সম্প্রতি, ‘ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের হামলার মুখে দেশ ছাড়ছেন দেশটির নাগরিকেরা’ শীর্ষক একটি দাবি এবং এ সংক্রান্ত সংবাদে একটি ছবি দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছে।
হামাস আতঙ্কে দেশ ছাড়তে বিমানবন্দরে ইসরায়েলিদের উপচেপড়া ভিড় এবং দেশটির বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর দিয়ে একদিনে ৬০ হাজার ইসরায়েলি নাগরিক দেশ ছেড়েছেন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, আপনজন পত্রিকা, খবর সংযোগ, প্রতিদিনের সংবাদ, নিউজ২৪, বাংলা ইনসাইডার, বাংলা ভিশন, সময় টিভি, বৈশাখী টিভি, ভোরের কাগজ, এশিয়ান টিভি, বাংলা২৪লাইভ নিউজপেপার, গ্লোবাল টিভি, দি ঢাকা টাইমস, এটিএন বাংলা (ইউটিউব), চ্যানেল২৪ (ইউটিউব)।
উক্ত ছবি ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন কালবেলা, ডিবিসি নিউজ, মানবকণ্ঠ, বার্তা২৪, জাগোনিউজ২৪, সংবাদ প্রকাশ, আজকের পত্রিকা, বিডি২৪রিপোর্ট, পিবিএ এজেন্সি, ডেইলি বাংলাদেশ।
উক্ত দাবিগুলোতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাতে হামাস আতঙ্কে ইসরায়েলিদের দেশ ত্যাগের দাবিটি সঠিক নয় বরং ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্যকে ভুলভাবে অনুবাদ করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, এই সংবাদে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটিও ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
হামাস আতঙ্কে ইসরায়েলিরা কি দেশ ছাড়ছেন?
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশীয় গণমাধ্যমের সংবাদের সূত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কালবেলা, ভোরের কাগজ সহ একাধিক গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত দাবির সূত্র হিসেবে ইসরায়েলের দুই সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল ও গ্লোবসের প্রতিবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যম কোনো সূত্রই উল্লেখ করেনি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে গত ০৮ অক্টোবর প্রকাশিত গ্লোবসের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো বীমা কভারেজ সমস্যার কারণে ফ্লাইট বাতিল করছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি বিমান সংস্থাগুলো ইসরায়েলিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ফ্লাইট যুক্ত করেছে। হামাসের দ্বারা ইসরায়েলে আশ্চর্যজনক আক্রমণ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে আগমন এবং প্রস্থানের উপর প্রভাব ফেলেছে, যদিও ইসরায়েল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর এবং ইলাতের কাছে র্যামন বিমানবন্দর উভয়ই অভ্যন্তরীণ এবং বহির্মুখী উভয় ফ্লাইটের জন্য উন্মুক্ত এবং পরিচালনা করছে।”
প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেই বলা হয়, “বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের এক নং টার্মিনালটি সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও তিন নং টার্মিনাল চালু রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ৬০ হাজার যাত্রী সেদিন (০৮ অক্টোবর) বেন গুরিয়ন দিয়ে অতিক্রম করেছেন, যাদের মধ্যে অনেক ইসরায়েলি নাগরিক রয়েছেন, যারা বিদেশে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন এবং বিদেশে অবস্থানরত (ইসরায়েলি) সৈন্যরা তাদের অবস্থানের সময় কমিয়ে দেশে ফিরছেন নিজ নিজ ইউনিটের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য।”
অর্থাৎ, গ্লোবসের প্রতিবেদনে ৬০ হাজার যাত্রীর যে ইসরায়েলি নাগরিক এবং এরা সকলেই দেশ ত্যাগ করেছেন শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ নেই, বরং উল্টো অর্থই দাঁড়াচ্ছে।
একইদিন প্রকাশিত টাইমস অফ ইসরায়েলের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে ইসরায়েলে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন এবং বিদেশে অবস্থানরত ইসরায়েলিরা দেশে ফিরতে বিভিন্ন বিমানবন্দরে জড়ো হচ্ছে।
অর্থাৎ, এই প্রতিবেদনে ইসরায়েলিদের দেশ ত্যাগ বিষয়ক কোনো তথ্য নেই।
পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের (১, ২, ৩) এ সংক্রান্ত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে উক্ত দাবিগুলোর পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রচারিত ছবিটি কি সাম্প্রতিক সময়ের?
আলোচিত সংবাদটিতে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ইসরায়েলি গণমাধ্যম ‘Globes’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন (২৭ মার্চ) ক্ষমতাসীনদের বিচার পদ্ধতির সংশোধন এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়াভ গালান্তকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠন হিস্টাড্রুট এরর প্রধান আর্নন বার ডেভিড জাতীয় নিরাপত্তার প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে একটি সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করেন। যার কারণে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের বিমান বন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকে এবং যাত্রীরা বিমান বন্দরেই অপেক্ষা করতে থাকেন। উক্ত ঘটনারই ছবি এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
মূলত, সম্প্রতি ‘ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের হামলার মুখে দেশ ছাড়ছেন দেশটির নাগরিকেরা’ শীর্ষক একটি দাবি এবং এ সংক্রান্ত সংবাদে একটি ছবি দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ইসরায়েলগামী বিভিন্ন দেশের একাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিদেশে আটকে পড়া ইসরায়েলিরা দেশে ফিরতে না পারায় ইসরায়েলের এয়ারলাইন্সগুলো নতুন ফ্লাইট সংযুক্ত করে ইসরায়েলিদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া, ইসরায়েলের বিমানবন্দরে যারা জড়ো হয়েছেন, এদের অনেকেই পর্যটক হিসেবে দেশে এসেছিলেন এবং ০৮ অক্টোবর একদিনেই এক বিমানবন্দর দিয়েই অন্তত ৬০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করেছেন বলে অনুমান করেছে গ্লোবস নামে দেশটির একটি গণমাধ্যম। এই তথ্যকেই ভুলভাবে অনুবাদ করে দেশীয় গণমাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, এই সংবাদে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটিও ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, হামাস আতঙ্কে ইসরায়েলিদের দেশ ত্যাগের দাবিটি বিভ্রান্তিকর এবং এই সংবাদে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটিও ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
তথ্যসূত্র
- Globes – חברות ההייטק, נתב”ג ומשרדי הממשלה: הרשימה המלאה של הגופים ששובתים כעת
- Globes: Ben Gurion airport stays open as foreign airlines cancel flights
- Times of Israel: Airlines cancel Tel Aviv flights as Israelis abroad scramble for way home
- Rumor Scanner’s own investigation
হালনাগাদ/ Update
১০ অক্টোবর, ২০২৩ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়েও এ সংক্রান্ত আরো একটি দাবি আমাদের নজরে আসায় সেটির বিষয়েও অনুসন্ধানের ফলাফল প্রতিবেদনে সংযোজন করা হলো।