গত জুলাইতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও বন্যার ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাতটি ভিন্ন ছবি ব্যবহার করে হয়েছে।
ছবিগুলো ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), নয়া দিগন্ত (১), বৈশাখী টিভি, নয়া শতাব্দী, ডেইলি বাংলাদেশ, জুম বাংলা, বাংলা টিভি, ডেইলি এশিয়ান এজ, ডেইলি অবজার্ভার, দ্যা রিপোর্ট.লাইভ, নয়া দিগন্ত (২), মানবকণ্ঠ (১), মানবকণ্ঠ (২), দৈনিক ভোরের পাতা এবং আলোকিত বাংলাদেশ।
একই ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ভারী বর্ষণ ও বন্যার ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ছবি যাচাই- ১
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নয়া দিগন্ত।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে কোরিয়া ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা YONHAPNEWS এর একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ আগস্ট ছবিটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।
অর্থাৎ, ছবিটি প্রায় তিন বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ২
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৈশাখী টিভি এবং মানবকণ্ঠ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা Reuters এ ২০২২ সালের ১০ আগস্ট “Torrential rain lessens in S.Korean capital amid heavy flood damage” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের হান নদীতে প্রবল বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া হান নদী পার্কের একটি সাধারণ দৃশ্য।
অর্থাৎ, ছবিটি অন্তত এক বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ৩
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নয়া শতাব্দী।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তজার্তিক সংবাদ মাধ্যম CNN এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, সেসময় দক্ষিণ কোরিয়ার বন্যায় ডুবে যাওয়া একজনকে ভূগর্ভস্থ পার্কিং থেকে উদ্ধার করেছেন।
অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ছবি যাচাই- ৪
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডেইলি বাংলাদেশ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম Voice Of America’র ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Voice Of America’র ওয়েবসাইটে ছবিটি ২০১১ সালের ২৭ জুলাই প্রকাশিত হয়।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ভারী বৃষ্টির পর যানবাহন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
অর্থাৎ, ছবিটি অন্তত ১২ বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ৫
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জুম বাংলা, বাংলা টিভি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ডেইলি এশিয়ান এজ, ডেইলি অবজার্ভার, দ্যা রিপোর্ট. লাইভ এবং দৈনিক নয়া দিগন্ত।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে কোরিয়া ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম News1 এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, ২০২০ সালের ৮ আগস্ট ছবিটি প্রকাশিত হয় যা সেসময় সানমাক-ডং, গুয়াংসান-গু, গুয়াংজু এর কাছে ১১৯ জন উদ্ধারকর্মীর নৌকা ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার করার দৃশ্য।
অর্থাৎ, ছবিটি অন্তত তিন বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ৬
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবকণ্ঠ এবং দৈনিক ভোরের পাতা।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ গণমাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট “South Korea battles deadly floods and landslides” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, মধ্য দক্ষিণ কোরিয়ার ডেজিওনে প্রবল বর্ষণে অনেক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানির নিচে চলে গেছে।
অর্থাৎ, এই ছবিটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ছবি যাচাই- ৭
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলোকিত বাংলাদেশ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে কোরিয়া ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম The JoongAng ২০২০ সালের ৩ আগস্ট “Crisis warning level in preparation for localized heavy rain, ‘warning’ ‘severe’ issuance” (ইংরেজি অনুবাদ) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, দক্ষিণ চুংচেং প্রদেশের চেওনানে ৩ তারিখে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে নাগরিকরা তাদের গাড়ি পানিতে ফেলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়ে।
অর্থাৎ, ছবিটি অন্তত তিন বছরের পুরোনো।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত এবং কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত জুলাইতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ার ঘটনার দাবিতে সাতটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিগুলো উক্ত ঘটনার নয়। ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও বন্যার ঘটনার খবরে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, দক্ষিণ কোরিয়ার ভারী বর্ষণ ও বন্যার ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- YONHAPNEWS: https://m.yna.co.kr/view/PYH20200808097200054
- Reuters: “Torrential rain lessens in S.Korean capital amid heavy flood damage“
- CNN: “Seven drown in flooded South Korean parking lot as typhoon death toll rises”
- Voice Of America: https://www.voanews.com/a/175185.html
- News1: https://m.news1.kr/articles/?4021098
- BBC “South Korea battles deadly floods and landslides“
- The JoongAng “Crisis warning level in preparation for localized heavy rain, ‘warning’ ‘severe’ issuance“
- Rumor Scanner’s Own Analysis