প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করায় বিএনপির নেতাকর্মী কর্তৃক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, যশোরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করায় বিএনপির নেতাকর্মীরা একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে- শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোরে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার কারণ প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা করা নয় এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ প্রশাসন।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত একটি পোস্টে সূত্র হিসেবে একটি লিংক যুক্ত থাকতে দেখা যায়। উক্ত লিংকে প্রবেশ করে দেখা যায়, ‘bdbigest.news’ নামক এটি একটি ভুঁইফোড় ওয়েবসাইট। ‘bdbigest.news’ নামক ভুঁইফোঁড় ওয়েবসাইটে “ভাতা বন্ধে ইউনূস-সরকারকে বকা, মানসিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মারল বিএনপি কর্মীরা” শীর্ষক শিরোনামে যে প্রতিবেদনটি সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেটিতে দাবি করা হয়েছে, “গত ০২ জুলাই দুপুর ১১ টার দিকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগের সোনাকুড় গ্রামে গণপিটুনিতে রফিকুল ইসলাম নামের এক প্রতিবন্ধীকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তমিজ উদ্দিনের ছেলে সোহাগের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন দলীয় কর্মী। গণপিটুনিতে নিহত রফিকুল ইসলাম (৫০) ওই গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে সোনাকুড় দোয়ালী পাড়া নামক এক স্থানে তাকে গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে গণপিটুনি দেয় বিএনপির সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা মিলে। একপর্যায়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। কিছুদিন আগে গ্রামের মোড়ে নিজের ভাতা না পেয়ে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘ডাকাত’ বলে বকাবকি করায় তাকে হুমকি দিয়েছিল স্থানীয় বিএনপির ক্যাডাররা। আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাকে দেখে নেওয়ার কথা বলে শাসিয়ে যায় তারা। ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, নিহত রফিকুল ইসলাম মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।”

উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবিটির সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে জাতীয় গণমাধ্যম মানবকণ্ঠের ওয়েবসাইটে ০৩ জুলাই “যশোরে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবির মিল রয়েছে। 

Photo Comparison By Rumor Scanner 

মানবকণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০২ জুলাই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের সকালে সোনাকুড় গ্রামের আজগার আলীর বাড়ি থেকে তার জামাতা জহর আলী (৪০) মোটরসাইকেলযোগে বাঁকড়া বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে শ্বশুরের চায়ের দোকানের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম তার মাথায় দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে রফিকুল ইসলামকে দড়ি দিয়ে বেঁধে গণপিটুনি দেন। একপর্যায়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, নিহত রফিকুল ইসলাম মাদকাসক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তিনি জহর আলী নামে এক ব্যক্তিকে দা দিয়ে আঘাত করায় উত্তেজিত জনতা তাকে পিটুনি দেন। একপর্যায়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে সমকাল, ইত্তেফাক, আজকের পত্রিকা, জাগো নিউজ এবং জনকণ্ঠ। 

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ঝিকরগাছা থানার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, দলীয় কোনো ঘটনা নয়, মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে যে তথ্য এসেছে এটিই মূল ঘটনা। 

অর্থাৎ, রফিকুল ইসলামকে (৫০) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টাকে সমালোচনা কিংবা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, যশোরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সমালোচনা করায় বিএনপির নেতাকর্মীরা একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img