চটকদার থাম্বনেইলে সেনাবাহিনীর হাতে আওয়ামী লীগ ১৩ নেতা বা মন্ত্রী আটক হওয়ার ভুয়া খবর

গত ১০ সেপ্টেম্বর “দেশ ছাড়লো প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগের ১৩,জন নেতাকে গ্রেফতার করলো সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনাম এবং প্রায় একই দাবি সম্বলিত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

আওয়ামী লীগ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি গোপনে দেশ ছাড়া এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৩ জন আওয়ামী লীগ নেতা বা মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ প্রযুক্তির সাহায্য যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। 

৯ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক আলোচিত দাবিটির উদ্দেশ্যে দুটি ভিডিও ক্লিপ দেখান।

ভিডিওগুলো দেখানোর আগে আলোচিত ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক বলেন, ‘নতুন করে আবারও আলোচনায় পুলিশ। আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি মেইন মেইন দায়িত্বশীল দেশের বাহিরে গিয়েছে। অন্যদিকে এই সুযোগে পুলিশ ছাত্রলীগকে গ্রেফতার করে থানার মধ্যে নিয়ে কঠিন থেকে কঠিন নির্যাতন এমনকি দাঁত ফেলে দিচ্ছে প্লাস দিয়ে। তো কঠিন এক অবস্থা হয়েছে। অনেকেই এই বিষয়টা বলতেছে আগামী নির্বাচন কে কেন্দ্র করেই নাকি পরিবর্তন হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ প্রধান যিনি মূলত তারও কিন্তু চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিচ্ছে যে পুলিশের পক্ষে পুলিশ পুলিশের মতনই থাকবে। সর্বপ্রথম থানার মধ্যে ছাত্রলীগের যে কাহিনীটা ঘটেছে সেটা দেখাবো।’

পরবর্তীতে প্রথম ভিডিও ক্লিপটিতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ১১ সেপ্টেম্বর ‘1A News’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক পেটালো রমনা থানার এডিসি হারুন রহস্য কি?” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর সঙ্গে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা প্রথম ভিডিও ক্লিপটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওতে বলা হয়, ‘দর্শক মধ্যরাতের দারুণ খবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পেটালেন এডিসি হারুন আপনারা জানেন এডিসি হারুন তিনি রমনা বিভাগের এডিসি হারুন এবং এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে বিএনপি,জামায়াত,ছাত্রলীগ পরিষদ সহ যারা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাদেরকে নির্দয়ভাবে পেটান। এবং সর্বশেষ তিনি সুপ্রিমকোর্টের ভেতর সাংবাদিকদের চরমভাবে পিটিয়েছে। এবং এতকাল তিনি পেটালেও ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ দাঁত কেলিয়ে হাসত কিন্তু এবার তিনি ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে এমনভাবে পিটিয়েছেন দর্শক দেখার মতো না….।’

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানে গত ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পেটালেন এডিসি হারুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় ধরে নিয়ে বেদম পিটিয়েছেন পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদ। দুইজন হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

উক্ত প্রতিবেদনে থাকা তথ্যগুলো প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিওটির ২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড থেকে হুবহু পাঠ করা হয়। কিন্তু প্রচারিত ভিডিওটিতে কিংবা উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দেশ ছাড়া সহ ১৩ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার বিষয়ক কথা উল্লেখ ছিলো না। 

অনুরূপভাবে আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ক্লিপটির উৎস অনুসন্ধানে নয়া দুর্বার নামক একটি ফেসবুক পেজে “আন্দোলনরত ১৩ জন গ্রেফতার” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ক্লিপটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

ভিডিওটিতে বলা হয়,’আপনারা জানেন যে কার্যক্রম টা আমরা চালাচ্ছিলাম এর ধারাবাহিকতায় আমরা একটা র‍্যালি নিয়ে বের হয়েছিলাম। এবং এই র‍্যালিটা যখন শাহবাগ থানার সামনে যায় তখন শাহবাগ থানার যারা পুলিশ ভাইবোনেরা ছিলেন তারা আমাদের উপর বেধড়ক মারধর করেন…।’ অর্থাৎ, উক্ত বক্তব্যকে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video comparison by Rumor Scanner 

মূলত, সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দীন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃথক দুই দেশে রাষ্ট্রীয় সফরকে কেন্দ্র করে ‘B tv news 24’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেশ ছাড়লো প্রধামন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৩ জন আওয়ামী লীগ  নেতা বা মন্ত্রীকে গ্রেফতার শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়,দাবিটি সঠিক নয়। আদতে ১৩ জন আওয়ামী লীগ নেতা বা মন্ত্রীকে গ্রেফতারের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ৪৩তম ‘আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন’ এবং ১৮তম ‘পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে’ যোগ দিতে ০৪ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ১৩ দিনের সফর শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে নয়াদিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গত ০৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যান শেখ হাসিনা এবং ১০ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন

সুতরাং, সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৩ জন আওয়ামী লীগ নেতা বা মন্ত্রীকে গ্রেফতার দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img