মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাননি

সম্প্রতি, ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেল– শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটিতে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি গাড়ি থেকে বলতে শোনা যায়, বন্ধুরা চুপ করুন। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন সে আন্দোলনকে দমানো যাবে না। আপনাদের সকলেই, বাংলাদেশের মানুষকে, বিএনপি’র সকল অঙ্গ সংগঠনকে, তাদের নেতাকর্মীদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, চেয়ারম্যান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের সকল নেতাকর্মী ভাইদেরকে আমার অজস্র কৃতজ্ঞতা এবং আমার শুকরিয়া। আমরা আটক হওয়ার পরে আপনারা যে আন্দোলন করেছেন… আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীরা এখনো কারাগারে আটক হয়ে আছে এবং দুঃখজনকভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমি অবিলম্বে আমাদের এই নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি এবং বিশ্বাস করি জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সহফ হবে। আপনাদের সকলকে আবারও ধন্যবাদ। 

মির্জা ফখরুল

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 


টিকটকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি পাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং গত জানুয়ারি মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ জানুয়ারি “মুক্তি পেয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

৩ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রথম ৫৫ সেকেন্ডের পরের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

এছাড়া, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়েছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর সকালে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। আটকের প্রায় ৯ ঘণ্টা পর তাকে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানায় পুলিশ। এদিন রাত প্রায় আটটার দিকে মির্জা ফখরুলকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। উক্ত মামলায় মির্জা ফখরুল আদালতে জামিন আবেদন করলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

অর্থাৎ, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাননি।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। পরবর্তীতে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে সেই সমাবেশ স্থগিত করে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। একই দিনে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজধানীর গুলশান-২-এর বাসা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরবর্তীতে রাত ৮ টা ১০ মিনিটে তাকে এক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম)আদালতে পাঠানো হয়। মির্জা ফখরুল আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত তা আমলে না নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরইমধ্যে ‘ডিবি কার্যালয় ঘেরাও, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেল’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত জানুয়ারি মাসে মির্জা ফখরুলের থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধারণ করা। প্রকৃতপক্ষে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। 

উল্লেখ্য, বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের ঘটনায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারামুক্তির পুরোনো ভিডিওকে অতি সম্প্রতি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে প্রচারি করা হচ্ছে; যা সত্য নয়।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img