Home Blog Page 13

জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, “জামালপুরের গজরা বাজারে কৃষি ব্যাংকের ছাদে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতার লাশ। ছেলেটি জামালপুর কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলো। ছাত্রলীগ করাই ছেলেটির অপরাধ ছিলো!” ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির লাশটি কোনো ছাত্রলীগ নেতার নয় এবং ভিডিওটি জামালপুরেরও নয়। তাছাড়া, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময় বা অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলেরই নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গজরা বাজার এলাকায় কৃষি ব্যাংকের কার্যালয়ের ছাদ থেকে ওই ব্যাংকের নৈশপ্রহরীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। এটি সেই ঘটনারই একটি ভিডিও।

অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘Md Ariful IslamBabu Prodhan’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভিডিওটি প্রচার করতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘গজরা ইউনিয়নের গজরা বাজার কৃষি ব্যাংকের ছাদে। ওয়াই ফাই পিলারের সাথে সাহাদাত হোসেনকে গত কাল মধ্য রাতে কে বা কারা নিরমর্ম ভাবে হাত পা বেধে গলায় ধরি দিয়ে শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলে রাখে।’ 

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চ্যানেল আই -এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘চাঁদপুরে কৃষি ব্যাংকের নৈশ প্রহরীর হাত-পা বাঁধা মর///দেহ উদ্ধার’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে ব্যবহৃত একটি ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

এই বিষয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ‘মতলবে কৃষি ব্যাংকের কার্যালয়ের ছাদে পড়ে ছিল নৈশপ্রহরীর লাশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গজরা বাজার এলাকায় কৃষি ব্যাংকের কার্যালয়ের ছাদ থেকে ওই ব্যাংকের নৈশপ্রহরীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেদনটিতে পুলিশের বরাতে বলা হয়, ‘পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’

সেই সময় অনলাইন সংবাদ মধ্যম বিডিনিউজ২৪.কম, জাগোনিউজ২৪.কম, ঢাকা পোস্ট -এর ওয়েবসাইটে এই বিষেয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। তবে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে নিহতের নাম মো. সাজ্জাদ হোসেন বলা হলেও এই প্রতিবেদন গুলোতে শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনগুলোতে নিহত ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি এবং এই হত্যাকাণ্ডের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন দাবি করা হয়নি।

অর্থাৎ, ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের ঘটনার নয়।

সুতরাং, জামালপুরে গজরা বাজারে কৃষি ব‍্যাংকের ছাদের উপর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের জন্য বাংলাদেশে মার্কিন সেনা প্রবেশ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি জাতিসংঘ

সম্প্রতি, জাতিসংঘ সদরদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা ও জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিন সেনা প্রবেশের নির্দেশ পেয়েছে, তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থিতিশীল ও নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের হাতে ক্ষমতা পুনর্বহাল করার জন্য কাজ করবে – এই দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। যেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীর সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিলকে কথা বলতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটির সাথের প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়েরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০২৩ সালের ১৮ মে থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান মার্কিন সেনাবাহিনীর সেনাবাহিনীর সেই সময়ের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিল -এর ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার  ভিডিওর একটি অংশের অডিও কাট কিংবা মিউট করে  আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পর্কে জাতিসংঘ এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে কথা বলা ব্যক্তিমার্কিন সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিল বলে জানা যায়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, এটা একটা নির্মম, হিংস্র লড়াই তবে, যুদ্ধটি শুধুমাত্র ভূমিতে নয়, আকাশ, সমুদ্র, সাইবার ও মহাকাশেও চলছে। এই যুদ্ধের প্রধান শিক্ষা হলো  যুদ্ধে সফল হতে হলে সব ক্ষেত্র মিলিয়ে কাজ করতে হয়। এই সেনা কর্মকর্তার  কাছে, তাদের (যুদ্ধরত দেশ একটি দেশ) যুদ্ধ করার যে মানসিকতা এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । তাদের (যুদ্ধরত দেশ) অস্ত্র, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে । বিশ্বের সমর্থন ও  তাদের (যুদ্ধ করা দেশ) ইচ্ছাশক্তি যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিয়েছে। 

তবে, সেনাকর্মকর্তার বক্তব্যে যুদ্ধরত দেশটির নাম শুনতে পাওয়া না পাওয়া গেলেও ভিডিওতে থাকা সাবটাইটেলে ১৯ সেকেন্ড অংশে ‘for the Ukrainians, is’ লেখাটি দেখতে পাওয়া যায়। যার ফলে প্রতীয়মান হয় যে বক্তা কথাগুলো ইউক্রেন সম্পর্কে বলেছেন।

আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব দাবি করা হয়েছে সেসব বিষয়ে ভিডিওটিতে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বাংলাদেশ যুদ্ধরত কোনো দেশ নয়। সার্বিক বিবেচনায় রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে ভিডিও ক্লিপটি বাংলাদেশ সম্পর্কে নয় বলে প্রতীয়মান হয়। 

পরবর্তীতে, ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘Council on Foreign Relations’ ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ মে ‘U.S. Army chief on Ukraine war lessons’ শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে, ভিডিওটি ২২ সেকেন্ড অংশে ‘for the Ukrainians, is’ সাবটাইটেল এবং অডিও রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner 

অর্থাৎ, এই ভিডিওর অডিও অংশে থাকা ‘for the Ukrainians’ শব্দগুচ্ছ কাট কিংবা মিউট করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মার্কিন সেনাবাহিনীর বর্তমান চিফ অফ স্টাফ জেনারেল র‍্যান্ডি এ. জর্জ। 

অর্থাৎ, ভিডিওটিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর সেই সময়ের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জেমস সি. ম্যাককনভিল বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়, ইউক্রেন সম্পর্কে কথা বলেছেন।

সুতরাং, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের জন্য বাংলাদেশে মার্কিন সেনা প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘ শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভিসা প্রতারণা নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের খণ্ডিত অংশ প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রচার

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেলে ২৪-এর একটি প্রতিবেদনের ভিডিও প্রচার করে হচ্ছে যেখানে সংবাদপাঠককে, ‘কোথাও দৌঁড়াদৌঁড়ি কিংবা পড়াশোনা নয়, ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মিলছে ইউরোপ অস্ট্রেলিয়াসহ বেশকিছু স্বপ্নের দেশের ভিসা।’ শীর্ষক কথাগুলো বলতে শোনা যায়। পোস্টটির মাধ্যমে দাবি করা হয় বাংলাদেশিদের ইউরোপের ভিসা দেওয়া হচ্ছে যার বিস্তারিত পোস্টের মন্তব্যের ঘরের প্রথম মন্তব্যে রয়েছে। 

এমন দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোর মন্তব্যের ঘরের প্রথম মন্তব্যে দাবি করা হয়, ইউরোপের ৫ টি দেশে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার কর্মী নেওয়া হবে। যাতে বাংলাদেশিদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এজন্য আবেদন করতে মন্তব্যটি লিংক যেতে বলা হয়।

ফেসুবকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউরোপের ৫ দেশে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার কর্মী নেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের ইউরোপ-আমেরিকার ভিসা প্রতারণা চক্র নিয়ে চ্যানেল ২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সংবাদপাঠকের অংশটুকু কাট করে আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোর মন্তব্যের ঘরে প্রাপ্ত লিংকগুলো পর্যালোচনা করে দেখে রিউমর স্ক্যানার। পর্যালোচনায় দেখা যায়, পোস্টগুলোতে একই ভিসা আবেদনের লিংক দাবি করা হলেও লিংকগুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। লিংকগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। প্রাপ্ত লিংকগুলোতে ঢুকে দেখা যায় এর কোনোটিতেই ভিসার জন্যে আবেদনের অপশন নেই। বরং, একটিতে ইউরোপ ও কানাডার ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসা যোগ্যতার জন্যে প্রয়োজনীয় বিষয় সংক্রান্ত অস্পষ্ট কিছু তথ্য দেওয়া রয়েছে। অপরটিতে বিদেশে চাকরি ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্যে কিভাবে আবেদন করতে হয় সে সংক্রান্ত অস্পষ্ট কিছু তথ্য রয়েছে। কোনোটিতেই ইউরোপের ৫ দেশে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার কর্মী নেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওতে দেখতে পাওয়া চ্যানেল ২৪ এর লোগোরসূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ জুন ঘরে বসে মোবাইলেই মিলছে ইউরোপ-আমেরিকার ভিসা! | Visa Scam | Fraud Visa শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত প্রতিবেদনের শুরুর ১০ সেকেন্ডের সংবাদপাঠকের ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। প্রতিবেদনের পরবর্তী অংশ পর্যালোচনায় জানা যায়, প্রতিবেদনটি মূলত ভিসা প্রতারণা চক্র নিয়ে। যারা অনলাইনে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের ভিসার জন্যে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব করে অনেকে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিকও বনে গেছেন বলে প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। 

সুতরাং, ভিসা প্রতারণা চক্র নিয়ে চ্যানেল ২৪-এ প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের সংবাদ সূচনার অংশটুকু কাট করে ইউরোপের ৫ দেশে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার কর্মী নেওয়া হবে বলে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা ডিসি মাসুদের ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি নয়

তিন দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘লংমার্চ টু ঢাকা’-এর অংশ হিসেবে ২৭ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান নেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টার দিকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভব যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করা হয়। এতে বহু শিক্ষার্থী আহত হন, পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলমকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।

এরপর ২৮ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করে, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিসি মাসুদ আলমকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আলোচিত ছবিতে দেখা যায়, তিনি একজন আন্দোলনকারীর মুখ চেপে ধরছেন।

এই দাবিতে ডিএমপির ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে। ডিএমপির নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদন দেখুন: এখানে

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলমের আন্দোলনকারীর মুখ চেপে ধরার ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি নয়। প্রকৃতপক্ষে, আসল ছবিকেই এআই দিয়ে তৈরি বলে প্রচার করেছে ডিএমপি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশ্লেষণে ছবিতে এআই-জনিত কোনো অসংগতি পাওয়া যায়নি। সাধারণত এআই-তৈরি ছবিতে অস্বাভাবিক প্রতিবিম্ব, বিকৃত হাত বা মুখের গঠন, টেক্সটে ত্রুটি কিংবা সূক্ষ্ম অংশে ঘাটতি দেখা দেয়। তবে সংশ্লিষ্ট ছবিতে এসবের কোনো লক্ষণ নেই।

বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটোসাংবাদিক জয়িতা রায়ের ফেসবুক প্রোফাইলে ২৭ আগস্ট রাত ১টা ৬ মিনিটে প্রকাশিত একই ঘটনার একটি ছবি পাওয়া যায়। রিউমর স্ক্যানার জয়িতা রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমেইলের মাধ্যমে ছবিটির মূল কপি সংগ্রহ করে। মেটাডাটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি ২৭ আগস্ট দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে তোলা হয়েছে।

Screenshot: JMPL.

এছাড়া মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমেও একই ছবির ভিন্ন সংস্করণ পাওয়া গেছে।

২৮ আগস্ট কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘অবরোধ-সংঘর্ষে উত্তাল শাহবাগ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে একই ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়। ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল মোড়ে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। ছবিটি কালের কণ্ঠের প্রধান ফটোসাংবাদিক শেখ হাসানের তোলা বলে উল্লেখ করা হয়।

একই দিন মানবজমিনে প্রকাশিত একটি ছবিতেও একই দৃশ্য দেখা যায়। ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, এটি শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ছবি।

২৮ আগস্ট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ফেসবুক পেজে একই ঘটনার একটি ছবি প্রকাশ করে। ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ২৭ আগস্ট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ফটোসাংবাদিক রাজিব ধরের তোলা ছবিতে দেখা যায়, ঢাকার মিন্টো রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার দিকে মিছিলরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের জলকামান ব্যবহারের সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা একজন আন্দোলনকারীর মুখ চেপে ধরছেন।

এছাড়া, ২৭ আগস্ট এটিএন বাংলা নিউজচ্যানেল ওয়ানের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওতেও ছবিতে থাকা ওই আন্দোলনকারীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির দৃশ্য দেখা যায়।

সুতরাং, পুলিশ কর্তৃক আন্দোলনকারীর মুখ চেপে ধরার বাস্তব ছবিকে এআই দিয়ে তৈরি দাবি করেছে ডিএমপি; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পাকিস্তানের চলমান বন্যার দৃশ্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার 

মেঘ বিস্ফোরণ, প্রবল বর্ষণ ও ভারতীয় বাঁধ খুলে দেওয়ায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও পাঞ্জাবসহ বেশকিছু অঞ্চল ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়েছে। যাতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি পাকিস্তানের চলমান বন্যার পরিস্থিতির। ভিডিওটিতে দুইজন মহিলাকে বন্যাকবলিত এলাকার একটি বাড়ির ছাদে দেখতে পাওয়া যায়। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাকিস্তানের চলমান বন্যা পরিস্থিতির ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটিতে ‘K’ লেখা একটি লোগো দেখতে পায়। 

Screenshot: Facebook 

কিন্তু উক্ত লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে এমন লোগো সম্বলিত কোনো সংবাদ মাধ্যম কিংবা ফেসবুক পেজের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়না। 

পরবর্তীতে ভিডিওটি সূক্ষভাবে পর্যালোচনা করে এতে বেশকিছু এআইজনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বন্যার স্রোত প্রবল হলেও তা বাড়িটিতে কোনো প্রভাব ফেলছে না। এছাড়াও ভিডিওতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা গেলেও ডানপাশে উপরের দিকে দেখতে পাওয়া এলাকাটি সম্পূর্ণ বন্যার পানি মুক্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ভিডিওতে দেখতে পাওয়া গাছগুলোও বেশ অস্বাভাবিক।  

বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম DeepFake-o-meter এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

Screenshot: DeepFake-o-meter

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে পাকিস্তানের চলমান বন্যা পরিস্থিতির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • DeepFake-o-meter 
  • Rumor Scanner’s Analysis

প্রবাসীদের নিয়ে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, “ইন্ডিয়া পাকিস্তান নেপাল থেকে প্রবাসে আসতে খরচ হয় এক লাখ টাকা আর বাংলাদেশ থেকে প্রবাসিদের আসতে খরচ হয় ৫ লাখ টাকা” শিরোনামে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

ভিডিওটির শুরুর ৮ সেকেন্ড সময়ে এক পুলিশ সদস্যকে বলতে দেখা যায়, “ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, নেপাল থেকে প্রবাসে আসতে খরচ হয় এক লক্ষ টাকা। আর আমাদের বারো আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ থেকে প্রবাসীদের আসতে খরচ হয় ৫ লক্ষ টাকা।” 

পরের ৯ সেকেন্ড সময় হতে ভিন্ন আরেক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, “চাঁদাবাজি শুধু রাস্তায় হয়না, প্রত্যেকটা প্রবাসীর সাথে হয়। এ দালালদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। প্রত্যেকটা প্রবাসীর পক্ষ থেকে আমার এই দাবী।” 

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রবাসীদের নিয়ে দেওয়া পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। 

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে কোনো পুলিশ সদস্য বাস্তবে এরূপ কোনো বক্তব্য প্রদান করলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।  

এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।  

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ। 

Screenshot: DeepFake-o-meter

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটির দৈর্ঘ ১৬ সেকেন্ড। ভিডিওটির শুরুর ০৮ সেকেন্ডে এক পুলিশ সদস্যকে কথা বলতে শোনা গেলেও ০৯ সেকেন্ড সময় হতে ভিন্ন আরেকজন পুলিশ সদস্যকে কথা বলতে শোনা যায়। অনুমান করা যায়, এই ভিডিওটি গুগলের অত্যাধুনিক এআই টুল Veo দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, যেটি ৮ সেকেন্ড সময়ের দীর্ঘ বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। ২টি আলাদা ভিডিও একত্রিত করে ১৬ সেকেন্ডের আলোচিত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি করা ভিডিওকে পুলিশ সদস্য কর্তৃক প্রবাসীদের নিয়ে বক্তব্যের আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াত অনুসারীদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে গত বছরের ভিন্ন ঘটনার প্রচার

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। গত ২৬ আগস্ট বিকেলে ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে উক্ত ঘটনার বিষয়ে সংবাদ প্রচার করে নানা গণমাধ্যম। সংবাদে চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াত অনুসারীদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ছবি দাবিতে একটি ছবি প্রচার করা হয়। যেটি এই ঘটনার ছবি কিনা তা নিয়ে নেটিজেনদের সংশয় জাগে।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন: আরটিভি, বিডি২৪ লাইভ

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও, এরূপ দাবিতে প্রধানত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত ২৬ আগস্টে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের ০৪ আগস্টে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষের ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র ওয়েবসাইটে ‘চট্টগ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর’ শিরোনামে গত বছরের ০৪ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মিল পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা”।

Comparison : Rumor Scanner

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটসহ এর আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জহুর হকার্স, নিউমার্কেটের আশপাশের এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে আশ্র‍য় নেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে দোকানপাটে ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আহত হয়েছেন শতাধিক। আহতদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্ক অবস্থানে ছিল সেনাবাহিনী। রোববার (৪ আগস্ট, ২০২৪) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মূলত নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশ এবং সরকারদলীয় সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর টাইগারপাস, জহুর হকার্স, সিআরবিসহ নিউমার্কেটের আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে৷”

পাশাপাশি, অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘এনটিভি’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৪ আগস্টে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “অসহযোগ আন্দোলনে আজ রোববার রণক্ষেত্র সদরঘাট এলাকা। ছবি : স্টার মেইল”।

এছাড়া, অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা টাইমস’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৪ আগস্টে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “রবিবার চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী-পুলিশ সংঘর্ষ”। অনুসন্ধানে গত বছরের ০৪ আগস্টে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও তৎকালীন সরকারি দলের সমর্থকদের সংঘর্ষের খবর নিয়ে প্রকাশিত আরো একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ছবিটি গত বছরের ০৪ আগস্টের।

সুতরাং, চট্টগ্রামে গত ২৬ আগস্টে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনার দৃশ্য দাবিতে গত বছরের ০৪ আগস্টে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষের ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ম্যাথিউ মিলারকে জড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নোটিশ পাঠানোর দাবিটি মিথ্যা 

সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বিবেচিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে খুবই দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালিত হয়েছে। ড. ইউনুস সরকারকে অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, এই আদেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, বাতিল হবে নোবেল পুরষ্কার।’ ক্যাপশনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের সাবেক মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।

ম্যাথিউ

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের সাবেক মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের একটি প্রেস বিবৃতিতে তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মন্তব্যের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০৭ আগস্ট U.S. Response to Bangladesh Prime Minister Hasina’s Resignation’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি শর্টস খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

ভিডিওটিতে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সেবছরের ০৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার ঘোষণা এবং বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতে দেখা যায়।

উক্ত ভিডিওটির বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০৬ আগস্ট ‘Department of State Daily Press Briefing -August 5, 2024’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০১:২৭ থেকে ০২:১০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

ভিডিওটির উক্ত অংশে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার কথা এবং বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। 

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের ০৮ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেছেন৷ 

অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের প্রেস বিবৃতির ভিডিওটির অস্তিত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের পূর্ব, ০৬ আগস্ট থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে। 

উক্ত ভিডিওতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং এই আদেশ অমান্য করলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তার নোবেল পুরষ্কার বাতিল করা হবে- এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৬ আগস্ট ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়। 

সুতরাং, ম্যাথিউ মিলার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলার দাবিটি ভুয়া

তিনদফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ এর অংশ হিসেবে গতকাল (২৭ আগস্ট) শাহবাগে অবস্থান নেয় বুয়েট শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে রওনা দিলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। 

একই দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যাওয়ার পথে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিসোটা নিয়ে হামলা। ভিডিও করায় সাংবাদিকদের উপর হামলা করে ইউনুছ বাহিনী’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে এক সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, শিক্ষার্থীদের কিন্তু ঢাকা কলেজের যারা আছেন তারা ধাওয়া দিচ্ছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই মুহূর্তে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কিন্তু..তখনই দুইজন শিক্ষার্থীদের ক্যামেরার সামনে বলেন, অফ কর… এরপরের সাংবাদিক বলেন, আচ্ছা, আচ্ছা 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত ২১ আগস্ট ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিকের লাইভ চলাকালে সেই সাংবাদিককে লাইভ বন্ধের হুমকি দেয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেই সময়কার দৃশ্য এটি। 

অনুসন্ধানে একুশে টিভির ফেসবুক পেজে গত ২১ আগস্ট প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত লাইভ ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত লাইভ ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনার।

একই তারিখে উক্ত ভিডিওটি একুশে টিভির ফেসবুক পেজে রিলস আকারে শেয়ার করে বলা হয়, সাংবাদিককে লাইভ করতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার দৃশ্য এটি। 

Screenshotv Ekushey Tv

গতকাল (২৭ আগস্ট) বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি গত ২১ আগস্ট অর্থাৎ অন্তত ছয়দিন আগ থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে, প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত ভিডিওটি বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনা নয়। 

প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২১ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। 

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

তিন মাসে বাংলাদেশে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ হওয়ার দাবিটি ভুয়া

0

বাংলাদেশে তিন মাসে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন—এমন একটি দাবি ভারতীয় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।

ফেসবুক এবং এক্সে প্রকাশিত এমন দাবির কিছু পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশে তিন মাসে ৩৪২ হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কিংবা এমন অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ৩৪২ সংখ্যাটি আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক) কর্তৃক গত মে মাসে প্রকাশিত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের দেশের মোট ধর্ষণের ঘটনার পরিসংখ্যান। এটি কোনো নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের সংখ্যা নয়। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিন মাসে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার-এমন দাবি করা পোস্টগুলোতে ২২ আগস্ট প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ হিন্দি-র একটি বিভ্রান্তিকর শিরোনামের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনটি হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (HRCBM)-এর একটি প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছিল।

হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ-এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সেখানে তিন মাসে ৩৪২ হিন্দু কিংবা সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের ঘটনার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, সেখানে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বরাতে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তিন মাসেরও কম সময়ে ৩৪২টি ধর্ষণের ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে মাত্র দুই মাসের মধ্যে ৩৪২ ধর্ষণের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা হিন্দু সংখ্যালঘু নারীর, এমন কিছু সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ-এর সঙ্গে ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে HRCBM স্পষ্ট করে জানায়: “৩৪২ সংখ্যাটি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত মোট ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা, যা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় সামগ্রিক পরিসংখ্যান, যেখানে ভুক্তভোগীদের ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়নি। এই ৩৪২ জন ভুক্তভোগী সবাই হিন্দু বা সংখ্যালঘু নারী-এমন দাবি HRCBM কখনোই করেনি।”

হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ-এর প্রতিবেদনটি অনেকটা সংখ্যালঘু কেন্দ্রিক হলেও, তাদের প্রতিবেদনে সংখ্যালঘু নারীদের নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেখা যায়নি। উপরন্তু, সেখানে ৩৪২ ধর্ষণের সামগ্রিক পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে অনেকেই এই সংখ্যাটিকে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু নারীদের সংখ্যা হিসেবে ধরে নিয়ে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে বলে প্রতীয়মান হয়। এর ফলশ্রুতিতে, তাদের প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে ভারতীয় গণমাধ্যমের ত্রুটিপূর্ণ সংবাদের মাধ্যমে ভারতের সামাজিক মাধ্যমে “তিন মাসে ৩৪২ জন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার”-এমন দাবি ছড়িয়ে পড়েছে।

পরবর্তীতে, ৩৪২ ধর্ষণের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০২৫ সালের মে মাসের পরিসংখ্যান প্রতিবেদন আমরা খুঁজে পাই। ১৮ মে প্রকাশিত আসকের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩৪২ সংখ্যাটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা নির্দেশ করে। এটি একটি সামগ্রিক পরিসংখ্যান এবং কোনোভাবেই হিন্দু বা সংখ্যালঘু নারীদের নিয়ে নির্দিষ্টভাবে তৈরি করা হয়নি। উল্লেখ্য, হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ ৩৪২ সংখ্যাটিকে দুই মাস বা তিন মাসের কম সময়ের পরিসংখ্যান হিসেবে উল্লেখ করলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট চার মাসের পরিসংখ্যান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা ধর্ষনের ঘটনা গণনা করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়।

সুতরাং, গত তিন মাসে বাংলাদেশে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন-এই দাবিটি মিথ্যা।

Sources

  • Rumor Scanner Investigation 
  • Statement of HRCBM 
  • ASK May 2025 rape statistics