খিচুড়ি খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের অসুস্থ হওয়ার ভুয়া দাবি প্রথম আলো ও কালবেলার নকল ফটোকার্ডে প্রচার

বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের দুই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও কালবেলার আদলে তৈরি ফটোকার্ড প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ২৭ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগের রাতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেত্রী নিপুণ রায়ের বিতরণ করা খিচুড়ি খেয়ে ৬৫ জন অসুস্থ হয়েছেন এবং তাদের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

খিচুড়ি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবি প্রথম আলো’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচারকৃত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবি কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচারকৃত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খিচুড়ি খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা অসুস্থ দাবি করে প্রথম আলো ও কালবেলা কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালবেলা ও প্রথম আলো’র ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে খিচুড়ি খেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অসুস্থতার দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

দাবিটির সূত্রপাত কীভাবে?

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকের মনিটরিং টুলসহ একাধিক টুলের সহায়তায় রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, Nurul Azim Rony নামক একটি ভেরিফাইড অ্যাকাইন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয় ২৮ অক্টোবর রাত ১২ টা ৫৬ মিনিটে। 

Screenshot: Facebook 

জনাব রনি তার পোস্টে রাত ১ টা ২৪ মিনিটে কালবেলা’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড কমেন্ট করেন, যেখানে একই দাবি উল্লেখ ছিল। 

Screenshot: Facebook 

কালবেলার আদলে তৈরি এই ফটোকার্ডের বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অন্তত দুই শতাধিক আইডি/পেজ থকে উক্ত ফটোকার্ডটি পোস্ট করা হয়েছে।

এর মধ্যে রাত ১ টা ১৪ মিনিটে শাওন হাওলাদার নামে একটি অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) প্রকাশ করা হয়। 

Screenshot: Facebook 

কালবেলার আদলে তৈরি ফটোকার্ড এবং খিচুড়ির ছবি প্রকাশ করে জনাব শাওন তার পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন, “একই সাথে বেশ কয়েকজনকে ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল কাকরাইলেও নেওয়া হয় সবাই এই খিচুড়ি খেয়েই অসুস্থ হয়েছেন বলে ছাত্রদলের স্বাস্থবিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইমন কালবেলাকে ফোনে নিশ্চিত করেন.. তিনি আক্ষেপ করে বলেন – অতি ক্ষুদার্ত ছিলেন তারাই টক খিচুড়ি খেয়েছেন। – মন্তব্য যাই হোক কেউ যেন ভুলেও এতে সরকারের হাত আছে বলে অভিযোগ না তোলে..কেননা সকালে আনা খিচুরি রাতে নষ্ট হবার কথা, কিন্তু নষ্ট স্বীকার না করে এটাকে টক ল্যাদা খিচুড়ি বলে চালিয়ে দিয়েছেন এক নেত্রী তাই এই দুর্দশা বলে জানান বিএনপি নেত্রী পাপিয়া।” 

আলোচিত দাবিটি নিয়ে কালবেলার ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানের মধ্যেই গতরাত ১২ টার পূর্বে অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১ টার পরে প্রকাশিত সমজাতীয় দাবি নিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্ট (আর্কাইভ) প্রকাশ হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, নয়া পল্টনে বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৭ অক্টোবর রাতে সমাবেশস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা খিচুড়ি খেয়ে কিছু নেতাকর্মী অসুস্থ হয়ে দুইটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এই দাবিটি দেশের দুই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও কালবেলার আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমেও প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, কালবেলা’কে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইমন শীর্ষক একটি দাবিও প্রচার করা হচ্ছে। একই সাথে দাবি করা হয়েছে, বিএনপির নেত্রী পাপিয়াও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। 

কালবেলা কি এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে? 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কালবেলার ওয়েবসাইটে গত রাতে নয়া পল্টনে খিচুড়ি বিতরণ সংক্রান্ত কোনো সংবাদই খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

গত রাতে কালবেলায় প্রকাশিত নয়া পল্টনের সমাবেশস্থল সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো দেখুন – 

তাছাড়া, পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত ২৮ অক্টোবর তারিখ (যেহেতু ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটিতে তারিখ ২৮ অক্টোবর লেখা রয়েছে) উল্লেখ করে তিনটি ফটোকার্ড (, , ) প্রকাশ করা হয়েছে, যার কোনোটির সাথেই আলোচিত দাবির মিল পাওয়া যায়নি। 

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, কালবেলা এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। 

তাছাড়া, এ সংক্রান্ত কিছু পোস্টে ছাত্রদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কবিরুল ইমনের নাম উল্লেখ থাকলেও অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, সর্বশেষ ঘোষিত কমিটি অনুযায়ী সংগঠনটির স্বাস্থ্য সম্পাদকের নাম সাইফুল আলম বাদশা। কমিটিতে থাকা স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্য সদস্যদের কারো নামও কবিরুল ইমন নয়।  

প্রথম আলো কি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে? 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটেও গত রাতে নয়া পল্টনে খিচুড়ি বিতরণ সংক্রান্ত কোনো সংবাদই খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

গত রাতে প্রথম আলোয় প্রকাশিত নয়া পল্টনের সমাবেশস্থল সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো দেখুন – 

তাছাড়া, পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে  দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত ২৭ অক্টোবর তারিখ (যেহেতু ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটিতে তারিখ ২৭ অক্টোবর লেখা রয়েছে) উল্লেখ করে একই ডিজাইনের ছয়টি ফটোকার্ড (, , , , , ) প্রকাশ করা হয়েছে, যার কোনোটির সাথেই আলোচিত দাবির মিল পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, প্রথম আলো এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। 

কালবেলা বা প্রথম আলো ছাড়া অন্যান্য কতিপয় গণমাধ্যমে সমাবেশস্থলে খিচুড়ি বিতরণের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত (, ) হলেও তা খেয়ে অসুস্থ হওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য সংবাদগুলোয় উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

মূলত, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের দুই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও কালবেলার আদলে তৈরি ফটোকার্ড প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ২৭ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগের রাতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেত্রী নিপুণ রায়ের বিতরণ করা খিচুড়ি খেয়ে ৬৫ জন অসুস্থ হয়েছেন এবং তাদের ঢাকার দুইটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাছাড়া, একই দাবি প্রথম আলো ও কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমেও প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খিচুড়ি খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা অসুস্থ দাবি করে প্রথম আলো ও কালবেলা কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালবেলা ও প্রথম আলো’র ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে খিচুড়ি খেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অসুস্থতার দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা মেলেনি। 

সুতরাং, ২৭ অক্টোবর রাতে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থলে খিচুড়ি খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের অসুস্থ হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং একই দাবিতে প্রথম আলো ও কালবেলার লোগো ব্যবহার করে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোও ভুয়া।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img