Home Blog Page 11

ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হওয়া থেকে বাঁচাতে ২০ জনকে মেসেজ পাঠানোর দাবিটি ভুয়া

0

সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ ব্যাপকভাবে ফরওয়ার্ড হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে, ‘সমস্ত ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি | এই বার্তাটি ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সকল ব্যবহারকারীর কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে ইনস্টাগ্রামে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার (technical glitches) সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে, প্রত্যেক ব্যবহারকারীকে অবশ্যই ৩০ অক্টোবরের আগে অন্তত ২০ জনকে এই বার্তাটি পাঠাতে হবে। যদি আপনি এটি করতে ব্যর্থ হন, তবে আপনার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় (temporarily disabled) হয়ে যেতে পারে এবং আপনি তা পুনরায় সক্রিয় করতে পারবেন না। তবে, যদি আপনি এই বার্তাটি ২০ জনকে পাঠান, তাহলে পরবর্তী আপডেটের পর আপনার অ্যাকাউন্টে একটি নতুন ফিচার সক্রিয় হয়ে যাবে। অনুগ্রহ করে ৩০ অক্টোবরের আগে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ, ইনস্টাগ্রাম টিম’ (অনূদিত)

এছাড়াও, ফেসবুকে ভারতীয় নানা অ্যাকাউন্ট থেকেও এরূপ মেসেজ আর কেউ পেয়েছেন কি না তা জিজ্ঞেস করতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত মেসেজটি ৩০ অক্টোবরের পূর্বে অন্তত ২০ জনকে না পাঠালে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে ডিজেবল বা নিষ্ক্রিয় হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ এরূপ কোনো ঘোষণা দিলে তা দেশি বিদেশি মূলধারার গণমাধ্যমে ব্যপকভাবে প্রচার করা হতো।

এছাড়াও, মেটার ওয়েবসাইটের নিউজরুম ও ইনস্টাগ্রামের ওয়েবসাইটের ব্লগের ঘোষণার অংশ পর্যবেক্ষণ করলেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। মেটার ওয়েবসাইটের নিউজরুমে ইনস্টাগ্রামের বিষয়ে সর্বশেষ পোস্টটি গত ১৪ অক্টোবরে প্রচার হতে দেখা যায়। যেখানে বলা হয়, ‘আজ আমরা ঘোষণা করছি যে ইনস্টাগ্রামে টিনেজারদের অ্যাকাউন্ট এখন থেকে ডিফল্টভাবে PG-13 মুভি রেটিং নির্দেশনা অনুসরণ করবে। এর মানে হলো, টিন ব্যবহারকারীরা ইনস্টাগ্রামে এমন ধরনের কনটেন্ট দেখতে পাবেন, যা তারা সাধারণত একটি PG-13 রেটিংপ্রাপ্ত সিনেমায় দেখতে পান। ১৮ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট করা ১৩+ সেটিংসে রাখা হবে, এবং তারা পিতামাতা বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এই সেটিং পরিবর্তন করতে পারবে না।..’ (অনূদিত) 

উক্ত ঘোষণায় আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্ন্যাপচ্যাটকে জড়িয়ে অন্যান্য দেশে এরূপ আরেকটি দাবি প্রচার হতে দেখা যায় যেখানে দাবি করা হয়, ২ ঘন্টার ভেতর ২০ জনকে একটি মেসেজ না পাঠালে স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্ট স্থগিত (suspended) হয়ে যাবে। উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে আমেরিকান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘লিড স্টোরিজ’ এর ওয়েবসাইটে গত ২১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে আলোচিত দাবি ভুয়া বলে জানানো হয়। এছাড়াও, এর আগে আরো নানা সময়ে এরূপ দাবি প্রচার হতে দেখা যায় কিন্তু কোনোটিরই সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

এরূপ মেসেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৭ আগস্টে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধে বলা হয়, এরূপ মেসেজকে মূলত ‘চেইন লেটার’ বলা হয়ে থাকে। চেইন লেটার হলো এমন একটি বার্তা, যা প্রাপককে চাপ দেয় যেন সে বার্তাটি আরও কয়েকজনের কাছে পাঠায় বা ফরওয়ার্ড করে। চেইন লেটার সাধারণত নির্দিষ্ট করে দেয় যে কতজনকে বার্তাটি পাঠাতে হবে। আজকাল চেইন লেটার ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ছড়ায়। এরূপ কিছু সাধারণ ধরণের চেইন লেটারের প্রকৃতি হলো: ধনসম্পদ সম্পর্কিত চেইন লেটার, রসিকতাপূর্ণ চেইন লেটার, সৌভাগ্য সম্পর্কিত চেইন লেটার, ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী চেইন লেটার। নিবন্ধটিতে আরো বলা হয়, যদি কখনো কোনো চেইন লেটার পান, সেটিকে উপেক্ষা করুন, মুছে ফেলুন, অথবা ফেলে দিন। এই ধরনের বার্তা উপেক্ষা করলে কোনো ক্ষতি বা শাস্তি হয় না, যত ভয়ঙ্করই তা শোনাক না কেন। বরং, কিছু ক্ষেত্রে এমন বার্তা পাঠানো আইনভঙ্গ বা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

সুতরাং, ৩০ অক্টোবরের পূর্বে অন্তত ২০ জনকে আলোচিত মেসেজ না পাঠালে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে ডিজেবল বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে শীর্ষক দাবিটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

নেট দুনিয়ায় তারকাদের নামে ‘ফেক’ বাণিজ্য

0
  • ফেসবুকে ‘চলো বদলে যাই’ নামে পেজে নিয়মিত নারী তারকাদের সম্পাদিত ছবি-ভিডিও প্রচারের প্রমাণ।
  • গত সাত মাসে অন্তত ১১৬ অপতথ্য শনাক্ত।
  • আগস্টেই শনাক্ত ৭৯ অপতথ্য।
  • পেজটি ইমরান মিয়া নামে পঙ্গুত্ব বরণ করা গাজীপুরের এক ব্যক্তির।
  • বিতর্কিত পোস্টের জেরে সম্মানহানি ঘটছে সেলিব্রিটি নারীদের।

ফেসবুক পেজটির দিনের কার্যক্রম শুরু হয় সকলকে ‘শুভ সকাল’ জানিয়ে। এরপর কখনো ধর্মীয় শুভেচ্ছা, কখনো-বা দুপুর, সন্ধ্যা কিংবা রাতের শুভরাত্রির পোস্ট দেখা যায় নিয়মিত। কিন্তু সাধারণ এসব পোস্টের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিনিয়ত সেলিব্রিটি নারীদের ছবি-ভিডিও দাবি করে অসংখ্য ভুয়া কনটেন্ট প্রচার হচ্ছে। রিউমর স্ক্যানার ‘চলো বদলে যাই’ নামে এমন একটি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছে যাতে পেজের নামের সাথে মিল রেখে নিয়মিত নারীদের চেহারা বদলে দেওয়ার মিশন চলছে। আপত্তিকর কনটেন্টগুলোর কারণে হরহামেশাই বিরূপ মন্তব্যের শিকার হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট নারীদের। পেজটির পেছনে যে ব্যক্তি রয়েছেন তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করা গাজীপুরের এক ব্যক্তি। 

চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ‘চলো বদলে যাই’ নামের পেজটির সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া পেজটিতে সেদিন কিছু ছবি দিয়ে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ছবিগুলো ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরী মণির। পোস্টটিতে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক রিয়েক্ট এবং প্রায় এক হাজারের অধিক কমেন্ট এসেছে। কমেন্টগুলোতে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই ধরনের মন্তব্যই করেছেন নেটিজেনরা। তবে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নেতিবাচক কমেন্টের পরিমাণই বেশি এবং এর সিংহভাগই বডি শেমিং ধরনের। 

Collage: Rumor Scanner

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখতে পায়, এগুলো পরী মণির ছবিই নয়৷ ভারতের হিমাচল প্রদেশের শিমলার এক ভিন্ন নারীর ছবির ওপর ফেস সোয়াপ প্রযুক্তির ব্যবহার করে পরী মণির মুখমণ্ডল বসিয়ে দাবিটি প্রচার করা হচ্ছিল। ফেস সোয়াপ এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে এক ব্যক্তির মুখ অন্য কারো মুখের সঙ্গে ডিজিটালভাবে বদলে দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, যেন প্রথম ব্যক্তি আসলে দ্বিতীয় ব্যক্তির মতো দেখাচ্ছে বা তার কাজ করছে। এই কাজটি সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এআই টুলসের সহজলভ্যতার সুযোগে এর অপব্যবহারের দিকটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারই উদাহরণ হয়ে এসেছে ‘চলো বদলে যাই’ এর মতো পেজগুলো৷ এই পেজটি এপ্রিল থেকে নিয়মিত নজরদারিতে রেখেছিল রিউমর স্ক্যানার। পরবর্তী মাসগুলোতে পেজের বিভিন্ন পোস্টকে নিয়ে ফ্যাক্টচেকও করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেজটির ৩৭টি পোস্টকে অপতথ্য হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

Screenshot: Rumor Scanner Website

আলোচিত এই পেজটি চালু করা হয় ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। শুরু থেকেই একই নাম অর্থাৎ ‘চলো বদলে যাই’ নামেই পরিচালিত হচ্ছে পেজটি। পেজটি বাংলাদেশ থেকে একজন এডমিনই পরিচালনা করছেন। পেজটির লোকেশন হিসেবে গাজীপুরের নাম উল্লেখ রয়েছে। ২৮ হাজার ফলোয়ারের পেজটি চালুর পর থেকেই নিয়মিত বিভিন্ন নারীর ছবি পোস্ট করা হচ্ছিল। অন্তত গেল বছর থেকে এআই ভিত্তিক ভুয়া ও সম্পাদিত কনটেন্ট প্রচারের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় পেজে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর এটির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। 

এই পেজটি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, পেজটির উদ্যোক্তা হিসেবে ইমরান মিয়া নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। তার বাড়ি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের সেনপাড়া গ্রামে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক ভিডিওতে তিনি নিজেই এসব তথ্য জানান। ভিডিওটি দেখুন এখানে। ভিডিওতে তিনি জানান, আজ থেকে ১৭ বছর আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার গলার নিচ থেকে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। তিনি এরপর থেকে কোনোরকম চলাফেরা করতে পারেন না। নিজের হাতে খেতেও পারেন না। ভিডিওতে তিনি এই পেজটি তার নিজের বলে দাবি করেন। 

১২ সেপ্টেম্বর পেজটিতে ইমরানের আরেকটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি দেখুন এখানে। ইমরানকে সামনে রেখে নিজের চাচাতো ভাই দাবি করে ভিডিওতে আরেক ব্যক্তি কথা বলেন। তবে উক্ত ব্যক্তিকে ক্যামেরার সামনে দেখা যায়নি। তিনি ভিডিওতে দাবি করেন, ইমরানকে মোবাইলও অন্যের সাহায্য নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। 

ইমরানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের এক পোস্ট থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয়। 

ইমরান এবং তার চাচাতো ভাইয়ের দাবি অনুযায়ী ইমরান নিজের হাতে কোনো কাজ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে ‘চলো বদলে যাই’ পেজে পোস্টগুলো কে করেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ বিষয়ে জানতে ইমরানের সাথে আলাপ করেছে রিউমর স্ক্যানার। পেজের ভিডিওগুলো তিনি নিজেই বানান কিনা এমন প্রশ্নে শুরুতে আলাপ করতে আগ্রহী না হলেও পরে তিনি জানান যে, “আমার হাতে অল্প একটু শক্তি আছে সেটা দিয়ে কোনোরকম আস্তে আস্তে মোবাইল চালাতে পারি।”

ইমরান রিউমর স্ক্যানারকে জানান, তিনি ইউটিউব ফেসবুক দেখে ছবি এবং ভিডিও এডিট করে পেজে আপলোড দিয়েছিলেন। কিছু অর্থ উপার্জন করতে চেয়েছিলেন। সেজন্যই ভিডিও আর ছবিগুলো সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, “অনেকদিন ছবি আর ভিডিও এডিট করে পেজে পোস্ট করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এক টাকা ইনকাম করতে পারি নাই। মনিটাইজেশনও পাই নাই।”

তিনি এখন এই ধরণের কনটেন্ট বানানো বন্ধ রেখেছেন। বলছেন, “ভাবছি নিজের কিছু ভিডিও বানাবো কিন্তু আমার সেরকম লোক নেই সেজন্য ভিডিও বানাতে পারছি না।”

ইমরান বলছেন, “এআই দিয়ে তো সবাই ভিডিও ছবি বানায় তো তাদের কিছু বলেন, তারা তো অনেক খারাপ খারাপ ছবি এডিট করে এবং ভিডিও বানায়।”


‘চলো বদলে যাই’ পেজটির কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে গত আগস্টে প্রকাশিত পেজটির সকল পোস্ট বিশ্লেষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এই এক মাসেই পেজে পোস্ট হয়েছে ২৩৮টি। আগস্টের প্রতিদিনই সর্বনিম্ন পাঁচটি থেকে সর্বোচ্চ ১১টি পোস্ট করা হয়েছে পেজে। এসব পোস্টের ১৩৫টি ছিল সাধারণ পোস্ট (শুভ সকাল, শুভ রাত্রিসহ এই ধরনের নানা পোস্ট)। বাকি পোস্টগুলোতে ছিল নারীদের নানা সাধারণ ও আপত্তিকর ছবি-ভিডিও। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগস্টে ৩৬ জন ভিন্ন ভিন্ন নারীকে নিয়ে ৯৭টি পোস্ট করা হয় পেজটিতে। এগুলোর মধ্যে ৭৯টি পোস্টেই সংশ্লিষ্ট নারী দাবিতে ভিন্ন নারীর ছবি-ভিডিও সম্পাদনা করে প্রচার করার প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এসব পোস্টের মধ্যে ছবি কেন্দ্রিক কনটেন্ট ৪৪টি এবং ভিডিও কেন্দ্রিক কনটেন্ট ৩৫টি। এছাড়া, ১৮টি পোস্টে থাকা ছবি-ভিডিওর মূল উৎসের সন্ধান না পাওয়ায় তা অপ্রমাণিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ বুফালো এবং ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তের যৌথ প্রজেক্ট ‘ডিপফেক ও মিটার’ এর মাধ্যমে এই ১৮টি কনটেন্ট যাচাই করে সবগুলোই সর্বনিম্ন ৪৬ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭২ শতাংশ পর্যন্ত এআই এর মাধ্যমে সম্পাদনার সম্ভাবনার কথা জেনেছে রিউমর স্ক্যানার। বাকি চারটি কনটেন্ট আসল ছবি-ভিডিও (, , , ) বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভুয়া হিসেবে শনাক্ত হওয়া কনটেন্টগুলোতে সবচেয়ে বেশি জড়ানো হয়েছে বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের নারী তারকাদের। ৩৬ জন নারীর মধ্যে ২৯ জনই বাংলাদেশের। এর মধ্যে ২৮ জনই বিনোদন তারকা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছয়টি করে অপতথ্যের শিকার বানানো হয়েছে ছোট পর্দার দুই অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী ও তাসনিয়া ফারিণকে।

বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের কলকাতার বিনোদন তারকাদের জড়িয়েও আটটি অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে পেজটিতে। আগস্টে টলিউডের নায়িকা নুসরাত জাহানকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি (২টি) অপতথ্যের প্রচার ছিল পেজে। 

পেজটির আগস্টের কনটেন্টগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, কোনো নারীকে জড়িয়ে প্রচার করা কনটেন্টগুলোর মূল উৎস হিসেবে একজন নারীর কনটেন্টই ব্যবহার হচ্ছে। তাসনিয়া ফারিণ এবং সাদিয়া আয়মানের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করা গেছে। ফারিণকে জড়িয়ে প্রচারিত দুইটি কনটেন্ট ভারতীয় নারী রাশি সিং এর ভিডিওকে সম্পাদনা করে বানানো হয়েছে। একইভাবে সাদিয়া আয়মানকে জড়িয়ে প্রচারিত দুইটি কনটেন্ট আরেক ভারতীয় নারী শায়রা জিলাওয়াত এর ভিডিওকে সম্পাদনা করে বানানো হয়েছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, দিব্যিয়া পাচাল নামে ভারতীয় এক নারীর ছবিকে একবার আশনা হাবিব ভাবনা এবং আরেকবার মাহিয়া মাহি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। সবমিলিয়ে, সে মাসে ৩৬ জন নারীকে জড়িয়ে যে ৭৯টি ভুয়া পোস্ট করা হয়েছে তাতে ৭৬ জন ভিন্ন ভিন্ন নারীর কনটেন্টকে সম্পাদনা করে অপপ্রচারের প্রমাণ মিলেছে।

কাজের পদ্ধতি

এই গবেষণাটি রিউমর স্ক্যানার টিমের তত্ত্বাবধানে করা হয়েছে। এর জন্য ‘চলো বদলে যাই’ নামের পেজটির প্রয়োজনীয় কনটেন্টগুলো নথিভুক্ত করে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপর কনটেন্টের বিপরীতে আসল কনটেন্ট খুঁজে বের করে তুলনা করা হয়েছে। সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে এআই শনাক্তকরণ টুলেরও। পরবর্তীতে সেগুলোকে ইনফোগ্রাফিক এবং লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মেট্রোরেলে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়া ইস্যুতে সাংবাদিক ইলিয়াসকে উদ্ধৃত করে আমার দেশের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

0

গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে উদ্ধৃত করে ‘মেট্রোরেলে বিয়ারিং প্যাড খুলে যাওয়ায় ভারতের ‘র’ এর হাত আছে’ শিরোনামে দৈনিক আমার দেশের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লিখিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘মেট্রোরেলে বিয়ারিং প্যাড খুলে যাওয়ায় ভারতের ‘র’ এর হাত আছে’ শীর্ষক মন্তব্য করেননি সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন এবং আমার দেশও এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আমার দেশের ফটোকার্ড ডিজাইনের আদলে ফটোকার্ড তৈরি করে ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুতে ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে আমার আমার দেশের লোগো এবং ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ লেখা উল্লেখ পাওয়া যায়। 

উক্ত সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আমার দেশের ফেসবুক পেজে গত ২৬ অক্টোবর মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়া ইস্যুতে ছয়টি (,,,,,) ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে। তবে আলোচিত দাবি সংবলিত কোনো ফটোকার্ডের সন্ধান মেলেনি। সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণে সংবাদমাধ্যমটির ফেসবুক পেজের ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির বাক্যে ব্যবহৃত ফন্টের অমিল পরিলক্ষিত হয়।

Comparison: Rumor Scanner

পাশাপাশি অন্য গণমাধ্যম এবং বিশ্বস্ত সূত্রগুলোর বরাতেও ইলিয়াস হোসেনের নামে প্রচারিত এই মন্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, ইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো পোস্টের সন্ধান মেলেনি। উল্লেখ্য ফেসবুকে ইলিয়াস হোসেনের একটি ভেরিফাইড পেজেও রয়েছে। যেটি আলোচিত ঘটনার সময় ডিজেবল ছিল। বর্তমানে পেজটি সক্রিয় রয়েছে।

সুতরাং, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে উদ্ধৃত করে ‘মেট্রোরেলে বিয়ারিং প্যাড খুলে যাওয়ায় ভারতের ‘র’ এর হাত আছে’ শিরোনামে আমার দেশের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis
  • Daily Amar Desh – Facebook Page
  • Daily Amar Desh – Website
  • Elias Hossain- Facebook Profile (1,2)

ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মসূচি দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ_ছাত্রলীগ/ শেখ_হাসিনা_সরকার_বার_বার_দরকার’ শিরোনামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক সময়ের কর্মসূচি দাবিতে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি ১৮ হাজার বার দেখা হয়েছে, এটিতে প্রায় ৩ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং ভিডিওটি ৪ শত বার শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচির দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালে বিদেশ গমনেচ্ছু কয়েকশত ব্যক্তির তাদের এজেন্সির প্রতি দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকার গুলশান-২ পয়েন্টে আন্দোলনের ভিডিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Hasan Miraz নামক টিকটক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি রাজধানী ঢাকার গুলশাল-২ এলাকায় একটি মানববন্ধনের দৃশ্য। 

পরবর্তীতে, Mia Bhauddin Jahanger নামক ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। 

তবে, এসব ভিডিওর অডিও ক্লিপের থেকে প্রচারিত ভিডিওর অডিও ক্লিপটি ভিন্ন। মূলত, মূল ভিডিওর অডিও ক্লিপের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি স্লোগানের অডিও ক্লিপ প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷ 

উল্লিখিত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের গুলশাল অঞ্চলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পোস্টে কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর মিল রয়েছে। 

Screenshot: Facebook

উক্ত পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন ‘BSB  Global Network’ নামক এজেন্সির  মাধ্যমে  বিদেশ গমনেচ্ছু কয়েকশত লোকজন তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গুলশান -২ পয়েন্টে জড়ো হয়ে  রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে আন্দোলন করে। এর ফলে আশেপাশের এলাকাগুলোর সাথে যান চলাচল বিঘ্নিত হয় এবং বন্ধ হয়ে যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত ছবিগুলো উল্লিখিত ঘটনার দৃশ্য। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচির ভিডিও দাবিতে বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের আন্দোলনের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে নুরুল হক নুরের বক্তব্যের খন্ডিত অংশ বিকৃতভাবে প্রচার

সম্প্রতি অনলাইনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে নুরকে বলতে শোনা যায়, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া এই দেশে নির্বাচন হবে না। আ.লীগ ব্যাক করবে। নির্বাচন আর বিলম্ব নয়। ফেব্রুয়ারিতে নয় জানুয়ারিতেই নির্বাচন দিন৷ সেনাবাহিনী এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনাবাহিনী কলঙ্কিত হতে পারে না। বরঞ্চ এই ক্রিমিনালদেরকে বিচারের মাধ্যমে কলঙ্ক মুক্ত করা হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হবে না৷ জাতীয় পার্টিও ছাড়া নির্বাচন হবে না।’

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, নুরুল হল নুর আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৬ অক্টোবর  ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে গণ অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় নুরুল হক নুরের দেওয়া বক্তব্য থেকে একটি খণ্ডিত অংশ কাটছাঁট করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। মূলত প্রচারিত ভিডিও ক্লিপের অংশটিতে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বলা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে চাওয়ার সমালোচনা করেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশ টাইমস’ এর ফেসবুক পেজে নুরুল হক নুরের বক্তব্যের ভিডিওর একটি লাইভ সম্প্রচার গত ২৬ অক্টোবরে প্রচার হতে দেখা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড পরবর্তী সময় থেকে ১০ মিনিট ০০ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুটেজটির মিল পাওয়া যায়। এসময় নুরুল হক নুরকে বলতে শোনা যায়, ‘কিছুদিন আগেই জিএম কাদেরের যে বক্তব্য, তিনি কীভাবে ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেন এবং বলতে পারেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নাকি কোনো এই দেশে নির্বাচন হবে না। এই কথা বলার পরে জিএম কাদের কীভাবে এই ঢাকায় আপনার রাজপথে তার অফিসে আসে, তার উত্তরার বাড়িতে অবস্থান করে? যেই আওয়ামী লীগ গণহত্যা চালিয়েছে, এই শহীদ পরিবারগুলো এখানে বসে আছে, এখনও বিচার চলছে গণহত্যার, মানবতাবিরোধী অপরাধের। সেই অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংগঠন হিসেবে তার বিচার হচ্ছে। আর জিএম কাদের বলছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া নাকি এই দেশে নির্বাচন হবে না। জাতীয় পার্টি ছাড়াও নির্বাচন হবে না। কাজে আমি বিনয়ের সাথে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বলবো অবশ্যই নির্বাচনের আগে নির্বাচন বিঘ্নিত হোক এমন কোনো কাজ আমরা চাই না৷ কিন্তু এই আওয়ামী লীগের দোসর ও ভারতীয় এজেন্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন থেকে এসেছে, এই বিষফোঁড়া জাতীয় পার্টির বিষয়ে ফয়সালা না হয়ে যদি আমরা নির্বাচনে যাই আমাদের জন্য শনির দশা অপেক্ষা করছে। এই জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ব্যাক করবে।’

অর্থাৎ, নুরুল হক নুরের বক্তব্য থেকে ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া এই দেশে নির্বাচন হবে না, আওয়ামী লীগ ব্যাক করবে,..আওয়ামী লীগ ছাড়া এই দেশে নির্বাচন হবে না, জাতীয় পার্টি ছাড়াও নির্বাচন হবে না।’ শীর্ষক ভিডিও ক্লিপ কাট করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর সকালে ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে গণ অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় নুরুল হক এসব কথা বলেন। 

তবে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নুরুল হক নুর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিরোধিতা করলেও ফেব্রুয়ারির বদলে জানুয়ারিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন এবং সেনাবাহিনী এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক বলে বক্তব্য দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে উপজেলা দিবস উপলক্ষে গত ২৩ অক্টোবর ঢাকার কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

সুতরাং, গত ২৬ অক্টোবর ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় নুরুল হক আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ চেয়ে জিএম কাদেরের বলা বক্তব্যের সমালোচনা করেন, তার সেই বক্তব্যের একটি অংশ কাটছাঁট করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ভারতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি ‘ভারতে সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টিমারের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করতে দিল্লি হায়দরাবাদ হাউজে পৌছেছেন দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারত সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাক্ষাৎ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সাল থেকে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে থাকা একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার সাথে কিয়ার স্টারমারের সাক্ষাতের দাবিটির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ABHI’S MOTIVATION নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘Chief Justice Sri Ujjal Bhuyan High Security Convoy || High Court for the state of Telangana’ শিরোনামে প্রচারিত আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শ্রী উজ্জ্বল ভূঁইয়ার উচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত গাড়িবহরের দৃশ্য।

উক্ত ভিডিওতে একাধিক গাড়ির সামনে ‘HIGH COURT FOR THE STATE OF TELANGANA’ লিখা প্লেট দেখতে পাওয়া যায়। তবে, ভিডিওটি তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নিরাপত্তাযুক্ত গাড়িবহরের দৃশ্য কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়নি। 

এছাড়া, গুগল ম্যাপে তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্টের সাথেও প্রচারিত ভিডিওটির স্থানের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা স্থানটি তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ, দিল্লির রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউজ নয়। 

উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ভারত সফরে এসেছিলেন। তবে, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে উক্ত সফরে শেখ হাসিনার সাথে তার দেখা করার কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের একটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে ভারতের হায়দ্রাবাদ হাউজে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাথে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আপাতত কুমিল্লাই হতে যাচ্ছে বিভাগ শীর্ষক মন্তব্য করেননি ড. ইউনূস, সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার

0

কুমিল্লাকে বিভাগ করার দাবিতে অনেক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছে এ জেলার মানুষেরা। একই দাবিতে সোচ্চার নোয়াখালীর মানুষেরাও। এই জেলার মানুষেরা কুমিল্লার অধীনে বিভাগে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে তাদের জেলাকেই বিভাগ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে দুই জেলার মানুষই ফের আন্দোলন সভা সমাবেশ করছেন। এরই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস “আপাতত কুমিল্লাই হতে যাচ্ছেন বিভাগ।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টাইমসের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “আপাতত কুমিল্লাই হতে যাচ্ছেন বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস।” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে বাংলাদেশ টাইমস কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় গণমাধ্যমটির ভিন্ন একটি ফটোকার্ড সম্পাদনার মাধ্যমে এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, ড. ইউনূসও সম্প্রতি এরূপ কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বাংলাদেশ টাইমসের লোগো এবং ফটোকার্ডটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ১৭ অক্টোবর উল্লেখ রয়েছে। এর সূত্র ধরে বাংলাদেশ টাইমসের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বাংলাদেশ টাইমসের ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, গত ১৭ অক্টোবরে “নতুন বাংলাদেশের জন্ম হলো আজ” শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশ টাইমসের ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ছবি ও গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের সাথে এর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ‘নতুন বাংলাদেশের জন্ম হলো আজ’ শীর্ষক বাক্যের পরিবর্তে ‘আপাতত কুমিল্লাই হতে যাচ্ছেন বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস।’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।

Photocard Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, বাংলাদেশ টাইমসের এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা করেই আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

মূল ফটোকার্ড সংবলিত পোস্টটির কমেন্টে পাওয়া এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশে এক নতুন জন্ম হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থানের কারণেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে তিনি এই সনদ স্বাক্ষরকে অভ্যুত্থানের ‘দ্বিতীয় অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং অভ্যুত্থান সফলের পেছনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ১৭ অক্টোবর বিকেলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে কুমিল্লা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কুমিল্লাকে বিভাগ করা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। 

সুতরাং, “আপাতত কুমিল্লাই হতে যাচ্ছেন বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস।” শীর্ষক দাবিতে বাংলাদেশ টাইমসের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আ.লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় সন্তানের সামনে বাবাকে নির্যাতনের দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মবের শিকার এক ব্যক্তিকে সন্তান ও পুলিশের সামনেই নির্যাতন করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন সেসময় তার মেয়ে তাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। সেই মুহুর্তে কেউ একজন আটক ওই ব্যক্তিকে থাপ্পড় মারেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে সন্তানের সামনে নির্যাতনের দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশের সাম্প্রতিক এক অভিযানে মাদকসহ রুস্তম নামের ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এ সময় তার মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সেই মুহূর্তে ধারণ করা ভিডিওটিকেই আলোচিত দাবিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Durbin News এর ফেসবুক পেজে গত ২৩ অক্টোবর একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওটি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশি অভিযান চলাকালে ধারণ করা।

Video Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম বার্তা২৪ এবং খবরের কথা-এর ফেসবুক পেজে সেদিন ওই ব্যক্তিকে আটকের বিস্তারিত আরও দুটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশি অভিযান চলাকালে ওই ব্যক্তিকে মাদকসহ আটক করা হয়। ভিডিওগুলোতে তার কাছ থেকে বেশ কিছু ইয়াবা উদ্ধার করতেও দেখা যায়। তবে ভিডিওগুলোর কোথাও তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার জন্যে আটক করা হয়েছে এমন উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা মেইল-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আটক ওই ব্যক্তির নাম রুস্তম। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক বিক্রির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তার শিশুসন্তান বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলে ঘটনাস্থলে থাকা একজন ব্যক্তি রুস্তমকে চড় মেরে আরও মাদক আছে কি না জানতে চান। এতে শিশুটির কান্না আরও বেড়ে যায়। পরে পাশ থেকে একজন এসে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, রুস্তমের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় প্রায় ১৭টির বেশি মামলা রয়েছে।

একই বিষয়ে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৩ অক্টোবর জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার দুই পক্ষের সংঘর্ষে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে মো. জাহিদ নামের এক তরুণ নিহত হন। ওই ঘটনার পর সেদিন সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে রুস্তমও ছিলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা প্রথম আলোকে বলেন, রুস্তম শুধু মাদক ব্যবসায় যুক্ত নন, তিনি জাহিদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও।

এদিকে, এনটিভি-তে ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাহিদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার চার আসামিকে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে নেওয়া ওই চারজনের তালিকায় রুস্তমের নামও রয়েছে।

অর্থাৎ, ভিডিওতে দেখা রুস্তমকে গ্রেফতারের কারণ তার রাজনৈতিক পরিচয় নয়। মাদক ব্যবসার অভিযোগ ও জাহিদ হত্যা মামলার এজাহারে তার নাম থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে।

সুতরাং, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে সন্তান ও পুলিশের সামনেই নির্যাতন করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সিলেটে আ.লীগের মিছিল দাবিতে চট্টগ্রামে শ্রমিক দলের মিছিলের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘ইনশাআল্লাহ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ রাজপথে’’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে আওয়ামী লীগের মিছিলের ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৯ মে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ উদ্যোগের প্রতিবাদে শ্রমিক দলের মশাল মিছিলের ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Rayhan Akondo Ripon’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৯ মে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, এটি চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে না দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিলের দৃশ্য। 

পরবর্তীতে, একই ঘটনার ভিন্ন ফ্রেমের আরও একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।  

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে গত ২০ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি অপারেটরদের হাতে তুলে না দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিল করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সামনের সড়কে এই মশাল মিছিল করে বিএনপিপন্থী শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বন্দর শাখা। 

অর্থাৎ, এটি গত মে মাসে চট্টগ্রামে শ্রমিক দলের মশাল মিছিলের ভিডিও। 

সুতরাং, গত ১৯ মে চট্টগ্রামে শ্রমিক দলের মশাল মিছিলের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে আওয়ামী লীগের মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

মাহফিলে বাঁধা দেওয়ার এই ভিডিওটি ২০২৩ সালের 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “নিউ লাল বাংলাদেশে আবারো ওয়াজ মাহফিলে বাধা। আওয়ামী লীগের নেতাদের হাত আছে।”

উক্ত দাবির ফেসবুক ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৩ সালের বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে Rater Tara নামের একটি পেজে ২০২৩ সালের ০৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, নেত্রকোনা রফিকুল ইসলাম মাদানীর ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ২০২৩ সালের ০৭ ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নেত্রকোনায় ওয়াজ করছিলেন ‘শিশু বক্তা’ মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী। অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগে ওয়াজ মাহফিলে হাজির হয় পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশ মাইক নিয়ে চলে যায়। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের। 

তাছাড়া, এই ঘটনায় সে সময় রফিকুল ইসলাম মাদানী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শীর্ষক একটি ভুয়া দাবি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, রফিকুল ইসলাম মাদানীর মাহফিলে বাধা দেওয়ার ২০২৩ সালের পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র