গোপালগঞ্জে গতকাল (১৬ জুলাই) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতাকর্মীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। এরপর সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে গোপালগঞ্জ ছাড়েন এনসিপির নেতারা। দিনভর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন নিহত হন।
এরই প্রেক্ষিতে, গতকাল (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সেনাবাহিনীর পায়ে ধরে এনসিপির নেতাকর্মীদের আকুতি করার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন ব্যক্তি সেনাবাহিনীর সদস্যদের পায়ে ধরে রেখেছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনা সদস্যদের পা ধরে কয়েকজন ব্যক্তির আকুতি জানানোর এই ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয় বরং, এটি গত মে মাসে চার দফা দাবি আদায়ে সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের আন্দোলনের ঘটনার ভিডিও।
অনুসন্ধানে ‘Asif Creation’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৮ মে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হয়, প্রচারিত ভিডিওটি সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের কর্তৃক চাকরিরত সদস্যদের পায়ে ধরার দৃশ্যের।
উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যরা চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেইসব সেনাবাহিনীর গাড়ি আটকে দেয় এবং গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা সেনাসদস্যদের পায়ে ধরেছেন এবং ধারাভাষ্যে একই বর্ণনা সাংবাদিককেও দিতে শোনা যায়। এছাড়া ভিডিওটিতে ‘জাতীয় প্রেস ক্লাব’ নামফলক যুক্ত ভবনও দেখা যায়।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি গতকালের গোপালগঞ্জের দৃশ্যের নয়।
এরপর প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজে গত ১৮ মে “কর্মকর্তাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লেন চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চার দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যরা। এর অংশ হিসেবে গত ১৮ মে বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাদের বৈঠক হয় সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় তারা কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।
সুতরাং, গত মে মাসে চার দফা দাবি আদায়ে সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের আন্দোলনের ঘটনার ভিডিওকে গোপালগঞ্জে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এনসিপি নেতাদের সেনাবাহিনীর সদস্যদের পায়ে ধরে আকুতি জানানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Asif Creation- Facebook Post
- Bangladesh Pratidin- সেনাবাহিনী কর্মকর্তার গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লেন চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য ও পরিবারের সদস্যরা
- Jago News- কর্মকর্তাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লেন চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা