৩৭ দিন নয়, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে তিন ঘন্টা আটকে ছিল এই নবজাতক 

গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। চলমান এই সংঘাতের মধ্যেই সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩৭ দিন পর এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রচার করা হয়েছে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে। 

গাজায় ধ্বংসস্তূপের

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ইনডিপেনডেন্ট টিভি, সময় টিভি, কালবেলা, মানবকণ্ঠ, নয়া শতাব্দী, ঢাকা প্রকাশ, বিডি২৪রিপোর্ট, প্রবাস টাইমস।

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজের পোস্টসহ অন্যান্য ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া এই নবজাতক ৩৭ দিন নয় বরং ৩ ঘন্টা আটকে ছিল ধ্বংসস্তূপে।

দেশের গণমাধ্যমগুলোতে এ সংক্রান্ত সংবাদের সূত্র হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত গালফ নিউজের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনামে একই তথ্যই উল্লেখ থাকলেও মূল সংবাদে বলা হয়েছে, সংঘাত শুরুর ৩৭ দিনে এসে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।  

গালফ নিউজ তাদের খবরের সূত্র হিসেবে নুহ আল শাঘনোবি (Nooh Al Shaghnobi) নামে নবজাতকটিকে উদ্ধারের সময় উপস্থিত থাকা একজন সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ফটোগ্রাফারের নাম উল্লেখ করেছে যিনি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করেছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। 

এই তথ্যের সূত্র ধরে ইনস্টাগ্রামে নুহ আল শাঘনোবির অ্যাকাউন্টে গত ২৭ নভেম্বর এই নবজাতক সম্পর্কিত চারটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রথম পোস্টে নবজাতকটিকে উদ্ধারের সময়ের একটি ভিডিও যুক্ত করে তিনি ক্যাপশনে আরবিতে যা লিখেছেন বাংলা ভাষায় তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই শিশুটির বয়স এক মাসেরও কম৷ মা-বাবাকে হারিয়ে সে নতুন জীবন ফিরে পায় যখন তাকে তিন ঘন্টার চেষ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়। 

Screenshot: Instagram 

দ্বিতীয় পোস্টে শাঘনোবি নবজাতকটির সাথে ধারণ করা সকল উদ্ধারকর্মীর ছবি পোস্ট করে একই ক্যাপশন দিয়েছেন। 

Screenshot: Instagram

তৃতীয় আরেক পোস্টে নবজাতকটিকে নিয়ে গাড়িতে করে ফেরার পথের একটি ভিডিও যুক্ত করেছেন তিনি, যাতে একই ক্যাপশনই রয়েছে।  

অর্থাৎ, নবজাতকটির বিষয়ে প্রচারিত খবরের সূত্র হিসেবে নুহ আল শাঘনোবি  নামে যে ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম পোস্টের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই নেই৷ 

এ বিষয়ে আরো জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা’র (Reham Abu Aita) সাথে। রিহামও নিশ্চিত করেছেন যে, সালাম নামের আলোচিত মেয়ে নবজাতকটি তিন ঘন্টা আটকে ছিলেন ধ্বংসস্তুপের নিচে।  

মূলত, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত চলাকালীন গত ২৭ নভেম্বর গাজায় এক নবজাতককে ধ্বংসস্তূপে তিন ঘন্টা আটকে থাকার পর উদ্ধারের খবর জানান স্থানীয় এক উদ্ধারকর্মী। এই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩৭ দিন বেঁচে ছিল নবজাতক, যা সঠিক নয়৷ 

সুতরাং, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে এক নবজাতকের তিন ঘন্টা আটকে থাকার ঘটনাকে গণমাধ্যমে ৩৭ দিন আটকে থাকার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img