সম্প্রতি, ‘নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলা ও প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত দুইটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।
প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং কালবেলা এবং প্রথম আলোও ‘নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ২৯ অক্টোবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে কালবেলা’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৯ অক্টোবর বা তার আগে পরে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালবেলা’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইনের প্রায় হুবহু মিল থাকলেও আলোচিত দাবিতে কালবেলা কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
পরবর্তীতে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ না থাকায় দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সম্প্রতি প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড গণমাধ্যমটির পেজে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও আলোচিত দাবিতে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ডের ফন্টের সাথে প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
আলোচিত ফটোকার্ডের ন্যায় প্রথম আলো কর্তৃক প্রচারিত ‘মিথ্যা প্রচারণা’ শীর্ষক ফটোকার্ড ডিজাইনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম আলো উক্ত ফর্মেটে কেবল তাদের নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো ভুল তথ্যের বিষয়ে জানায়। এই ফর্মেটের ফটোকার্ডগুলোয় শুধুমাত্র কালো রঙে শিরোনাম লেখা হয়ে থাকে। সেখানে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে লাল এবং কালো দুটো রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও উক্ত ফটোকার্ড টেক্সটের ফন্টগুলো বোল্ড হলেও প্রথম আলো কর্তৃক প্রচারিত এই ফর্মেটের ফটোকার্ডের টেক্সট সাধারণত বোল্ড করা হয় না।
অর্থাৎ, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ‘নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি।
মূলত, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের পর আজ ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়। এতে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও এদিন সকালে রাজধানীর গুলশান-২-এর বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এরই প্রেক্ষিতে ‘নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলা ও প্রথম আলোর ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত বক্তব্য প্রদানের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও দেখা যায়, দৈনিক কালবেলা ও প্রথম আলো আলোচিত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কাকরাইলে বাসে আগুনের ঘটনার বিষয়ে বাস চালকের বরাতে জানানো হয়, কাকরাইল এলাকায় বাসে আগুন দেওয়া দুই যুবক পুলিশের ভেস্ট পরিহিত ছিলেন।
উক্ত ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, “রাজধানীর কাকরাইলে বাসে অগ্নিসংযোগকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বা ডিবির কেউ না। অনেক সময় ডিবির জ্যাকেট পড়ে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে অপরাধীরা। ঢাকায় বাসে আগুনের ঘটনাটিও তেমন কোনো চক্র। যারাই এটা করেছে, আমরা তাদের খুঁজছি।”
এর মধ্যে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরিহিত এক যুবককে শনাক্ত করেছে পুলিশ। গণমাধ্যম থেকে পুলিশের বরাতে জানা যায়, বাসে আগুন দেওয়া ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরিহিত ওই যুবক হলেন রবিউল ইসলাম নয়ন। তিনি যুবদল ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব।
উল্লেখ্য, বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের ঘটনায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ‘নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রচারিত ফটোকার্ড দুইটি ভুয়া ও বানোয়াট।