জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে গত ০৭ আগস্ট রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন প্লাটফর্মে দাবি করা হয়, চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ ভিডিও করায় এই সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো (ফেসবুক), কালের কণ্ঠ, চ্যানেল২৪ (ফেসবুক), কালবেলা (ফেসবুক), ইনডিপেনডেন্ট টিভি (ইউটিউব), বিডি২৪রিপোর্ট (ফেসবুক), মানবজমিন (ফেসবুক), যুগান্তর (ফেসবুক), একুশে টিভি (ফেসবুক), বাংলাভিশন (ফেসবুক), নিউজ২৪ (ফেসবুক), ইত্তেফাক (ফেসবুক), দেশ রূপান্তর (ফেসবুক), মাছরাঙা টিভি (ইউটিউব), জাগোনিউজ২৪, সময়ের কণ্ঠস্বর (ফেসবুক), আমাদের সময়, সংবাদ, যায়যায়দিন, মোহনা টিভি (ফেসবুক), ঢাকা টাইমস২৪, প্রতিদিনের কাগজ, আজকালের খবর, অর্থসংবাদ (ফেসবুক), সংবাদ প্রকাশ, দ্য নিউজ, বহুমাত্রিক, এমটিনিউজ২৪, কুমিল্লার কাগজ, আপন দেশ, দ্য রিপোর্ট, জুম বাংলা।
কিছু গণমাধ্যম উক্ত দাবি সংবাা আকারে প্রকাশের পর তা সংশোধন করে নিয়েছে। এসব সংবাদের সংশোধন পূর্ববর্তী আর্কাইভ না পাওয়া গেলেও সার্চ ইঞ্জিনে এখনও সেসব সংবাদের পূর্বের শিরোনাম দেখা যাচ্ছে। এমন তালিকায় আছে সমকাল, আজকের পত্রিকা, ঢাকা ট্রিবিউন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, এনটিভি, ঢাকা মেইল।

এছাড়া, একই দাবির পোস্ট ইনস্টাগ্রামে দেখুন এখানে।
একই দাবির এক্স পোস্ট দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে লাইভের কারণে নয় বরং আরেকজনকে কোপানোর ‘ভিডিও ধারণ করায়’ খুন হন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। তাছাড়া, তার ফেসবুক প্রোফাইল এবং প্রতিদিনের কাগজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফর্মগুলো যাচাই করে তাকে সম্প্রতি চাঁদাবাজি নিয়ে কোনো লাইভও করতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ফুটপাত ও দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে লাইভ করেছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান। তবে গণমাধ্যমটি সেদিন রাতেই এই তথ্যটি সংশোধন করে জানায়, তাঁর প্রোফাইল ঘেঁটে এমন কোনো লাইভের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার। তুহিনের প্রোফাইল ঘেঁটে সাম্প্রতিক সময়ে তাকে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো লাইভ বা ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। তার প্রোফাইলে সর্বশেষ গত ০৭ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় যে ভিডিও পোস্ট করা হয় তার ক্যাপশনে লেখা ছিল, “যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য। গাজীপুর চৌরাস্তা।” সংলাপবিহীন এই ভিডিওতে শুধু রাস্তার দৃশ্যই দেখানো হয়।

পরবর্তীতে তার কর্মস্থল প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার ফেসবুক পেজ ঘেঁটেও সেদিন গাজীপুর থেকে কোনো লাইভ বা ধারণকৃত ভিডিও প্রচারের প্রমাণ মেলেনি। তবে পত্রিকাটির এই পেজে সেদিন ঘটনার পরপরই এক ফেসবুক পোস্টে একই দাবি প্রচার করা হয়। পরদিনের প্রিন্ট সংস্করণেও একই দাবি করে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, “বৃহস্পতিবার বিকেলে চান্দনা চৌরাস্তার ফুটপাত ও দোকানপাট থেকে তুহিন চাঁদাবাজির বিষয়ে লাইভ করেন।”

যদিও একই পত্রিকা পরদিন আরেক প্রতিবেদনে জানায়, আরেকজনকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় খুন করা হয় সাংবাদিক তুহিনকে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল ইসলামের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারীর সঙ্গে বিবাদে জড়ান। এসময় বাদশা মিয়া ওই নারীকে আঘাত করেন। তখন একদল দুর্বৃত্ত নারীর পক্ষ নিয়ে ধারালো চাপাতি হাতে বাদশা মিয়াকে আঘাত করে। এসময় তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। আর এ ঘটনাটি রাস্তার পাশ থেকে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর এক প্রতিবেদনে একই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গণমাধ্যমটি জানায়, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে থেকে তুহিনের সঙ্গেই ছিলেন তার বন্ধু ও দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার মহানগর প্রতিনিধি মো. শামীম হোসেন। ঘটনার পর তিনিই বাসন থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান।
শামীম বলেন, “আমরা এক সঙ্গেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছিল। ওই ব্যক্তি নারীটিকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ব্যক্তিকে আঘাত করে। তখন তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।
“এ সময় সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিলেন। পরে দুর্বৃত্তরা ভিডিও ধারণ করার দৃশ্য দেখে ফেলায় তুহিনকে ধাওয়া দেয়। তুহিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে ফেলে এবং প্রকাশ্যে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।”
সুতরাং, আরেকজনকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনাকে চাঁদাবাজির ঘটনা লাইভ করায় খুনের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- মোঃ আসাদুজ্জামান তুহিন: Facebook Profile
- Bdnews24: আরেকজনকে কোপানোর ‘ভিডিও ধারণ করায়’ খুন হন সাংবাদিক: পুলিশ