ভুল তথ্য, ছবি ও ভিডিও যাচাই করবেন যেভাবে

সারা পৃথিবীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমান্তরালে বেড়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে ভুল তথ্য, ছবি এবং ভিডিও প্রচার। ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ তথা এমআরডিআই কর্তৃক এক প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বে ৫০০ কোটির বেশি মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০০ কোটির ওপরে। প্রতি মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে ৪ কোটির বেশি মেসেজ বিনিময় হয়, ফেসবুকে ২৮০ কোটি ইউজার প্রতি মিনিটে সাড়ে ৫ লাখ মন্তব্য লেখেন, প্রায় ৩ লাখ স্ট্যাটাস দেন আর ছবি আপলোড হয় প্রতি মিনিটে দেড় লাখের মতো। 

পাশাপাশি ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে লাখ লাখ অনলাইন পোর্টাল ও ভুঁইফোড় নিউজ সাইট। এই তথ্যসমুদ্রের মধ্যে কে সত্য তথ্য দিচ্ছেন, কে মিথ্যা বা বানানো তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন, বোঝা খুব কঠিন। যেহেতু ইন্টারনেট হলো তথ্যের ভান্ডার। কিন্তু ইন্টারনেটে পাওয়া সব তথ্য সবসময় সত্য হয়না। এখানে যেমন সত্য তথ্য আছে তেমনি প্রচুর ভুল এবং মিথ্যা তথ্যও রয়েছে। 

Image Source- pixabay

বিভিন্ন মাধ্যমে কত ধরণের ভুলতথ্য ছড়ায়

ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রধানত তিন ধরণের ভুল তথ্য ছড়ায়।

  • তথ্যগত – তথ্য অল্প পরিবর্তন, ভুলভাবে ব্যবহার, অপ্রাসঙ্গিকভাবে ব্যবহার, পুরোপুরি পরিবর্তন করে কিংবা একেবারেই ভিত্তিহীন তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে।
  • ছবির মাধ্যমে – ভিন্ন ঘটনার ছবি, পুরনো ছবি, হুবহু দেখতে একইরকমের ছবি কিংবা এডিটেড ছবির ব্যবহারের মাধ্যমে।
  • ভিডিওর মাধ্যমে – ভিন্ন ঘটনার ভিডিও, পুরনো ভিডিও, একই ধরণের ভিডিও, এডিটেড ভিডিও কিংবা ডিপফেক ভিডিও ব্যবহারের মাধ্যমে। এছাড়াও, অডিওর মাধ্যমেও ভুলতথ্য ছড়াতে পারে।
Image Source- Pixabay

১. ভুলতথ্য কিংবা ভিত্তিহীন তথ্য যাচাইয়ের উপায়

ভুলতথ্য যাচাইয়ের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে তথ্যটি সম্পর্কে গুগলসহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে অথেনটিক সোর্স থেকে সেই তথ্য সম্পর্কে ক্রসচেক করা বা মিলিয়ে নেয়া। তবে সবসময় সাধারণ সার্চে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়না কিংবা কাঙ্খিত ফলাফল পর্যন্ত পৌঁছানো যায়না। সেক্ষেত্রে এডভান্স সার্চ টেকনিক (প্রধানত গুগল এডভান্স সার্চ) টেকনিক ব্যবহার করে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

গুগলে সার্চ করলে গুগল গ্রহণযোগ্য সোর্স থেকেই তথ্য দেখানোর চেষ্টা করে কিন্তু তথ্যের ধরণ কিংবা বিভিন্ন কারণে অগ্রহণযোগ্য সোর্স থেকেও তথ্য দেখানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। তবুও অথেনটিক নয় এমন সোর্স থেকে তথ্য না পেতে চাইলে সোর্সের গ্রহনযোগ্যতাও যাচাই করতে হবে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যাবে।

Image Source- pixabay

গুগল এডভান্স সার্চ

যেকোনো তথ্য খুঁজে পেতে আমরা সবাই সাধারণত গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে থাকি। সার্চের কাজে আমরা গুগল ব্যবহার করলেও অনেকেই জানিনা গুগলে অ্যাডভান্স পদ্ধতিতে সার্চ করা যায়। গুগলের অ্যাডভান্স সার্চ করার আলাদা একটি পেজ রয়েছে। অ্যাডভান্স সার্চ পেজটিতে গিয়ে অ্যাডভান্স পদ্ধতিতে সার্চ করা সম্ভব। পাশাপাশি, বিভিন্ন অপারেটর (গুগল ডর্কিং) ব্যবহার করে মূল পেজ থেকেও অ্যাডভান্স পদ্ধতিতে সার্চ করা যায়।

ফেসবুক এডভান্স সার্চ

বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তথ্য খোঁজার দরকার হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাইমলাইন ও প্রোফাইলের ধরণ অনুযায়ী সার্চ রেজাল্ট দেখানো হয়। তবুও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ সার্চে অনেকটা কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে ফেসবুক ২০১৯ সালে গ্রাফ সার্চ বন্ধ করে দেয়ায় এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি প্রোফাইল ভিত্তিক ফলাফল দেখানোর কারণে ফেসবুকে সার্চ করার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়না। একই সমস্যা ফেসবুকের মালিকানাধীন ইন্সটাগ্রামের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে।

তবুও ফেসবুকে সাধারণ সার্চের থেকে এডভান্স সার্চ পদ্ধতিতে তুলনামূলক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এডভান্স সার্চ পদ্ধতিতে ফেসবুক সার্চ বিভিন্ন ভাবে কাষ্টমাইজড করে নেওয়া যায়। নিম্নে ফেসবুক অ্যাডভান্স সার্চ এর উল্লেখযোগ্য কিছু ফিচার তুলে ধরা হলোঃ

#ফেসবুক সার্চিং এ থাকা ‘Recent Post’ অপশন ব্যবহার করলে সাম্প্রতিক সময়ে আপ্লোড করা পোস্টগুলো সার্চ রেজাল্ট আসবে।

#‘Date Posted’ ব্যবহার করে সাল অনুযায়ী সার্চ করা যায়। অর্থাৎ, ২০২২ সাল সিলেক্ট করলে শুধুমাত্র ২০২২ সালে আপ্লোড করা পোস্টগুলো সার্চে আসবে।

# ‘Tagged Location’ অপশন থেকে নির্দিষ্ট লোকেশন ট্যাগ করে করা পোস্টগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে। 

ফেসবুকে ডিজিটাল ব্যানার বা লেখা সম্বলিত ছবি খুঁজে পাওয়ার উপায়

ফেসবুকে অনেক সময় ডিজিটাল ব্যানার, লেখা সম্বলিত ছবি কিংবা ছবিসহ পোস্ট খুঁজে বের করতে হয়। কিন্তু ডিজিটাল ব্যানারগুলো সার্চ করতে গেলে খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়না। এর অন্যতম কারণ হলো ডিজিটাল ব্যানারগুলো ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ক্যাপশনে পোস্ট করে থাকে। তবে এই সমস্যা সমাধাণের একটি চমৎকার উপায় রয়েছে।

আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা ফেসবুক ছবিতে থাকা যেকোনো লেখা শনাক্ত করতে বা পড়তে পারে। এর ফলে ডিজিটাল ব্যানারে থাকা লেখাগুলোর নির্দিষ্ট কিছু অংশ ফেসবুকে সার্চ করে ‘Photos’ অপশনে গেলে সহজেই তা খুঁজে পাওয়া যায়। নিচে একটি উদাহরণ দেখানো হলোঃ

উপরের ডিজিটাল ব্যানার সম্বলিত ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পেতে ব্যানারটিতে থাকা কিছু শব্দ নিয়ে ফেসবুকে সার্চ করতে হবে। এক্ষেত্রে “সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশ” শব্দগুলো ফেসবুকে সার্চ করা যায়।

দীর্ঘ ক্যাপশনের ক্ষেত্রে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি

সাধারণত একটি তথ্য সম্পর্কে যাচাই করতে গেলে আমরা তথ্যটির একাংশ কিংবা পুরো শিরোনাম দিয়ে সার্চ করি। সার্চ বক্সে টাইপ করা এক একটি শব্দ এক একটি কি-ওয়ার্ড হিসেবে গণ্য হয়।

তবে জানতে চাওয়া তথ্য বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া দীর্ঘ ক্যাপশনের পোস্ট তথা তথ্য সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে যাচাই করার ক্ষেত্রে পুরো ক্যাপশনটি দিয়ে সার্চ করা যাবেনা। ধরা যাক আপনি একটি ১০০০ শব্দের গল্প পেয়েছেন। এখন সার্চ ইঞ্জিনে পুরো গল্পটি দিয়েই সার্চ করা উচিত নয়। এতে বরং সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে কাঙ্খিত ফলাফল দেখাতে পারবেনা। এই সকল ক্ষেত্রে দীর্ঘ ক্যাপশন থেকে কি-ওয়ার্ড বাছাই করতে হবে। 

উদাহরণস্বরূপ, গত ১১ সেপ্টেম্বর রিউমর স্ক্যানার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি তথ্যকে ফ্যাক্টচেকে করে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দাবিটি হলোঃ

দেখা যাচ্ছে দাবির লেখা (ক্যাপশন) অনেক বড়। এত বড় তথ্যটি যদি আমরা ফেসবুকে সার্চ করি তবে সার্চে কোনো রেজাল্ট আসবে না। 

কিন্তু যদি আমরা লেখাটি তথা ক্যাপশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শব্দ কি-ওয়ার্ড হিসেবে ধরে সার্চ করি তবে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যাবে। এখানে কি-ওয়ার্ড হিসেবে ধরা যাক “রক্তযোদ্ধা শুভ নিজেই চলে গেলেন দুনিয়া ছেড়ে”। [নাম, পদবী কিংবা এজাতীয় ইউনিক তথ্য বা শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে]

কোনো তথ্য সম্পর্কে গণমাধ্যমে বা সংবাদমাধ্যমে কী উল্লেখ আছে তা জানার পদ্ধতি

কোনো তথ্য সম্পর্কে কি-ওয়ার্ড দিয়ে গুগলে সার্চ করে ক্যাটাগরি থেকে “News” এ ক্লিক করলে সেই তথ্য সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। গণমাধ্যম থেকে পুরো প্রতিবেদন পড়ে কাঙ্খিত তথ্যের সাথে মিলিয়ে নিতে হবে।

২. ছবি যাচাইয়ের উপায়

দুটি উপায়ে ছবির তথ্য যাচাই বা ভিন্ন ঘটনার ছবি, পুরনো ছবি, হুবহু দেখতে একইরকমের ছবি কিংবা এডিটেড ছবি কিনা তা যাচাই করা যায়। 

  • প্রথমত, রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে।
  • দ্বিতীয়ত, ছবির মেটাডেটা থেকে। এছাড়াও কোনো স্থানের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবি যাচাইয়ে গুগল স্ট্রিট ভিউ, গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা যায়।
Image Source- istockphoto 

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি

তথ্যের মত করে ছবি দিয়েও ছবি সার্চ করা যায়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় “রিভার্স ইমেজ সার্চ”। সার্চ ইঞ্জিনে ছবি দিয়ে সেই ছবির তথ্য খোঁজ করাকেই রিভার্স ইমেজ সার্চ বলা হয়। ছবিসংযুক্ত কোনো তথ্য যাচাইয়ে ইমেজ সার্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ইমেজ সার্চের অপশন রয়েছে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় বা বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ইমেজ সার্চ ইঞ্জিন হলোঃ

নিম্নে উল্লিখিত প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে ইমেজ সার্চ করার পদ্ধতি দেখানো হলোঃ

Google Image Search

https://images.google.com/ সাইটে প্রবেশ করুন

মার্ক করা ক্যামেরা আইকনে ক্লিক করুন

upload a file’ অপশোনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন

ফাইন্ড ইমেজ সোর্স এ ক্লিক করুন

সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

Yandex Image Search

https://yandex.eu/images/ সাইটে প্রবেশ করুন

ক্যামেরার লেন্সের মত দেখতে আইকনে ক্লিক করুন

‘Select File’ অপশনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন

সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

Bing Image Search

https://www.bing.com/images/feed সাইটে প্রবেশ করুন

ক্যামেরার লেন্সের মত দেখতে আইকনে ক্লিক করুন

 ‘Browse’ অপশনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন

সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

Tineye

https://tineye.com/ সাইটে প্রবেশ করুন

‘Upload’ অপশনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন

সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

উপরে দেখানো প্রতিটি স্টেপ ডেস্কটপ থেকে দেখানো হয়েছে। অ্যান্ড্রোয়েড ফোনে ‘Reverse Image Search – Multi’ বা “Revers Image Search Tool” নামের অ্যাপের সাহায্যে Google, Yandex & Bing সার্চ ইঞ্জিনে ইমেজ সার্চ করা যাবে।  

Image Source- istockphoto

মেটাডেটা

যে কোনো মূল ছবির সাথে ছবিটির মেটাডেটা যুক্ত থাকে। ছবির মেটাডেটা হলো ছবিটি সম্পর্কে তথ্য। অর্থাৎ; ছবিটি কখন, কোন ডিভাইস দিয়ে, কোন মডেলের ডিভাইস দিয়ে এবং ক্ষেত্র বিশেষে ছবিটি কে তুলেছেন, কখন তুলেছেন, কোন জায়গা থেকে ছবিটি তোলা ইত্যাদি তথ্যসহ আরও নানাবিধ তথ্য পাওয়া যায় মেটাডাটা থেকে। মেটাডেটা থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে ক্রসচেক করে মিলিয়ে দেখতে হবে।

[এখানে উল্লেখ্য যে মেটাডেটা পেতে হলে মূল ছবিটি (র’ ফাইল) প্রয়োজন হয়। সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ডাউনলোডকৃত ছবিতে মেটাডেটা থাকেনা অথবা পরিবর্তিত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।]

গুগল ম্যাপস আমরা অনেকেই দৈনিন্দিন ব্যবহার করে থাকি। তবে এই গুগল ম্যাপস ছবি যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গুগল ম্যাপস এ থাকা ‘Street View’ অপশন ব্যবহার করে কোনো লোকেশন সম্পর্কে জানা যেতে পারে। রিউমর স্ক্যানারের একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদনে গুগল ম্যাপসের ব্যবহার দেখলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। এমন একটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন দেখুনঃ ব্রাজিলে আযান দেওয়া নিষিদ্ধ এবং আর্জেন্টিনায় প্রকাশ্যে আল্লাহর নাম নিতে না পারার দাবিটি মিথ্যা

৩. ভিডিও যাচাইয়ের উপায়

প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনে আলাদা করে ইমেজ সার্চের অপশন থাকলেও ভিডিও সার্চ করার কোনো অপশন নেই। তবে এই প্রযুক্তিটিও ধীরে ধীরে ডেভলপ করা হচ্ছে। ভিডিও সার্চ করার জন্য ভিডিও থেকে স্থিরচিত্র বা স্ক্রিনশট নিয়ে তা রিভার্স ইমেজ সার্চ করতে হয়। এছাড়া, ডেস্কটপের ওয়েব ব্রাউজারের জন্য ‘Invid’ নামের একটি (এক্সটেনশন) টুলস রয়েছে যার সাহায্যেও ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম বা স্থিরচিত্র জেনারেট করে ইমেজ সার্চ করা যায়।

টুলসটির কি-ফ্রেম সেকশনে সরাসরি ভিডিওটি আপ্লোড করে অথবা ভিডিওর অনলাইন এক্সেসযোগ্য লিংক দ্বারা কি-ফ্রেম জেনারেট করা যায়। তারপর প্রতিটি কি-ফ্রেম বা স্ত্রিরচিত্রকে এই টুলসটির মাধ্যমেই বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা রিভার্স ইমেজ সার্চ করা যায়।

উল্লেখ্য, ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত ফলাফল দেখাবে। সেসকল ফলাফল থেকে নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে গ্রহণযোগ্য সোর্স নির্বাচন করতে হবে।

পাশাপাশি, ভিডিও থেকে বিভিন্ন ক্লু (কোনো বিল্ডিং, রাস্তার সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, গাড়ির নম্বর প্লেট, অবকাঠামো এবং তার সাইনবোর্ড) ইত্যাদি থেকে তথ্য নিয়ে ধাপে ধাপে রিসার্চ করতে হবে। ভিডিওর সাউণ্ড বা অডিও থেকেও সহায়তা নেয়া যেতে পারে।

এছাড়াও কোনো স্থানের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর তথ্য যাচাইয়েও গুগল স্ট্রিট ভিউ, গুগল ম্যাপ কিংবা স্যাটেলাইট তথ্য ব্যবহার করা যায়।

Image Source- pixabay 

সংবাদের তথ্যসূত্র যাচাইয়ের উপায়

  • তথ্যসূত্রটির নাম (ওয়েবসাইটের) ইংরেজিতে অথবা বাংলায় গুগলে সার্চ করুন
  • সাইটে প্রবেশ করে সাইটের সেই কন্টেন্ট এবং অন্যান্য কন্টেন্ট খেয়াল করুন
  • সাইটটি কি সংবাদের তথ্যসূত্র হওয়ার যোগ্য কিনা যাচাই করুন
  • সাইটটি থেকে পূর্বে নেতিবাচক কোনও প্রচার কিংবা পক্ষপাতী তথ্য প্রকাশ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে গুগলে সার্চ করুন
  • সাইটটির ব্যাপারে উইকিপিডিয়াতে কোনও তথ্য আছে কিনা, থাকলে সাইটটি বা প্রতিষ্ঠানটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটাও খেয়াল করুন
  • তথ্যসূত্রের সাইট বা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে অন্যান্য ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠান কি বলছে তা খুঁজুন।
Image Source- pixabay 

ভৌতিক, ভুঁইফোড় বা অগ্রহণযোগ্য সোর্স কিংবা পোর্টাল চেনার উপায়

  • ডোমেইনের নাম তথা ওয়েবসাইটের নামের সাথে পোর্টালের লোগো কিংবা শিরোনামের মিল না থাকলে (ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রেও দ্বৈত ওয়েবসাইট বা নাম থাকলে)
  • অনলাইনে ডোমেইনের মালিকানা তথ্য, ঠিকানা কিংবা দেশের তথ্য গোপন রাখলে
  • সাধারণত অধিকাংশ সংবাদের শিরোনাম উদ্ভট বা আকর্ষণীয় থাকলে, প্রকাশের তারিখ উল্লেখ না থাকলে
  • শিরোনামের লেখার গঠন, অলংকার কিংবা বানানে ভুল পরিলক্ষিত হলে
  • বিস্তারিত অংশের লেখায় গঠনগত ভুল এবং বানান ভুল থাকলে। এছাড়াও বিস্তারিত লেখায় সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বের ছাপ না থাকলে
  • সাইটের লোগো কিংবা স্লোগান না থাকলে সেটা ভৌতিক ওয়েবসাইট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
  • নিউজ সাইটের ডিজাইন অন্ততপক্ষে প্রফেশনাল না হলে। অথবা ফরম্যাট ডিজাইন কিংবা ক্যাটাগরি, মন্তব্য, নিউজ অথর টেমপ্লেট ঠিক না থাকলে
  • লোগো বা স্লোগান অস্পষ্ট কিংবা অন্য ভাষায় কিংবা সিংহভাগ ভুল থাকলে
  • যে সাইটের সংবাদের শিরোনামে অযাচিত স্পেস বা ফাঁকা স্থান থাকে।
  • সাইটের নামের বানান ভুল তথা ভিন্ন বানানের ডোমেইন বা সাইট

এছাড়াও বিদেশি তবে অপরিচিত ও অপেশাদার নিউজ সাইটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দু-চারটি (স্বয়ংক্রিয় সিনক্রোনাইজিং) এর মাধ্যমে অন্য ভাষার (ধরুন থাইল্যান্ডের আঞ্চলিক ভাষার সাইটে মোট তিনটি বাংলা কন্টেন্ট) অধিকাংশ কন্টেন্ট-ই ভুল কিংবা মিথ্যা হয়ে থাকে।

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রধানত তথ্যগত, ছবির মাধ্যমে ও ভিডিওর মাধ্যমে; এই তিন ধরণের ভুল তথ্য ছড়ায়। ভুলতথ্য যাচাইয়ের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে তথ্যটি সম্পর্কে গুগলসহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে অথেনটিক সোর্স থেকে সেই তথ্য সম্পর্কে ক্রসচেক করা বা মিলিয়ে নেয়। তবে সবসময় সাধারণ সার্চে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়না কিংবা কাঙ্খিত ফলাফল পর্যন্ত পৌঁছানো যায়না। সেক্ষেত্রে এডভান্স সার্চ টেকনিক (প্রধানত গুগল এডভান্স সার্চ) টেকনিক ব্যবহার করে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

দুটি উপায়ে ছবির তথ্য যচাই বা ভিন্ন ঘটনার ছবি, পুরনো ছবি, হুবহু দেখতে একইরকমের ছবি কিংবা এডিটেড ছবি কিনা তা যাচাই করা যায়। প্রথমত, রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে। দ্বিতীয়ত, ছবির মেটাডেটা থেকে। ভিডিওর ক্ষেত্রেও ভিডিও থেকে বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভিডিও যাচাই করা যায়। এছাড়াও ভিডিও থেকে বিভিন্ন ক্লু (কোনো বিল্ডিং, রাস্তার সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, গাড়ির নম্বর প্লেট, অবকাঠামো এবং তার সাইনবোর্ড) ইত্যাদি থেকে তথ্য নিয়ে ধাপে ধাপে রিসার্চ করতে হবে। ভিডিওর সাউণ্ড বা অডিও থেকেও সহায়তা নেয় যেতে পারে।

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img