বুধবার, অক্টোবর 9, 2024

ব্রাজিলে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ এবং আর্জেন্টিনায় প্রকাশ্যে আল্লাহর নাম নিতে না পারার দাবিটি মিথ্যা

ব্রাজিল এমন একটি দেশ যে দেশে আজান নিষিদ্ধ আর আর্জেন্টিনা এমন একটি দেশ যে দেশে প্রকাশ্যে কেউ আল্লাহর নাম নিতে পারে না” শীর্ষক একটি তথ্য বেশ কিছু সময় যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ব্রাজিলে আজান

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানেএখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানেএখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রাজিলে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ হওয়া এবং আর্জেন্টিনায় আল্লাহর নাম প্রকাশ্যে মুখে নিতে না পারার বিষয়টি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ব্যতীত উক্ত বিষয়টি বেশ কিছু সময় যাবৎ ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

গুজবের সূত্রপাত 

অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের প্রারম্ভে বাংলাদেশের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল দলের সমর্থকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কেন্দ্র করে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কর্তৃক “পৃথিবীর কোন দেশে আজান দেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ ? উত্তরঃ ব্রাজিল” শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে, বিভিন্ন সময়ে এই দাবিটি ফেসবুকে প্রচারিত হতে থাকে।

এছাড়া, ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল পর্বে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা উঠলে ব্রাজিলের আজান দেওয়া নিয়ে প্রচারিত দাবিটি বর্ধিত করে এতে আর্জেন্টিনা সম্পর্কিত নতুন একটি দাবি যুক্ত করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। 

এছাড়া, ২০২২ সালের আসন্ন বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিগুলো বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পুনরায় প্রচার করা হচ্ছে। 

ব্রাজিলে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ দাবিটির সত্যতা যাচাই

অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলের আজান দেওয়া নিষিদ্ধ দাবিটি প্রচার করা হলে, দাবিটিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে ব্রাজিলে বসবাসরত এক বাংলাদেশি প্রবাসী কর্তৃক তৈরি করা একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটিতে একটি মসজিদে আজান দেওয়ার দৃশ্য দেখানো হয় এবং দাবি করা হয় মসজিদটি ব্রাজিলের সাও পাওলো প্রদেশে অবস্থিত ‘Liga da Juventude Islâmica Beneficente do Brasil’ নামের একটি মসজিদ। 

পরবর্তীতে, উক্ত ভিডিওতে দেখানো মসজিদের নামের সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে গুগলে ম্যাপসে  ‘Liga Islamica (Liga da Juventude Islâmica Beneficente do Brasil)’ নামের উক্ত মসজিদটি খুঁজে পাওয়া যায় এবং গুগল ম্যাপসে যুক্ত করা উক্ত মসজিদের ফটকের ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো মসজিদের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া গুগল ম্যাপসের ‘Street View & 360°’ এর সাথেও উক্ত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

ব্রাজিল

তাছাড়া অনুসন্ধানের মাধ্যমে, উল্লিখিত ব্রাজিলের সাও পাওলো প্রদেশে অবস্থিত ‘Liga Islamica (Liga da Juventude Islâmica Beneficente do Brasil)’ নামের উক্ত মসজিদের ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক পেজটিতে গত ১৭ জুন তারিখে করা একটি লাইভ ভিডিওর প্রথম অংশে দেখানো কিছু দৃশ্যেও আজান দিতে দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃ ব্রাজিল দলের অনুশীলনে সতীর্থদের মধ্যের হাতাহাতি  শীর্ষক সংবাদটি মিথ্যা 

সুতরাং,  ২০১৮ সালে ব্রাজিলে বসবাসরত বাংলাদেশির ব্রাজিলের একটি মসজিদে আজান দেওয়া অবস্থায় তৈরি করা ভিডিও, সেই মসজিদের অস্তিত্ব গুগল ম্যাপসে খুঁজে পাওয়া এবং মসজিদটির ফেসবুকে পেজে গত ১৭ জুন করা লাইভে আজান দেওয়ার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় ব্রাজিলের আজান দেওয়া নিষিদ্ধ দাবিতে যে তথ্যটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

আর্জেন্টিনায় প্রকাশ্যে আল্লাহর নাম নিতে না পারার দাবিটির সত্যতা যাচাই

অনুসন্ধানের মাধ্যমে, ‘Televisión Pública’ নামের আর্জেন্টিনার একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটে ‘El cálamo’ নামের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। Televisión Pública এর ওয়েবসাইটে থাকা উক্ত টেলিভিশন অনুষ্ঠানের বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি ‘Islamic Center of the Argentine Republic’ দ্বারা পরিচালিত ইসলাম ধর্ম বিষয়ক একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান। 

পরবর্তীতে, El cálamo নামের উক্ত টেলিভিশন অনুষ্ঠানটির ইউটিউব চ্যানেল খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৬ মে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে কুরআন তিলওয়াত এবং আজান দিতে দেখা যায়। 

সুতরাং, উপরোক্ত প্রমানের ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট যে আর্জেন্টিনায় প্রকাশ্যে আল্লাহ নাম নিতে পারার দাবিতে যে তথ্যটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। কারণ আর্জেন্টিনাতে যদি এমন কোনো বাধ্যবাধকতা থাকতো তবে সেখানে টেলিভিশনে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক লাইভ টেলিকাস্ট‌ করা যেতো না। 

উল্লেখ্য, ‘Pew Research Center’ এর তথ্য মতে ২০১০ সালে আর্জেন্টিনার আনুমানিক মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষাধিক, যা আর্জেন্টিনার মোট জনসংখ্যার ২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ব্রাজিলের আনুমানিক মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষাধিক, যা ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ। 

অর্থাৎ, ব্রাজিলে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ এবং আর্জেন্টিনায় আল্লাহর নাম নেওয়া যায়না দাবিতে যে তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  1. Bangladeshi in Brazil on Facebook – https://www.facebook.com/watch/?v=2066124693709002 
  2. Liga Islamica (Liga da Juventude Islâmica Beneficente do Brasil) on Google Maps – https://www.google.com/maps/place/Liga+Islamica/@-23.5337614,-46.6208813,17z/data=!3m1!4b1!4m5!3m4!1s0x94ce58e58d7f8f75:0x8dd61d12799e01cf!8m2!3d-23.5337928!4d-46.6187429 
  3.  Liga da Juventude Islâmica / Mesquita do Pari on Facebook – https://www.facebook.com/Ligaislamicapari/videos/351018397175180 
  4. Televisión Pública – El cálamo y su mensaje 
  5. ELCALAMO on Youtube – Iftar desayuno Mezquita Al Ahmad, rompemos el ayuno musulmanes en argentina
  6.  Pew Research – Table: Muslim Population by Country 

আরও পড়ুন

spot_img