গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে গণহত্যার ভিডিও দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে তাদের ঘিরে হামলার ঘটনার পর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “১৪৪ ধারা জারি করে রাতের আঁধারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে।”
উল্লেখ্য যে, উক্ত ভিডিওটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও (লাইভ) হিসেবেও প্রচার করতে দেখা যায় এবং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একটি পোস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কেও শেয়ার করতে দেখা যায়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত ১৬ জুলাইয়ে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের দৃশ্যের নয় বরং, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় ঘটা যৌথবাহিনীর অভিযানের দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘যমুনা টিভি’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “মোহাম্মদপুরে চাঁদ উদ্যানের সেই অভিযানের ভিডিও” শীর্ষক শিরোনামে গত ২২ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম সময় নিউজ টিভির ফেসবুক পেজসহ নানা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও সেসময় এ ঘটনার ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে ‘গুলিবিনিময়ে’ নিহত ২: পুলিশ” শীর্ষক শিরোনামে গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে ‘গুলিবিনিময়ে’ দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান এই তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশ বলছে, গতকাল বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত একটার দিকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন জুম্মন ও মিরাজ। পুলিশ তাঁদের সন্ত্রাসী বলছে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।”

এছাড়াও এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বিডিনিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। পাশাপাশি, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ পোস্ট হতে দেখা যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, “আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক ০০৩০ ঘটিকায় মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় ছিনতাই এর প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা একটি গলির দুই পাশে ঘেরাও করলে সন্ত্রাসীরা একটি একতলা ভবনের ছাদ থেকে আভিযানিক দলটির উপর অতর্কিত গুলি চালায়। আভিযানিক দলটি আত্মরক্ষার্থে তৎক্ষণাৎ পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ৫ জন সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে, বাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে ছাদের উপর থেকে দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। আটককৃত ব্যক্তিদের নিকট হতে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং প্রচারিত লাইভ বা সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়টিও ভুয়া।

সুতরাং, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় ঘটা যৌথবাহিনীর অভিযানের দৃশ্যকে গতকাল ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img