Home Blog Page 2

জাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

0

গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন চলাকালীন ফজিলাতুন্নেসা হল কেন্দ্রে অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় কিছু সময়ের জন্যে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে শিবিরের বিরুদ্ধে ওই কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগও ওঠে। পরে বিকেল ৪ টার দিকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগসহ বেশকিছু অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এর প্রেক্ষিতে ১১ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি জাকসু নির্বাচনে জাল ভোট প্রদানের ভিডিও।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি জাকসু নির্বাচনে জাল ভোট প্রদানের নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০১৫ সালের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় থেকে এই ভিডিওটি ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে যার সাথে স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিক জাকসু নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জাকসু নির্বাচনে জাল ভোট প্রদানের আসল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Engr. Shamsul Islam Milon নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিলে একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। তবে ভিডিওটি কোন নির্বাচনে বা কোন অঞ্চলে জাল ভোট প্রদানের তা পোস্টটির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু পোস্টটির শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, ওই নির্বাচনের কমিশনার রাকিবুল নামের একজন ব্যক্তি ছিলেন।

Video Comparison by Rumor Scanner 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা এবং চট্রগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যা প্রাপ্ত ভিডিওটি প্রচারিত হওয়ার আগের দিন। এছাড়াও জানা যায়, উক্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রধান নিবার্চন কমিশনার ছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আগের পোস্টটিতে ‘রাকিবুল’ নামটি দ্বারা কাজী রকিবউদ্দীনকে বোঝানো হয়েছে। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Omar Farouqe নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওর শিরোনামে বলা হয়, ভিডিওটি ২০১৫ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। এছাড়াও পোস্টকারী শিরোনামে জানান, ভিডিওটি তাদের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির। 

Screenshot: Facebook 

পোস্টকারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, পোস্টকারী কুমিল্লার হলেও তিনি চট্টগ্রামে বসবাস করেন। যেহেতু, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেহেতু  এটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট জালিয়াতির ভিডিও হতে পারে বলে ধারণা করা যায়। তবে ভিডিওটি এই ঘটনারই কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook 

ভিডিওটি ধারণের স্থান এবং সময়কাল সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটা নিশ্চিত যে, এটি সাম্প্রতিক জাকসু নির্বাচনের নয়। 

সুতরাং, অন্তত ২০১৫ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের জাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্য দাবিতে ভারতীয় ভিডিও প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক তরুণ-তরুণীর চুম্বনের ছবি সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে যাতে লেখা রয়েছে, ‘ভাইরাল হাসনাত আবদুল্লাহ আর তাসনিম জারার চুমাচুমির ভিডিও’। ফটোকার্ডটিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, ফটোকার্ডটি মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালবেলা’র আদলে হলেও এতে ‘কালবেলা’র বদলে ‘কামবেলা’ লেখা রয়েছে। তবে কিছু পোস্টের ক্যাপশনে ‘নিউজ কালবেলা’ লেখা হয়েছে। এবং কিছু পোস্টের কমেন্টে পোস্টকারী তথ্যপ্রমাণ হিসেবে গাড়ির পেছন থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও সংযুক্ত করেছেন যাতে এক তরুণ ও তরুণীকে চলন্ত গাড়িতে চুম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। 

অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে প্রচারিত চুম্বনের ছবি ও ভিডিওটি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবি বা ভিডিওটি হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরের এক যুগলের চুম্বনের দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘গুরু চরণ প্রামাণিক’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৮ আগস্টে সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। পোস্টটিতে লোকেশন হিসেবে ‘জামশেদপুর’ ট্যাগ থাকতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে, ভারতের ঝাড়খণ্ড ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ১১ ভারত’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৩১ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ও ছবির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “মেট্রো, গাড়ি, বাইকের পরে এবার অটোতে রোমান্স করতে দেখা গেল যুগলকে, জামশেদপুরের ভিডিও ভাইরাল..!” (অনূদিত)
গত ৩১ আগস্টে ‘ঝাড়খণ্ড ক্রাইম’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দীর্ঘায়িত সংস্করণ পাওয়া যায়। পোস্টটিতেও আলোচিত ভিডিওটি ভারতের জামশেদপুরের বলা হয়। অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি আরো একাধিক ভারতীয় অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের ভিডিও দাবিতেপ্রচার হতে দেখা যায়।

এছাড়া, প্রচারিত ভিডিও পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সেখানে থাকা তরুণের শারীরিক গঠন, চুলের ধরন ও মুখাবয়বের সঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহর মিল নেই। পাশাপাশি, ভিডিওতে তরুণকে চশমা পরা অবস্থায় দেখা গেলেও হাসনাত আবদুল্লাহ সাধারণত চশমা ব্যবহার করেন না।

Comparison: Rumor Scanner. 

অন্যদিকে, প্রচারিত ভিডিওটিতে চুম্বনরত যুগলের গাড়ির নাম্বারপ্লেটে থাকা নাম্বারও দেখতে পাওয়া যায়। গাড়িটির নাম্বার দেখা যায়: ‘JH05DC 4650’। এছাড়াও, ভিডিওটিতে ‘JH05’ দিয়ে শুরু হওয়া নাম্বারপ্লেটের আরেকটি গাড়িও দেখা যায়। গাড়ির নাম্বারপ্লেটটি দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এগুলো বাংলাদেশে চলাচল করা গাড়ি নয়। পরবর্তীতে উক্ত নাম্বারপ্লেটের কোডের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে কার ইনফো, পলিসি বাজারসহ একাধিক অনলাইন পোর্টালের সূত্রে জানা যায়, JH05 দিয়ে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরের আঞ্চলিক পরিবহন দপ্তরে নিবন্ধিত গাড়িগুলো বুঝিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ‘JH’ বলতে ঝাড়খণ্ড রাজ্য এবং ‘05’ বলতে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর অঞ্চল বুঝানো হয়ে থাকে।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কিংবা হাসনাত আবদুল্লাহর নয়।

সুতরাং, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরের এক যুগলের চুম্বনের দৃশ্য এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্যের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নেপালের আন্দোলনের ভিডিওকে ভারতে মোদিবিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি “আ’ন্দো’লনের ঝ*ড় উঠছে, মোদির চেয়ার দুলছে! দাদা, এবার কই পালাইবা?” শিরোনামে ভারতের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।  

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি প্রায় ৬০ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং ১ লক্ষ ৭৮ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট হতে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। এছাড়া, ভিডিওটিতে ১০ হাজারের ও বেশি মন্তব্য হতে দেখা গেছে। 

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে এবং এখানে। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা নেপালের আন্দোলনের ভিডিওকে ভারতে মোদিবিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একাধিক কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ‘African Hub’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে গত ১১ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি নেপালে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর চড়াও হওয়ার মুহূর্তের দৃশ্য। 

উপরোক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘CBC News’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৮ সেপ্টেম্বরে “At least 19 killed as police open fire on Nepal protests over corruption, social media ban” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: CBC News 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, নেপালে দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে তরুণদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। আন্দোলনটি “জেন-জি” নেতৃত্বাধীন বলে জানানো হচ্ছে, যা দেশটিতে তরুণদের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও সরকারি দমননীতির প্রতি গভীর হতাশার প্রতিফলন বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, নেপালে তরুণদের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে কে পি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কারকি শপথ নেন। নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি ছয় মাসের বেশি সময় এই পদে থাকবেন না এবং আগামী বছরের ৫ মার্চ দেশটির জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের হাতে তিনি ক্ষমতা তুলে দেবেন বলে জানিয়েছেন। 

সুতরাং, নেপালে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের ভিডিওকে ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে মোদিবিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

ভারতে মোদীবিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য দাবিতে নেপালের ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি “মোদি বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ভারত” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ভারতের নয়। বরং, এটি নেপালের সাম্প্রতিক বিক্ষোভের দৃশ্য। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘@Bagwankitech’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৯ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল রয়েছে। ভিডিওটির বর্ণনা অনুয়ায়ী, এটি নেপালের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে।

পরবর্তী অনুসন্ধানে গুগল ম্যাপে স্থানটির খোঁজ মেলে। স্থানটি নেপালের দক্ষিণ পশ্চিমের শহর নেপালগন্জের।

Screenshot: Google Map

নেপালের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান নেপাল ফ্যাক্টচেকের এসিস্ট্যান্ট ফ্যাক্টচেক এডিটর চেতানা কুনওয়ার রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এটি বি.পি. চক. বলে একটি জায়গা। সেখানে Nepalgunj National Hospital pvt Ltd. এর একটি সাইনবোর্ডও দেখা যাচ্ছে। 

Screenshot: Video 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে গত ০৯ সেপ্টেম্বরে নেপালে বিক্ষোভের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নেপালের বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। দুপুরে ওই ঘোষণার পরেও বিক্ষোভকারীরা নেপালের পার্লামেন্ট ভবন ও মন্ত্রীদের বাসভবন সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবনে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। 

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি মূলত নেপালের বিক্ষোভ চলাকালীন সময়েরই দৃশ্য।  

সুতরাং, নেপালে বিক্ষোভের ভিডিওকে ভারতে মোদী বিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

জাপানে সারজিস ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ওপর আ’লীগ সমর্থকদের হামলার ভুয়া দাবি

0

এনসিপির জাপান ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স এবং জাপানের প্রবাসীদের আমন্ত্রণে টোকিও ও ওসাকা শহরে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে জাপান সফরে গিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি দল। গত ১২ সেপ্টেম্বর দলটি জাপানের রাজধানী টোকিওতে পৌঁছেছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মাহবুব আলম।

এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘জাপানে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সারজিস এর উপর হামলা এবং গণধোলাই’ ক্যাপশনে জাপানে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ওপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা হামলা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাপানে সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ওপর জাপানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাজ্যের ভিন্ন কিছু ঘটনার ছবি সম্পাদনা করে ও ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত ভিডিও ফুটেজ ও ছবিগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিও যাচাই-১

এই ফুটেজে একজন উপস্থাপিকাকে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির প্রতিনিধি দল জাপানের রাজধানী টোকিওতে পৌঁছেছে। এসময় জাপানে পরিকল্পিতভাবে সারজিস আলমের উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে গুরুতর আহত করা হয়’ বলতে শোনা যায়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ সেপ্টেম্বর ‘জাপানের টোকিওতে পৌঁছেছে এনসিপি’র প্রতিনিধি দল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির প্রথম ফুটেজের আংশিক মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওতে সংবাদ উপস্থাপিকাকে “জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির প্রতিনিধি দল জাপানের রাজধানী টোকিওতে পৌঁছেছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তারা। এ সময় জাপানে বসবাসরত প্রবাসীরা ফুল দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান।…” বলতে শোনা যায়। এই বক্তব্য থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে ‘শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তারা।’ এবং ‘বসবাসরত প্রবাসীরা ফুল দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান।’ অংশটি কর্তন করা হয় এবং এর স্থলে ‘এ সময় জাপানে বসবাসরত প্রবাসীরা ফুল দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান।’ অংশটিতে ‘পরিকল্পিতভাবে সারজিস আলমের উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে গুরুতর আহত করা হয়’ সূচক বক্তব্যের একটি ভিন্ন অডিও যুক্ত করা হয়৷ 

যমুনা টিভির ভিডিও প্রতিবেদনে জাপানে সারজিস আলমের ওপর হামলার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ 

ভিডিও যাচাই-২

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম 7NEWS এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ মে ‘Car ploughs through crowd at Liverpool football parade’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ফুটেজের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ২৬ মে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে ফুটবল দল লিভারপুল এফসির জয় উদযাপনের প্যারেডের সময় সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে মানুষের ওপর একটি গাড়ি চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় চার শিশুসহ কয়েক ডজন মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পর দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়ির সামনে বিক্ষুদ্ধ জনতার সাথে পুলিশের বাকবিতন্ডায় একটি ফুটেজ আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, আলোচিত ফুটেজটি জাপানে সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ওপর হামলার ঘটনার নয়৷ 

ছবি যাচাই – ১

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে গত ২৭ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত প্রথম ছবিটির আংশিক মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটিতে দেখা যায়, গত ২৬ মে লিভারপুল এফসির জয় উদযাপন প্যারেডে গাড়ি চাপার ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে দুজন উদ্ধারকর্মী মিলে সরিয়ে নিচ্ছেন। 

ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ছবিতে আহত ব্যক্তির মুখমণ্ডলের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে সারজিস আলমের মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। 

ছবি যাচাই – ২

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম Erem News এর ওয়েবসাইটে গত ২২ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দ্বিতীয় ছবিটির আংশিক মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এটি দেশজুড়ে অভিবাসী-বিরোধী দাঙ্গার পর লন্ডনের বাসিন্দাদের উগ্র ডানপন্থী দাঙ্গা থামানোর চেষ্টায় জড়ো হওয়ার চিত্র। 

ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ছবিতে ‘STAND UP TO RACISM | REFUGEES WELCOME | Stop the far right’ লিখিত একটি প্ল্যাকার্ডের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে সারজিস আলমের একটি ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছবি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়া, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ১৬ সেপ্টেম্বর জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশের দূতাবাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে দেশটিতে সফররত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধি দল। অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে  আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, জাপানে সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ওপর জাপানে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার ছবি দাবিতে ঢাকার ভিন্ন নূরা পাগলার ছবি প্রচার

0

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার আস্তানায় গত ৫ সেপ্টেম্বরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঐদিন জুমার নামাজের পর ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একদল লোক এই হামলা চালায়। এক পর্যায়ে নুরুল হকের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ছবিটি সত্তরের দশকে (১৯৭৪-৭৫ সালে) তুলা নুরুল হক (নুরাল পাগলা) এর ছবি।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে, ঢাকার নূরা পাগলা নামে ভিন্ন এক ব্যক্তির ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘ক্যামেরাল্যাবস’ নামক প্ল্যটফর্মে আলোচিত ছবিটি ১৯৭৪-৭৫ সালে ফটোগ্রাফার ‘এড ভ্যান ড্যার এল্সকেন’ এর ধারণকৃত ঢাকার এক ফকিরের ছবি দাবিতে পাওয়া যায়। তবে প্ল্যাটফর্মটিতে ছবির ব্যক্তির পরিচয়ের বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক ‘আনোয়ার পারভেজ হালিম’ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে সংবাদপত্র বিচিত্রার ছবি ও রাজবাড়ীর নুরাল পাগলার ছবির সাথে আলোচিত ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “বিচিত্রার নূরা পাগলা এবং গোয়ালন্দের নূরাল পাগলা এক নয় | রাজবাড়ির গোয়ালন্দে নূরাল পাগলার মাজারে হামলা, কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলার পর অনেকেই দেখছি বিচিত্রার একটি পুরোনো প্রচ্ছদ পোস্ট করেছেন। বিচিত্রা নূরা পাগলা ও পপ গায়ক আজম খানকে নিয়ে ১৯৭৩ সালে একটি কাভার স্টোরি করেছিল। পোস্টদাতাদের দাবি, বিচিত্রার সেই নূরা পাগলা আর গোয়ালন্দের নূরাল পাগলা একই ব্যক্তি। তাদের এই দাবি সঠিক নয়। মিথ্যা। বিচিত্রার নূরা পাগলা ছিলেন শিক্ষিত। মুক্তিযোদ্ধা। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী (সূত্র: সৈয়দ তারিক)। যুদ্ধফেরত নূরা মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াতেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে হাইকোর্টের মাজারে। আধ্যাত্মিক গান করতেন।..  ২০০৮ সালের দিকে সর্বশেষ জেনেছিলাম, নূরা পাগলা অসুস্থ। গুলশানের শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্ভবত ওই সময়ে বা তার কিছু পরে তিনি মারা যান।..” উল্লেখ্য, পোস্টটিতে বিচিত্রার নূরা পাগলা বলতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির ব্যক্তিকে বুঝানো হয়।

পাশাপাশি, ‘আনোয়ার পারভেজ হালিম’ এর পোস্টটি উদ্ধৃত করে একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে লেখক, গবেষক ও শিক্ষক ‘সাহাদাত পারভেজ’ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৬ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ঢাকার নূরা পাগলাকে নিয়ে ১৯৭৩ সালের ১০ আগস্টে বিচিত্রায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটের সংযুক্তি পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেন, তিনি নূরা পাগলাকে চিনতেন। তার পোস্টে সংযুক্ত বিচিত্রার প্রতিবেদনে ঢাকার নূরা পাগলার একাধিক ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে নূরা পাগলা সম্পর্কে বলা হয়, “নূরা পাগলার বয়স আশির ওপরে। অথচ পেশীবহুল পেটানো শরীর দেখে মনে হবে কোনোক্রমেই ষাট পেরোয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি বৃটিশ আর্মিতে ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ করেছেন। বসরার কথা তার এখনো মনে আছে।…তার আসল নাম কেউ জানে না। তিনি নিজেও জানেন না তার স্ত্রী পুত্র কে কোথায় আছে। বাড়ি নোয়াখালীতে। অনেক বছর বাড়ির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। লোকে যা টাকা পয়সা দেয় তাতেই খাওয়াটা হয়ে যায়।..”

এছাড়াও, বিচিত্রায় নূরা পাগলাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে আরো একাধিক ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়।

১৯৭৩ সালে প্রকাশিত বিচিত্রার প্রতিবেদনে বলা হয় ঢাকার নূরা পাগলার বয়স ৮০, তবে দেখতে লাগে ৬০ বছরের মতো। অর্থাৎ, এ হিসেবে ঢাকার নূরা পাগলার জন্ম ১৮৯৩ সাল থেকে ১৯১৩ সালের ভেতর বা কাছাকাছি সময়ে।

অপরদিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলাকে নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক আমাদের সময়, ঢাকা পোস্টসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়, রাজবাড়ীর নুরাল পাগলার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর৷ অর্থাৎ, এ হিসেবে রাজবাড়ীর নুরাল পাগলার জন্ম ১৯৪০ সালের দিকে। অর্থাৎ, ঢাকার নূরা পাগলা বলে উল্লিখিত ব্যক্তি ও রাজবাড়ীর নুরাল পাগলার বয়স ও জন্মতারিখে বড় রকমের পার্থক্য দেখা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবি ও গণমাধ্যমে প্রচারিত রাজবাড়ীর নুরাল পাগলার ছবির তুলনা করলে শারীরিক গড়ন, চুল ও মুখমণ্ডলের আকৃতিতে বৈসাদৃশ্য দেখা যায় যা থেকে বুঝা যায় দুইজন আলাদা ব্যক্তি।

উল্লেখ্য, ঢাকার নূরা পাগলাকে চেনা উপরোল্লিখিত লেখক, গবেষক ও শিক্ষক ‘সাহাদাত পারভেজ’ও তার ফেসবুক পোস্টটির মন্তব্য বিভাগে একজনের রিপ্লাইয়ে বলেন, তার মনে হচ্ছে ঢাকার নূরা পাগলা ও রাজবাড়ীর নুরাল পাগলা দুজন ভিন্ন ব্যক্তি।

এছাড়াও, ‘আশিকুর রহমান’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢাকার নূরা পাগলার বিষয়ে ২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। নূরা পাগলার সাথে তার পরিবারের ভালো সম্পর্ক ছিল বলেও তিনি দাবি করেন। তার পোস্টে তিনি আরও বলেন, “২০০৭-৮ এর দিকে নুরা পাগলা এন্তেকাল করেন এন্তেকাল এর সময় ওনার বয়স ছিল ৯০-৯৫ বছর। ওনাকে ওনার কথা মতো ওনার বসত ঘরের ভিতরেই সমাধী করা হয়। কিন্তু বিদেশে যে ছেলে দুজন ছিলো তারা দেশে এসে ঘর থেকে তুলে কবরস্থানে নিয়ে আবার মাটি দেয়। একে একে ৬ মাস পর পর তাকে ৭ বার কবর থেকে তোলা হয়েছিলো। কিন্তু তার দেহ পুরো অক্ষত ছিলো। পরে তাকে আবার তার ঘরের ভিতর ই সমাধী করা হয়। ও পরে মাজার শরীফ করা হয়। ওনার মাজার শরীফ বর্তমান এ ঢাকা রামপুরা টিভি সেন্টারের পিছনে অবস্থীত। সেখানে তার বিসাল বাউন্ডারি করা বাড়ি ও মাজার শরীফ রয়েছে। প্রতি বছর ওখানে ওনার নামে ওরশ শরীফ হয় ও বৈশাখ মাসে একটি বাৎসরিক ওরশ শরীফ করেন। নুরা পাগলা মারা জাওয়ার আগে ওনার মেজো ছেলে খাজা নিজাম উদ্দিন ওরফে (খাজা পাগলা) কে ওনার গদিতে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। ওনার পরে ওনার ছেলে বহু বছর ওনার গদি চালিয়েছেন। ২০২০ সালে  নুরা পাগলার মেজো ছেলে খাজা নিজাম উদ্দিন ওরফে (খাজা পাগলা)  ও মারা জান।”

‘আশিকুর রহমান’ এর পোস্টে উল্লিখিত নূরা পাগলার বয়স অনুসারে নূরা পাগলার জন্ম ১৯১২-১৭ সালে যা বিচিত্রা সংবাদপত্রে উল্লিখিত বয়সের পরিসরের বা রেঞ্জের কাছাকাছি থাকলেও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার জন্মসালের চাইতে বেশ আগে বলে প্রতীয়মান হয়।

এছাড়াও, উপরোল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে এ স্পষ্ট যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির ব্যক্তি ও রাজবাড়ীর নুরাল পাগলার শরীরের গড়ন, আকৃতি, অবস্থান, ও বয়সের পার্থক্য রয়েছে যা প্রমাণ করে দুজন প্রকৃতপক্ষে আলাদা ব্যক্তি।

সুতরাং, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার ছবি দাবিতে ঢাকার নূরা পাগলা নামে ভিন্ন এক ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

জাবিতে বামদলের নেত্রীকে শিবিরের মারধরের দাবিটি ভুয়া

0

গত, ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিজয়ী হয় ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে, “জাবি ক্যাম্পাস দখলে নিয়েই বামাতিদের শা’ওয়ামা’য়াওয়া ছিঁড়ে দিচ্ছে শি’বির” ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রাম প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির কর্তৃক বাম সংগঠের নেতাকর্মীদের মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়ার ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিটির রিভার্স সার্চ করে ‘Tanjil Ahammod Siddiqui’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত পোস্টে দাবি করা হয়, উক্ত ছবিটি ২০২৪ সালের ১৪ জুলাইয়ের। 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি২৪ লাইভের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কার নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্লোগান দেয়ায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের জেরা ও মোবাইল ফোন চেক করার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনকারীদের ৪ জন সহ অন্তত ৫ জন আহত হয়। হামলার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে আহসান লাবিব, সোহাগি সামিয়া, তৌহিদ সিয়াম ও মেহরাব সিফাতসহ একজন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে আহসান লাবিবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সোহাগী সামিয়াকে এনাম মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। 

উল্লেখ্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী সোহাগী সামিয়ার ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও সাম্প্রতিক সময়ে শিবিরের সাথে সংঘর্ষ কিংবা তার আহত হওয়ার  কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। 

এ বিষয়ে সেসময় অন্যান্য গণমাধ্যমও সংবাদ (, , ) প্রচার করা হয়।

অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ছবিতে থাকা বাম সংগঠনের এই নেত্রীর আহতের ঘটনার সাথেও শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সুতরাং, ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলায় আহত বাম সংগঠনের নেত্রী সোহাগী সামিয়ার ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে শিবিরের হামলায় আহত হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

ঢাবিতে শিবিরের ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সম্পর্কের দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অ্যাকাডেমিক ভবনে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এই মেশিনগুলোতে ‘SHIFA’ নামে ব্র্যান্ডিং দেখা যায়। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে দাবি উঠেছে যে, শিবিরের এই কার্যক্রমের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সম্পর্ক রয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে শিবিরের স্থাপিত স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, এই ভেন্ডিং মেশিনটি শিবিরের ‘Students’ Health Initiative for All – SHIFA’ নামক একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগের অংশ। আলোচিত ভেন্ডিং মেশিনের ‘SHIFA’ লোগো পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের লোগো থেকেও সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়া, পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনও এই উদ্যোগের সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।

বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য প্রথমে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংস্থাটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং শিফা ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তারা মূলত স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও শিক্ষা খাতে কাজ করে থাকে। সংস্থাটির দাবি, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে তারা। তবে তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম বা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া, শিফা ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন সম্পর্কিত কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, ঢাবিতে স্থাপিত ভেন্ডিং মেশিনে ব্যবহৃত ‘SHIFA’ লোগো এবং পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের লোগোর মধ্যে তুলনা করলে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শিবিরের ‘SHIFA’ উদ্যোগের পূর্ণরূপ হলো ‘Students’ Health Initiative for All’, যার একটি ফেসবুক পেজও রয়েছে। শিফার ডিরেক্টর মাজহারুল ইসলাম রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আমাদের উদ্যোগ পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কেও জানতাম না। আমাদের ‘SHIFA’ শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং এটি কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়।

শিফার ফেসবুক পেজে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক পোস্টে দেখা যায়, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করেছিল। এতে তুরস্কের উন্নয়ন সংস্থা টিকা (টিকা ঢাকা), আপন ফাউন্ডেশন, রিদম বাংলাদেশ, বায়োফার্মা লিমিটেড এবং ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালের সহযোগিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। মাজহারুল ইসলাম জানান, এগুলো কেবল কার্যক্রমভিত্তিক সহযোগিতা। এর সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ফার্স্ট এইড বক্স প্রদান সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব উদ্যোগ।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশন রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছে, ঢাবিতে সম্প্রতি স্থাপিত স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে তাদের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই। এছাড়া, তারা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। ভেন্ডিং মেশিনে ব্যবহৃত ‘শিফা’ নামের ব্র্যান্ডিং, লোগো বা ডিজাইনও তাদের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং বর্তমানে তারা বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।

সুতরাং, ঢাবিতে শিবিরের উদ্যোগে স্থাপিত স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রচারিত দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

Shifa Foundation: Website
SHIFA: Facebook Page
Statement from Majharul Islam, Director, SHIFA
Statement from Zia ur Rehman, Associate Director Operations, Shifa Foundation, Pakistan

জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল-শিবিরের সংঘর্ষের ভুয়া দাবি

0

গত ১১ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে ওইদিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভোট শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল। জাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে কথিত একটি সংবাদ ভিডিও প্রচার করে থাম্বনেল ও ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, ‘জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শিবির প্রার্থী মাজহারুলসহ আহত শতাধিক।’

এছাড়াও, কথিত সংবাদ ভিডিওটিতে সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে একটি দৃশ্যসহ মাজহারুল ইসলাম ও জাকসু ছাত্রদল প্যানেলের সদস্যের বক্তব্যও সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শিবির প্রার্থী মাজহারুলসহ শতাধিক আহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে জাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করলেও এরূপ কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া, কথিত সংবাদের ভিডিওটিতে সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষের সংবাদ ফুটেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২ সালে হওয়া ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের ফুটেজ সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওর শুরুতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিওর সংযুক্তি পাওয়া যায়। ভিডিওটির প্রেক্ষাপট যাচাইয়ে একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলাভিশন’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারো ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষ’ শিরোনামে ২০২২ সালের ২৬ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে সংযুক্ত ভিডিও ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংঘর্ষের ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বাংলাভিশনের সংবাদে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুপক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।…”

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে একজন সংবাদ উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যায়, “ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫জন আহত হয়েছেন”। উক্ত সংবাদটির প্রেক্ষাপটের বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘বরিশালে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১৫’ শিরোনামে গত ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।” উক্ত সংবাদ ফুটেজটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত সংবাদ উপস্থাপিকা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ভয়েসের মিল পাওয়া যায়। এ থেকে স্পষ্ট যে মূলত যমুনা টিভির উক্ত সংবাদ ফুটেজটি থেকে উক্ত উপস্থাপিকার বলা সংবাদের ‘‘বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে’ শব্দগুচ্ছ বাদ দিয়ে ‘ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন” শব্দগুচ্ছ নিয়ে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদে সংযুক্ত করা হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র সূত্রে জানা যায়, “আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে দুই পক্ষের নেতারা দাবি করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।”

অর্থাৎ, প্রচারিত উপরোল্লিখিত কোনো ফুটেজের সাথেই ‘জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ’ এর দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনে জাকসুতে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম ও ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখীর বক্তব্যের সংযুক্তি পাওয়া যায়। তবে কোনোটির সাথেই ‘জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ’ দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ বা সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, জাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে এরূপ কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে খবর প্রচার হতো। তবে এ বিষয়ে দেশিয় মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শিবির প্রার্থী মাজহারুলসহ শতাধিক আহত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বরিশালে ছাত্রলীগ নেতার মাকে নির্যাতনের দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার 

0

সম্প্রতি ‘বরিশালে ছেলে ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারনে ছেলেকে না পেয়ে মা কে নির্মম র্নির্যাতন।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বরিশালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কথিত সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে না পেয়ে তার মাকে নির্যাতনের ঘটনার নয় এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের উত্তর প্রদেশে শ্বশুরবাড়ির লোকজন দ্বারা এক নারীর নির্যাতিত হওয়ার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Manoj Sharma Lucknow UP নামক এক্স হ্যান্ডেলে গত ০৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে। 

পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভারতের উত্তরপ্রদেশের ফারুখাবাদের বিজেপির (ভারতের রাজনৈতিক দল, ভারতীয় জনতা পার্টি) সংসদ সদস্য মুকেশ রাজপুতের বোনকে তার শ্বশুর এবং দেবর নির্মমভাবে মারধর করে। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, তিনি গোসল করার সময় তার শ্বশুর এবং দেবর তার ভিডিও ধারণ করছিলেন, তিনি এর প্রতিবাদ করলে তারা তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করে এবং তারা তাকে মারধর শুরু করে। কাসগঞ্জে, বাড়ির বাইরে শ্বশুর ও দেবরদের ওই নারীকে মারধরের ঘটনার ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। পরে ভুক্তভোগী নারী অভিযুক্ত শ্বশুর এবং দেবরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে৷ 

উপরোক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ভারতের গণমাধ্যম NEWS9 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৮ সেপ্টেম্বর ‘On Cam: BJP MP’s sister filmed while taking bath, assaulted by in-laws after protesting’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, উত্তর প্রদেশের বিজেপি সাংসদ মুকেশ রাজপুতের বোন রীনা সিং বোন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং জীবনের হুমকির অভিযোগ এনে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

ভুক্তভোগী রীনা সিং তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন যে তার শ্বশুর লক্ষ্মণ সিং এবং দেবর রাজেশ সিং ও গিরিশ সিং তার উপর আক্রমণ করেছেন এবং তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।

তিনি আরও দাবি করেছেন যে গত ০৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে যখন তিনি বাথরুমে গোসল করছিলেন, তখন গিরিশ সিং এবং লক্ষ্মণ সিং জানালা দিয়ে তার একটি ভিডিও রেকর্ড করার চেষ্টা করেছিলেন। যখন তিনি এর প্রতিবাদ করেন, তখন তাকে মৌখিকভাবে গালিগালাজ করা হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।

একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, লক্ষ্মণ সিং লাঠি দিয়ে রীনা সিং-এর ওপর আঘাত করছেন।

পরবর্তীতে, আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ০৮ সেপ্টেম্বর ‘UP BJP MP’s Sister Alleges Assault By In-Laws, Says Was Filmed While Bathing’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। 

গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি৷ 

সুতরাং, বরিশালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কথিত সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে না পেয়ে তার মাকে নির্যাতন করা হয়েছে দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র