বাংলাদেশে কাচ্চির দোকানের জন্য মৃত কুকুর সংগ্রহের ঘটনা দাবিতে দক্ষিণ ভিয়েতনামের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘ইসলামপুর কাচ্চি বিরিয়ানি হাউস আপনাদের জন্য তক্তা যা খাসি’ ক্যাপশনে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে, একটি নির্জন স্থানে থলে সদৃশ কালো বস্তুর ভেতর থেকে হাতকড়া পরা এক ব্যক্তিকে অনেকগুলো মৃত কুকুর বের করতে দেখা যাচ্ছে।

অর্থাৎ, ভিডিওটি বাংলাদেশে কাচ্চি বিরিয়ানি পরিবেশন করে এমন কোনো রেস্টুরেন্টের জন্য মৃত কুকুর সংগ্রহের ঘটনার বলে দাবি করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাতকড়া পরিহিত ব্যক্তির কালো বস্তু থেকে মৃত কুকুর বের করার ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, দক্ষিণ ভিয়েতনামের কা মাউ প্রদেশের পুলিশ গিয়া রাই ওয়ার্ড থেকে ১২টি মৃত কুকুর এবং পোষা প্রাণী চুরিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু সরঞ্জাম সহ ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনা।

অনুসন্ধানে শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Odin_TheFreeGhost’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৭ আগস্ট ‘Ăn thịt chó không phải là một nét văn hóa đại trà ở miền Nam trước 1975.’ শিরোনামে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, ‘১৯৭৫ সালের আগে দক্ষিণ ভিয়েতনামে কুকুর মাংস খাওয়া একটি প্রধান সংস্কৃতি ছিল না। এটি মূলত উত্তর ভিয়েতনাম থেকে আসা কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচলিত ছিল (যেমন ১৯৫৪ সালের জেনেভা চুক্তির পর), এবং সাধারণত এটি নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত অভ্যাস ছিল। ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের আমলে শহুরে সংস্কৃতি পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। ফলে, অনেক জায়গায় কুকুর মাংস খাওয়াকে ‘অসভ্য’ বা ‘অমার্জিত’ কাজ হিসেবে দেখা হতো।’ ( অনূদিত)

অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে লোকেশন  হিসেবে ভিয়েতনাম দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়াও, গত ৭ আগস্ট ‘Vũ Việt Vương’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি প্রচার করতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশন বর্ণনায় বলা হয়, ‘পুরোনো সাইগনে এই ধরনের কোনো কার্যক্রম ছিল না। উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি যখন থেকে শহরের নাম পরিবর্তন করে ‘হো চি মিন সিটি’ রাখে, তখন থেকেই এই ধরনের ঘটনা ব্যাপক আকারে এখানে প্রবেশ করে।’ ( অনূদিত)

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভিয়েতনামের সবাদ মাধ্যম ‘Báo Tuổi Trẻ’ -এর ইংরেজি সংস্করণের ওয়েবসাইটে গত ৫ আগস্ট ‘2 arrested in southern Vietnam for organized dog theft, 12 dogs found dead’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুজে পাওযা যায়। প্রতিবেদনটিতে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ঘটনার সাদৃশ্যতা দেখা যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, দক্ষিণ ভিয়েতনামের কা মাউ প্রদেশের পুলিশ  গিয়া রাই ওয়ার্ড থেকে কুকুর চুরির অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ১২টি মৃত কুকুর এবং পোষা প্রাণী চুরিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু সরঞ্জাম জব্দ করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন লাম হাই ট্রুং (৩৭) এবং কুয়াচ ডাং বিনহ (৪৫), দুজনেই কা মাউ প্রদেশের বাসিন্দা।

ভয়েস অফ ভিয়েতনাম (VOV) -এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, মৃত কুকুর উদ্ধারের এই ঘটানাটি বাংলাদেশের নয়। তাই এর সাথে বাংলাদেশের কোনো রেস্টুরেন্টের কাচ্চি বিরিয়ানি পরিবেশনের সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, দক্ষিণ ভিয়েতনামে মৃত কুকুরসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনার ভিডিও দিয়ে বাংলাদেশে কাচ্চি বিরিয়ানির জন্য কুকুর সংগ্রহের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img