গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইরাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুন লাগলে সেখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বর ও কনে উভয়ই মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়েছে গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে।
উক্ত দাবিতে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি, একাত্তর টিভি, প্রথম আলো, কালবেলা, দৈনিক আমাদের সময়, যমুনা টিভি, সমকাল, চ্যানেল২৪, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, আরটিভি, সংবাদ, ডিবিসি নিউজ, বাংলা ট্রিবিউন, ডেইলি অবজারভার, বণিক বার্তা, যুগান্তর, নিউজ২৪, প্রতিদিনের সংবাদ, ইত্তেফাক, দেশ রূপান্তর, মানবজমিন, নয়া দিগন্ত, দৈনিক করতোয়া, আমাদের সময়.কম, নাগরিক টিভি, এটিএন বাংলা, আলোকিত বাংলাদেশ, দৈনিক বাংলা, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, নয়া শতাব্দী, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা প্রকাশ, দৈনিক সংগ্রাম, সাম্প্রতিক দেশকাল, দীপ্ত টিভি (ইউটিউব), বৈশাখী টিভি, একুশে টিভি, আমার বার্তা, রিদ্মিক নিউজ, এশিয়ান টিভি, মোহনা টিভি, রাইজিং বিডি, বাংলা ইনসাইডার, জাগোনিউজ২৪, সকালের সময়, আমাদের বার্তা, ডেইলি মেসেঞ্জার, গ্লোবাল টিভি, বিবিএস বাংলা, মানবকণ্ঠ, জনমত, কালের আলো, প্রতিদিনের কাগজ, অর্থ সংবাদ, বায়ান্ন টিভি, সারা বাংলা, একুশে সংবাদ, নিউজজি২৪, ডেইলি ক্যাম্পাস, বিজনেস বাংলাদেশ, দ্য রিপোর্ট লাইভ, বাংলাদেশ টুডে, দৈনিক ভোরের আকাশ, পূর্ব পশ্চিম বিডি, বাংলাদেশ টাইমস, ঢাকা টাইমস, দৈনিক শিক্ষা, এবিনিউজ২৪, তৃতীয় মাত্রা, আজকালের খবর, বাংলাদেশ বুলেটিন, বিডি২৪রিপোর্ট, বার্তা বাজার, আগামী নিউজ, বিজনেস আওয়ার২৪, জয় যুগান্তর, মত ও পথ, সময়ের কণ্ঠস্বর, সময় জার্নাল, ফ্রিডম বাংলা নিউজ, নিরাপদ নিউজ, জুম বাংলা, এখন সময়, স্টার সংবাদ, বাংলাদেশ মোমেন্টস, বিবার্তা২৪, বার্তা২৪, নিউজনাউ২৪, পদ্মা টাইমস, সোনালী নিউজ, পিবিএ এজেন্সি, বিএনএ নিউজ২৪, সানবিডি২৪, স্বাধীন আলো, সোনার দেশ, অধিকার বিডি, ইনসাফ২৪ ও পার্স টুডে।
একই দাবিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডেইলি স্টার (যুক্তরাজ্য), বিবিসি (যুক্তরাজ্য), এবিসি নিউজ (যুক্তরাষ্ট্র), ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা (ভারত)।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরাকে গত ২৭ সেপ্টেম্বরের বিয়ের অনুষ্ঠানে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে বর ও কনের মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং উক্ত ঘটনায় তারা আহত হলেও জীবিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ঘটনাটিতে বর ও কনের মৃত্যুর খবরের সূত্র হিসেবে স্থানীয় গণমাধ্যম এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়েছে। কিছু গণমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা The Iraqi News Agency (INA) এর বরাতেও সংবাদ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়টিকে সামনে রেখে অনুসন্ধান করে INA এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একাধিক সংবাদ (১,২,৩) যাচাই করে বর ও কনের মারা যাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।
পরবর্তীতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম BBC এর ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টা ৫৪ মিনিটের একটি আর্কাইভ থেকে জানা যাচ্ছে, স্থানীয় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যে, তারা মারা গেছেন।
কিন্তু বিবিসির একই প্রতিবেদনের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ২০ মিনিটের আরেকটি আর্কাইভ থেকে জানা যাচ্ছে, বর ও কনে বেঁচে আছেন। বিবিসি Alsumaria TV নামে ইরাকের একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের ফুটেজ ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যারের সহায়তায় যাচাই করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
বিবিসির প্রতিবেদনের সূত্র ধরে Alsumaria TV এর ওয়েবসাইটে ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ৭ টা ৩৩ মিনিটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ফুটেজটি খুঁজে পাওয়া যায়। ফুটেজটি দিনের বেলায় মারা যাওয়া বরের আত্মীয়দের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের সময় ধারণ করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ আরেক সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একই ঘটনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটার একটি আর্কাইভ থেকে জানা যাচ্ছে, একজন আত্মীয় ইরাকের টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’কে বলেছেন, দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকদের মধ্যে বর ও কনে ছিলেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা ১১ মিনিটের একটি আর্কাইভ থেকেও বর কনের বেঁচে থাকার বিষয়টি জানা যাচ্ছে।
যদিও একই প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২ টা ৬ মিনিটের একটি আর্কাইভে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি। বরং বলা হয়, তাৎক্ষণিক এই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
আমরা বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম CNN এর ওয়েবসাইটে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটার একটি আর্কাইভ থেকে জানতে পারি, বিস্ফোরণস্থলে থাকা অনুষ্ঠানটির একজন অতিথি ইরাকের টেলিভিশন চ্যানেল ‘Alawla Tv’ কে জানিয়েছেন, বর ও কনে ভালো আছেন। তিনি তাদের সাথেই ছিলেন।
আরবভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিসবারও একই সূত্রের বরাত দিয়ে একই তথ্য দিয়েছে।
পরবর্তীতে ফেসবুকে ‘Alawla Tv’ এর ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় ভোর ০৫ টা ১৯ মিনিটে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওর ক্যাপশনেই নিশ্চিত করা হয়, বর ও কনে জীবিত আছেন।
অর্থাৎ, ২৭ সেপ্টেম্বর ভোরেই জানা গিয়েছে, বর ও কনে জীবিত আছেন।
মূলত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইরাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুন লাগলে সেখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বর ও কনে উভয়ই মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়েছে গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়৷ বর ও কনে আহত হলেও জীবিত আছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের বরাতে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়লেও ঘটনার পরদিন ভোরেই বর ও কনের সাথে থাকা এক ব্যক্তি নিশ্চিত করেন, তারা দুজনই জীবিত আছেন।
সুতরাং, ইরাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুনে বর-কনে মারা যাওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Alawla Tv: Facebook Video
- The Guardian: More than 100 people killed after fire breaks out at Iraq wedding
- Rumor Scanner’s own investigation