বিএনপির নামে চাঁদা তুলতে গিয়ে যুবলীগ নেতাকে গণধোলাই দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘর্ষের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বিএনপি’র  নাম করে চাঁদা  তুলতে গিয়ে আটক যুবলীগের নেতা | এরপর জনগণের দোলায়”।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং এটির সাথে বিএনপি কিংবা যুবলীগের সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রকৃতপক্ষে, এটি ভারতের আসামের ডবোকায় একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পুরোনো বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে হওয়া সংঘর্ষের দৃশ্য। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যালোচনায় ভিডিওটিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম সময় টেলিভিশনের একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সময় টিভির ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে আলোচিত দাবিতে কোনো সংবাদ বা ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও এমন কোনো দাবিতে আলোচিত ভিডিওটি পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও সময় টিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সময় টিভির লোগোর অ্যানিমেশনের সাথে আলোচিত ভিডিওর লোগোর অ্যানিমেশনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আলোচিত ভিডিওর ‘সময়’ লেখা লোগোটির অক্ষরগুলো উল্লম্বিকভাবে ঘুরতে দেখা যায়। অপরদিকে সময় টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের লোগোর অক্ষরগুলো অনুভূমিকভাবে ঘুরতে দেখা যায়। এছাড়াও সময়টিভির লোগোতে ‘সময়’ লেখার নিচে পৃথিবীর মানটিত্র রয়েছে।

 
পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে এনই’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, “আসামের ডোবোকায় যমুনা গাঁও পঞ্চায়েতে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধির আত্মীয়দের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের একদল লোকের মধ্যে তীব্র কথা কাটাকাটি হলে একটি গ্রাম পর্যায়ের সভা সহিংসতায় রূপ নেয়।” (অনূদিত)

এছাড়াও অনুসন্ধানে ‘ইন্ডিয়া টুডে এনই’ এর ওয়েবসাইটে ‘Assam: Chairs go flying as panchayat meet turns violent in Doboka, several injured’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০৪ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “আসামের ডোবোকার যমুনা গাঁও পঞ্চায়েতে একটি গ্রাম পর্যায়ের বৈঠকে মারামারি বেঁধে যায়, যখন এক নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধির আত্মীয়দের সঙ্গে কিছু স্থানীয় বাসিন্দার ঝগড়া শুরু হয়। জানা গেছে, আগের দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়ম নিয়ে পুরনো অভিযোগ থেকেই এই বিবাদের সূত্রপাত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঝগড়াটি খুব দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে, এবং একে অপরকে প্লাস্টিকের চেয়ারে আঘাত করতে দেখা যায়। এতে কয়েকজন মানুষ কম-বেশি আহত হন।

এই বৈঠকটি সরকার নির্দেশিত একটি কর্মসূচির অংশ ছিল, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন নবনির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের নানা জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশেষ গ্রাম সভা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু যেখানে সবার মিলে গঠনমূলক আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে পুরনো ক্ষোভ আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং তা হাতাহাতিতে গড়ায়।” (অনূদিত)

এছাড়াও, ‘নিউজ ডেইলি২৪’ নামে একটি আসাম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের এক্স অ্যাকাউন্টেও উক্ত ঘটনার ভিডিওটি ভারতের আসামের দাবিতে পাওয়া যায়। 

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। 

সুতরাং, ভারতের আসামের ডবোকায় একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পুরোনো বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে হওয়া সংঘর্ষের ভিডিওকে বিএনপির নামে চাঁদা তুলতে গিয়ে যুবলীগ নেতা আটক হয়ে গণধোলাইয়ের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img