Home Blog Page 14

নির্বাচনী মঞ্চে গুজবের ছায়া: জাকসুর অদেখা লড়াই

0

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গত ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক (জিএস), দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২০টি পদে জয় পেয়েছেন বাংলাদশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। তবে, সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হয়েছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের প্রার্থী। এই নির্বাচন ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা পরিলক্ষিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল কিংবা প্রার্থীকে ঘায়েল করতে ভুয়া তথ্যের প্রচারও ছিল লক্ষণীয়৷ এই ভুয়া তথ্য শনাক্তে নির্বাচনের শুরু থেকেই উক্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অনলাইন কনটেন্টে নজরদারি করে রিউমর স্ক্যানার টিম। যার ফলশ্রুতিতে এই নির্বাচন নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ১৪টি গুজব শনাক্ত হয়। প্রকৃতির দিক থেকে এগুলোর মধ্যে ১০টি (৭১.৪৩ শতাংশ) মিথ্যা এবং ৪টি (২৮.৫৭ শতাংশ) বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রচারণা চলাকালে ০৭ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রথম ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। এদিন ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, ডোপ টেস্টের পর জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাবেক সভাপতি ও বামপন্থীদের একাংশের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। তবে দাবিটির সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার। জানা যায়, অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার কারণ ডোপ টেস্ট নয় বরং, নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে।

পরদিন ০৮ সেপ্টেম্বর অমর্ত্য রায়কে জড়িয়ে আরেকটি গুজব ছড়ানো হয়। তবে এই গুজবের উৎস সামাজিক মাধ্যম নয়, মূলধারার গণমাধ্যম থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অন্তত ৪০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী অমর্ত্য রায় জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। তবে অনুসন্ধানে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। জানা যায়, জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে নয়, অমর্ত্য রায় তার বাতিল হওয়া প্রার্থীতা পুর্নবহাল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। 

ভোটের দিন সবচেয়ে বেশি গুজব

১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। ভোটার উপস্থিতি থাকায় দুইটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয় সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এদিন অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ভোট গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার আগে ও পরে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলসহ মোট পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দলীয় প্রভাবের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান। নির্বাচন ঘিরে এদিন সবচেয়ে বেশি (০৬টি) গুজব শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। দুপুরে ভোট চলাকালীন ছাত্রদলের প্যানেলের ভোট বর্জনের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিবিরের অ্যাকশনের ঘটনা এটি। ভিডিওতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে লাঠি হাতে অবস্থান করতে দেখা যায়। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে, ভিডিওটি ১১ সেপ্টেম্বরের নয় এবং ঐদিন জাবিতে এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা। সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। এটি সেই ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও।

ভোটগ্রহণ চলাকালে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি জাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির চিত্র। ভিডিওতে দুই যুবককে অবৈধভাবে বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ঢুকাতে দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি জাকসু নির্বাচনের নয়, ২০১৫ সাল থেকেই ইন্টারনেটে ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে।

এছাড়া, এদিন বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশি অ্যাকশনের একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “ভয়াবহ অবস্থা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শিবিরের পক্ষ নিল পুলিশ। বহু হতাহতের আশঙ্কা”। তবে যাচাই করে জানা যায়, দাবিটি ভুয়া। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও এটি।

একইদিন জাবিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। তবে অনুসন্ধানে ঐদিন এমন কোনো সংঘর্ষের প্রমাণ মেলেনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওকে জাবিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, একই দাবিতে প্রচারিত অন্য ভিডিওটি ২০২৩ সালে পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনার। 

ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়েছে এবং নিবার্চন অবৈধ ঘোষণা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ভিডিওটি যাচাই করে দেখা যায়, এতে প্রচারিত দাবিগুলোর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। ভিডিওতে প্রদর্শিত ফুটেজগুলো ছাত্রদলের ভোট বর্জন ও কতিপয় শিক্ষকের নির্বাচন বর্জন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া। যেগুলোর সাথে প্রচারিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

নির্বাচনের ফল ঘোষণা বিলম্বে বাড়তে থাকে গুজবের পরিধি

১১ সেপ্টেম্বর রাতে শুরু হওয়া ভোট গণনা ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে শেষ হবে – এমন দাবি জাকসুর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করা হলেও ১২ সেপ্টেম্বর রাতেও ভোট গণনা শেষ করতে পারেনি কমিশন। যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ভোট গণনার কাজে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলের পোলিং অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করা চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা।

হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে ‍মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় অন্তত ২০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা নামের ভিন্ন নারীর ছবি প্রচার করা হয়। ঐ নারী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত আছেন যা তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

এদিন ভোটে অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত তিনটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত জুলাইয়ে কক্সবাজারে এক বিএনপি নেতাকে হত্যার বিচার চেয়ে ঢাবিতে ছাত্রদলের মশাল মিছিলের একটি ভিডিওকে জাকসুতে শিবিরের ভোট চুরির প্রতিবাদের দাবিতে মশাল মিছিল দাবিতে প্রচার করতে দেখা যায়। পাশাপাশি জাবিতে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ হয়েছে দাবিতে ২০২২ সালে ঢাবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ এবং বরিশালে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষের সাম্প্রতিক ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, শিবির-ছাত্রদল মুখোমুখি অবস্থান এবং ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযান দাবিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার প্রচার করা হয় যা ২০২৪ সালে জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশি অ্যাকশনের ঘটনার ভিডিও।

একইদিন জাকসুর ফল ঘোষণা নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে কালেরকণ্ঠের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। যেখানে দাবি করা হয়- শিবিরের সভাপতি বলেছেন, “জাকসুতে শিবিরকে বিজয়ী ঘোষনা না করলে জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হবে”। প্রকৃতপক্ষে শিবির সভাপতি এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং কালেরকণ্ঠও এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।

ভোটগ্রহণের প্রায় ৪৮ ঘন্টার পর ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে নির্বাচন ফলাফল ঘোষণা করা হয়। একাধিক প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর পদ্ধতিতে মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনার ফলে ফলাফল জানতে বেশি সময় লেগেছে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

ফল ঘোষণার পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর বামপন্থীদের আরেক অংশের সমর্থিত ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের এজিএস (নারী) প্রার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়ার আহত অবস্থার একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, ছাত্রশিবির নির্বাচনে জয় লাভের পর বামপন্থীদের ওপর হামলা করেছে। তবে যাচাই করে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ের। প্রকৃতপক্ষে, জাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে শিবির কর্তৃক বামপন্থীদের ওপর এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

কোন প্যানেল সবচেয়ে বেশি গুজবের শিকার?

জাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ০৯টি গুজব ছড়ানো হয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলকে জড়িয়ে। যার প্রায় ৮৯ শতাংশই প্যানেলটির ভাবমূর্তির বিপক্ষে গেছে। তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলকে জড়িয়ে প্রচার করা হয়েছে ০৫টি গুজব, যার ৮০ শতাংশ প্যানেলটি সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে সক্ষম। এই দুই প্যানেলের বাহিরে বামপন্থীদের একাংশের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলেকে জড়িয়েও ০২টি (বিপক্ষে) গুজব প্রচার হতে দেখা গেছে।

প্রার্থীদের জড়িয়ে যত গুজব

জাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনকে জড়িয়ে ০২টি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভোট গ্রহণের দু’দিন আগে আদালত থেকে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে। যার ফলে তিনি ভোট যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। অমর্ত্য ছাড়াও আরো দুই প্রার্থীকে জড়িয়ে গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলামকে জড়িয়ে ০১টি (পক্ষে) এবং ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের এজিএস (নারী) প্রার্থী সোহাগী সামিয়াকে জড়িয়ে ০১টি (পক্ষে) ছড়ানো একটি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

প্রার্থীদের লিঙ্গ ভেদে গুজব

জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ০২ জন পুরুষ প্রার্থী এবং ০১ জন নারী প্রার্থীকে জড়িয়ে গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। যার মধ্যে পুরুষ প্রার্থীদের জড়িয়ে গুজবের সংখ্যা ০৩টি এবং নারী প্রার্থীর জড়িয়ে ০১টি।

অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নামে ০১টি (বিপক্ষে) ভুয়া মন্তব্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যাকে (বিপক্ষে) জড়িয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে ০১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িয়ে গুজব

গুজবের হাত থেকে ছাড় পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে ০২টি গুজব ছড়ানো প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে একটি গুজব ছড়ানো হয়েছে যেখানে জড়ানো হয়েছে বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে।

গণমাধ্যমের ভুল সংবাদ

শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, গুজবের অংশীজন ছিল গণমাধ্যমও। জাকসু নির্বাচন ইস্যুতে ০২টি ভিন্ন ঘটনায় অন্তত ৬২টি গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করেছে। যার মধ্যে ০২টি করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে তালিকায় সম্মিলিতভাবে শীর্ষে রয়েছে ০৬টি গণমাধ্যম। বাকি ৫৬টি গণমাধ্যম একটি করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে।

গণমাধ্যমকে টার্গেট করেও অপপ্রচারের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় দৈনিক কালেরকণ্ঠের নামে ০১টি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গুজবের ধরণ

শনাক্ত হওয়া মোট ভুল তথ্যের মধ্যে ভিডিও-কেন্দ্রিক ভুল সবচেয়ে বেশি, ৯টি (প্রায় ৬৪%)। এছাড়া তথ্য-কেন্দ্রিক ভুল ৩টি (প্রায় ২১%) এবং ছবি-কেন্দ্রিক ২টি (প্রায় ১৪%) ভুল পাওয়া গেছে।

গুজবের লক্ষ্যবস্তু যুবসমাজ

জাকসু নির্বাচনে ভুল তথ্য প্রচারের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ১৮-৩৫ বছর বয়সী যুব সমাজের পাঁচজন ব্যক্তিকে ভুল তথ্য প্রচারের সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। এছাড়া, ৩৬-৫৯ বছর বয়সী একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে জড়িয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। তবে, শিশু বা প্রবীণ ব্যক্তিদের জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গুজবের মূল উৎস ফেসবুক, পিছিয়ে নেই ইন্সটাগ্রামও

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুকে সর্বোচ্চ ১৩টি গুজব ছড়িয়েছে, যা মোট গুজবের প্রায় ৯৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে আছে মেটার আরেক প্লাটফর্ম ইন্সটাগ্রাম। এই মাধ্যমটিতে ছড়িয়েছে ০৯টি গুজব, যা প্রায় ৬৪ শতাংশ। এছাড়া, ইউটিউবে ০৫টি, টিকটকে ০৩টি, থ্রেডসে ০৩টি এবং এক্সে ০১টি গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে, কিছু গুজব একাধিক প্ল্যাটফর্মে ছড়ানোয় প্ল্যাটফর্মভিত্তিক গুজবের সংখ্যা (১৩ + ৯ + ৫ + ৩ + ৩ + ১= ৩৪) মোট গুজবের সংখ্যা (১৪) থেকে বেশি দেখাচ্ছে।

কাজের পদ্ধতি

এই গবেষণাটি তৈরি করা হয়েছে জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করে। এজন্য আমরা গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত জাকসু-সংক্রান্ত সব ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছি। পরে পাঠকদের সহজে বোঝার সুবিধার্থে এই তথ্যগুলোকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে গ্রাফ, চার্ট এবং বিশ্লেষণমূলক লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ভারতের ভিডিওকে বাংলাদেশে মন্দিরের পাশে নামাজ পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘তৌহিদী জনতা’ হিন্দুদের মন্দিরে নিয়ে নামাজ পড়ছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশের কাশীর লাট ভৈরব মন্দির প্রাঙ্গণে অসাম্প্রদায়িক প্রতীক হিসেবে রামলীলা এবং নামাজ একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এটি সেই ঘটনারই দৃশ্য। এই সংস্কৃতি প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। 
অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অমর উজালার ওয়েবসাইটে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

অমর উজালার শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, একদিকে রামলীলা অন্যদিকে নামাজ। ৫০০ বছরের পুরোনো কাশীর রামলীলা। 

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ভারতীয় আরেক গণমাধ্যম ইটিভি ভারতের ওয়েবসাইটে একই তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর লাট ভৈরব মন্দিরের প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো একটি সংস্কৃতি পালিত হয়েছে। এখানে অসাম্প্রদায়িক প্রতীক হিসেবে রামলীলার পাশাপাশি মুসলিমরা নামাজ আদায় করে থাকেন। 

একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় আরেক গণমাধ্যম এবিপি লাইভও

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশের এমন ঘটনা ঘটার কোনো তথ্য গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, রামলীলা হলো হিন্দু ধর্মের একটি ঐতিহ্যবাহী নাট্যরূপ, যা মহাকাব্য রামায়ণের উপর ভিত্তি করে প্রদর্শিত হয়। 

সুতরাং, ভারতের কাশীতে অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হিসেবে রামলীলার পাশাপাশি নামাজ পড়ার দৃশ্যকে বাংলাদেশে মন্দিরে নামাজ পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

এটি খাগড়াছড়িতে পর্যটক উদ্ধারের সময় পাহাড়িদের হামলায় আহত সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের ভিডিও নয়

0

গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। জুম্ম ছাত্র-জনতার সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে খাগড়াছড়িতে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ‘পর্যটকদের উদ্দ্বার করতে গিয়ে পাহাড়ি স’ন্ত্রা’সী’দে’র হাতে আহত হন ৬ সেনা সদস্য ও ২ বিজিবি সদস্য’।

ভিডিওটিতে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় কয়েকজনকে আহত/ক্লান্ত অবস্থায় আরো কয়েকজন সেনাবাহিনীর সদস্যের সাথে হেঁটে যেতে দেখা যায়৷

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সম্প্রতি চলমান খাগড়াছড়ির ইস্যুতে পর্যটকদের উদ্ধার করতে গিয়ে পাহাড়িদের হাতে আহত সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যের দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটি খাগড়াছড়ির ঘটনার অন্তত ২ মাস আগে গত ২২ জুলাই থেকে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অনলাইনে প্রচার হতে দেখা যায়।


এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চে ‘আব্দুল্লাহ আলামিন’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২২ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘গতকাল দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর অনেক অবদান ছিল | সেলুট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’।

পরবর্তীতে উল্লিখিত তারিখে তথা ২১ জুলাইয়ে ঘটা দুর্ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। সেদিন দুপুর দেড়টার দিকে বিমানটি মাইলস্টোন কলেজের চত্বরের ভেতরে আছড়ে পড়ে। তখন উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীও নিয়োজিত ছিল।

এছাড়াও, গত ২১ জুলাইয়ে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ‘মো. খায়ের তালুকদার’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে সংযুক্ত একটি ছবির সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও,‘সাইফুল ইসলাম’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৭ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিওর সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

অপরদিকে, খাগড়াছড়িতে চলমান উত্তেজনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে স্কুলছাত্রী কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার মধ্য দিয়ে। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি খাগড়াছড়িতে চলমান উত্তেজনার অন্তত দুই মাস আগে থেকেই অনলাইনে বিদ্যমান ছিল।

সুতরাং, সম্প্রতি চলমান খাগড়াছড়ির ইস্যুতে পর্যটকদের উদ্ধার করতে গিয়ে পাহাড়িদের হাতে আহত সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যের ভিডিও দাবিতে অন্তত ২ মাস আগে থেকে অনলাইনে থাকা একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়েছে, এটি ঢাকা উত্তর সিটি আওয়ামী লীগের মিছিল। আবার ইনস্টাগ্রামে ২৬ আগস্ট পোস্ট করা একই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য লক্ষ লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমেছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইন্সটাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ইউটিউব পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী লীগের কোনো মিছিলের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৫ সালের ১৯ আগস্ট ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এটি সেই কর্মসূচির ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Md Sohal নামক একটি ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে গত ১৯ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও।

গত ১৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই বিক্ষোভ মিছিলের সংবাদ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছিল।

একই তারিখে Dr-Ibrahim Khalil নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক পেজেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিছিলের উক্ত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ইসলামী আন্দোলনের এ মিছিলে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই সাদা পাঞ্জাবির সঙ্গে সবুজ কোট পরিহিত এবং তাদের হাতে নির্বাচনী প্রতীক হাতপাখার লোগো সংবলিত পতাকা রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি আওয়ামী লীগের মিছিল বলে প্রচারিত ভিডিওতেও দেখা যায়, সেখানে হাতপাখার লোগো সংবলিত পতাকা, ব্যানার এবং সবুজ কোট ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত লোকজন রয়েছেন। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি ইসলামী আন্দোলনের মিছিলের ভিডিও।

সুতরাং, আওয়ামী লীগের মিছিলের দৃশ্য দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

ইউনূস সরকার বিরোধী আন্দোলন দাবিতে আ.লীগের পুরোনো শোভাযাত্রার ভিডিও প্রচার

0

সম্প্রতি “হটাও ইউনূস বাঁচাও দেশ, শেখ হাসিনার নির্দেশ। শেখ হাসিনা আসবে বাংলাদেশ রাজপথ হাসবে” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওতে সমবেতদের “আর নয় জুলাই জুলাই, এবার হবে গণধোলাই, ইউনূসের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন” ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) । 

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইউনূস সরকার বিরোধী কোনো মিছিলের নয় বরং, এটি ২০২৪ সালের ২১ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, জয় বাংলা – Joy Bangla নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৫ জুলাই  প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর ৪০ সেকেন্ডের পরের অংশ থেকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে।

ভিডিওটির বিবরণীতে বলা হয়, এটি আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার ভিডিও।

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২১ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীতে লাখো মানুষের ঢল নামিয়ে ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উপলক্ষে ‘বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও শোভাযাত্রা’ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলের প্লাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে আয়োজিত এ শোভাযাত্রা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড এবং মিরপুর রোড হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত বাসভবন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।

এছাড়া, দৈনিক যুগান্তরের ২০২৪ সালের ২১ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও ওই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার একাধিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং ২০২৪ সালের। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে যেসব স্লোগান শোনা গেছে সেগুলো মূল ভিডিওতে ছিল না। যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন অডিও যুক্ত করা হয়েছে।

সুতরাং, আওয়ামী লীগের পুরোনো শোভযাত্রার ভিডিও সম্পাদনা করে তাতে ভিন্ন স্লোগান যুক্ত করে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

নারায়ণগঞ্জের স্কুল ভবনে ফাটল বা ধস নয়, প্রচারিত ভিডিওটি স্কুলের ভবনে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার 

গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ‘স্কুল চলাকালীন ভবন ভেঙ্গে পড়তেছে’ এবং ‘স্কুল চলাকালীন ট্রান্সমিটারে আগুন, ফা*টল ধরল ভবনে’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।

স্কুলের ভবন ভেঙে পড়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন- যায়যায়দিন (ফেসবুক), মানবকথন (ফেসবুক), বিডি২৪রিপোর্ট (ফেসবুক), নিউজ ২৪ ঘন্টা (ইউটিউব)। 

এরমধ্যে যায়যায়দিন পোস্টের ক্যাপশন ‘স্কুল চলাকালীন ভবন ভেঙ্গে পড়তেছে’ থেকে সম্পাদনা করে ‘স্কুল চলাকালীন ট্রান্সমিটারে আ’গু’ন ভবনে ফা’ট’ল’ করলেও ভিডিওর শিরোনাম অপরিবর্তীত রাখে।

ট্রান্সমিটারে আগুন থেকে স্কুলের ভবনে ফাটল দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন- জনকণ্ঠ (ফেসবুক), মোহনা টিভি (ফেসবুক), মাছরাঙা নিউজ( ইউটিউব), বাংলা টিভি ইউরোপ (ইউটিউব)।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর সোবহানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন ধসে পড়েনি বা ভবনে ফাটল ধরেনি। প্রকৃতপক্ষে, স্কুলটির প্রধান ফটকের বাইরে বিদ্যুতের মিটারে শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনের একটি ভিডিওকে বিভ্রান্তিকরভাবে ভবনে ফাটল ও ভবন ধস দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Maizur Rahman Munna নামক ফেসবুক প্রোফাইলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পোস্টে আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওর ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর স্কুলে ঘটেছে। সেখানে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে মিটারে আগুন লেগে যায়।  

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে সময় টিভির ওয়েবসাইটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘নারায়ণগঞ্জে স্কুলভবন ধস বলে অপপ্রচার, আসলে যা ঘটেছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর সোবহানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবন ধসে পড়নি বা ভবনে ফাটল ধরেনি। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সম্পর্কে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনে কোনো ফাটল ধরেনি বা ধসেও পড়েনি। কেবল বিদ্যুতের মিটারে আগুন ধরে সেটি পুড়ে যায় এবং দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে মিটার পরিবর্তন করা হয়।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান সময় সংবাদকে বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। সকাল সাড়ে দশটার দিকে চারতলা ভবনের নিচতলায় প্রধান ফটকের বাইরে বিদ্যুতের মিটারে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। শব্দ ও ধোঁয়া বের হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সবাই দ্রুত মাঠে অবস্থান নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগার প্রায় চার মিনিটের মধ্যে বিদ্যালয়ের নিজস্ব বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিলে আতঙ্ক কেটে যায়। পরে ডিপিডিসির কর্মীরা এসে মিটার পরিবর্তন করে দেয়। ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান স্পষ্ট করে বলেন, ‘আগুনে শুধু মিটার পুড়েছে। ভবনে কোনো ফাটল ধরেনি বা ভবন ধসেও পড়েনি। এ বিষয়ে যে খবর প্রচার করা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব।’

পরবর্তীতে, ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘নারায়ণগঞ্জে স্কুল ভবন ধসের গুজব, যা বললেন প্রধান শিক্ষক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। 

সুতরাং, নারায়ণগঞ্জের কানাইনগর সোবহানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবন বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ভিডিওকে স্কুল ভবনে ফাটল এবং ভবন ধস দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

মির্জা ফখরুলের বাসা থেকে ৬০ কোটি টাকা উদ্ধার ও তাকে আটকের দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর অভিযানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসা থেকে নগদ ৬০ কোটি টাকা, স্বর্ণালংকার এবং বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটি দাবি করা হয়, এ ঘটনায় তাকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ‘টাকাগুলো বিএনপির কালো তহবিল থেকে এসেছে’ বলে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মন্তব্য করেছেন বলেও দাবি করা হয়।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ছয় লক্ষ বার। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসা থেকে সেনা অভিযানে নগদ ৬০ কোটি টাকা ও স্বর্ণালংকার পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা। এছাড়াও এ বিষয়ে সেনাপ্রধানের মন্তব্য করার দাবিটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটকের বিষয়ে সেসময় প্রচারিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার, এতে দুটি সংবাদপাঠের ফুটেজ ও সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনার একাধিক ছবি দেখা যায়। সংবাদপাঠের ফুটেজগুলোতে বলা হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করা হয়েছে। অপরদিকে সেনাবাহিনীর অভিযানের ছবিগুলো দ্বারা তার বাসায় চালানো অভিযান ও সেখান থেকে টাকা উদ্ধারের চিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই 

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দুটো সংবাদপাঠের ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Jamuna TV এবং BanglaVision NEWS এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর প্রচারিত মূল প্রতিবেদন দুটো খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো দেখুন যমুনা টেলিভিশন এবং বাংলাভিশন

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আয়োজিত বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় সেসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনগুলোতে তার বাসা থেকে অর্থ কিংবা স্বর্ণালংকার উদ্ধারের বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। 

এছাড়াও অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটকের বিষয়ে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং জানা যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্যও প্রদান করেন।

ছবি যাচাই

আলোচিত ভিডিওটিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় সেনা অভিযান পরিচালনা ও নগদ অর্থ উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে বেশ কয়েকটি ছবি প্রচার করা হয়। 

ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সেনা অভিযান সংক্রান্ত ছবিগুলোর বিষয়ে প্রথমে অনুসন্ধান করা হয়। ভিডিওর প্রথম ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ছবিটির সন্ধান পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ছবিটি টঙ্গীর কেরাণিটেক বস্তিতে র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনার সময়কার। সেসময় অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক দ্রব্য, নগদ ২২ লাখ টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত ৪০ জনকে আটক করা হয়। এছাড়াও জানা যায়, গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে দেখা সেনা কর্মকর্তার নাম মেজর ইয়াসমিন আক্তার। গণমাধ্যমে কথা বলার পর তিনি সেসময় ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠেন।

পরবর্তীতে ভিডিওটিতে আরও চারটি সেনা অভিযানের ছবি দেখানো হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, যার মাঝে তিনটি সেনা অভিযানের ছবি এবং একটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বোর্ড (বিএএসবি) এর মেডিকেল ডিসপেনসারি উদ্বোধনের সময় ধারণ করা ছবি। সেনা অভিযানের প্রথম ছবিটি গতবছর অক্টোবর মাসে মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর চালানো একটি অভিযানের ছবি।

দ্বিতীয়টি এবছর আগস্টে লক্ষ্মীপুরে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তার বাড়ি থেকে দুটি এলজি, বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনার ছবি। 

অপরটি গত জুন মাসে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানের ছবি। 

সর্বশেষ ছবিটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক ঢাকাসহ সারাদেশে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বোর্ড (বিএএসবি) এর ৩০টি মেডিকেল ডিসপেনসারি উদ্বোধনের দিন তোলা ছবি। 

এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের ছবি দাবিতে দুটি ছবি দেখানো হয়। যার একটি গতবছরের সেপ্টেম্বরে উত্তরার পশ্চিম থানা এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে কয়েক বস্তা ভর্তি টাকাসহ ৩ জনকে গ্রেফতারের ঘটনার ছবি। 

অপরটি কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের সিন্দুক থেকে রেকর্ড পরিমাণ ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদে ব্যবহৃত একটি ছবি।

অর্থাৎ, ২০২৩ সালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আটক হওয়ার ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাথে সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন অভিযানের ছবি যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়াও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ‘টাকাগুলো বিএনপির কালো তহবিল থেকে এসেছে’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন কিনা জানতে অনুসন্ধান করা হলে এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসা থেকে নগদ ৬০ কোটি টাকা, স্বর্ণালংকার এবং বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধারের পাশাপাশি তাকে আটক করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ঢাকায় আ.লীগের সাম্প্রতিক মিছিল দাবিতে চকরিয়ার পুরোনো মিছিলের ভিডিও প্রচার

0

গত ৯ সেপ্টেম্বর, “আজকে ঢাকা শহরে বিক্ষোভ মিছিল আওয়ামী লীগের হইতাছে” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।   

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় পঁচানব্বই হাজার বার দেখা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কোনো বিক্ষোভ মিছিলের নয় বরং ২০২৪ সালে চকরিয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে সাবেক এমপি জাফরের নেতৃত্বে স্বাগত মিছিলের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে সাবেক এমপি জাফর আলমের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ৬ জুন তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

উক্ত ভিডিওর বিবরণীতে বলা হয়, মহান জাতীয় সংসদে সময়োপযোগী, গণমুখী ও জনবান্ধব বাজেট (২০২৪-২৫) পেশ করায় তৎকালীন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চকরিয়া উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের স্বাগত মিছিলের দৃশ্য এটি।

চকরিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যম চকরিয়া নিউজের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৬ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন প্রস্তাবিত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চকরিয়া উপজেলা ও চকরিয়া পৌরসভা শাখার উদ্যোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া সিস্টেম কমপ্লেক্স থেকে আনন্দ মিছিল করে। তাৎক্ষনিক আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন শেষে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম।

অর্থাৎ, সম্প্রতি ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিলের নয়।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার–১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাফর আলম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। 

সুতরাং, ২০২৪ সালে চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের মিছিলের দৃশ্যকে সম্প্রতি ঢাকায় মিছিলের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

খাগড়াছড়ির সহিংসতায় আহত পাহাড়ি কিশোরী উহ্লামে মারা যাননি

0

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় স্কুলশিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জুম্ম ছাত্র জনতার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, ১৩ সেনাসদস্য ও ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। এরই প্রেক্ষিতে এক উহ্লামে নামে এক কিশোরীর রক্তমাখা একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে বাবার কোলে চিৎকার করে বাঁচতে চাওয়া উহ্লামে মারমা মারা গেছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। 

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।  

থ্রেডসে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত উহ্লামে মারা যাওয়ার দাবিটা সঠিক নয়। তিনি বেঁচে আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে Sushanta Tanchangya নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, ‘খাগড়াছড়ি গুইমারাতে সেনাবাহিনী গুলিতে আহত উহ্লামে মারমা মাটিরাঙ্গা হসপিটালে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় আছে!  সকল আদিবাসী পাহাড়ি ভাই বোনদের নিকট  বিনীত অনুরোধ রইলো উহ্লামে মারমা দ্রুত  সুস্থতার জন্য সবাই  মন থেকে আর্শীবাদ করুন সকল আদিবাসী পাহাড়ি দের আর্শীবাদে সুস্ত হয়ে ফিরে আসুক আমাদের আদিবাসী পাহাড়ি ছোট্ট নিষ্পাপ উহ্লামে মারমা! আমি আর্শীবাদ করছি আমার জীবনের সমস্ত পূর্ণ রাশি তাকে দান করে দিয়ে তার সুস্থতা কামনা করছি! আপনাদের সবার আর্শীবাদে আমাদের  আদিবাসী বোন উহ্লামে মারমা সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক সেই কামনা রইলো!’

পরবর্তীতে এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিক উচিংছা রাখাইন কায়েসের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

ফেসবুক পোস্টে উহ্লামের পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি জানান, খাগড়াছড়ি গুইমারা বাজারে কাপড় ব্যবসায়ী আপ্রমং রাখাইন মেয়ে, আহত উহ্লামে রাখাইন চিকিৎসার পর সুস্থ আছেন। পোস্ট তিনি তার জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় নিহত তিনজন হলেন- আথুই মারমা (২১), আথ্রাউ মারমা (২২) ও তৈইচিং মারমা (২০)। 

সুতরাং, খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে আহত কিশোরী উহ্লামের মারা যাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

Sushanta Tanchangya: Facebook Post

Uchingcha Kayes Rakhain: Facebook Post

Prothom Alo: খাগড়াছড়িতে গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় শনাক্ত, দুই সড়কে অবরোধ শিথিল

শাকিব খানের মৃত্যুর ভুয়া দাবি টিকটকে

0

চিত্রনায়ক শাকিব খান মারা গেছেন দাবিতে লাশবাহী একটি গাড়ি ঘিরে জনতার ঢলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবির টিকটক ভিডিও দেখুন এখানে

গত ১৩ সেপ্টেম্বর টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখা হয়েছে অন্তত ১৩ লক্ষাধিক বার।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শাকিব খান মারা গেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। বরং, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা কর্নেল (অব:) এম আনোয়ারুল আজিমের লাশবাহী গাড়ির ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে MD Samsur Rahman নামের একটি অ্যাকাউন্টে গত ০১ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, লাকসাম মনোহরগন্জের নেতা আজিমের মরদেহবাহী গাড়ির ভিডিও এটি।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম সকালের খবর এর সে সময়ের এক প্রতিবেদনেও একই দৃশ্যের সন্ধান মেলে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লা -৯ (লাকসাম -মনোহরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল (অব:) এম আনোয়ারুল আজিমের লাশবাহী গাড়ির দৃশ্য এটি। 

৩১ মে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

অর্থাৎ, ভিডিওটির সাথে শাকিব খানের কোনো সম্পর্ক নেই। 

তাছাড়া, শাকিব খানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে খবর প্রচার হতো। তবে এক্ষেত্রে দেশীয় সংবাদমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি। শাকিব খানের ফেসবুক পেজে তাকে নিয়মিত পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে।

সুতরাং, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা কর্নেল (অব:) এম আনোয়ারুল আজিমের লাশবাহী গাড়ির ভিডিওকে শাকিব খান মারা গেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র