সম্প্রতি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাতে গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি রেড এলার্ট সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
যা দাবি করা হচ্ছে
ফেসবুক প্রচারিত পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে “রেড এলার্ট! সকালের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, যদি আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ এসে বলে যে আমরা মেডিকেল কলেজ থেকে এসেছি। আপনার রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব, কোন ফি লাগবে না। ভুলেও পরীক্ষাটা করতে দিবেন না। শীঘ্রই ৯৯৯ কল দিবেন কিংবা পুলিশকে অবহিত করবেন। কারণ তারা আইএস জঙ্গি। তারা আপনার রক্তে এইচ আইভি এইডস ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিবে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এটা শেয়ার করুন।
জনসচেতনতায়: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাতে ফেসবুকে ‘রেড এলার্ট’ শীর্ষক মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সাল থেকেই বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত রেড এলার্টটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পরামর্শমূলক এই রেড এলার্টটিতে বলা হয়েছে,
“সকালের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, যদি আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ এসে বলে যে আমরা মেডিকেল কলেজ থেকে এসেছি। আপনার রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব, কোন ফি লাগবে না। ভুলেও পরীক্ষাটা করতে দিবেন না। শীঘ্রই ৯৯৯ কল দিবেন কিংবা পুলিশকে অবহিত করবেন। কারণ তারা আইএস জঙ্গি। তারা আপনার রক্তে এইচ আইভি এইডস ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিবে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এটা শেয়ার করুন। জনসচেতনতায়: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী”
বিষয়টি অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ কিংবা আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও এসম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চলতি বছর বাংলাদেশ স্কাউটসের সূত্রেও একই তথ্য ছড়ানো হয়
চলতি বছরের জুন মাসে একই দাবি সম্বলিত তথ্য বাংলাদেশ স্কাউটসের বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেসময় রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে স্কাউটসের জনসংযোগ ও মার্কেটিং বিভাগের উপ পরিচালক মো: মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে স্কাউটসের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য শাখার পরিচালকের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে স্কাউটসের জাতীয় সদর দফতরের পরিচালক (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘না, আমরা এমন কোনো রেড এলার্ট দেইনি। কে বা কারা এটা ছড়াচ্ছে আমাদের জানা নেই।’
অর্থাৎ, একই দাবিতে বাংলাদেশ স্কাউটসের সূত্রে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়।
বিষয়টি যেভাবে ছড়ালো
অনুসন্ধানে ২০১৮ সালে ০৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের সূত্রে একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং সময় উল্লেখ করা হয়নি।
গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে সেসময় এধরণের সতর্কবার্তা দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, কোনো সূত্র উল্লেখ না করেও একই দাবিতে ২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন সূত্রের বরাতে ও সূত্রবিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাতেও একই তথ্য প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে চলতি বছরের জুনে একই দাবিতে বাংলাদেশ স্কাউটসের সূত্রে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই ধরনের কোনো রেড এলার্ট দেননি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।
সুতরাং, মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উদ্ধৃত করে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Bangladesh Army: Verified Facebook Page
- Bangladesh Army: Official Website
- ISPR: Official Website
- Rumor Scanner’s Own Analysis