ভিডিওটি সম্প্রতি নিহত পুলিশ সদস্য পারভেজ কিংবা জুলাইয়ে নিহত বিএনপি কর্মী সজিবের সন্তানের আর্তনাদের নয়

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি’র সমাবেশে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের  সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ নিহত হওয়ার পর একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটি পারভেজের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার সন্তানের আহাজারির দৃশ্য।

পুলিশ সদস্য

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন, এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন, এখানে (আর্কাইভ)।

ফেসবুকের কিছু পোস্টে একই ভিডিও ব্যবহার করে ভিন্ন দাবিও করতে দেখা গেছে। দাবি করা হচ্ছে, এটি গত জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষে নিহত বিএনপি কর্মী সজিব হোসেনের লাশ ঘিরে তার মেয়ের আহাজারির দৃশ্যের ভিডিও।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন, এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি গত ২৮ অক্টোবর মারা যাওয়া পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ কিংবা গত জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি’র সংঘর্ষে নিহত বিএনপি কর্মী সজিবের হোসেনের সন্তানের আহাজারির দৃশ্যের নয় বরং চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরের নয়াবাজার এলাকায় গত মে মাসে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত আজাদুর রহমান আজাদের মেয়ের কান্নার ভিডিওকে ভিন্ন দুই দাবিতে সম্প্রতি প্রচার করা হচ্ছে।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের শুরুতে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি’র সংঘর্ষে নিহত বিএনপি কর্মী সজিবের হোসেনের সন্তানের আহাজারি দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর উপরে ডান কোনে Bangladesh Live লেখা একটি লোগো রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসে।

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Bangladesh Live নামক ফেসবুক পেজে গত ২৯ মে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner
Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরের নয়াবাজার এলাকায় বাসকারী আজাদুর রহমান আজাদ নামক এক ব্যক্তি নৈশ প্রহরীর কাজ করতেন। জমিতে প্রস্রাব করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ভিডিওতে এতে নিহত আজাদকে নিয়ে তার সন্তানের একটি হৃদয়বিদারক বক্তব্য দেখানো হয়। যেটি সম্প্রতি এবং জুলাই মাসে ভিন্ন দুইটি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

পরবর্তীতে উক্ত ঘটনা নিয়ে গত ০২ জুন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভিতে ‘বাবা হত্যার বিচার চেয়ে চার বছর বয়সী মেয়ের আকুতি’ শীর্ষক শিরোনাম প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিহত আজাদের সন্তান উম্মে হাবিবা সাইরিনের ভিডিও সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওর এই শিশুর চেহারার সাথে আলোচিত দাবিগুলোতে প্রচারিত ভিডিওর শিশুর চেহারার হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

সেসময় একাধিক মূলধারার অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও জনাব আজাদুর রহমান আজাদের নিহতের সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

গত ২৮ মে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকায়  “চট্টগ্রামে নৈশপ্রহরীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৮ মে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় আজাদুর রহমান নামের এক নৈশ প্রহরীকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।

নিহত আজাদের ভাতিজা পরিচয়দানকারী হুমায়ুন কবিরকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমটিতে উল্লেখ করা হয়, কথাকাটাকাটির জেরে এক যুবক মোবাইলে ফয়সালকে ডেকে নেয়। এ সময় বিষয়টা মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু ভোরে সবাই মিলে আজাদের ওপর হামলা চালায়। আজাদ হালিশহর নয়াবাজার এলাকার নাজিরবাড়ির বাসিন্দা। তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজাদের ভাই নগরীর বৌবাজার (নয়াবাজারের পার্শ্ববর্তী) এলাকার একটি খালি জায়গার (বাউন্ডারি দেয়া) কেয়ারটেকার। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই জায়গার গেটের সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে গেলে আজাদের ভাই বাধা দেন। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ঘটনাটি হাতাহাতি পর্যন্ত পৌঁছায়। কিছুক্ষণ পর আজাদও ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে কেয়ারটেকার ও তাঁর ভাই আজাদকে তাঁরা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান। রোববার ভোরে আজাদ নাশতা আনতে বাড়ি থেকে বের হন। নয়াবাজার বিশ্বরোডের মুখে তাঁকে একা পেয়ে কয়েকজন ঘিরে ধরে ছুরিকাঘাত করে।

মূলত, গত মে মাসের শেষের দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরের নয়াবাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজাদুর রহমান আজাদ নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করে দুর্বৃত্তরা। সেসময় আজাদের শিশু উম্মে হাবিবা সাইরিনের আহাজারির হৃদয়বিদারক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সম্প্রতি সেই ভিডিওকেই গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের সন্তানের আহাজারির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া একই ভিডিওটিকে কান্না গত জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির সংঘর্ষে নিহত বিএনপি কর্মী সজিবের সন্তানের আহাজারির দৃশ্য দাবিতেও প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির  সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে এক দল লোকের গণপিটুনিতে আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামের এক পুলিশ কনস্টেবল মারা যান। এছাড়া, গত জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি’র সংঘর্ষে সজীব হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হন।

প্রসঙ্গত, পূর্বে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন:

সুতরাং, গত ২৮ মে নগরীর পাহাড়তলী থানার হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত নৈশপ্রহরী আজাদুর রহমান আজাদের সন্তানের আহাজারির ভিডিওকে গত ২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য পারভেজের সন্তান ও গত জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির সংঘর্ষে নিহত বিএনপি কর্মী সজিব হোসেনের মৃত্যুতে তার সন্তানের আহাজারির দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সত্য নয়।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img