সম্প্রতি, ‘ঢাবি কওমি মাদরাসা! “মুসলমানদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানায়,না,মাদরাসাতেই মানায়!” – এই শিরোনামে একটি ছবি ইন্টারটে প্রচার করা হয়েছে।
ছবিটিতে দেখা যায়, একটি সম্মেলন কক্ষ বা ক্লাসরুমে অসংখ্য নারী সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন। নারীরা সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা কালো পোশাকে অর্থাৎ অর্থাৎ বোরকা, হিজাব ও নিকাবে আবৃত
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,অর্থাৎ বোরকা, হিজাব ও নিকাবে আবৃত নারীদের এই ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বা বাংলাদেশের নয়। বরং, সৌদি আরবের আল-বাহা অঞ্চলের স্কুল শিক্ষকদের সম্মেলনের ছবি। উক্ত সম্মেলনে পুরুষ শিক্ষকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘هياء الشعيل’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে গত ১৬ আগস্ট একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত ছবিটি রয়েছে।
পোস্টটিতে বলা হয়, ‘আল-বাহা অঞ্চলের স্কুলগুলোর নারী প্রধানগণ প্রিন্স ফয়সাল বিন মোহাম্মদ শিক্ষা হলের স্কুল অধ্যক্ষদের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সেখানে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ শিক্ষা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ড. হাসান খোরমির ভাষণ শোনেন।’ (অনূদিত)
এই বিষয়ে সৌদি আরবের আল-বাহা অঞ্চলের শিক্ষা প্রশাসনের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট -এ গত ১৩ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি রয়েছে।
Comparison : Rumor Scanner
পোস্টটির ক্যাপশন বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি একটি সম্মেলন বা মতবিনিময় সভা। সম্মেলনটি আল-বাহা অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা বা গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সৌদি আরবের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘আন-নাহার নিউজ’ -এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সম্মেলনে নারী ও পুরুষ উভয়েই অংশগ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ, এই ছবিটি বাংলাদেশের কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়।
সুতরাং, সৌদি আরবের আল-বাহা অঞ্চলের স্কুল শিক্ষকদের ছবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীবের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৬ আগস্ট রাত প্রায় ১০ টা থেকে একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে জড়িয়ে একের পর এক পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে,এখানে।
পোস্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটি গত ২৭ আগস্ট কনটেন্ট ক্রিয়েটর আর.এস. ফাহিম চৌধুরীকে জড়িয়ে করা হয়। পোস্টটিতে আর.এস. ফাহিম চৌধুরীকে মোহাম্মদপুর ৩৩ নং ওয়ার্ডের আগামী যুবলীগের কান্ডারি বলে সম্বোধন করা হয় এবং তাকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি ও রাহীকে শেল্টার দিতে বলা হয়। এছাড়াও পোস্টটিতে তারিকুজ্জামান রাজীবের সাথে আর.এস. ফাহিম চৌধুরীর নানা ছবি ও কথিত একটি চ্যাটের স্ক্রিনশটের ছবিও সংযুক্ত করা হয়। প্রচারিত উল্লিখিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আর.এস. ফাহিম চৌধুরীকে নিয়ে প্রচারিত উক্ত পোস্টটিতে প্রায় ১৬ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং ৩ হাজারেরও অধিক বার শেয়ার করা হয়েছে।
আলোচিত পোস্টটি আর.এস. ফাহিম চৌধুরীকে নিয়ে সাবেক কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব করেছেন দাবিতেও ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীবের নামে পরিচালিত উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তারিকুজ্জামান রাজীবের নিয়ন্ত্রণে নেই। প্রকৃতপক্ষে এই অ্যাকাউন্টটি অন্তত গত ২ বছর ধরে হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জড়িয়ে আলোচিত পোস্টগুলোও অ্যাকাউন্টটির নিয়ন্ত্রণে থাকা হ্যাকার/হ্যাকাররা করেছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত তারিকুজ্জামান রাজীবের নামে পরিচালিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে সাম্প্রতিক সময়ে গত ২৬ আগস্টে প্রথম পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটরের একত্রে ধারণকৃত একটি ভিডিও সংযুক্ত করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “নোয়াখালী মানেই বাঘ | এগিয়ে যাও রাহী ভাইয়া। আমাদের তুমি সবসময়ই আছো, আমরাও তোমার সাথে সবসময় আছি।” এর পরবর্তী সময়ে আর.এস ফাহিম চৌধুরীসহ একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে জড়িয়ে একের পর এক পোস্ট দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এসব পোস্টের আগে সর্বশেষ পাবলিক পোস্টটি গত ৮ এপ্রিলে ও তার আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বরে পাওয়া যায়। উল্লেখিত এই দুইটি পোস্টেই তারিকুজ্জামান রাজীবের ছবি দিয়ে অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচার আপডেট করা হয়।
অ্যাকাউন্টটির এরূপ অস্বাভাবিক কার্যক্রমে সন্দেহের উদ্রেক হলে তারিকুজ্জামান রাজীবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Tarequzzaman Rajib’ নামে রাজীবের ছবি সম্বলিত আরেকটি ভেরিফাইড টিক চিহ্ন সম্বলিত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায় এবং অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিলে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে সম্প্রতি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জড়িয়ে পোস্ট করা রাজীবের নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্টটির লিঙ্কের সংযুক্তি পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, ‘আমার আগের ফেসবুক আইডি যা এখনও হ্যাকার দের নিয়ন্ত্রণে একাধিকবার থানায় জিডি করা হয়েছে এবং ডিবি সাইবার ইউনিট টিম এটি নিয়ে কাজ করছে সবাই কে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে !’। রাজীবের নামে পরিচালিত এই অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে গত ২৭ আগস্ট একটি পোস্ট করে বলা হয়, “আস্সালামুআলাইকুম | আমার হ্যাক হওয়া ফেইসবুক আইডি থেকে অনৈতিক পোস্ট শেয়ার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করার চেষ্টা করা হচ্ছে সবাই কে বিষয় টি সচেতন ভাবে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হলো !”
Collage: Rumor Scanner
এছাড়াও, গত ২৭ আগস্টে রাজীবের নামে পরিচালিত দ্বিতীয় এই অ্যাকাউন্টটিতে পূর্ববর্তী অ্যাকাউন্টটির (যে অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জড়িয়ে পোস্ট করা হচ্ছে) স্ক্রিনশট নিয়ে তাতে ‘Hacked Accounts’ লিখে ক্যাপশনে লিখা হয়, “আস্সালামুআলাইকুম
আমার হ্যাক হওয়া ফেইসবুক আইডি থেকে অনৈতিক পোস্ট শেয়ার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করার চেষ্টা করা হচ্ছে সবাই কে বিষয় টি সচেতন ভাবে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হলো !” এছাড়াও, গত ২৭ আগস্টে অ্যাকাউন্টটিতে আরো দুইটি পোস্ট করেও বলতে দেখা যায় যে তার পূর্ববর্তী অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছিল এবং এখনও হ্যাকড অবস্থায় আছে।”
এসব পোস্ট পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তারিকুজ্জামান রাজীবের নামে পরিচালিত এই অ্যাকাউন্টটি তার বর্তমান অ্যাকাউন্ট। সম্প্রতি নানা কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জড়িয়ে রাজীবের নামে পরিচালিত যে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি থেকে পোস্ট করা হচ্ছে তা একসময় তারিকুজ্জামান রাজীব ব্যবহার করলেও বর্তমানে তা হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সুতরাং, সম্প্রতি একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব পোস্ট করছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যায় বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল)সারজিস আলমের বিরুদ্ধে গত ১২ আগস্ট গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ। এরই প্রেক্ষিতে বিএনপির মামলায় সারজিস আলম গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কোনো মামলায় এনসিপি নেতা সারজিস আলম গ্রেফতার হননি। প্রকৃতপক্ষে, কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবে, এনসিপি নেতা সারজিস আলম কোনো কারণে গ্রেফতার হলে দেশিয় সংবাদমাধ্যমে ঢালাওভাবে খবর প্রচার হতো। কিন্তু এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সারজিস আলমকে গ্রেফতারের দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, সারজিস আলমকে গ্রেফতারের এই দাবিটি গত ১৩ আগস্ট থেকে প্রচার করা হলেও এর পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৪ আগস্ট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তার ফেসবুক পেজে তাকে মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। এবং গণমাধ্যমেও তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে।
গত ২৬ আগস্ট এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, “চায়না সরকারের আমন্ত্রণে NCP’র ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ৫ দিনের সফরে চায়না যাচ্ছি। খুব দ্রুত আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।🇧🇩”
পরবর্তীতে, গতকাল আরেক ফেসবুক পোস্টে তিনি এনসিপি নেতাদের চীন সফরের একাধিক ছবি প্রচার করেন। সেসব ছবিতে তিনিও রয়েছেন।
এ থেকে স্পষ্ট যে, সারজিস আলমকে গ্রেফতার করা হয়নি।
তাছাড়া, সারজিস আলম গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে থাকা ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবিটি বানোয়াট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
সুতরাং, সারজিস আলম গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ২৪ আগস্ট বরিশাল মহানগরের বাংলাবাজার এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে জেলে নেওয়ার ২৪ ঘন্টার ভেতরে ভারত থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে জেল থেকে মুক্তি পেল তৌহিদ আফ্রিদি’।
এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি ৪ লক্ষ ৩০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ২২ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তৌহিদ আফ্রিদির মুক্তি পাননি। তৌহিদ আফ্রিদি এখনও কারাগারে আটক আছেন। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ছবির সমন্বয়ে ভুয়া সংবাদ ভিডিও তৈরি করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে শুরুতে এক সংবাদ উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যায়, “কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে জেলে নেওয়ার ২৪ ঘন্টার ভেতরে ভারত থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে জেল থেকে মুক্তি পেল তৌহিদ আফ্রিদি।” ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘ডিবিসি নিউজ’ এর লোগোর একাংশ বামদিকে উপরের কোণায় দেখা যায়। সংবাদ উপস্থাপিকার পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডেও ‘DBC সংবাদ’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিও ফুটেজটির নিচের অংশে সংবাদটির শিরোনামের একাংশ দেখা যায় যেখানে লেখা রয়েছে “…লীগ নিয়ে বাংলাদেশের বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান ভারতের”।
উল্লিখিত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ‘ডিবিসি নিউজ’ এর ফেসবুক পেজ ‘DBC News Daily’ এ ‘ভারতে আ.লীগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত নয় দিল্লি’ শিরোনামে গত ২০ আগস্টে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংবাদটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত প্রথমাংশের তুলনা করলে অডিও ব্যতীত বাকী সবকিছুর হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
ডিবিসি নিউজের আসল ভিডিওতে বলা হয়, ‘ভারতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে দিল্লি, বুধবার (২০ আগস্ট) দিল্লিতে বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতির জবাবে দেশটির সরকারের মুখপাত্র রণধীর জশওয়াল বলেন ভারত এ ধরনের কোন কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নয়..”। ভিডিওটিতে তৌহিদ আফ্রিদির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উল্লিখিত ভিডিও ফুটেজটি নিয়ে তাতে ভুয়া অডিও বসিয়ে আলোচিত ভিডিওটির প্রথমাংশে প্রদর্শিত ডিবিসি নিউজের সংবাদ ফুটেজটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, ভিডিওর দ্বিতীয় অংশে সাংবাদিকদের সাথে আরেক ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যায় যিনি বলেন, বিজ্ঞ আদালতে তৌহিদ আফ্রিদির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চাওয়া হয়েছে। ভিডিওটিতে তাকে তৌহিদ আফ্রিদির শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে উল্লেখ করতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটির ডানদিকের ওপরের অংশে ‘ডিজিটাল খবর’ নামক একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের লোগো দেখতে পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ২৬ আগস্টে ‘ডিজিটাল খবর’ এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত দুইটিভিডিও পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিও দুইটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ফুটেজের তুলনা করলে হুবহু মিল পাওয়া যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ‘ডিজিটাল খবর’ এ প্রচারিত ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, মূল ভিডিওতে কোথাও তৌহিদ আফ্রিদি জামিন পেয়েছেন এমনটা বলা হয়নি, বরং জামিন চাইতে দেখা যায়।
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত একটি দৃশ্যে পুলিশে ঘেরা অবস্থায় তৌহিদ আফ্রিদিকে দেখা যায়৷ ভিডিওটির ডানপাশে উপরের কোণায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘রাইজিংবিডি’র লোগো দেখতে পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ২৫ আগস্টে ‘রাইজিংবিডি’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “আদালতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তৌহিদ আফ্রিদি”। উক্ত ভিডিওটিতেও জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
Screenshot of Claimed Video
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যেখানে তৌহিদ আফ্রিদি দুই হাত ওপরে তুলে রেখেছেন, তার গলায় ফুলের মালা, পাশে পুলিশ ও পেছনে স্লোগানরত মানুষ দেখা যায়। ছবিটি সম্পর্কে আলোচিত ভিডিওতে দাবি করা হয় যে তৌহিদ আফ্রিদিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছে। কিন্তু, ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ছবিটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে মানুষের অঙ্গভঙ্গিতে অস্বাভাবিকতা এবং হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে বিকৃত অক্ষর দেখা যায় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
আলোচিত দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও কারাগার থেকে তৌহিদ আফ্রিদির মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তৌহিদ আফ্রিদির বিষয়ে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট তৌহিদ আফ্রিদিকে পাঁচ দিন রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
সুতরাং, জেলে নেওয়ার ২৪ ঘন্টার ভেতরে ভারত থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে তৌহিদ আফ্রিদি মুক্তি পেয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে, “এই মুহুর্তে সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের বাসে আগুন দিলো, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপক্ষের আবারও ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে…” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা কলেজের বাসে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আগুন দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত ১৪ আগস্ট সিলেটে জনতার বাসে আগুন দেওয়ার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সিলেটের স্থানীয় গণমাধ্যম নতুন সিলেটের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট “সিলেটে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নি হ ত” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটি মিল রয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ভবনের আলো বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভিডিওটি ওই ঘটনারই।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সিলেটের ওসমানীনগরে যাত্রীবাহী বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। দুর্ঘটনার পর সন্ধ্যায় উপজেলার তাজপুর বাজারে ঘাতক বাস আটক করে উত্তেজিত জনতা অগ্নিসংযোগ করে।
পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্তের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট “ওসমানীনগরে বাসচাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত, বাসে আগুন দিল জনতা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকেও আলোচিত ভিডিওর বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি ঢাকা কলেজের বাসে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আগুন দেওয়ার ঘটনার নয়।
সুতরাং, গত ১৪ আগস্ট সিলেটে দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যুর ঘটনায় জনতার বাসে আগুন দেওয়ার দৃশ্যকে ঢাকা কলেজের বাসে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আগুন দেওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘নিজের স্ত্রীর প্রকাশ্য মাথা কে*টে নিলো এই স্বামী,,,,, তিনি বলতেছেন দেশের আইন ওনাকে বাধ্য করেছে এ কাজ করতে…. এসব নিউজ দালাল মিডিয়া প্রকাশ করছে না। ফ্যাসিস্ট ইউনুছ হঠাও দেশ বাঁচাও!’ ক্যাপশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দোষারোপ করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর মাথা কেটে আলাদা করে সেই মাথা নিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ভারতের পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় সংবাদ প্লাটফর্ম ‘Samaj Hitaishi Digital’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করে ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়,পরে মুন্ডু হাতে নিয়ে ঘুরতে থাকে স্বামী’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিও প্রতিবেদনের দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison : Rumor Scanner
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারতের পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা এটি। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম গৌতম গুছাইত। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্বামী তার স্ত্রীকে কুপিয়ে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে তা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন।
উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর নির্দিষ্ট ফ্রেমের মিল রয়েছে। এই প্রতিবেদন থেকেও আলোচিত ভিডিওর বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
এই বিষয়ে সেসময় আনন্দবাজার পত্রিকা -এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
অর্থাৎ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর মাথা কেটে আলাদা করে সেই মাথা নিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকার এই ভিডিওটি ভারতের।
সুতরাং, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর মাথা কেটে নেওয়ার ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘রংপুরে তারা সাম্প্রদায়িক হামলায় তাদের বাবাকে হারিয়েছে। এর জন্য আমরা হিন্দুরাই দায়ী। কারণ আমরা হিন্দুরা নীরবে নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছি, তাই তারা একের পর এক বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’ (অনূদিত) ক্যাপশনে দুই শিশুর একটি ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে থাকা দুই শিশুর বাবা সাম্প্রদায়িক হামলায় মারা যাননি এবং তাদের বাড়িও রংপুরে নয়। প্রকৃতপক্ষে, এই দুই শিশুর বাবা বিকাশ দাস স্ট্রোক করে মারা যান। তাদের বাড়ি ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলায়।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচ্য ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Bong Bonding – বং বন্ডিং’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ০৬ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে যুক্ত ছবির মিল রয়েছে।
Photo Comparison By Rumor Scanner
উক্ত পোস্টে সহযোগিতা চেয়ে বলা হয়েছে, পোস্টে যুক্ত শিশু দুইটির বাবা বিকাশ দাসের শ্রাদ্ধের জন্য সহযোগিতা প্রয়োজন। বিকাশ দাস সেলুনের কারিগর ছিলেন, স্ত্রী গৃহিণী।
উক্ত পোস্টে বিকাশ দাসের ফুফাতো ভাই উল্লেখ করে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে।
উক্ত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিকাশ দাসের ফুফাতো ভাই অনিক সরকার জানান, ‘আমি পোস্টগুলো দেখেছি। এটি আসলে মিথ্যা। বিকাশ দাদা গত মাসের ১৮ জুলাই রাতে কাজ শেষ করে বাসায় এসে খাওয়াদাওয়া করেন। এরপর সেই রাতেই স্ট্রোক করে মারা যান। আমাদের ধর্মে শ্রাদ্ধে অনেক খরচ। বিকাশ দাদা একা পরিবারটি চালাতেন। সেই বিবেচনায় সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট করা হয়।’
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, স্ট্রোক করে মারা যাওয়া ব্যক্তির সন্তানের ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক হামলায় মারা যাওয়ার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ২১ আগস্ট, “আজ সিলেটে নয়া সড়কে মাহা শপিং মহলে লুটপাট করছে কিছু টুকাই নামক সমন্বয়ক। আওয়ামীলীগ হলেই তাকে মব সৃষ্টি…” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটে মাহা ফ্যাশন হাউসে লুটপাটের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, এটি ২০২৪ সালের ০৫ আগস্টের ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিছু ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Shakib Ahmed’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, এটি সিলেটের মাহা শপিং মলে লুটপাটের ঘটনা।
পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে সিলেটের স্থানীয় গণমাধ্যম সিলেট ভিউ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট “সিলেটে মাহার হওয়া মালামাল ফিরিয়ে দিচ্ছে জনতা” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট (সোমবার) বিকেলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাহাতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) সকালে কয়েক দফায় নয়াসড়ক মসজিদের মাইকে লুটপাট হওয়া মালামাল ফিরিয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়ে ঘোষনা করে এলাকাবাসী। পরে অনেকেই লুট হওয়া মালামাল ফিরিয়ে দিয়ে যান।
সেসময় একই ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও (১,২) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, ২০২৪ সালে সিলেটে মাহা ফ্যাশন হাউসে লুটপাটের দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ১২ ও ১৩ আগস্ট বাংলাদেশের আকাশে দেখা যায় উল্কাবৃষ্টি। পার্সাইড উল্কাবৃষ্টি নামে পরিচিত এই উল্কাবৃষ্টি প্রতিবছর একই সময়ে হয়ে থাকে। এ বছর ১৩ আগস্ট ভোররাতে এই উল্কাবৃষ্টি সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে বলে ধারণা করা হয়, তবে বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশের কারণে অনেকেই দেখতে পারেননি বলে অভিযোগ শোনা যায়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৪ আগস্ট একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি “গতকালকের (১৩ আগস্ট) Perseid উল্কাবৃষ্টির দৃশ্য”।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ৭০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৪ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টগুলোতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উল্কাবৃষ্টির ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি অন্তত গত বছরের জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে বিদ্যমান রয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে ‘Trece’ নামক প্যারাগুয়ে ভিত্তিক একটি গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারিতে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “আশ্চর্যজনক | ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই অবিশ্বাস্য দৃশ্যের মুহূর্তটি ধারণ করেছেন, যা ঘটেছিল আর্জেন্টিনার চাকো প্রদেশের পুয়ের্তো বেরমেখো অঞ্চলে। | কেউ কেউ মনে করছেন এটি উল্কাপিণ্ড হতে পারে, আবার অন্যদের ধারণা এটি মহাকাশের আবর্জনা।” (অনূদিত)
এছাড়াও অনুসন্ধানে ইরান থেকে পরিচালিত ‘rad4n’ ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারিতে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
তবে, ভিডিওটির উৎস বা প্রেক্ষাপটের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, সম্প্রতি ধারণকৃত উল্কাবৃষ্টির দৃশ্য দাবিতে অন্তত ১ বছর পুরোনো একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, রাজধানীতে চাঁদা না দেওয়ায় প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে দোকান থেকে বের করে এক ব্যক্তিকে হত্যা করলো বিএনপির নেতাকর্মীরা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, শ্রীলঙ্কার গত মে মাসের ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে Magedara Tea plantation নামের একটি শ্রীলঙ্কান পেজে গত ২০ মে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি দেশটির বাদুল্লা শহরের ঘটনা।
এই তথ্য এবং ভিডিওর উপাদান হিসেবে একটি দোকানের নামের সূত্র ধরে জিওলোকেশন যাচাই করে দেখা যায়, ঘটনাস্থলটি শ্রীলঙ্কার বাদুল্লা শহরের ১০ নং কিংস স্ট্রিট এলাকা।
পরবর্তী অনুসন্ধানে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম আদা দেরানা’র ইউটিউবে চ্যানেলে গত ২০ মে একই ঘটনার একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, সেদিন (২০ মে) বিকেলে বাদুল্লা শহরের কেন্দ্রস্থলে এক বড় ভাই তার ছোট ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। পুলিশ আহত ব্যক্তিকে বাদুল্লা হাসপাতালে ভর্তি করেছে এবং হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে যে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সন্দেহভাজন বড় ভাইকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়।
সুতরাং, চাঁদা না দেওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে দাবিতে শ্রীলঙ্কার গত মে মাসের ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।