সম্প্রতি, গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় লুকিয়ে রাখা একটি বোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদে আলোচিত ভিডিওটির প্রসঙ্গ এসেছে। দাবি করা হচ্ছে, দখলদারদের ঘায়েল করতে হামাস যোদ্ধাদের নানা কৌশল হিসেবে সীমান্তজুড়ে পুঁতে রাখা বোমা, মাইন ও বিস্ফোরকের ফাঁদে কুপোকাত হচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। এমনই এক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে পুঁতে রাখা হয়েছে ফিলিস্তিনের একটি পতাকা। যা দেখতে পেয়ে পতাকাটি ফেলে দিতে দখলদার এক সেনা এগিয়ে যায় সেটির দিকে। বেশ কিছু সময় পর্যবেক্ষণের পর সেটি তুলে নিয়ে সহকর্মীদের কাছে এগিয়ে যান তিনি। পরে লাঠিসহ পতাকাটি মাটিতে রাখার সাথেই ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়।
গণমাধ্যমগুলোর দাবি, পতাকার স্ট্যান্ডটিই ছিল একটি আস্ত বোমা। অবশ্য সেখানে থাকা পাঁচ সেনাদের সবাই নিহত হয়েছেন কি না তা এখনও জানা যায়নি।
উক্ত ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি, বাংলাদেশ টুডে, সংবাদ প্রকাশ, রিদ্মিক নিউজ।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে গণমাধ্যমসহ ফেসবুকের একাধিক ব্যবহারকারীর প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় লুকানো বোমার বিস্ফোরণে ইসরায়েলি সৈন্য হতাহতের ঘটনাটি চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের নয় বরং ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গাজা সীমান্তে বিস্ফোরণের ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচ্য ভিডিওটির কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ইসরায়েল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Times of Israel এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর “Video emerges of February attack on soldiers along Gaza border” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় লুকানো বোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় রাখা গুপ্ত বোমার বিস্ফোরণে ইসরায়েলি সৈন্য হতাহতের ঘটনা ঘটে। একই বছরের নভেম্বর মাসে লেবাননভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘আল মায়াদ্বীন নেটওয়ার্কে’ ফেব্রুয়ারিতে ঘটা উক্ত বিস্ফোরণের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচারিত হয়।
উক্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাত দিয়ে জানানো হয়, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিস্ফোরণের ঘটনায় চার ইসরায়েলি সৈন্য আহত হয় যাদের মধ্যে দুজন সেনার অবস্থা ছিল গুরুতর।
পরবর্তীতে, টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে লেবাননের আল মায়াদ্বীন নেটওয়ার্কের ইউটিউব চ্যানেলে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর Al Mayadeen Channel – قناة الميادين ইউটিউব চ্যানেলে আপলোডকৃত ২৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত ভিডিও বিশ্লেষণ করে, ৮.৫০ মিনিট থেকে ১০.২ মিনিট অংশে আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচ্য ভিডিওটি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজা সীমান্তে বিস্ফোরণের দৃশ্য।
মূলত, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় রাখা গুপ্ত বোমার বিস্ফোরণে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর চার সদস্য আহত হন। একই বছরের নভেম্বরে উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ লেবাননভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল মায়াদ্বীন চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। উক্ত ভিডিওকেই সম্প্রতি হামাস-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে গাজা সীমান্তের ভিডিও ফুটেজ দাবিতে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও হামাস-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধের ঘটনায় হামাসের বিশ্ব শাসন নিয়ে বাহিনীটির কমান্ডারের বক্তব্যের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় রাখা গুপ্ত বোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিওকে চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Times of Israel: “Video emerges of February attack on soldiers along Gaza border”
- YouTube Channel: Al Mayadeen Channel – قناة الميادين
- Rumor Scanner’s own investigation