গত ২২ অক্টোবর গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টিএনটি বাজার জামে মসজিদের খতিব আলহাজ ক্বারি মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী নিখোঁজ হন। এর আগে জুমার খুতবায় সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক মূল্যবোধ ও উগ্রপন্থি সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে ১২ বার চিঠি দিয়ে তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাই তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে অপহরণ বলে দাবি করে অনেকে এবং তার অপহরণের পেছনে ইসকন জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভও করে মুসুল্লিরা। পরবর্তীতে গত ২৩ অক্টোবর নিখোঁজের এক দিন পর পঞ্চগড় থেকে শিকলবন্দি ও অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। একটি সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, মুফতি মহিবুল্লাহকে অপহরণ করা হয়নি, তিনি নিজেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর লোগো ব্যবহার করে মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর গা ঢাকা দেওয়ার বিষয়ে একাধিক ফটোকার্ড প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর একটিতে বলা হয়, ‘পুলিশের লেখা স্ক্রিপ্ট পড়ে ইসকন কতৃক অপহরণকে নাটক বলতে বাধ্য হলেন মুফতি হাবিবুল্লাহ’।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
অপরটিতে বলা হয়, ‘ছোট মেয়েকে ধর্ষণের হুমকির পর অপহরণকে নাটক বলতে বাধ্য হলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ’।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে জড়িয়ে কালের কণ্ঠ উল্লিখিত ফটোকার্ডগুলো প্রচার করেনি। ফটোকার্ডগুলোতে করা দাবিগুলোর সপক্ষেও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, মুফতি মুহিব্বুল্লাহ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠের ভিন্ন শিরোনামের ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ফটোকার্ড যাচাই ১
এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুতে ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে কালের কণ্ঠের লোগো এবং ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ লেখা উল্লেখ পাওয়া যায়।
উক্ত সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে গত ২৮ অক্টোবর আলোচিত দাবি সংবলিত কোনো ফটোকার্ডের সন্ধান মেলেনি। সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৮ অক্টোবর পেজটিতে ‘অপহরণের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ!’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ছবি ও গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের সাথে এর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ‘অপহরণের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ!’ শীর্ষক বাক্যের পরিবর্তে ‘পুলিশের লেখা স্ক্রিপ্ট পড়ে ইসকন কতৃক অপহরণকে নাটক বলতে বাধ্য হলেন মুফতি হাবিবুল্লাহ’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।

অর্থাৎ, কালের কণ্ঠের এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা করেই আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
ফটোকার্ড যাচাই ২
দ্বিতীয় ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে কালের কণ্ঠের লোগো এবং ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ লেখা উল্লেখ পাওয়া যায়।
তবে উল্লিখিত তারিখেও সংবাদমাধ্যমটির কোনো প্ল্যাটফর্মে এমন কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। উক্ত ফটোকার্ডটির সাথেও গত ২৮ অক্টোবর ‘অপহরণের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ!’ শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটির ছবি ও গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের সাথে এর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। শুধু আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ‘অপহরণের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ!’ শীর্ষক বাক্যের পরিবর্তে ‘ছোট মেয়েকে ধর্ষণের হুমকির পর অপহরণকে নাটক বলতে বাধ্য হলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ফটোকার্ডটিও কালের কণ্ঠের এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত এই ফটোকার্ড দুইটি সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Kaler Kantho Facebook Post
- Rumor Scanner’s Analysis





