সম্প্রতি, ‘ঈদের পরেই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে-দুদু’ শীর্ষক শিরোনামে ইত্তেফাকের প্রচলিত ডিজাইনের আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত শিরোনামে ইত্তেফাক কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, শামসুজ্জামান দুদুর ভিন্ন মন্তব্যের একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ইত্তেফাকের লোগো এবং এটি প্রকাশের কোনো তারিখ উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজে গত ০৩ জুন ‘নির্বাচনের কথা বললেই ভারত-আওয়ামী লীগের দালাল বানিয়ে দিচ্ছে: দুদু’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম ব্যতিত বাকি সকল উপাদানের মিল রয়েছে। ইত্তেফাকের মূল ফটোকার্ডটিতে ‘নির্বাচনের কথা বললেই ভারত-আওয়ামী লীগের দালাল বানিয়ে দিচ্ছে: দুদু’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘ঈদের পরেই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে-দুদু’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ইত্তেফাকের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত ইত্তেফাকের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তবে উক্ত প্রতিবেদনে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ‘ঈদের পরেই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে-দুদু’ শীর্ষক শিরোনামে ইত্তেফাকের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্ট্রোক করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওটি ইতোমধ্যে ফেসবুকেই অন্তত সাত লক্ষাধিকবার দেখা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মির্জা ফখরুল স্ট্রোক করেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মির্জা ফখরুল। সে ঘটনার একটি ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজসহসহ একাধিক অ্যাকাউন্টের পোস্টে ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একই ঘটনার ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
মিডিয়া সেলের ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, সেদিন বিজয় দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সাভার সিএমএইচ নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থায়ীকমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল সাথে ছিলেন।
অর্থাৎ ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং প্রায় ছয় মাস পুরোনো।
পরবর্তী অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ফেস দ্যা পিপল এর সম্পাদক সাইফুর রহমানের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, মির্জা ফখরুল সুস্থ আছেন এবং এই মুহূর্তে বাসাতেই আছেন।
জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে তিনি স্ট্রোক করেছেন। বিষয়টি দেখে আমি জনাব ফখরুল ইসলামের বাসায় খবর নিয়ে জেনেছি যে তিনি সুস্থ আছেন এবং এই মুহূর্তে বাসাতেই আছেন।
সুতরাং, পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে মির্জা ফখরুল অতি সম্প্রতি স্ট্রোক করেছেন শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত বছরের ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় তিনি বক্তব্য প্রদান করলেও প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায়নি তাকে।
সম্প্রতি, ‘ভারতে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার মুখে ড. ইউনূস! দিল্লির মঞ্চে কী বললেন!’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে প্রকাশ্যে এসে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেখ হাসিনার বক্তব্যের একটি পুরোনো ভিডিওর সাথে তার সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া একটি বক্তব্যের অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে উপস্থাপিকা বলছেন ‘ভারতে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনা। সরাসরি বক্তব্যে ড. ইউনূসকে নিয়ে সমালোচনা। কী বললেন তিনি!’
এরপর শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘আওয়ামী লীগ নাকি তারা রাখবে না। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে। ওরা কী ভেবেছে, আওয়ামী লীগ কি ভেসে এসেছে? না কারো পকেট থেকে বের হয়েছে? ড. ইউনূস ক্ষমতা দখল করেছে একেবারে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে। মানুষ হত্যা করে, মানুষের লাশের ওপর পাড়া দিয়ে।’
শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে এসে এমন বক্তব্য দিয়েছেন কি না- সেবিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, এমনকি বিশ্বস্ত সূত্রে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ২৫ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা শেখ হাসিনার পোশাক এবং সামনে থাকা মাইক্রোফোনের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে কোথাও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।
এছাড়া গত জুলাই মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতা গ্রহণ করেননি, তিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন গত বছরের ০৮ আগস্ট। গত জুলাই মাসে শেখ হাসিনাই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
এরপর আলোচিত ভিডিওতে থাকা অডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে গত ২২ মে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। সেই বক্তব্যটি আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থাৎ, গত বছরের ২৫ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ভবন পরিদর্শন শেষে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ কেটে সেটির সাথে গত ২২ মে শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বক্তব্য যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে প্রকাশ্যে এসেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই ভিডিওটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি, “লন্ডনে বসেও রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায়- শামসুজ্জামান দুদু” শীর্ষক দাবিতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল গোনিউজ২৪ এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লন্ডনে বসেও রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় দাবি করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু কোনো মন্তব্য করেননি এবং উক্ত দাবিতে গোনিউজ২৪ও কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, গোনিউজ২৪ এর ফেসবুক পেজে শামসুজ্জামান দুদুর বক্তব্য নিয়ে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে৷
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এতে গোনিউজ২৪ এর লোগো রয়েছে এবং আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৯ মে ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
গোনিউজ২৪ এর লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৯ মে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করুন না হয় আমরই দিয়ে দেব – শামসুজ্জামান দুদু” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। গোনিউজ২৪ এর মূল ফটোকার্ডটিতে ‘নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করুন না হয় আমরই দিয়ে দেব – শামসুজ্জামান দুদু’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘লন্ডনে বসেও রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায়- শামসুজ্জামান দুদু’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
অর্থাৎ, গোনিউজ২৪ এর এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদুকে উদ্ধৃত করে ‘লন্ডনে বসেও রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায়’ শিরোনামে গোনিউজ২৪ এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি “এক মাসের মধ্যে আমার মা বাংলাদেশে আপনাদের মধ্যে আপনাদের মাঝে ফিরে আসবে” শীর্ষক শিরোনামে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মন্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল “এক মাসের মধ্যে আমার মা বাংলাদেশে আপনাদের মধ্যে আপনাদের মাঝে ফিরে আসবে” শীর্ষক কোনো বক্তব্য দেননি। প্রকৃতপক্ষে, মিয়ানমারের ভূমিকম্পের এক মাস পরেও দুর্গত অঞ্চলে ২৪ লাখেরও বেশি মানুষ জরুরি স্বাস্থ্যসেবার অভাবে ভুগছে দাবি করে মানবিক এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত ও টেকসই সহায়তার প্রয়োজন এর কথা উল্লেখ করে সাইমা ওয়াজেদ এর দেওয়া বক্তব্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত ইমেজ রিভার্স সার্চের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের (WHO SEARO) এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ এপ্রিল ‘A Month After The Myanmar #Earthquakes’ শীর্ষক ক্যাপশন আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
(WHO SEARO) এর লিংকডইন একাউন্টেও একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদকে বলতে দেখা যায়, মায়ানমারে ভূমিকম্পের এক মাস পর ২৪ লাখের বেশি মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসায় রোগবাহিত বিপদ বাড়ছে, বিশেষ করে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও পানিবাহিত রোগের। এরই মধ্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহায়তা দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকট এড়াতে জরুরি অর্থায়ন প্রয়োজন।
অর্থাৎ, সায়মা ওয়াজেদের এই বক্তব্যের সাথে শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান বা দেশে ফেরার কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, মায়নমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে সায়মা ওয়াজেদের বক্তব্যলর একটি ভিডিওকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তার বক্তব্য বলে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘আমাদের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে কোন কথাই এখন দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না : আমির খসরু’ শীর্ষক শিরোনামে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছবিযুক্ত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যনার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ‘আমাদের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে কোন কথাই এখন দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি।প্রকৃতপক্ষে, কোনোরকমের নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ‘৫১ টিভি’ নামে একটি নাম এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে, ফটোকার্ডটিতে ‘বিস্তারিত কমেন্টে’ বলা হলেও কথিত পোস্টগুলোর মন্তব্যের ঘরে দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে, বাংলাদেশে ‘৫১ টিভি’ নামে কোনো মূলধারার গণমাধ্যম (টেলিভিশন চ্যানেল বা নিউজ পোর্টাল) পাওয়া যায়নি, যা আলোচিত দাবির মতো ফটোকার্ড প্রচার করে থাকে।
এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে, ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং ডিজাইন এর সূত্র ধরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪ এর ফেসবুক পেজে গত ২৮ এপ্রিল ‘এক-দেড় মাসের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করা সম্ভব: আমির খসরু’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। ফটোকার্ডটির ডিজাইনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটেকার্ডটির ডিজাইনের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
উক্ত ফটোকার্ড সম্বলিত বার্তা২৪ এর পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া সংবাদ মাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের অনেক আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি জামায়াত প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়েও কথা বলেছেন।
তবে, প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত মন্তব্যটি পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে ‘আমাদের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে কোন কথাই এখন দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না : আমির খসরু’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত মন্তব্যটি ভুয়া ও বানোয়াট।
ইসলামিক পদ্ধতিতে গরু ও অন্যান্য পশু জবাইয়ের বিষয়ে অন্তত ২০১৯ সাল থেকে একটি গবেষণার বরাতে প্রতিবছর ঈদ উল আজহার সময় কিছু তথ্য ফেসবুকে পোস্ট আকারে প্রচার হয়ে আসছে।
উক্ত ফেসবুক পোস্টগুলোতে মূলত দাবি করা হয়, জার্মানির হ্যানোভার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শুলজ এবং ডক্টর হাজিমের করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইসলামিক পদ্ধতিতে জবাই করলে গরু ও অন্যান্য পশু ব্যথা অনুভব করে না।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গবেষণার বরাতে প্রচার হওয়া আলোচিত দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত দাবির সাথে গবেষণাপত্রটির কিছু অমিল বা অসংগতি রয়েছে। গবেষণাটিতে ভেড়া এবং বাছুর ব্যবহার করা হয়েছে। গরু ব্যবহার করা হয়নি। একইসাথে, বর্তমান সময়ের অধিকাংশ গবেষণার তথ্যমতে, অবচেতন না করে কোনো পশুর জীবনাবসান ঘটানো হলে পশু ব্যথা অনুভব করে থাকে। তবে, এই অবচেতন করার প্রক্রিয়াটিতেও ব্যথা অনুভব হয়।
আলোচিত পোস্টগুলোতে প্রফেসর শ্যুলজ এবং ডক্টর হাজিমের যে গবেষণার কথা বলা হয়েছে, সেই গবেষণাপত্রটি মূল জার্মান ভাষায় পাওয়া না গেলেও, এটির ইংরেজি অনুবাদ অনলাইনে পাওয়া যায়। গবেষণাপত্রটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন ব্রিটেনের ইসলামিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রফেসর ডক্টর সাহিব মুস্তাকিম ব্লেহার। গবেষণাপত্রটির ইংরেজি শিরোনাম [Objectivization of pain and consciousness in the conventional (dart-gun anesthesia) as well as in ritual (kosher incision) slaughter of sheep and calf]. অর্থাৎ, এতে ধর্মীয় রীতি বলতে ইহুদিদের কোশার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হয়েছিল।
গবেষণাপত্রটি ১৯৭৮ সালে জার্মান জার্নাল Deutsche Tieraerztliche Wochenschrift (German veterinary weekly) এর ফেব্রুয়ারী সংখ্যার ভলিউম ৮৫ এর ৬২ থেকে ৬৬ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টের সাথে গবেষণাপত্রটির কিছু অমিল বা অসংগতি পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রথমত, অনুবাদকৃত রিসার্চ পেপার অনুযায়ী, ধর্মীয় পদ্ধতি এবং ক্যাপ্টিভ বোল্ট পদ্ধতিতে পশুর মৃত্যু ঘটানোর মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। অনুবাদে ধর্মীয় পদ্ধতি (ritual cut) হিসেবে উল্লেখ করা হলেও National Library of Medicine এ গবেষণাপত্রটির ইংরেজি ভাষান্তরিত শিরোনামে ধর্মীয় পদ্ধতি হিসেবে কোশার পদ্ধতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কোশার পদ্ধতি বলতে ইহুদিদের ধর্মীয় পদ্ধতি বোঝানো হয়ে থাকে, মুসলিমদের নয়। তবে, কোশার পদ্ধতি ইহুদিদের হলেও এর সাথে ইসলামিক রীতিরও মিল রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, গবেষণাটিতে ভেড়া এবং বাছুর ব্যবহার করা হয়েছে। গরু ব্যবহার করা হয়নি। গবেষকরা পূর্ণবয়স্ক গরুর ক্ষেত্রে আবারও রিসার্চ করতে বলেছেন। তবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গবেষণাটিতে গরু ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
তৃতীয়ত, আলোচিত পোস্টগুলোতে ৩ সেকেন্ড, ৬ সেকেন্ডের সময়ে EEG এর গ্রাফ এবং গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকার মতো কথাগুলো বলা হলেও গবেষণাপত্রে এরকম কিছু পাওয়া যায়নি। তবে, গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ভেড়াগুলো ৪ থেকে ৬ সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হারানোর জোরালো সম্ভাবনা আছে। অপরদিকে বাছুরের ক্ষেত্রে সময়টা ১০ সেকেন্ডের মধ্যে।
শেষের পয়েন্টের বিষয়ে যদিও গবেষণাপত্রটিতে কিছু বলা হয়নি, তবে গবেষণাপত্রটির ইংরেজি অনুবাদক ডক্টর ব্লেহারের ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি নিজের ওয়েবসাইটে ৩ সেকেন্ড, ৬ সেকেন্ড এবং গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন। সেখানে রেফারেন্স হিসেবে নিজের অনুবাদ করা গবেষণাপত্রটির বিষয়ে উল্লেখ করলেও তার নিজের অনুবাদ করা গবেষণাপত্রে তার দাবির স্বপক্ষে এরকম কিছু পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, উক্ত ৩ এবং ৬ সেকেন্ডের তথ্যগুলো গবেষণাপত্রটির অনুবাদক ব্লেহারের ওয়েবসাইটের আর্কাইভ সংস্করণে পাওয়া গেলেও বর্তমান সংস্করণে পাওয়া যায়না৷ অর্থাৎ, এই ৩ সেকেন্ড এবং ৬ সেকেন্ডের উল্লেখকৃত শব্দ তিনি নিজেই পরবর্তীতে সরিয়ে নিয়েছেন।
অতঃপর, জবাই করার সময় গরু ও অন্যান্য পশু ব্যথা পায় কিনা তা নিয়ে সাম্প্রতিক বা এই দশকের গবেষণা বা নিবন্ধের অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার। অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্পেন ভিত্তিক কাতালান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান verificat এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। উক্ত প্রতিবেদনে একাধিক গবেষণা ও বইয়ের সূত্রের উপর ভিত্তি করে তারা সিদ্ধান্ত জানায়, পশু ব্যথা অনুভব করে। এক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে পশুকে অবচেতন করে নেওয়া যেতে পারে। অবচেতন করার জন্য প্রথমে পশুটির নড়াচড়া করার শক্তি থামাতে হবে। যদিও এই প্রক্রিয়াটিও কষ্টদায়ক। তবে, অবচেতন ছাড়া জীবনাবসান ঘটানোর চেয়ে এটি তুলনামূলক কম সময় নেয় বা কম কষ্ট দেয় পশুকে। উক্ত কথাগুলো অ্যান্তোনিও ভেলার্দে নামের একজন গবেষকের বরাতে প্রকাশ করে ভেরিফিক্যাট।
তাছাড়া, পশু ব্যথা পায় শীর্ষক উক্ত দাবির স্বপক্ষে তাদের যুক্ত করা সূত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিউজিল্যান্ড ভেটেরিনারি জার্নালে “Electroencephalographic responses of halothane-anaesthetised calves to slaughter by ventral-neck incision without prior stunning” শিরোনামে প্রকাশ হওয়া একটি গবেষণাপত্র, যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির Animal Science এর প্রফেসর টেম্পল গ্র্যান্ডিন এর “Improving Animal Welfare | 3rd Edition | A Practical Approach” শিরোনামের সম্পাদিত বই, বৈজ্ঞানিক ও মেডিক্যাল ডাটাবেজ সায়েন্স ডিরেক্টে “Recent concerns about stunning and slaughter” শিরোনামে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এবং আফ্রিকান জার্নাল এবং বায়োটেকনোলজিতে “Animal welfare in multipurpose cattle production Systems and its implications on beef quality” শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণাপত্র।
অর্থাৎ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে গবেষণাপত্রের বরাতে ইসলামিক পদ্ধতিতে জবাই করলে গরু ও অন্যান্য পশু ব্যথা অনুভব করে না শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে তাতে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে এবং প্রচারিত দাবির সাথে গবেষণাপত্রটিরও কিছু অমিল বা অসংগতি রয়েছে। গবেষণাটিতে ভেড়া এবং বাছুর ব্যবহার করা হয়েছে। গরু ব্যবহার করা হয়নি। একইসাথে, বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ গবেষণার মতে অবচেতন না করে কোনো পশুর জীবনাবসান ঘটানো হলে পশুটি ব্যথা অনুভব করে থাকে। তবে, এই অবচেতন করার প্রক্রিয়াটিতেও ব্যথা অনুভব হয়। সুতরাং, প্রচারিত পোস্ট, দাবিকৃত গবেষণাপত্র কিংবা বর্তমান গবেষণা, সব কিছুর মধ্যেই পার্থক্য বা অমিল লক্ষ্য করা যায়।
উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিটির বিষয়ে ২০২৪ সালে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। পড়ুন এখানে।
সাম্প্রতিক সময়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নানান আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘অবশেষে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল ড.ইউনূস’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেননি বরং, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই Dailyspring24 নামে ব্লগস্পটে হোস্ট করা একটি ভূঁইফোড় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কথিত প্রতিবেদনের বরাতে ভুয়া এই দাবি প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত দাবিগুলোর কিছু পোস্টের কমেন্টে তথ্যসূত্র হিসেবে ‘dailyspring24.xyz’ নামের একটি ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে সাইটটি ব্লগস্পট প্ল্যাটফর্মে তৈরি ও .xyz ডোমেইনে হোস্ট করা একটি ভূঁইফোড় ওয়েবসাইট হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনটিতে নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বর থেকে ছাব্বিশের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর তারিখ ঘোষণা করা হলে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন দাবি করা হলেও তার ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “জয় বাংলা পিলার সামলা | লোকেশন শেওড়াপাড়া” শীর্ষক ক্যাপশনসহ একাধিক ক্যাপশনে মেট্রোরেলের একটি পিলারের ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, মেট্রোরেলের পিলার ভেঙেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত মেট্রোরেলের ভাঙা পিলারের ছবিটি আসল নয় বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন একটি ছবি সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মূল ছবিটিতে পিলারের অংশ ভেঙে পড়েনি বরং, অল্প ফাটলসদৃশ অবস্থা দেখা যাচ্ছিল।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত ছবিটি আসল হওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, রিভার্স সার্চে ‘Civil Engineering Classroom’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Ayat Ullah’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩১ মে তারিখে “এগুলো ফাটল নাকি অন্যকিছু?” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ছবি পোস্ট হতে দেখা যায়। উক্ত ছবিটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির তুলনা করলে ভেঙে পড়া অংশ ব্যতীত বাকী সবকিছুর হুবহু মিল পাওয়া যায়। এমনকি চিহ্নিতকরণ অংশেরও মিল রয়েছে।
এছাড়াও, “ফাটল ধরেছে মেট্রোরেলের পিলারে | মেট্রোরেল ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি মেট্রোরেলের | প্রতিটি পিলার যেন ভালো করে চেক করা হয়….” শীর্ষক ক্যাপশনেও অল্প ফাটলসদৃশ উক্ত ছবিটি প্রচার হতে দেখা যায়।
এছাড়াও, গত ২ জুনে ‘P295’ নামক উক্ত পিলারটির ফাটল মেরামতের ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও মেট্রোরেল সংক্রান্ত একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Welcome Bangladesh’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। উক্ত ভিডিওটিতে অল্প ফাটলসদৃশ অবস্থার মেরামত করতে দেখা যায় তবে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মতো ভেঙে পড়ার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ভাঙা পিলারের ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘BANGLADESH METRO RAILWAY INFORMATION(বাংলাদেশ মেট্রোরেলের তথ্য)’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ৩১ মে তারিখে “এটা কি সত্যিই? লোকেশন শেওড়াপাড়া” শীর্ষক ক্যাপশনে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পোস্ট হতে দেখা যায়। উক্ত ছবিটির মন্তব্যের ঘর পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ‘Sazzad Hossain’ নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারী আলোচিত ভাঙা পিলারের ছবিটি সংযুক্ত করে মন্তব্য করেছেন, “কিছুক্ষণ আগেই আমি এডিট করে মজা করে কমেন্ট করলাম আপনি আবার পোস্ট দিয়ে দিলেন”। এ থেকে বুঝা যায় যে উল্লিখিত সাজ্জাদ হোসাইনের মতে ভাঙা পিলারের ছবিটি তার নিজের সম্পাদিত ছবি। এ বিষয়ে সাজ্জাদ হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও, এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন অনুসন্ধানকারী সরেজমিনে গিয়ে উক্ত পিলারটি পর্যবেক্ষণ করেও তাতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির অনুরূপভাবে মেট্রোরেলের পিলার ভেঙে পড়ার কোনো প্রমাণ পাননি।
সুতরাং, মেট্রোরেলের ভাঙা পিলারের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পাদিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চিত্রনায়ক শাকিব খান মারা যাননি বরং কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই News Bangla নামে ব্লগস্পটে হোস্ট করা একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কথিত প্রতিবেদনের বরাতে ভুয়া এই দাবি প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত দাবিগুলোর কিছু পোস্টের কমেন্টে তথ্যসূত্র হিসেবে ‘news6angla.site’ নামের একটি ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে সাইটটি ব্লগস্পট প্ল্যাটফর্মে তৈরি ও .site ডোমেইনে হোস্ট করা একটি ভূঁইফোড় ওয়েবসাইট হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
উক্ত লিংকে ‘শুটিং চলাকালীন এক্সিডেন্টে নিহত সাকিব’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে চিত্রনায়ক শাকিব খানের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনটিতে শাকিব খানের ছবি যুক্ত করে ‘চলচ্চিত্রের শুটিং চলাকালীন ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন উদীয়মান অভিনেতা সাকিব (২৪)। সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি স্টুডিওতে নতুন একটি অ্যাকশন সিনেমার দৃশ্যধারণের সময় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।’ উল্লেখ করা হয়, যেখানে সাকিব নামক ভিন্ন একজন অভিনেতার কথা বলা হয়েছে।
শাকিব খানের মতো একজন তারকার মৃত্যুর সংবাদ গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হওয়ার কথা, কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে শাকিব খানের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রচারিত দাবিটি গত ০৩ জুন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ালেও এই প্রতিবেদন প্রকাশের (০৪ জুন দুপুর) সময়েও শাকিব খানের ফেসবুক পেজে পোস্ট প্রকাশ হতে দেখা যায়।
সুতরাং, চিত্রনায়ক শাকিব খান শ্যুটিং চলাকালীন দূর্ঘটনায় মারা গেছে শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।