২০২৩: শেষ ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোতে ভুল সংবাদ প্রচারের হার কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ

২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে গণমাধ্যমে প্রচারিত ১১৮ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, একই বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় শেষ ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোতে ভুল সংবাদ প্রচারের হার প্রায় ৩৪ শতাংশ কমেছে।

পরিসংখ্যান কী বলছে?

রিউমর স্ক্যানার টিম উক্ত ছয় মাসের তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানে দেশের ২০৫ টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো যাচাই করেছে। এই সংবাদমাধ্যমগুলোতে সর্বোচ্চ ৩৩ টি থেকে সর্বনিম্ন শূণ্য ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে। 

পরিসংখ্যানে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচারের দরুণ প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই গণমাধ্যম ‘সময় টিভি ও কালবেলা’। ভুল তথ্য ছিল এমন শনাক্ত হওয়া ১১৮ টি প্রতিবেদনের মধ্যে ৩৩ টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মূলধারার এই দুই সংবাদমাধ্যম। ক্ষেত্র বিবেচনায় শুধু টেলিভিশনের তালিকাতেও ‘সময় টিভি’ই প্রথম। পত্রিকার তালিকাতেও সমান সংখ্যা ভুলে একই অবস্থানে রয়েছে ‘কালবেলা’। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তালিকায় শীর্ষ স্থানে এসেছে ‘ঢাকা পোস্ট’ ও ‘ডেইলি বাংলাদেশ’। গণমাধ্যমে গেল বছরের শেষ ছয় মাসের মধ্যে আগস্টে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে। পরিসংখ্যানে বেসরকারি গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভুল সংবাদ প্রচারের তালিকায় যেমন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও রয়েছে তেমনি বাদ যায়নি বিদেশি গণমাধ্যমগুলোও। 

আগস্ট মাসে ভুল তথ্য বেশি

গণমাধ্যমে গেল বছরের শেষ ছয় মাসে শনাক্তকৃত ১১৮ টি প্রতিবেদনে ভুলের  মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ টি ভুল তথ্য (২২ শতাংশ) শনাক্ত হয়েছে আগস্ট মাসে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা একই, ২৪ টি (২০ শতাংশ)। তবে শেষ তিন মাসে ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা কমতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।  

শেষ ছয় মাসের সর্বমোট ১৮৪ দিনে ১১৮ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রথম ছয় মাসের তুলনায় অবশ্য এই সংখ্যা কমেছে। গেল বছরের জানুয়ারি থেকে জুন অবধি প্রথম ছয় মাসে ১৭৯ টি ভুল সংবাদ প্রচার করেছিল গণমাধ্যমগুলো। 

মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর সংবাদের ছড়াছড়ি  

২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) মোট ১১৮ টি ঘটনায় ৬০ টি বিভ্রান্তিকর ৫৭ টি মিথ্যা এবং ০১ টি বিকৃত তথ্যকে সত্য তথ্য হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১১৮ টি ঘটনায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের হার ছিল ৫১ শতাংশ। তাছাড়া, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর হার প্রায় ৪৮ শতাংশ। 

সময় টিভি ও কালবেলা যৌথভাবে প্রথম যেভাবে

গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের এই পরিসংখ্যানে গেল বছরের শেষ ছয় মাসের তথ্য বলছে, তালিকায় যৌথভাবে প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের অন্যতম ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘সময় টিভি’ এবং মূলধারার জাতীয় দৈনিক ‘কালবেলা’। সংবাদমাধ্যম দুটির ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৩ টি ভুল সংবাদ প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সময় টিভি সবচেয়ে বেশি ১৪ টি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে, শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৪২ শতাংশ। রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন বিষয়ে সমান সংখ্যক (৪টি) ভুল সংবাদ প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এছাড়া, জাতীয় বিষয়ে ০৩ টি, শিক্ষা বিষয়ক ০২ টি এবং ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ও ধর্মীয় বিষয়ে ০১ টি করে ভুল সংবাদ প্রচার করেছে সময়।

ক্যাটাগরি বা বিষয়ের বাইরে ধরণভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় সময় টিভির সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (২৪), যা গণমাধ্যমটির মোট ভুলের প্রায় ৭৩ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে ‘সময় টিভি’ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ৮ টি, যা মোট ভুলের ২৪ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রকাশের হার ৩ শতাংশ। 

‘কালবেলা’ও সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক বিষয়েই (১০ টি), শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া খেলাধুলা বিষয়ে ০৬ টি, জাতীয় বিষয়ে ০৫ টি, শিক্ষা বিষয়ক ০৪ টি, রাজনীতি এবং বিনোদন বিষয়ে সমান সংখ্যক ০৩ টি ও ধর্মীয় বিষয়ে ০২ টি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে মূলধারার এই গণমাধ্যম।

ক্যাটাগরি বা বিষয়ের বাইরে ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় কালবেলার সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (২৬), যা সংবাদমাধ্যমটির মোট ভুলের প্রায় ৭৯ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে ‘কালবেলা’ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ৭ টি, যা তাদের মোট ভুলের প্রায় ২১ শতাংশ।  

কোন মাধ্যমে বেশি ভুল তথ্য? 

রিউমর স্ক্যানার কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদভিত্তিক এই পরিসংখ্যান প্রকাশের ক্ষেত্রে তিন ক্ষেত্রের সংবাদমাধ্যমের সংবাদগুলো যাচাই করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে পত্রিকা, টেলিভিশন এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম। যদিও এই তিন ধরণের মাধ্যমেরই ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর তথ্যই যাচাই করা হয়েছে।  

ক্ষেত্র বিবেচনায় পত্রিকার তালিকায় ৩৩ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ‘কালবেলা’। পরের অবস্থানে ইনকিলাব, যাদের ভুল সংবাদের সংখ্যা ২২ টি৷ ২১ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে তৃতীয় অবস্থানে ইত্তেফাক। পরের অবস্থানে রয়েছে নয়া দিগন্ত (২০ টি)। পঞ্চম অবস্থানে ভাগ বসিয়েছে চারটি পত্রিকা – প্রথম আলো, আজকের পত্রিকা, সমকাল, মানবকণ্ঠ, যাদের ভুলের সংখ্যা ১৭ টি। 

একইভাবে ভুল সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে সময় টিভি (৩৩ টি)। পরের অবস্থানে দেখা যাচ্ছে ‘চ্যানেল২৪’কে (৩০ টি)। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে একাত্তর টিভি, যাদের ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ২১ টি। ১৮ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে যৌথভাবে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যমুনা টিভি, চ্যানেল আই, বাংলাভিশন। নিউজ২৪ এবং আরটিভি আছে পঞ্চম অবস্থানে, যাদের ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ১৭ টি।

অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ঢাকা পোস্ট এবং ডেইলি বাংলাদেশ (২৪ টি)। পরের চার অবস্থানে যথাক্রমে রয়েছে জুম বাংলা (২২ টি), নিউজজি২৪ (২০ টি), বাংলাদেশ জার্নাল (১৯ টি) এবং আমাদের সময়.কম (১৮ টি)।

২০২৩
Banner: Rumor Scanner 

এই ব্যানারটি ডাউনলোড করুন এখানে।

কোন ক্যাটাগরিতে বেশি ভুল?  

গণমাধ্যমগুলো চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রচারিত ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে (৪৪ টি), শতকরার হিসেবে যা প্রায় ৩৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৮ টি) খেলাধুলা বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। জাতীয় ও রাজনীতি বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১৩ টি, যা তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ। এর বাইরে শিক্ষা ও বিনোদন বিষয়ে ১০ টি করে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ০৫ টি ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। ধর্মীয় ০২ টি বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

নির্বাচনের এই বছরে শেষ ছয় মাসে নির্বাচন কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারের হার বাড়ার শঙ্কা ছিল। সে শঙ্কা সত্য প্রমাণ করে এ বিষয়ে ০৮ টি (, , , , , , , ) ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে, যা প্রথম ছয় মাসে ছিল মাত্র একটি। 

কী ধরনের ভুল বেশি?  

ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোয় সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (৭৩ টি), যা মোট ভুলের প্রায় সাড়ে ৬২ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ৩৭ টি, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৩১ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে ০৮ টি।  

কোন খবরে বেশি ভুল? 

গেল বছরের শেষ ছয় মাসে একাধিক বিষয়েই অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত ২২ আগস্ট (২০২৩) জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হেনরি ওলোঙ্গা একটি টুইট বার্তায় জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার ও বাংলাদেশের সাবেক পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর জানান। পরবর্তীতে তার এই টুইটের বরাতে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম সূত্রে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরবর্তীতে হেনরি ওলোঙ্গাই আবার ২৩ আগস্ট আরেকটি টুইটে জানান, হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর তথ্যটি গুজব, তিনি বেঁচে আছেন। পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানেও দেখা যায়, হিথ স্ট্রিকের পরিবারই তার মৃত্যুর দাবিটিকে গুজব আখ্যায়িত করে তার জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রিউমর স্ক্যানারের এ সংক্রান্ত প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে দেশের ১১৪ টি গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বেশি গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করেছে এমন তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে  বঙ্গবন্ধু টানেল বিষয়ক একটি ফ্যাক্টচেক। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেলের ছবি দাবি করে ভুল তথ্য প্রচার করেছে ৯৭ টি সংবাদমাধ্যম। তবে আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, বসনিয়ার ২০১৪ সালে চালু হওয়া একটি টানেলের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ক্রমিকফ্যাক্টচেকভুল তথ্য প্রদানকৃত গণমাধ্যম সংখ্যা 
০১হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর গুজবে সয়লাব দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম১১৪
০২বসনিয়ার ছবিকে বঙ্গবন্ধু টানেলের ছবি দাবি গণমাধ্যমে৯৭
০৩ইরাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুনে বর-কনে মারা যাওয়ার ভুল তথ্য গণমাধ্যমে৯৩
০৪সাঈদীর সাজা সংক্রান্ত তারিখ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক ভুল তথ্য ৭৭
০৫চট্টগ্রামে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণী দাবিতে গণমাধ্যমে একাধিক জীবিত তরুণীর ছবি প্রচার৭৫

তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা ফ্যাক্টচেকটি ভিনদেশের একটি বিয়ের বিষয়ে। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইরাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুন লাগলে সেখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বর ও কনে উভয়ই মারা গেছেন বলে দাবি করে ৯৩ টি গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো যাচাই করে সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার। উক্ত ঘটনায় তারা আহত হলেও জীবিত রয়েছেন। 

মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত বছরের ১৪ আগস্ট মারা যান। এরপর তার সাজার তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর সাঈদীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। অধিকাংশ গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেন। এ সকল দাবিতে সংবাদ প্রচার করেছে এমন গণমাধ্যমের সংখ্যা ৭৭ টি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। তবে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এই সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি এই তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। 

তালিকার পঞ্চম অবস্থানে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক একটি ফ্যাক্টচেক। ২০ আগস্ট চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন তরুণ এবং অপরজন তরুণী। এ বিষয়ে জাতীয় এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মৃত তরুণের সাথে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। একইসাথে নিহত দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে। দেশের ৭৫ টি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মৃত তরুণী নাহিন সুলতানার ছবি দাবিতে যে ছয়টি ছবি প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি ছবি ভিন্ন তিন তরুণীর। তাছাড়া, নাহিনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি সিটি কলেজের নাম প্রচার করা হলেও তিনি মূলত চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন দেখুন এখানে। 

কোন ইস্যুতে বেশি ভুল? 

গেল বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলা কেন্দ্র করে শুরু হয় ইসরায়েল-হামাস সংঘাত যা এখনও চলছে। এ বিষয়ে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। রিউমর স্ক্যানার টিম এই সংঘাত শুরুর পর থেকেই গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরগুলোয় নজরে রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা কেন্দ্রিক সর্বমোট ১০ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করা হয়েছে। ফ্যাক্টচেকগুলো দেখুন , , , , , , , , , ১০। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একক কোনো ঘটনা বিবেচনায় এই সংঘাত কেন্দ্রিকই সর্বোচ্চ ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো। 

কার বিষয়ে বেশি ভুল? 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হয়ে আসছেন। তবে খবরের পাশাপাশি তার বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারেও পিছিয়ে ছিল না গণমাধ্যম। শেখ হাসিনার বিষয়ে ভুল তথ্যের প্রচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাপিয়ে গণমাধ্যমে চলে এসেছে। রিউমর স্ক্যানারের গত বছরের শেষ ছয় মাসের গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, একক কোনো ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনার বিষয়েই সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে, সংখ্যার হিসেবে যা তিনে গিয়ে ঠেকেছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন , ,

ব্যক্তি কেন্দ্রিক এই সংখ্যার বাইরে স্থাপনা কেন্দ্রিক ভুলেও চারটি ভুল তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রচারিত হয়েছে চট্টগ্রামে গেল বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন হওয়া দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেলের বিষয়ে। টানেলটির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ শনাক্ত করে প্রকাশিত রিউমর স্ক্যানারের চারটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন , , , ৪।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)’ এর ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট থাকলেও এসব প্লাটফর্মে গেল বছরের শেষ ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার। তবে রাষ্ট্রীয় আরেক সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’ এর ওয়েবসাইটে শেষ ছয় মাসে নয়টি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। সেসব সংবাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন , , , , , , , , ৯। 

প্রচারিত ভুল সংবাদগুলোর মধ্যে ০৬ টি ছিল ছবি কেন্দ্রিক ভুল, ০৩ টি ছিল তথ্য কেন্দ্রিক ভুল।

বিদেশি গণমাধ্যমগুলোও বাদ যায়নি

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা এবং ডয়চে ভেলে বাংলা’র ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে একটি করে এবং ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র ওয়েবসাইটে চারটি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

গত বছরের ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনায় ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত খবরটি প্রচার করতে গিয়ে ‘বিবিসি বাংলা’ তাদের প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে সঠিক তথ্য উল্লেখ করলেও সংবাদের শিরোনামে ৭ হাজার মানুষের স্থলে ৭ হাজার মামলা বলে উল্লেখ করে। যার ফলে ৭ হাজার মামলা দাবিতে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে৷ 

অন্যদিকে, ‘ডয়চে ভেলে বাংলা’র ওয়েবসাইটে গত আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হিথ স্ট্রিক মারা গেছেন যা সঠিক নয়৷ দেশের একাধিক গণমাধ্যমের সাথে জার্মান ভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমও এ বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করেছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে৷

গত বছরের জুলাইতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং বন্যার ঘটনায় ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুইটি প্রতিবেদনে দুইটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ছবিগুলো ভারতের সেসময়ের বন্যার ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে ভারতের এই ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

‘ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। জুলাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো ভারতের জুলাইয়ের বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়। 

Collage: Logo of the three International media

এছাড়া, গত বছরের ০৮ আগস্ট ‘ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র ওয়েবসাইটে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ আবরার হত্যা মামলায় আশিকুল ইসলাম বিটুকে আসামী দাবি করে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আবরারের বাবার মামলা ও পুলিশের দাখিলকৃত চার্জশিটে আসামি হিসেবে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম নেই।

এর বাইরে ‘২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ’ শীর্ষক দাবিতে সংবাদমাধ্যমটি একটি সংবাদ প্রকাশ করে গত বছরের আগস্টে। কিন্তু আপিল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।

অর্থাৎ, দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি এই দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি গণমাধ্যমও ভুল সংবাদ প্রচার করেছে।

সার্বিক তালিকায় শীর্ষ দশে যারা

২০২৩ সালের গণমাধ্যমের ভুল সংবাদ প্রচারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই তালিকায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে দেশের মূল ধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘সময় টিভি’। ৭১ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে গণমাধ্যমটি এই স্থানে এসেছে। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে তাদের ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল ৩৮ টি, যা পরের ছয় মাসে পাঁচটি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ এ। একই তালিকায় পরের পাঁচ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ডেইলি বাংলাদেশ (৫৯), চ্যানেল২৪ ও কালবেলা (৫২), ঢাকা পোস্ট (৫০) এবং জুম বাংলা (৪৯)।

তালিকাটি দেখুন এখানে। 

৬৪ গণমাধ্যমে উন্নতির আভাস

রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৩ সালের প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পরিসংখ্যানের অধীনে থাকা ২০৫ টি গণমাধ্যমের মধ্যে ৬৪ টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরের ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস পেয়েছে। উন্নতির এই তালিকায় সবার উপরে শতভাগ হ্রাসের হার নিয়ে যৌথভাবে রয়েছে ১১ টি সংবাদমাধ্যম। এদের মধ্যে প্রথম ছয় মাসে ‘ক্যাম্পাস লাইভ২৪’ এর সর্বাধিক ০৬ টি ভুল সংবাদ প্রচারের প্রমাণ পেয়েছিল রিউমর স্ক্যানার৷ কিন্তু পরের ছয় মাসে বাকি ১০ টি গণমাধ্যমের সাথে এই গণমাধ্যমেরও ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা শূণ্যে নেমে আসতে দেখা গেছে। এছাড়া, ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভুলের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে নিরাপদ নিউজ, প্রাইম নিউজ, দৈনিক আমাদের সময়, নাগরিক টিভি, আমার সংবাদ, ঢাকা মেইল, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টুডে, ডয়চে ভেলে বাংলা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, প্যাভিলিয়ন এবং সংবাদ সারাবেলা।

তালিকাটি দেখুন এখানে।

প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ দশে ছিল কিন্তু এবার নেই এমন গণমাধ্যমের তালিকায় আছে ঢাকা মেইল, ডিবিসি নিউজ, যুগান্তর, দেশ রূপান্তর, দৈনিক আমাদের সময়, কালের কণ্ঠ, জাগোনিউজ২৪, সংবাদ প্রকাশ, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। এদের মধ্যে ঢাকা মেইলের ৫৬ শতাংশ, ডিবিসি নিউজের ৪৮ শতাংশ, যুগান্তরের ৩৭ শতাংশ, দেশ রূপান্তরের ৩৯ শতাংশ, দৈনিক আমাদের সময়ের ৬৫ শতাংশ, কালের কণ্ঠের ৩৬ শতাংশ, জাগোনিউজ২৪ এর ৩৮ শতাংশ, সংবাদ প্রকাশের ৩০ শতাংশ, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ৫০ শতাংশ হারে ভুল সংবাদ প্রচারের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। 

এছাড়া এবার তালিকার শীর্ষ দশে থাকলেও প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা কমেছে এমন গণমাধ্যম হচ্ছে সময় টিভি, ঢাকা পোস্ট, ডেইলি বাংলাদেশ, ইনকিলাব, জুম বাংলা, যমুনা টিভি, বাংলাভিশন, আমাদের সময়, বাহান্ন নিউজ। 

১২১ গণমাধ্যমে উল্টো চিত্র 

রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৩ সালের প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পরিসংখ্যানের অধীনে থাকা ২০৫ টি গণমাধ্যমের মধ্যে ১২১ টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরের ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অবনমনের এই তালিকায় সবার উপরে ৯০০ শতাংশ হার নিয়ে রয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বহুমাত্রিক’। সংবাদমাধ্যমটি প্রথম ছয় মাসে একটি ভুল সংবাদ প্রচার করলেও পরের ছয় মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশে। 

এছাড়া, ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে সারা বাংলা আজকের দর্পণ, বিজনেস আওয়ার২৪, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইউএনবি, প্রবাসীর দিগন্ত, পদ্মা টাইমস২৪, বাংলাদেশ পোস্ট, অলরাউন্ডার, জনবাণী, বিবিএস বাংলা, পদ্মা নিউজ, ঢাকা রিপোর্ট২৪, খবর সংযোগ, ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা, শেয়ার নিউজ, খবরের কাগজ, জবাবদিহি, মত ও পথ, জয় যুগান্তর, এশিয়ান এজ, সকালের সময়, মোহনা টিভি, আমার বার্তা, স্বাধীন আলো, ডেইলি স্টার, ঢাকা ট্রিবিউন, অনফিল্ড, ডেইলি ক্রিকেট, বাংলাদেশ বুলেটিন, বাংলা টিভি, দি ঢাকা টাইমস, ফেস দ্য পিপল, দৈনিক সরোবর, সানবিডি২৪, সুখবর, এমটি নিউজ২৪, বিজনেস ইনসাইডার, একাত্তর পোস্ট, প্রতিদিনের কাগজ, অধিকার বিডি, বার্তা২৪, এশিয়ান টিভি, ঢাকা টুডে, দূরবীন নিউজ, দেশ টিভি, এটিএন বাংলা, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, টি স্পোর্টস, জিটিভি, গ্লোবাল টিভি, বিডি ক্রিকটাইম, পিবিএ এজেন্সি, বিবার্তা২৪, স্টার গল্প, ভোরের দর্পণ, রেডিও টুডে নিউজ, আগামী নিউজ, সংবাদ প্রতিদিন, ডেইলি মিরর অব বাংলাদেশ, বিএনএ নিউজ২৪, কারেন্ট নিউজ, ডিএমপি নিউজ, ঢাকা জার্নাল, আমাদের নতুন সময়, অধিকার.নিউজ, প্রবাস জার্নাল, গণকন্ঠ এবং বাঙ্গি নিউজ।

তালিকাটি দেখুন এখানে।

প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ দশে ছিল না কিন্তু এবার আছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে প্রথম আলো, আজকের পত্রিকা, কালবেলা, একাত্তর টিভি, নিউজ২৪, সমকাল, আরটিভি, ইত্তেফাক, নয়া দিগন্ত, বাংলাদেশ জার্নাল, চ্যানেল আই, মানবকণ্ঠ, নিউজজি২৪, বাংলা ইনসাইডার, এবিনিউজ২৪, প্রতিদিনের সংবাদ, সাম্প্রতিক দেশকাল। 

এদের মধ্যে আজকের পত্রিকার ৫৪ শতাংশ, কালবেলার ৭৪ শতাংশ, একাত্তর টিভির ১৭ শতাংশ, নিউজ২৪ এর ৩১ শতাংশ, সমকালের ৩১ শতাংশ, আরটিভির ২১ শতাংশ, ইত্তেফাকের ১৭ শতাংশ, নয়া দিগন্তের ১১ শতাংশ, বাংলাদেশ জার্নালের ২৭ শতাংশ, চ্যানেল আইয়ের ১২ শতাংশ, মানবকণ্ঠের ৬ শতাংশ, নিউজজি২৪ এর ৬৭ শতাংশ, বাংলা ইনসাইডারের ৮৯ শতাংশ, এবিনিউজ২৪ এর ৩১ শতাংশ , প্রতিদিনের সংবাদের ৪৫ শতাংশ হারে ভুল সংবাদ প্রচারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাকিদের ক্ষেত্রে (প্রথম আলো, সাম্প্রতিক দেশকাল) হার বৃদ্ধি পায়নি। যেমন, ‘প্রথম আলো’ প্রথম ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচার করেছিল ১৭ টি, শেষ ছয় মাসেও সংখ্যাটা একই। ‘সাম্প্রতিক দেশকাল’ এর ক্ষেত্রে উভয় সময়কালেই সংখ্যাটা ১৬। 

২০ গণমাধ্যমের অবস্থানের পরিবর্তন নেই 

রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৩ সালের প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পরিসংখ্যানের অধীনে থাকা ২০৫ টি গণমাধ্যমের মধ্যে ২০ টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাস এবং শেষ ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়নি। এরা হলো বিবিসি বাংলা (১), প্রথম আলো (১৭), বিজনেস বাংলাদেশ (৪), সাম্প্রতিক দেশকাল (১৬), ফ্রিডম বাংলা নিউজ (৬), আমাদের অর্থনীতি (১), খেলা ৭১ (১), এটিএন নিউজ (২), একুশে সংবাদ (১৪), মাই টিভি (৩), ক্যাম্পাস টাইমস (২), শেয়ার বিজ (২), ভোরের পাতা (২), ঢাকা টাইমস (১১), নতুন সময় (১), দৈনিক গণমুক্তি (১), প্রবাস বাংলা (১), তৃতীয় মাত্রা (২), আমাদের কাগজ (১), বাংলা খবর বিডি (১), তরঙ্গ নিউজ (১)। এসব গণমাধ্যমে প্রথম ছয় মাসে যে পরিমাণ ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল, শেষ ছয় মাসেও একই পরিমাণ ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। 

ভুলের বৃত্ত থেকে বের হওয়া কতটা কঠিন? 

গণমাধ্যমে ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান প্রকাশের উদ্দেশ্য একটাই, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করা। গণমাধ্যম তার আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলুক, এমন প্রত্যাশা আমরা করি না। সেই লক্ষ্যে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক সূত্র থেকে ক্রসচেক করে নেওয়া, প্রয়োজনে মূল সূত্র থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে পারে গণমাধ্যমগুলো। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ঘটনার ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির ব্যবহার করে ছবিটি পুরোনো কিনা সে বিষয়ে সহজেই নিশ্চিত হয়ে নেওয়া সম্ভব (এই পদ্ধতির বিস্তারিত এখানে)। 

তবে কিছু সংবাদের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্রসচেক কিংবা প্রচলিত অনুসন্ধান কাজে দেয় না। এ ধরণের সংবাদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়া একটি সাধারণ বিষয়। বাংলাদেশেও এ বিষয়টির চর্চা শুরু হতে দেখেছি আমরা। দেশের একাধিক গণমাধ্যম তথ্য যাচাইয়ে বিগত সময়ে রিউমর স্ক্যানারের সহায়তা নিয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতারই আশ্বাস দিয়ে থাকে। 

আরও পড়ুন

spot_img