Home Blog Page 12

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অপেক্ষায় নদী তীরে গাজাবাসী দাবিতে তিউনিসিয়ার ভিডিও প্রচার

সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার বৈশ্বিক প্রচেষ্টা হিসেবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামের একটি নৌবহর গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। নৌযানগুলো ক্রমশই গাজার দিকে এগিয়ে চলেছে। এরই প্রেক্ষিতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অপেক্ষায় নদী তীরে জড়ো হচ্ছেন গাজাবাসীরা দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবির ফেসবুক ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে। 

একই দাবির ইনস্টাগ্রাম ভিডিও দেখুন এখানে। 

ইউটিউবে প্রাচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গাজা উপকূলের নয় বরং ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহর তিউনিশিয়ার সিদি বু সাইদ বন্দরে অবস্থানের তিন সপ্তাহ পূর্বের ভিডিওকে সম্প্রতি গাজা উপকূলের ভিডিও দাবিতে প্রচার হচ্ছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে তিউনিসিয়ার গণমাধ্যম Taraji news এর পেজে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। ভিডিওর বর্ণনা থেকে বিস্তারিত জানা না গেলেও এটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি তিউনিসিয়ারই ভিডিও। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে ১০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স কর্তৃক প্রকাশিত একই স্থানের একটি লাইভ ভিডিও ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়। রয়টার্স জানায়, তিউনিসিয়ার সিদি বু সাইদ বন্দর থেকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহরের যাত্রার সময়ের ভিডিও এটি। 

সুতরাং, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অপেক্ষায় নদী তীরে জড়ো হচ্ছে গাজাবাসী দাবিতে তিউনিসিয়ার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ড. ইউনূসের পদত্যাগ চেয়ে আ.লীগপন্থী আইনজীবীদের আদালত বর্জনের দাবি ভুয়া

সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবিতে সারাদেশে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা আদালত বর্জন সংক্রান্ত কোনো কর্মসূচি দেননি এবং বিক্ষোভ মিছিলও করেনি। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচির ফুটেজ জোড়া লাগিয়ে আলোচিত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির শুরুতেই একজন সংবাদ পাঠিকার সংবাদ পাঠের একটি ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘আদালত বর্জন ইস্যুতে মুখোমুখি দুপক্ষের আইনজীবীরা’ শিরোনানে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রতিবেদনে সেসময় বিএনপি ও সমমনা দলের আইনজীবীরা আদালত বর্জন কর্মসূচি সফল করার শপথ নিয়েছিল বলে দাবি করা হলেও আলোচিত প্রতিবেদনে উক্ত বাক্যে বিএনপির পরিবর্তে ‘আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা’ শীর্ষক অডিও যুক্ত করা হয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওতে ব্যবহৃত আইনজীবীদের আদালত বর্জন সম্পর্কিত স্লোগানের ফুটেজটি ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি থেকে নেওয়া।

Comparison: Rumor Scanner

আলোচিত দাবির ভিডিওতে আইনজীবীদের কালো পতাকা মিছিলের একটি ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের বাহিরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কালো পতাকা মিছিলের।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওতে থাকা পুলিশের সাথে আইনজীবীদের বাকবিতণ্ডার ফুটেজটি ২০২৩ সালের ১ জুন সুপ্রিম কোর্টের সামনের সড়কে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার ঘটনার।

Comparison: Rumor Scanner

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে একজন আইনজীবীর বক্তব্যের ফুটেজ সংযুক্ত রয়েছে, যা ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি থেকে ধারণকৃত ভিডিও।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওতে সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরীর একটি বক্তব্যের ফুটেজও যুক্ত করা হয়েছে। তবে নবনীতার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের আদালত বর্জন সংক্রান্ত কোনো কর্মসূচি পালনের দাবি করতে দেখা যায়নি।

এছাড়া, প্রচারিত আরো কিছু ছবি ও ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলোর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চেয়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের আদালত বর্জন সংক্রান্ত সংক্রান্ত এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

শহিদুল আলম গাজায় পৌঁছেছেন দাবিতে এআই ছবি ভাইরাল

0

গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজার ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি নৌবহর যাত্রা শুরু করে। এই মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায়, গত ১ অক্টোবর ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) জাহাজ ‘কনশানস্’ (,,) আন্তর্জাতিক সাংবাদিক এবং চিকিৎসা পেশাদারদের নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এই জাহাজে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমও যোগ দেন। 

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যায়, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের সামনে শহিদুল আলমসহ কয়েকজন শিশুদের খাবার ও পানি বিতরণ করছেন। ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, শহিদুল আলম গাজায় পৌঁছেছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শহিদুল আলম ত্রাণ নিয়ে গাজায় পৌঁছাননি। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি তার জাহাজ যাত্রাপথেই রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ছবির মাধ্যমে ভুয়া দাবি ছড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে ফ্লোটিলা বহরের কোনো জাহাজ গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। শহিদুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জাহাজে থাকা অবস্থায় নিয়মিত যাত্রাপথের আপডেট শেয়ার করছেন, তবে গাজায় পৌঁছানোর কোনো তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি। তিনি যদি গাজায় পৌঁছে ত্রাণ বিতরণ করতেন, তবে এই ঘটনার তথ্য ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এদিকে, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘কনশানস্’ জাহাজের লাইভ স্ট্রিমে এই প্রতিবেদন লেখার সময় (৩ অক্টোবর, বিকেল ৪টা ০১ মিনিট) জাহাজটিকে যাত্রাপথেই দেখা গেছে।

রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে, প্রচারিত ছবিতে আঙুলের বিকৃতি ও আলো–ছায়ার অসামঞ্জস্যসহ একাধিক এআই-জনিত অসঙ্গতি শনাক্ত হয়েছে।

পরবর্তীতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মোডারেশনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।

Screenshot: Hive Moderation. 

এই ছবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ‘Nacky Official’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২ অক্টোবর ২০২৫ রাত ৯টা ১৪ মিনিটে প্রকাশিত এই ছবি সংবলিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট পাওয়া যায়। পেজটি পর্যালোচনায় হিজাব পরিহিত এক নারীর বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখা যায়। পেজের ইন্ট্রোতে ওই নারী নিজের নাম ‘নেকি’ বলে দাবি করেছেন এবং ক্যাটাগরিতে ‘রিলস ক্রিয়েটর’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। শহিদুল আলমের আলোচিত ছবিতেও একজন হিজাব পরিহিত নারীকে পানির বোতল হাতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই নারী ছবিটি তৈরি করেছেন।

সুতরাং, শহিদুল আলম গাজায় পৌঁছেছেন দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সাতক্ষীরার পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণ-হত্যার ২০২১ সালের ঘটনাকে নতুন করে সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে প্রচার

0

সম্প্রতি সাতক্ষীরায় স্কুলছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এমন একটি দাবি এবং তার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু পোস্টে ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভারতেও সামাজিক মাধ্যমে এটি প্রচারিত হয়েছে। ভারতীয় পোস্টগুলোতে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা হিসেবে দেখিয়ে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের খারাপ পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে। এক্সে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে। ঘটনাটির ওপর  সাম্প্রতিক সময়ে ও সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশি পোর্টাল Hindu News এবং ভারতীয় পোর্টাল Hindu Post.

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাতক্ষীরার পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যা সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা নয়; এটি ২০২১ সালের ঘটনা। এছাড়া, এই ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়িক যোগসূত্রও নেই। ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিও হিন্দু সম্প্রদায়ের।

পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যা দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায় এটি ২০২১ সালের ঘটনা। ২০২১ সালের বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রচারিত ছবিটি পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের শান্তি রঞ্জন দাসের মেয়ে পূর্ণিমা দাস বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় এবং পরেরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে একই এলাকার তারক মন্ডলের নির্মিত নতুন বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে বিবস্ত্র ও দু’হাত বাঁধা অবস্থায় পূর্ণিমা দাসের মরদেহ পাওয়া যায়। পূর্ণিমা দাস সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমিকভাবে ধারণা করা হয়।

একইদিনে পূর্ণিমা দাসের বাবা বাদী হয়ে পার্থ মণ্ডলকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পার্থ মণ্ডল ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করে আসছিলেন। পার্থ ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রীর পরিবার সেটি প্রত্যাখ্যান করে। ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে পার্থ ওই ছাত্রীর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে যান। মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পার্থকে সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে পূর্ণিমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে পার্থ।

সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান পরেরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের শান্তিরঞ্জন দাসের মেয়ে গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ শেষে গলায় ক্যাবল পেঁচিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে তার প্রেমিক একই গ্রামের একই গ্রামের শিবপদ মন্ডলের ছেলে প্যারা মেডিক্যালে অধ্যয়নরত ছাত্র পার্থ মন্ডলের বিরুদ্ধে। 

শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১) সকালে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির সবজি বাগান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে পূর্ণিমার বাবা শান্তি রঞ্জন দাস উপজেলার দেবহাটা থানায় পার্থকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় একমাত্র আসামি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শনিবার রাতে পার্থ মণ্ডলকে সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও জানা যায়, পূর্ণিমা দাসের সঙ্গে পার্থ মণ্ডলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক বছর আগে পূর্ণিমাকে বিয়ের জন্য পার্থ মন্ডল প্রস্তাব দেয়। এতে উভয় পরিবার, বিশেষ করে পূর্ণিমার বাবা শান্তি রঞ্জন দাস রাজি না হওয়ায় পূর্নিমা তাকে এড়িয়ে চলত। তাকে এড়িয়ে চলা এবং অন্য সম্পর্কে জড়ানোর খবর শুনে পার্থ ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পনা করে সুযোগ বুঝে তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে।”

অর্থাৎ, সাতক্ষীরার পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ২০২১ সালের এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

সুতরাং, সাতক্ষীরার পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যার পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রতিক ও সাম্প্রদায়িক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আ.লীগের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার ভুয়া দাবি ইন্টারনেটে

গতকাল ১ অক্টোবর থেকে ‘নিবন্ধন ফিরে পেল আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে একাধিক ভিডিও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি উল্লেখিত ভিডিওগুলো সবমিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষবার দেখা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ফিরে পায়নি। প্রকৃতপক্ষে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নামের একটি দল নিবন্ধনের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করেছে বলে জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ভিন্ন দুটি রাজনৈতিক সংগঠন।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ডিবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে উক্ত প্রতিবেদনটিতে আওয়ামী লীগ নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে এমন কোনো দাবি করা হয়নি।

প্রতিবেদনে সংবাদ পাঠিকাকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের কমিশনের চূড়ান্ত নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। তাদের নিবন্ধন নিয়ে কারো দাবি আপত্তি থাকলে তা জানতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে ইসি। এনসিপির কাছে প্রতীক চেয়ে দেওয়া হবে চিঠি। নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি সাতটি দল। এছাড়া নয়টি দলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে আবার তদন্ত করা হবে।’ পরবর্তীতে এ নিয়ে ইসির সংবাদ সম্মেলনের কিছু অংশ দেখানো হয় এবং সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ডিবিসির এক সংবাদ প্রতিবেদককে তথ্য জানাতে দেখা যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে এমন দাবি করা করা হয়নি।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। ওয়েবসাইটে থাকা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকায় (আর্কাইভ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম থাকলেও, দলটির নামের পাশে ব্রাকেটে ‘স্থগিত’ শব্দটি উল্লেখ আছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ পৃথক দুটি রাজনৈতিক দল। ঢাকার স্বামীবাগে কে এস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি। অপরদিকে, ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে জাতীয় লীগ গঠিত হয়। আতাউর ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ঢাকা-৩ আসন থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় লীগের হয়ে ঢাকা-১৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সে দলের ইসির নিবন্ধন থাকতে হবে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই নিয়ম চালু হয়। এরপর কয়েকবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল জাতীয় লীগ। তবে এবারের আগে কখনোই ইতিবাচক সাড়া পায়নি দলটি।

উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ সংগঠন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে গত ১২ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত (আর্কাইভ) করে নির্বাচন কমিশন।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত অন্য ভিডিগুলোতে বলা হয়- ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নির্দেশে নিবন্ধন ফিরে পেল আওয়ামী লীগ। ড. ইউনূসের দেশে না থাকার সুযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি ভিডিও কলে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান।’ তবে ভিডিওগুলোতে পুরোনো বিভিন্ন ঘটনার কিছু অপ্রাসঙ্গিক ফুটেজ ও ছবি ছাড়া দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে দেখা যায়নি।

সুতরাং, নিবন্ধন স্থগিত থাকা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

‘আমি খেললে এবার এশিয়া কাপ ঘরে তুলতাম’ বলে মন্তব্য করেননি সাকিব

এশিয়া কাপ ক্রিকেটের এবারের আসরের সুপার ফোরের ম্যাচে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের কাছে ১১ রানে হেরে টুর্ণামেন্ট থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ দল। এরই প্রেক্ষিতে “আমি খেললে এবার এশিয়া কাপ ঘরেই তুলতাম।” পাকিস্তানে সাথে জেতা ম্যাচ হারের পর লাইভে এসে সাকিব আল হাসানের এমন মন্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

উক্ত দাবির টিকটক ভিডিও দেখুন এখানে।

টিকটকে প্রকাশিত এই ভিডিওটি প্রায় ১৪ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে।

একই দাবির ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে সাকিব এশিয়া কাপ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্যই করেননি বরং গত ১৬ সেপ্টেম্বর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিজের দলের বিষয়ে সাকিবের মন্তব্যের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।   

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর সাকিবের অংশটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে এবার অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনসের হয়ে খেলেছেন সাকিব। সে বিষয়েই ভিডিওতে আলাপ করছিলেন তিনি।

Comparison: Rumor Scanner 

তবে উক্ত ভিডিওতে এশিয়া কাপ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি সাকিব। তাছাড়া, যে ম্যাচ প্রসঙ্গে সাকিবের মন্তব্য বলে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে সে-ই ম্যাচও হয়েছে এই ভিডিও প্রকাশের নয় দিন পরে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিওতে সাকিবের এমন মন্তব্য করার কথা নয়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বিষয়ে সাকিবের মন্তব্যের নয়।   

সুতরাং, আমি খেললে এবার এশিয়া কাপ ঘরে তুলতাম শীর্ষক মন্তব্য করেছেন সাকিব আল হাসান দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গাজা অভিমুখে এগোচ্ছে দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার 

সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা হিসেবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামের একটি নৌবহর গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। নৌযানগুলো ক্রমশই গাজার দিকে এগিয়ে চলেছে। এরই প্রেক্ষিতে গাজা অভিমুখে নৌবহরটির সারি দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবির ফেসবুক ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে। 

এ সংক্রান্ত দুইটি ভিডিও ফেসবুকে দেখা হয়েছে অন্তত ১২ হাজারের অধিক বার। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নৌবহরের প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং এআই প্রযুক্তির ব্যবহারে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোয় এই ভিডিওর অস্তিত্ব মেলেনি। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, এই যাত্রায় সঙ্গী হয়েছে ৪৪টি ভেসেল। কিন্তু আলোচিত ভিডিওতে এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি জাহাজ দেখা যাচ্ছে। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওটিতে থাকা জাহাজসহ পারিপার্শ্বিক উপাদানগুলোতে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।  

তাছাড়া, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত ভিডিওগুলো (, ) পর্যালোচনা করেও আলোচিত ভিডিওর সাথে মিল পাওয়া যায়নি। 

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গাজা অভিমুখে এগোচ্ছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s own analysis 

সেপ্টেম্বরে ৩২৯ ভুল তথ্য শনাক্ত

0

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৩২৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (২২৯) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় বিষয়ে ৫৩টি, ধর্মীয় বিষয়ে ২০টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১১টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে পাঁচটি, শিক্ষা বিষয়ে চারটি, খেলাধুলা বিষয়ে সাতটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে গত মাসে। এর বাইরে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন নিয়ে দুইটি আলাদা পরিসংখ্যান এবং একজন নারী সংবাদ পাঠিকার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অপতথ্যের প্রচারের বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের অধীনে বিস্তারিত অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে গত মাসে। 

এসব ঘটনায় ভিডিও কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি, ২১৫টি। এছাড়া তথ্য কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৭৯টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৩৫টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ২৩৩টি, বিকৃত হিসেবে ৩৩টি এবং বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৩টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। 

শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এই সময়ে পুরুষদের জড়িয়ে ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে ২০১টি এবং নারীদের জড়িয়ে ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ৮৫টি। 

একই সময়ে বয়সের ধরণ অনুযায়ী চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ভুল তথ্যগুলোকে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুবক বয়সীদের (যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে) নিয়ে সবচেয়ে বেশি (১১৩) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, শিশুদের (যাদের বয়স ০ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে) নিয়ে ০৫টি, মধ্যবয়সীদের (যাদের বয়স ৩৬ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে) নিয়ে ৭৩টি এবং প্রবীণদের (যাদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি) জড়িয়ে ৯০টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

প্লাটফর্ম হিসেবে গেল মাসে ফেসবু্কে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যার হিসেবে যা ২৮৯টি। এছাড়া ইনস্টাগ্রামে ১৫৬টি, ইউটিউবে ৪৬টি, এক্সে ৪০টি, টিকটকে ৮২টি, থ্রেডসে অন্তত ১৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৩টি ঘটনায় দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। একই সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমেও বাংলাদেশকে নিয়ে দুইটি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনায়। সেপ্টেম্বরে ১৫টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে আটটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ছয়টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুলতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন ভুলতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব ভুলতথ্যের সবগুলোতেই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

গত মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ১৬টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার সবগুলোতেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে জড়িয়ে ছয়টি, ড. আসিফ নজরুল, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে দুইটি করে এবং মাহফুজ আলমকে জড়িয়ে একটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সবগুলোতই তাদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে সর্বত্র। গেল বেশ কয়েক মাসে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপতথ্যের প্রচার বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বরে এ সংক্রান্ত ১০টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে।  

রিউমর স্ক্যানার সেপ্টেম্বর মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, তার অঙ্গসংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি (৬৯টি) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে জামায়াতকে জড়িয়ে ১১টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশ ক্ষেত্রেই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে জড়িয়ে দুইটি অপতথ্য (দুটোই নেতিবাচক) প্রচার করা হয়েছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সেপ্টেম্বরে ৩৬টি (প্রায় ৯২ শতাংশই নেতিবাচক) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

জামায়াতের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), তার অঙ্গসংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য (৬৮টি) প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে বিএনপিকে জড়িয়ে ২২টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার সবগুলোতেই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে চারটি (৭৫ শতাংশই নেতিবাচক) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর বাইরে ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে ১৮টি (সবগুলোই নেতিবাচক) ও যুবদলকে জড়িয়ে একটি (নেতিবাচক) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া, সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও দলটির নেতাকর্মীদের জড়িয়ে ২৩টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে দল হিসেবে এনসিপিকে জড়িয়ে দুইটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার সবগুলোই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য (নেতিবাচক) শনাক্ত হয়েছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে সেপ্টেম্বরে ১৪৫টি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে ৬৪টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে যার প্রায় ৯৮ শতাংশই দলটির পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ২৩টি অপতথ্য (সবগুলোই ইতিবাচক) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে জড়িয়ে গত মাসে ১৮টি (৯৪ শতাংশই ইতিবাচক) ও যুবলীগকে জড়িয়ে পাঁচটি অপতথ্য (সবগুলোই ইতিবাচক) শনাক্ত করা হয়েছে। 

ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে ছয়টিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২৫টি ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে ২৩টি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জড়িয়ে ০৬টি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে জড়িয়ে দুইটি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও র‌্যাবকে জড়িয়ে একটি করে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।    

সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে ১৮টি। একই সময়ে ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে ১৩টি। 

সেপ্টেম্বর মাসে সাতটি ঘটনা বা ইস্যুতে ভুল তথ্যের প্রচার ছিল। গত ০৯ সেপ্টেম্বরের ডাকসু নির্বাচন, ১১ সেপ্টেম্বরের জাকসু নির্বাচন, দুর্গাপূজা, এশিয়া কাপ, জাতিসংঘ অধিবেশন, খাগড়াছড়ির সহিংসতা ও গত ২৯ আগস্টের জাপা-জিওপি সংঘর্ষের ঘটনায় ভুয়া তথ্যের প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বাধিক (৪৩টি) ভুয়া তথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এছাড়া, খাগড়াছড়ির সহিংসতা ইস্যুতে ২০টি, জাকসু নির্বাচন ইস্যুতে ১৪টি, জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে ১৩টি, দুর্গাপূজা ও এশিয়া কাপ ইস্যুতে পাঁচটি করে এবং জাপা-জিওপি সংঘর্ষের ইস্যুতে দুইটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে। 

গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারের পরিমাণ আবার বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে৷ সেপ্টেম্বর মাসে এই পদ্ধতির ব্যবহার করে ৩৩টি ঘটনায় দেশের ১৫টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৩৩টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।   

বার্তা প্রেরক

তানভীর মাহতাব আবীর

সিনিয়র ফ্যাক্টচেকার,

রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ। 

[email protected]

নির্বাচনী মঞ্চে গুজবের ছায়া: জাকসুর অদেখা লড়াই

0

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গত ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক (জিএস), দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২০টি পদে জয় পেয়েছেন বাংলাদশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। তবে, সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হয়েছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের প্রার্থী। এই নির্বাচন ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা পরিলক্ষিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল কিংবা প্রার্থীকে ঘায়েল করতে ভুয়া তথ্যের প্রচারও ছিল লক্ষণীয়৷ এই ভুয়া তথ্য শনাক্তে নির্বাচনের শুরু থেকেই উক্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অনলাইন কনটেন্টে নজরদারি করে রিউমর স্ক্যানার টিম। যার ফলশ্রুতিতে এই নির্বাচন নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ১৪টি গুজব শনাক্ত হয়। প্রকৃতির দিক থেকে এগুলোর মধ্যে ১০টি (৭১.৪৩ শতাংশ) মিথ্যা এবং ৪টি (২৮.৫৭ শতাংশ) বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রচারণা চলাকালে ০৭ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রথম ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। এদিন ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, ডোপ টেস্টের পর জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাবেক সভাপতি ও বামপন্থীদের একাংশের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। তবে দাবিটির সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার। জানা যায়, অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার কারণ ডোপ টেস্ট নয় বরং, নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে।

পরদিন ০৮ সেপ্টেম্বর অমর্ত্য রায়কে জড়িয়ে আরেকটি গুজব ছড়ানো হয়। তবে এই গুজবের উৎস সামাজিক মাধ্যম নয়, মূলধারার গণমাধ্যম থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অন্তত ৪০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী অমর্ত্য রায় জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। তবে অনুসন্ধানে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। জানা যায়, জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে নয়, অমর্ত্য রায় তার বাতিল হওয়া প্রার্থীতা পুর্নবহাল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। 

ভোটের দিন সবচেয়ে বেশি গুজব

১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। ভোটার উপস্থিতি থাকায় দুইটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয় সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এদিন অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ভোট গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার আগে ও পরে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলসহ মোট পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দলীয় প্রভাবের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান। নির্বাচন ঘিরে এদিন সবচেয়ে বেশি (০৬টি) গুজব শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। দুপুরে ভোট চলাকালীন ছাত্রদলের প্যানেলের ভোট বর্জনের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিবিরের অ্যাকশনের ঘটনা এটি। ভিডিওতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে লাঠি হাতে অবস্থান করতে দেখা যায়। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে, ভিডিওটি ১১ সেপ্টেম্বরের নয় এবং ঐদিন জাবিতে এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা। সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। এটি সেই ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও।

ভোটগ্রহণ চলাকালে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি জাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির চিত্র। ভিডিওতে দুই যুবককে অবৈধভাবে বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ঢুকাতে দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি জাকসু নির্বাচনের নয়, ২০১৫ সাল থেকেই ইন্টারনেটে ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে।

এছাড়া, এদিন বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশি অ্যাকশনের একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “ভয়াবহ অবস্থা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শিবিরের পক্ষ নিল পুলিশ। বহু হতাহতের আশঙ্কা”। তবে যাচাই করে জানা যায়, দাবিটি ভুয়া। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও এটি।

একইদিন জাবিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। তবে অনুসন্ধানে ঐদিন এমন কোনো সংঘর্ষের প্রমাণ মেলেনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওকে জাবিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, একই দাবিতে প্রচারিত অন্য ভিডিওটি ২০২৩ সালে পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনার। 

ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়েছে এবং নিবার্চন অবৈধ ঘোষণা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ভিডিওটি যাচাই করে দেখা যায়, এতে প্রচারিত দাবিগুলোর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। ভিডিওতে প্রদর্শিত ফুটেজগুলো ছাত্রদলের ভোট বর্জন ও কতিপয় শিক্ষকের নির্বাচন বর্জন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া। যেগুলোর সাথে প্রচারিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

নির্বাচনের ফল ঘোষণা বিলম্বে বাড়তে থাকে গুজবের পরিধি

১১ সেপ্টেম্বর রাতে শুরু হওয়া ভোট গণনা ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে শেষ হবে – এমন দাবি জাকসুর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করা হলেও ১২ সেপ্টেম্বর রাতেও ভোট গণনা শেষ করতে পারেনি কমিশন। যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ভোট গণনার কাজে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলের পোলিং অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করা চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা।

হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে ‍মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় অন্তত ২০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা নামের ভিন্ন নারীর ছবি প্রচার করা হয়। ঐ নারী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত আছেন যা তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

এদিন ভোটে অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত তিনটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত জুলাইয়ে কক্সবাজারে এক বিএনপি নেতাকে হত্যার বিচার চেয়ে ঢাবিতে ছাত্রদলের মশাল মিছিলের একটি ভিডিওকে জাকসুতে শিবিরের ভোট চুরির প্রতিবাদের দাবিতে মশাল মিছিল দাবিতে প্রচার করতে দেখা যায়। পাশাপাশি জাবিতে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ হয়েছে দাবিতে ২০২২ সালে ঢাবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ এবং বরিশালে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষের সাম্প্রতিক ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, শিবির-ছাত্রদল মুখোমুখি অবস্থান এবং ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযান দাবিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার প্রচার করা হয় যা ২০২৪ সালে জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশি অ্যাকশনের ঘটনার ভিডিও।

একইদিন জাকসুর ফল ঘোষণা নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে কালেরকণ্ঠের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। যেখানে দাবি করা হয়- শিবিরের সভাপতি বলেছেন, “জাকসুতে শিবিরকে বিজয়ী ঘোষনা না করলে জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হবে”। প্রকৃতপক্ষে শিবির সভাপতি এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং কালেরকণ্ঠও এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।

ভোটগ্রহণের প্রায় ৪৮ ঘন্টার পর ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে নির্বাচন ফলাফল ঘোষণা করা হয়। একাধিক প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর পদ্ধতিতে মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনার ফলে ফলাফল জানতে বেশি সময় লেগেছে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

ফল ঘোষণার পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর বামপন্থীদের আরেক অংশের সমর্থিত ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের এজিএস (নারী) প্রার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়ার আহত অবস্থার একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, ছাত্রশিবির নির্বাচনে জয় লাভের পর বামপন্থীদের ওপর হামলা করেছে। তবে যাচাই করে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ের। প্রকৃতপক্ষে, জাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে শিবির কর্তৃক বামপন্থীদের ওপর এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

কোন প্যানেল সবচেয়ে বেশি গুজবের শিকার?

জাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ০৯টি গুজব ছড়ানো হয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলকে জড়িয়ে। যার প্রায় ৮৯ শতাংশই প্যানেলটির ভাবমূর্তির বিপক্ষে গেছে। তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলকে জড়িয়ে প্রচার করা হয়েছে ০৫টি গুজব, যার ৮০ শতাংশ প্যানেলটি সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে সক্ষম। এই দুই প্যানেলের বাহিরে বামপন্থীদের একাংশের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলেকে জড়িয়েও ০২টি (বিপক্ষে) গুজব প্রচার হতে দেখা গেছে।

প্রার্থীদের জড়িয়ে যত গুজব

জাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনকে জড়িয়ে ০২টি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভোট গ্রহণের দু’দিন আগে আদালত থেকে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে। যার ফলে তিনি ভোট যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। অমর্ত্য ছাড়াও আরো দুই প্রার্থীকে জড়িয়ে গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলামকে জড়িয়ে ০১টি (পক্ষে) এবং ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের এজিএস (নারী) প্রার্থী সোহাগী সামিয়াকে জড়িয়ে ০১টি (পক্ষে) ছড়ানো একটি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

প্রার্থীদের লিঙ্গ ভেদে গুজব

জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ০২ জন পুরুষ প্রার্থী এবং ০১ জন নারী প্রার্থীকে জড়িয়ে গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। যার মধ্যে পুরুষ প্রার্থীদের জড়িয়ে গুজবের সংখ্যা ০৩টি এবং নারী প্রার্থীর জড়িয়ে ০১টি।

অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নামে ০১টি (বিপক্ষে) ভুয়া মন্তব্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যাকে (বিপক্ষে) জড়িয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে ০১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িয়ে গুজব

গুজবের হাত থেকে ছাড় পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে ০২টি গুজব ছড়ানো প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে একটি গুজব ছড়ানো হয়েছে যেখানে জড়ানো হয়েছে বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে।

গণমাধ্যমের ভুল সংবাদ

শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, গুজবের অংশীজন ছিল গণমাধ্যমও। জাকসু নির্বাচন ইস্যুতে ০২টি ভিন্ন ঘটনায় অন্তত ৬২টি গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করেছে। যার মধ্যে ০২টি করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে তালিকায় সম্মিলিতভাবে শীর্ষে রয়েছে ০৬টি গণমাধ্যম। বাকি ৫৬টি গণমাধ্যম একটি করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে।

গণমাধ্যমকে টার্গেট করেও অপপ্রচারের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় দৈনিক কালেরকণ্ঠের নামে ০১টি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গুজবের ধরণ

শনাক্ত হওয়া মোট ভুল তথ্যের মধ্যে ভিডিও-কেন্দ্রিক ভুল সবচেয়ে বেশি, ৯টি (প্রায় ৬৪%)। এছাড়া তথ্য-কেন্দ্রিক ভুল ৩টি (প্রায় ২১%) এবং ছবি-কেন্দ্রিক ২টি (প্রায় ১৪%) ভুল পাওয়া গেছে।

গুজবের লক্ষ্যবস্তু যুবসমাজ

জাকসু নির্বাচনে ভুল তথ্য প্রচারের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ১৮-৩৫ বছর বয়সী যুব সমাজের পাঁচজন ব্যক্তিকে ভুল তথ্য প্রচারের সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। এছাড়া, ৩৬-৫৯ বছর বয়সী একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে জড়িয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। তবে, শিশু বা প্রবীণ ব্যক্তিদের জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গুজবের মূল উৎস ফেসবুক, পিছিয়ে নেই ইন্সটাগ্রামও

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুকে সর্বোচ্চ ১৩টি গুজব ছড়িয়েছে, যা মোট গুজবের প্রায় ৯৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে আছে মেটার আরেক প্লাটফর্ম ইন্সটাগ্রাম। এই মাধ্যমটিতে ছড়িয়েছে ০৯টি গুজব, যা প্রায় ৬৪ শতাংশ। এছাড়া, ইউটিউবে ০৫টি, টিকটকে ০৩টি, থ্রেডসে ০৩টি এবং এক্সে ০১টি গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে, কিছু গুজব একাধিক প্ল্যাটফর্মে ছড়ানোয় প্ল্যাটফর্মভিত্তিক গুজবের সংখ্যা (১৩ + ৯ + ৫ + ৩ + ৩ + ১= ৩৪) মোট গুজবের সংখ্যা (১৪) থেকে বেশি দেখাচ্ছে।

কাজের পদ্ধতি

এই গবেষণাটি তৈরি করা হয়েছে জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করে। এজন্য আমরা গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত জাকসু-সংক্রান্ত সব ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছি। পরে পাঠকদের সহজে বোঝার সুবিধার্থে এই তথ্যগুলোকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে গ্রাফ, চার্ট এবং বিশ্লেষণমূলক লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ভারতের ভিডিওকে বাংলাদেশে মন্দিরের পাশে নামাজ পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘তৌহিদী জনতা’ হিন্দুদের মন্দিরে নিয়ে নামাজ পড়ছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশের কাশীর লাট ভৈরব মন্দির প্রাঙ্গণে অসাম্প্রদায়িক প্রতীক হিসেবে রামলীলা এবং নামাজ একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এটি সেই ঘটনারই দৃশ্য। এই সংস্কৃতি প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। 
অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অমর উজালার ওয়েবসাইটে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

অমর উজালার শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, একদিকে রামলীলা অন্যদিকে নামাজ। ৫০০ বছরের পুরোনো কাশীর রামলীলা। 

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ভারতীয় আরেক গণমাধ্যম ইটিভি ভারতের ওয়েবসাইটে একই তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর লাট ভৈরব মন্দিরের প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো একটি সংস্কৃতি পালিত হয়েছে। এখানে অসাম্প্রদায়িক প্রতীক হিসেবে রামলীলার পাশাপাশি মুসলিমরা নামাজ আদায় করে থাকেন। 

একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় আরেক গণমাধ্যম এবিপি লাইভও

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশের এমন ঘটনা ঘটার কোনো তথ্য গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, রামলীলা হলো হিন্দু ধর্মের একটি ঐতিহ্যবাহী নাট্যরূপ, যা মহাকাব্য রামায়ণের উপর ভিত্তি করে প্রদর্শিত হয়। 

সুতরাং, ভারতের কাশীতে অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হিসেবে রামলীলার পাশাপাশি নামাজ পড়ার দৃশ্যকে বাংলাদেশে মন্দিরে নামাজ পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র