সম্প্রতি, “নয়াপল্টনে গণধর্ষণের শিকার ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা” শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের ছবি যুক্ত জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই বিষয় সত্য কিনা তা জানতে চেয়ে করা একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,নয়াপল্টনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের গণধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং দৈনিক কালবেলাও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৩০ অক্টোবর ২০২৩।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং কালবেলা’র লোগোর সূত্র ধরে কালবেলা’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ৩০ অক্টোবর প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কালবেলা’র ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইনের প্রায় মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা টেক্সটের ফন্ট ডিজাইনের সাথে কালবেলা কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের টেক্সটের ফন্ট ডিজাইনের মধ্যে সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো বিশ্বস্ত সূত্রে উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
মূলত, সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে সরব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীতে নয়াপল্টনে অবস্থিত হওয়ার স্বাভাবিক এই স্থানটি এখন রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এরই প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই গণমাধ্যমের সংবাদে উঠে আছে রাজধানীর এই এলাকাটির নাম। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নয়াপল্টনে ‘গণধর্ষণের শিকার ঢাবির ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা’ শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রকাশিত হয়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। পরবর্তীতে মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার অভিযোগ এবং তা নিয়ে সংঘর্ষের জের ধরে সেই সমাবেশ স্থগিত করে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে পুলিশ। একইদিন রাতে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতা-কর্মীদের হত্যা, গ্রেপ্তার ও হামলা, মহাসচিবকে গ্রেপ্তার ও নেতাদের বাসায় তল্লাশির প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
উল্লেখ্য, পূর্বে বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ছড়ানো একাধিক গুজব শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
- খিচুড়ি খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের অসুস্থ হওয়ার ভুয়া দাবি প্রথম আলো ও কালবেলার নকল ফটোকার্ডে প্রচার
- তাঁতী দলের নেতা আজাদ পুলিশের ১০ হাজার পোশাকসহ গ্রেপ্তার হননি
- কালবেলা’র নকল ফটোকার্ডে মহিলাদলের কর্মীকে স্পর্শ করে যুবদলের নেতা গণপিটুনি খাওয়ার মিথ্যা তথ্য প্রচার
সুতরাং, ‘নয়াপল্টনে গণধর্ষণের শিকার ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা’ শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে কালবেলা’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।