয়। প্রকৃতপক্ষে, ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক বছর যাবৎ খিলক্ষেত সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের অধীনে অস্থায়ীভাবে প্যান্ডেল তৈরি করে দুর্গা পূজা পালিত হয়ে আসছিল। ভেঙে ফেলা মণ্ডপের স্থানে গতবছর দিয়ে মাত্র তিনবার দুর্গা পূজা পালিত হয়।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে রাজ দ্বীপ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটিতে দাবি করা হয়, স্থানীয় মুসলিমদের বাঁধার কারনে ঢাকার খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির পরিচালনা পরিষদের পূজার মন্ডপ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও পোস্টটিতে দাবি করা হয়, উক্ত স্থানে রেলওয়ে কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রায় ১২ বছর যাবৎ সেখানে পূজা হয়ে আসছে।
পোস্টটিতে ব্যবহৃত ছবিগুলো পর্যালোচনা করে একটি ছবিতে ‘খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির এর জন্যে নির্ধারিত স্থান (অস্থায়ী)’ শীর্ষক একটি ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে তখনও পর্যন্ত সেখানে কোনো পূজা মণ্ডপ ছিলনা।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খিলক্ষেত সনাতন সমাজকল্যান সংঘ নামের একটি ফেসবুক পেজে একই বছরের ৩ অক্টোবর প্রচারিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবিটির ক্যাপশনেনে উল্লেখ করা হয়, এটি খিলক্ষেত সনাতন সমাজ কল্যান সংঘ কতৃক আয়োজিত সেবছরের দুর্গা পূজার মন্ডপের ছবি। যেখানে বাঁশ দিয়ে নির্মাণাধীন একটি প্যান্ডেলের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, অস্থায়ী সেই স্থানে পরবর্তীতে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে খিলক্ষেত সনাতন সমাজকল্যান সংঘ নামের ওই ফেসবুক পেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে গত ২৬ জানুয়ারি প্রচারিত এবছরের সরস্বতী পূজার একটি কার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।

কার্ডটি থেকে প্রাপ্ত খিলক্ষেত সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অর্জুন রায়ের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি আলোচিত দাবিটির বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ভেঙে ফেলা স্থাপনাটি ৩০০ বছরের পুরোনো মন্দির দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভুয়া। ২০০৪ সাল থেকে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ভেঙে ফেলা মন্দিরের স্থানে কয়েক বছর অন্তর অন্তর দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর নিয়ে সেখানে মোট তিনবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত বছরের দুর্গাপূজার সময় ওই এলাকায় একটি অস্থায়ী মন্ডপ তৈরি করা হয়। যাকে ঘিরে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার নাম ‘খিলক্ষেত সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির কমিটি’। সেবছরই প্রথমবারের মতো সেখানে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এতদিন সেটি টিনের বেড়ার থাকলেও গত ২৩ জুন মন্দির কর্তৃপক্ষ পাকা দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। যাতে স্থানীয়রা বাধা দেয় বলেও জানা যায়। তবে কোনো গণমাধ্যমে বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ওই পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছরের পুরোনো এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে খিলক্ষেতে সাম্প্রতিক সময়ে উচ্ছেদকৃত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছর পুরোনো নয়।
সুতরাং, রাজধানীর খিলক্ষেতে উচ্ছেদকৃত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপটি ৩০০ বছরের পুরোনো দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।