সম্প্রতি, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজার তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর সাঈদীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এই দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ডেইলি স্টার।
২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ শীর্ষক দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, সময় টিভি, ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা, চ্যানেল২৪, বাংলানিউজ২৪, এনটিভি (ইউটিউব), যমুনা টিভি, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ডিবিসি নিউজ, বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউন, কালবেলা, ইত্তেফাক, সমকাল, বাংলাভিশন, নিউজ২৪, এসএ টিভি, বণিক বার্তা, নয়া দিগন্ত, মানবজমিন, নয়া শতাব্দী, মানবকণ্ঠ, সময়ের আলো, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, আজকের পত্রিকা, খোলা কাগজ, দৈনিক সংগ্রাম, আমাদের সময়.কম, সকালের সময়, ভোরের কাগজ, ডেইলি মেসেঞ্জার, এশিয়ান টিভি, জাগোনিউজ২৪, ঢাকা টাইমস, বিবার্তা২৪, সোনালী নিউজ, ঢাকা মেইল, এবিনিউজ২৪, রাইজিং বিডি, ডেইলি ক্যাম্পাস, জুম বাংলা, বাংলাদেশ মোমেন্টস, জয় যুগান্তর, স্বাধীন আলো, প্রবাস টাইমস, ডেল্টা টাইমস, বাংলা ইনসাইডার, পূর্ব পশ্চিম বিডি, আমার বার্তা, দেশ রূপান্তর, আরটিভি, দেশ টিভি, দূরবীন নিউজ, বায়ান্ন টিভি, যায়যায়দিন, রেডিও টুডে, নিউজজি২৪, সাম্প্রতিক দেশকাল, দৈনিক শিক্ষা, জবাবদিহি, প্রবাসীর দিগন্ত, পদ্মা টাইমস২৪, আজকালের খবর, বিজনেস পোস্ট, মত ও পথ, বাহান্ন নিউজ, আগামী নিউজ, সংবাদ, রিপোর্ট২৪, বিডি২৪লাইভ, ঢাকা টুডে, দ্য রিপোর্ট লাইভ, বিডি২৪রিপোর্ট, বার্তা বাজার, ফেস দ্য পিপল।
২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেন শীর্ষক দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ এবং ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া শীর্ষক গণমাধ্যমের দাবিগুলো সঠিক নয় বরং ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। পরে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে গত ১৪ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। তবে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আপিল বিভাগ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার ২০১৩ সালের ০১ মার্চের (আর্কাইভ) প্রিন্ট সংস্করণের প্রথম পাতায় সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার খবরটি খুঁজে পাওয়া যায়।
সে বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সেসময় প্রকাশিত আরো একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডয়চে ভেলে বাংলা।
আরো অনুসন্ধান করে ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সমকাল পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে আগের দিন অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির সাজা কমিয়ে আপিল বিভাগ কর্তৃক আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার খবর খুঁজে পাওয়া যায়।
১৭ সেপ্টেম্বর (২০১৪) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি (২০১৩) সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। ঐ সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আপিল করেছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আর রাষ্ট্রপক্ষ বাকি ছয়টি অভিযোগে সাজা চেয়ে আপিল করে, যেগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হলেও ট্রাইব্যুনাল সাজা দেয়নি।
এ বিষয়ে সেসময় প্রকাশিত আরো কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, ডয়চে ভেলে বাংলা।
পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে ২০১৭ সালের ১৬ মে সমকাল পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে আগের দিন অর্থাৎ ১৫ মে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখার খবর বেরোয়।
১৫ মে (২০১৭) জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনে সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় পুনর্বহাল চাওয়া হয়। একই বছরের ১৭ জানুয়ারি আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সাঈদী। রিভিউ আবেদনে সাঈদীর খালাস চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে পৃথক দুই রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, বহাল রাখেন আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ।
এ বিষয়ে সেসময় প্রকাশিত আরো কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন।
গণমাধ্যমে “২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ” শীর্ষক দাবিটি প্রচারের বিষয়টি অনুসন্ধানে সে সময়ের অর্থাৎ ১৮ ফেব্রুয়ারির একাধিক পত্রিকার (ভোরের কাগজ, ইনকিলাব) প্রিন্ট সংস্করণে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার সাজার তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর সাঈদীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। অধিকাংশ গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। তবে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুকে ঘিরে ইন্টারনেটে প্রচারিত একাধিক গুজব নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি দেখুন সাঈদীর মৃত্যু: পুরোনো ছবি-ভিডিও আর ভুল তথ্যে একদিন।
সুতরাং, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা সংক্রান্ত তারিখ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Samakal: E-paper March 01, 2013
- Samakal: E-paper September 18, 2014
- Samakal: E-paper May 16, 2017
- BBC Bangla: দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যেভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন