Home Blog Page 12

শাহবাগে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

গত ২৭ আগস্ট তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের পূর্বঘোষিত ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ অবরোধের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে পৌঁছলে লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের পিছু হটতে বাধ্য করে পুলিশ। এরই প্রেক্ষিতে, “এই মুহূর্তে গভীর রাতে শাহবাগসহ আশেপাশের এলাকা রণক্ষেত্র পুলিশ নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালাচ্ছে। ইউনুছ সরকারের হাতিয়ার এখন পুলিশ। টিকে থাকার জন্য শেষ কামড় দিচ্ছে….” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি বরং, এটি ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার ভিডিও।


এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে “মসজিদ মাদ্রাসা খেদমত সেন্টার/আর্জেন্ট খেদমত দিচ্ছি নিচ্ছি” নামক ফেসবুক গ্রুপে  “ফখরুদ্দীন আল রাযী স্বাধীন” নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি প্রথম আলোর অফিসের সামনে সমাবেশে পুলিশের হামলার ভিডিও। 

উল্লিখিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর “প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর (রবিবার) সন্ধ্যায় প্রথম আলো পত্রিকা অফিসের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। ওইদিন দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে জোড়া গরু জবেহ কর্মসূচি শুরু করে বিক্ষোভকারীরা।

সুতরাং, ২০২৪ সালে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

গত ২১ আগস্ট ঢাকা কলেজ – সিটি কলেজ সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা কলেজের কোনো শিক্ষার্থী মারা যাননি

গত ২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  

এরই প্রেক্ষিতে, গত ২২ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ঢাকা কলেজে একজন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে আজ সকালে. সেনাপ্রধান কই, মব ধামে নাই.’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা কলেজ – সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা কলেজের কোনো ছাত্র মারা যাননি। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত ভিডিওটি গত ২২ জুলাই অর্থাৎ অন্তত ১ মাস আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। উক্ত পুরোনো ভিডিও দিয়ে আলোচিত দাবি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের গত ২১ আগস্ট সংঘর্ষে বা সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে কেউ মারা গেছে কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্র আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে,  ভিডিওটিতে থাকা বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ‘Financial Post’ লেখার সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ২২ জুলাই ‘সচিবালয়ের ভেতর থেকে আহত শিক্ষার্থীকে নিয়ে হসপিটালের পথে সহপাঠীরা…’ শিরোনামে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, ভিডিওটি গত ২১ আগস্ট ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার প্রায় ১ মাস আগের।

গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর গভীর রাতে হঠাৎ করে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত কেন আগে নেওয়া হলো না এবং কেন রাত ৩টায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো -এই ক্ষোভে পরদিন অর্থাৎ ২২ জুলাই ঢাকা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বের করতে লাঠিচার্জ করে।

সুতরাং, পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে সম্প্রতি ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা কলেজের একজন ছাত্র মারা গেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

২৯ আগস্ট জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে জিওপি নেতাকর্মীদের অগ্নিসংযোগ দাবিতে ২০২৪ সালের ভিডিও প্রচার

রাজধানীর কাকরাইলে গতকাল (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদের অভিযোগ, জাপা কর্মীরা তাদের মিছিলে হামলা করেছে। অন্যদিকে জাপার দাবি, গণ অধিকার পরিষদের কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়েছে। সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল (২৯ আগস্ট) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “রাজধানীতে জাতীয় পাঠির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে ভিপি নৃরের নেতাকর্মীরা।”

অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে প্রচারিত ভিডিওটি গত ২৯ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভিপি নুরের দল গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের আগুন দেওয়ার দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গতকাল ২৯ আগস্টের (শুক্রবার) নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ভিডিও।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Comrade Mahmud- কমরেড মাহমুদ’ নামের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর ‘আজ ছাত্র জনতার উপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসে আগুন…’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়।

একই তারিখে একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচার হতে দেখা যায়। দেখুন – এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

উক্ত পোস্টগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইট (,,) ও ইউটিউব চ্যানেলে (,,) সেই সময় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে গত বছরের ১ নভেম্বরে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’র ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর তাঁদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। তবে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন দুই পক্ষই। জাতীয় পার্টি দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে যাওয়া ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, তাঁদের ওপর আগে হামলা করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া এ বিষয়ে ডেইলি স্টার -এর বাংলা ওয়েবসাইটে গত বছরের ৩১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি ​​অফিসার রাশেদ বিন খালেদ ডেইলি স্টারকে জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে (২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর) তারা কল পান এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নেভাতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায়। এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেঈমান জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার জাতীয় বেঈমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’

পাশাপাশি, এ বিষয়ে গত বছরের ৩১ অক্টোবরে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন -এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। 

উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি গতকাল (২৯ আগস্ট) এর নয়।

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ‘গত ২ আগস্ট জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এনসিপির অগ্নিসংযোগের ভিডিও’ দাবিতে প্রচার করা হলে সেসময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে গতকাল ২৯ আগস্ট জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিপি নুরের গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা অগ্নিসংযোগ করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

স্কুল শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সরু গলিপথ দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি এক স্কুল শিক্ষার্থীর গায়ে হাত দিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। এই ভিডিওটি বাংলাদেশের ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে।

উক্ত দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওই ফেসবুকে দেখা হয়েছে সাড়ে চার লক্ষেরও অধিক বার। 

এ ঘটনাটি বাংলাদেশের দাবি করে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ওয়েবসাইটে পত্রিকাটির ডেপুটি নিউজ এডিটর আনিসুর বুলবুলের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন এখানে। 

একই দাবিতে এক্সের পোস্ট দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, এটি পাকিস্তানের মুলতানের সাম্প্রতিক ঘটনা। দেশটির পুলিশ ইতোমধ্যেই এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারের ফেসবুক পেজে গত ২৪ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশনে থেকে জানা যায়, দেশটির মুলতানে পুলিশ দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে হেনস্থা করার ঘটনায় জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পাওয়ার পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে, যেখানে দেখা যায় যে, ভুক্তভোগী – একজন ম্যাট্রিকুলেশনের ছাত্রী – রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একজন মোটরসাইকেল আরোহী এগিয়ে এসে তাকে হয়রানি করে। ভাইরাল ভিডিওটির পর পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে অভিযুক্ত এখন হেফাজতে রয়েছে এবং আরও তদন্ত চলছে। 

পাকিস্তানের মূল ধারার গণমাধ্যম ডন এর ওয়েবসাইটে একই দিনে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ থেকে আরো জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট এই ঘটনায় যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার নাম ওয়াকাস। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। 

সুতরাং, এক স্কুল শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির এই ভিডিওটি বাংলাদেশের বলে দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

কোটা আন্দোলনে পিস্তল হাতে যুবকের ভিডিওকে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র দাবিতে প্রচার 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিস্তল হাতে এক যুবকের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি নতুন বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র। 

উক্ত দাবির ফেসবুক ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়কার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইউটিউবে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশনে ঘটনাটি চট্টগ্রামের বলা হলেও এর বেশি কিছু জানা যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ব্যক্তির নাম ফিরোজ। ২৪ অক্টোবর ফেনী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। কালবেলার এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া জাহির এলাকায় ‘ডাকাত ফিরোজ’ নামে পরিচিত। মুরাদপুর-বহদ্দারহাট এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মের হোতা সে। এক সময় সে ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবেও পরিচিত ছিল। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের।

উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে একই ভিডিওকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের যুবক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়৷ 

সুতরাং, ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনে চট্টগ্রামে পিস্তল হাতে যুবকের ভিডিওকে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

জুলাই আন্দোলনকারী এথিনা তাবাসসুম মীম ধর্ষণের শিকার দাবিতে চ্যানেল২৪ এর নামে সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার

0

সম্প্রতি, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এথিনা তাবাসসুম মীমের ছবি ব্যবহার করে “বাসায় ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার জুলাইযোদ্ধা এ্যাথিনা তাবাসসুম মিম” শীর্ষক শিরোনামে চ্যানেল২৪ এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এখানে।   

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এথিনা তাবাসসুম মীম ধর্ষণের শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় এবং উক্ত শিরোনামে চ্যানেল২৪ও কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যমটির ভিন্ন ঘটনার একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে চ্যানেল২৪ এর লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৮ আগস্ট, ২০২৫ উল্লেখ পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে গত ২৮ আগস্ট ‘বাড়িতে ফেরার পথে কলেজছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম এবং ছবি ব্যতিত বাকি সকল উপাদানের মিল রয়েছে। চ্যানেল২৪ এর মূল ফটোকার্ডটিতে ‘বাড়িতে ফেরার পথে কলেজছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘বাসায় ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার জুলাইযোদ্ধা এ্যাথিনা তাবাসসুম মিম’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।

অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে চ্যানেল২৪ এর ফটোকার্ড সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

মূল ফটোকার্ড সম্বলিত চ্যানেল২৪ এর পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ আগস্ট পিরোজপুরে এক কলেজ ছাত্রী (১৯) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনা এটি যার সাথে এথিনা তাবাসসুম মীমের কোনো সম্পর্ক নেই।

অনুসন্ধানে এথিনা তাবাসসুম মীম তার ফেসবুক প্রোফাইলে দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানান, “আমাকে যেভাবে পারছে হেনস্থা করছে। আমার সম্পর্কে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে। আমার ছবি ইডিট করে যা ইচ্ছা তাই করছে। আমি বুঝতে পারছি না কেন প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

সুতরাং, ‘বাসায় ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার জুলাইযোদ্ধা এ্যাথিনা তাবাসসুম মিম’ শীর্ষক শিরোনামে চ্যানেল২৪ এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেননি

0

সম্প্রতি ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘এবার বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেছেন মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিলকেন’ শীর্ষক একটি দাবি প্রচার করা হয়েছে। এই দাবির পাশাপাশি পোস্টটিতে একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দাবিটি আরও বেশকিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মধ্যপ্রাচ্য সংকট সফরের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম ইব্রাহিম আল-হাশিমি ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে গ্রুপ ছবি তোলার পূর্বমুহূর্তের একটি ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে স্টক ফটো ওয়েবসাইট gettyimages এ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিটির সাথে আলোচিত ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, মিশরে ২০২৪ সালের ২১ মার্চ মধ্যপ্রাচ্য সংকট সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন   মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী রিম ইব্রাহিম আল-হাশিমির সাথে গ্রুপ ছবি তোলার জন্য অগ্রসর হন। সংযুক্ত ছবিটি উক্ত মুহূর্তের চিত্র। 

পরবর্তীতে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইরানের গণমাধ্যম Iran International এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২১ মার্চ ‘Progress in Riyadh-Washington Talks Over Israeli Normalization’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়। 

উল্লেখ্য, Tamanna Akhter Yesman নামে পরিচালিত এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমিরর ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির চেষ্টা নিয়ে গত ১৯ জুন বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশে ছিনতাইয়ের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মিশরের 

সম্প্রতি, “ছিনতাইকারী মানেই বাংলাদেশ চুরি-ডাকাতি মানেই বাংলাদেশ, বাহ ইউনুস চমৎকার সন্ত্রাসীদের পাহারাদার।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বাংলাদেশে কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনার নয় বরং এটি মিশরের রাজধানী কায়রোর আল আমিরিয়া এলাকায় ছিনতাইয়ের ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘MUI News’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ১৬ আগস্ট “Viral Video Shows Thief on Motorcycle Attempting Phone Snatch in Cairo’s Al Amiriya” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি হুবহু মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে আরবি নিউজ পোর্টাল ‘nabd’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ১৬ আগস্ট “আল-ওয়াফেদ গেট | আল-আমিরিয়া এলাকায় চোর গ্রেপ্তার… তিনি এক নাগরিকের কাছ থেকে চুরি করেছেন এবং তাকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেছেন।” (অনূদিত) শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিরাপত্তা বাহিনী আল-আমিরিয়ায় এক চোরকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন নাগরিকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন চুরি করার সাথে সাথে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ডেলিভারি কর্মী। (অনূদিত) 

মিশরের বিভিন্ন স্থানীয় গণমাধ্যমও এ বিষয়ে সংবাদ (,,) প্রচার করেছে। 

অর্থাৎ, ছিনতাইয়ের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়।

সুতরাং, মিশরের রাজধানী কায়রোর আল আমিরিয়া এলাকায় ছিনতাইয়ের ভিডিওকে বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, “জামালপুরের গজরা বাজারে কৃষি ব্যাংকের ছাদে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতার লাশ। ছেলেটি জামালপুর কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলো। ছাত্রলীগ করাই ছেলেটির অপরাধ ছিলো!” ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির লাশটি কোনো ছাত্রলীগ নেতার নয় এবং ভিডিওটি জামালপুরেরও নয়। তাছাড়া, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময় বা অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলেরই নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গজরা বাজার এলাকায় কৃষি ব্যাংকের কার্যালয়ের ছাদ থেকে ওই ব্যাংকের নৈশপ্রহরীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। এটি সেই ঘটনারই একটি ভিডিও।

অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘Md Ariful IslamBabu Prodhan’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভিডিওটি প্রচার করতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘গজরা ইউনিয়নের গজরা বাজার কৃষি ব্যাংকের ছাদে। ওয়াই ফাই পিলারের সাথে সাহাদাত হোসেনকে গত কাল মধ্য রাতে কে বা কারা নিরমর্ম ভাবে হাত পা বেধে গলায় ধরি দিয়ে শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলে রাখে।’ 

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চ্যানেল আই -এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘চাঁদপুরে কৃষি ব্যাংকের নৈশ প্রহরীর হাত-পা বাঁধা মর///দেহ উদ্ধার’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে ব্যবহৃত একটি ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

এই বিষয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ‘মতলবে কৃষি ব্যাংকের কার্যালয়ের ছাদে পড়ে ছিল নৈশপ্রহরীর লাশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গজরা বাজার এলাকায় কৃষি ব্যাংকের কার্যালয়ের ছাদ থেকে ওই ব্যাংকের নৈশপ্রহরীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেদনটিতে পুলিশের বরাতে বলা হয়, ‘পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’

সেই সময় অনলাইন সংবাদ মধ্যম বিডিনিউজ২৪.কম, জাগোনিউজ২৪.কম, ঢাকা পোস্ট -এর ওয়েবসাইটে এই বিষেয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। তবে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে নিহতের নাম মো. সাজ্জাদ হোসেন বলা হলেও এই প্রতিবেদন গুলোতে শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনগুলোতে নিহত ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি এবং এই হত্যাকাণ্ডের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন দাবি করা হয়নি।

অর্থাৎ, ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের ঘটনার নয়।

সুতরাং, জামালপুরে গজরা বাজারে কৃষি ব‍্যাংকের ছাদের উপর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের জন্য বাংলাদেশে মার্কিন সেনা প্রবেশ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি জাতিসংঘ

সম্প্রতি, জাতিসংঘ সদরদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা ও জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিন সেনা প্রবেশের নির্দেশ পেয়েছে, তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থিতিশীল ও নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের হাতে ক্ষমতা পুনর্বহাল করার জন্য কাজ করবে – এই দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। যেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীর সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিলকে কথা বলতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটির সাথের প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়েরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০২৩ সালের ১৮ মে থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান মার্কিন সেনাবাহিনীর সেনাবাহিনীর সেই সময়ের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিল -এর ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার  ভিডিওর একটি অংশের অডিও কাট কিংবা মিউট করে  আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পর্কে জাতিসংঘ এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে কথা বলা ব্যক্তিমার্কিন সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিল বলে জানা যায়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, এটা একটা নির্মম, হিংস্র লড়াই তবে, যুদ্ধটি শুধুমাত্র ভূমিতে নয়, আকাশ, সমুদ্র, সাইবার ও মহাকাশেও চলছে। এই যুদ্ধের প্রধান শিক্ষা হলো  যুদ্ধে সফল হতে হলে সব ক্ষেত্র মিলিয়ে কাজ করতে হয়। এই সেনা কর্মকর্তার  কাছে, তাদের (যুদ্ধরত দেশ একটি দেশ) যুদ্ধ করার যে মানসিকতা এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । তাদের (যুদ্ধরত দেশ) অস্ত্র, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে । বিশ্বের সমর্থন ও  তাদের (যুদ্ধ করা দেশ) ইচ্ছাশক্তি যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিয়েছে। 

তবে, সেনাকর্মকর্তার বক্তব্যে যুদ্ধরত দেশটির নাম শুনতে পাওয়া না পাওয়া গেলেও ভিডিওতে থাকা সাবটাইটেলে ১৯ সেকেন্ড অংশে ‘for the Ukrainians, is’ লেখাটি দেখতে পাওয়া যায়। যার ফলে প্রতীয়মান হয় যে বক্তা কথাগুলো ইউক্রেন সম্পর্কে বলেছেন।

আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব দাবি করা হয়েছে সেসব বিষয়ে ভিডিওটিতে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বাংলাদেশ যুদ্ধরত কোনো দেশ নয়। সার্বিক বিবেচনায় রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে ভিডিও ক্লিপটি বাংলাদেশ সম্পর্কে নয় বলে প্রতীয়মান হয়। 

পরবর্তীতে, ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘Council on Foreign Relations’ ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ মে ‘U.S. Army chief on Ukraine war lessons’ শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে, ভিডিওটি ২২ সেকেন্ড অংশে ‘for the Ukrainians, is’ সাবটাইটেল এবং অডিও রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner 

অর্থাৎ, এই ভিডিওর অডিও অংশে থাকা ‘for the Ukrainians’ শব্দগুচ্ছ কাট কিংবা মিউট করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মার্কিন সেনাবাহিনীর বর্তমান চিফ অফ স্টাফ জেনারেল র‍্যান্ডি এ. জর্জ। 

অর্থাৎ, ভিডিওটিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর সেই সময়ের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিল বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়, ইউক্রেন সম্পর্কে কথা বলেছেন।

সুতরাং, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের জন্য বাংলাদেশে মার্কিন সেনা প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘ শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র