বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আসছে জানুয়ারিতে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গেল বেশ কয়েক মাস ধরেই রাজপথে নানা কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে আন্দোলনে নিজেদের যুক্ত রেখেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। গেল ১৮ অক্টোবর দলটি রাজধানীর নয়াপল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়, ২৮ অক্টোবর একই স্থানে মহাসমাবেশ করবে তারা।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন জানান, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে শুরু হবে সরকার পতনের মহাযাত্রা।
পরবর্তীতে একই দিনে ঢাকায় সমাবেশ ডাকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ আয়োজনের ঘোষণা দেয় দলটি। এই দুই দল ছাড়াও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় আরেক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিও। শুধু এই তিন দলই নয়, ২৮ অক্টোবর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আরো একাধিক দল ও জোট সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেয়।
তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই তিন দলের সমাবেশ নিয়েই রাজনীতির ময়দানে আলোচনা ছিল বেশি। এক দিনেই ঢাকায় এসব সমাবেশের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলগুলো যেমন প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছিল, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও এ দিনটি ঘিরে ছিল নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা, যা গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।
তাই এই দিনটিকে ঘিরে রিউমর স্ক্যানার টিমের ছিল পূর্ব প্রস্তুতি, তবে তা অবশ্যই ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধের বিরুদ্ধে। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে মধ্যেই ২৫ অক্টোবর বিএনপির আদলে তৈরি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখি আমরা। ‘আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের আগে যেসকল নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন, তারা তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে আসবেন।’ শীর্ষক একটি তথ্য ছিল উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে। এই বিজ্ঞপ্তিটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারও প্রচার করে।
কিন্তু বিএনপি’র মিডিয়া সেল এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে আলোচিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া (১) বলে নিশ্চিত করা হয়।
জানিয়ে রাখি, ২৮ অক্টোবর ঢাকার তিন সমাবেশের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও জামায়াতে ইসলামী অনুমতি পায়নি। ২৫ অক্টোবর ইউটিউবে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওর থাম্বনেইলে দাবি করা হয়, সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পিটিয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে (২) দেখেছে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত ২৬ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বরাতে ফেসবুকে প্রচারিত একাধিক পোস্টে দাবি করতে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ফখরুল পন্থী বনাম তারেক পন্থী দ্বন্দ্ব চরমে।
আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম (৩) মানবজমিনের চিফ নিউজ এডিটর সাজেদুল হকের সাথে। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোন রিপোর্ট করিনি। এটি গুজব।’
পরদিন (২৭ অক্টোবর) সকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর সম্বলিত দলটির আদলে তৈরি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে ঢাকায় পূর্বঘোষিত শান্তি সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে সারাদেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে বিপ্লব বড়ুয়া নিজেই নিশ্চিত (৪) করেন যে বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া৷ ঢাকার সমাবেশ স্থগিত হয়নি।
কিন্তু এই ভুল তথ্য ছড়ানো তবু থেমে থাকেনি বরং নতুন উপায়ে ছড়িয়েছে। পরবর্তীতে দেশের দুই গণমাধ্যমের সূত্র দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডে এই তথ্যটিই শুধু প্রচার করা হলেও প্রথম আলো’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উক্ত দাবি করেছেন বলে প্রচার করা হয়।
কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে (৫) জেনেছে, ওবায়দুল কাদের এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং দৈনিক প্রথম আলো এবং দৈনিক কালবেলা উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদও প্রকাশ করেনি।
এই ঘটনার কাছাকাছি সময়ে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামেও একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছড়ানো হয় ফেসবুকে, যাতে দাবি করা হয়েছিল, সংগঠনটির কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু নেতাকর্মী যারা গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন তাদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর থাকা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন (৬), তাদের সংগঠন থেকে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
একইদিন দুপুরে মানবজমিন এর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচার হতে দেখেছি আমরা, যাতে দাবি করা হচ্ছিল, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানা চ্যানেল আই’য়ের টকশোতে এই মহাসমাবেশের তারিখ পেছানোর বিষয়ে “বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমার জন্য কেন সমাবেশ পেছাতে হবে? দেশে বৌদ্ধ আছে কতজন যে তাদের জন্য আপনারা মায়াকান্না করছেন?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে রুমিন ফারহানা, চ্যানেল আই এবং মানবজমিনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। আমরা যাচাই (৭) করে দেখেছি, এ সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি রুমিন ফারহানা। তাছাড়া, তিনি আলোচিত কর্মসূচী ঘোষণা পরবর্তী সময়ে চ্যানেল আইয়ের কোনো টকশোতেও যাননি। তাছাড়া, মানবজমিনও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেননি।
কিন্তু রুমিন ফারহানার নামে ছড়িয়ে পড়া এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পরই বিএনপির সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা সংক্রান্ত একটি দাবি একইসাথে দলটির আদলে তৈরি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং দ্য ডেইলি স্টারের আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ‘লক্ষ্মীপূজা’ এবং ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’র কারণে বিএনপি ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে ২৯ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে। কিন্তু অনুসন্ধান (৮) জানাচ্ছে, বিএনপি সমাবেশ পেছানোর কোনো ঘোষণাই দেয়নি। এমনকি ডেইলি স্টারও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়, যাতে দেখা যাচ্ছিল একটি ট্রেন উপচেপড়া যাত্রীসমেত চলছে। ভিডিওগুলোর ক্যাপশন পড়ে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছিল যে এটি পরদিন বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে মানুষের ঢাকায় গমনের দৃশ্য।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এই একই ভিডিও নিয়ে পূর্বেও রিউমর স্ক্যানার ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল। গেল বছরের (২০২২) অক্টোবরে বিএনপির খুলনার সমাবেশে জনগণের যোগদানের দাবিতেও এই ভিডিও প্রচার করা হয়েছিল। সেসময় আমরা ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছিলাম, ভিডিওটি ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা শেষে মুসল্লীদের বাড়ি ফেরার দৃশ্য। সাম্প্রতিক দাবিটি নিয়ে আমাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে (৯)।
ট্রেনের ভিডিও সংক্রান্ত আলোচ্য ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে যখন শুরু করে, তখন প্রায় একই সময়ে সমজাতীয় দাবি নিয়ে আরেকটি ভিডিও-ও প্রচার হতে দেখা যায়। এই ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছিল, অসংখ্য মানুষ ট্রেনে করে তাদের গন্তব্যে ফিরছে।
আমরা এই ভিডিওটি নিয়েও পূর্বে অনুসন্ধান করেছিলাম। ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সেই অনুসন্ধানের ফলাফলে আমরা জানিয়েছিলাম, এটি সে বছরের ঈদুল ফিতর পালনের উদ্দেশ্যে মানুষের ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার ভিডিও। এবার তাই আমাদের তাই আমাদের বিষয়টি নিয়ে বাড়তি অনুসন্ধানের প্রয়োজন পড়েনি। সাম্প্রতিক দাবিটি নিয়ে আমাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে (১০)।
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়েও ২৭ অক্টোবর ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছিল বলে লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেদিন রাতে ইউটিউবের একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা হয়, পুলিশ বেড়ি ভেঙে রাতের শাপলা চত্বর দখলে নিলো জামায়াত- শিবিরের নেতা কর্মীরা। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটি যাচাই (১১) করে দেখতে পায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো দৃশ্য নয়। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হাটহাজারী মাদরাসা ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মুসল্লিদের উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলের একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা যখন বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করি, ততক্ষণে প্রায় ১২ লক্ষাধিক মানুষ পুরোনো ঘটনার এই ভিডিওটি দেখেছে।
২৭ অক্টোবর রাতে জাতীয় দৈনিক কালবেলা পত্রিকার আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হয়, সেদিন (২৭ অক্টোবর) রাতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেত্রী নিপুণ রায়ের বিতরণ করা খিচুড়ি খেয়ে ৬৫ জন অসুস্থ হয়েছেন এবং তাদের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে সমজাতীয় দাবি আরেক জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডেও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু অনুসন্ধানে (১২) দেখা গেল, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালবেলা ও প্রথম আলো’র ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে খিচুড়ি খেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অসুস্থতার দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা মেলেনি।
২৭ অক্টোবর শেষ ঘন্টায় কালবেলা’র আদলে একটি ফটোকার্ড ব্যবহার করে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকছে জাল টাকার নোট, যা দেয়া হবে নেতাকর্মীদের। তবে অনুসন্ধানে (১৩) কালবেলা’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্য কোনো প্লাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশগুলো কেন্দ্র করে এর আগের দিনগুলোয় এমন করেই ক্ষণে ক্ষণে ভুল তথ্য মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। আমরা হিসেব করে দেখেছি, সমাবেশগুলোর কর্মসূচী ঘোষণা পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে ২৮ অক্টোবরের আগের দিন অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সমাবেশ কেন্দ্রিক ১৩ টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
আমরা পরদিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। কাঙ্ক্ষিত সেইদিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবরের প্রথম প্রহরেই ফেসবুকে প্রচার হওয়া একটি পোস্টে অসংখ্য মানুষকে জড়ো হওয়ার একটি ছবি দেখতে পাই আমরা।
ডাঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা নামক একটি পেজে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, সেদিন রাতে ঢাকার রাজপথের দৃশ্য এটি। গণজমায়েতের পেছনের দিকে বিএনপির কিছু পোস্টার দেখা যাচ্ছে। তা থেকে সহজেই অনুমেয়, এটি বিএনপি সমর্থকদের কোনো গণজমায়েতের দৃশ্য।
আমরা ছবিটি রিভার্স সার্চ (১৪) করে বিএনপি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর ‘চট্টগ্রামে সমাপনী পথসভায় জনতার ঢল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ছবি খুঁজে পেয়েছি। অর্থাৎ, চট্টগ্রামের একটি ছবি ২৩ দিন পর স্থান বদলে ঢাকার দাবিতে প্রচার করা হলো।
সেদিন রাতেই জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে প্রচার করা হয়, বিএনপি-র সমাবেশ স্থলে কে বা কারা ফেলে গেছে ৪ টি হাঁস। হাঁস দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়’। বিষয়টি হাস্যরসাত্মক তথ্য বলে প্রতীয়মান হলেও দেশের একটি গণমাধ্যমের বরাতে আলোচিত তথ্যটি প্রচার করার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার। তবে অনুসন্ধানে (১৫) ইত্তেফাক এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে বলে প্রমাণ পাইনি আমরা।
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে মানবজমিন ও যমুনা টিভির বরাত দিয়ে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছিল, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে কমপক্ষে ৮০-১০০ টি লাশ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দুইটি গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদই প্রকাশ করেনি বলে অনুসন্ধানে (১৬) জেনেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রায় একই সময়ে প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে ওবায়দুল কাদেরের একটি ছবি ব্যবহার করে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে মঞ্চে উঠে ওবায়দুল কাদেরকে অতিরিক্ত কথা বলতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনুসন্ধানে (১৭) প্রথম আলো তো নয়ই, দেশের কোনো গণমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার। বরং গত ২৪ অক্টোবর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে বিএনপি’র একই মহাসমাবেশ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ডে তার মন্তব্যটি সরিয়ে আলোচিত দাবিটি বসিয়ে ফটোকার্ডটি প্রচার করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতটি যেন হয়ে উঠছিল ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রহর। সেদিন রাত আনুমানিক তিনটা থেকে পরবর্তী প্রায় ঘন্টাখানেক একাধিক ভুল তথ্য সম্বলিত পোস্টে সয়লাব ছিল ফেসবুক। সেসময়েই আমাদের নজরে আসে, বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদকে পুলিশের ১০ হাজার পোশাকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে শীর্ষক একটি তথ্য একাধিক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকার কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলমের সাথে কথা বলেছিলাম আমরা। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন (১৮), তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা তো আরও প্রায় সপ্তাহখানেক আগের। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দায়ের করা মামলায়। পুলিশের ১০ হাজার পোশাকসহ গ্রেপ্তারের দাবিটি ভুয়া। বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন।
সেদিন একই সময়ে কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছিল, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে ছেড়ে আসা একটি পিক-আপ ভ্যানকে বস্তাভর্তি বোমা ও লাঠিসহ রাজধানীতে আটক করা হয়েছে। এই দাবিটি ছড়াতে কালবেলা’র আদলে একটি ফটোকার্ডকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে৷ পরবর্তীতে আমাদের অনুসন্ধান (১৯) বলছে, প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন৷ কালবেলাও এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
কাছাকাছি সময়েই কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডে এক নারীর ছবি এবং কিছু মানুষের রাতের অন্ধকারে হামলার ছবি যুক্ত করে দাবি করা হয়, পল্টনে মহিলাদল কর্মী মৌসুমীর পাছায় হাত দিয়ে গণপিটুনি খেলেন বরিশাল যুবদল নেতা রায়হান। আমরা ছবি দুইটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে হামলার ছবিটি ২০২০ সালে ভারতের একটি ঘটনার বলে প্রমাণ (২০) পেয়েছি। কিন্তু উক্ত নারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া, অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে মহিলা দলের কথিত কর্মী মৌসুমীকে শ্লীলতাহানি করায় বরিশালের যুবদল নেতা গণপিটুনির শিকার শীর্ষক দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে কাছাকাছি সময়ে ছড়িয়ে পড়া পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সেদিন নির্ধারিত সময়েই রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশ শুরু করে। বিএনপির সমাবেশ দুপুর সাড়ে ১২ টার পর শুরু হয়। এর কাছাকাছি সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট নজরে আসে আমাদের, যাতে দাবি করা হচ্ছিল, বিএনপি’র সমাবেশে দেশের দুই সংবাদমাধ্যম সময় টিভি ও একাত্তর টিভিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি এবং দলটির নেতাদের হেয় করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গেল আগস্টে সময়-একাত্তর টিভির টকশো বর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয় বিএনপির নেতাদের। কিন্তু পরবর্তীতে বা ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে উক্ত দুই গণমাধ্যমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে আমরা উল্লেখ পাইনি। বিএনপির পক্ষ থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত (২১) করা হয়েছে।
সমাবেশ চলাকালীন সময়েই ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার পথে ছাত্রদলের নেতাদের হাতে এক তরুণী লাঞ্ছিত হয়েছেন দাবিতে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছিল। অনুসন্ধানে (২২) এই তথ্যের পক্ষেও কোনো সংবাদ ঢাকা পোস্টসহ অন্য কোনো গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। একই কায়দায় ৩১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের ছবি যুক্ত করে কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে দাবি করা হয়, নয়াপল্টনে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে (২৩) এই দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ মেলেনি।
২৮ অক্টোবর সমাবেশ চলার মধ্যেই গণমাধ্যমে খবর আসতে শুরু করে, রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। সেসময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে বলছিল, কাকরাইল মসজিদের সামনের এলাকায় অনেক সময় ধরেই বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সেসময় চলছিল। একপর্যায়ে পুলিশের এক সদস্য আহত হন। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “কাকরাইলে পুলিশ বক্স ও গাড়িতে আগুন, মসজিদের সামনে বিজিবি।” কিন্তু ফেসবুকে এই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট নিয়ে তাতে ভিন্ন শিরোনাম যুক্ত করে দাবি করা হয়, কাকরাইলে মসজিদে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে (২৪) কাকরাইল মসজিদ তো নয়ই, সেদিন ঢাকার কোনো মসজিদেই আগুন দেওয়ার ঘটনার খবর মেলেনি।
একই দাবি সেদিন বিকেলে কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমেও প্রচার করা হয়। এই ফটোকার্ডে পাশাপাশি রাখা দুইটি গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, এটি কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণের কোনো দৃশ্য নয়। সেসময় কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ ভবনে রাখা গাড়িতে আগুন জ্বলার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়।
বেলা গড়ানোর সাথে সাথে খবর আসছিল, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশেকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বিকেলের দিকে তিনটি গণমাধ্যমের আদলে ফটোকার্ড আমাদের নজরে আসে। এসব ফটোকার্ডে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব আক্রমণের শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে জানা (২৫) গেল, উক্ত দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। যেসব সাংবাদিক সেদিন আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন তাদের কারো নাম এই ফটোকার্ডগুলোতে ছিল না। তাছাড়া, এই ফটোকার্ডগুলোও নকল ছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিষয়েও খোঁজ নিয়েছি, তারা কেউই সেদিন হামলার শিকার হননি।
সেদিনের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে থাকি আমরা। দুপুরে যখন কাকরাইলে সংঘর্ষের খবর জানা যাচ্ছিল, তখন তা পল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থলেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বলে খবর দিচ্ছিলো গণমাধ্যমগুলো।
বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দুপুর তিনটার পরে এক পোস্টে (আর্কাইভ) এ সংক্রান্ত কিছু ছবি যুক্ত করে দাবি করা হয়, “পুলিশের নারকীয় তান্ডবে লন্ডভন্ড নয়াপল্টন। বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করছে। গুলিবৃদ্ধ হয়েছে হাজার, হাজার নেতা-কর্মী।” (বানান অপরিবর্তিত)
সেসময় পল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার দৃশ্য এবং হরতালে অগ্নিসংযোগের ভিন্ন দুইটি দাবিতে একটি ভিডিও প্রথম টিকটক এবং পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে আমাদের অনুসন্ধানে (২৬) জানা যাচ্ছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ভিডিওটি ২০১৮ সালের। সেদিন কিংবা ২৯ অক্টোবর পল্টন বা ঢাকার কোনো স্থানেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। তবে সমাবেশের দিন কাকরাইলে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বহনকারী একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। চালকের ভাষ্যমতে, বাসে আগুন দেওয়া দুই যুবক পুলিশের ভেস্ট পরিহিত ছিলেন। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, “কাকরাইলে বাসে অগ্নিসংযোগকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বা ডিবির কেউ না। অনেক সময় ডিবির জ্যাকেট পড়ে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে অপরাধীরা। ঢাকায় বাসে আগুনের ঘটনাটিও তেমন কোনো চক্র। যারাই এটা করেছে, আমরা তাদের খুঁজছি।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো’র আদলে ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়, “কাকরাইলের বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেল ছাত্রদলের ২ নেতা।” কিন্তু প্রথম আলো এক ফেসবুক পোস্টে (২৭) জানিয়েছে, এই ফটোকার্ড তারা প্রকাশ করেনি। প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ছবি ও তথ্য নকল।
বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে সেদিন নাগরিক টিভি একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটির ৪০ সেকেন্ড থেকে প্রায় ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়কালে দেখা যায়, পুলিশ ও মাছরাঙা টিভির সাংবাদিক মিলে কাগজ সদৃশ কিছুতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন। এই ফুটেজ ব্যবহার করে পরবর্তীতে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে (২৮) রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, সংঘর্ষ চলাকালে টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে আগুন জ্বালিয়ে একজন পুলিশ ও সংবাদকর্মীর রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা ছিল এটি। ভিডিওতে থাকা উক্ত সাংবাদিকের নাম মাহমুদ কমল। তিনি মাছরাঙা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার।
নয়া পল্টনে সংঘর্ষের খবরের মধ্যেই জানা যায়, বিএনপির মহাসমাবেশ স্থগিত হয়েছে। মাইকে শব্দ শোনা যাচ্ছে না। এই ঘটনায় সেদিন রাতে ফেসবুকের কিছু পোস্টে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য প্রচার হতে দেখি আমরা৷ প্রথম আলো’র আদলে একটি ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়, মির্জা ফখরুল বলেছেন, “কারো ভয়ে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি; হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি।” কিন্তু মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের অস্তিত্ব নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পায়নি রিউমর স্ক্যানার (২৯)। তাছাড়া, প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিএনপি দুপুর সাড়ে তিনটার পর ঘোষণা দেয়, নয়া পল্টনে হামলার প্রতিবাদে পরদিন (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে হরতাল পালন করবে দলটি।
সেসময় নয়া পল্টন কার্যত ফাঁকা দেখা যায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে। পুলিশ পুরো এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এর কিছু সময় পরই “পল্টন ছেড়ে বিএনপি নেতাদের পলায়ন। মীর্জা ফখরুল’কে ফোনে পাচ্ছেন না তারেক জিয়া” শীর্ষক শিরোনামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ফাঁকা থাকা নয়া পল্টনের ছবি ব্যবহার করে কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার হতে দেখা যায়। তবে আমরা অনুসন্ধানে (৩০) কালবেলার ফেসবুক পেজে এমন কোনো ফটোকার্ডের অস্তিত্ব পাইনি। তাছাড়া, উক্ত দাবিটি নিয়ে গণমাধ্যমেও কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের পর গণমাধ্যমসূত্রে আমরা দুইটি মৃত্যুর খবর জানতে পারি সেদিন। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য নিহত হয়। নিহত ওই পুলিশ সদস্যের নাম আমিরুল ইসলাম (পারভেজ)। তিনি কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গনি চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শামীম মোল্লা নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। তিনি মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি বলে দাবি করেন কাদের গনি চৌধুরী। এই খবরটি জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের ওয়েবসাইটে ‘নয়াপল্টনে সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশ করে। এই খবরের স্ক্রিনশট নিয়ে শিরোনামটি বদলে দিয়ে “নয়াপল্টনে নিজেদের ছোড়া ইট-পাটকেলে যুবদল নেতা নিহত” শীর্ষক শিরোনাম বসিয়ে ফেসবুকের কতিপয় পোস্টে প্রচার করা হয়েছে, যা আমাদের মনিটরিংয়ে (৩১) বেরিয়ে এসেছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, শিরোনাম তো নয়ই, পত্রিকাটির বিস্তারিত প্রতিবেদনেও এমন কোনো দাবি করা হয়নি।
কথিত যুবদল নেতা শামীমের বিষয়ে পরবর্তীতে গত ২৯ অক্টোবর আরেকটি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে। সেদিন প্রকাশিত ভাইরাল কিছু পোস্টে একটি ভিডিও যুক্ত করে দাবি করা হয়, ভিডিওটি শামীমের লাশের। তার লাশ ঘিরে পরিবারের সদস্যরা আহাজারির দৃশ্য বলে দাবি করা হয়৷ মজার বিষয় হচ্ছে, একই ভিডিও ব্যবহার করে এটি নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামের দাবি করেও একাধিক ফেসবুক পোস্ট দেখেছি আমরা। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে (৩২) নেমে রিউমর স্ক্যানার জেনেছে, এটি ২৮ অক্টোবর মারা যাওয়া কথিত যুবদল নেতা শামিম বা পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের লাশ নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাগেরহাটের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার লাশের গত ১২ অক্টোবরের পুরোনো ভিডিওকে ভিন্ন দুই দাবিতে সম্প্রতি প্রচার করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল আমিরুলের মৃত্যুতে তার সন্তানের আহাজারির দৃশ্য দাবিতে আরেকটি ভিডিও একইদিন (২৯ অক্টোবর) প্রচার করা হলেও সেটিও যাচাই (৩৩) করে আমরা দেখতে পাই, চট্টগ্রামে চলতি বছরের মে মাসে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত নৈশপ্রহরী আজাদুর রহমান আজাদের মেয়ের কান্নার ভিডিও এটি।
দিনভর নানা ঘটনাবলির পর ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার পর দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, সন্ধ্যায় বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয়ের ভেতরে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা মিয়ান আরাফি। তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলেও দাবি করেন৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে আমরা যখন গত ৩১ অক্টোবর ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করি, ততক্ষণে তাকে পুলিশ আটক করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে (৩৪) বেরিয়ে এসেছে, মিয়ান আরেফির সাথে মার্কিন সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার কাছে Democratic National Committee এর একটি সম্মানসূচক কন্ট্রিবিউটিং মেম্বারশিপ কার্ড রয়েছে, যা ডোনেশনের মাধ্যমে যে কেউই পেতে পারে। অপরের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগ এনে মিয়ান আরেফির বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেদিন রাতেই গণমাধ্যমে তার স্বীকারোক্তিমূলক একটি বক্তব্যের ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ডেমোক্রেট কমিটির লিডার এবং জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলতে।
এভাবেই ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে সমাবেশ আর সংঘাতকে পুঁজি করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে৷
তবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলির রেশ যেমন সেদিনই শেষ হয়ে যায়নি, তেমনি পরের কয়েকদিনও উক্ত দিনের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে ভুল তথ্যের প্রচার এবং প্রসার ঘটতে দেখেছি আমরা। যেমন, গত ২৯ অক্টোবরও ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ কেন্দ্রিক আরও দুইটি ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে। একটিতে প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হয়, টাঙ্গাইলের একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, “তারেক রহমান না আসা পর্যন্ত আর কোন সমাবেশে আসবো না।” ফটোকার্ডে থাকা ব্যক্তির ছবির সূত্র ধরে আমরা অনুসন্ধান করে দেখি, ইনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে (৩৫) জানান, “প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ফটোকার্ডটি প্রথম আলো প্রকাশ করেনি, সেটি আমি আগেই জানতে পেরেছি এবং আমার এমন কোনো মন্তব্য করার প্রশ্নই উঠেনা।”
আরেক ফটোকার্ড ছড়ানো হয়েছে কালবেলা’র আদলে, যেখানে দাবি ছিল এরকম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল এর সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সমাবেশে বলেছেন, পিটার হাস আমাদের উপরে তুলে মই সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে (৩৬) কালবেলাসহ মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৯ অক্টোবর সকালে খবর আসে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন রাতেই তাকে আদালতে হাজির করার আগ পর্যন্ত তিনি ডিবি অফিসেই ছিলেন।
সেদিন বিকেলে কালবেলা ও প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত দুইটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, “ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মির্জা ফখরুল বলেছেন, নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা।”
কিন্তু ফখরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সেদিন দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কী বলেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট দুই গণমাধ্যমও এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ (৩৭) প্রকাশ করেনি।
পরবর্তীতে সেদিন সন্ধ্যার পর তারেক রহমানের নির্দেশে মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামানকে ফখরুলের অবর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে’র লোগো সম্বলিত পৃথক পৃথক ফটোকার্ডে প্রচার হতে দেখা যায়। ফেসবুকের কতিপয় পোস্টে এ সংক্রান্ত বিএনপির আদলে তৈরি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রচার হতে দেখা যায়। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তথ্যটিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত (৩৮) করেন।
পরদিনও মির্জা ফখরুলের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা বন্ধ থাকেনি। ভাইরাল একটি ভিডিওর মাধ্যমে সেদিন দাবি করা হয়, ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়েছেন৷ রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে (৩৯) দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত জানুয়ারি মাসে মির্জা ফখরুলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধারণ করা।
২৯ অক্টোবরের হরতালের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী ছিল৷ সেদিন সকাল নাগাদ ফেসবুকে প্রথম আলো ও কালবেলা’র আদলে তৈরি ভিন্ন দুই ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হয়, নিরাপত্তা বা হরতালজনিত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডক্টর এম মাকসুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে (৪০) বলেন, ‘সমাবর্তন চলমান, স্থগিত হয়নি।’
২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘিরে রিউমর স্ক্যানার ৪০ টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে দুইটি বিষয়ে (১, ২) গণমাধ্যমেও ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর বাইরে সিংহভাগ ভুল তথ্যই ফেসবুকের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কাছে ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে গণমাধ্যমকেই। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখছি, ৪০ টি বিষয়ের মধ্যে ২৫ টিতেই ভুল তথ্য ছড়াতে একাধিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমগুলোর আদলে নকল ফটোকার্ড, গণমাধ্যমের নাম, লোগো এবং ওয়েবসাইটে প্রায় সংবাদের শিরোনাম বদলে দিয়ে ভুল তথ্যগুলোকে সত্য হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে কালবেলা’কে (১১)৷ এছাড়া প্রথম আলোকে জড়িয়ে ১০ টি, মানবজমিনকে জড়িয়ে ০৩ টি, ডেইলি স্টার, সময় টিভি, একাত্তর টিভিকে জড়িয়ে ০২ টি করে এবং চ্যানেল আই, যমুনা টিভি, ইত্তেফাক, ঢাকা পোস্ট, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং জাগোনিউজ২৪ কে জড়িয়ে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
গণমাধ্যম ছাড়াও এবার ভুল তথ্য ছড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে নকল প্রেস বিজ্ঞপ্তিকেও। বিএনপির আদলেই এমন তিনটি নকল প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে, যা দলটি প্রকাশই করেনি। এছাড়া, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নামে একটি করে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের আগে-পরের ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি গুজব ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (২৩ টি), যা মোট ভুলের ৫৭ শতাংশ। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে ০৮ টি, যা শতকরা হিসেবে ২১ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে ০৯ টি।
তাছাড়া, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনকে জড়িয়ে ২৯ টি ভুল তথ্য, আওয়ামী লীগ ও এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে জড়িয়ে ০৫ টি ভুল তথ্য, জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে জড়িয়ে ০৩ টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও সাংবাদিকদের বিষয়ে ০৫ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশময় একটি দিনে রাজনৈতিক ময়দানে ঘটনা প্রবাহের সাথে ঠিক কীভাবে এবং কত উপায়ে সময়ে সময়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ভুল তথ্যের প্রচার এবং প্রসার হয় তার একটি বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকলো।