কথিত যুবদল নেতা বা পুলিশ কনস্টেবল নয়, এটি আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় তার বাচ্চার কান্নার ভিডিও 

গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় শামীম নামে কথিত এক যুবদল নেতা নিহত হওয়ার পর একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটি শামিমের এবং তার লাশ ঘিরে তার পরিবারের সদস্যদের আহাজারির দৃশ্য। 

যুবদল নেতা

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফেসবুকের কিছু পোস্টে একই ভিডিও ব্যবহার করে ভিন্ন দাবিও করতে দেখা গেছে। দাবি করা হচ্ছে, এটি একই দিন (২৮ অক্টোবর) রাজধানীতে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের লাশ এটি এবং তার লাশ ঘিরে তার স্বজনরা আহাজারির দৃশ্য ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। 

উক্ত দাবিতে কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর মারা যাওয়া কথিত যুবদল নেতা শামিম বা পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের লাশ নয় এটি বরং বাগেরহাটের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার লাশের গত ১২ অক্টোবরের পুরোনো ভিডিওকে ভিন্ন দুই দাবিতে সম্প্রতি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ফেসবুকে গত ১২ অক্টোবর Journalists Kamrul Islam Titu নামক একটি অ্যাকাউন্টে আলোচিত ভিডিওটির সদৃশ একটি ভিডিওর (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, (বাগেরহাটের) শরণখোলায় ইউপি সদস্য সরোয়ার তালুকদারের ছোট মেয়ে তার বাবার লাশ দেখে আহাজারি করার দৃশ্য এটি।

Screenshot comparison: Rumor Scanner 
Screenshot comparison: Rumor Scanner

মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির নামের সূত্র এবং প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে একইদিন (১২ অক্টোবর) News Live24 নামের একটি ফেসবুক পেজে একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। জনাব সরোয়ারের লাশ দেখতে এলাকাবাসীর ভীড় জমায় সরোয়ারের বাড়ির প্রাঙ্গণে, সেটিই প্রায় প্রায় ৪৫ মিনিটের লাইভ ভিডিওটিতে দেখানো হয়। 

Screenshot: Facebook 

সেদিনের এই দৃশ্যের আরো কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। 

অনুসন্ধানে একাধিক সংবাদমাধ্যমেও জনাব সরোয়ারের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১২ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেদিন খুলনা সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সরোয়ার হোসেন। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খাদা গ্রামের মৃত চানমিয়া তালুকদারের ছেলে সরোয়ার হোসেন তালুকদার রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরোয়ার তালুকদার গত ৭ অক্টোবর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে খুলনা সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ সংক্রান্ত স্থানীয় গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে। 

বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম জনাব সরোয়ারের ভাতিজির সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও ভিডিওটি দেখে এটি সরোয়ারের মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারির দৃশ্য বলে নিশ্চিত করেন।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ স্থলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারান শামীম নামের কথিত এক যুবদল নেতা। একইদিন রাজধানীতেই সংঘর্ষে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি লাশ ঘিরে শিশুসহ কিছু ব্যক্তি আহাজারি করছেন। ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, এই ভিডিওতে যার লাশ দেখা যাচ্ছে তিনি শামীম। তাছাড়া, আরো কিছু ভাইরাল পোস্টে একই ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, উক্ত ব্যক্তি কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই লাশটি উক্ত দুই ব্যক্তির কারোই নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১২ অক্টোবর বাগেরহাটের শরণখোলায় ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য সরোয়ার তালুকদার। তার লাশ ঘিরে স্বজনদের আহাজারির ভিডিওকে উক্ত দুই ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।  

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের কথিত নেতা শামীম মারা যান, যিনি রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি ছিলেন বলে মুগদা থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি কাজী সুমন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন। একইদিন বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবল মারা গেছেন। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়, নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম আমিরুল ইসলাম পারভেজ। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে দৌলতপুর।

প্রসঙ্গত, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে সেসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে৷ 

সুতরাং, বাগেরহাটে ১২ অক্টোবর ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যাওয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সরোয়ার তালুকদারের লাশ ঘিরে স্বজনদের আহাজারির ভিডিওকে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষে নিহত কথিত যুবদল নেতা শামীম এবং পুলিশ কনস্টেবল পারভেজের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img