সম্প্রতি, কৃষিবিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরুদ্দোজার মৃত্যুর সংবাদে তাকে ‘কাজী পেয়ারার জনক’ উল্লেখ করে একটি তথ্য গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ইউএনবি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ডেইলি স্টার (বাংলা), ডেইলি স্টার (ইংরেজি), সমকাল, বাংলা ট্রিবিউন, সময় টিভি, ঢাকা পোস্ট, বিডিনিউজ২৪, দেশ রূপান্তর, নিউজ২৪, একাত্তর টিভি, ঢাকা ট্রিবিউন, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সময়ের আলো, বাংলানিউজ২৪, বাংলা ভিশন, দৈনিক ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, এনটিভি, ডিবিসি নিউজ, চ্যানেল আই, চ্যানেল আই (ইউটিউব), আজকের পত্রিকা, আমাদের সময় ডটকম, দৈনিক আমাদের সময়, কালবেলা, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ভোরের কাগজ, ঢাকা মেইল, ডেইলি বাংলাদেশ, রাইজিং বিডি,খোলা কাগজ, নয়া দিগন্ত, সাম্প্রতিক দেশকাল, বাংলাদেশ জার্নাল, নয়া শতাব্দী, আলোকিত বাংলাদেশ, পূর্বপশ্চিমবিডি, এবিনিউজ২৪, নিউজ জি২৪, ২৪লাইভ নিউজপেপার, দ্যা রিপোর্ট (বাংলা), প্রতিদিনের সংবাদ, দৈনিক শিক্ষা, সংবাদ প্রকাশ, আজকের দর্পণ, নাগরিক, নীলফামারী বার্তা, বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক, বায়ান্ন টিভি, ডেইলি মতবাদ, নোয়াখালি সমাচার, বিজ্ঞানচিন্তা, ডেইলি মেসেঞ্জার।
একই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে পরবর্তীতে সংশোধন করে নিয়েছে অনলাইন পোর্টাল জাগোনিউজ২৪।
গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজ সহ অন্যান্য পেজে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধ দেখুন কাজী এম বদরুদ্দোজা
এছাড়া পূর্বেও ড. কাজী এম বদরুদ্দোজাকে কাজী পেয়ারার জনক উল্লেখ করে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন জনকণ্ঠ, যায়যায়দিন, একুশে টিভি।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সদ্যপ্রয়াত কৃষিবিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা কাজী পেয়ারার জনক নন।প্রকৃতপক্ষে কাজী পেয়ারার উদ্ভাবন বা নামকরণের কোনো কিছুর সাথেই তার জড়িত না থাকার বিষয়টি তিনি নিজেই তার জীবদ্দশায় নিশ্চিত করেছিলেন।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বাংলা সংস্করণে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ‘পেয়ারা মানেই এখন কাজী পেয়ারা! কে এই কাজী!‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে ইউটিউবে বিদ্যমান কৃষিবিজ্ঞানী ড.কাজী এম বদরুদ্দোজার একটি সাক্ষাৎকার সূত্রে উল্লেখ করা হয় যে, কাজী পেয়ারা উদ্ভাবন কিংবা নামকরণ কোনো কিছুতেই ড.কাজী এম বদরুদ্দোজার কোনো সম্পর্ক নেই। কাজী পেয়ারার যখন নামকরণ করা হয় তখন তিনি বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট এ চাকরিই করতেন না। সেসময় তিনি অবসর নিয়েছিলেন। কাজী পেয়ারার উদ্ভাবনের পর তার কিছু অনুসারী তার প্রতি ভালোবাসা থেকে এই নামটি দেন।
এই প্রতিবেদনের সূত্রে পরবর্তী অনুসন্ধানে Agriculture 360 নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ‘যেভাবে কাজী পেয়ারা এলো বাংলাদেশে! The popular guava of Bangladesh (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিওতে ড. কাজী এম বদরুদ্দোজার দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়।
সাক্ষাতকারটিতে ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা বলেন, কাজী পেয়ারাকে আমার নামে নামকরণ করা হয়েছে। ওটা আমি করিওনি, যখন এটা আমার নামে নামকরণ করা হয়, তখন ওখানে আমি চাকরিও করতাম না। রিটায়ার্ড করেছি। রিটায়ার্ড করে আমি বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট (বারি) ছেড়ে চলে আসছি। আমি তখন রিটায়ার্ড পারসন। তারপর সেখানে আমার যারা ফলোয়ার ছিল, তারা ভালোবাসা থেকে ঐ পেয়ারাটা যখন নতুন বের হলো, আমার নামে নাম দিলো কাজী পেয়ারা। সেটা আমি দেইনি।’
এছাড়া অনুসন্ধানে বেসরকারি টিভি চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ‘‘কাজী পেয়ারা খ্যাত’ কৃষিবিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজার কথা (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়, কাজী পেয়ারা উদ্ভাবনের পর ড. কাজী এম বদরুদ্দোজার প্রতি ভালোবাসা থেকেই কাজী পেয়ারাকে তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো: আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দের সাথে যোগাযোগ করে।
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, কাজী পেয়ারা বারিতে উদ্ভাবন করে উনার নামে নামকরণ করা হয়েছে। তবে ড. কাজী বদরুদ্দোজা স্যারের অবদান অনেক বেশি। শুধু বাংলাদেশে না। এশিয়া, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়াসহ আন্তর্জাতিকভাবেই উনার অবদান অনেক। শুধু কাজী পেয়ারার জনক বললে উনাকে আসলে ছোট করা হয়।
পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পেয়ারা নিয়ে কাজ করা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম মেজবাহ উদ্দীনের সাথে যোগাযগের পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে ড. এ এস এম মেজবাহ উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আসলে উনি এটা উদ্ভাবন করেন নাই। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন ফল বিভাগ (বর্তমানে উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের ফল বিভাগ) এই কাজী পেয়ারার জাতটা বের করেছে। ড. কাজী বদরুদ্দোজা ছিলেন আমাদের ফাউন্ডার এবং ডিরেক্টর। উনাকে সম্মান করে উনার নাম অনুসারে ঐ সময়ের বিজ্ঞানীরা জাতটার নাম কাজী পেয়ারা নামকরণ করেন।
মূলত, গত ৩০ আগস্ট ( বুধবার) প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষি সংগঠন ও ন্যাশনাল ইমেরিটাস সাইন্টিস্ট ড.কাজী এম বদরুদ্দোজা মারা যান। তার মৃত্যুর সংবাদে তাকে কাজী পেয়ারার জনক উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তথ্য প্রচার করা হয়। তবে এ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড.কাজী এম বদরুদ্দোজা কাজী পেয়ারার জনক ছিলেন না। ১৯৮৪ সালে কাজী পেয়ারার জাতটি আবিষ্কারের পর ড.কাজী এম বদরুদ্দোজার সম্মানার্থে তার নামানুসারে সে সময়ের বিজ্ঞানীরা কাজী পেয়ারার নামকরণ করেন। তিনি নিজেও জীবদ্দশায় এক সাক্ষাতকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
সুতরাং, সদ্য প্রয়াত কৃষিবিজ্ঞানী ড.কাজী এম বদরুদ্দোজা কাজী পেয়ারার জনক দাবিতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Business Standard : পেয়ারা মানেই এখন কাজী পেয়ারা! কে এই কাজী!
- Agriculture 360 : যেভাবে কাজী পেয়ারা এলো বাংলাদেশে! The popular guava of Bangladesh
- Channel24: কাজী পেয়ারা খ্যাত’ কৃষিবিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজার কথা
- Statement of Director (Research), Bangladesh Agricultural Research Institute
- Statement of Principle Scientist, Bangladesh Agricultural Research Institute